মাস খানেক পরই রমজান। তার আগেই বাজারে শুরু হয়ে গেছে ভোজ্যতেলের ভূতুরে সংকট। দাম বাড়ানোর অনুমতি না পেয়ে বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা ঠিকই ভোক্তাদের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করছে।
খুচরা বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাহিদামতো তেল পাওয়া যাচ্ছে না। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, মিল থেকে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না।
মিল মালিকরা এই অভিযোগ স্বীকার না করলেও তেলের দামের বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বুকিং কমিয়ে দেয়ার কথা জানাচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে তেল ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী নেতাদেরকে মন্ত্রণালয়ে ডেকেছে সরকার। তেলের মজুত নিয়ে কোনো কারসাজি হচ্ছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগানোর কথা বলছেন সরকারি কর্মকর্তারা। বলছেন, কারসাজির প্রমাণ মিললে মজুত জব্দ হবে, নেয়া হবে আইনি ব্যবস্থা।
ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা ১ মার্চ থেকে লিটারে সয়াবিন তেলের দাম ১২ টাকা বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, রোজার আগে দাম বাড়বে না। তিনি আন্তর্জাতিক বাজারের বাড়তি দামের উত্তাপ সহ্য করতে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেন।
মন্ত্রীর এই বক্তব্যে ভোক্তাদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি এলেও বাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী না করলেও বেড়ে গেছে দাম
রাজধানীর কাওরান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, সেগুনবাগিচা ও রামপুরা বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, গত তিন-চার দিনে খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম ২০ টাকা বেড়েছে এবং প্রতি লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ থেকে ২০০ টাকায়। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দামও আগের চেয়ে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা থেকে ১৮০ টাকায় উঠেছে। দোকানিরা আগে সংরক্ষিত তেলও চড়া দামে বিক্রি করছেন।
অর্থাৎ সরকার সয়াবিন তেলের বাড়তি দরের বিষয়টি অনুমোদন না করলেও ভোক্তাদেরকে ঠিকই তা পরিশোধ করতে হচ্ছে।
সরবরাহের ঘাটতি
খুচরা বিক্রেতারা দাবি করছেন, চাহিদা অনুযায়ী তারা তেল পাচ্ছেন না। ১০ ড্রাম চাইল মিলছে দুই ড্রাম। পাইকাররা বলছেন, ৫০ ড্রামের জায়গায় পাচ্ছেন ২০ ড্রাম।
পরিবেশকরা বলছেন, মিলগুলো সাপ্লাই দিচ্ছে না। আবার মিলাররা বলছেন, মিলগটে কোনো গাড়ি অপেক্ষমান নেই, সব ডিও তারা সময়মত সরবরাহ দিচ্ছেন। কোনো গাড়িই তেল ভর্তি ছাড়া খালি ফিরছে না। অপরদিকে ক্রেতারা তেল কিনতে গেলেই গুনতে হচ্ছে বাড়তি দাম।
রামপুরা কাঁচাবাজারের মুদি দোকানি মফিজুল হক বলেন, ‘পাইকারি বাজারে কোনো ভোজ্যতেল পাওয়া যায় না; বোতলজাত তেলের সরবরাহও বন্ধ। তাই দাম বাড়ছে।’
সেগুনবাগিচা কিচেন মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, অর্ডার দিয়েও তারা সময় মতো তেল পাচ্ছেন না।
শান্তিনগরের কাঁচাবাজারের পাইকারি বিক্রেতা মো. হুমায়ুন বলেন, ‘সব কোম্পানি গত কয়েকদিন ধরে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা ক্রেতাদের কিছু ব্যাখ্যা করতে পারি না এবং সরবরাহ কেন বিঘ্নিত হচ্ছে তার কারণও বুঝতে পারি না।’
সোনালী ট্রেডার্সের মালিক ও ভোজ্যতেলের পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল কাশেম বলেন, ‘কোম্পানিগুলো নতুন অর্ডার নিচ্ছে না এবং পণ্য ডেলিভারিও করছে না। যার কারণে বাজারে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গত সপ্তাহ থেকে মিলের গেটে কোনো তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এখন দোকানে সংরক্ষিত তেলও ফুরিয়ে যাচ্ছে।’
স্বীকার করছেন না সরবরাহকারীরা
বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ সংকটের বিষয়টি সরাসরি স্বীকার করেননি বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও টিকে গ্রুপের পরিচালক মোস্তফা হায়দার।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা অব্যাহতভাবে বিক্রি করে যাচ্ছি। ডেলিভারি পাচ্ছে আমাদের ডিলাররা। যা ডিও আসতেছে, যে কয়টি গাড়ি আসছে তার সবই তেল ভর্তি যাচ্ছে।’
তবে ভোজ্যতেলের বাজার যে স্বাভাবিক নয়, সেটি তার কথায় উঠে এসেছে। তিনি বলেন, ‘বাজার তো এখন চড়া। কখন কী হয় এমন একটা আশঙ্কা তো আছেই। এ কারণে কার কী অবস্থা সেটি বলতে পারব না, আমি আমাদের কথা বলতে পারি, নতুন বুকিং দেয়ার সাহস হচ্ছে না। আবার এটাও সত্য, আগের মতো খুব যে মাল বুক করেছি তা-ও না। একটু সাবধানে করছি।’
সরবরাহ সংকট প্রসঙ্গে সিটি গ্রুপের পরিচালক (অর্থ) বিশ্বজিৎ সাহা নিউজবাংলাকে জানান, অভ্যন্তরীণ বাজারে তীর ব্যান্ডের সয়াবিন তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।
