বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সারি সারি সাজানো গুড়ের ভাঁড়। হাটে ঢুকতেই মন ভরে উঠবে খেজুরের গুড় ও নলেন পাটালির মিষ্টি গন্ধে। প্রতি বছরের মতো এবারও জমে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জের খেজুরের গুড়ের হাট। গুড় কিনতে বিভিন্ন জেলা থেকে আসছেন ব্যাপারীরা। চলছে ক্রেতা-বিক্রেতা ও শ্রমিকদের কর্মযজ্ঞ।
শুধু খেজুরের গুড় বেচাকেনার জন্য এই হাটের ঐতিহ্য কয়েক শ বছরের। জেলার সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের সরোজগঞ্জে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘেঁষে স্থানীয় সরোজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এ হাট বসে। হাট জমে সপ্তাহের সোম ও শুক্রবার। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। হাটের দুই পাশে চট পেতে ছোট ছোট ধামা-কাঠায় বাড়িতে তৈরি নলেন পাটালি বিক্রি করেন কৃষকেরা।
প্রতি বছর শীত মৌসুমে সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেজুরের গুড় বেচাবিক্রি হয় এ হাটে। মৌসুমের প্রায় পুরো সময়ই হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে জমজমাট থাকে এই হাট। প্রতি হাটে প্রায় দুই কোটি টাকার গুড় কেনাবেচা হয় এখানে।
হাটে দাঁড়িয়ে গুড় দেখেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। একটি কাঠি ভাঁড়ের ভিতর ডুবিয়ে যাচাই করা হয় গুড়ের মান। দরদাম ঠিক হলে দাড়িপাল্লায় ওজন করে গুড়ের ভাঁড় ভর্তি করা হয় ট্রাকে। কেউ কেউ নিজ বাড়ি বা স্বজনদের বাড়ি পাঠানোর জন্য কেনেন গুড়, পাটালি। কেউ আবার পাঠান বিদেশেও।
দরদাম
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাটির হাঁড়ি বা ভাঁড়ের আকার ও ওজনভেদে ওঠানামা করে দাম। এক ভাঁড় গুড় বিক্রি হয় ৯০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এখানকার খেজুর গুড়ের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। তাই বেড়েছে দামও।
১০ বছর ধরে সদর উপজেলার কালুপোল গ্রাম থেকে সরোজগঞ্জের হাটে গুড় বিক্রি করতে আসেন গাছি ইব্রাহিম শেখ। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আগের তুলনায় মাটির ভাঁড়ের দাম বেড়েছে। তাই গুড়ের দামও কিছুটা বেড়েছে।’
তিনি জানান, ১০ কেজি ওজনের প্রতিটি ভাঁড় ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় এবং ১৫ থেকে ১৬ কেজি ওজনের ভাঁড় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি নলেন পাটালি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকায়।
সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে গুড় কিনতে আসা ব্যবসায়ী ঈসা রুহুল বলেন, ‘৪০ বছর থেকে সরোজগঞ্জের হাটে গুড় কিনতে আসি। গাছিদের কাছ থেকে সরাসরি গুড় কিনে ট্রাক ভর্তি করি। আমি এই গুড় দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকি। এখানকার গুড় নির্ভেজাল হওয়ায় চাহিদাও অনেক বেশি। তাই দামও বেড়েছে আগের তুলনায়।’
বেচাবিক্রি
সরোজগঞ্জ বাজার কমিটির সভাপতি এম আবদুল্লাহ শেখ বলেন, ‘সরোজগঞ্জ হাট খেজুর গুড়ের প্রধান মোকাম। এ হাটে গুড় কিনতে আসেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বরিশালসহ দেশের বড় বড় মোকামের ব্যাপারীরা।
‘প্রতি হাটের দিন গড়ে ২৫০ টন খেজুর গুড় বিক্রি হয়। যার বিক্রয়মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা।’ বলেন তিনি।
এ হাটে বিক্রি হওয়া গুড় এলাকার কৃষকেরা নিজ বাড়িতে যত্নের সঙ্গে তৈরি করেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এতে চিনি বা কোনো রাসায়নিক পদার্থ নেই। কিছুটা খয়েরি রঙের হলেও এসব গুড় পুরোটাই খাঁটি।’
কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহম্মেদ হাসানুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কয়েক শত বছরের বেশি সময় ধরে গুড়-পাটালি বিক্রি হয় ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জের হাটে। প্রতি হাটে ২০ থেকে ২৫ ট্রাক গুড় চলে যায় দেশের বিভিন্ন জেলায়। এ হাটের সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কাজ করে স্থানীয় প্রশাসন। তাই বেচাবিক্রি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।’
উৎপাদন
