১৩ বছর ধরে একটানা ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশের এবং জনগণের জীবনমানের যে উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে, তা বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ধারাবাহিকতা ধরে রেখে দেশকে উন্নত করাই নিজের লক্ষ্য বলেও জানান তিনি।
রাজধানীর সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বৃহস্পতিবার সকালে মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রকাশিত গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব, বঙ্গবন্ধু স্কলার বৃত্তি প্রদান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কুইজের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।
সোনার বাংলা গড়তে জাতির পিতা বঙ্গববন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার মানুষ চেয়েছেন, সেই মানুষ এখন তৈরি হচ্ছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আশা, নতুন প্রজন্ম ২০৪১ সালের সৈনিক হিসেবে নিজেদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়ে তুলে দেশকে করবে উন্নত, সমৃদ্ধ।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের এখন যে অবস্থা, সেই অবস্থা কিন্তু ১৩/১৪ বছর আগেও এমন ছিল না, এটা হচ্ছে বাস্তবতা। আমরা সেই পরিবর্তন আনতে পেরেছি। এটাই আমাদের সব থেকে বড় পাওয়া। এটা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।’
জাতির পিতাসহ যারা দেশের স্বাধীনতায় আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের সেই ত্যাগ বৃথা যেতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘একটাই তো আদর্শ, লক্ষ্য, বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। শিক্ষায়, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ উন্নত হবে, সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার টার্গেট ছিল ২০২১ সাল অর্থাৎ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সময়কালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি অবস্থানে নিয়ে আসার। এরপর আমরা দিয়েছি ২০৪১ সাল। নতুন প্রজন্ম ৪১ সালের সৈনিক হবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। উন্নয়নশীল দেশ থেকে ধাপে ধাপে আমরা উন্নত দেশে উন্নীত হব এবং সেটা করা খুব কঠিন কাজ না। ইনশাল্লাহ আমরা করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ চেয়েছেন সোনার মানুষ এখন তৈরি হচ্ছে। সেটাই হচ্ছে সবথেকে বড় কথা।’
গত ১৩ বছর ধরে টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশে ‘একটি বিরাট পরিবর্তন’ এসেছে বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
তিনি বলেন, ‘একদিকে যেমন দারিদ্র্যের হার আমরা কমাতে পেরেছি, আরেকদিকে সাক্ষরতার হার বাড়াতে পেরেছি। মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে পেরেছি, পুষ্টি নিরাপত্তা দিতে পেরেছি। সেই সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর যে গুরত্ব গিয়েছিলাম সেখানে আমরা যথেষ্ট সফল হয়েছি। আজকে মানুষ প্রযুক্তির ব্যবহার করছে এবং এই প্রযুক্তির মাধ্যমে পুরো বিশ্ব সবার হাতের মুঠোয় চলে আসছে। বিশ্বকে জানার সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন আর অন্ধকারে পড়ে থাকছে না।’
নিজের উন্নয়ন দর্শন নিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন কিন্তু শুধু শহরভিত্তিক না, আমরা তৃণমূল থেকে উন্নয়নটা করে যাচ্ছি।’
২০২০ সাল জাতীয় জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করতে পেরেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি বলতে পারি, আমি এবং আমার ছোটবোন শেখ রেহেনার জন্য এটা কত বড় পাওয়া, তা ভাষায় বলে প্রকাশ করতে পারব না।’
করোনভাইরাস মহামারি বাধা হয়ে দাঁড়ানোর পরও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করতে পারায় দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ভোট দিয়ে তারা নির্বাচিত করেছিল বলেই আজকে আমরা সরকার গঠন করতে পেরেছি এবং এই বিরল সুযোগটা পেয়েছি।’
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন
অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে প্রকাশিত বিভিন্ন স্মারকগ্রন্থগুলোর মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি এ প্রকাশনাগুলো শিশু, কিশোর, যুবক, বয়োবৃদ্ধ সবার জন্য। এই লেখাগুলো পড়লে পর তারা জাতির পিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন, ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর জাতির পিতার নাম মুছেই ফেলা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমাদের ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর- আমাদের বিজয়গাঁথা, বিজয়ের ইতিহাস কিন্তু পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল প্রায় ২১ বছর। কয়েকটা জেনারেশন আছে, যারা হয়তো কিছু জানতে পারিনি। এই লেখা বা প্রকাশনার মাধ্যমে আজকের প্রজন্ম অনেক কিছু জানতে পারবে এটাই হচ্ছে বড় কথা।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত সাহিত্যকর্ম প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি জানি না, পৃথিবীতে আর কোনো নেতা আছেন কিনা, যার নামে এত গান, এত কবিতা, এত রচনা হয়েছে। রচনাগুলো লোকসাহিত্য থেকে শুরু করে, বিজ্ঞান থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে বিস্তৃত।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে মানুষ আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি শুধু গ্রহণ করলেই হবে না, আমাদের নতুন প্রজন্ম এই আদর্শে আদর্শবান হয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
বঙ্গবন্ধু স্কলার বৃত্তি
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় ১৩টি অনুষদে ১৩ জনকে দেয়া হয় বঙ্গবন্ধু স্কলার বৃত্তি। স্কলারদের প্রত্যেককে দেয়া হয় সম্মাননা স্মারক, তিন লাখ টাকার চেক এবং সনদপত্র। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বঙ্গবন্ধু স্কলারদের হাতে বৃত্তি তুলে দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সবসময় মনে করি, আমাদের দেশে শিক্ষা এবং গবেষণা একান্তভাবে প্রয়োজন। এটা আমাদের শিখিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কারণ তিনি শিক্ষাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।’
এই আয়োজেনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা উৎসাহিত হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই বঙ্গবন্ধু স্কলার বৃত্তিটাও অব্যাহত রাখব। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ডে আলাদা একটা বরাদ্দ রেখে দেব। যারা গবেষণা করে কিছু আবিষ্কার করতে পারবে, ভবিষ্যতে আরও করবে তাদেরকে আমরা দেব।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কুইজ
২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত মোট ১০০ দিন ধরে অনলাইনে চলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কুইজ। যেখানে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লাখো মানুষ অংশ নিয়েছে। ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৪০৬ জন সঠিক উত্তরদাতার মধ্যে কম্পিউটারাজাইড লটারির মাধ্যমে ১০০ জনকে চূড়ান্ত পুরস্কৃত করা হয়। বিজয়ীদের হাতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুরস্কার তুলে দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
প্রত্যেক বিজয়ীকে দেয়া হয় একটি ল্যাপটপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সই করা সনদপত্র। অনুষ্ঠানে ১০জনকে পুরস্কৃত করা হয়। অবশিষ্ট ৯০ জনের কাছে পুরস্কৃত পৌঁছে দেবে আয়োজকেরা।
বঙ্গবন্ধু কুইজ আয়োজনের এ ধারণাটা বেশ পছন্দ হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। তিনি বলেন ‘এটা বেশ কঠিন কাজ ছিল। নানা ধরনের কথা আসছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করা, সেখান থেকে কাদেরকে পুরস্কার দেয়া হবে, সেগুলো নির্দিষ্ট করা যথেষ্ট খাটুনির কাজ, কোনো সন্দেহ নেই।
‘প্রশ্নগুলো তৈরি করা সেগুলো অনলাইনে দিয়ে দেয়া, সেখান থেকে আবার উত্তরগুলো নিয়ে সেগুলো প্রস্তুত করা, আমি মনে করি এটা কঠিন দায়িত্ব। অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে, যোগ্যতার সঙ্গে পালন করেছেন। সেজন্য সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিশ্বে বিরাজমান অস্থিতিশীল অবস্থা দূরীকরণ ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বুদ্ধের শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
