শরীফ উদ্দিন চৌধুরীকে দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালকের পদ থেকে অপসারণ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে ১৩টি কারণ উল্লেখ করে বিস্তারিত বক্তব্য দিয়েছে দুর্নীতি নির্মূলে কাজ করা সংস্থাটি।
প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় চাকরিচ্যুতি- এমন অভিযোগকে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে রোববার প্রায় আড়াই হাজার শব্দের একটি ব্যাখ্যা গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তুলে ধরেছেন দুদক সচিব মাহাবুব হাসান।
তিনি বলেন, ‘অপসারণের আদেশ জারির পর থেকেই বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বিষয়টি প্রচারিত হচ্ছে। মূলত একতরফা তথ্যের ভিত্তিতেই এই সংবাদসমূহ প্রচারিত হচ্ছে, যা প্রকৃত ঘটনার বিপরীত।’
দুর্নীতি চেষ্টার নানা ঘটনায় শরীফের প্রতিবেদন দেয়ার বিষয়ে বলা হয়, ‘দায়িত্ব পালন কালে, যে কোনো অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্ত করে প্রতিবেদন দিবেন, এটাই স্বাভাবিক।’
‘গুরুত্বপূর্ণ বা কম গুরুত্বপূর্ণ যাই হোক না কেন, দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত সব কর্মচারীই নির্ভয়ে এবং নির্মোহভাবে দায়িত্বপালন করে থাকেন। কিন্তু জনাব মো. শরীফ উদ্দিনের মতন কোন অজুহাত তারা উত্থাপন করেন না।’
দুদকের ব্যাখ্যায় শরীফের বিরুদ্ধে নামকাওয়াস্তে তদন্ত, দায়ীদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করার মতো বিস্তারিত তথ্য তুলে না ধরা, অভিযানে জব্দ প্রায় এক কোটি টাকা কোষাগারে জমা না দিয়ে এক বছর নিজের কাছে রাখা, ভাই ও স্বজনকে প্রভাব খাটিয়ে চাকরি দেয়া, তদন্ত ও অনুসন্ধান চলাকালে সন্দেহভাজনদেরকে ডেকে এনে শারীরিকভাবে প্রহার করা, কমিশনের আদেশ অবজ্ঞার অভিযোগ আনা হয়।
শরীফের নানা কর্মকাণ্ডে উচ্চ আদালতও অসন্তুষ্ট ছিল বলেও জানায় দুদক। একাধিক ঘটনা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ এসেছে বলেও উল্লেখ আছে ব্যাখ্যায়। একটি ঘটনায় হাইকোর্ট শরীফের কর্মকাণ্ডকে ‘আরেক দুর্নীতি’ বলে উল্লেখ করেছে।
দুদক সচিব বলেন, এসব কার্যকলাপ অন্য কর্মচারীদের শৃঙ্খলার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে নিরুৎসাহিত করতে পারে।
কক্সবাজার জেলার জমি অধিগ্রহণ বিষয়ে ২০২০ সালের ১০ মার্চ দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শরীফ উদ্দিন যে প্রতিবেদন দিয়েছেন, তাতে কমিশন বিধিমালা ২০০৭ এর বিধি-১০(৪) এর নির্দেশনা অনুসৃত হয়নি। প্রতিটি ঘটনায় কে, কখন, কীভাবে কী অপরাধ করেছে এবং অপরাধটি সংগঠনের সঙ্গে আসামিদের দায় সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। আসামিদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ক্রিমিনাল চার্জ সমর্থনে সাক্ষ্য প্রমাণাদি সুস্পষ্টকরণ করা হয়নি। যাদেরকে অভিযোগের দায় হতে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে, তাদেরকে কেন অব্যাহতি প্রদান করা হবে, তার ব্যাখ্যা প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হয়নি। এছাড়াও অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি ও দায়সাড়া গোছের প্রতিবেদনের কারণে কমিশন কর্তৃক তা বিবেচিত হয়নি। পরে দুই সদস্যের টিম গঠন করে মামলাটির পুনঃতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শরীফকে চাকরি থেকে অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। এরপর দুদকের কর্মকর্তা থাকাকালে নানা আলোচিত দুর্নীতির চেষ্টার অভিযোগের বিষয়ে তার তদন্তের বিষয়টি সামনে আসে। তিনি প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় চাকরিচ্যুতির শিকার হয়েছেন- এমন অভিযোগ জোরাল হয়ে উঠে।
দুর্নীতি ও সুশাসন নিয়ে কাজ করা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ- টিআইবি এক বিবৃতিতে শরীফকে অপসারণের পেছনে কারণ জানতে চায়। বিএনপি অভিযোগ করে, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় তাকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
এর মধ্যে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দুদক সচিব গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, শরীফের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। তবে সেগুলো প্রকাশ্যে বলা হবে না। এর তিন দিন পর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিল সংস্থাটি।
শরীফ উদ্দিন নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেছেন, প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় তিনি রোষানলের শিকার হয়েছেন।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক এমডি আইয়ুব খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি দেয়া ও ‘চাকরি খেয়ে দেয়ার’ হুমকি দেয়ার অভিযোগও করেছেন শরীফ উদ্দিন।
