ঘড়িতে রাত ১০টা বেজে ১৫ মিনিট। ঢাকার পান্থপথ কাউন্টারের সামনে এসে দাঁড়ায় শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস। রাঙ্গামাটিগামী বাসটি ছাড়তে তখনও মিনিট পনেরো বাকি। যাত্রীরা বাসে উঠে যে যার আসনে বসছেন। বাড়ি ফেরার আনন্দ নিয়ে বাসে উঠলেন রাঙ্গামাটির মেয়ে সাজিয়া জাহান।
উচ্চশিক্ষার জন্যই ঢাকায় এসেছেন সাজিয়া। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন; থাকেন ইস্কাটনে। গাড়িতে উঠতেই পরিচিত আরেক তরুণী বলে উঠলেন, ‘তুই হন্ডে যদ্দে? বালা আছছ না তুই (তুই কই যাচ্ছিস? ভালো আছিস তুই)?’
উত্তরে সাজিয়া বললেন, ‘আফু, আঁই তো বালা আছি। বউত দিন ফর তুঁয়াল্লই দেহা অইলো দে এনা। তুঁই ক্যান আছ (আপু, আমি ভালো আছি। অনেক দিন পর তোমার সঙ্গে দেখা হলো। তুমি ভালো তো)?’
আরও কয়েক লাইন এগোয় দুজনের আলাপচারিতা। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ‘চাটগাঁইয়া’ ভাষায় কথা বলছিলেন তারা।
তাদের আলাপের ফাঁকে বাসের কয়েকজন যাত্রী অবাক দৃষ্টিতে তাকান, আবার কেউ কেউ হেসে ফেলেন। হাসতে হাসতে কী যেন বলে নিজেদের মধ্যে।
সেদিকে খুব একটা কান দেন না সাজিয়া, তবে বিষয়টি তার জন্য বিব্রতকর। আলাপ সংক্ষিপ্ত করে বসে পড়েন নিজের আসনে।
সাজিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমন ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটে। পরিবারের কারও ফোন এলে বন্ধুদের সামনে চাটগাঁইয়া ভাষায় কথা বলতে গেলেও কটাক্ষের শিকার হতে হয়। শুরুতে অনেক খারাপ লাগত। এখন গা সয়ে গেছে। আবার বন্ধুরাও বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করেছে।’
সাজিয়ার মতো এমন বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন অনেকেই। বিশেষ করে বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালী, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে কটাক্ষ, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের শিকার হতে হয়।
একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত পটুয়াখালীর ছেলে রাশেদ রহমান অমিত। সরাসরি সম্প্রচার বা প্রতিবেদন তৈরিতে কণ্ঠ রেকর্ডের সময় প্রমিত বাংলায় কথা বলেন, তবে এর বাইরে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য তার।
অমিত বলেন, ‘বন্ধুদের আড্ডায় ভাষার জন্য খোঁচা যে খাইনি, তা কিন্তু নয়, তবে এসব আমি থোড়াই কেয়ার করি। আমার কিছু যায় আসে না; বরং পটুয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতেই আমি ভালোবাসি। মনে শান্তি লাগে।’
চাটগাঁইয়া ভাষার মধ্যে মহাপ্রাণ ধ্বনি হারিয়ে যায়। এ ছাড়া ও-কারান্ত আর উ-কারান্ত বর্ণকে আলাদা করা মুশকিল হয়ে পড়ে। যেমন: ‘বোন’ শোনা যায় ‘বুন’-এর মতো।
নোয়াখালীর অঞ্চলের ভাষার মধ্যে ‘প’-এর উচ্চারণ ‘ফ’-এর মতো শোনায়। আবার ‘পানি’কে তারা বলেন ‘হানি’।
সিলেটি ভাষার দিকে তাকালেও উচ্চারণগত নানা তারতম্য দেখা দেয়। ‘সিলডি বাষা অইল অন্যান্য বাষার চেয়া ফুরাফুরি আলাদা’, যার অর্থ হলো: সিলেটের ভাষা হলো অন্যান্য ভাষার চেয়ে পুরোপুরি ভিন্ন।
আবার কন্যা শব্দটিকে চট্টগ্রামে বলা হয় ‘মাইয়েফোয়া’, সিলেটিরা বলে ‘ফুরি’, বরিশালে বলা হয় ‘ছেমরি’। আর এমন সব শব্দের ভিন্নতা নিয়ে ভাষাকে ব্যঙ্গ করতে প্রচলিত আছে নানা কৌতুক।
অনেকেই ঠাট্টাচ্ছলে বলেন, বাংলা ভাষা সিলেটে গিয়ে আহত হয়, আর নোয়াখালী পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রামে গিয়ে হয় নিহত।
এটি প্রচলিত কৌতুক হলেও এতে আপত্তি আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকউল্লাহ খানের। তার মতে, আঞ্চলিক ভাষার কারণে উল্টো সমৃদ্ধ হচ্ছে বাংলা।