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এ জেলায় আড়াই লাখের মতো খেজুরগাছ রয়েছে। যার প্রায় অর্ধেকই সদর উপজেলায়। প্রতি মৌসুমে ২ হাজার ৫০০ টন গুড় উৎপাদিত হয় এ জেলায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, মৌসুমে প্রতিটি খেজুরগাছ থেকে অন্তত ১০ থেকে ১২ কেজি গুড় পাওয়া যায়। সে হিসাবে প্রতি বছর ২ হাজার ৫০০ টন গুড় উৎপাদিত হয়।
তিনি বলেন, ‘কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে নিরাপদ খেজুরের গুড় উৎপাদনে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। খেজুরের রস সংগ্রহের সময় ভাঁড়ের মুখ তারজালি দিয়ে ঢেকে রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, যেন বাদুড় ভাঁড়ে মুখ দিয়ে ভাইরাস ছড়াতে না পারে। এটি বারবার ব্যবহার করা যায়। এভাবেই নিরাপদে রস সংগ্রহ করেন কৃষকরা। যা দিয়ে উৎপাদিত হয় নিরাপদ গুড়।’
আরও পড়ুন:শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বন্য হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি গ্রামে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো ৬০ বছর বয়সী হাজী উমর আলী একই গ্রামের বাসিন্দা।
নালিতাবাড়ী থানার ওসি মনিরুল আলম ভুইয়া জানান, প্রায় তিন-চার দিন ধরে নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি গ্রামের পাহাড়ি ঢালে বোরো ধান ক্ষেতে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫টি বন্য হাতি নেমে আসে। বৃহস্পতিবার রাতে হাতির পালটি বাতকুচি গ্রামের ধান ক্ষেতে যায়। এ সময় উমর আলি ও গ্রামবাসীরা তাদের ফসল বাঁচানোর জন্য মশাল জ্বালিয়ে ডাক ও চিৎকার শুরু করেন।
একপর্যায়ে বন্যহাতির পালটি একটু পিছিয়ে যায়। পরে বাড়িতে যাওয়া সময় পাহাড়ে লুকিয়ে থাকা হাতির পালটি উমর আলিকে ঘিরে ফেলে ও পা দিয়ে পিষ্ট করে।
বন বিভাগের ময়মনসিংহ মধুটিলা ফরেস্টের রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে নিহত উমর আলির পরিবারকে বন বিভাগের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
থানার ওসি মনিরুল আলম ভুইয়া বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। একই সঙ্গে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
আরও পড়ুন:সিলেটে মধ্যরাতে খোলা মাঠ থেকে একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার কম্পিউটার ইনচার্জের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নগরের হাজারিবাগ এলাকার পেছনের মাঠ থেকে বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রাণ হারানো অমিত দাস শিবু স্থানীয় দৈনিক উত্তরপূর্বর কম্পিউটার ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। শিবুর গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জে। তিনি নগরের বাগবাড়ি নরসিংটিলা এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) এয়ারপোর্ট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দেবাংশু কুমার দে এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘রাতে কাজ শেষে অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলেন অমিত। তার মৃত্যু রহস্যজনক মনে হচ্ছে। পাশেই তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল রাখা ছিল।’
তিনি জানান, রাত ২টার দিকে স্থানীয় লোকজন মরদেহ দেখে থানা পুলিশকে ঘটনাটি জানায়।
এসএমপির উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। তার মরদেহের পাশে মোটরসাইকেলটি চাবি লাগানো অবস্থায় রাখা ছিল, তবে মোবাইল ফোন পাওয়া যায়নি। কিন্তু তার মোবাইলের শেষ লোকেশন ঘটনাস্থলেই দেখাচ্ছে।’
আজবাহার বলেন, ‘অমিতের দেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। এরপরও ঘটনাটিকে রহস্যজনক ধরে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ওসমানী হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:গাজীপুরের শ্রীপুরে বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে এক দম্পতির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় টেবিলের ওপরে একটি চিরকুট পাওয়া যায়।
