সুনামগঞ্জে পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনে যার মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে তোলপাড়, সেই উজির মিয়ার বাড়ি ফেরার পর তার একটি ভিডিও এসেছে নিউজবাংলার হাতে।
এতে দেখা যায় মধ্যবয়সী উজিরের হাঁটুর নিচে মাংসপেশি, ঊরু, পিঠে কালসিটে অসংখ্য দাগ। মাথাতেও বেশ কিছু দাগ রয়েছে, যেগুলো মারধরের কারণে হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিছানায় শুয়ে থাকা উজিরের হাত ক্রমাগত কাঁপছিল।
স্বজনরা জানিয়েছেন, বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার সময়ই উজিরকে বেধড়ক পেটানো হয়েছিল। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া দুজন জানিয়েছেন, থানায় গামছা দিয়ে বেঁধে, পরে ঝুলিয়ে ব্যাপক মারধর করা হয়। একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে উজিরসহ তিনজনকে পাঠানো হয় হাসপাতালে।
উজিরের সঙ্গে পুলিশের এক উপপরিদর্শকের পূর্ববিরোধের বিষয়টিও সামনে এসেছে।
সুনামগঞ্জে গরু চুরির মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ৯ ফেব্রুয়ারি উজির মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই দিন তার সঙ্গে গ্রেপ্তার করে থানায় নেয়া হয় আরও তিনজনকে।
উজির মিয়ার সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন একই এলাকার শহীদ ইসলাম, আক্তার মিয়া ও শামীম মিয়া। তাদের মধ্যে উজির, শহীদ ও আক্তার ১১ ফেব্রুয়ারি জামিনে ছাড়া পান।
জামিনে মুক্তির ১১ দিনের মাথায় ‘চিরমুক্তি’ হয় উজিরের। মৃত্যুর পর স্বজনরা অভিযোগ করতে থাকেন, থানায় নির্যাতনের কারণে মারা গেছেন তিনি। তবে পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করে, জামিনের ১১ দিন পর কারও মৃত্যু হলে তাদের ওপর কোনো অভিযোগ আসতে পারে না।
গরু চুরির অভিযোগে ১৪ জানুয়ারি শান্তিগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। এই মামলায় গ্রেপ্তারের পরদিন ১০ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্তি পান। এর ১১ দিন পর অর্থাৎ ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার হাসপাতালে মারা যান উজির মিয়া।
মৃত্যুর পর ঘটেছে আরও নানা ঘটনা। মরদেহ নিয়ে পুলিশ সদস্যদের বিচারের দাবিতে মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছে এলাকাবাসী। সে সময় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার উজ জামানকে বহনকারী একটি গাড়ি উজির মিয়ার লাশ চাপা দিয়ে যায়। এই ঘটনায় এলাকায় এখনও ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে।
এর মধ্যে উজির মিয়ার বাড়ি ফেরার দিন তার ভিডিওটি আসার পর শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা ইউনিয়নের শত্রুমর্দন এলাকায় গিয়ে জানা যায় নানা তথ্য।
সঙ্গে গ্রেপ্তার দুজনের অভিযোগ
উজির মিয়ার সঙ্গে গ্রেপ্তার শহীদ ইসলাম জানালেন, থানায় তাদেরকে পেটানো হয়েছে নির্মমভাবে। তিনি বলেন, ‘ওই দিন রাতে প্রথমে আক্তাররে, পরে উজির ভাইরে, তিন নম্বর আমারে ধরছে। কোনো জিজ্ঞাসা নাই, ধরিয়া সঙ্গে সঙ্গে বার করছে আমারে। তারার (পুলিশের) কাছে কোনো ডকুমেন্ট কোনো কিছু নাই। নিয়া আমারে সিএনজিত তুলছে। দুইটা থাপ্পড় মারছে। আর খালি কয়, মাল কই। আমি তো ইতা জানি না। ঘটনা কিরা (কী) বুঝছিও না।
‘থানায় নিয়া আমারে মারিয়া জিকাইলো (জিজ্ঞাসা করে) উজির মিয়াকে চিনি কি না। আমি বললাম, চিনি তো। আমার আগের বাড়ির সম্মানই মানুষ বড় ভাই।
‘এই কথা শুনিয়া উজির ভাইরে তারা অন্য রুম নিয়া বানা (পিটানো) দিছে। পরে আমার সামনে আনিয়া হেন্ডকাপ পরাইয়া লুঙ্গির কাচা করে প্রথমে সারা শরীরও মারছে। পরে পায়ের তলায়। এর পরে আমারেও বাঁধছে। বেঁধে পায়ের তলে মারছে।’
উজিরের সঙ্গে জামিন পাওয়া আক্তার মিয়াও বললেন একই কথা। তিনি বলেন, ‘আমি রাতে দোকানেই ঘুমাই। ওই দিন রাতে আমার দোকান বন্ধ করিয়া ঘুমাই গেছি। দুইজন আইয়া আমার টিনে বাড়ি দিয়া (দিয়ে) সিগারেট চাইল। কইলাম ইটা (সিগারেট) দিতে পারতাম না। মেচ (ম্যাচ) দিরাম (দিতে) কইছি (পারব)। ইকান (এটা) কইতেই (বলতেই) মারি দিসে লাথ দোকান। বাঁশের খারা (খুঁটি) একটা ভাঙি গেছে। পরে আমার মুখো দুইটা টুশি (ঘুষি) দিসে।
