ঘড়িতে রাত ১০টা বেজে ১৫ মিনিট। ঢাকার পান্থপথ কাউন্টারের সামনে এসে দাঁড়ায় শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস। রাঙ্গামাটিগামী বাসটি ছাড়তে তখনও মিনিট পনেরো বাকি। যাত্রীরা বাসে উঠে যে যার আসনে বসছেন। বাড়ি ফেরার আনন্দ নিয়ে বাসে উঠলেন রাঙ্গামাটির মেয়ে সাজিয়া জাহান।
উচ্চশিক্ষার জন্যই ঢাকায় এসেছেন সাজিয়া। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন; থাকেন ইস্কাটনে। গাড়িতে উঠতেই পরিচিত আরেক তরুণী বলে উঠলেন, ‘তুই হন্ডে যদ্দে? বালা আছছ না তুই (তুই কই যাচ্ছিস? ভালো আছিস তুই)?’
উত্তরে সাজিয়া বললেন, ‘আফু, আঁই তো বালা আছি। বউত দিন ফর তুঁয়াল্লই দেহা অইলো দে এনা। তুঁই ক্যান আছ (আপু, আমি ভালো আছি। অনেক দিন পর তোমার সঙ্গে দেখা হলো। তুমি ভালো তো)?’
আরও কয়েক লাইন এগোয় দুজনের আলাপচারিতা। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ‘চাটগাঁইয়া’ ভাষায় কথা বলছিলেন তারা।
তাদের আলাপের ফাঁকে বাসের কয়েকজন যাত্রী অবাক দৃষ্টিতে তাকান, আবার কেউ কেউ হেসে ফেলেন। হাসতে হাসতে কী যেন বলে নিজেদের মধ্যে।
সেদিকে খুব একটা কান দেন না সাজিয়া, তবে বিষয়টি তার জন্য বিব্রতকর। আলাপ সংক্ষিপ্ত করে বসে পড়েন নিজের আসনে।
সাজিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমন ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটে। পরিবারের কারও ফোন এলে বন্ধুদের সামনে চাটগাঁইয়া ভাষায় কথা বলতে গেলেও কটাক্ষের শিকার হতে হয়। শুরুতে অনেক খারাপ লাগত। এখন গা সয়ে গেছে। আবার বন্ধুরাও বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করেছে।’
সাজিয়ার মতো এমন বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন অনেকেই। বিশেষ করে বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালী, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে কটাক্ষ, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের শিকার হতে হয়।
একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত পটুয়াখালীর ছেলে রাশেদ রহমান অমিত। সরাসরি সম্প্রচার বা প্রতিবেদন তৈরিতে কণ্ঠ রেকর্ডের সময় প্রমিত বাংলায় কথা বলেন, তবে এর বাইরে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য তার।
অমিত বলেন, ‘বন্ধুদের আড্ডায় ভাষার জন্য খোঁচা যে খাইনি, তা কিন্তু নয়, তবে এসব আমি থোড়াই কেয়ার করি। আমার কিছু যায় আসে না; বরং পটুয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতেই আমি ভালোবাসি। মনে শান্তি লাগে।’
চাটগাঁইয়া ভাষার মধ্যে মহাপ্রাণ ধ্বনি হারিয়ে যায়। এ ছাড়া ও-কারান্ত আর উ-কারান্ত বর্ণকে আলাদা করা মুশকিল হয়ে পড়ে। যেমন: ‘বোন’ শোনা যায় ‘বুন’-এর মতো।
নোয়াখালীর অঞ্চলের ভাষার মধ্যে ‘প’-এর উচ্চারণ ‘ফ’-এর মতো শোনায়। আবার ‘পানি’কে তারা বলেন ‘হানি’।
সিলেটি ভাষার দিকে তাকালেও উচ্চারণগত নানা তারতম্য দেখা দেয়। ‘সিলডি বাষা অইল অন্যান্য বাষার চেয়া ফুরাফুরি আলাদা’, যার অর্থ হলো: সিলেটের ভাষা হলো অন্যান্য ভাষার চেয়ে পুরোপুরি ভিন্ন।
আবার কন্যা শব্দটিকে চট্টগ্রামে বলা হয় ‘মাইয়েফোয়া’, সিলেটিরা বলে ‘ফুরি’, বরিশালে বলা হয় ‘ছেমরি’। আর এমন সব শব্দের ভিন্নতা নিয়ে ভাষাকে ব্যঙ্গ করতে প্রচলিত আছে নানা কৌতুক।
অনেকেই ঠাট্টাচ্ছলে বলেন, বাংলা ভাষা সিলেটে গিয়ে আহত হয়, আর নোয়াখালী পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রামে গিয়ে হয় নিহত।
এটি প্রচলিত কৌতুক হলেও এতে আপত্তি আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকউল্লাহ খানের। তার মতে, আঞ্চলিক ভাষার কারণে উল্টো সমৃদ্ধ হচ্ছে বাংলা।
রফিকউল্লাহ খান বলেন, ‘ভাষা একেকটি অঞ্চলের সংস্কৃতিকে লালন করে। তাদের ভূগোলকে লালন করে। তাদের উচ্চারণের যে সরলতম পদ্ধতি, সেই পদ্ধতিকে লালন করে। আমার মনে হয় কোনো একটি অঞ্চল, অন্য আরেকটি অঞ্চলের ভাষা নিয়ে কৌতুক করতেই পারে। সেটাকে কৌতুকের পর্যায়ে রাখাই ভালো, কিন্তু আমাদের বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি এবং এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভাষা কাঠামো এবং আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার আমার মনে হয় না যে কোনো নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে।’
মুখের বুলি যত বৈচিত্র্যময় হবে, বাংলা ভাষা তত সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করেন অধ্যাপক ড. রফিকউল্লাহ খান।
তিনি বলেন, ‘একটা ভাষার মধ্যে অনেকগুলো আঞ্চলিক রূপ সেই ভাষার ধ্বনিগত তাৎপর্যকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।’
তাই আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাসঙ্গিক মনে করেন না এই শিক্ষক।
তিনি বলেন, ‘যখন আমি গ্রামে যাই, তখন ঢাকা শহরের এবং বাংলাদেশের একটি বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকের ভাষায় কথা বলি না। আমি সেখানে আমার অঞ্চলের প্রিয় মানুষদের সঙ্গে আঞ্চলিক ভাষাতেই কথা বলি।’
