প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ভয় ও শিহরণ জাগানিয়া সুন্দরবন। কিংবা স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত ষাটগম্বুজ মসজিদ। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এই স্পটগুলোতে প্রতি বছর ভ্রমণ করেন হাজার হাজার পর্যটক। তাদের ভ্রমণকে নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে দিন-রাত কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
পুলিশ সুপার দেওয়ান লালন আহমেদের নেতৃত্বে চলছে ট্যুরিস্ট পুলিশ খুলনা জোনের কার্যক্রম। টুঙ্গিপাড়া, বাগেরহাট, সুন্দরবন, সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়ায় রয়েছে পুলিশের এই বিশেষ ইউনিটের পাঁচটি জোন অফিস। আর একটি সাবজোন অফিস আছে মেহেরপুরে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ তথ্য অনুযায়ী, এসব জোন অফিসের পর্যটন স্পটগুলোতে ২০২১ থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার ৫২৩ জন দেশি পর্যটক, ৫৩৪ জন বিদেশি পর্যটক ও ১ হাজার ২২ জন ভিআইপি/গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ভ্রমণ করেছেন, যাদের নিরাপত্তা ও নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করেছেন বাহিনীর সদস্যরা।
বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ চত্বরে সোমবার সকালে দেখা যায় ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যদের। দর্শনার্থীদের খোঁজখবর নেয়ার পাশাপাশি পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
যশোর থেকে ঘুরতে এসেছেন আলি কদর। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রথমে খানজাহানের মাজারে নেমেছি। সেখান থেকে ষাটগম্বুজে যাওয়ার সময়, পুলিশ সদস্যরা আমাদের পথ চিনিয়ে দিয়েছেন। তাদের এই আন্তরিকতায় আমরা খুশি।’
ট্যুরিস্ট পুলিশের কাজ খুবই প্রশংসনীয়। তারা সব সময় দর্শনার্থীদের খেয়াল রাখে। কেউ কখনও অসুস্থ হলে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থাও করে। এ ছাড়া কোনো দর্শনার্থী যদি তার স্বজন হারিয়ে ফেলেন তাদের খোঁজার ক্ষেত্রেও পুলিশ সদস্যরা তৎপর। সব মিলিয়ে তাদের কার্যক্রমে এই এলাকার পর্যটনশিল্প নতুন মাত্রা পেয়েছে।
ঢাকা থেকে আসা তরুণী ইসরাত জাহান বলেন, ‘ষাটগম্বুজ মসজিদের ভেতরে ইচ্ছামতো ঘুরলাম। কেউ কোনো বিরক্ত করেনি। পুলিশ না থাকলে বখাটেদের বিরক্তির শিকার হতে হতো। ট্যুরিস্ট পুলিশের কারণেই আমরা সুন্দর পরিবেশে বেড়াতে পারলাম। আগামী দিনে এখানে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসার ইচ্ছা বেড়ে গেল।’
ষাটগম্বুজ এলাকার ভ্রাম্যমাণ ফটোগ্রাফার সোহেল। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটা সময় ছিল এই এলাকায় দর্শনার্থীরা হয়রানির শিকার হতেন। উত্ত্যক্ত করা হতো মেয়েদের। কারণ গেটে আনসার সদস্য ছাড়া আর কেউ থাকত না। কিন্তু ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা আসার পর এখানে কোনো ধরনের হয়রানি হয় না। দর্শনার্থীও বেড়েছে। আমরাও নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারছি।’
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাগেরহাটের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ বলেন, ‘ট্যুরিস্ট পুলিশের কাজ খুবই প্রশংসনীয়। তারা সব সময় দর্শনার্থীদের খেয়াল রাখেন। কেউ কখনও অসুস্থ হলে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থাও করেন।
‘এ ছাড়া কোনো দর্শনার্থী যদি তার স্বজন হারিয়ে ফেলেন, তাদের খোঁজার ক্ষেত্রেও পুলিশ সদস্যরা তৎপর। সব মিলিয়ে তাদের কার্যক্রমে এই এলাকার পর্যটনশিল্প নতুন মাত্রা পেয়েছে।’
দেশের পর্যটনশিল্পে গতি আনতে ২০১৩ সালের নভেম্বরে যাত্রা করে পুলিশের এই বিশেষ ইউনিট। তাদের কর্মতৎপরতায় পর্যটন খাত মহামারির ধাক্কা সামলে উঠছে বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