‘থানায় নিয়ে প্রথমে তাকেও (উজির) মারধর করা হয়। পরে এসআই দেবাশীষ তাকে বাধ্য করেন উজির মিয়াকে এই চুরির মামলায় গডফাদার বলার জন্য।’
আক্তার বলেন, ‘আমাকে মারার পর দেবাশীষ দারগা খালি কইন (জিজ্ঞাসা করেন) উজির ভাইরে চিনিনি। আমি কইছি গরু চুর (চোর) শামীম, তার সঙ্গে আরও অনেকজন আছে। ইকান (এটা) কইতে (বলতে) তারা আমারে আবার ঝুলায়া মাইর শুরু করছে। পরে আমি বেহুঁশ অবস্থায় খালি মাথা নাড়াইছি। হু কইছি।’
আক্তার মিয়া বলেন, ‘সবার মধ্যে উজির মিয়াকেই সবচেয়ে বেশি মারা হইছে। ঝুলাইয়া মুখ-চোখ গামছা দিয়া বাধিয়া (বেঁধে) মারছোইন (মারছে)। তারা আমারে কইছে, তানরে (তাকে) গডফাদার কইতাম (বলতে)।’
তিন ঘণ্টা ধরে মারধরে উজির মিয়া জ্ঞান হারান বলে জানান আক্তার। তিনি বলেন, ‘উজিরের অবস্থা বেগতিক দেখে রাত প্রায় সাড়ে তিনটা নাগাদ পুলিশের গাড়িতে করি সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
আক্তার বলেন, ‘আমরারে ডাক্তারে কইছে, কিচ্ছু অইছে না, ঠিক অই যাইব। আর উজির ভাইরে বলে একটা ইনজেকশন দিলে ঠিক অই যাইব। ইকান শুনছি পরে আমরারে নিয়া আইচ্ছে।’
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই রাতে তাকে (উজির) হাসপাতালে নিয়ে আসার পর বমি হচ্ছিল, মাথা ঘুরাচ্ছিল। শরীর ছিল দুর্বল। পরে ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।’
শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখেছেন কি না- এমন প্রশ্নে সেই চিকিৎসক বলেন, ‘না, আমি এমন কিছু দেখি না। শরীর খুব দুর্বল দেখেছি।
নাম নেই এজাহারে
গরু চুরির মামলার বাদী উপজেলার দরগাপাশা ইউনিয়নের আমরিয়া গ্রামের নুর উদ্দিন। তিনি মামলায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করেন। এজাহারে ৩ থেকে ৪ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। মামলায় উজিরের নাম ছিল না।
এজাহারে বাদী যে মোবাইল নম্বর দিয়েছেন তা ব্যবহার করেন মামলার ৪ নম্বর সাক্ষী মতছির আলী। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নুর উদ্দিনের নিজের মোবাইল নেই। তাই হয়তো আমার নম্বর দিয়েছেন।’
নুর উদ্দিন বাড়ি থেকে দূরে অবস্থান করছেন জানিয়ে বাদীর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিতে অস্বীকার করেন।
‘মারধর করা হয়েছে বাড়িতেও’
উজির মিয়াকে আটকে শান্তিগঞ্জ থানার এসআই দেবাশীষ সূত্রধর, এসআই পার্ডন কুমার সিংহ ও এএসআই আক্তারুজ্জামানের নেতৃত্বে প্রায় ২০ জনের একটি দল অংশ নেয়।
চাচাতো বোন শাবানা আক্তার ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাত সাড়ে ১২টার দিকে প্রায় ২০ জন পুলিশ বাড়িতে আসে। আমার ভাই (উজির মিয়া) দরজা খুলতেই তারা ভাইরে দিসে মাইর। এরপর ডান হাতে আরেকটা মাইর দিয়ে ভাইয়ের কলারও ধরিয়া টানিয়া বাইরে নিসে।’
উজির এ সময় নিজেকে নিরপরাধ দাবি করেন। সে সময় পুলিশ তার দুই হাঁটুতে লাঠি দিয়ে আঘাত ও গালাগালি করে বলে জানান শাবানা।
তিনি বলেন, ‘আমারে ফালাইয়া টানিয়া আমার ভাইটারে নিয়া নিসে। বাড়ি থেকে মারতে মারতেই আমার ভাইরে থানায় নিয়ে গেছে। সেখানেও মারছে। পুলিশের নির্যাতনেই আমার ভাই মারা গেছইন। আমার ভাইরে যারা মারছে, তারার ফাঁসি চাই।’
উজিরের ছোট ভাই ডালিম মিয়া বলেন, ‘পুলিশ আইয়া আমার ভাইরে প্রথমে মাথাত মারছে। পরে দুই হাতও মারছে। তারা কয়, আমার ভাই নাকি চোর। যে আসল চোর তারে লগে লইয়া অভিযানে আইছিল পুলিশ। তারে পুলিশের জ্যাকেট আর জুতা লাগাইয়া আনছিল।’
ভাতিজা বাছির তালুকদার বলেন, ‘চাচারে ঘর থেকে বের হতেই মারধর করে পুলিশ। পরে থানায় নিয়ে টানা তিন ঘণ্টা মারধর করে।’
পূর্বশত্রুতার অভিযোগ
উজির মিয়াকে নির্যাতনের জন্য শান্তিগঞ্জ থানার তিন পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন এসআই দেবাশীষ সূত্রধর।
