নদী-খাল-বিল-পুকুরে দেশে বছরে ১৪ থেকে ১৫ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়। এই মৃত্যু ঠেকাতে শিশুদের সাঁতার শেখানোসহ একটি বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার, যাতে গড়ে তোলা হবে আট হাজারের বেশি শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র। প্রতি কেন্দ্রে ২৫ জন শিশুকে রেখে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও বিনোদনের ব্যবস্থাও থাকবে।
শিশুদের সাঁতার শেখানো হবে পুকুরে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন পুকুরকেই বেছে নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। দিবাযত্নকেন্দ্রগুলো হবে গ্রামে বাড়ির উঠানে।
কীভাবে শিশুদের নিরাপদে এসব কেন্দ্রে রাখা যায়, তার একটি মডেল প্রকল্প আছে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে। সেই অভিজ্ঞতা হাতে-কলমে শিখতে সরকার ১৬ জন কর্মকর্তাকে পাঠাবে দেশটিতে। প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশে ফিরে এ প্রকল্পের একটি মডেল তৈরি করবেন তারা। পাশাপাশি শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র যারা পরিচালনা করবেন, তাদের প্রশিক্ষণ হবে দেশে।
দেশে যত শিশুর মৃত্যু হয়, তার মধ্যে প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। দ্বিতীয় অবস্থানেই আছে পানিতে ডুবে মৃত্যু। প্রতিদিন এভাবে গড়ে মারা যায় ৪০ শিশু, যাদের বেশির ভাগের বয়স ১০ বছরের নিচে। বছর শেষে সংখ্যাটি দাঁড়ায় ১৪-১৫ হাজার।
সরকার মনে করে, উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা ও সাঁতার শিখিয়ে এ মৃত্যু ৮৮ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। তাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার শিশুদের সাঁতার শেখানোর পাশাপাশি তাদের দিনের একটা সময় শিশু দিবাযত্নকেন্দ্রে রাখার চিন্তা করা হয়।
এই প্রকল্পে শিশুদের সাঁতার শেখানো আসলে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ। প্রথম পর্যায়ে দুই থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত তিন বছর শিশুদের দিবাযত্নকেন্দ্রে রেখে তার শৈশবের প্রারম্ভিক বিকাশের সুযোগ করে দেয়া। সেখানে নিরাপদে থাকার পাশাপাশি তার বিনোদন ও পুষ্টি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা থাকবে। সাঁতার শেখানো হবে ছয় বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নার্গিস খানম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্রামের বাচ্চাদের সুরক্ষায় আমরা নতুন একটি মডেল করতে যাচ্ছি। কারণ যার শিশু মারা যায়, সেই বোঝে কী কষ্ট। ব্লুমবার্গ ও আরএনএলআই থাকবে এ প্রকল্পে, তারা দেখাশোনা করবে। তাই এটি একটি আদর্শ প্রকল্পই হবে।’
কতজনকে প্রশিক্ষণ, খরচ কত
গোটা প্রকল্পটি ২৭১ কোটি টাকার। এ জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। সেখানে যাবেন মোট ১৬ জন কর্মকর্তা। অর্থাৎ একেকজন কর্মকর্তার পেছনে ব্যয় হবে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা।
ভবিষ্যতে বিদেশে কোথাও সেমিনার বা এই ধরনের আয়োজনে অংশ নিতে হয়, সে জন্যও বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২০ লাখ টাকা।
প্রশিক্ষণের ব্যয় আরও বেশি, মোট ১১ কোটি টাকা। এই ব্যয়ের প্রায় সবটাই হবে দেশে। এই প্রশিক্ষণে শিশুদের সাঁতার শেখানো ছাড়াও থাকবে দিবাযত্নকেন্দ্রে তাদের সঙ্গে আচরণ কেমন হবে, সেটি শেখানো।