রফিকউল্লাহ খান বলেন, ‘ভাষা একেকটি অঞ্চলের সংস্কৃতিকে লালন করে। তাদের ভূগোলকে লালন করে। তাদের উচ্চারণের যে সরলতম পদ্ধতি, সেই পদ্ধতিকে লালন করে। আমার মনে হয় কোনো একটি অঞ্চল, অন্য আরেকটি অঞ্চলের ভাষা নিয়ে কৌতুক করতেই পারে। সেটাকে কৌতুকের পর্যায়ে রাখাই ভালো, কিন্তু আমাদের বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি এবং এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভাষা কাঠামো এবং আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার আমার মনে হয় না যে কোনো নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে।’
মুখের বুলি যত বৈচিত্র্যময় হবে, বাংলা ভাষা তত সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করেন অধ্যাপক ড. রফিকউল্লাহ খান।
তিনি বলেন, ‘একটা ভাষার মধ্যে অনেকগুলো আঞ্চলিক রূপ সেই ভাষার ধ্বনিগত তাৎপর্যকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।’
তাই আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাসঙ্গিক মনে করেন না এই শিক্ষক।
তিনি বলেন, ‘যখন আমি গ্রামে যাই, তখন ঢাকা শহরের এবং বাংলাদেশের একটি বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকের ভাষায় কথা বলি না। আমি সেখানে আমার অঞ্চলের প্রিয় মানুষদের সঙ্গে আঞ্চলিক ভাষাতেই কথা বলি।’
আঞ্চলিক ভাষার মর্যাদা ও স্বীকৃতির পক্ষ নিয়েই কথা বলেছেন কথাসাহিত্যিক শাহনাজ মুন্নী।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আঞ্চলিক ভাষার মধ্যে যে মাধুর্য আছে, অবশ্যই আমি মনে করি তার স্বীকৃতি দেয়া উচিত। এটাতে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। কারণ সেটা যদি আমার অঞ্চলের ভাষা হয়, সেই ভাষায় যদি আমি কথা বলি, সেটা যদি আমার পরিমণ্ডলের হয়, সেটা নিয়ে লজ্জা পাওয়ারও কিছু নেই, হীনমন্যতায় ভোগারও কিছু নেই।’
আনুষ্ঠানিক কথা বলায় প্রমিত বাংলাকে উৎসাহ দেয়ার পক্ষে এ কথাসাহিত্যিক।
তিনি বলেন, ‘আঞ্চলিক ভাষাকে হেয় করার বা দেখার যে প্রবণতা, এই মানসিকতা আমাদের দূর করতে হবে। কারণ প্রতিটা অঞ্চলের নিজস্ব ভাষা বৈশিষ্ট্য আছে। সেটা থাকবেই। এটা খুব স্বাভাবিক। পৃথিবীর সব দেশের, সব অঞ্চলের ভাষাতেই আঞ্চলিক টান থাকে। এটা মানুষের সহজাত ব্যাপার।’
আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার কারণে কটাক্ষ করা নিয়ে ঘোর আপত্তি আছে তার। ‘কটাক্ষ করা, ব্যঙ্গ করা, খোঁচা দেয়া, লজ্জা দেয়া, কেউ আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা মানে তিনি অশিক্ষিত, মূর্খ, অভদ্র এসব ভাবার সুযোগ নেই; বরং এমন মানসিকতা পরিহার করা উচিত এবং প্রতিটি আঞ্চলিক ভাষার গুরুত্ব থাকা উচিত, সমান মর্যাদা থাকা উচিত।’
সাহিত্যে আঞ্চলিকতা ও কথ্যরূপ
আঞ্চলিকতা শুধু মুখের ভাষাতে আটকে নেই। আঞ্চলিক ভাষায় তৈরি হয়েছে শক্তিশালী সাহিত্যও।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান উদাহরণ হিসেবে সামনে আনেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের কাব্যনাট্য ‘নুরলদীনের সারাজীবন’-এর কথা। এই কাব্যনাট্যের জনপ্রিয় সংলাপ ছিল ‘জাগো বাহে কোনঠে সবায়’।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তার অর্থ, ওই অঞ্চলের অস্তিত্বকে, আত্মপ্রকাশের কাঠামোকে সেখানে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ফলে কোনোভাবে প্রমাণ হয় না আঞ্চলিক ভাষা বাংলা ভাষার জন্য ক্ষতিকর। সেটা বাংলা ভাষাকে আরও সমৃদ্ধ করছে; বৈচিত্র্যময় করেছে।’
ভাষা ও সাহিত্যের জন্য লোকজীবন, লোকসংস্কৃতি, লোকসংগীতের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের যে লোকসংগীত, সেই লোকসংগীতে কি প্রমিত বাংলা ব্যবহৃত হয়? না তো। কিন্তু আমরা তো সেটা ত্যাগ করিনি। সেটা আমাদের ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে।’
সাহিত্যে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার নিয়ে শাহনাজ মুন্নী বলেন, ‘কুষ্টিয়া অঞ্চলের গল্প যদি বলি, তাহলে যদি ওই ভাষায় আমি লিখি, শুধু সংলাপ না, পুরো উপন্যাসও ওই ভাষায় লেখা যায়, লেখা সম্ভব।’
উদাহরণ হিসেবে তিনি সামনে আনেন বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান লেখক হাসান আজিজুল হকের ‘আগুন পাখি’ উপন্যাসকে। তিনি বলেন, ‘সেটা তো পুরো আঞ্চলিক ভাষায় লেখা। একজন নারীর কথ্য ভাষায় লেখা।’