উজিরের পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০১৭ সালে পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রঞ্জিত সূত্রধরের সঙ্গে মারামারি হয়েছিল উজির মিয়ার। এসআই দেবাশীষ সেই রঞ্জিতের আত্মীয়।
উজিরের ভাই ডালিম মিয়া বলেন, ‘দেবাশীষ আমার ভাইরে থানায় মারছে আর কইছে- তুই রঞ্জিতরে মারছিলে না, তরে এমন মাইর দিমু তুই সাত দিনের ভিতরে মরবে।’
রঞ্জিত সূত্রধর পূর্ববিরোধ প্রসঙ্গে বলেন, ‘২০১৭ সালে উজির মিয়া আক্রমণ করেছিল। তা দুবছর পরই মিটমাট হয়ে গেছে। তাদের বাড়িতে এখন আমার আসা-যাওয়া আছে। তার সাথে আমার বিরোধ ছিল না। এসআই দেবাশীষ আমার তালোই ঘরের ভাইর ভাগনা হয়।’
উজির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উজির মিয়ার বিরুদ্ধে কখনই চুরির অভিযোগ শুনিনি। কোনো মামলাও তার বিরুদ্ধে ছিল না। তার মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিচার আমিও চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে এস আই দেবাশীষ সূত্রধরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা ধরেননি। পরে এসএমএস করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসী যা বলছেন
শত্রুবর্ধন গ্রামের লোকজন জোর দিয়েই বলেছেন, উজির চুরি করার মতো লোক নন।
স্থানীয় বাসিন্দা শামীম মিয়া বলেন, ‘উজির মিয়া প্রতিবাদী আছিল। যখন গ্রামও একটানা চুরি হওয়া শুরু হইছিল তাইন একলা ইটার প্রতিবাদ করছুইন। আমরা গ্রামবাসী সবরে এক করিয়া তাইন পুলিশরে জানাইছলা, মানুষটা ভালা আছিল। তেমন কোনো শত্রু আছিল না।’
গ্রামের আয়না মিয়া বলেন, ‘এই পরিবারের কেউরে কোনো দিন চুরি করতে দেখছি না। তারা খুব শান্ত পরিবার। আর উজির তো দেশেই আইলো না ৬-৭ বছর আগে। পরে দেশো আইয়া ঘর আর ক্ষেতকৃষি লইয়া ব্যস্ত আছিল।’
প্রশাসনের তদন্ত কত দূর
উজির মিয়ার মৃত্যুর অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি করেছে পুলিশ।
জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘ঘটনায় কারও গাফিলতি বা উসকানি আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইদ আনোয়ারকে প্রধান করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মুক্তাদির হোসেন বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি ছুটিতে ছিলাম। তাই বিস্তারিত জানি না। তবে যে ঘটনা ঘটেছে, তা দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি।’
এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেনের সই করা অফিস আদেশে মঙ্গলবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার উল হালিমকে প্রধান করে গঠিত কমিটিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নাল আবেদিন ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একজন চিকিৎসককে রাখা হয়েছে। ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার উল হালিম নিউজবাংলাকে জানান, কমিটি মঙ্গলবার থেকেই কাজ শুরু করছে।
তবে এখন পর্যন্ত কী তথ্য পাওয়া গেল, সে বিষয়ে না প্রশাসনের, না পুলিশের তদন্ত দলের কেউ কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।
আরও পড়ুন:জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সংযোগ সড়ক ও রাস্তা না থাকায় কাজে আসছে না প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজ। ফলে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয় ৫ গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের। এমন ব্রিজের দেখা মিলেছে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর আদ্রা গ্রামের ফসলের মাঠে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ব্রিজটি। ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও এখন পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচলের জন্য নির্মিত হয়নি সড়ক। ফলে কোনো কাজেই আসছে না সাতপোয়া ইউনিয়নের, চর রৌহা, আকন্দপাড়া, মাজারিয়া ও খামার মাগুরাসহ পার্শ্ববর্তী মাদারগঞ্জ উপজেলার আরও ২টি গ্রামের জনসাধারণসহ হাজারও মানুষের।