কয়েক দিন আগে টাঙ্গাইল থেকে কয়েক যুবক এখানে এসেছিলেন। পরে তারা একজনকে ফেলে রেখে চলে যান। আমি ট্যুরিস্ট পুলিশকে খবর দিলে তারা তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন, যা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে জানান, সুন্দরবনের ভেতরে বর্তমানে মোট সাতটি পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। এগুলো হলো করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা, কচিখালী, দুবলার চর, হিরণ পয়েন্ট ও কলাগাছী। এ ছাড়া শেখেরটেক, কালাবগী, আলীবান্ধা ও আন্ধারমানিকে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে।
সুন্দরবনের করমজল ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রের স্টেশন অফিসার আজাদ কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুন্দরবনে সব থেকে বেশি পর্যটক আসেন করমজলে। এখানে প্রায় সব সময় ট্যুরিস্ট পুলিশ অবস্থান করেন। অনেক সময়ে পর্যটক ও তাদের বহনকারী ট্রলার মালিকরা ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়েন। এসব তারা মীমাংসা করে দেন।’
তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে টাঙ্গাইল থেকে কয়েক যুবক এখানে এসেছিলেন। পরে তারা একজনকে ফেলে রেখে চলে যান। আমি ট্যুরিস্ট পুলিশকে খবর দিলে তারা তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন, যা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।’
ট্যুরিস্ট পুলিশের সুন্দরবন জোনের পরিদর্শক শেখ হেলাল উদ্দীন বলেন, ‘ভ্রমণের সময়ে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কেড়ে নিতে পারে সব আনন্দ। সে জন্য আমরা ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত থাকি।
‘বনের ভেতরে সব পর্যটনকেন্দ্রে আমাদের সদস্যরা নিয়মিত টহল দেন। পর্যটকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তাদের চলাচলে দিকনির্দেশনা দেন। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা অনেক কমানো সম্ভব হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মোংলা থেকে শুরু করে বনের বিভিন্ন স্থানে আমাদের মোবাইল নম্বর টানানো আছে। এ ছাড়া আমাদের সদস্যরা পর্যটকদের ট্যুরিস্ট পুলিশের মোবাইল নম্বর সেভ করে রাখতে উৎসাহিত করেন। ফলে তারা কোনো বিপদে পড়লে আমরা তাৎক্ষণিক তাদের উদ্ধার করতে পারি।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ খুলনা অঞ্চলের পুলিশ সুপার দেওয়ান লালন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুন্দরবন ও ষাটগম্বুজ এলাকার দর্শনার্থীদের সেবা দিতে আমাদের দুটি জোন রয়েছে। আমাদের সদস্যরা সব সময় ট্যুরিস্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছেন। ফলে এই এলাকায় দর্শনার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
‘টুরিস্ট পুলিশের আন্তরিকতায় পর্যটনশিল্পের সঙ্গে জড়িতরা ভালো ব্যবসা করতে পারছেন। ফলে যেমন দর্শনার্থী বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি রাজস্ব পাচ্ছে সরকার। ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমি আশা করি।’
আরও পড়ুন:করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকতে পারছেন না মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন।
শুক্রবার বিকেল ৬টায় আব্দুল মোমেনের করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসে।
সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যারা অংশ নেবেন তাদের সবার করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়ায় অনুষ্ঠানের ৪৮ ঘণ্টা আগে নমুনা পাঠান এসপি।
এসপি মোমেন বলেন, ‘সন্ধ্যা ৬টার দিকে জানতে পারি আমার করোনা পজিটিভ। তাই হোম আইসোলেশনে আছি। তবে যেহেতু জেলার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বে আছি তাই ঘরে থেকেও কাজ করছি।
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। এই অনুষ্ঠানে থাকতে পারলে পরিপূর্ণ পরিতৃপ্তি পেতাম।’
আর কিছু মুহূর্তের অপেক্ষা; উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু। শনিবারের উদ্বোধনী জনসভায় যোগ দিতে শুক্রবার রাতে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ রওনা হন তিনটি লঞ্চে করে।
