উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আধুনিক বিমা ব্যবস্থা চালু করতে চান বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই সরকারি-বেসরকারি বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিমার অর্থ তুলতে গিয়ে সাধারণ মানুষ যাতে কোনো প্রকার হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি কেউ যাতে প্রতারণা করে বিমার অর্থ আত্মসাৎ করতে না পারে সেদিকেও সতর্ক থাকার পরামর্শ সরকারপ্রধানের।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মঙ্গলবার সকালে জাতীয় বিমা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নত বিশ্বের মতো বিমা ব্যবস্থা আমাদের দেশেও চালু হোক, সেটাই আমরা চাই। আমাদের সরকার যে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর অনুমতি দিয়েছে-এগুলো আরও কার্যকর করতে হবে।’
বিমা নিয়ে মানুষের আস্থা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রাহকের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিমা সেবা প্রদান করতে হবে। মানুষকে বিমার বিষয়ে আগ্রহী করতে নতুন নতুন পদ্ধতি কাজে লাগাতে হবে। জনগণকে উৎসাহী করতে হবে। আমার একটা অনুরোধ থাকবে, এই সেবাটি যদি মানুষ হাতের কাছে পায়, তাহলে অনেকে কিন্তু তার জীবনের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে। সেজন্য সরকারি-বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
বিমাকে ‘আমানত’ আখ্যা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনি একটা আমানত রাখছেন। সে আমানতটা যেন যথাযথভাবে সময়মত মানুষ পেতে পারে। আবার এটা পেতে গিয়ে যেন কোনো ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে না হয়।
‘আমি বলব, যেটা তার প্রাপ্য সে যেন সহজে পেতে পারে, সে ব্যবস্থাটাও নিতে হবে। অবশ্য আমি বলব, পাশাপাশি কেউ দুই নম্বরি করে নিতে চাচ্ছে কিনা সেটাও দেখতে হবে। কিন্তু তার টাকাটা যেন সে পায়, কোন হয়রানি যাতে না হয়, সে হয়রানি বন্ধ করতে হবে।’
বীমা নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা জানান, অনেক পোশাক কারখানায় ইচ্ছে করে আগুন লাগিয়ে বীমার টাকা দাবি করার ঘটনা ঘটেছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেকেই ব্যবসা করতে গিয়ে বীমা করে। এরপরে ভুল বা অসত্য তথ্য দিয়ে কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রিমিয়াম থেকে টাকা দাবি করে। আসলে হয়তো এই দাবি সঠিক নয়। এসব বিষয়ে আমাদের সতর্ক হতে হবে।’
সততার সঙ্গে কাজ করলে সব পক্ষ লাভবান হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি জানি আমাদের অনেক ব্যবসায়ীরা আছেন, যারা হয়তো এক্সপোর্ট করছেন বা ইমপোর্ট করছেন। তারা ইন্সুরেন্স করেন না, ওই সামান্য টাকা দিতে হয় সেজন্য।’
কিন্তু যখন দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তার যে বিশাল লোকসান হয়ে যায়, সেটা সে ভুলে যায়। এই ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা আপনাদের নিতে হবে। প্রচার প্রচারনা নিতে হবে, এটা না করলে কী ক্ষতি হতে পারে আর করলে কী লাভ হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘যারা দুনম্বরি করে টাকা নিতে চায়, সেগুলো ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে। এ বিষয়ে আমি মনে করি আপনারা আরও বেশি সতর্ক থাকবেন।’
বিমা চালু করে প্রিমিয়াম না দেয়ার বিষয়টির দিকেও ইঙ্গিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘গ্রাহকেরা বিমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম দেয়ার বিষয়টা ভুলে যায়, বা দেয়া হয় না, মনে থাকে না- এমন একটা অবস্থা হয়। সেখানে তাদের কাছে স্মরণ করিয়ে দেয়া, সেটা ঠিকমতো পৌছালো কি-না সেই ব্যবস্থা নেয়া- এই বিষয়টির দিকেও একটু নজর দিতে হবে। যাতে বিমা সবসময় চালু থাকে।’
বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিমা ব্যবস্থাকেও ডিজিটাইজ ও অটোমেশনের মধ্যে আনতে হবে এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি বিমাখাতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে ইউনিফাইড মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম (ইউএমপি) পদ্ধতি চালু করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিমাখাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ জনকে দেয়া হয় বিশেষ সম্মাননা। তাদের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। এ ছাড়া বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন দুই শিশুর হাতেও বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বিমা তুলে দেন তিনি।
ছয় দফার প্রণেতা বঙ্গবন্ধু
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিমা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তাই বিমার প্রতি নিজের অনুরাগের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফার রচনা করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর তা টাইপ করে সহযোগিতা করেছেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. হানিফ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকে প্রশ্ন করেন, ছয় দফা কে লিখল, কীভাবে লিখল? কারা কারা ছিল? হয়তো অনেক বিশেষজ্ঞ ছিল। বিষয়টা তা নয়, এই আলফা ইনসুরেন্স কোম্পানির অফিসে বসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এটা রচনা করতেন। আর এটা টাইপ করেছিল মোহাম্মদ হানিফ। দিনের পর দিন তিনি বসে বসে ছয় দফা প্রণয়ন করেন এবং হানিফ এটা টাইপ করে। কারণ হানিফ অত্যন্ত বিশ্বস্ত ছিল, কোনোদিন তার কাছ থেকে একটি শব্দও বের করতে পারেনি। সেই ছয় দফা আসলে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ, আমাদের স্বাধীনতার ভিত্তি।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশ ইনসুরেন্স (জাতীয়করণ) আদেশ-১৯৭২ জারি করে ৪৯টি দেশি-বিদেশি বিমা কোম্পানিকে জাতীয়করণ করে সুরমা, রূপসা, তিস্তা এবং কর্ণফুলি নামে চারটি বিমা করপোরেশন গঠন করেছিলেন। একইসঙ্গে এই চারটি প্রতিষ্ঠানকে দেখভাল করতে জাতীয় বিমা করপোরেশন গঠন করেন।