সংযোগ সড়ক না থাকায় প্রতিদিন এসব এলাকার ফসলের মাঠের আল দিয়ে দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করছেন স্থানীয়রা। ব্রিজটি নির্মাণের দীর্ঘদিন পার হলেও এটি এখনো জনগণের চলাচলের জন্য ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠেনি। ব্রিজের দুই পাশে কাঁদা ও অসমতল জমির কারণে শিশু, বৃদ্ধ এমনকি সাধারণ পথচারীদেরও চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া কৃষকদের আবাদি ফসল আনা-নেওয়া বা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতেও হয়েছে চরম দুর্ভোগ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হাসানুর কবীর স্বপন, মাসুদ রানা, চান মিয়া, ছমিরন বেওয়া বলেন, ব্রিজটি নির্মাণের খবরে আমরা এলাকাবাসীরা খুবই খুশি হয়েছিলাম। ভেবে ছিলাম আমাদের কয়েক গ্রামের দীর্ঘদিনের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘব হবে। কিন্তু ব্রিজটি নির্মাণের এতদিন পার হলেও সড়ক না থাকায় এটি আমাদের কোনো কাজে আসছে না। আমরা দাবি জানাই অতি দ্রুত আমাদের চলাচলের সুবিধার্থে ব্রিজটির দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী শওকত জামিল বলেন, ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই ব্রিজটি ও সড়কের কথা জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। ওই এলাকার মানুষদের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘবে মাটি কেটে রাস্তা উঁচু করে ব্রিজের সঙ্গে সংযোগ রাস্তা নির্মাণ করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
পালকি ছিল এক সময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য, বর-কনের বাহন। এটা ছাড়া বিয়ের কথা ভাবাই যেত না। সারা দেশের মতো রূপগঞ্জেও একই অবস্থা ছিল। কালের বির্বতনে চিরায়ত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক পালকি রূপগঞ্জে আজ আর চোখে পড়ে না। পালকি এখন মিউজিয়াম পিস হয়ে কালের সাক্ষী হয়ে আছে জাদুঘরে। বেহারাদের সুর করে সেই গ্রাম ঘুরে মাঠ-ঘাট-প্রান্তর পেরিয়ে গন্তব্যের কাছে দূর থেকে সেই ছয় বেহারাদের আর দেখা যাচ্ছে না। তাদের ছন্দিত লয়ে হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে নাইয়র, বিয়ের কনে বর কিংবা মান্যগন্য ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়ার এ চক্রবিহীন যান সম্ভবত তার অন্তিম যাত্রা করেছে। ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায়, রবীন্দ্রনাথের কবিতায়, হেমন্তের গানে কিংবা ভুপেন হাজারিকার মাদল তালে চলা পালকি এখন ঐতিহ্যের খাতায় নাম লিখিয়েছে।
সেই ন্যাংটা পুঁটো ছেলেটা আর বলে না পালকি চলে পালকি চলে.....আদুল গাঁয়ে যাচ্ছে কারা হনহনিয়ে। রবি ঠাকুরের ‘বীর পুরুষ’ কবিতার খোকা তার মাকে পালকিতে নিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতদের সাথে লড়ে যখন ওরা আসে তেড়ে ‘হারে রে রে’ বলে। সেই ভীষণ যুদ্ধের বর্ণনাও দিতে পারে না মাকে। মাও বলতে পারে না, ভাগ্যেস খোকা ছিল তার সঙ্গে। দাদা তার সদ্য বিয়ে হওয়া দিদিকে আর বলে না, আর কটাঁ দিন থাক না দিদি, কেঁদে কেটে কঁকিয়ে, দুদিন বাদে তো নিয়েই যাবে পালকি করে সাজিয়ে। ‘মৈমনসিং গীতিকার’ দেওয়ানা মদিনা ও ছুটবে না পালকিতে আবের পাংখা নিয়ে আর পালকি বহরের সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।
আধুনিক যোগাযোগের গোগ্রাসে পালকি হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতল তলে প্রাচীন বাংলার এ বাহনটি। এক সময় গ্রাম-বাংলার হাটবাজারে পালকি সাজিয়ে রাখা হত। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার আগেই পালকিওয়ালাদের কাছে ছুটে যেতেন বরের লোকজন। পালকি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো। ছয়জন মিলে পালকি বহন করতো। সামনে পেছনে দুজন ও মাঝখানে দুজন করে পালকি কাঁদে নিত। প্রথমে বরকে পালকিতে করে তার নিজ বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হতো। বিয়ের কার্যক্রম সম্পূর্ণ হওয়ার পর বর-কনেকে এক সঙ্গে আবার বরের বাড়িতে নিয়ে আসতো।
