নারায়ণগঞ্জে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় আটক যুবক জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ। আটক আল জুবায়েরের সঙ্গে থাকা ব্যাগে চারটি ছুরি ও কয়েকটি হ্যান্ড গ্লাভস পাওয়া গেছে। সঙ্গে স্বর্ণের চেইনও উদ্ধার করা হয়েছে। জুবায়ের নগরীর পাইকপাড়ার আলাউদ্দিন মিয়ার ছেলে।
এর আগে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ফারজানা আক্তার শিলা নামের এক নারীকে আটক করেছিল পুলিশ। পরে জানা যায়, তিনি নিহত রুমা চক্রবর্তীর পুত্রবধূ।
পুলিশের ধারণা, স্বর্ণালংকার ও টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিতে ওই যুবক রুমা চক্রবর্তী ও তার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা ঋতু চক্রবর্তীকে হত্যা করেছে।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শাহ জামান জানান, এই জোড়া হত্যাকাণ্ডে আর কেউ জড়িত কি না তা জানতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন।
রুমা চক্রবর্তীর স্বামী রাম প্রসাদ পুলিশকে জানিয়েছেন, ঘটনার সময় তিনি বাসায় ছিলেন না। বিকেল পৌনে ৩টার দিকে তিনি স্ত্রীকে তার মোবাইলে ফোন করলে আটক যুবক ফোন ধরে। এ সময় সে ঘরের কোথায় স্বর্ণালংকার ও টাকা-পয়সা আছে তা জানতে চায়। পরিচয় জানতে চাইলে সে ফোন কেটে দেয়।
পরে তিনি দ্রুত বাসায় গিয়ে দেখেন আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে আছে; মূল গেট বন্ধ। পুলিশ ভেতরে রয়েছে।
রাম প্রসাদ বলেন, ‘আমার মেয়ে ঋতু ৬ মাস ১৬ দিনের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। ওর স্বামীর বাড়ি চট্টগ্রামে। আমার স্ত্রী ও মেয়ের হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (তদন্ত) আমির খশরু বলেন, ‘আটক জুবায়েরকে নিহতদের পরিবারের কেউ চেনে না। ঘটনার পর জুবায়েরের ব্যাগ থেকে নিহত ঋতুর স্বর্ণের চেইন উদ্ধার করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে চারটি ছুরি ও কয়েকটি হ্যান্ড গ্লাভস।’
প্রত্যক্ষদর্শী শংকর রায় বলেন, ‘হঠাৎ বাসার ওপর থেকে এক নারী দৌড়ে নিচে নেমে এসে চিৎকার করতে থাকে। এ সময় তার হাতে একটি বঁটি ছিল। এ কারণে লোকজন তাকে হত্যাকারী ভেবে বাইরে থেকে বাড়ির মূল গেট বন্ধ করে দিয়ে পুলিশে খবর দেয়।’
সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ভবনের নিচে গিয়ে আমরা ফারজানা আক্তার শিলা নামের এক নারীকে পাই। পরে ৬ তলায় গিয়ে বাসার দরজা ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। ধাক্কা দিলে ভেতর থেকে জুবায়েরের দরজা খুলে বাইরে আসে। তার হাতে ছুরি ছিল। পরে জিজ্ঞাসাবাদে সে মা-মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করে।’
শীলা পুলিশকে বলেন, ‘অনবরত কলিং বেল বাজছিল। তখন আমি আর ঋতু ভেতরের রুমে ছিলাম। বাইরের রুমে ছিলেন মা। তিনি দরজা খুলে দেন। এরপরই মার চিৎকার শুনতে পাই। প্রথমে ঋতু দৌড়ে যায়। তখন লোকটা মাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করছিল। ঋতু মাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে লোকটা তাকেও ছুরি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। এ সময় আমি হাতে বঁটি নিয়ে দরজা খুলে চিৎকার করতে করতে নিচে নেমে আসি।’
পুলিশ কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘নিহত রুমার শরীরের ৬ জায়গায় ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তার মেয়ে ঋতুর শরীরের সামনে ও পেছনে তিনটি ছুরি ঢুকানো ছিল। আরও ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সিআইডি ক্রাইম সিন ইউনিট আলামত সংগ্রহ করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
পাশের ফ্ল্যাটের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ওই ভবনের নিচতলা থেকে ওপর তলা পর্যন্ত কয়েকটি ফ্ল্যাটের কলিং বেল চেপেছে জুবায়ের নামের ওই যুবক, কিন্তু কেউ দরজা খোলেনি। ওই যুবককে তারা আগে দেখেননি।
আটক জুবায়েরের বাবা আলাউদ্দিন মিয়া জানান, তিনি শহরের টানবাজারের লবণ ব্যবসায়ী। তার ছেলে ২০১৩ সালে এইচএসসি পাস করে। এরপর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়। তবে আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় পড়ালেখা চালাতে পারেনি। এক-দেড় মাস ধরে তার ছেলে অস্বাভাবিক আচরণ করছিল।