আগামীকাল ৫ অক্টোবর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবর দান’ উপলক্ষ্যে আজ দেয়া এক বাণীতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীকে তিনি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মহামতি গৌতম বুদ্ধ আজীবন মানুষের কল্যাণে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় অহিংসা, সাম্য ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করেছেন। শান্তি ও সম্প্রীতির মাধ্যমে আদর্শ সমাজ গঠনই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য। তাঁর আদর্শ মানবিকতা ও ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল। তাঁর অহিংস বাণী ও জীবপ্রেম আজও বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সাথে হাজার বছরের বৌদ্ধ ঐতিহ্য মিশে আছে। প্রাচীনকালে বর্তমান বাংলাদেশের অঞ্চলটি এশিয়ার বৌদ্ধধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল, যার প্রমাণ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার দেখা যায়।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমানকাল ধরে এদেশে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষ সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করে। জাতি হিসেবে আমাদের সকল অর্জন ও প্রাপ্তিতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অবদান রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের মানুষের মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতা আরো দৃঢ় ও অটুট হবে এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ানুগ ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন রাষ্ট্র গঠনের অভিযাত্রা মসৃণ ও সাফল্যমন্ডিত হবে-এটাই আমার প্রত্যাশা।’
প্রধান উপদেষ্টা ‘শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবর দান’ উৎসবের সার্বিক সফলতা কামনা করেন। সূত্র : বাসস
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হবে। সবাই ভোট দিতে পারবেন। ভোট হবে দিনের বেলা, রাতের বেলা নয়। নতুন নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পুরোনো ঠিকানায় চলে যাব। আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। সুযোগ সব সময় আসে না। একবার সুযোগ আসতে ৫৪ বছর লেগে যায়। আবার কবে সুযোগ আসবে জানি না। তাই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যই শক্তি, শক্তিই শান্তি।’
রাজধানীর বকশিবাজারে গতকাল বুধবার সকালে সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার ২৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে ৫৪ বছর পর সুযোগ এসেছে। এ সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করা যাবে না।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘অতি আধুনিক শিক্ষার নামে মাদ্রাসা শিক্ষায় কোরান-হাদিস থেকে সরে গিয়ে কোণঠাসা হয়ে গেছে। মনে রাখতে হবে মাদ্রাসা শিক্ষা বিশেষায়িত শিক্ষা। আধুনিকতার পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষার মূল ভিত্তি থাকতে হবে কোরান এবং হাদিস, ফেকাহ।’
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশে আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি মাদ্রাসার ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। আলিয়া পদ্ধতির মাদ্রাসার অবদান স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মতো। অনেক যোগ্য ব্যক্তি এখানে তৈরি হয়েছেন। আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি মাদ্রাসার ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। আরবি, ইংরেজি জানলে বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও বৃত্তি পাবেন।’
রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনে যুগ যুগ ধরে আলিয়া মাদ্রাসা ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করি। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির নামে দুর্বৃত্তপনা বন্ধ করতে হবে। এ সময় ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমদের আল্লাহ এক, কোরান এক, কেবলা এক। এই মিল আমাদের এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসবে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বাহিরের ইন্ধনে দুষ্কৃতকারীরা পূজাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছিল। তারা সফল হতে পারেনি।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের ইছাপুরায় শ্রী শ্রী সার্বজনীন দুর্গাপূজা মণ্ডপ পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, পূজার শুরুতে ধর্ষণের ঘটনা প্রচার করে পূজাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ কাজে বাহিরের ইন্ধন ছিল কিন্তু দুষ্কৃতকারীরা সফল হতে পারেনি।