মাহবুব লীলেন পুরো মহাভারতটাই লিখেছেন কথ্যভাষায়। তার বই অভাজনের মহাভারত কথ্যরূপের একটি স্বার্থক উদাহরণ। লেখক বলতে চান, এটি কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভাষা না, এটা আগামীর ভাষা। সেই ভাষাটিকে তিনি এগিয়ে নিতে চান তার লেখনীতে।
তিনি বলেন, ‘আমার কথা হইল, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তরুণগো মিলিত চেষ্টায় বর্তমানে আগামীর বাংলা ভাষাটা তৈরি হইতেছে। সেইটা ধরার চেষ্টা করছি আমি।’
এখন পর্যন্ত মাহবুব লীলেনের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১২, যার মধ্যে ১১টি বই লেখা হয়েছে প্রচলিত বাংলায়। লীলেন বলেন, ‘২০১৫ সালে পয়লা আমি ভাষা বদলাই অভাজনের মহাভারত দিয়া।’
এর পেছনে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষার মূল চরিত্রটা হইল, কথা কইতে গিয়া যদি কোনো শব্দ মুখে আটকাইয়া যায় কিংবা চেহারা ভচকাইয়া তার উচ্চারণ করা লাগে, তবে বাঙালি সেই শব্দটা বদলাইয়া ফালায়। দরকার পড়লে নতুন শব্দ বানায়; সুযোগ থাকলে বাইর থাইকা আইনা বাংলার লগে ফিট কইরা দেয়।
‘এই পুস্তকে (অভাজনের মহাভারত) আমি সমস্ত বাঙালি জাতির ভাষা থাইকা যখন যে শব্দ পছন্দ হইছে, সেইটাই নিছি। খালি খেয়াল রাখছি কোথাও আটকায় কি না। চেষ্টা করছি সহজিয়া বাংলায় গল্পগুলান কইতে, যেমনে মহাভারতের গল্পখান কইতে দিলে কইত বাংলার পালাকার কিচ্ছাকার বয়াতি বাউলেরা।’
আঞ্চলিক ভাষা সংরক্ষণে নেই উদ্যোগ
আঞ্চলিক ভাষা সংরক্ষণে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই বাংলা একাডেমির, তবে আঞ্চলিক ভাষার অভিধানের কলেবর বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে প্রতিষ্ঠানটির।
বাংলা একাডেমির পরিচালক (গবেষণা, সংকলন এবং অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগ) মোবারক হোসেন বলেন, ‘আমার জানা মতে, বাংলা একাডেমির এই ধরনের কোনো উদ্যোগ নেই। মূলত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হওয়ার পরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা, আঞ্চলিক ভাষা এগুলো নিয়ে কিছু কাজ বোধ হয় তারা করছে।’
অবশ্য বাংলা একাডেমি এ বিষয়ে একেবারে নীরব আছে, এমন মনে করতে নারাজ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মোবারক হোসেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমির কাজ নেই, এমনটা নয়। দেশের প্রথম আঞ্চলিক ভাষার অভিধান বাংলা একাডেমি করেছে একবার। আমাদের নতুন একটা উপবিভাগ করা হয়েছে অভিধান ও বিশ্বকোষ। আমরা অবশ্যই ওই কাজের দিকে হাত দেব।’
আঞ্চলিক ভাষা বিপণ্ন হচ্ছে এমনটা মনে করেন না আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (ভাষা, গবেষণা ও পরিকল্পনা) মো. শাফীউল মুজ নবীন।
যদিও অভিবাসন প্রক্রিয়া আর অনুপ্রবেশের কারণে পুরান ঢাকার আদি কুট্টি ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি।
শাফীউল মুজ নবীন বলেন, ‘ভাষা নিয়ত পরিবর্তনশীল। এটি গ্রহণ-বর্জনের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যায়।’
আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে কেউ গবেষণা করতে চাইলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের দুয়ার খোলা বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক।
তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি তহবিল অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। কোনো গবেষক আগ্রহী হলে আমরা তাদের বৃত্তি দেব। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আগ্রহী গবেষকরা আবেদন করতে পারবেন।’
আগামী অর্থবছর থেকে গবেষণা খাতে বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছেন শাফীউল মুজ নবীন, তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে সেটা আরও আগেও হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গবেষকদের জন্য বঙ্গবন্ধু গবেষণা ট্রাস্ট ঘোষণা করেছেন। সেই ফান্ড থেকেও গবেষণা খাতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট অর্থ পাবে বলে আশা তার।