আসলে পালকি নামটির উৎপত্তি ফারসি ও সংস্কৃত উভয় ইন্দো ভারতীয় ভাষা থেকে আর সেই সঙ্গে ফরাসি থেকেও। পল্লীকবি জসিম উদ্দিন তাঁর স্মৃতি কথায় এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে যাওয়া বেহারাদের পালকি নিয়ে চলার যে বিবরণ দিয়েছেন তা আমাদের আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। বিলুপ্ত এ পালকি এখন বিভিন্ন জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে। বিয়ে বাড়িতে নব বর-বধুদের আনা নেয়ায় পালকি ব্যবহার করা হতো। চক্রযানের বিপ্লবে পালকির জায়গা দখল করে নিয়েছে আধুনিকতার এ যুগে প্রাইভেটকার, নোহা, বাস ও মাইক্রোবাস। হালের লাঙ্গল যেমন গ্রামেও অচল তেমনি ধনী গরিব নির্বিশেষে সকলের নানা অনুষ্ঠানে ব্যবহার করছে আধুনিক যান্ত্রিক যানবাহন। এসব যানের রমরমা ব্যবসাও এ কারণেই জমে ওঠেছে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইদানিং বর-কনের বাহনে যোগ হয়েছে হেলিকপ্টারও। রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া এলাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে বর যাত্রা গিয়েছেন সফিক মিয়া। হেলিকপ্টারে বর-কনে বহনের ঘটনা তখন পুরো এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ছড়ায় বলা হতো বউ সাজবে কালকি, চড়বে সোনার পালকি! সোনার বরনী কন্যা এখন আর পালকিবদ্ধ পরিবেশে যাবে না, উঠবে আসল বা নকল ফুলের সাজানো এয়ারকন্ডিশন গাড়িতে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোর সাড়ে চারটার দিকে পাবনা বাইপাস মহাসড়কের ইয়াকুব ফিলিং স্টেশন এর সামনে দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ট্রাকচালক সেলিম হোসেন (৩৮) মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের মৃত আব্দুল গনির ছেলে।
আহতরা হলেন- বাসের হেলপার তারেক (৩৫) ট্রাকের হেল্পার আলামিন (৩৫)। তাদের রাজশাহী মেডিকেল। কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ট্রাকচালক সেলিম সুনামগঞ্জ থেকে পাথর ভর্তি করে মাওয়া যাচ্ছিলেন।অপরদিক পাবনা এক্সপ্রেস বাসটি ঢাকা থেকে পাবনা বাস টার্মিনালে যাত্রী নামিয়ে হেলপার আলামিন গাড়ি গ্যারেজ করার জন্য দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে ইয়াকুব ফিলিং স্টেশনের সামনে পৌঁছালে ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে জানালে তাৎক্ষিনক ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম আহত তিনজনকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ট্রাক চালক সেলিম কে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে আহত ট্রাকের হেলপার ও বাসের হেলপারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্থানান্তর করা হয়।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে সদর থানা হেফাজতে আনা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে নজির গাজী (৪৯) ও দিদারুল ইসলাম (৩৮) নামে দুই ’জলদস্যুকে’ আটক করেছে পুলিশ। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা ও ১১টার দিকে উপজেলার উপকুলবর্তী যতীন্দ্রনগর ও মীরগাং এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় আটক দুই জলদস্যুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের ব্যবহৃত নৌকা থেকে একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা।
এর আগে সোমবার রাত আটটার দিকে সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে উঠে আসার সময় স্থানীয়দের ধাওয়ার মুখে অপর কয়েক সহযোগিসহ এসব জলদস্যুরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আটকরা হলেন— শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের নওশাদ গাজী এবং আশাশুনি উপজেলার চাকলা গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে দিদারুল ইসলাম।
