গণটিকা কর্মসূচিতে এক কোটি টিকা প্রয়োগ হলে ৯৫ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় চলে আসবে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
করোনার গণটিকা কার্যক্রম বিষয়ে নিয়ে শনিবার বিকেল ৪টার দিকে জরুরি ভার্চুয়াল সভায় যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ১১ কোটি মানুষকে টিকা প্রথম ডোজ দেয়া সম্ভব হয়ছে। আজ এক কোটি টিকা দেয়া হলে ১২ কোটি মানুষে প্রথম ডোজের আওতায় আসবে। এ ছাড়া ১২ বছরের উপরে যে টিকা দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে, যদি সেই বিচার করি তাহলে, ৯৫ শতাংশ মানুষের বেশি মানুষ টিকা আওতায় আনার সম্ভব হবে। এটা পৃথিবীর মধ্যে একটি বড় উদাহরণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে ৭০ শতাংশ মানুষের টিকার আওয়াত আনার নির্দেশনা পার হয়ে যাবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এক দিনে এক কোটি টিকা দেয়া পৃথিবীর মধ্যে একটি বড় উদারহণ। এটাও খুবই কম দেশ পেরেছে। এর আগেও আমরা এক দিনে ৮০ লাখের বেশি মানুষকে টিকা দিয়েছি। টিকার কোনো কমতি নেই। স্বাভাবিকভাবে চলবে টিকাদান কর্মসূছি। প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজের কার্যক্রম চলমান থাকবে।’
করোনা নিয়ন্ত্রণে আসছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘করোনা তৃতীয় ঢেউ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। মৃত্যুর সংখ্যা ১০ শতাংশের নিচে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিপুল সংখ্যক লোক টিকা নিতে এসেছে। সব কেন্দ্রগুলোই লোকারণ্য। কোথাও কোনো সমস্যার কথা জানতে পারিনি। টিকা নেয়ার আগ্রহ দেখে আমরা অভিভূত। পৃথিবীতে টিকা নেয়ার অনীহা থাকলেও আমাদের দেশের মানুষ টিকাবান্ধব।’
গণটিকাদান আরও দুদিন
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম ডোজের টিকা কার্যক্রম আজকের পরও চলমান থাকবে। দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজের সঙ্গে প্রথম ডোজের টিকা প্রয়োগও চলবে। চলমান গণটিকা কর্মসূচি আরও দুইদিন বৃদ্ধি করা হয়েছে।’
দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার ১৭তম বছর আজ। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) নামের জঙ্গি সংগঠন পরিকল্পিতভাবে দেশের ৬৩ জেলায় একই সময়ে বোমা হামলা চালায়।
মুন্সীগঞ্জ ছাড়া সব জেলায় প্রায় পাঁচ শ পয়েন্টে বোমা হামলায় দুজন নিহত ও অন্তত ১০৪ জন আহত হন।
পুলিশ সদর দপ্তর ও র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার পরপরই সারা দেশে ১৫৯টি মামলা করা হয়।
এর মধ্যে ডিএমপিতে ১৮টি, সিএমপিতে ৮টি, আরএমপিতে ৪টি, কেএমপিতে ৩টি, বিএমপিতে ১২টি, এসএমপিতে ১০টি, ঢাকা রেঞ্জে ২৩টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ১১টি, রাজশাহী রেঞ্জে ৭টি, খুলনা রেঞ্জে ২৩টি, বরিশাল রেঞ্জে ৭টি, সিলেট রেঞ্জে ১৬টি, রংপুর রেঞ্জে ৮টি, ময়মনসিংহ রেঞ্জে ৬টি ও রেলওয়ে রেঞ্জে ৩টি।
সংবাদ সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।
এসব মামলার মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয় ১৪২টি মামলায়। বাকি ১৭টি মামলায় ঘটনার সত্যতা থাকলেও আসামি শনাক্ত করতে না পারায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়নি।
এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন ১৩০ জন। গ্রেপ্তার করা হয় ৯৬১ জনকে। ১ হাজার ৭২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
পুলিশ জানায়, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারা দেশে ১৫৯টি মামলার মধ্যে ৯৪টির বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এসব মামলায় ৩৩৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। এখন ৫৫টি মামলা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে আসামির সংখ্যা হচ্ছে ৩৮৬ জন।
এই সিরিজ বোমা হামলার রায় দেয়া মামলাগুলোর ৩৪৯ জনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ২৭ জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেয়া হয়। এর মধ্যে ৮ জনের ফাঁসি ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে।
এসব মামলায় খালাস পেয়েছে ৩৫৮ জন, আর জামিনে রয়েছে ১৩৩ জন আসামি। এ ছাড়া ঢাকায় বিচারাধীন ৫টি মামলা সাক্ষ্যগ্রহণের শেষপর্যায়ে রয়েছে।