আরও পড়ুন:মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২৫ সালের মানবপাচার (টিআইপি) বিষয়ক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় স্তরে স্থান দেওয়া হয়েছে। দেশের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন এবং বিশ্বব্যাপী অভিবাসনের চাপ সংশ্লিষ্ট চলমান চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও মানবপাচার মোকাবিলায় বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য এবং টেকসই অগ্রগতির স্বীকৃতি এটি।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার মানবপাচার নির্মূলের সর্বনিম্ন মান সম্পূর্ণরূপে পূরণ না করলেও আগের তুলনায় এখন উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চলছে। বর্তমান সরকার পূর্ববর্তী প্রতিবেদনের সময়ের তুলনায় সামগ্রিকভাবে ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা প্রদর্শন করেছে। সে কারণে বাংলাদেশের অবস্থান এই তালিকায় দ্বিতীয় স্তরে।
প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশ মানবপাচার রোধে ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আন্তঃসংস্থা সমন্বয়ের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে।
ভুক্তভোগী শনাক্তকরণ এবং সুরক্ষা পরিষেবা বৃদ্ধি, সম্মুখ সারির কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ এবং আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ‘ন্যাশনাল রেফারেল মেকানিজম’ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রশংসা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
সরকার ১ হাজার ৪৬২ জন পাচারের শিকারকে শনাক্ত করেছে। শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে ১৪৪ জন যৌনকর্মী হিসেবে পাচারের শিকার হয়েছে এবং ২৮৫ জনকে জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করা হয়েছে। এছাড়া ১ হাজার ৩৩ জন অন্যান্য ধরনের পাচারের শিকার হয়েছে। পূর্ববর্তী প্রতিবেদনে একই সময়ে ১ হাজার ২১০ জন ভুক্তভোগীকে শনাক্ত করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের শনাক্ত করার পর সরকার তাদের সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক, সমাজকল্যাণ, প্রবাসী কল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় পরিচালিত কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে এসব ভুক্তভোগীদের স্বাস্থ্যসেবা, আইনি সহায়তা ও আশ্রয়ের সুযোগও প্রদান করা হচ্ছে।
সরকার সুশীল সমাজের সঙ্গে সমন্বয় করে ভুক্তভোগীদের সেবার ব্যাপারে পুলিশ, অভিবাসন কর্মকর্তা ও শ্রম পরিদর্শকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো আন্তর্জাতিক মানবপাচার-বিরোধী মানদণ্ডের সঙ্গে জাতীয় চর্চাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার মূল পদক্ষেপ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবপাচার নেটওয়ার্ক তদন্তে ইন্টারপোল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বৈশ্বিক অংশীজনদের সঙ্গে বাংলাদেশের চলমান সহযোগিতার কথাও স্বীকার করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
পাচারবিরোধী পক্ষগুলোকে শক্তিশালী করার এবং অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এবং কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)-এর মধ্যে সমন্বয় সুদৃঢ় করার জন্য সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টার কথাও তুলে ধরা হয়েছে এতে।