আঞ্চলিক ভাষার মর্যাদা ও স্বীকৃতির পক্ষ নিয়েই কথা বলেছেন কথাসাহিত্যিক শাহনাজ মুন্নী।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আঞ্চলিক ভাষার মধ্যে যে মাধুর্য আছে, অবশ্যই আমি মনে করি তার স্বীকৃতি দেয়া উচিত। এটাতে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। কারণ সেটা যদি আমার অঞ্চলের ভাষা হয়, সেই ভাষায় যদি আমি কথা বলি, সেটা যদি আমার পরিমণ্ডলের হয়, সেটা নিয়ে লজ্জা পাওয়ারও কিছু নেই, হীনমন্যতায় ভোগারও কিছু নেই।’
আনুষ্ঠানিক কথা বলায় প্রমিত বাংলাকে উৎসাহ দেয়ার পক্ষে এ কথাসাহিত্যিক।
তিনি বলেন, ‘আঞ্চলিক ভাষাকে হেয় করার বা দেখার যে প্রবণতা, এই মানসিকতা আমাদের দূর করতে হবে। কারণ প্রতিটা অঞ্চলের নিজস্ব ভাষা বৈশিষ্ট্য আছে। সেটা থাকবেই। এটা খুব স্বাভাবিক। পৃথিবীর সব দেশের, সব অঞ্চলের ভাষাতেই আঞ্চলিক টান থাকে। এটা মানুষের সহজাত ব্যাপার।’
আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার কারণে কটাক্ষ করা নিয়ে ঘোর আপত্তি আছে তার। ‘কটাক্ষ করা, ব্যঙ্গ করা, খোঁচা দেয়া, লজ্জা দেয়া, কেউ আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা মানে তিনি অশিক্ষিত, মূর্খ, অভদ্র এসব ভাবার সুযোগ নেই; বরং এমন মানসিকতা পরিহার করা উচিত এবং প্রতিটি আঞ্চলিক ভাষার গুরুত্ব থাকা উচিত, সমান মর্যাদা থাকা উচিত।’
সাহিত্যে আঞ্চলিকতা ও কথ্যরূপ
আঞ্চলিকতা শুধু মুখের ভাষাতে আটকে নেই। আঞ্চলিক ভাষায় তৈরি হয়েছে শক্তিশালী সাহিত্যও।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান উদাহরণ হিসেবে সামনে আনেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের কাব্যনাট্য ‘নুরলদীনের সারাজীবন’-এর কথা। এই কাব্যনাট্যের জনপ্রিয় সংলাপ ছিল ‘জাগো বাহে কোনঠে সবায়’।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তার অর্থ, ওই অঞ্চলের অস্তিত্বকে, আত্মপ্রকাশের কাঠামোকে সেখানে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ফলে কোনোভাবে প্রমাণ হয় না আঞ্চলিক ভাষা বাংলা ভাষার জন্য ক্ষতিকর। সেটা বাংলা ভাষাকে আরও সমৃদ্ধ করছে; বৈচিত্র্যময় করেছে।’
ভাষা ও সাহিত্যের জন্য লোকজীবন, লোকসংস্কৃতি, লোকসংগীতের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের যে লোকসংগীত, সেই লোকসংগীতে কি প্রমিত বাংলা ব্যবহৃত হয়? না তো। কিন্তু আমরা তো সেটা ত্যাগ করিনি। সেটা আমাদের ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে।’
সাহিত্যে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার নিয়ে শাহনাজ মুন্নী বলেন, ‘কুষ্টিয়া অঞ্চলের গল্প যদি বলি, তাহলে যদি ওই ভাষায় আমি লিখি, শুধু সংলাপ না, পুরো উপন্যাসও ওই ভাষায় লেখা যায়, লেখা সম্ভব।’
উদাহরণ হিসেবে তিনি সামনে আনেন বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান লেখক হাসান আজিজুল হকের ‘আগুন পাখি’ উপন্যাসকে। তিনি বলেন, ‘সেটা তো পুরো আঞ্চলিক ভাষায় লেখা। একজন নারীর কথ্য ভাষায় লেখা।’
মাহবুব লীলেন পুরো মহাভারতটাই লিখেছেন কথ্যভাষায়। তার বই অভাজনের মহাভারত কথ্যরূপের একটি স্বার্থক উদাহরণ। লেখক বলতে চান, এটি কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভাষা না, এটা আগামীর ভাষা। সেই ভাষাটিকে তিনি এগিয়ে নিতে চান তার লেখনীতে।
তিনি বলেন, ‘আমার কথা হইল, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তরুণগো মিলিত চেষ্টায় বর্তমানে আগামীর বাংলা ভাষাটা তৈরি হইতেছে। সেইটা ধরার চেষ্টা করছি আমি।’
এখন পর্যন্ত মাহবুব লীলেনের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১২, যার মধ্যে ১১টি বই লেখা হয়েছে প্রচলিত বাংলায়। লীলেন বলেন, ‘২০১৫ সালে পয়লা আমি ভাষা বদলাই অভাজনের মহাভারত দিয়া।’
এর পেছনে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষার মূল চরিত্রটা হইল, কথা কইতে গিয়া যদি কোনো শব্দ মুখে আটকাইয়া যায় কিংবা চেহারা ভচকাইয়া তার উচ্চারণ করা লাগে, তবে বাঙালি সেই শব্দটা বদলাইয়া ফালায়। দরকার পড়লে নতুন শব্দ বানায়; সুযোগ থাকলে বাইর থাইকা আইনা বাংলার লগে ফিট কইরা দেয়।
‘এই পুস্তকে (অভাজনের মহাভারত) আমি সমস্ত বাঙালি জাতির ভাষা থাইকা যখন যে শব্দ পছন্দ হইছে, সেইটাই নিছি। খালি খেয়াল রাখছি কোথাও আটকায় কি না। চেষ্টা করছি সহজিয়া বাংলায় গল্পগুলান কইতে, যেমনে মহাভারতের গল্পখান কইতে দিলে কইত বাংলার পালাকার কিচ্ছাকার বয়াতি বাউলেরা।’
আঞ্চলিক ভাষা সংরক্ষণে নেই উদ্যোগ
আঞ্চলিক ভাষা সংরক্ষণে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই বাংলা একাডেমির, তবে আঞ্চলিক ভাষার অভিধানের কলেবর বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে প্রতিষ্ঠানটির।
বাংলা একাডেমির পরিচালক (গবেষণা, সংকলন এবং অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগ) মোবারক হোসেন বলেন, ‘আমার জানা মতে, বাংলা একাডেমির এই ধরনের কোনো উদ্যোগ নেই। মূলত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হওয়ার পরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা, আঞ্চলিক ভাষা এগুলো নিয়ে কিছু কাজ বোধ হয় তারা করছে।’