উপজেলার মুলাইদ গ্রামের ফারুক খানের বহুতল ভবনের নিচ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে শুক্রবার সকালে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রাণ হারানো ইসরাফিল (১৭) শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি থানান হলদি গ্রামের বাসিন্দা ও তার স্ত্রী রোকেয়া খাতুনের (১৫) বাবার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানার পস্তারি গ্রাম।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে গত সাত থেকে আট মাস আগে তারা পরিবারের অমতে বিয়ে করেন। তারা দুজনই শ্রীপুরের মুলাইদ গ্রামের ফারুক হোসেনের বহুতল ভবনে ভাড়া থাকতেন। ইসরাফিল স্থানীয় একটি ওয়ার্কসপে ও রোকেয়া স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করতেন।
রোকেয়ার ভাই বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘সাত থেকে আট মাস আগে পরিবারের অমতে তারা বিয়ের সম্পর্কে জড়িয়েছিল। বিয়ের পর তাদের সম্পর্ক ভালোই চলছি। সম্প্রতি ইসরাফিল তার বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল। পরে বৃহস্পতিবার তাদের বুঝিয়ে বাসায় আনা হয়। সকালে তাদের মৃত্যুর খবর পাই।’
ইসরাফিলের বাবা মফিজুল হক জানান, পাশাপাশি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন তারা। পরিবারের রান্নার কাজ তারা ইসরাফিলের ফ্ল্যাটে করতেন। শুক্রবার সকালে তাদের ফ্ল্যাটের দরজা খোলা দেখতে পেয়ে ভেতরে যান এবং ইসরাফিলকে ওড়নায় পেঁচানো ঝুলন্ত অবস্থায় এবং রোকেয়ার মরদেহ খাটের ওপর বিছানায় দেখতে পান।
শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাখাওয়াত হোসেন জানান, ‘খবর পেয়ে একটি ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রথমে স্ত্রী আত্মহত্যা করে। স্ত্রীর আত্মহত্যার বিষয়টি স্বামী সইতে না পেরে তিনিও আত্মহত্যা করেন।’
এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর মোহনায় জেলের জালে এবার ধরা পড়েছে ২৬ কেজি ২৫০ গ্রাম ওজনের একটি কোরাল মাছ।
পরে সেই মাছটি কুয়াকাটা পৌর মাছ বাজারে বিক্রি করা হয়েছে ৩২ হাজার ৭৫০ টাকায়।
কুয়াকাটা পৌর মাছ বাজারের ‘কুয়াকাটা ফিস পয়েন্টের’ পরিচালক নাসির উদ্দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে মাছটি কেনেন।
তিনি বলেন, ‘সাগর মোহনায় সচরাচর এত বড় মাছ পাওয়া যায় না। আজ দুপুরে মাছটি মার্কেটে আসার পর এক হাজার ২৫০ টাকা কেজি দরে কিনে নেই।’
স্থানীয় জেলেরা জানান, গত মঙ্গলবার কুয়াকাটার বাবলাতলা এলাকার জেলে রাসেল ‘মায়ের দোয়া’ নামের তার ট্রলারটি নিয়ে গভীর সমুদ্রে ইলিশ মাছ ধরতে রওনা হন। পরবর্তীতে বলেশ্বর নদীর সাগর মোহনায় রাত ২টার দিকে রাসেলের জালে এ বিশাল কোরাল মাছটি ধরা পড়ে।
রাসেল বলেন, ‘তীব্র তাপদাহ শুরুর পর থেকে সাগরে মাছ পড়ে না। ভাগ্য সহায় বলে এত বড় মাছ আল্লাহ দিয়েছেন। মাছটি তীরে নিয়ে আসলে স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরা মাছটি ক্রয় করতে চেয়েছেন। পরে কুয়াকাটা মাছ বাজারে এক হাজার ২৫০ টাকা কেজি দরে মাছটি বিক্রি করেছি।’
জানতে চাইলে কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, নদ-নদী এবং সাগরে বিভিন্ন মাছ পাওয়া যায়। সব সময় বড় মাছ ধরা পড়ছে না। সামুদ্রিক কোরাল এর চেয়েও অনেক বড় হয়।
সরকারের দেয়া ৬৫ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ ধরার সফল কার্যক্রমের কারণেই এ ধরনের মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:পাবনার সাঁথিয়ায় অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখার ভল্ট থেকে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় ওই ব্যাংকের প্রধান তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তিনজনকে আটক করা হয়। দিনভর নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে তাদের সাঁথিয়া থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। তিনজনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার আবু জাফর, ব্যবস্থাপক হারুন বিন সালাম ও ক্যাশিয়ার সুব্রত চক্রবর্তী, যাদের বাড়ি পাবনার বিভিন্ন উপজেলায়।
পুলিশের ভাষ্য, টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেছেন ক্যাশিয়ার সুব্রত চক্রবর্তী।