আরও পড়ুন:ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার গোসাইপুর-জালশুকা সড়কের নির্মাণ কাজ ১১ মাসেও শেষ হয়নি। অথচ ঠিকাদারের শর্ত অনুসারে এ কাজ নয় মাসে শেষ করার কথা। অভিযোগ রয়েছে- ঠিকাদার লোকমান হোসেন এ সড়কের বক্সকাটিং করে ১১ মাস ধরে ফেলে রেখেছেন। তার স্বেচ্ছাচারিতা ও গাফিলতে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। উল্লেখ্য তিতাস নদীর উত্তর পাড়ে বড়াইল ইউনিয়নের একটি গ্রাম গোসাইপুর। গ্রামের পশ্চিম অংশে বাজার। বাজারের পূর্ব দিকে দিয়ে চলে গেছে গোসাইপুর-জালশুকা সড়কটি। এ বাজারের যাতায়াতের জন্য রাধানগর, চরগোসাইপুর, জালশুকা, বড়াইল, মেরাতুলী গ্রামের মানুষেরাও সড়কটি ব্যবহার করে।
গোসাইপুর বাজারের মুদি মালের ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেন বলেন-"আমার গ্রামের বাড়ি জালশুকা । প্রতিদিন এ সড়কে বাজারে আসি। সড়কটি বর্ষাকালে বৃষ্টি হলেই পানি ও কাঁদা মিলে চলাচলে অযোগ্য হয়ে যায়"। বড়াইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বাসার বলেন-"পূর্ব অঞ্চলের জনগণের জন্য এই রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গোসাইপুর বাজার ও রাধানগর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজে আসা-যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। সড়কটির কাজ শেষ না হওয়ার কারণে জনগণের যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে"। গোসাইপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার ডা. হুমায়ুন কবীর বলেন-"সড়কটি দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত চলাচলে ভোগান্তির শেষ নেই। নির্মাণ কাজ করতে এসে ঠিকাদার আর কাজ করছেন না। এখন বর্ষার বৃষ্টির কারনে মোড়ে মোড়ে রাস্তা ভেঙে মাটি পড়ে যাচ্ছে। যাত্রীরা পা পিছলে পড়ে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না শিক্ষার্থীরাও"। কাজ বন্ধ থাকার বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন- "সড়কটি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে আমি কয়েকবার তাগিদ দিয়েছি"। এ বিষয়ে ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব হোসেন বলেন-"এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে"। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব চৌধুরী বলেন-"এই সড়কের কাজ বন্ধ থাকার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি দ্রুত সময়ে কাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করব"।
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সংযোগ সড়ক ও রাস্তা না থাকায় কাজে আসছে না প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজ। ফলে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয় ৫ গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের। এমন ব্রিজের দেখা মিলেছে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর আদ্রা গ্রামের ফসলের মাঠে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ব্রিজটি। ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও এখন পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচলের জন্য নির্মিত হয়নি সড়ক। ফলে কোনো কাজেই আসছে না সাতপোয়া ইউনিয়নের, চর রৌহা, আকন্দপাড়া, মাজারিয়া ও খামার মাগুরাসহ পার্শ্ববর্তী মাদারগঞ্জ উপজেলার আরও ২টি গ্রামের জনসাধারণসহ হাজারও মানুষের।
সংযোগ সড়ক না থাকায় প্রতিদিন এসব এলাকার ফসলের মাঠের আল দিয়ে দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করছেন স্থানীয়রা। ব্রিজটি নির্মাণের দীর্ঘদিন পার হলেও এটি এখনো জনগণের চলাচলের জন্য ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠেনি। ব্রিজের দুই পাশে কাঁদা ও অসমতল জমির কারণে শিশু, বৃদ্ধ এমনকি সাধারণ পথচারীদেরও চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া কৃষকদের আবাদি ফসল আনা-নেওয়া বা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতেও হয়েছে চরম দুর্ভোগ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হাসানুর কবীর স্বপন, মাসুদ রানা, চান মিয়া, ছমিরন বেওয়া বলেন, ব্রিজটি