এই প্রকল্পে শিশুদের সাঁতার শেখানো আসলে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ। প্রথম পর্যায়ে দুই থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত তিন বছর শিশুদের দিবাযত্নকেন্দ্রে রেখে তার শৈশবের প্রারম্ভিক বিকাশের সুযোগ করে দেয়া। সেখানে নিরাপদে থাকার পাশাপাশি তার বিনোদন ও পুষ্টি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা থাকবে। সাঁতার শেখানো হবে ছয় বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত।
ভারতের মডেল শিখে এসে ১৬ কর্মকর্তা দেশে প্রশিক্ষণ দেবেন ৬২৪ জনকে। এরা পরে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করবেন। তারা ১৬ হাজার মাকে প্রশিক্ষণ দেবেন, যারা দিবাযত্নকেন্দ্রে শিশুদের দেখভাল করবেন।
আর শিশুদের সাঁতার শেখাবেন যে ১ হাজার ৬০০ জন, তাদের প্রশিক্ষণ দেবেন সাঁতারুরা।
সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে এই প্রকল্প নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় চলছে। সাঁতার শেখাতে কেন বিদেশে পাঠাতে হবে- এমন প্রশ্ন তুলছে হাজার হাজার মানুষ। আর সেই প্রতিবেদনে বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যয় ৫০ কোটি টাকা উল্লেখ করার পর এই প্রশ্ন আরও বড় হয়েছে।
বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যয় ৩০ লাখ টাকা। তবে সামগ্রিক ব্যয় আরও বেশি, মোট ১১ কোটি টাকা। এর প্রায় সবটাই হবে দেশে। এই প্রশিক্ষণের শিশুদের সাঁতার শেখানো ছাড়াও থাকবে দিবাযত্নকেন্দ্রে তাদের সঙ্গে আচরণ কেমন হবে, সেটি শেখানো। ভারতের মডেল শিখে এসে ১৬ কর্মকর্তা দেশে প্রশিক্ষণ দেবেন ৬২৪ জনকে। এরা পরে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করবেন। তারা ১৬ হাজার মাকে প্রশিক্ষণ দেবেন, যারা দিবাযত্নকেন্দ্রে শিশুদের দেখভাল করবেন। আর শিশুদের সাঁতার শেখাবেন যে ১ হাজার ৬০০ জন, তাদের প্রশিক্ষণ দেবেন সাঁতারুরা।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য নাসিমা বেগমকে উদ্ধৃত করে একটি গণমাধ্যম লিখেছে, ‘দুইটি টিমে ৮ জন করে ১৬ জন কর্মকর্তা বিদেশ যাবেন। এর জন্য ব্যয় হবে ৩০ কোটি টাকা।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাকে মিড কোড করা হয়েছে। এমনটি আমি বলিনি।…আমি যা বলিনি তা লিখবে কেন? বক্তব্য লেখার সময় আরও সংযত হয়ে লেখা উচিত। তবে এ নিয়ে আর কথা বলতে চাই না।’
কেন ভারতে প্রশিক্ষণ
প্রশিক্ষণের জন্য ভারতকে বেছে নেয়ার কারণ দুটি। প্রথমত, প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় সেখানে খরচ অনেক কম। দ্বিতীয়ত, সেখানে এই ধরনের একটি পরীক্ষিত মডেল রয়েছে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নার্গিস খানম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভারতে আরও আগে থেকেই ব্লুমবার্গের অর্থায়নেই একটা মডেল রয়েছে, যার নাম আঙ্গনওয়াড়ি মডেল বা উঠান মডেল। এখানে ছোট একটি এলাকার পরিবারগুলো মিলে কারও উঠানে শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র পরিচালনা করে। এই মডেল কীভাবে কাজ করছে, কী কী সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে ইত্যাদি দেখতে যাবেন কর্মকর্তারা।’