সরকার জাতীয় মানবপাচার বিরোধী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শক্তভাবে পাচার প্রতিরোধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাচার প্রতিরোধ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের জন্য এ বছর ৬২১ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন টাকা বরাদ্দ করে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০২৫ বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখেছে। আগের বছরের তুলনায় এবার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের পাচার-বিরোধী কমিটি বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় মুদ্রিত পত্রিকা, রেডিও এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে।
এভাবে প্রচারের মাধ্যমে নিরাপদ অভিবাসন, শ্রম অধিকার এবং প্রতারণামূলক নিয়োগের ঝুঁকি সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো ১০৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে এবং বিদেশগামী কর্মীদের জন্য প্রস্থান-পূর্ব প্রশিক্ষণ সেশন চালু করেছে। এর মধ্যে নারী গৃহকর্মীদের জন্য ৩০ দিনের একটি বিশেষায়িত কোর্সও রয়েছে।
বিদেশে আমাদের দেশ থেকে যাওয়া শ্রমিকদের শোষণের ঝুঁকি কমানোই এসব পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য।
সরকার মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো প্রধান গন্তব্যস্থলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক শ্রম চুক্তি জোরদার করেছে। এছাড়া, অভিবাসী শ্রমিকদের অতিরিক্ত ফি থেকে বাঁচানোর জন্য নিয়োগকর্তা প্রদত্ত নিয়োগ মডেল প্রতিষ্ঠা করেছে।
অভিবাসীদের ভবিষ্যত বিবেচনায় জাতীয় একটি নীতিও চালু করা হয়েছে। প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য গৃহীত একটি সমন্বিত পরিকল্পনা এটি। পাচার থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরাও এর অন্তর্ভুক্ত, যেন প্রত্যাবর্তনের পর তারা জীবিকার সুযোগ পায়।
ক্ষতিগ্রস্তদের প্রত্যাবাসন এবং আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা সহজ করার জন্য ২০১৫ সালে ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কাজ অব্যাহত রেখেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে পাচারবিরোধী সমন্বয় জোরদার করার জন্য ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে কাজ করছে।
প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, দেশের চলমান সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা সব ধরনের মানবপাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার দৃঢ় রাজনৈতিক ইচ্ছার প্রতিফলন।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্তরে স্থান পাওয়ার বিষয়টি আইনের শাসন জোরদার, অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষা এবং পাচারের শিকারদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রতি দেশটির ক্রমবর্ধমান প্রতিশ্রুতিকে নির্দেশ করে। সরকার মানবপাচার রোধে কাঠামোগত উন্নয়নে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। সূত্র : বাসস
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিশ্বে বিরাজমান অস্থিতিশীল অবস্থা দূরীকরণ ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বুদ্ধের শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
আগামীকাল ৫ অক্টোবর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবর দান’ উপলক্ষ্যে আজ দেয়া এক বাণীতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীকে তিনি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মহামতি গৌতম বুদ্ধ আজীবন মানুষের কল্যাণে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় অহিংসা, সাম্য ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করেছেন। শান্তি ও সম্প্রীতির মাধ্যমে আদর্শ সমাজ গঠনই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য। তাঁর আদর্শ মানবিকতা ও ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল। তাঁর অহিংস বাণী ও জীবপ্রেম আজও বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সাথে হাজার বছরের বৌদ্ধ ঐতিহ্য মিশে আছে। প্রাচীনকালে বর্তমান বাংলাদেশের অঞ্চলটি এশিয়ার বৌদ্ধধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল, যার প্রমাণ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার দেখা যায়।