শিক্ষা বিমা চালুর তাগিদ
পৃথিবীর সব দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা বিমা আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পিতা-মাতা বা অভিভাবকের অকাল মৃত্যুতে বা শারীরিক অক্ষমতায় তাদের শিক্ষাজীবন যাতে ব্যাহত না হয় সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমা চালু করা হয়েছে।’
দেশেও এ বিমার চালুর তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেমন একটা সন্তান জন্ম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি এ ধরনের একটা ব্যবস্থা করা যায়, একটা বিমা বাবা-মা করে রাখবেন, শিক্ষা বিমা।
‘সেই সন্তান যখন বড় হবে, হয়তো প্রাথমিক বা মাধ্যমিকে অতটা লাগবে না। কিন্তু উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে তার লাগবে। তাহলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার আর কোনো সমস্যা হবে না। ওই বিমার টাকা দিয়ে ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করতে পারবে। এদিকে আরেকটু বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’
সার্বজনীন পেনশন
দেশের মানুষের জীবনের নিশ্চয়তায় সার্বজনীন পেনশন প্রবর্তন করা হচ্ছে বলেও জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা।
তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা একটি ঘোষণা দিয়েছি, আপনারা জানেন যে আমরা সার্বজনীন একটি পেনশনের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে আমাদের ছোট দেশ, বিশাল জনসংখ্যা। এই জনসংখ্যার জন্য একটি সুরক্ষিত জীবন দেয়া। আমি চাই এদেশে কোনো মানুষ দরিদ্র থাকবে না, হতদরিদ্র থাকবে না। প্রত্যেকের জীবন জীবিকা চালুর মতো একটা সুন্দর ব্যবস্থা আমাদের সমাজে হবে, অর্থনৈতিকভাবে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে প্রতিটি পরিকল্পনা নিচ্ছি কাজ করে যাচ্ছি এবং তার সুফল মানুষ পাচ্ছে।’
উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার পর সেটা ধরে রেখে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা যা করা দরকার সেটা আমরা করে দিচ্ছি।’
আরও পড়ুন:দেশে চলমান দাবদাহ শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ কথা জানায়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৯ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলেছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহের বিষয়ে বলা হয়, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
অপপ্রচার রোধে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরাফাত বলেন, ‘অপপ্রচার রোধে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা কীভাবে কাজ করে, তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রক্রিয়া-পদ্ধতি বিনিময় জানা-বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যেসব কো-অপারেশন আছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিটিভিতে দুই ঘণ্টার একটি চাংক নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষণ, চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে ভারতের যে সংবাদ সংস্থাগুলো আছে, বিশেষ করে এএনআইয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘যেহেতু বিটিভি ইন্ডিয়াতে দেখানো হয়, সেহেতু দুই ঘণ্টার এ চাংক আমরা ধীরে ধীরে দুই, তিন, চার ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াব। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করতে চাচ্ছি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে ইনস্টিটিউশন আছে, তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন করা, বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ও ট্রেনিং করা।’
‘সম্প্রতি মুজিব শিরোনামের যে সিনেমাটি সহ-প্রযোজনা হয়েছে, এমন অন্য কোনো সিনেমায় সহ-প্রযোজনার সুযোগ আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে’- যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতের সিনেমা যেহেতু বাংলাদেশের বাজারে চলে সেহেতু বাংলাদেশেরও ভালো মানের সিনেমা ভারতে চালানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দর্শককে জোর করে কিছু দেখানো যায় না। বাজারে কোনো জিনিসের চাহিদা থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাবে-আসবে। সিনেমা যেহেতু প্রোডাক্ট, সেহেতু ভারতের বাজারে দর্শক থাকলে অবশ্যই যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও কো-অপারেশনের সুযোগ আছে, সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমি মনে করি- বাংলাদেশ এ বিষয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ ভারতের ফিল্মে, টেলিভিশনে বা অন্যান্য জায়গায় যে অভিজ্ঞতা আছে, তা আমরা যত বেশি নেয়ার চেষ্টা করা যায়। দেশের উন্নয়নের জন্য এসব জরুরি।’
আরও পড়ুন:সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অর্জনে অবদান রাখতে এবং দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করায় অবদান রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবকিছু করছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি: স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
সেনাপ্রধান বলেন, ‘মাতৃভূমিকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা সবকিছুই করছি।’
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতির বাণী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে আমরা সবকিছু করছি।’
জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কূটনীতি যেকোনো ধরনের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বেসামরিক শক্তির সহায়তায় সেনাবাহিনী কীভাবে দেশে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড, দেশ-বিদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘যেখানেই সুযোগ আছে, তা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, আমরা সুযোগ গ্রহণ করি এবং বাংলাদেশের স্বার্থে সবকিছু করি।’