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য নাসিমা বেগম বলেন, ‘চাইল্ড কেয়ারের বিষয়টিতে কর্মকর্তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা নিতে এই বিদেশ সফরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শিশুদের কীভাবে ডে-কেয়ারে রেখে সুন্দর লাইফ দেয়া যায়, সেটাই দেখতে যাবেন তারা। কারণ আমরা অনেকেই শিশুদের সঙ্গে যে আচরণ করি, তেমনটি করা উচিত না। তাদের শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিভিত্তিক বিকাশের জন্য সুন্দর ও উপযুক্ত ব্যবহার করতে হবে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে তিনটি কৌশল সবচেয়ে কার্যকর। এক. পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী শিশু-যত্নের ব্যবস্থা করা। দুই. সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় জোর দিয়ে ৬-১০ বছরের শিশুদের সাঁতার শিক্ষার ব্যবস্থা করা। তিন. শিশুদের নিরাপত্তাঝুঁকি এবং তা হ্রাস করার পদ্ধতি সম্পর্কে জনসাধারণ, মা-বাবা ও অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তিনটি প্রতিরোধ কৌশলই অন্তর্ভুক্ত করে ১৬টি জেলায় ৪৫টি উপজেলায় এই প্রকল্প পরিচালনা করা হবে।
প্রকল্পের বিস্তারিত
প্রকল্পটির নাম ‘সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশু দিবাযত্নকেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং শিশুর সাঁতার সুবিধা প্রদান’। এটি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প, যেটির বাস্তবায়ন করবে শিশু একাডেমি।
এতে শিশুদের সাঁতার শেখানোর জন্য দেশে প্রায় দেড় হাজার প্রশিক্ষক তৈরি করা হবে। পাশাপাশি প্রায় আট হাজার দিবাযত্নকেন্দ্রও তৈরি করা হবে।
একেকটি দিবাযত্নকেন্দ্রে দিনে রাখা হবে ২৫টি শিশুকে। তাদের দেখভালের মূল দায়িত্বে থাকবেন সেই শিশুদের মায়েদের মধ্য থেকে দুজন। এ দুজনকে দেয়া হবে বিশেষ প্রশিক্ষণ, দেয়া হবে ভাতাও।
গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে কার্যক্রমের আওতায় আসবে সাড়ে পাঁচ লাখেরও বেশি শিশু।
এই প্রকল্পের অর্থিক সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিজ ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউট (আরএনএলআই)।
মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে দেড় থেকে ১০ বছরের শিশুরা। এর মধ্যে বেশি শিশু মারা যায় দেড় থেকে দুই বছরে। কারণ এ সময় তারা হাঁটাচলা শেখে, চোখের পলকে এদিক-সেদিক চলে যায়। এ জন্য শিশুদের বয়সকে দুই ভাগ করে তাদের আলাদা ব্যবস্থাপনায় আনা হবে।
প্রকল্পটির নাম ‘সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশু দিবাযত্নকেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং শিশুর সাঁতার সুবিধা প্রদান’। এটি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প, যেটির বাস্তবায়ন করবে শিশু একাডেমি। এতে শিশুদের সাঁতার শেখানোর জন্য দেশে প্রায় দেড় হাজার প্রশিক্ষক তৈরি করা হবে। পাশাপাশি প্রায় আট হাজার দিবাযত্নকেন্দ্রও তৈরি করা হবে।
এর মধ্যে এক থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের দিবাযত্ন কেন্দ্রে পরিচর্যায় রাখা হবে। এতে তারা পানিতে পড়ার ঝুঁকি থেকে যেমন বাঁচবে, তেমনি বাঁচবে অন্যান্য আঘাত ও আঘাতজনিত মৃত্যু থেকে।
আর পাঁচ থেকে ১০ বছর বয়সের শিশুরা একটু বড়। তারা স্কুলসহ অন্যান্য কাজে বাইরে যাবেই। তাই তাদের সাঁতার শিখিয়ে সুরক্ষা দেয়া হবে। এতে তাদের মৃত্যুঝুঁকি অনেক কমে আসবে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা) নার্গিস খানম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, মায়েরা বাসায় কাজ করছে, তখন শিশু হেঁটে ঘরের বাইরে গিয়ে পুকুর বা ডোবায় পড়ে যায়। কর্মজীবী মায়েদের শিশুদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। এ জন্য সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাদের গ্রামীণ পরিবেশেই দিবাযত্নকেন্দ্রে রাখা হবে। তাদের দেখাশোনার জন্যও মানুষ থাকবে, আবার সবার সঙ্গে মিশে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশও ঘটবে।’
