নির্বাচন কমিশনে যারাই আসুক না কেন, রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি তাদের বিরোধিতায় নামতে যাচ্ছে।
দলটির অভিযোগ, সার্চ কমিটির মাধ্যমে এর আগেও যে দুটি নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে, তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারেনি। কমিশন দুটি আওয়ামী লীগের জয় নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। একই প্রক্রিয়ায় তৃতীয় নির্বাচন কমিশনও নিরপেক্ষ হতে পারবে না বলেও মনে করে বিএনপি।
কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব ছাড়ার পর নতুন কমিশনে কারা আসছেন, সেটি নিশ্চিত হয়নি এখনও।
নির্বাচন কমিশনে নিয়োগে আইন পাসের পর সার্চ কমিটি ১০টি নাম চূড়ান্ত করেছে। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে নামগুলো জমা পড়লে তিনি সেখান থেকে পাঁচজনকে বেছে নেবেন, যারা আগামী জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করবেন।
তবে বিএনপি ২০১২ ও ২০১৭ সালে নির্বাচন কমিশন গঠনের সময় রাষ্ট্রপতির সংলাপ ও সার্চ কমিটিকে নাম দিলেও এবার তারা এসব থেকে দূরে। তারা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ফিরে গেছে। তাদের দাবি, বর্তমান সরকার পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিক। তারা এসে নির্বাচন কমিশন গঠন করবে এবং সেই কমিশন ভোটের আয়োজন করবে।
এ অবস্থায় বিএনপির সিদ্ধান্ত হচ্ছে আন্দোলন। ২০১৩-১৪ এবং পরে ২০১৫ সালে দুই দফা আন্দোলনে নেমে খালি হাতে ঘরে ফিরলেও এবার আবার একই পথে নামতে চাইছে তারা। এর আগে জোটের আকার বড় করার কথাও বলছে তারা।
বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের প্রধান দাবি সরকারের পদত্যাগ, দ্বিতীয়টি হবে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সার্চ কমিটি যাদের দিয়ে করেছে তারা প্রত্যেকেই তাদের (আওয়ামী লীগের) লোক। আজ আবার নামগুলো পাঠাবে রাষ্ট্রপতির কাছে, যাদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে দেখা যাবে তারা সেই হুদার মতোই লোক।’
নতুন যে নির্বাচন কমিশন গঠন হতে যাচ্ছে, তার ওপর আওয়ামী লীগের প্রভাব থাকবে বলে মনে করেন বিএনপির একজন নেতা। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডাকাত কি রাতারাতি পির সাহেব হয়ে যাবে। যারা জোর করে ক্ষমতায় থাকে, তারা কি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন দেবে?’
নির্বাচন কমিশনে কে আসবে, সেটা নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথা নেই জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দরকার নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার৷ এ সরকারের অধীন কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। নির্বাচন কমিশন আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়।’
যে নির্বাচন কমিশন গঠন হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে বিএনপির অবস্থান কী- এমন প্রশ্নে খানিকটা বিরক্তিই প্রকাশ করলেন দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এগুলো বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। এ বিষয়ে আমরা কোনো চিন্তাও করি না। কারও প্রশ্নের উত্তর দিতেও রাজি নই।’
তবে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়াকে ‘তামাশা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনগণকে একটা ধোঁকা দেয়ার পাঁয়তারা এটি। তো এগুলোয় আমরা কথা বলব কেন? এসব ব্যাপারে সময় নষ্ট করার আমাদের সময় নেই।’
দলটির মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এটা নিয়ে তো আমরা ক্লিয়ার করে দিয়েছি। তার পরও আপনারা কেন প্রশ্ন করছেন? যারা জোর করে ক্ষমতায় থাকে তারা কি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন দেবে?