অবশ্য বাংলা একাডেমি এ বিষয়ে একেবারে নীরব আছে, এমন মনে করতে নারাজ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মোবারক হোসেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমির কাজ নেই, এমনটা নয়। দেশের প্রথম আঞ্চলিক ভাষার অভিধান বাংলা একাডেমি করেছে একবার। আমাদের নতুন একটা উপবিভাগ করা হয়েছে অভিধান ও বিশ্বকোষ। আমরা অবশ্যই ওই কাজের দিকে হাত দেব।’
আঞ্চলিক ভাষা বিপণ্ন হচ্ছে এমনটা মনে করেন না আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (ভাষা, গবেষণা ও পরিকল্পনা) মো. শাফীউল মুজ নবীন।
যদিও অভিবাসন প্রক্রিয়া আর অনুপ্রবেশের কারণে পুরান ঢাকার আদি কুট্টি ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি।
শাফীউল মুজ নবীন বলেন, ‘ভাষা নিয়ত পরিবর্তনশীল। এটি গ্রহণ-বর্জনের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যায়।’
আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে কেউ গবেষণা করতে চাইলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের দুয়ার খোলা বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক।
তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি তহবিল অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। কোনো গবেষক আগ্রহী হলে আমরা তাদের বৃত্তি দেব। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আগ্রহী গবেষকরা আবেদন করতে পারবেন।’
আগামী অর্থবছর থেকে গবেষণা খাতে বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছেন শাফীউল মুজ নবীন, তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে সেটা আরও আগেও হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গবেষকদের জন্য বঙ্গবন্ধু গবেষণা ট্রাস্ট ঘোষণা করেছেন। সেই ফান্ড থেকেও গবেষণা খাতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট অর্থ পাবে বলে আশা তার।
আরও পড়ুন:২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল আগামী রোববার শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজ জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য আপিলটি ছিলো। কিন্তু এই মামলায় হাইকোর্টের অথর জাজ বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান আজ আপিল বিভাগের বেঞ্চে ছিলেন।
নিয়ম অনুযায়ী হাইকোর্টে রায় দানকারী বিচারপতি একই মামলা আপিল বেঞ্চে শুনানি গ্রহণ করতে পারেন না।
এজন্য আগামী রোববার পুনর্গঠিত বেঞ্চে আপিলটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে। আদালত বিষয়টিতে আজ নট টুডে আদেশ দিয়েছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন। ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সিআইডি এই মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিলে শুরু হয় বিচার।
তবে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই মামলায় অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে।
দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত মামলার রায় দেন।
আলোচিত ওই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি’র সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জল, এনএসআই-এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ।
বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। সে রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামীরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।
এছাড়া, বিচারিক আদালতের রায়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহিদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআই-এর মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপি’র সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডি’র সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই মামলার আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
বিচারিক আদালতে এই রায়ের দেড় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্সসহ মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল শুনানি শুরু হয়। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি চলছিল।
তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন হলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি হয়। শুনানি শেষে গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এই মামলার সব আসামীকে খালাস দিয়ে রায় দেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পটি শুক্রবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে অনুভূত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ডেটা অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের সাগাইংয়ের ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে।