কেমন হবে দিবাযত্নকেন্দ্রগুলো
নার্গিস খানম জানান, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে গ্রাম এলাকায় কাজ করা এনজিওগুলোর মাধ্যমে। দিবাযত্নগুলো হবে একেবারেই কমিউনিটিভিত্তিক। স্বেচ্ছা অংশগ্রহণের ভিত্তিতে কারও উঠান বা বাসাকে বেছে নেয়া হবে।
শিশুদের জন্য খেলনার ব্যবস্থা থাকবে সেখানে। গ্রামের শিশুরা যেসব উপকরণ দিয়ে খেলে, সেগুলোই রাখা হবে সেখানে। সেবাদানকারীরা বাচ্চাদের সঙ্গে খেলবেন, গান করবেন, তাদের শৈশবের বিকাশে সাহায্য করবেন।
নার্গিস খানম বলেন, ‘কোনো মা-বাবা হয়তো মাঠে কাজ করছেন, ঘরের কাজ করছেন। কিন্তু তার বাচ্চা আর ঝুঁকিতে থাকল না। পরিচিত বাচ্চাদের সঙ্গে খেলেই বড় হবে সে।’
কেবল সময় কাটানো বা নিরাপদে রাখা নয় নয়, শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিতেও এই প্রকল্প ভূমিকা রাখবে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘বাচ্চার সুন্দর বিকাশের জন্য কীভাবে তার সঙ্গে আচরণ করতে হবে, তাদের সুষম খাবার কেমন হবে, তা নিয়েও মায়েদের সঙ্গে সেশন থাকবে।’
দিবাযত্নগুলো হবে একেবারেই কমিউনিটিভিত্তিক। স্বেচ্ছা অংশগ্রহণের ভিত্তিতে কারও উঠান বা বাসাকে বেছে নেয়া হবে। শিশুদের জন্য খেলনার ব্যবস্থা থাকবে সেখানে। গ্রামের শিশুরা যেসব উপকরণ দিয়ে খেলে, সেগুলোই রাখা হবে সেখানে। সেবাদানকারীরা বাচ্চাদের সঙ্গে খেলবেন, গান করবেন, তাদের শৈশবের বিকাশে সাহায্য করবেন।
সাঁতার শেখানো ও শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র কেন প্রয়োজন
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১৭-এর তথ্য বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২৪ হাজার ৩০০টি শিশুর মৃত্যু হয়। এর পরেই রয়েছে পানিতে পড়ে মৃত্যুর সমস্যা।
২০১৬ সালে করা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বছরে প্রায় ১৪ হাজার ৪৩৮টি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ৪০ জনের মতো।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, পানিতে ডুবে মৃত্যুর শতকরা ৮৮ ভাগ পর্যন্ত প্রতিরোধ করা সম্ভব।
২০১৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালিত বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও দুর্ঘটনা সমীক্ষা বলছে, বাংলাদেশের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে। এই মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটে বাড়ির ২০ মিটারের মধ্যে জলাধারে এবং দিনের প্রথমভাগে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে তিনটি কৌশল সবচেয়ে কার্যকর। এক. পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী শিশু-যত্নের ব্যবস্থা করা। দুই. সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় জোর দিয়ে ৬-১০ বছরের শিশুদের সাঁতার শিক্ষার ব্যবস্থা করা। তিন. শিশুদের নিরাপত্তাঝুঁকি এবং তা হ্রাস করার পদ্ধতি সম্পর্কে জনসাধারণ, মা-বাবা ও অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তিনটি প্রতিরোধ কৌশলই অন্তর্ভুক্ত করে ১৬টি জেলায় ৪৫টি উপজেলায় এই প্রকল্প পরিচালনা করা হবে। সবচেয়ে বেশি শিশুর মৃত্যু হয়, এমন উপজেলাগুলোই বেছে নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার চিত্রকোট ইউনিয়নে গোয়ালখালি এলাকায় বিসিকের অধিগ্রহণকৃত ৪০ একর জমির উপর নির্মিত হবে 'ভ্যাকসিন প্লান্ট'। যেখানে ঔষধের পাশাপাশি তৈরি হবে অ্যান্টিভেনম।