নির্মাণের খবরে আমরা এলাকাবাসীরা খুবই খুশি হয়েছিলাম। ভেবে ছিলাম আমাদের কয়েক গ্রামের দীর্ঘদিনের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘব হবে। কিন্তু ব্রিজটি নির্মাণের এতদিন পার হলেও সড়ক না থাকায় এটি আমাদের কোনো কাজে আসছে না। আমরা দাবি জানাই অতি দ্রুত আমাদের চলাচলের সুবিধার্থে ব্রিজটির দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী শওকত জামিল বলেন, ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই ব্রিজটি ও সড়কের কথা জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। ওই এলাকার মানুষদের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘবে মাটি কেটে রাস্তা উঁচু করে ব্রিজের সঙ্গে সংযোগ রাস্তা নির্মাণ করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
পালকি ছিল এক সময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য, বর-কনের বাহন। এটা ছাড়া বিয়ের কথা ভাবাই যেত না। সারা দেশের মতো রূপগঞ্জেও একই অবস্থা ছিল। কালের বির্বতনে চিরায়ত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক পালকি রূপগঞ্জে আজ আর চোখে পড়ে না। পালকি এখন মিউজিয়াম পিস হয়ে কালের সাক্ষী হয়ে আছে জাদুঘরে। বেহারাদের সুর করে সেই গ্রাম ঘুরে মাঠ-ঘাট-প্রান্তর পেরিয়ে গন্তব্যের কাছে দূর থেকে সেই ছয় বেহারাদের আর দেখা যাচ্ছে না। তাদের ছন্দিত লয়ে হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে নাইয়র, বিয়ের কনে বর কিংবা মান্যগন্য ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়ার এ চক্রবিহীন যান সম্ভবত তার অন্তিম যাত্রা করেছে। ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায়, রবীন্দ্রনাথের কবিতায়, হেমন্তের গানে কিংবা ভুপেন হাজারিকার মাদল তালে চলা পালকি এখন ঐতিহ্যের খাতায় নাম লিখিয়েছে।
সেই ন্যাংটা পুঁটো ছেলেটা আর বলে না পালকি চলে পালকি চলে.....আদুল গাঁয়ে যাচ্ছে কারা হনহনিয়ে। রবি ঠাকুরের ‘বীর পুরুষ’ কবিতার খোকা তার মাকে পালকিতে নিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতদের সাথে লড়ে যখন ওরা আসে তেড়ে ‘হারে রে রে’ বলে। সেই ভীষণ যুদ্ধের বর্ণনাও দিতে পারে না মাকে। মাও বলতে পারে না, ভাগ্যেস খোকা ছিল তার সঙ্গে। দাদা তার সদ্য বিয়ে হওয়া দিদিকে আর বলে না, আর কটাঁ দিন থাক না দিদি, কেঁদে কেটে কঁকিয়ে, দুদিন বাদে তো নিয়েই যাবে পালকি করে সাজিয়ে। ‘মৈমনসিং গীতিকার’ দেওয়ানা মদিনা ও ছুটবে না পালকিতে আবের পাংখা নিয়ে আর পালকি বহরের সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।
আধুনিক যোগাযোগের গোগ্রাসে পালকি হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতল তলে প্রাচীন বাংলার এ বাহনটি। এক সময় গ্রাম-বাংলার হাটবাজারে পালকি সাজিয়ে রাখা হত। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার আগেই পালকিওয়ালাদের কাছে ছুটে যেতেন বরের লোকজন। পালকি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো। ছয়জন মিলে পালকি বহন করতো। সামনে পেছনে দুজন ও মাঝখানে দুজন করে পালকি কাঁদে নিত। প্রথমে বরকে পালকিতে করে তার নিজ বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হতো। বিয়ের কার্যক্রম সম্পূর্ণ হওয়ার পর বর-কনেকে এক সঙ্গে আবার বরের বাড়িতে নিয়ে আসতো।
আসলে পালকি নামটির উৎপত্তি ফারসি ও সংস্কৃত উভয় ইন্দো ভারতীয় ভাষা থেকে আর সেই সঙ্গে ফরাসি থেকেও। পল্লীকবি জসিম উদ্দিন তাঁর স্মৃতি কথায় এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে যাওয়া বেহারাদের পালকি নিয়ে চলার যে বিবরণ দিয়েছেন তা আমাদের আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। বিলুপ্ত এ পালকি এখন বিভিন্ন জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে। বিয়ে বাড়িতে নব বর-বধুদের আনা নেয়ায় পালকি ব্যবহার করা হতো। চক্রযানের বিপ্লবে পালকির জায়গা দখল করে নিয়েছে আধুনিকতার এ যুগে প্রাইভেটকার, নোহা, বাস ও মাইক্রোবাস। হালের লাঙ্গল যেমন গ্রামেও অচল তেমনি ধনী গরিব নির্বিশেষে সকলের নানা অনুষ্ঠানে ব্যবহার করছে আধুনিক যান্ত্রিক যানবাহন। এসব যানের রমরমা ব্যবসাও এ কারণেই জমে ওঠেছে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইদানিং বর-কনের বাহনে যোগ হয়েছে হেলিকপ্টারও। রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া এলাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে বর যাত্রা গিয়েছেন সফিক মিয়া। হেলিকপ্টারে বর-কনে বহনের ঘটনা তখন পুরো এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ছড়ায় বলা হতো বউ সাজবে কালকি, চড়বে সোনার পালকি! সোনার বরনী কন্যা এখন আর পালকিবদ্ধ পরিবেশে যাবে না, উঠবে আসল বা নকল ফুলের সাজানো এয়ারকন্ডিশন গাড়িতে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোর সাড়ে চারটার দিকে পাবনা বাইপাস মহাসড়কের ইয়াকুব ফিলিং স্টেশন এর সামনে দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ট্রাকচালক সেলিম হোসেন (৩৮) মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের মৃত আব্দুল গনির ছেলে।
আহতরা হলেন- বাসের হেলপার তারেক (৩৫) ট্রাকের হেল্পার আলামিন (৩৫)। তাদের রাজশাহী মেডিকেল। কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ট্রাকচালক সেলিম সুনামগঞ্জ থেকে পাথর ভর্তি করে মাওয়া যাচ্ছিলেন।অপরদিক পাবনা এক্সপ্রেস বাসটি ঢাকা থেকে পাবনা বাস টার্মিনালে যাত্রী নামিয়ে হেলপার আলামিন গাড়ি গ্যারেজ করার জন্য দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে ইয়াকুব ফিলিং স্টেশনের সামনে পৌঁছালে ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে জানালে তাৎক্ষিনক ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম আহত তিনজনকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ট্রাক চালক সেলিম কে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে আহত ট্রাকের হেলপার ও বাসের হেলপারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্থানান্তর করা হয়।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে সদর থানা হেফাজতে আনা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে নজির গাজী (৪৯) ও দিদারুল ইসলাম (৩৮) নামে দুই ’জলদস্যুকে’ আটক করেছে পুলিশ। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা ও ১১টার দিকে উপজেলার উপকুলবর্তী যতীন্দ্রনগর ও মীরগাং এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় আটক দুই জলদস্যুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের ব্যবহৃত নৌকা থেকে একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা।
এর আগে সোমবার রাত আটটার দিকে সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে উঠে আসার সময় স্থানীয়দের ধাওয়ার মুখে অপর কয়েক সহযোগিসহ এসব জলদস্যুরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আটকরা হলেন— শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের নওশাদ গাজী এবং আশাশুনি উপজেলার চাকলা গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে দিদারুল ইসলাম।
আবু হামজা, সিদ্দিক হোসেন ও আকবর আলীসহ স্থানীয়রা জানায়, রাত সাড়ে আটটার দিকে অপরিচিত পাঁচ/সাত জন ব্যক্তি সুন্দরবন তীরবর্তী যতীন্দ্রনগর বাজারে যায়। এসময় নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য তারা মাইক্রো বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের জন্য কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে নাম—পরিচয়সহ সুন্দরবন এলাকায় আসার কারণ জানতে চাইলে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় যতীন্দ্রনগর বাজারে উপস্থিত লোকজন ধাওয়া করে দিদারুলকে ধরে পুলিশকে খবর দেয়। পরবর্তীতে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থলে পৌঁছে নজীরকে আটকের পাশাপাশি তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই চক্রের ব্যবহৃত মাছ শিকারের নৌকার মধ্যে থেকে একটি একনলা বন্দুক ও একটি দা উদ্ধার করে।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছে, জোনাব বাহিনী এখন সুন্দরবনে খুব বেশি তৎপর না। বরং নজীর, তার ভাই নবাব ও ছেলে আব্দুর রহিম এবং মুন্সিগঞ্জ আটিরউপর এলাকার আছাদুলসহ কয়েকজনকে নিয়ে জোনাবের নামে সুন্দরবনে দস্যুতায় লিপ্ত। সোমবার রাতে নজীর আলীকে আটকের পরপরই তার ছেলে আব্দুর রহিম ও ভাই নবাব ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।