‘আগামী নির্বাচন কমিশন হবে আরেকটা ভাঁওতাবাজি। দেখবেন আরেকজন হুদা (সাবেক সিইসি কে এম নুরুল হুদা) বের করে নিয়ে আসছে তারা।’
সার্চ কমিটির মাধ্যমে প্রথম নির্বাচন কমিশন গঠন হয় ২০১২ সালে। সিইসি হিসেবে দায়িত্ব পান কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ। এই কমিশনই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি ও তার জোট সেই নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি ভোট ঠেকাতে সহিংস আন্দোলনে নামে।
২০১৭ সালে কে এম নুরুল হুদাকে সিইসি করে নির্বাচন কমিশন গঠন করার আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ ও সার্চ কমিটিতে নাম দেয়ার প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় বিএনপি।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ না হলেও হুদা এই কমিশনের অধীনে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে অংশও নেয় তারা। তবে ভোটের ফলাফল ছিল বিব্রতকর। কেবল সাতটি আসন পায় বিএনপির দুই জাট ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
এই নির্বাচনের ফলাফল বিএনপি এখনও মেনে নেয় না। তাদের দাবি, ২৯ ডিসেম্বর রাতেই ভোট হয়ে গেছে।
কেবল জাতীয় নির্বাচন নয়, হুদা কমিশনের শেষ বছরে তাদের অধীনে কোনো ভোটেই আর অংশ নেয়নি বিএনপি।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ নিয়ে ভারত কোনো ষড়যন্ত্র করলে বিষদাঁত ভেঙে দিতে প্রস্তুত আছেন বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মাদারীপুর জেলা শাখার উদ্যোগে বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের লেকপাড়ের স্বাধীনতা অঙ্গনে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
রেজাউল করিম বলেন, ‘বাংলাদেশকে নিয়ে যদি কোনো ষড়যন্ত্র করে থাকেন, তাহলে এ দেশের মানুষ সেই বিষদাঁত ভেঙে দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে অপেক্ষা করছে। শত শত মায়ের বুক খালি করা খুনি হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে।
‘ভারত বন্ধু রাষ্ট্র বললেও এখনও তারা বন্ধুর কোনো পরিচয়ই দিতে পারে নাই।’
দেশবাসীর উদ্দেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রধান বলেন, ‘সবাইকে সর্তক থাকতে হবে। আমাদের দেশকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলছে। আওয়ামী লীগ যারা করেছে তাদের দলের বড় নেতারা কর্মীদের ফেলে টুন টুনা টুন টুন হয়ে গেছে।
‘এমন নেতাদের পেছনে নেমে বারবার জীবনকে ধ্বংস করবেন না। এদের মাধ্যমে আমাদের দেশে বারবার অশান্তি তৈরি করবে আর আমরা একটা গোলাম রাষ্ট্র হিসেবে বসবাস করব, এটা হতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন করার জন্য এ দেশের লাখ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন। গত ৫ আগস্টও আপনারা দেখেছেন। এ দেশ আমার ও আমাদের।
‘এ দেশ রক্ষার জন্য যদি প্রয়োজন হয়, রক্ত দেব, জান দেব। দেশ রক্ষার জন্য রাজপথে নামব, এতে কোনো সন্দেহ নাই।’
আরও পড়ুন:জনগণের সেবক হয়ে রাজনীতি করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি বলেছেন, নিজেদের সংস্কার করাই রাজনীতির মূল চ্যালেঞ্জ।
আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির প্রয়াত নেতা আতিকুর রহমান সালুর স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মঈন খান এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এই স্মরণ সভার আয়োজন করে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি (আইএফসি)।
বিএনপির এই বর্ষীয়াণ নেতা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করে যত সংস্কারই করুক না কেন, নিজেরা নিজেদের সংস্কার না করা পর্যন্ত কোনো লাভ হবে না। আজকের রাজনীতির মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আমাদের প্রত্যেককে নিজেকে নিজের সংস্কার করা। একইসঙ্গে রাজনীতি মানেই হতে হবে জনগণের সেবক হয়ে কাজ করা।’
তিনি বলেন, ‘জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার ঐক্য অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু এ প্রসঙ্গে আমি আরও একটু সতর্ক করে দিতে চাই, ঐক্য করতে গিয়ে আবার নতুন করে যদি বাকশাল করে ফেলি তাহলে সেই ঐক্যে কাজ হবে না।
‘জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাজার হাজার জীবনের বিনিময়ে স্বৈরাচারকে দেশ থেকে হটানো হয়েছে। কিন্তু তার অর্থ এটা নয় যে, দেশে গণতন্ত্র পুনরায় ফিরে এসেছে। এই সত্যকে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।’