এবার বাংলাদেশের সব জায়গায় ভালোভাবে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পূজা সম্পন্ন হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, দুর্গাপূজা ও বৌদ্ধদের বিজু উৎসব যাতে ভালোভাবে হতে না পারে তার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশের সহযোগিতায় কিছু সন্ত্রাসী এ ধরনের কাজ করেছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসন এবং বিশেষ করে পূজা কমিটির সহযোগিতায় এ বছর শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন হয়েছে। এ জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা আক্তার, সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল ) মো. ইব্রাহিম, পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাদর পাল। সূত্র : বাসস
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দ্রুত প্রত্যাহার হবে এমন কোন সম্ভাবনা নেই।
বরিশাল নগরীর শংকর মঠ পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আজ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যখন একটা দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়, স্থায়ী কি অস্থায়ী এ ধরনের প্রশ্ন থাকে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের উপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া হবে এরকম কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না।
বিদেশি গণমাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অশান্ত পাহাড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাহাড়কে যারা অশান্ত করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার।
তিনি আজ দুপুরে বরিশাল সার্কিট হাউজে পৌঁছে নগরীর নতুন বাজার সংলগ্ন শংকর মঠ পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সাঙ্গে সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময় করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, পুলিশ সুপার মো. শরীফ উদ্দীন, শংকর মঠ পূজা মণ্ডপ কমিটির সভাপতি কানু লাল সাহা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক তম্ময় তপু প্রমুখ।
বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থের একটি অংশ আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আশাবাদী অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি মঙ্গলবার এ কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া ক্রমান্বয়ে এগোচ্ছে। এটি সময়সাপেক্ষ বিষয়, একদিনে সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, যারা বিদেশে টাকা পাচার করে তারা সাধারণত খুব কৌশলী ও প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ হয়। ফলে ফেরত আনার কাজ দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল হয়ে পড়ে।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘অর্থ ফেরত আনা মানে সুইস ব্যাংকে ফোন দিয়ে টাকা নিয়ে আসা নয়। আন্তর্জাতিক আইনি ও আর্থিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই এটি করতে হয়। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কিছু অগ্রগতি হয়েছে এবং বেশ কিছু বিখ্যাত আইনি সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে। কিছু নির্দিষ্ট বিচার ব্যবস্থার সঙ্গেও আলোচনা এগোচ্ছে। আমরা আশা করি ফেব্রুয়ারির মধ্যে কিছু ফল পাওয়া যাবে।’
অর্থ উপদেষ্টা জানান, সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ইতোমধ্যে ১১-১২ টি মানিলন্ডারিং মামলা চিহ্নিত করেছে এবং সংশ্লিষ্ট সম্পদের তদন্ত অব্যাহত আছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পদ জব্দ করেছে, বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করেছে এবং সংশ্লিষ্টদের পাসপোর্ট ও বসবাসের তথ্য সংগ্রহ করেছে। এসব মামলা আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এগোচ্ছে।’
আগামী নির্বাচনের পর নতুন সরকার আপনাদের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে কি না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘বাধ্য হয়ে তাদের চালিয়ে যেতে হবে। কারণ আমরা প্রক্রিয়াগুলো চালু করে গেলাম, সেটা অব্যাহত না থাকলে তো টাকা ফেরত আনতে পারবে না। তারা বসে থাকলে টাকা ফেরত আসবে না। আর যদি আনতে হয় এই প্রক্রিয়াগুলো মানতে হবে। এটা তো ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস। আমরা যে প্রক্রিয়া শুরু করেছি তা বজায় রাখতে হবে।’
খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও সরকার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আতপ চালের একটি বাফার মজুত রাখি। অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলে যাতে সংকট না হয় সে জন্য নীতিগতভাবে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, সার বিশেষ করে-ডিএপি ও ইউরিয়া আমদানিতে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সুখবর হচ্ছে-আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম কিছুটা কমেছে। আমরা বাজার স্থিতিশীল রাখতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করছি, পাশাপাশি যথেষ্ট চাল ও সারের মজুদও রাখছি।
সাম্প্রতিক বিবিএস প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সরকার শিশু ও মাতৃকল্যাণ বিষয়ে সতর্ক। তাই ভিজিএফ কর্মসূচি এবং উপকূলীয় ও হাওর অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, আসন্ন মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞাকালে জেলেদের প্রতিটি পরিবারকে ২০ কেজি চাল দেওয়া হবে।’
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মজুত ভালো থাকায় চালের দাম সম্প্রতি কমেছে। তবে শাকসবজি ও অন্যান্য দ্রুত নষ্ট হওয়া পণ্যের দাম মৌসুমি কারণে ওঠানামা করে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর কারসাজি এখনো অব্যাহত রয়েছে। ‘ এ কারণেই আমরা এখনো পূর্ণ সাফল্য দাবি করতে পারছিনা,’ স্বীকার করেন তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটি (সিএলসিসি) এর প্রথম সভা আজ নগর ভবন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডিএসসিসি প্রশাসক জনাব মোঃ শাহজাহান মিয়া এঁর সভাপতিত্বে স্থানীয় সরকার বিভাগের "সিটি কর্পোরেশন নাগরিক সম্পৃক্ততকরণ নির্দেশিকা" এর আলোকে গঠিত সিএলসিসির ৭১ জন সদস্য উপর্যুক্ত সভায় অংশগ্রহণ করেন।
সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটি (সিএলসিসি) সভায় আলোচনাপূর্বক উন্নয়ন ও সেবামূলক কর্মপরিকল্পনা সুপারিশ করতে পারে। এ সভায় সিটি কর্পোরেশনের বার্ষিক বাজেট ও উন্নয়ন পরিকল্পনা, আর্থিক বিবরণীসহ বার্ষিক অর্জন সম্পর্কিত প্রতিবেদন, নাগরিক জরিপ, সামাজিক সমস্যাবলি সমাধানের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ, সিটি কর্পোরেশনের সেবাসমূহের মান উন্নয়ন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও নাগরিকদের যথাযথভাবে সেবা প্রদানে চ্যালেঞ্জসমূহ আলোচিত হতে পারে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে ডিএসসিসি প্রশাসক বলেন, "জুলাই পরবর্তী নাগরিক প্রত্যাশা পূরণে সিএলসিসি কমিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা তাদের মাধ্যমে সরাসরি নাগরিকদের মতামতের প্রতিফলন হয়।" এ সময় প্রশাসক ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএসসিসির গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে জনগণকে এ বিষয়ে আরও সচেতন ও সম্পৃক্ত করতে সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্যদের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় সদস্যবৃন্দ ডিএসসিসির সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা ও সুপারিশ প্রদান করেন এবং সিটি কর্পোরেশন নাগরিক জরিপে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ জহিরুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, সকল বিভাগীয় প্রধান এবং মিস নাউকু আনজাই, টিম লিডার, সিফরসি২ উপস্থিত ছিলেন।
তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের মধ্যে বাল্যবিয়ে ও কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণের প্রবণতা উদ্বেগজনক আকারে বেড়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই শ্রমিকদের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি (৬৬ শতাংশ) ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়েছে। তাদের অধিকাংশই অপ্রাপ্ত বয়সে প্রথমবারের মতো গর্ভধারণ করেছেন। একই সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ ও গর্ভপাতের হারও এ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তুলনামূলক বেশি।
গতকাল সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে আইসিডিডিআরবি মিলনায়তনে ‘তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়।
গবেষণা বলছে, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী শ্রমিক অন্তত একবার অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন এবং প্রতি চারজনের একজন গর্ভপাত বা মেনস্ট্রুয়াল রেগুলেশন করেছেন।