প্রকল্পটি গোপালগঞ্জে বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা।
শনিবার সকালে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে এসে এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
এসময় তিনি জমি রেজিষ্ট্রেশন সংক্রান্ত কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন।
উপদেষ্টা বলেন, গোপালগঞ্জে ভ্যাকসিন প্লান্ট একদম একপাশে হয়ে গেছে। ভ্যাকসিনটা যখন তৈরি হবে তখন এটা ফ্রিজিং করে সারা বাংলাদেশে পাঠাতে হবে। সেজন্য আমার এমন একটা জায়গা দরকার যেখান থেকে সহজে যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে আমরা পাঠাতে পারবো। সেক্ষেত্রে গোপালগঞ্জটা সেজন্য আমাদের জন্য উপযুক্ত হয় না।
আর এখানে যে সমস্ত টেকনোলজিস্ট, বিশেষজ্ঞ লাগবে এটা সবসময় সেখানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। তাই এটা আমরা এখানে করার চেষ্টা করছি। এবং এখানে ৪০ একর জমি বিসিকের কাছ থেকে নিয়েছি। সে অনুযায়ী আমাদের একটা প্ল্যান্ট- এটা এখানেই হবে যাতে করে আমাদের সমস্ত ঔষধ তৈরি করতে পারি, ভ্যাকসিন আমরা এখানে তৈরি করতে পারি এবং একইসাথে আমরা চিন্তা করছি- অ্যান্টিভেনম যেটা হয়, যেটা আমাদেরকে পাশের দেশগুলো থেকে আনতে হয়। অনেক সময় সাপের ভ্যারাইটি একরকম না, কোন কোন সময় সাপের কারণে যে ভ্যাকসিনটা দেয়া হয় ওটা কখনো কাজ করে, কখনো করে না। কাজেই আমরা এখন চেষ্টা করছি- আমাদের যেহেতু অনেক সাপ আছে, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাপের বিষ এনে এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এন্টিভেনম তৈরি করা হবে। আমাদের দেশের সাপ দিয়ে দেশেই ভ্যাকসিন-অ্যান্টিভেনম তৈরি হবে।
ভ্যাকসিন প্লান্ট নির্মাণে সময় প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এটা সিস্টেমের ব্যাপার। বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে দেশের মধ্যে উৎপাদিত প্রায় ৭০ শতাংশ ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে। কোয়ালিটিতে দেশের বাইরের তুলনায় এটি কোন অংশেই কম না। এটাকে ১০০ শতাংশে উন্নিত করতে হলে আমাদের আরও কিছু মেশিনারিজ আনতে হবে। মেশিনারিজগুলো আমরা চেষ্টা করবো যত দ্রুত আনা যায়। সবকিছু মিলিয়ে এগুলো আনতে প্রায় ৬ মাসের মত লেগে যাবে।
তিনি বলেন, জমি আমাদের নামে রেজিষ্ট্রি করে দেয়া হবে, পাশের নদী শাসন করতে হবে। এরপরে মেশিনারিজ, প্ল্যান এগুলো পাশ করাতে হবে। ধরে নেন আগামী আড়াই থেকে তিন বছর লাগতে পারে। পরে উপদেষ্টা ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইডিসিল এর গোপালগঞ্জ প্লান্টের ভ্যাকসিন ইউনিট এবং মানিকগঞ্জ প্ল্যান্ট স্থানান্তর করে এখানে আনা হবে। এজন্য ৪০ একর জায়গার সংস্থান করা হয়েছে। এসময় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা চট্টগ্রামে প্রক্রিয়াধীন এন্টি ভেনম প্ল্যান্টও এখানে স্থানান্তরের নির্দেশনা প্রদান করেন। এটি সামগ্রিক বিবেচনায় লাভজনক হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
এসময় ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সামাদ মৃধাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনা কমিশন থেকে জানা গেছে, ৩ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ভ্যাকসিন প্লান্টটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এই কারখানায় ১৫ ধরনের টিকা উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্লান্টটিতে ২০২৮ সালের মধ্যে ছয় ধরনের ও ২০২৯ সালে আরও ৯ ধরনের টিকা উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ২০৩০ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