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমানকাল ধরে এদেশে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষ সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করে। জাতি হিসেবে আমাদের সকল অর্জন ও প্রাপ্তিতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অবদান রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের মানুষের মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতা আরো দৃঢ় ও অটুট হবে এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ানুগ ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন রাষ্ট্র গঠনের অভিযাত্রা মসৃণ ও সাফল্যমন্ডিত হবে-এটাই আমার প্রত্যাশা।’
প্রধান উপদেষ্টা ‘শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবর দান’ উৎসবের সার্বিক সফলতা কামনা করেন। সূত্র : বাসস
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হবে। সবাই ভোট দিতে পারবেন। ভোট হবে দিনের বেলা, রাতের বেলা নয়। নতুন নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পুরোনো ঠিকানায় চলে যাব। আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। সুযোগ সব সময় আসে না। একবার সুযোগ আসতে ৫৪ বছর লেগে যায়। আবার কবে সুযোগ আসবে জানি না। তাই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যই শক্তি, শক্তিই শান্তি।’
রাজধানীর বকশিবাজারে গতকাল বুধবার সকালে সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার ২৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে ৫৪ বছর পর সুযোগ এসেছে। এ সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করা যাবে না।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘অতি আধুনিক শিক্ষার নামে মাদ্রাসা শিক্ষায় কোরান-হাদিস থেকে সরে গিয়ে কোণঠাসা হয়ে গেছে। মনে রাখতে হবে মাদ্রাসা শিক্ষা বিশেষায়িত শিক্ষা। আধুনিকতার পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষার মূল ভিত্তি থাকতে হবে কোরান এবং হাদিস, ফেকাহ।’
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশে আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি মাদ্রাসার ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। আলিয়া পদ্ধতির মাদ্রাসার অবদান স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মতো। অনেক যোগ্য ব্যক্তি এখানে তৈরি হয়েছেন। আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি মাদ্রাসার ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। আরবি, ইংরেজি জানলে বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও বৃত্তি পাবেন।’
রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনে যুগ যুগ ধরে আলিয়া মাদ্রাসা ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করি। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির নামে দুর্বৃত্তপনা বন্ধ করতে হবে। এ সময় ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমদের আল্লাহ এক, কোরান এক, কেবলা এক। এই মিল আমাদের এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসবে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বাহিরের ইন্ধনে দুষ্কৃতকারীরা পূজাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছিল। তারা সফল হতে পারেনি।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের ইছাপুরায় শ্রী শ্রী সার্বজনীন দুর্গাপূজা মণ্ডপ পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, পূজার শুরুতে ধর্ষণের ঘটনা প্রচার করে পূজাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ কাজে বাহিরের ইন্ধন ছিল কিন্তু দুষ্কৃতকারীরা সফল হতে পারেনি।