আটক নজীর আলীর ভাষ্য, তিনি সুন্দরবনের ত্রাস কুখ্যাত জোনাব বাহিনীর সদ্যদের উপরে তুলে দেওয়া এবং সুন্দরবনে নামিয়ে দেয়ার কাজ করেন। সোমবার ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে জোনাব বাহিনীর দুই সদস্যকে যতীন্দ্রনগর বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন। বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে যেয়ে মাছ শিকারের পাশাপাশি তারা পরিচিত জলদস্যুদের উপরে নিচে উঠানামার কাজ করেন বলেও দাবি তার। উপরে উঠে যাওয়া দুই জলদস্যু উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি তার নৌকার মধ্যে রেখে যায় বলেও তিনি দাবি করেন।
দিদারুল জানান, তিনি নজীর আলীর শ্রমিক হিসেবে সুন্দরবনে যাওয়া জেলেদের জিম্মি করারসহ মুক্তিপণ আদায়ের কাজ করেন। লোকারয়ে পৌঁছে দেওয়া দুই জলদস্যুকে সুন্দরবনের পুটেরদুনে এলাকা থেকে নিয়ে আসার কথাও নিশ্চিত করেন তিনি। তবে তার কাছে মোবাইলের পাওয়ার ব্যাঙ্কসহ নানান সরঞ্জামাদির বিষয়ে জানতে চাইলে নিরুত্তর থাকেন।
এদিকে অস্ত্র উদ্ধারসহ দু’জনকে আটকের বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা জানান, নজীরের দেওয়া তথ্যে নৌকায় থাকা ককসিটের নিচে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার হয়েছে। আটকের পর উভয়কে শ্যামনগর থানায় নেওয়া হয়েছে। তারা মাছ শিকারির ছদ্মবেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করতেন বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাহিনীর নাম—পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
কুমিল্লায় চার জনের শরীরে নতুন ভ্যারিয়েন্টের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে এক নারী চিকিৎসকসহ তিনজন পুরুষ রয়েছেন।
শনিবার (১৪ জুন) কুমিল্লা সিটি স্ক্যান এমআরআই স্পেশালাইজড অ্যান্ড ডায়ালাইসিস সেন্টারে করোনা পরীক্ষা শেষে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
করোনায় আক্রান্তরা হলেন, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আবদুল মোমিন (৭০), কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার ডা. সানজিদা (৩০), বুড়িচং উপজেলার মো. হেলাল আহমেদ (৩৮) এবং সদর উপজেলার মো. ইবনে যুবায়ের (৩৯)।
সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির বলেন, গত তিন দিনে কুমিল্লায় ১৩ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা কয়। পরীক্ষা শেষে তাদের মধ্যে চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকিদের নগরীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
তিনি বলেন, চারজনই বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। দুজন এরই মধ্যে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চলে গেছেন।
তবে আরেকজনের বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি সিভিল সার্জন।
করোনার প্রথম ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর এতদিন কুমিল্লায় নতুন করে কেউ শনাক্ত হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু এখন আবার নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দ্বিতীয় ধাপের শুরু হতে পারে এবং এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
চট্টগ্রামে নতুন করে আরো একজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ছয় দিনে মোট ৯ জনের শরীরে এ ভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল আটটা থেকে শনিবার সকাল আটটা) ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। ৪০ বছর বয়সী আক্রান্ত ওই ব্যক্তি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেহাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি শুক্রবার নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা করান। সেখানেই তার শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত নয়জনের মধ্যে পুরুষ ৫ জন এবং নারী ৪ জন। এদের মধ্যে ৭ জন নগরের এবং ২ জন উপজেলার বাসিন্দা।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা চালু আছে। তবে শিগগিরই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) আরটি–পিসিআর পরীক্ষা শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
মন্তব্য