শুক্রবার রাত ১১টার দিকে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে এসে পৌঁছায় লঞ্চগুলো। এরপর প্রতিটি লঞ্চ থেকে ফোটানো হয় আতশবাজি। এ সময় বরিশাল নদীবন্দরে নোঙর করা অন্যান্য লঞ্চ থেকেও আতশবাজি প্রদর্শন করা হয়; আলোকিত হয়ে ওঠে কীর্তনখোলা।
টানা ২০ মিনিট আতশবাজি ফোটানো হয়। এরপর এক এক করে সমাবেশস্থলের উদ্দেশে রওনা হয় লঞ্চগুলো।
প্রথমে সুরভী-৭ লঞ্চ বরিশালের কীর্তণনখোলা নদী অতিক্রম করে। চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা করা হয় লঞ্চটিতে। প্রতিটি লঞ্চেই এমন আলোকসজ্জার সঙ্গে নাচ-গানে মেতে ওঠেন মানুষ।
কেন্দ্রীয় লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি ও বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বরিশাল বিভাগ থেকে ৬০টি লঞ্চ পদ্মা সেতু উদ্বোধনী সমাবেশস্থলে যাচ্ছে। এর মধ্যে অনেক লঞ্চ রওনা হয়েছে নেতা-কর্মীদের নিয়ে। আমরা ইতিহাসের সাক্ষী হতে উচ্ছ্বসিত হয়ে সমাবেশস্থলে যাচ্ছি।’
বরিশাল নদীবন্দরে রাতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সমাগম দেখা গেছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পাস কার্ড ছাড়া বরিশাল নদীবন্দরে প্রবেশ করতে পারেনি কেউ। এই নদীবন্দর থেকে ৮টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে পদ্মা সেতু উদ্বোধনী সমাবেশস্থলের উদ্দেশে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বরিশাল বিভাগ থেকে এক লাখ মানুষ যাচ্ছে পদ্মা সেতু উদ্বোধনী সমাবেশস্থলে। জনসমাবেশে যোগ দিতে আনন্দিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ লঞ্চে করে রওনা হয়েছেন। আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সেজেছে নরসিংদী। শনিবার আত্মমর্যাদা ও প্রত্যয়ের পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে নানা আয়োজনের অংশ হিসেবে শুক্রবার গভীর রাতেই জেলার মোসলেহ উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে জ্বলে ওঠে আলো।
এদিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনন্দ জেলায় দ্বিগুণ করতে জেলা প্রশাসন আয়োজন করছে ‘প্রত্যয়ের জয়গান’ নামের একটি কনসার্ট।
মোসলেহ উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে আজ বিকেল ৩টায় দেশের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড দল ‘মাইলস’-এর শিল্পীদের মধ্যে গান পরিবেশন করবেন শাফিন আহমেদ। কনসার্টটি দর্শকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে বলে জানা গেছে নরসিংদী জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে।
নরসিংদী বিভিন্ন উপজেলাসহ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে রয়েছে দিনব্যাপী কর্মসূচি। এর মধ্যে শনিবার সকাল ৯টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রারও আয়োজন করা হয়েছে।
এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান বড় পর্দায় উপভোগ করবেন নরসিংদীবাসী।
বর্ণিল এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খানসহ স্থানীয় সম্মানিত ব্যক্তিরা ও জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।
আরও পড়ুন:আর ঘণ্টাদুয়েক পর পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন ঘিরে বর্ণিল সাজে সেজেছে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট। পদ্মা সেতুর আদলে প্রস্তুত করা হয়েছে জনসভা মঞ্চ। সেখানে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী।
সমাবেশ সফল করতে শনিবার ভোর থেকেই জনসভাস্থলে আসতে শুরু করেছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে মিছিল নিয়ে ব্যানার, প্ল্যাকার্ডসহ সভায় যোগ দিচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
ভোর ৫টার দিকে প্রায় হাজারখানেক মানুষের জটলা দেখা যায় সেখানে। সবার মুখে মুখে স্লোগান, পুরো এলাকাজুড়ে উৎসব উৎসব রব। সকাল ৬টার পর খুলে দেয়া হয় জনসভার জমায়েতের স্থান। দীর্ঘ লাইনে সবাইকে চেক করে ঢুকতে দিতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের।