সামরিক কূটনীতির কথা বলতে গিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরও সম্পদ ও বাজেট বরাদ্দ করে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা জানি কীভাবে এটা করতে হয়। কিন্তু আমাদের এটা করার সামর্থ্য থাকা উচিত।’
মিয়ানমার ইস্যু প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং এখানে নিজেদের সমস্যায় ফেলার ঝুঁকি রয়েছে।
‘এক বন্ধুকে খুশি করার জন্য আমরা আরেক বন্ধুর বিরোধিতা করতে পারি না। বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা আমাদের খেয়াল করতে হবে। এসব ঘটনার প্রভাবও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং আমরা সঠিক পথেই রয়েছি।’
জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দূর থেকে চালানো যায় এমন কিছু যানবাহন দেশেই তৈরি হচ্ছে যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ উপকারে আসবে। আগে এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হতো। তাই এখন আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল যুদ্ধে লড়াই করাই শেখে না, বরং জাতীয় স্বার্থে কীভাবে যুদ্ধ প্রতিরোধ বা এড়াতে হয় তা-ও জানে। আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবো না।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। এটি তারা কখনও ভুলে যায় না এবং এ কাজে সবসময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
‘উদ্দেশ্য রাতারাতি পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু সক্ষমতা রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। আজ আপনি আমার বন্ধু, আগামীকাল বন্ধু না-ও হতে পারেন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, মাতৃভূমি রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে- পররাষ্ট্রনীতির এই আদেশ আমাদের সবার জন্য সমান।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার ও মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রুমা থানার দুটি মামলায় বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এক নারীকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদসহ মামলায় ৫৭জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বান্দরবান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নাজমুল হোছাইন বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীরা জানান, রুমা থানার জিআর মামলা নং- ৪ ও ৭ মামলায় পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর মধ্যে ৫২জনকে দু’দিন করে রিমান্ড এবং একজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হয়।
এর আগে বান্দরবান জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় ১৮জন নারী ও ৩৯জন পুরুষ বন্দিকে দুটি গাড়িতে করে আদালতে হাজির করা হয়। সম্প্রতি বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে লুটের ঘটনায় তাদেরকে রুমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বান্দরবানে চলমান যৌথ অভিযানে সন্দেহভাজন আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৬জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের অধীনে অন্যান্য সেক্টর কমান্ডারদের মতোই ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। অথচ পরিতাপের বিষয়, সেই বিএনপি মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ দিবস ১৭ এপ্রিল পালন করে না।
গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে ‘নবম আওয়ার ওশান কনফারেন্সে’ যোগ দেয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে নভোটেল এথেন্স হোটেল বলরুমে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিস আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠানের।
মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের যে ভাষণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেই ৭ মার্চও বিএনপি পালন করে না। এ থেকেই স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধে বিএনপি কতটুকু বিশ্বাস করে তা প্রমাণ হয়।
মুজিবনগর দিবস স্মরণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার বৈদ্যনাথতলা অর্থাৎ বর্তমান মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণের আগের মধ্যরাতে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের কলকাতা প্রেসক্লাবে সমবেত হতে বলা হয়। গোপনীয়তার মধ্যে তাদেরকে পরদিন সকালে মুজিবনগরে পৌঁছানো হয় যেখান থেকে তারা সংবাদ পরিবেশন করেন।
এ সময় গ্রিস প্রবাসী বাংলাদেশিদের আইনানুগ ও পরিশ্রমী জীবনের জন্য নিজের ও গ্রিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশংসার কথা জানিয়ে এই সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে ও সবাইকে বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠাতে আহ্বান জানান মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সমবেতদের হর্ষধ্বনির মধ্যে তিনি জানান, গ্রিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সাথে বৈঠকে জানিয়েছেন যে, গ্রিস আরও ৬টি দেশে দূতাবাস খোলার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
গ্রিস আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ ত্রিশটিরও বেশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
গ্রিস আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল মান্নান মাতুব্বরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল হাওলাদারের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য এফেয়ার্স মোহাম্মদ খালেদ, বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিস নেতাদের মধ্যে গোলাম মওলা, হাজী আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুল খালেক মাতুব্বর, আহসান উল্লাহ হাসান, শেখ আল আমিন, আব্দুল কুদ্দুস মাতুব্বর, রায়হান খান, মিজানুর রহমান আলফা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
মন্তব্য