ঝালকাঠি জেলার দুই বিচারককে হত্যার জন্য ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ ছয় জঙ্গি নেতা শায়খ আবদুর রহমান, তার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, সামরিক কমান্ডার আতাউর রহমান সানি, চিন্তাবিদ আব্দুল আউয়াল, খালেদ সাইফুল্লাহ ও সালাউদ্দিনকে ফাঁসি দেয়া হয়।
বিএনপি জামায়াতের শাসন আমলে (২০০১ থেকে ২০০৬) সরকারি এমপি-মন্ত্রীদের সরাসরি মদদে সারা দেশে শক্ত অবস্থান তৈরি করে জঙ্গিরা।
২০০৫ সালের পরবর্তী সময়ে কয়েকটি ধারাবাহিক বোমা হামলায় বিচারক ও আইনজীবীসহ ৩০ জন নিহত হন। আহত হন ৪ শতাধিক।
ওই বছরের ৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরের আদালতে জঙ্গিরা বোমা হামলা চালায়। এতে তিনজন নিহত এবং বিচারকসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হন।
এর কয়েক দিন পর সিলেটে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিপ্লব গোস্বামীর ওপর বোমা হামলার ঘটনায় তিনি এবং তার গাড়িচালক আহত হন।
১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে বিচারক বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায় আত্মঘাতী জঙ্গিরা। এতে নিহত হন ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতের বিচারক জগন্নাথ পাড়ে এবং সোহেল আহম্মদ। এই হামলায় আহত হন অনেক মানুষ।
সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে ২৯ নভেম্বর গাজীপুর বার সমিতির লাইব্রেরি এবং চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে। গাজীপুর বার লাইব্রেরিতে আইনজীবীর পোশাকে প্রবেশ করে আত্মঘাতী এক জঙ্গি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এই হামলায় আইনজীবীসহ ১০ জন নিহত হন। আত্মঘাতী হামলাকারী জঙ্গিও নিহত হয় ।
একই দিন চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে জেএমবির আত্মঘাতী জঙ্গিরা বিস্ফোরণ ঘটায়। সেখানে রাজিব বড়ুয়া নামের এক পুলিশ কনস্টেবল এবং একজন পথচারী নিহত হন। পুলিশসহ প্রায় অর্ধশত আহত হন ।
১ ডিসেম্বর গাজীপুর ডিসি অফিসের গেটে আবারও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেখানে নিহত হন গাজীপুরের কৃষি কর্মকর্তা আবুল কাশেম। এই ঘটনায় কমপক্ষে ৪০ জন আহত হন।
৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নেত্রকোনা শহরের বড় পুকুরপার উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অফিসের সামনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় আত্মঘাতী জঙ্গিরা। সেখানে স্থানীয় উদীচীর দুই নেতাসহ ৮ জন নিহত হন। শতাধিক আহত হন ।
আরও পড়ুন:বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ধৈর্য ধরে আমাদের সঙ্গেই থাকুন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি তেলের দর কমলে বাংলাদেশে তা সহনীয় পর্যায়ে আসবে।
মঙ্গলবার বিকেলে বিদ্যুৎ বিভাগ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের আয়োজনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বৈশ্বিক জ্বালানি বাজার ঊর্ধ্বমুখী, তার কারণে বাংলাদেশও ভুক্তভোগী। তবে এটা সাময়িক সময়ের জন্য। এ বছরের শেষ নাগাদ বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে বলে আশা করছি।’
সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে শেখ হাসিনার সরকার কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহস ও দূরদর্শিতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কাজ করলে আমরা দ্রুত কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাব। রূপকল্প ২০৪১ নির্ধারিত সময়ের আগেই বাস্তবায়ন করতে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেই।
‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেছিল, সেই সব সামরিক স্বৈরশাসকরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দিকে নজর দেননি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলেন তখন থেকে ভঙ্গুর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করল। তিনি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিলেন। যার ফলে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে অবদান রাখতে পারছে।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট শেল অয়েল থেকে পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র কিনে দেশীয় কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করা হয়। দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে এবং জ্বালানির জোগানের ক্ষেত্রে এই গ্যাসক্ষেত্রগুলো বিশাল অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদে গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতীকরণের ব্যবস্থা সন্নিবেশ করে জাতির পিতা বিদ্যুৎ খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন এক অগ্রযাত্রা শুরু করেছিলেন।’
ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে সংযুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম ওয়াসিকা আয়শা খান, বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান, বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ, পিডিবির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান, পাওয়ার সেলের ডিজি মোহাম্মদ হোসাইনসহ বিভিন্ন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
আরও পড়ুন:দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালনা পর্ষদের চার সদস্য।
মঙ্গলবার বিকেলে দুদকের উপ-পরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধানের কাছে এসব নথি হস্তাস্তর করেন ড. ইউনূসের প্রতিনিধি।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ সংবলিত একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠান। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। ২৮ জুলাই গ্রামীণ টেলিকম পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
দূদক সূত্র জানায়, অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ লোপাট, শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধকালে অবৈধভাবে অ্যাডভোকেট ফি ও অন্যান্য ফি’র নামে ৬ শতাংশ অর্থ কেটে নেয়া, শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দকৃত সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩ টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎ এবং প্রতিষ্ঠান থেকে ২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ সংবলিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
একইসঙ্গে চলতি মাসের শুরুতে ড. ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের সব ব্যাংক হিসাব তলব করে দুদক। শুধু তাই নয়, কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পর থেকে লেনদেনের সব তথ্যও চাওয়া হয়।
চিঠিতে গ্রামীণফোন কোম্পানিতে গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির শেয়ার ও এর বিপরীতে ১৯৯৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি কত টাকা লভ্যাংশ পেয়েছে এবং তা কোন কোন খাতে ও কীভাবে ব্যয় করেছে, তার বছরভিত্তিক তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন:রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি ইস্যুতে দ্রুতই সে দেশ থেকে একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে। রুশ বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে বিদ্যমান তেল শোধনাগারগুলো পরিদর্শন করে এখানে রাশিয়ান তেল পরিশোধনের উপায় ও উপযোগিতা বিশ্লেষণ করবেন।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়া থেকে ভারত জ্বালানি তেল আনছে। তাই সেখান থেকে জ্বালানি তেল আমদানিতে বাংলাদেশেরও টেকনিক্যাল কোনো সমস্যা হয়তো নেই। তবে ঘাটতি থাকতে পারে ক্যাপাসিটির। কারণ ভারতের মতো ক্যাপাবিলিটি হয়তো আমাদের নেই।’
এই সিনিয়র সচিব বলেন, ‘রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রিফাইন করার ক্যাপাসিটি যদি আমরা করে নিতে পারি তাহলে সেখান থেকে আমরাও জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারি। তবে সেটা হয়তো একটু সময়সাপেক্ষ।
‘এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের একটি দল আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ঢাকায় আসছেন। আমাদের যে শোধনাগারগুলো আছে, সেগুলো পর্যবেক্ষণের কাজগুলো চলবে। যে কারিগরি প্রতিবন্ধকতাগুলো আছে, আমরা সেগুলো আপডেট করার কাজ করব। যেহেতু আজ নির্দেশনা এসেছে, তাই আমরা দ্রুতই অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসব। প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের কাজগুলো দ্রুত শেষ করা হবে।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘অনেকেই তো তেল নিচ্ছে। সুতরাং আমরাও নিতে পারব। অনেকে তো থার্ড কান্ট্রি থেকেও নেয়। আমি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের লোক নই। তবু যতটুকু শুনেছি, বিষয়টি টেকনিক্যাল। আমাদের রিফাইনারিগুলো রাশিয়ান গাঢ় ক্রুড রিফাইন করার উপযুক্ত নয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘রাশিয়া থেকে তেল কিনলে ‘মুভ অফ পেমেন্ট’ কী হবে তা অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক ঠিক করবে।’