বৈঠক ডেকেছে সরকার
ভোজ্যতেল নিয়ে এই পরিস্থিতিতে সরকার ব্যবসায়ীদেরকে বৈঠকে ডেকেছে।
বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ে হতে যাওয়া সেই বৈঠকে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ছাড়াও এফবিসিসিআই, কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা শাখার সদস্য, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের আসতে বলা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বৈঠকে ভোজ্যতেলসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের চাহিদা নিরূপণ, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, আমদানির পরিমাণ, মজুদ পর্যালোচনা করা হবে।
এছাড়া গত দুই মাসে কারা কোন পণ্যের কী পরিমাণ এলসি খোলেছে, কী পরিমাণ বন্দরে প্রবেশ করেছে এবং কতটা নিষ্পত্তি হয়েছে, তার কতটা বাজারে প্রবেশ করেছে তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হবে।
বৈঠকের পর বাজার মনিটরিং জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী দায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্য করে অভিযান চালানো হবে।
আমরা কঠোর হব: অতিরিক্ত সচিব
বাজারে এ ধরনের ভূতুরে পরিস্থিতির নেপথ্যে কারা রয়েছে -তা বের করতে এবার হার্ডলাইনে যাচ্ছে সরকার। এজন্য বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মজুত, সরবরাহ ও বিক্রির সংগ্রহকৃত নথি ও রেকর্ড খতিয়ে দেখার পর অভিযুক্ত মিলার, ডিলার, পাইকার কিংবা খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সংগ্রহ থাকা ভোজ্যতেল জব্দ করার কথাও ভাবা হচ্ছে। নেয়া হতে পারে আরও কঠোর পদক্ষেপও।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরবরাহ চেইনে সমস্যা কোথায়? মিলার না, ডিলার? পাইকাররা না খুচরা বিক্রেতা? এখন তো একজন আরেকজনের কথা বলে এড়িয়ে যাচ্ছে, এখন আর সেই কথা বলার সময় নেই। খুব শিগগির আমরা অ্যাকশনে যাচ্ছি।
‘বাস্তবে সাপ্লাই চেইনে কারা কী সমস্যা করছে, তা খুঁজে বের করা হবে। এ কারণে বুধবার সব সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং নিয়ন্ত্রক এজেন্সিগুলোকে ডাকা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মিলার বা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর শেষ দুই মজুত রেকর্ড চেক করব। এর থেকে তারা কবে কী পরিমাণ বাজারে ছেড়েছে, আগে কেন ছেড়েছে-এখন কেন ছাড়ছে না তা খতিয়ে দেখব। কারা কোথায় কী ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে, কাদের মজুতে কী পরিমাণ তেল রয়েছে বের করা হবে। আমরা এখন হার্ডলাইনে রয়েছি। দোষী প্রমাণিত হলে দায়ী সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা সিজ করে ফেলব।’
তেলের দাম বাড়ানোর চেষ্টা
সবশেষ ৬ ফেব্রুয়ারি সরকার বোতলজাত সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য লিটার প্রতি ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬৮ টাকা করে। খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৩ টাকা এবং পাম তেলের লিটার প্রতি ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দাম এখন কেউ মানছে না।
উল্টো আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে, বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনারস অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন গত রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে প্রতিলিটার ভোজ্যতেলের দাম আরও ১২ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। তারা বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা নির্ধারণ করার কথা জানায়।
নতুন দাম মার্চের প্রথম দিন থেকেই থেকেই কার্যকর করার কথা জানানো হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা না করেই।
তবে ফেব্রুয়ারির শেষ দিন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, তারা তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে না করে দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক বাজার লাগামহীন
অয়েল ওয়ার্ল্ড, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মতে, এ বছর আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েল ও সয়াবিন তেলের দাম গত বছরের তুলনায় ৩৩.৪৬ শতাংশ এবং ৩৪.৯০ শতাংশ বেড়েছে।
দেশের বাজারেও সয়াবিন তেলের দাম এক বছরে প্রায় সমপরিমাণ বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা দাবি করছে, সবশেষ যখন দাম বাড়ানো হয়, সেই তেল আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কেনা হয়েছে, এখন দাম অনেক বেশি।