পদ্মা সেতুর কাঁঠালবাড়ী সংযোগ সড়ক থেকে হেঁটে আসতে হচ্ছে তাদের। কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলা থেকে লঞ্চযোগে সাধারণ মানুষ আসছেন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। সকল ৭টার মধ্যেই জনসভাস্থলের প্রায় অর্ধেক এলাকা পূর্ণ হয়ে যায়।
ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বাংলাবাজার ঘাট নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। সতর্ক অবস্থানে পুলিশ, র্যাবসহ বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। পুরো ৮ কিলোমিটার এলাকার পুরোটাই আনা হয়েছে সিসিটিভির আওতায়। এ ছাড়া বসানো হয়েছে ২৬টি বড় পর্দার মনিটর।
বরিশাল থেকে আসা রমিজউদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাত ১টায় লঞ্চে উঠছি। সারা রাত নাচ-গান করে সকালে ঘাটে নামছি। এটা ঈদের আনন্দের চেয়ে কোনো অংশেই কম না, বরং আমাদের মুক্তির দিন আজ। অনেক কষ্ট আর ভোগান্তি থেকে বাঁচার দিন। যে কারণে আমাদের ফুর্তি কোনো অংশেই কম নয়। বরিশাল থেকে প্রায় এক লাখ মানুষ সভায় আসব।’
মাদারীপুর পৌর শহর থেকে এসেছেন নান্নু মুন্সি। তিনি বলেন, ‘সকালে আলো ফোটার আগেই চলে আসছি। প্রায় ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার হেঁটে আসতে হয়েছে। এখন মাঠে আসছি, এতেই খুশি আমরা।’
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মূল মঞ্চের সামনে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবসহ অন্তত ছয় স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমরা করেছি। পুলিশের অন্তত ১৫ হাজার কর্মী সভায় নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে। এ ছাড়ার র্যাবের ২ হাজারসহ সব মিলিয়ে অন্তত ৪০ হাজার প্রশাসনের কর্মী মাঠে রয়েছে।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুর আদলে এবার পুকুরের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে সেতু। বাঁশ ও কাঠ দিয়ে নির্মিত সেতুটির দেখা মেলে পটুয়াখালী শহরের সার্কিট হাউসের সামনের পুকুরে।
শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জনমানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে সেতুটি নির্মিত হয়েছে বলে জানা গেছে। সেতুটি দেখতে ভিড় করতে দেখা যায় স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে। সেতুতে উঠে অনেকে তুলছেন সেলফি, আবার গোটা সেতুকেও ক্যামেরাবন্দি করছেন অনেকে।
জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে জানা যায়, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে শনিবার সকালে পুকুরের এই সেতুতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার যৌথ এই আয়োজনে অনেক মানুষ অংশ নেবেন বলে প্রত্যাশা করছেন সেতু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সেতু নির্মাণের দায়িত্বে থাকা গোবিন্দ ঘোষাল জানান, ২৪ জন মানুষের ছয় দিন সময় লেগেছে সেতুটি নির্মাণ করতে। শুক্রবার কাজ শেষ করে জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপর সেখানে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ১৯টি স্প্যানের ওপরে নির্মাণ করা সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০০ ফুট। পানি থেকে ছয় ফুট উপরে সেতুতে নির্মাণ করা হয়েছে নমুনা রেললাইন। উপরে দুই পাসে ২০টি ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়েছে। সেতুটি আলোকিত ও দৃষ্টিনন্দন করতে বিভিন্ন রঙের লাইটিং করা হয়েছে।
এটি নির্মাণে ৪৮৫টি বাঁশ, ৫০০ ঘনফুট কাঠ এবং ১৫০টি প্লাইউড ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান সেতুর নির্মাতা গোবিন্দ।
সেতু দেখতে আসা শহরের মিঠাপুকুর পাড় এলাকার মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘সময় ও সক্ষমতার অভাবে সরাসরি পদ্মার পাড়ে গিয়ে পদ্মা সেতু দেখতে পারিনি। কিন্তু কাঠের এ সেতু, এর নিচের পিলার ও রেললাইনের অংশ দেখে মনে হয়, এ যেন হুবুহু পদ্মা সেতু।’
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ‘পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে জেলাবাসীর কাছে স্মরণীয় করে রাখতে ব্যতিক্রম এই আয়োজন করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় অংশ নিতে খুলনা থেকে দলে দলে নেতা-কর্মী ছুটছেন পদ্মার পারে।