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার ইউরোপ ও আমেরিকা। রাশিয়ান তেল ও গ্যাস আমদানির ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে রাশিয়া থেকে তেল আনলে বিষয়টি আমাদের রপ্তানি বাজারে ঝুঁকি তৈরি করবে কীনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমরা তা দেখব। আর সেটি অনেক পরের ব্যাপার। কেবল কথা শুরু হলো। আমাদের এক্সপ্লোর করার কথা বলা হয়েছে। আমরা এক্সপ্লোর করে দেখব। যদি সে রকম কোনো ঝুঁকি থাকে তখন আমরা বিকল্প ব্যবস্থা দেখব।’
বিকল্প উৎস সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত ও সিনিয়র পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশের সঙ্গেই আমাদের যথেষ্ট ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সেদিনও সৌদি রাষ্ট্রদূত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তারা বাংলাদেশকে এ বিষয়ে সহায়তা করতে রাজি আছেন। কাতারের সঙ্গেও আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। ওই দেশ থেকে আমরা এলএনজি আমদানি করি। ফলে আমাদের অনেক অপশন আছে।’
বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশ ইরান থেকে তেল আনার সম্ভাবনা আছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘এটাও একটা পসিবিলিটি। ইরান থেকেও তেল আনা যায়। সে সম্ভাবনাও এক্সপ্লোর করা যায়। ইরানের ওপরও কিছু নিষেধাজ্ঞা আছে। তবে তাদের সঙ্গে পশ্চিমাদের নেগোসিয়েশন চলছে। সেটার একটা পজিটিভ আউটকাম এলে তাদের ওপর থেকে হয়তো নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। তখন এটাও একটা সম্ভাবনা তৈরি করবে।
‘তবে ইরানের যে সুইট ক্রুড আছে তা আমাদের রিফাইনারিতে কতটা কাজ করবে, তা ভেবে দেখতে হবে। মোট কথা, যতোগুলো সম্ভাবনা আছে তা আমাদের কাজে লাগাতে হবে।’
সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমাদের সামনে যে সুযোগগুলো রয়েছে, সেগুলো কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেটা সবার আগে দেখতে হবে। বিদ্যমান পাইপলাইনে সরবরাহটা যেন নিশ্চিত থাকে। সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যকেই অগ্রাধিকারে রাখছে সরকার। কারণ এতোদিন তারাই আমাদের জ্বালানি তেলের যোগানটা দিয়ে এসেছে।’
সচিব বলেন, ‘ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়াসহ অন্য সোর্সগুলোও যাচাই করা হবে। তবে আগে তাদের সঙ্গে আমাদের এ বিষয়ক কোনো বাণিজ্য হয়নি। তাই এখনই এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
কাজী আনারকলি ইস্যু
ইন্দোনেশিয়া থেকে বহিষ্কৃত কূটনীতিক কাজী আনারকলি সম্পর্কিত প্রাথমিক তদন্ত শেষ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় তার বাসায় মারিজুয়ানা থাকার বিষয়টি প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে আমরা মারিজুয়ানা সংক্রান্ত তথ্য পেয়েছি। এক্ষেত্রে আমাদের সরকারি কর্মচারী বিধিমালা মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা পরবর্তী প্রসিডিংয়ে হয়তো আরো গভীরে যেতে পারব।’
এটা ফোজদারি অপরাধ কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘না। এটা তো অন্য দেশের ঘটনা। এটা একেক দেশে একেক রকম। এটা যদি যুক্তরাষ্ট্রে হতো তাহলে সেখানকার অর্ধেক রাজ্যেই এটা কোনো বিষয় না। নেদারল্যান্ডেও কোনো বিষয় না। তাই আমরা আপাতত অফিসিয়াল অ্যাক্টেই বিষয়টি দেখছি।’
‘তার বাসায় কোনো বিদেশি থাকার সত্যতা আমরা পাইনি। তবে মারিজুয়ানা থাকার সত্যতা মিলেছে। তবে তা খুবই কম পরিমাণ। বিক্রির জন্য নয়, সেবনের জন্যই এটা রাখা হয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ মিলেছে।
‘তবে প্রপার ইনভেস্টিগেশনে সব পরিষ্কার হবে। ইন্দোনেশিয়া থেকে তো আমরা এক ধরনের ইনফরমেশন পেয়েছি। তার ভিত্তিতেই আমরা তাকে দেশে নিয়ে এসেছি। তদন্তের স্বার্থে আবার আমাদেরকে সেখানে যেতে হলে তখন আমাদের তদন্ত কর্মকর্তা সেখানে যাবে। তিনি সেখানে গেলে হয়তো আরো ডিটেইলস বের করতে পারবেন।’
সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে
সুইস রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য নিয়ে বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলে মনে করেন পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে শিগগির আমরা আমাদের স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বসব। হয়তো তাদের কাছে পরিপূর্ণ তথ্য নেই। আবার আমাদের কাছেও হয়তো সব তথ্য নেই। সুতরাং দুই দেশের সরকারের মধ্যে যদি মেকানিজম তৈরি করা যায়, সেটাই চেষ্টা করা হবে।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা ইউনিট আছে। ওদেরও ইন্ডিপেন্ডেন্ট বডি আছে। তাদের সঙ্গে হয়তো পারস্পরিক সংযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে হয়তো সুইস অ্যাম্বাসেডর ওয়াকিবহাল নন। সে ক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ আছে।
বার্নে সুইস অথরিটির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। সুইস দূতাবাসের সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে। তাদের অন্যান্য অথরিটির সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। তাদের সঙ্গে যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে আমরা তা অবসানের চেষ্টা করব। সুইজারল্যান্ড আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ। আমাদের ডেভেলপমেন্ট পার্টনার। তাই তাদের সঙ্গে কোনো ভুল বোঝাবুঝি হোক তা আমরা চাই না।’
সচিব বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব যেন বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার না হয়। আর বিদেশে থাকা টাকার পুরোটাই পাচার হওয়া নয়। আমাদের অনেক প্রবাসী ব্যবসায়ীও দেশ থেকে টাকা নিয়ে থাকেন বলে শুনেছি।’
আরও পড়ুন:ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তিনটি মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ উৎসাহ (পারফরম্যান্স) বোনাস ঘোষণার বিষয়ে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে বিধি প্রণয়ন না করে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম নির্ধারণ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছে হাইকোর্ট।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) চেয়ারম্যান স্থপতি মোবশ্বের হোসেনের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
এলজিআরডি সচিব, ঢাকা ওয়াসা বোর্ড, ঢাকা ওয়াসার চেয়ারম্যান, এমডি ও সিইও এবং অডিটর ও কম্পট্রোলারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
ওয়াসার কর্মীদের উৎসাহ বোনাস এবং পানির দাম বৃদ্ধি নিয়ে সম্প্রতি সংবাদ প্রকাশ হয়। পত্রিকার প্রতিবেদন যোগ করে হাইকোর্টে এ রিট করা হয়।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৭ এপ্রিল ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ২৯১তম সভায় পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড (উৎসাহ বোনাস) দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। করোনা মহামারি–পরবর্তী ২০২০-২১ অর্থবছরের পারফরম্যান্সের জন্য ঢাকা ওয়াসার স্থায়ী, চুক্তিভিত্তিক ও প্রেষণে নিয়োজিত কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের তিনটি মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ বোনাস দেওয়া হবে। আর গত ২৫ জানুয়ারি ২৮৬তম সভায় কর্মীদের একটি মূল বেতনের অর্ধেক ইন্টেরিম (অন্তর্বর্তীকালীন) পারফরম্যান্স বোনাস দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাড়ে তিনটি পারফরম্যান্স বোনাস দিতে সংস্থাটির ব্যয় হবে ১৯ কোটি টাকার বেশি।
পানির দামের বিষয়ে গণমাধ্যমে বলা হয়, আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে ঢাকা ওয়াসা বোর্ড। ১ সেপ্টেম্বর থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু বোর্ডের এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নয় ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। আবাসিকে ২৫ শতাংশ এবং বাণিজ্যিক সংযোগে ১৯ শতাংশ পর্যন্ত পানির দাম বাড়াতে চায় তারা। এ জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন:জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সময় দলের নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, কেন তখন কেউ এগিয়ে এলো না?