কোন যুক্তিতে দাম বাড়াতে চাইছেন- জানতে চাইলে দেশে ভোজ্যতেল বিপণনে সবচেয়ে শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি সিটি গ্রুপের পরিচালক (অর্থ) বিশ্বজিৎ সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লিটারে ১৬৮ টাকায় যে তেল আমরা বিক্রি করছি, সেটির আন্তর্জাতিক বাজার ছিল টনপ্রতি এক হাজার ৩০০ ডলার। এখন যে তেল আমরা বাজারে ছাড়তে যাচ্ছি, সেটি এক হাজার ৪২০ ডলারের। আগামী এক থেকে দেড় মাস পর আন্তর্জাতিক বাজারে কোথায় গিয়ে ঠেকে, সেটি আমরা এখনই বলতে পারছি না। কিন্তু এক হাজার ৭০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস আছে। তখন পরিস্থিতি কী হবে, তা জানি না।’
আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেল বর্তমানে ১ হাজার ৫১৫ ডলারে বিক্রি হচ্ছে, যা কয়েক মাস আগেও আগে ছিল ১ হাজার ১২৩ ডলার। পামওয়েলের দর ১ হাজার ১৯ ডলার থেকে ১ হাজার ৩৬০ ডলার হয়েছে।
২০২১ সালে বিশ্ব বাজারে সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ দাম ১ হাজার ৫৬৮ ডলার উঠেছিল।
আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের বড় সরবরাহকারী দেশ হলো ইন্দোনেশিয়া। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশটি এখন পাম তেল রপ্তানিতে সংরক্ষণ নীতি অনুসরণ করছে। তারা নিজ দেশের নাগরিক ভোক্তাদের সুরক্ষায় চাহিদার ১৫ শতাংশ অতিরিক্ত রিজার্ভ রাখছে। ফলে তেলের বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনেও বিলম্ব হচ্ছে। এসবের প্রভাব পড়ছে দেশের বাজারেও।
আরও পড়ুন:শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত ০২ জুন, সোমবার আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি।
জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুহঃ ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম মরতুজা, মোঃ ফয়েজ আলম ও মোঃ আশরাফুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আবেদিন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভা সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যকরী সভাপতি শাহ জাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি এস. এফ. এম. মুনির হোসেন, সহসভাপতি মজিবুর রাহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ছানোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। আবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। ট্রেড লাইসেন্স নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।
এখন ১১ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই হবে। ওই ১১টি সেবা হলো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে; সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে; সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের নতুন লাইসেন্স গ্রহণে; ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়নে; চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণে; পাঁচ লাখ টাকার অধিক পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়; এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মচারীর কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তিতে; ত্রি-চক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।
ঘরে বসে যেসব ক্রেতারা কেনাকাটা করতে চান, তাদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা আগামী অর্থবছর থেকে খানিকটা ব্যয়বহুল হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় থেকে কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের দাম বেশি হতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ভ্যাটের হার ছিল ৫ শতাংশ।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ হলো বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হবে।
তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পুরো জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে সরকারের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করায় এবং সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তার এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেয়া।
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।’
মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থিক অস্থিরতা সামাল দিতে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এর মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক মুদ্রানীতি সমন্বয় সাধন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। বহু দেশ সংকটে পড়ে এই সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে- কেউ সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছে, কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণনির্ভরতার ফাঁদে পড়ে গেছে।
আজ, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্রমশ পশ্চিমকেন্দ্রীকতা থেকে সরে পূর্ব ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আইএমএফ তার প্রাসঙ্গিকতা ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে এক নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন।
ঋণ সহায়তা, নাকি ঋণের ফাঁদ?