সাঁথিয়া থানা ও অগ্রণী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে অগ্রণী ব্যাংক রাজশাহী বিভাগীয় ও পাবনা আঞ্চলিক শাখা থেকে পাঁচ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে আকস্মিক অডিটে আসেন অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখায়। অডিট শেষে সেখানে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকার আর্থিক অনিয়ম দেখতে পান তারা। পরে অডিট কর্মকর্তা সাঁথিয়া থানাকে অবহিত করলে পুলিশ অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় অগ্রণী ব্যাংক পাবনা আঞ্চলিক শাখার উপমহাব্যবস্থাপক রেজাউল শরীফ বাদী হয়ে সাঁথিয়া থানায় অভিযোগ করেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে বিভাগীয় অফিস থেকে পাঁচ সদস্যের অডিট টিম ব্যাংকে অডিট শুরু করে। ওই টিমের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে তিনজনের কাছ থেকে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। পরে রাতে তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, আটককৃতদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার তাদের আদালতে পাঠানো হবে।
তিনি আরও বলেন, অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ঘরে ঢুকে এক নারী ও তার মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সোমবারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগটি করেন ছেনুয়ারা বেগম নামের নারী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত সোমবার রাত দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব উত্তরপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমের ঘরের দরজা ভেঙে আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন প্রবেশ করেন। তারা ছেনুয়ারা ও তার মেয়ের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি ও ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে মা ও মেয়ে উভয়কে বিবস্ত্র করেন আয়ুব ও তার লোকজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান৷
এ বিষয়ে ছেনুয়ারা বেগম বলেন, ‘সন্ত্রাসী আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন যুবক আমার বাড়িতে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রবেশ করে। পরে বাড়ি থেকে আমাকে জোরপূর্বক কয়েকজন লোক বের করে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং আমার মেয়েকে নির্যাতন করে স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিষয়ে কাউকে বললে মেরে ফেলা হবে বলে চলে যায়।’
থানায় অভিযোগের পর আয়ুব হুমকি দিয়েছে জানিয়ে ছেনুয়ারা বলেন, ‘সেই আয়ুব খান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে, মামলা হলে কী হবে? জামিন নিয়ে বাহির হয়ে আমাকে আর আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হবে বলে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমি টেকনাফ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি এবং সঠিক তদন্তে পুলিশকে সহযোগিতা করব।’
অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমি ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এবং আমি মামলা করার জন্য ওসি বরাবর সুপারিশ করেছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি ওসমান গণি বলেন, ‘আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা নাশকতা মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিতসহ ১৪ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতের মঞ্জুরকৃত জামিন শেষ হওয়ায় তারা আদালতে হাজির হন।
মৌলভীবাজার মডেল থানায় ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে করা দুটি রাজনৈতিক মামলার ১৪ জন আসামি হাজির হলে আদালত তাদের সবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিতুর রহমান হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, যুবদলের এমএ নিশাদ, যুবদলের সিরাজুল ইসলাম পিরুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নুরুল ইসলাম, যুবদলের ওয়াহিদুর রহমান জুনেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হান্নান, স্বেচ্ছাসেবক দলের রোহেল আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মামুনুর রশিদ ও যুবদলের জাহেদ আহমেদ।
মৌলভীবাজার জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ইউনুছ মিয়া জানান, ২০২৩ সালে নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আসামিরা। আদালত শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মন্তব্য