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দলের অনেক নেতাকে ফোন করেছিলেন, কী করেছিলেন তারা? বেঁচে থাকলে সবাই থাকে, মরে গেলে কেউ থাকে না, এটাই তার জীবন্ত প্রমাণ। আর সে জন্য আমিও কিছু আশা করি না।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস স্মরণে মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগপ্রধান।
২০২০ সালের মার্চে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর শেখ হাসিনা এই প্রথম দলের বড় কোনো অনুষ্ঠানে সরাসরি অংশ নিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেলজিয়ামে থাকায় প্রাণে বেঁচেছেন। এরপর সেখান থেকে তিনি জার্মানি হয়ে যান ভারতে। ছয় বছরের নির্বাসন জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালে ফেরেন দেশে। নেতৃত্বে আসেন আওয়ামী লীগের।
দেশে ফেরার ১৫ বছর পর শেখ হাসিনার হাত ধরেই ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। আর এরপর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে জাতির পিতাকে হত্যার বিচারের পথ খোলেন।
এর পরও নানা ঘটনাপ্রবাহ শেষে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার সরকারে ফিরলে উচ্চ আদালতের সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পাঁচ খুনি সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
রায় কার্যকরের আগেই ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আরেক খুনি আজিজ পাশা।
২০২০ সালের ৭ এপ্রিল ভোরে মিরপুরের গাবতলী এলাকায় কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের একটি দল আটক করে আরেক পলাতক আসামি খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্তকৃত) আবদুল মাজেদকে। সেদিন দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয় কারাগারে। সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে পাঁচ দিন পর ১২ এপ্রিল প্রথম প্রহরে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মাজেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
এখনও পাঁচ খুনি নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী, খন্দকার আবদুর রশিদ, শরীফুল হক ডালিম ও মোসলেহউদ্দিন খানের সাজা কার্যকর করা যায়নি তাদের দেশে ফেরাতে না পারায়।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় প্রতিবাদ হয়নি কেন- প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৫ আগস্ট থেকে ১৬ আগস্ট, ৩২ নম্বরে লাশগুলো তো পড়ে ছিল। কত স্লোগান। বঙ্গবন্ধু তুমি আছো যেখানে আমরা আছি সেখানে, অমুক-তমুক অনেক স্লোগান তো ছিল, কোথায় ছিল সেই মানুষগুলো?
‘একটি মানুষ ছিল না সাহস করে এগিয়ে আসার? একটি মানুষ ছিল না প্রতিবাদ করার? কেন করতে পারেনি? এত বড় সংগঠন, এত লোক কেউ তো একটা কথা বলার সাহসও পায়নি? জাতির পিতা তো অনেককে ফোনও করেছিলেন কোথায় ছিলেন তারা?’
নিদারুণ অবহেলায় জাতির পিতাকে সমাহিত করার বিষয়টি নিয়েও আক্ষেপ করেন তার কন্যা। বলেন, ‘১৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে গেল টুঙ্গিপাড়ায়। কারণ দুর্গম পথ যেতে ২২ থেকে ২৪ ঘণ্টা লাগবে। তাই কেউ যেতে পারবে না। তাই সেখানে নিয়ে মা-বাবার কবরের পাশে মাটি দিয়ে আসে।
‘বাংলাদেশের গরিব মানুষের রিলিফের কাপড় তিনি দিতে পারতেন, সেই রিলিফের কাপড়ের পাড় ছিঁড়ে সেটা দিয়েই তাকে কাফন দেয়া হয়েছিল। ১৬ তারিখ বাকি লাশগুলো বনানীতে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। মুসলমান হিসেবে এতটুকু দাবি থাকে জানাজা পড়ার, সেটাও তো পড়েনি। কাফনের কাপড় সেটাও দেয়নি। ’৭৫-এর ঘাতকরা বাংলাদেশকে ইসলামিক রাষ্ট্র করার ঘোষণা দিয়েছিল, কিন্তু এ ক্ষেত্রে তো ইসলামের কোনো বিধি তারা মানেনি।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘জাতির পিতা কিছু নিয়ে যাননি, শুধু দিয়ে গেছেন। একটা দেশ দিয়ে গেছেন, একটা জাতি দিয়ে গেছেন, পরিচয় দিয়ে গেছেন। আত্মপরিচয় দিয়ে গেছেন। বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলে উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করে দিয়েছেন। কিছুই নিয়ে যাননি বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে। আমার মা বা ভাই-বোন, তারাও কিছুই নিয়ে যাননি। আমার একটাই কথা, জাতির দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব সহ্য করে নীলকণ্ঠ হয়ে অপেক্ষা করেছি কবে ক্ষমতায় যেতে পারব, দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব। তাহলেই হত্যার প্রতিশোধ নেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘যদি ৯৬ সালে সরকারে আসতে না পারতাম। যদি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করতে না পারতাম এই হত্যার বিচার হতো না। বারবার বাধা এসেছে। এমনকি বিচারের কথা বলতে গিয়ে বাধা পেয়েছি। বিচার করলে নাকি কোনো দিন ক্ষমতায় যেতে পারব না।