বাংলাদেশে ধর্ম, জাতি ও গোত্রের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
শনিবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বক্তব্যে উৎসবে আমন্ত্রণের জন্য সেনাপ্রধান আয়োজনকারীদের ধন্যবাদ জানান।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ। শত বছর ধরে এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পাহাড়ি, বাঙালি, উপজাতি সবাই মিলে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। এই দেশ সবার। আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক। এখানে কোনো ধর্ম, জাতি বা গোত্রের মধ্যে ভেদাভেদ থাকবে না। এই দেশের প্রতিটি বিষয়ে আমাদের সমান অধিকার। সেইভাবেই আমরা সামনের সোনালি দিনগুলো দেখতে চাই।’
অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানসহ অন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সেনাপ্রধান আরও বলেন, ‘আজকের এই দিনে আমাদের অঙ্গীকার হবে— আমরা সবসময় শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখব এবং সবাই মিলে শান্তিতে বসবাস করব। সারা বাংলাদেশে স্বশস্ত্র বাহিনী মোতায়েত রয়েছে। আমরা সব সময় জনগণের পাশে থাকব এবং এক হয়ে আপনাদের সাথে কাজ করে যাব।’
তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা নিশ্চিন্তে এ দেশে বসবাস করবেন এবং আপনারা আপনারা ধর্মীয় উৎসব আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করবেন। আমরা একসঙ্গে এই আনন্দ ভাগাভাগি করব।’
সেনাপ্রধান আশাপ্রকাশ করেন, ‘জন্মাষ্টমীর এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। এই আদর্শের ভিত্তিতেই আমরা একসঙ্গে সুন্দরভাবে বসবাস করব।’
প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের উদ্দেশে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আপনাদের মতে চিকিৎসা খাতে ৪-৫ বিলিয়ন ডলারের একটা বাজার আছে। এই বাজার আপনারা নিতে পারেন না? কেন মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে চায়? ভারত, ব্যাংককে এমন মানুষও চিকিৎসা নিতে যায়, যারা কখনও ঢাকায় আসেনি। তারা বিরক্ত ও নিরুপায় হয়ে যায়। তাদের যাওয়া বন্ধ করেন। এখানে সেবা দিলে মানুষ কখনোই বিদেশ যাবে না। যাওয়ার কোনও কারণই নাই। এই বাজার দখল করলে আপনাদের লাভ, দেশেরও লাভ।
শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর শহীদ আবু সাইদ ইন্টারন্যাশনাল কনভনেশন সেন্টারে বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক ও বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, অনেক চিকিৎসক অনর্থক টেস্ট দেন। আমার বাসার হেল্পিং হ্যান্ড, গরিব ছেলে, ঢাকার একটি হাসপাতালে ১৪টি টেস্ট দিয়েছে। সে রাগ করে বাড়ি চলে গেছে। সেখান থেকে টেস্ট ছাড়া ভালো হয়ে ফেরত এসেছে। ওখানে তার পরিচিত ডাক্তার ছিল। এই অত্যাচার বন্ধ হয় নাই। গরিব রোগীদের অনর্থক ১৪-১৫টা টেস্ট দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করা দরকার। আরেকটা বিষয় হলো, নির্দিষ্ট ওষুধ কিনতে হবে, কেন? পৃথিবীতে কোন জায়গায় প্রাইভেট ক্লিনিকে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির জন্য নির্দিষ্ট সময় থাকে ডাক্তারের। আপনারা কি ওষুধ কোম্পানির দালাল, এ দেশের বড় বড় হাসপাতালের ডাক্তাররা কি ওষুধ কোম্পানির মধ্যসত্ত্বভোগী? কোন জায়গায় নামান আপনারা নিজেদের!