খুলনার শিববাড়ী মোড়ে শুক্রবার রাত ১২টা থেকে জড়ো হতে থাকে শত শত পরিবহন। এতে করে রওনা দেন খুলনার বিভিন্ন এলাকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা বলেন, ‘পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন খুলনা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ৫০ হাজারের বেশি নেতা-কর্মী।
‘আমরা ৫০০-এর বেশি বাস ভাড়া করেছি। প্রত্যেক উপজেলায় গাড়ি পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার ভোর ৫টা পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে গাড়ি ছেড়েছে। তা ছাড়া অনেক নেতা-কর্মী নিজস্ব গাড়িতেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাবেন।’
নগর যুবলীগের আহ্বায়ক শফিকুর রহমান পলাশ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশ সফল করতে আমরা কয়েক হাজার নেতা-কর্মী রাতেই রওনা দিয়েছি। আমাদের সঙ্গে চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আছেন।
‘সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স, পর্যাপ্ত শুকনা খাবার, স্যালাইন, পানি, ওষুধসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস নেয়া হয়েছে।’
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধন অনুষ্ঠান সরাসরি বড় পর্দায় খুলনা জেলা স্টেডিয়াম, দৌলতপুর ও শিববাড়ি এলাকায় দেখানো হবে।
‘বিকেল ৪টায় জেলা স্টেডিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পটের গান আয়োজন করা হয়েছে। গান পরিবেশন করবে ব্যান্ড দল চিরকুট ও বাউল। সেই সঙ্গে আতশবাজি ও লেজার শো করা হবে।’
আরও পড়ুন:ছয় মাস আগে কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে শ্বশুরের দ্বারা ধর্ষিত এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগে শ্বশুরকে আটক করেছে মিঠামইন থানা পুলিশ।
শুক্রবার রাত ১১টায় উপজেলার ঢাকী ইউনিয়নের পাতারকান্দি এলাকা থেকে অভিযুক্ত ওই শ্বশুরকে আটক করা হয়।
মিঠামইন থানার ওসি কলিন্দ্র নাথ গোলদার নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ভুক্তভোগীর মা পরিস্কার বানু জানান, দুই বছর আগে উপজেলার ঢাকী ইউনিয়নের পাতারকান্দি গ্রামের একাব্বর মিয়ার ছেলে দিদারের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তার কন্যা শামসুন্নাহারের। বিয়ের কিছুদিন পর দিদার কাজ করতে চলে যান চট্টগ্রাম। ছুটি নিয়ে তিনি মাঝে মাঝে বাড়িতে আসতেন।
ফাঁকা বাড়িতে একাই থাকতেন শামসুন্নাহার। এই সুযোগে ৬ মাস আগে ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন শ্বশুর একাব্বর। পরে ভুক্তভোগী মোবাইল ফোনে বিষয়টি তার স্বামীকে জানালে তিনি বাড়িতে আসেন।
বাড়ি এসে বাবার সঙ্গে রাগারাগি করে শামসুন্নাহারকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে চলে যান দিদার। আর এ বিষয়ে কাউকে কিছু না বলতে নিষেধ করেন স্ত্রীকে এবং কিছুদিনের মধ্যেই আবারও চট্টগ্রাম চলে যান তিনি।
এরপর শামসুন্নাহারের সঙ্গে ধীরে ধীরে যোগাযোগ কমাতে থাকেন দিদার। এক পর্যায়ে তিনি শামসুন্নাহারকে বলেন, ‘তুমি আমার বাবার সঙ্গে খারাপ কাজ করেছো। এখন তোমার সঙ্গে কিভাবে যোগাযোগ রাখি। আর কীভাবেই বা আমার বাড়িতে নিই।’
এ অবস্থায় বেশ কিছুদিন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ ছিল। সম্প্রতি দিদার ফোন করে শামসুন্নাহারকে জানান, স্ত্রীকে আর ঘরে নেবেন না তিনি।
এই অপমান সহ্য করতে না পেরে শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে বাবার বাড়িতে গলায় উড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেন শামসুন্নাহার।
শামসুন্নাহারের মা বলেন, ‘এখন থানায় আছি। মামলা করার জন্য এসেছি। এখানেও একাব্বরের লোকজন বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য চাপ দিচ্ছে।’
মিঠামইন থানার ওসি কলিন্দ্র নাথ গোলদার বলেন, ‘নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় একাব্বরকে আটক করা হয়েছে। মরদেহ থানায় রয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য