এবার বাংলাদেশের সব জায়গায় ভালোভাবে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পূজা সম্পন্ন হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, দুর্গাপূজা ও বৌদ্ধদের বিজু উৎসব যাতে ভালোভাবে হতে না পারে তার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশের সহযোগিতায় কিছু সন্ত্রাসী এ ধরনের কাজ করেছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসন এবং বিশেষ করে পূজা কমিটির সহযোগিতায় এ বছর শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন হয়েছে। এ জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা আক্তার, সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল ) মো. ইব্রাহিম, পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাদর পাল। সূত্র : বাসস
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দ্রুত প্রত্যাহার হবে এমন কোন সম্ভাবনা নেই।
বরিশাল নগরীর শংকর মঠ পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আজ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যখন একটা দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়, স্থায়ী কি অস্থায়ী এ ধরনের প্রশ্ন থাকে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের উপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া হবে এরকম কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না।
বিদেশি গণমাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অশান্ত পাহাড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাহাড়কে যারা অশান্ত করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার।
তিনি আজ দুপুরে বরিশাল সার্কিট হাউজে পৌঁছে নগরীর নতুন বাজার সংলগ্ন শংকর মঠ পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সাঙ্গে সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময় করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, পুলিশ সুপার মো. শরীফ উদ্দীন, শংকর মঠ পূজা মণ্ডপ কমিটির সভাপতি কানু লাল সাহা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক তম্ময় তপু প্রমুখ।
বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থের একটি অংশ আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আশাবাদী অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি মঙ্গলবার এ কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া ক্রমান্বয়ে এগোচ্ছে। এটি সময়সাপেক্ষ বিষয়, একদিনে সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, যারা বিদেশে টাকা পাচার করে তারা সাধারণত খুব কৌশলী ও প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ হয়। ফলে ফেরত আনার কাজ দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল হয়ে পড়ে।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘অর্থ ফেরত আনা মানে সুইস ব্যাংকে ফোন দিয়ে টাকা নিয়ে আসা নয়। আন্তর্জাতিক আইনি ও আর্থিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই এটি করতে হয়। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কিছু অগ্রগতি হয়েছে এবং বেশ কিছু বিখ্যাত আইনি সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে। কিছু নির্দিষ্ট বিচার ব্যবস্থার সঙ্গেও আলোচনা এগোচ্ছে। আমরা আশা করি ফেব্রুয়ারির মধ্যে কিছু ফল পাওয়া যাবে।’
অর্থ উপদেষ্টা জানান, সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ইতোমধ্যে ১১-১২ টি মানিলন্ডারিং মামলা চিহ্নিত করেছে এবং সংশ্লিষ্ট সম্পদের তদন্ত অব্যাহত আছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পদ জব্দ করেছে, বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করেছে এবং সংশ্লিষ্টদের পাসপোর্ট ও বসবাসের তথ্য সংগ্রহ করেছে। এসব মামলা আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এগোচ্ছে।’