আইন উপদেষ্টা বলেন, আরেকটা অভিযোগ করা হয়, টেস্টের রেজাল্ট ভুল। অনেক জায়গায় অনেক ভালো রেজাল্ট হয়, আমি খারাপ জায়গার কথা বলছি। একটা জেনারেল কমপ্লেইন যেটা আমার কাছে হৃদয়বিদারক লাগে, নার্সদের ব্যবহার খারাপ। নার্সদের মন খারাপ থাকে, হাসপাতালের কর্মচারীদের মন খারাপ থাকে, তারা ক্ষিপ্ত হয়ে থাকেন, ভালো সেবা দিতে চায় না। কেন চায় না– নার্সদের বেতন ১২ হাজার টাকা, আপনারা কি কম টাকা লাভ করেন? আপনারা যারা অনেকে হাসপাতালের মালিক আছেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি, আপনাদের কোটি টাকার বাগানবাড়ি থাকতে পারে, নার্সদের ভালো বেতন দিতে পারেন না? নার্স যদি ১২ হাজার টাকা বেতন পায়, তাহলে কি ভালো সেবা দেবে? সে তো বিরক্ত হয়ে থাকবে। আপনারা লাভ করেন কিন্তু ন্যায্যভাবে করেন।
তিনি বলেন, আজ মানুষ ভারত-থাইল্যান্ড যেতে চায় না। আপনাদের চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা আছে। আপনারা করোনাকালে প্রমাণ করেছেন। নিজের জীবন উৎসর্গ করে সেবা দিয়েছেন। কর্মীর যদি বেতন বাড়িয়ে দেন সামান্য লাভ থেকে কতো টাকা চলে যাবে? যদি ১০০ কোটি টাকা লাভ করেন, তাহলে ১০ শতাংশ কম লাভ হয়। ১০ শতাংশ কম লাভের বিনিময় সেই কর্মী যে সেবা দেবে সেটা দিয়ে পূরণ হয়ে যায়। আপনারা এদিকে একটু লক্ষ্য রাখবেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষ্যে দেয়া বাণীতে বলেছেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রীতির এই বন্ধনকে অটুট রাখতে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, সমাজে বিদ্যমান শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে কেউ যেন নষ্ট করতে না পারে সেজন্য সকলকে সজাগ থাকতে হবে।
শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে আজ শুক্রবার এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা এ সব কথা বলেছেন। তিনি এ সময় ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষ্যে দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ধর্মাবতার শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। সমাজে সাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে শ্রীকৃষ্ণ আজীবন ন্যায়, মানবপ্রেম ও শান্তির বাণী প্রচার করেছেন। শ্রীকৃষ্ণ যেখানেই অন্যায়-অবিচার দেখেছেন, সেখানেই অপশক্তির হাত থেকে শুভশক্তিকে রক্ষার জন্য আবির্ভূত হয়েছেন।
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের সংস্কৃতির অনন্য বৈশিষ্ট্য। আবহমানকাল থেকে এ দেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ ও শিক্ষা পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করবে বলে উল্লেখ করে তিনি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে ভরপুর বৈষম্যমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ফুলের তোড়া পাঠিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন, আজ গণতন্ত্রের মা, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন। তিনি এ দিনটি উদযাপন করেন না, তবে দল থেকে সারাদেশে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আজ বিকেলে ম্যাডামের (বেগম জিয়া) জন্য ফুলের তোড়া পাঠিয়েছেন। তাঁর কর্মকর্তারা এটি বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবনে পৌঁছে দেন।
বিকেল প্রায় ৪টায় প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব সজীব এম খায়রুল ইসলাম ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় গিয়ে তাঁর একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তারের হাতে ফুলের তোড়াটি হস্তান্তর করেন।