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘গণতন্ত্রে রূপান্তরের মাত্র একটি ধাপ আমরা অতিক্রম করেছি, তা হচ্ছে স্বৈরাচারের বিদায়। আরও কঠিন দুটি ধাপ রয়েছে।
‘দ্বিতীয় ধাপ হলো- অত্যাবশ্যকীয় সংস্কার সম্পাদন করে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে কোটি কোটি মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা।
‘তৃতীয় ধাপ হলো- জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তর করা।’
ড. মঈন খান বলেন, ‘দেশে জনগণের সরকার আসতে হবে। যারা একটি স্বাধীন সংসদ গঠন করবে, যারা সত্যিকার অর্থে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবে, ডামি বা ভুয়া সংসদ নয়। এ গুরুদায়িত্ব এসে পড়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। সে কারণেই আমরা এই সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিচ্ছি।
‘আমরা কোনো অবস্থাতেই চাই না তারা ব্যর্থ হোক। কেননা, এই সরকার ব্যর্থ হলে তা শুধু তাদের ব্যর্থতা হবে না, সেটা হবে পুরো জাতির ব্যর্থতা।’
আতিকুর রহমান সালুর স্মৃতিচারণ করে ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘একটি নাম আতিকুর রহমান সালু, একটি প্রতিবাদ আতিকুর রহমান সালু। আজ তার মৃত্যুর এক বছর পর আমরা এখানে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। এই মানুষটিকে কেন এতদিন আমরা স্মরণ করিনি?
‘দ্য ডেমোক্রেটিক গভর্নমেন্ট অফ ইস্ট বেঙ্গলের ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন সালু। ইতিহাস সবসময় মানুষের ওপর সুবিচার করে না। পরবর্তী জীবনে তিনি নতুন করে একটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। ২০০৫ সালের ৫ মে দ্বিতীয় ফারাক্কা লংমার্চ করেছিলেন তিনি। তার সমগ্র জীবন আবর্তিত হয়েছে এই দেশের কল্যাণে।’
আইএফসি’র সভাপতি অধ্যাপক জসীম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান সৈয়দ টিপু সুলতান।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সমন্বয়ক মোস্তফা কামাল মজুমদার, আইএফসি বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ড. নাজমা আহমেদ, সাবেক এমপি জহিরুদ্দিন স্বপন, বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূইয়া, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ।
আরও পড়ুন:পুলিশ প্রশাসন সংস্কার বিষয়ক প্রস্তাব জমা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ভবনে পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান সফর রাজ হোসেনের কাছে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপির পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব জমা দেয়া হয়।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সাবেক সচিব এস এম জহিরুল ইসলাম দলের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব জমা দেন।
প্রসঙ্গত, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করেছিল বিএনপি।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র একটি সেল। বিপন্ন মানুষের সহায়ক শক্তির আধার হিসেবে এই সেলটি ইতোমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমান কোন প্রেক্ষাপটে এই সেলটি গঠন করা হয়েছে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের আমলে গুম-খুনের শিকার এবং ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন চলাকালে শহীদ ও আহতদের পাশে থাকার প্রত্যয়ে গঠিত হয়েছে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’।
তারেক রহমান বুধবার চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মশালায় প্রশ্নোত্তর পর্বে এক প্রশ্নের জবাবে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ গঠনের কারণ ব্যাখ্যা করেন।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা এবং আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘যারা আমাদের দেশের পতাকা ছিঁড়ে আমরা তাদের (ভারতীয়) পণ্য বর্জন করব।’
ভারতীয় পণ্য বর্জন ও বাংলাদেশি পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করতে ‘দেশীয় পণ্য কিনুন, ধন্য হোন’ ব্যানারে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশি মা-বোনদের আর ভারত থেকে শাড়ি, সাবান, টুথপেস্ট বা অন্য কিছু কেনা উচিত নয়।’