জানা গেছে, গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার সহায়তায় আইসিডিডিআরবি প্রায় ২৪ মাসব্যাপী এই গবেষণা পরিচালনা করে, যা বাংলাদেশে পরিচালিত প্রথম এমন কোনো গবেষণা। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গবেষণাটি কড়াইল ও মিরপুর বস্তি এবং গাজীপুরের টঙ্গী বস্তিতে আইসিডিডিআরবির আর্বান হেলথ অ্যান্ড ডেমোগ্রাফিক সার্ভেইলেন্সের আওতাধীন এলাকায় পরিচালিত হয়। ১৫-২৭ বছর বয়সি মোট ৭৭৮ জন বিবাহিত নারী গার্মেন্ট শ্রমিককে এই গবেষণাটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর এদের ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়।
সেমিনারে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে জানানো হয়, গার্মেন্টস কর্মীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন ৪৯ শতাংশ শ্রমিক, যা দুই বছর শেষে বেড়ে দাঁড়ায় ৭০ শতাংশে। জরুরি গর্ভনিরোধক বড়ি সম্পর্কে জ্ঞান ছিল মাত্র ১৫ শতাংশ নারীর; গবেষণা শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ শতাংশে। একই সময়ে পরিবার পরিকল্পনায় লিঙ্গ সমতার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব ৫৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭১ শতাংশে পৌঁছেছে।
গবেষণায় দেখা যায়, নারী শ্রমিকরা ঘর ও কর্মস্থল দুই জায়গাতেই সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। গত ১২ মাসে স্বামীর সহিংসতার হার ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। যৌন সহিংসতা ছাড়া অন্য সব ধরনের সহিংসতা গত দুই বছরে বেড়েছে। কর্মক্ষেত্রেও সহিংসতার প্রবণতা উল্টোদিকে গেছে— গবেষণার শুরুতে যেখানে প্রায় ৪৮ শতাংশ শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে মানসিক সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন, গবেষণার শেষ দিকে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫ শতাংশে।
তবে সহিংসতার শিকার হওয়ার পরও খুব কম সংখ্যক নারী আনুষ্ঠানিকভাবে সাহায্য চাইছেন। গবেষণার শুরুতে যেখানে ৩৫ শতাংশ নারী অনানুষ্ঠানিকভাবে (পরিবার বা বন্ধুদের কাছে) সাহায্য চাইতেন, গবেষণার শেষ দিকে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ২১ শতাংশে। কর্মক্ষেত্রের সহিংসতার ঘটনাতেও মাত্র এক-পঞ্চমাংশ নারী কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন, এবং দুই বছর পরেও এ হার অপরিবর্তিত থাকে।
তরুণ বয়সে গর্ভধারণের ঝুঁকি কমাতে কিছু নিয়ামকও চিহ্নিত হয়েছে গবেষণায়। দেখা গেছে, যারা সন্তান ধারণের আগেই গর্ভনিরোধক ব্যবহার শুরু করেছিলেন, তাদের কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণের ঝুঁকি ৪৭ শতাংশ কম। এছাড়া যারা প্রথম গর্ভধারণের আগে গার্মেন্ট খাতে কাজ শুরু করেছিলেন, তাদের ঝুঁকি আরও কম।
অন্যদিকে, স্বামী কর্তৃক সহিংসতার অভিজ্ঞতা থাকলে কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণের ঝুঁকি ২৬ শতাংশ বেড়ে যায় বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।
গবেষণার উপাত্ত বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, নারীর ক্ষমতায়নের বিভিন্ন মাত্রা স্বামীর সহিংসতাকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। যেমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বেশি থাকলে মানসিক ও যৌন সহিংসতা থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। মতামত প্রকাশের ক্ষমতা থাকলে যৌন সহিংসতা কমে। আবার চলাচলে স্বাধীনতা থাকলে শারীরিক সহিংসতার ঝুঁকিও কমে যায়।
ঢাকার মহাখালীতে আইসিডিডিআরবি ক্যাম্পাসে আয়োজিত সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (পরিকল্পনা ও গবেষণা) সহকারী পরিচালক ডা. সেকেন্দার আলী মোল্লা, পপুলেশন কাউন্সিল বাংলাদেশের সাবেক পরিচালক ডা. উবাইদুর রব, বিকেএমইএর যুগ্ম সচিব ফারজানা শারমিন এবং মেরী স্টোপস বাংলাদেশের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও স্বতন্ত্র গবেষক ইয়াসমিন এইচ আহমেদ।
বিকেএমইএর যুগ্ম সচিব ফারজানা শারমিন বলেন, গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে পরামর্শমূলক সেবা বৃদ্ধির কাজ চলছে। তবে আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
এই গবেষণার প্রধান গবেষক ছিলেন আইসিডিডিআরবির ইমেরিটাস সায়েন্টিস্ট ড. রুচিরা তাবাসসুম নভেদ। তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেলে তারা শুধু পরিবারে নয়, কর্মক্ষেত্রেও সহিংসতা থেকে সুরক্ষিত হতে পারেন। গার্মেন্ট শ্রমিক নারীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
মন্তব্য