এ সময় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলায়েত হোসেন, বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এবং চেয়ারপার্সনের ব্যক্তিগত উইংয়ের কর্মকর্তা মাসুদ রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে চীনের রাষ্ট্রদূতের কার্যালয় থেকেও বিএনপি চেয়ারপার্সনের জন্য জন্মদিনের ফুলের তোড়া পাঠানো হয়।
বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। এ বছর তিনি ৮১ বছরে পা রেখেছেন।
ধূমপান ও তামাকমুক্ত রেল পরিষেবা গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখায় ২২ কর্মকর্তা/কর্মচারীকে পুরস্কৃত করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
বৃহষ্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর রেল ভবনে “বাংলাদেশ রেলওয়েকে তামাকমুক্ত করার উদ্যোগ” শীর্ষক প্রকল্পের উদ্যোগে এক বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এতে ধূমপান ও তামাকমুক্ত রেল পরিষেবা গড়ে তুলতে রেল স্টেশনে তামাক সচেতনতা ও প্রতিরোধ কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য আরএনবি ও জিআরপি (পুলিশ) এবং রেলওয়ের ২২ কর্মকর্তা/কর্মচারীকে সম্মাননা পদক ২০২৫ প্রদান করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে রেলওয়ে কর্মীদের উৎসাহিত করে দেশের সকল স্টেশন ও ট্রেনকে ধূমপান ও তামাকমুক্ত করার প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হবে বলে আয়োজকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন-
মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম মজুমদার, উপসচিব (বাজেট অধিশাখা), রেলপথ মন্ত্রণালয়; মোঃ জাকির হোসেন, পরিচালক ট্রাফিক (পরিবহণ), বাংলাদেশ রেলওয়ে; মোঃ আনসার আলী, উপ-পরিচালক (টিসি), বাংলাদেশ রেলওয়ে; গৌতম কুমার কুণ্ডু, বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পাকশী), বাংলাদেশ রেলওয়ে; মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (লালমনিরহাট), বাংলাদেশ রেলওয়ে; ফারহান মাহমুদ, এডিসিও (চট্টগ্রাম), বাংলাদেশ রেলওয়ে; মোহাম্মদ আমিনুল হক, এসিও-১ (ঢাকা), বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে “বাংলাদেশ রেলওয়েকে তামাকমুক্ত করার উদ্যোগ” শীর্ষক প্রকল্পের বেজলাইন ও এন্ডলাইন সার্ভের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন ও এর বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান আর্ক এর নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ ফাহিমুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ আফজাল হোসেন। এছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা/কর্মচারীরা এতে অংশগ্রহণ করেন।
ধূমপান ও তামাকের ব্যবহার যাত্রীসেবার মানের ওপর যেসব নেতিবাচক প্রভাব ফেলে অনুষ্ঠানে তার বিস্তারিত আলোচনা করেন তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের অপব্যবহার রোধে ভূমিকা পালনকারী সাবেক ও বর্তমান সরকারী ও বেসরকারী কর্মকর্তারা। তাঁরা রেলওয়ের প্রতিটি স্টেশন, প্ল্যাটফর্ম এবং ট্রেনে ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান। এ লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, কঠোর নজরদারি এবং আইন প্রয়োগের পাশাপাশি যাত্রী ও কর্মীদের মধ্যে ইতিবাচক আচরণ গড়ে তোলার ওপর তাঁরা গুরুত্বারোপ করেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ ফাহিমুল ইসলাম প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, “রেলপথ জনগণের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চায়। তাই ধূমপানমুক্ত পরিবেশ তৈরিতে আমরা কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখাবো না।”
অনুষ্ঠানে সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও উপস্থিত অতিথিবৃন্দ ধূমপান ও তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
উপদেষ্টা পরিষদের সভা আজ (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এতে সভাপতিত্ব করেন।
মন্তব্য