বাংলাদেশ পেঁয়াজ উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সুতরাং আমরা তাদের (ভারত) ওপর নির্ভরশীল হবো না। আমরা ভারতীয় পণ্য বর্জন করব।’
ভারতীয় শাড়িতে আগুন
অনুষ্ঠানে রিজভী তার সহধর্মিণীর একটি ভারতীয় শাড়ি ছুড়ে মারেন। ভারতবিরোধী স্লোগানের মধ্য দিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘টাঙ্গাইলের শাড়ি, রাজশাহীর সিল্কের শাড়ি কিংবা কুমিল্লার খদ্দর পরব।’
তবে বাংলাদেশের পতাকায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করলেও ভারতের পতাকার অবমাননা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন না করার আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা।
রিজভী বলেন, ‘আমরা ভারতের পতাকার অপমান করব না। আমরা আরেকটি স্বাধীন দেশের মর্যাদা খাটো করব না। আমরা কোনো জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অসম্মান করব না।’
ভারতীয়রা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ মাথানত করতে পারে না। প্রয়োজন হলে আমরা দিনে একবেলা খাব। তারপরও আমরা মাথানত করব না।’
চিকিৎসা ভিসায় ভারতে যাওয়া বাংলাদেশি রোগীদের সম্পর্কে ভারতীয় সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের সাম্প্রতিক বক্তব্যের উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ভারতে বিনামূল্যে চিকিৎসা করতে যায় না।
‘বাংলাদেশ থেকে লোকজন সেখানে গিয়ে ডলার খরচ করে। এখন কলকাতার নিউমার্কেট বন্ধ, দোকানপাট বন্ধ। আর কোনো ক্রেতা নেই। বাংলাদেশিরা সবসময় ডলার দিয়ে পণ্য ও সেবা কিনতে সেখানে যায়।
ভারতের হাসিনা-প্রীতি
রিজভী বলেন,’'তারা (ভারত) নিষ্ঠুর হাসিনাকে পছন্দ করে, বাংলাদেশের মানুষকে নয়। তারা চায় না বাংলাদেশ বাঁচুক।’
‘ভারত আজ বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের উস্কানি দিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কোনো উস্কানিতে পা দেবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য এতটাই দৃঢ় যে কেউ তা ভাঙতে পারবে না।’
এ সময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবা বিষয়ক সম্পাদক মীর শরাফত আলী সপু, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামী নির্বাচন অনেক কঠিন হবে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মাঠে থাকলে বা থাকতে পারলে নির্বাচন যতটা কঠিন হতো, তার চেয়েও আগামী নির্বাচন বেশি কঠিন হবে। এখানে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে এবং অনেক অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে।
বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বুধবার ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অধিবেশনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তারেক রহমান বলেন, ‘কেউ যদি মনে করেন যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে আমরা যাদের ভাবতাম তারা মাঠে নেই বা মাঠে দুর্বল, আল্লাহর ওয়াস্তে এ কথা মন থেকে সরিয়ে দিন।
‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, আপনি যেহেতু এ দলের প্রতিনিধি, আপনার বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে। একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করুন। ছাত্রদল, যুবদল, মহিলা দল কিংবা স্বেচ্ছাসেবক দল- যা-ই হোন না কেন, আল্লাহর ওয়াস্তে এটা একটু চিন্তা করুন যে বহু ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্রকে উপড়ে ফেলতে আমাদের ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে হবে। আমাদের ধৈর্য্যশীল হতে হবে, আচরণ সেরকম হতে হবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘নিশিরাতের নির্বাচনে, ব্যালট চুরির নির্বাচনে আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি জনগণের ম্যান্ডেটে। আমরা সেই নির্বাচনে বিশ্বাস করি, যেখানে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে, স্বচ্ছভাবে, সুন্দরভাবে, নিরাপদে, নিরাপত্তার সঙ্গে ভোট দেবে।
‘সেটা অর্জন করতে হলে আপনাদের অনেক কিছুর পরিবর্তন করতে হবে। আপনাদের আচরণ, চলাফেরা, কথাবার্তা পরিবর্তন করতে হবে। বারে বারে আমি বলছি- আপনারা জনগণকে সঙ্গে রাখুন, জনগণের সঙ্গী হোন।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা কেউ ক্ষমতায় যাব না। আপনারা কেউ কিন্তু ক্ষমতায় যাবেন না। আপনারা মানুষের সমর্থন পেলে দেশ পরিচালনার সুযোগ পাবেন। মানুষ আপনাদের ক্ষমতা দেবে না, মানুষ আপনাদের দেশ পরিচালনার সুযোগ দেবে।