‘আমি বাধা মানি নাই দেশে-বিদেশে জনমত সৃষ্টি করেছি। সর্বপ্রথম এই হত্যার প্রতিবাদ করে বক্তব্য দিয়েছে আমার বোন রেহানা।’
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার পরিবার নিয়ে চালানো অপপ্রচার নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘কত অপপ্রচার চালানো হয়েছে আমার বাবা, মা, ভাইয়ের নামে! কত অপপ্রচার, কোথায় সেগুলো। কত রকমের মিথ্যা অপপ্রচার দিয়ে দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তার পরও যখন দেখে বাংলাদেশের মানুষের মন থেকে জাতির পিতাকে মুছে ফেলা যায় না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে হারিয়ে বেঁচে আছি। এ বাঁচা কত যন্ত্রণার বাঁচা যারা বাঁচে তারাই জানে। আমাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছিল।’
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর বাস ভাড়া যে হারে বাড়ানো হয়েছে, তার চেয়ে বেশি আদায়ের প্রমাণ এখনও মিলছে সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর অভিযানে। কেবল জরিমানা করেই বাসগুলোকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে, যদিও বারবার বলা হয়েছে এ অভিযোগ পেলে রুট পারমিট বাতিলসহ নানা ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিআরটিএ উপপরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) হেমায়েত উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার জানানো হয়, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১৮টি বাসকে ৭৪ হাজার টাকা জরিমানা করেছে সংস্থাটির ভ্রাম্যমাণ আদালত। দুই মহানগরে ১১টি স্পটে এই অভিযান চালানো হয়।
গত ৫ আগস্ট ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানোর পর বাস ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি আড়াই টাকা নির্ধারণ করে জানিয়ে দেয়া হয় সর্বনিম্ন ভাড়া হবে ১০ টাকা। এই ভাড়ায় যাওয়া যাবে চার কিলোমিটার পর্যন্ত।
কিন্তু রাজধানী ও চট্টগ্রাম মহানগরে এই হারের চেয়ে বেশি ভাড়া আগেই কাটা হচ্ছিল। এবার তার চেয়ে বেশি হারে ভাড়া নেয়া হচ্ছে। ওয়েবিলের নামে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর আলাদা হিসাবে ভাড়া আদায় করা বাসগুলো কোনো কোনো গন্তব্যে সর্বনিম্ন আদায় করছে ২৫ টাকা পর্যন্ত।
এভাবে ওয়েবিলের নামে কোনো কোনো রুটে, এমনকি কিলোমিটারে ৫ টাকার চেয়ে বেশি হারে ভাড়া আদায়ের প্রমাণ মিলছে।
বেসরকারি বাস তো বটেই, সরকারি পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির বাসেও বাড়তি ভাড়া আদায়ের প্রমাণ আছে। আর হাতিরঝিলে সরকারি আবাসন সংস্থা রাজউক পরিচালিত চক্রাকার বাসে রীতিমতো গলা কাটা হচ্ছে। এখানে তিন কিলোমিটার দূরত্বে ২০ টাকা আর চার কিলোমিটারের সামান্য কিছু বেশি দূরত্বে ২৫ টাকা আর সাত কিলোমিটারের কিছু বেশি দূরত্বে চক্রাকার পথে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৪৫ টাকা। তবে বিআরটিএ এই দুই সরকারি সংস্থাকে কিছুই করছে না।
গত নভেম্বরে তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর যখন বাস ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করা হয়, তখনও এভাবে যাত্রীদের ঠকাতে দেখা যায়। বিআরটিএ সে সময় বাড়তি ভাড়া নিলে রুট পারমিট বাতিলসহ কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেয়।
কিন্তু পরে দেখা যায়, এভাবে কয়েক দিন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার পর সংস্থাটি রণে ভঙ্গ দেয়। এবারও তারা এই ব্যর্থ পথেই হাঁটছে। অথচ ভাড়া নিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে। আর ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলন করে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আর কিছুই বলেননি।
বিআরটিএর অভিযানে বাড়তি ভাড়া আদায় ছাড়াও আরও অনিয়মের দায়ে জরিমানা করা হয় মোট ৮১টি বাসকে। আদায় করা হয় ২ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা।
এক রুটের পারমিট নিয়ে অন্য রুটে বাস চালানো, হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার, ফিটনেস না থাকায় এই জরিমানা করা হয়। আর রুট পারমিট না থাকায় চারটি বাসকে ডাম্পিং বা জব্দ করা হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য