আইএমএফ সাধারণত এমন শর্তে ঋণ দেয়, যার মধ্যে থাকে কঠোর ব্যয়সংযম, ভর্তুকি হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারমুখী সংস্কার; কিন্তু এই শর্তগুলো অনেক সময় জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় শিল্প ধসে পড়ে, বৈষম্য বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞতা এর এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০১৮ সালে আইএমএফ ইতিহাসের বৃহত্তম ঋণ প্যাকেজ ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করে। ফল ছিল বিপরীত- মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, দারিদ্র্য আরও বেড়ে যায় এবং দেশটি আবার মন্দার মুখে পড়ে।
এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে শুধু অর্থনৈতিক সমীকরণ দিয়ে কোনো দেশের সামাজিক বাস্তবতা নির্ধারণ চলে না।
আইএমএফের নীতিনির্ধারণ কাঠামো এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শক্তির ভারসাম্যের প্রতিচ্ছবি। উন্নত দেশগুলো (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংগঠনের ভোটের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এই গণতান্ত্রিক ঘাটতি আজ দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে।
বিকল্প প্রতিষ্ঠানের উত্থান
এই প্রেক্ষাপটে বিকল্প আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) এবং ল্যাটিন আমেরিকান রিজার্ভ ফান্ড (FLAR) নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। (NDB) এর সহায়তা তুলনামূলকভাবে শর্তমুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক। এখানে প্রতিটি দেশের ভোটের ও প্রতিনিধিত্বের সমান সুযোগ আছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও আগ্রহী করে তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শুধু আর্থিক বিকল্প নয়- এরা এক নতুন উন্নয়ন দর্শনের বাহক। সেই দর্শনে উন্নয়ন নির্ধারিত হয় স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে, বাইরের চাপ বা রূঢ় শর্ত নয়।
বিশ্ব আজ বহুমেরু। অর্থনৈতিক শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে নানা অঞ্চলে। এই বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে আইএমএফকে নিজস্ব কাঠামো ও দর্শনে রূপান্তর আনতে হবে। প্রয়োজন গভর্ন্যান্সের সংস্কার, নীতিনির্ধারণে সমান অংশগ্রহণ, এবং সর্বোপরি সহানুভূতিশীল ঋণ নীতিমালা।
আইএমএফ যদি সত্যিই বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতার অভিভাবক হতে চায়, তাহলে তাকে হতে হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক, এবং আঞ্চলিক বাস্তবতাসম্মত এটি শুধু আইএমএফের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্ন।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ কর তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার পরমর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময়ে এবারের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচারকৃত অর্থ জব্দের মাধ্যমে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে তা হতে পারে এবারের বাজেটের একটি অভিনব উৎস।’
‘গত সরকারের রেখে যাওয়া বিদেশি ঋণের চাপ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এই সরকারের এই সময়ে অন্যতম সাফল্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করে বিদেশি ঋণের চাপ কমিয়ে আনা,’ যোগ করেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ঋণ বিলিয়ন ডলার করে বছর বছর বাড়ছিল। সামগ্রিকভাবে এই সরকারের সাফল্যের জায়গাটা হলো বহির্খাত, রেমিট্যান্স, রপ্তানি, দায়-দেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, মজুদ বাড়ানো ও টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা।’
তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এবং করের আওতা বাড়ানোর মতো নতুন কোনো কিছু না থাকায় এবারের বাজেটে কোনো চমক থাকছে না।’
‘যে প্রকল্পগুলো সরকারের কাছে আছে, তা অতিমূল্যায়িত ও তার ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া। আগের যে প্রকল্পগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হতো, সেগুলো অব্যাহত আছে,’ বলেন তিনি।
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘রাজস্ব ব্যয় সঠিকভাবে না করলে করদাতাদের উৎসাহ থাকে না। আমাদের কর কাঠামো বৈষম্যনির্ভর। আমাদের বৈদেশিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জিত হলেও ব্যক্তি খাতে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ অর্জিত হয়নি।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি নামের একটি বিতর্ক সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
মন্তব্য