‘পার্থক্যটা বুঝতে হবে। ক্ষমতায় ছিল পলাতক স্বৈরাচার। ওরা জনসমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ পায়নি। ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতায় ছিল। আমরা দেশ পরিচালনার সুযোগ পেতে চাই জনগণের সমর্থন নিয়ে।’
বিএনপির এই দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা বলেন, ‘দুর্নীতির মাধ্যমে ১৫ বছরে আমাদের দেশের ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে অবৈধভাবে পাচার হয়ে গেছে। ১৫ দিনের মধ্যেই তা আবিষ্কার করা গেছে। এর মানে ভেতরে আরও অনেক কিছু আছে। দেশের কয়েক বছরের বাজেটের সমান টাকা চলে গেছে।
‘পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। মানি লন্ডারিংয়ের টাকা আন্তর্জাতিক ফোরামের সঙ্গে একটা সামঞ্জস্যের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার জন্য একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
‘ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার লোকাল ফোরামের মাধ্যমে কথাবার্তা শুরু করেছে। আমরা অবজারভ করব, তারা সেটা কতটুকু করতে পারে। যদি পারে তাহলে ভালো, আমরা সেটাকে স্বাগত জানাবো। আর কী পারে সেটা দেখে জনগণ যদি আমাদের ভোট দিয়ে দেশসেবার সুযোগ দেন; তাহলে বিভিন্ন ফোরামের মাধ্যমে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বন্দোবস্ত করেই ছাড়ব।’
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘অবশ্যই আমরা আন্তর্জাতিক ফোরামের সহযোগিতা নেব। তবে এর বাইরে আন্তর্জাতিকভাবে যে প্রাইভেট সংস্থাগুলো আছে; তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলব। আমাদের দেশের সম্পদ (পাচার হওয়া টাকা) দেশের মানুষের সম্পদ যে এনে দিতে পারবে; আমরা তার সঙ্গেই কথা বলব, বসব।’
আরও পড়ুন:জাতীয় ঐক্যের ডাকের সঙ্গে বিএনপি একমত। তবে সেসঙ্গে দলটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত নির্বাচনি রোডম্যাপ চায়। নির্বাচনি রোডম্যাপ প্রকাশ হয়ে গেলে আর কেউ ষড়যন্ত্র করার সাহস পাবে না বলে মনে করে দলটি।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন
সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। এর আগে তার নেতৃত্বে বিএনপির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম এই সদস্য বলেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
‘জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করা হয়েছে। তাদের ষড়যন্ত্রকেও এদেশের ছাত্র-জনতা মিলে আমরা সবাই মোকাবিলা করব।’
ড. মোশাররফ বলেন, ‘এই সরকার জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে ওয়াদাবদ্ধ। তাই আমরা বলেছি অতি দ্রুত সংস্কার সাধন করে নির্বাচনের জন্য একটা রোডম্যাপ দিতে। জনগণ রোডম্যাপ পেয়ে নির্বাচনমুখী হয়ে গেলে যেসব ষড়যন্ত্র এখন আপনারা দেখতে পাচ্ছেন সেসব ষড়যন্ত্র আর কেউ করার সাহস পাবে না।’
বিএনপির এই বর্ষীয়াণ নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশ এই ডিসেম্বরে লাখো মানুষের শাহাদাতের বিনিময়ে গণতন্ত্রের জন্য, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য এবং দেশের শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য স্বাধীনতা পেয়েছে। আজকের এই বিজয়ের মাসে আমাদের সবার প্রত্যয়ে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
‘অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব এই দেশে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। আমাদের দেশের বিরুদ্ধে পতিত সরকার বিদেশ থেকে যে ষড়যন্ত্র করছে সেই ফ্যাসিস্ট, পতিত সরকারের বিরুদ্ধে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছেন।’
বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা হচ্ছে উল্লেখ করে ড. মোশাররফ বলেন, ‘আমরা সরকারের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেছি যে জনগণ যেমনিভাবে জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করেছে, তাদের এবং তাদেরকে যারা সহযোগিতা করছে তাদের ষড়যন্ত্রকে সেভাবে এদেশের ছাত্র-জনতা সবাই মিলে মোকাবিলা করব।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য