আগামী নির্বাচনের পর নতুন সরকার আপনাদের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে কি না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘বাধ্য হয়ে তাদের চালিয়ে যেতে হবে। কারণ আমরা প্রক্রিয়াগুলো চালু করে গেলাম, সেটা অব্যাহত না থাকলে তো টাকা ফেরত আনতে পারবে না। তারা বসে থাকলে টাকা ফেরত আসবে না। আর যদি আনতে হয় এই প্রক্রিয়াগুলো মানতে হবে। এটা তো ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস। আমরা যে প্রক্রিয়া শুরু করেছি তা বজায় রাখতে হবে।’
খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও সরকার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আতপ চালের একটি বাফার মজুত রাখি। অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলে যাতে সংকট না হয় সে জন্য নীতিগতভাবে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, সার বিশেষ করে-ডিএপি ও ইউরিয়া আমদানিতে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সুখবর হচ্ছে-আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম কিছুটা কমেছে। আমরা বাজার স্থিতিশীল রাখতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করছি, পাশাপাশি যথেষ্ট চাল ও সারের মজুদও রাখছি।
সাম্প্রতিক বিবিএস প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সরকার শিশু ও মাতৃকল্যাণ বিষয়ে সতর্ক। তাই ভিজিএফ কর্মসূচি এবং উপকূলীয় ও হাওর অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, আসন্ন মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞাকালে জেলেদের প্রতিটি পরিবারকে ২০ কেজি চাল দেওয়া হবে।’
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মজুত ভালো থাকায় চালের দাম সম্প্রতি কমেছে। তবে শাকসবজি ও অন্যান্য দ্রুত নষ্ট হওয়া পণ্যের দাম মৌসুমি কারণে ওঠানামা করে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর কারসাজি এখনো অব্যাহত রয়েছে। ‘ এ কারণেই আমরা এখনো পূর্ণ সাফল্য দাবি করতে পারছিনা,’ স্বীকার করেন তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটি (সিএলসিসি) এর প্রথম সভা আজ নগর ভবন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডিএসসিসি প্রশাসক জনাব মোঃ শাহজাহান মিয়া এঁর সভাপতিত্বে স্থানীয় সরকার বিভাগের "সিটি কর্পোরেশন নাগরিক সম্পৃক্ততকরণ নির্দেশিকা" এর আলোকে গঠিত সিএলসিসির ৭১ জন সদস্য উপর্যুক্ত সভায় অংশগ্রহণ করেন।
সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটি (সিএলসিসি) সভায় আলোচনাপূর্বক উন্নয়ন ও সেবামূলক কর্মপরিকল্পনা সুপারিশ করতে পারে। এ সভায় সিটি কর্পোরেশনের বার্ষিক বাজেট ও উন্নয়ন পরিকল্পনা, আর্থিক বিবরণীসহ বার্ষিক অর্জন সম্পর্কিত প্রতিবেদন, নাগরিক জরিপ, সামাজিক সমস্যাবলি সমাধানের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ, সিটি কর্পোরেশনের সেবাসমূহের মান উন্নয়ন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও নাগরিকদের যথাযথভাবে সেবা প্রদানে চ্যালেঞ্জসমূহ আলোচিত হতে পারে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে ডিএসসিসি প্রশাসক বলেন, "জুলাই পরবর্তী নাগরিক প্রত্যাশা পূরণে সিএলসিসি কমিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা তাদের মাধ্যমে সরাসরি নাগরিকদের মতামতের প্রতিফলন হয়।" এ সময় প্রশাসক ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএসসিসির গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে জনগণকে এ বিষয়ে আরও সচেতন ও সম্পৃক্ত করতে সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্যদের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় সদস্যবৃন্দ ডিএসসিসির সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা ও সুপারিশ প্রদান করেন এবং সিটি কর্পোরেশন নাগরিক জরিপে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ জহিরুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, সকল বিভাগীয় প্রধান এবং মিস নাউকু আনজাই, টিম লিডার, সিফরসি২ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য