আবু হামজা, সিদ্দিক হোসেন ও আকবর আলীসহ স্থানীয়রা জানায়, রাত সাড়ে আটটার দিকে অপরিচিত পাঁচ/সাত জন ব্যক্তি সুন্দরবন তীরবর্তী যতীন্দ্রনগর বাজারে যায়। এসময় নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য তারা মাইক্রো বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের জন্য কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে নাম—পরিচয়সহ সুন্দরবন এলাকায় আসার কারণ জানতে চাইলে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় যতীন্দ্রনগর বাজারে উপস্থিত লোকজন ধাওয়া করে দিদারুলকে ধরে পুলিশকে খবর দেয়। পরবর্তীতে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থলে পৌঁছে নজীরকে আটকের পাশাপাশি তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই চক্রের ব্যবহৃত মাছ শিকারের নৌকার মধ্যে থেকে একটি একনলা বন্দুক ও একটি দা উদ্ধার করে।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছে, জোনাব বাহিনী এখন সুন্দরবনে খুব বেশি তৎপর না। বরং নজীর, তার ভাই নবাব ও ছেলে আব্দুর রহিম এবং মুন্সিগঞ্জ আটিরউপর এলাকার আছাদুলসহ কয়েকজনকে নিয়ে জোনাবের নামে সুন্দরবনে দস্যুতায় লিপ্ত। সোমবার রাতে নজীর আলীকে আটকের পরপরই তার ছেলে আব্দুর রহিম ও ভাই নবাব ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।
আটক নজীর আলীর ভাষ্য, তিনি সুন্দরবনের ত্রাস কুখ্যাত জোনাব বাহিনীর সদ্যদের উপরে তুলে দেওয়া এবং সুন্দরবনে নামিয়ে দেয়ার কাজ করেন। সোমবার ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে জোনাব বাহিনীর দুই সদস্যকে যতীন্দ্রনগর বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন। বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে যেয়ে মাছ শিকারের পাশাপাশি তারা পরিচিত জলদস্যুদের উপরে নিচে উঠানামার কাজ করেন বলেও দাবি তার। উপরে উঠে যাওয়া দুই জলদস্যু উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি তার নৌকার মধ্যে রেখে যায় বলেও তিনি দাবি করেন।
দিদারুল জানান, তিনি নজীর আলীর শ্রমিক হিসেবে সুন্দরবনে যাওয়া জেলেদের জিম্মি করারসহ মুক্তিপণ আদায়ের কাজ করেন। লোকারয়ে পৌঁছে দেওয়া দুই জলদস্যুকে সুন্দরবনের পুটেরদুনে এলাকা থেকে নিয়ে আসার কথাও নিশ্চিত করেন তিনি। তবে তার কাছে মোবাইলের পাওয়ার ব্যাঙ্কসহ নানান সরঞ্জামাদির বিষয়ে জানতে চাইলে নিরুত্তর থাকেন।
এদিকে অস্ত্র উদ্ধারসহ দু’জনকে আটকের বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা জানান, নজীরের দেওয়া তথ্যে নৌকায় থাকা ককসিটের নিচে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার হয়েছে। আটকের পর উভয়কে শ্যামনগর থানায় নেওয়া হয়েছে। তারা মাছ শিকারির ছদ্মবেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করতেন বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাহিনীর নাম—পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
কুমিল্লায় চার জনের শরীরে নতুন ভ্যারিয়েন্টের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে এক নারী চিকিৎসকসহ তিনজন পুরুষ রয়েছেন।
শনিবার (১৪ জুন) কুমিল্লা সিটি স্ক্যান এমআরআই স্পেশালাইজড অ্যান্ড ডায়ালাইসিস সেন্টারে করোনা পরীক্ষা শেষে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
করোনায় আক্রান্তরা হলেন, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আবদুল মোমিন (৭০), কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার ডা. সানজিদা (৩০), বুড়িচং উপজেলার মো. হেলাল আহমেদ (৩৮) এবং সদর উপজেলার মো. ইবনে যুবায়ের (৩৯)।
সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির বলেন, গত তিন দিনে কুমিল্লায় ১৩ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা কয়। পরীক্ষা শেষে তাদের মধ্যে চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকিদের নগরীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
তিনি বলেন, চারজনই বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। দুজন এরই মধ্যে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চলে গেছেন।
তবে আরেকজনের বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি সিভিল সার্জন।