এ ভূমিকম্পে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত বৃহত্তম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সাহায্য কমে যাওয়ার ফলে সংকট আরও গভীর হওয়ার উদ্বেগের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন (সাত কোটি ৩০ লাখ) ডলার নতুন আর্থিক সহায়তা দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক্সে একটি পোস্টে বলেন, ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিওইএফ) মাধ্যমে এ খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা ১০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করবে।
‘এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা এ ধরনের জীবন রক্ষাকারী সহায়তার মাধ্যমে বোঝা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত।’
সিনহুয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডার অংশ হিসেবে বিদেশি সহায়তায় ব্যাপক কাটছাঁট এবং ফেডারেল ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কিছু অংশ ভেঙে ফেলার বিস্তৃত প্রচেষ্টার মধ্যেই এ অনুদান দেওয়া হলো।
জাতিসংঘের দুটি সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছিল যে, তহবিলের ঘাটতি গত আট বছর ধরে প্রতিবেশী মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য রেশনের পরিমাণ কমিয়ে দেবে।
রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন, তহবিল হ্রাসের ফলে ক্ষুধা পরিস্থিতির অবনতি হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা এবং জ্বালানি হ্রাস পাবে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় সহায়তা প্রদানকারী দেশ ছিল। প্রায় ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে আসছে দেশটি। কিন্তু জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর সাম্প্রতিক তহবিল স্থগিত করার ফলে কমপক্ষে পাঁচটি হাসপাতাল তাদের সেবা কমিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে।
ট্রাম্প ও বিলিয়নেয়ার মিত্র ইলন মাস্ক প্রধান মার্কিন বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি বন্ধ করে দিয়েছেন এবং এর অবশিষ্টাংশগুলোকে পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে একীভূত করেছেন। শত শত কর্মী এবং ঠিকাদারকে বরখাস্ত করেছেন এবং কোটি কোটি ডলারের পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছেন, যার ওপর বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ নির্ভরশীল।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফেব্রুয়ারিতে সমস্ত জীবন রক্ষাকারী সহায়তা এবং এ ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় যুক্তিসঙ্গত প্রশাসনিক খরচ মওকুফ করেছিলেন।
ওয়াশিংটন টাইমস জানায়, এ মাসের শুরুতে ইউএসএআইডি ভেঙে দেওয়ার তত্ত্বাবধানকারী ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যায়ক্রমে সাহায্য বন্ধের প্রস্তাব করেছিলেন।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা হ্রাস করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে।
কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন শিবিরের বাসিন্দারা এখন জনপ্রতি মাসিক ১২ ডলার করে খাদ্য বরাদ্দ পাবেন, যা আগের ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কম।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ডব্লিউএফপি একটি চিঠিতে এই সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানিয়েছে, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।’
তিনি আরও বলেন, ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ১৩ ডলার করে পাবে, যা কক্সবাজারের তুলনায় এক ডলার বেশি।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমানোর পরিকল্পনা ডব্লিউএফপি পূর্বে জানানোর পর এ পরিবর্তন এসেছে।
গত ৫ মার্চ বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশন ডব্লিউএফপি থেকে একটি চিঠি পায়, যেখানে বলা হয়, তহবিল সংকটের কারণে এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাদ্য বরাদ্দ জনপ্রতি ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলার করা হবে।
চিঠিতে শরণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন।
তার সফরের সময় তাকে ছয় ডলারে রোহিঙ্গারা কী খাবার পাবে তার বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছিল। সে সময় অপর্যাপ্ত পরিমাণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার আন্তরিক ও একমত বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাদিসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক ও একমত। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড মনিটর করা হচ্ছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক দাবির নামে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি, অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ, নৈরাজ্য ও সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং তা কখনোই মেনে নেয়া হবে না।
‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সরকার তা কঠোরভাবে প্রতিহত করবে। গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানায় সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সরকার এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ উভয়ের সহযোগিতা কামনা করছে।’
আরও পড়ুন:পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আন্তসীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় কার্যকর আঞ্চলিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের বায়ুদূষণের ৩০-৩৫ শতাংশ আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। তাই এ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক আলোচনার গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব পদক্ষেপ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জরুরি।
তিনি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর কাঠমান্ডু রোডম্যাপ ও অন্যান্য সমঝোতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এগুলো যথেষ্ট নয়, আরও জোরালো উদ্যোগ প্রয়োজন।
কলম্বিয়ার কার্টাগেনায় অনুষ্ঠিত ডব্লিউএইচওর দ্বিতীয় বৈশ্বিক সম্মেলনের বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া সাইড ইভেন্টে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ঢাকাস্থ বাসভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে তিনি বাংলাদেশের বায়ুদূষণ সমস্যা, বিশেষ করে ঢাকার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন।
উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের বহুমাত্রিক বায়ুদূষণ সমস্যা মোকাবিলায় বায়ুমান নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা ডব্লিউএইচওর অন্তর্বর্তীকালীন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ আইনি বিধিমালায় দূষণকারী খাতগুলোর জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
তিনি জানান, ২০২৪ সালে চূড়ান্ত হওয়া জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পিছিয়ে ছিল, তবে এখন তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো মানুষের দূষণজনিত ঝুঁকি কমানো ও পরিষ্কার বায়ুর দিন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে শিগগিরই বাস্তবায়ন শুরু হবে। এ প্রকল্প নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করা, আইন প্রয়োগ জোরদার করা, শিল্প কারখানায় দূষণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং গণপরিবহন খাত আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দেবে।
তিনি ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলোকে ইটভাটামুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনার কথা জানান, যেখানে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকবে।
এ ছাড়া ২০২৫ সালের মে থেকে পুরনো বাস ধাপে ধাপে তুলে দেওয়া হবে, যা পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ ধুলাবালি দূষণ রোধে ঢাকা শহরের খোলা সড়কগুলোতে সবুজায়নের উদ্যোগ এবং রাস্তা পরিস্কারে আরও শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানান।
উপদেষ্টা জানান, অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের ফলে এরই মধ্যে বায়ুমানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এ অগ্রগতি ধরে রাখতে কঠোর নজরদারি ও খাতগুলোর আধুনিকায়ন জরুরি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায় এবং ঢাকার মতো দূষিত শহরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৫-৭ বছর কমে যাচ্ছে। এই সংকট আমাদের সবার জন্য, আমাদের শিশু, বাবা-মা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি। নিষ্ক্রিয়তার মূল্য অনেক বেশি। আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী। কারণ আমি বিশ্বাস করি, এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রযুক্তি ও বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের হাতে রয়েছে, শুধু প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন দরকার।
‘বায়ুদূষণ শুধুই পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি মানবিক সংকট।’
সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি, পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, গবেষক, স্থানীয় প্রশাসন, পরিবহন ও শিল্প খাতের বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তারা দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ রোধে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