করোনার প্রথম ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর এতদিন কুমিল্লায় নতুন করে কেউ শনাক্ত হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু এখন আবার নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দ্বিতীয় ধাপের শুরু হতে পারে এবং এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
চট্টগ্রামে নতুন করে আরো একজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ছয় দিনে মোট ৯ জনের শরীরে এ ভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল আটটা থেকে শনিবার সকাল আটটা) ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। ৪০ বছর বয়সী আক্রান্ত ওই ব্যক্তি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেহাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি শুক্রবার নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা করান। সেখানেই তার শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত নয়জনের মধ্যে পুরুষ ৫ জন এবং নারী ৪ জন। এদের মধ্যে ৭ জন নগরের এবং ২ জন উপজেলার বাসিন্দা।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা চালু আছে। তবে শিগগিরই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) আরটি–পিসিআর পরীক্ষা শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
কুমিল্লার দাউদকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দূর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোগীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে গিয়ে হাসপাতালের তিনজন কর্মী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা ছুটে আসে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আহতরা হলেন ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (১৪জুন) বেলা ১১টায় দাউদকান্দি উপজেলা গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩য় তলায় ষ্টোর রুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে হাসাপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের এবং বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা প্রায় দুই ঘন্টা বন্ধ থাকে৷ খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১ টার দিকে হাসপাতালের তিনতলার ষ্টোর রুমে আগুনের ধোয়া দেখা যায়। ধোয়া দেখে পাশের ওয়ার্ডের রোগীর স্বজন ও নার্সরা আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। এ সময় হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনরা দৌঁড়াদৌড়ি শুরু করেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পল্লী বিদ্যু ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা নামে তিন কর্মচারী আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মোঃ ইদ্রিস বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসার পর স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। প্রাথমিক ধারনা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনে সূত্রপাত, পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে মূল কারণ জানা যাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালের ৩য় তলায় ডেঙ্গু রোগীদের ওয়ার্ডের পাশের কক্ষে ষ্টোর রুমে ঔষধসহ রোগীদের সেবার কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের মালামালের সাথে কিছু দামী সরঞ্জামও ছিল। ওই কক্ষে আগুনে অধিকাংশ মালামালই পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু মালামাল বের করতে পারলেও তা ভালো আছে কিনা পরবর্তীতে যাচাই করে বলেতে পারবো । আগুনে ক্ষতির পরিমান এখন নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আর আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং মালামাল বিশেষ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার বের করতে গিয়ে আমাদের আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা তিনজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে দাউদকান্দি উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷
মন্তব্য