আরও পড়ুন:পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর বৃহস্পতিবার। এর অর্থ ‘অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত’ বা ‘পবিত্র রজনী’।
আজ সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে কদরের রজনী।
যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সারা দেশে রাতটি পালন করা হবে।
মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম।
এ রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষণ করা হয়। নির্ধারণ করা হয় মানবজাতির ভাগ্য।
৬১০ সালে কদরের রাতেই মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) কাছে সর্বপ্রথম সুরা আলাকের পাঁচ আয়াত নাজিল হয়। এরপর আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর বহনকৃত ওহির মাধ্যমে পরবর্তী ২৩ বছর ধরে মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে বিভিন্ন সুরা নাজিল করা হয়।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে।
‘শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরা আল- কদর, আয়াত ১-৫)।’
হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে লাইলাতুল কদর সন্ধান করো (বুখারি ও মুসলিম)।’
মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় পবিত্র রাতটি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে দেন। কামনা করেন মহান রবের অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফিরাত।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ রাত থেকে পরের দিন ভোররাত পর্যন্ত মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত করবেন তারা।
এই উপলক্ষে শুক্রবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে রাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের সব মসজিদেই তারাবির নামাজের পর থেকে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন থাকবে।
পবিত্র লাইলাতুল কদর/শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।
এ ছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে।
এশীয় দেশগুলোকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও যৌথ সমৃদ্ধির জন্য সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
চীনের হাইনানে বৃহস্পতিবার বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পরিবর্তনশীল এ বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে যা অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং যৌথ সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।’
আর্থিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোর এ প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন নির্ভরযোগ্য তহবিল দরকার যা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে।’
বাণিজ্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এশিয়া এখনও বিশ্বের অন্যতম কম সংযুক্ত অঞ্চল।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এ দুর্বল সংযুক্তি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবশ্যই বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।’
খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এশীয় দেশগুলোকে অবশ্যই সম্পদ-সাশ্রয়ী কৃষিকে উৎসাহিত এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। টেকসই প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি সমাধান ও জলবায়ুবান্ধব চাষাবাদের ক্ষেত্রে উদ্ভাবন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, যা পুনর্গঠনমূলক, সমবণ্টনমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।
তিনি বলেন,‘আমাদের জ্ঞান, তথ্য ভাগ করে নিতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানে সহযোগিতা আমাদের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিশেষে বলব আমাদের সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে মেধা সম্পদ ও যুবশক্তিকে রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে—একটি আত্মরক্ষা ও আত্মস্থায়ী সমাজ। আমাদের শূন্য-বর্জ্যের জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে একটি পাল্টা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। ভোগ সীমিত রাখতে হবে মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে।
‘আমাদের অর্থনীতিকে সামাজিক ব্যবসার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে হবে, যা ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক কাঠামো হিসেবে উদ্ভাসিত হবে, যেখানে উদ্ভাবন, লক্ষ্য ও দায়িত্ববোধ একীভূত থাকবে।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, বোয়াও ফোরাম ও অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগগুলোকে যুবসমাজ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে হবে, যেন আগামী প্রজন্মের জন্য এশিয়াকে আরও উন্নত করা যায়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য