শরীফ উদ্দিন ২০১৭ সালে কর্ণফুলী গ্যাসের বিভিন্ন অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর কেডিসিএল কর্তৃপক্ষকে তার আপন ছোট ভাই শিহাব উদ্দিন সবুজকে কোনো বিজ্ঞাপন ছাড়াই ২০১৮ সালের ১ আগস্ট ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে চাকরি দেন। বর্তমানে আইটি ডিপার্টমেন্টে কর্মরত আছেন। এরপর ভাইয়ের চাকরি স্থায়ী বরতে সবাইকে চাপ দিচ্ছিলেন। তিনি সেখানে তার আত্মীয় মুহাম্মদ শাহাব উদ্দিনকে জাল সনদের মাধ্যমে ড্রাইভার পদে চাকরি দিয়েছেন। এ নিয়ে এখন তদন্ত চলছে।
গত ৩০ জানুয়ারি এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয় চট্টগ্রামের খুলশী থানায়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, শরীফের বাসায় আইয়ুব খান চৌধুরীর যাওয়ার বিষয়টি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। তবে তিনি হুমকি দিয়েছেন, এমন সিদ্ধান্তে এসে তদন্ত এখনও শেষ করা যায়নি।
এ বিষয়ে দুদক সচিব বলেন, শরীফ যে সাধারণ ডায়েরি করেছেন, সে বিষয়ে তিনি কাউকে জানাননি। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ দেখে তাকে দাপ্তরিক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন আছে কি না জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি কর্তৃপক্ষের কোনো সহযোগিতা নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেননি। হুমকি দেয়া হলে কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারত।
দুদকের যে ১৩ অভিযোগ
১. শরীফ উদ্দিন কোনো অনুসন্ধান বা তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া মাত্র দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত নির্দেশিকা অনুসরণ না করে নিজের খেয়ালখুশি মতো কাজ করতেন।
২. অনুসন্ধান বা তদন্তের সময় অভিযোগের সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট নয়, এরকম বহু ব্যক্তিকে নোটিশ করে বা টেলিফোনে ডেকে এনে তাদের হয়রানি করতেন, যার প্রমাণ রয়েছে।
৩. অনুসন্ধান ও তদন্তের স্বার্থে ব্যাংক হিসাব স্থগিতের প্রয়োজন হলে তার সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। কমিশনের সম্মতিতে আদালতের আদেশেই কেবল এটা করা যায়। শরীফ উদ্দিন এই নিয়মের তোয়াক্বা করতেন না এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতেনও না।
৪. তিনি দুদকের চট্টগ্রাম-২ এ কর্মরত থাকাকালে আদালতের অনুমতি ছাড়া স্যোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের, কক্সবাজার শাখার হিসাব নম্বর ০৩৯৫৩১০০১৭১৮১ স্থগিত করেন। এই বেআইনি কার্যকলাপকে চ্যালেঞ্জ করে বেলায়েত হোসেন নামে একজন হাইকোর্টে রিট করেন। গত ২৭ জুন এক আদেশে এই ব্যাংক হিসাব স্থগিতের আদেশকে এখতিয়ারবহির্ভূত উল্লেখ করে।
তার (শরীফ) এ ধরনের কার্যকলাপ ক্ষমতার অপব্যবহার, কর্তব্যে অবহেলা, অসদাচরণ ও অদক্ষতার পর্যায়ে পড়ে।
কমিশনকে পাস কাটিয়ে এবং আদালতের অনুমতি ছাড়া লিখিতভাবে ২৫টি ও মৌখিকভাবে ৮টিসহ মোট ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছেন শরীফ।
এক নিকটাত্মীয়কে প্রভাব খাটিয়ে নিয়ম বহির্ভুতভাবে কর্ণফুলী গ্যাসে চাকরি দেয়া, অবৈধ অর্থ উপার্জন, অনুসন্ধানের নামে অভিযোগে সংশ্লেষ না থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন ব্যক্তিকে নোটিশ প্রদান করে ডেকে এনে হয়রানি করা ও অর্থ আদায় করা, প্রভাব খাটিয়ে নিজের শাশুড়ির নামে অবৈধ গ্যাস সংযোগ গ্রহণসহ অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি পটুয়াখালীতে অবস্থানকালে দুদকের পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে হয়রানির অভিযোগও পাওয়া গেছে।
৫. ২০২০ সালের ১০ মার্চ কক্সবাজারে একজন সার্ভেয়ারের বাসায় অভিযান চালিয়ে র্যাব ঘুষের ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকা জব্দ করে। সেই টাকা তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে শরীফ উদ্দিনের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। আলামত হিসেবে জব্দ করা টাকা তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে ১ বছর ৪ মাস নিজের হেফাজতে রেখেছেন।
‘দুদক কর্মকর্তার ক্ষমতার অপব্যবহার, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়নি ঘুষের ৯৩ লাখ টাকা’ শিরোনামে গত ৭ অক্টোবর জাতীয় দৈনিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের দৃষ্টিগোচরে এলে সুয়োমোটো রুল জারি করা হয়। এরপর আদালত শরীফের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
জব্দ করা অর্থ জমা না করার বিষয়ে শরীফ যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাও অগ্রহণযোগ্য। জব্দকৃত অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক বা ট্রেজারিতে জমা করার সুনির্দিষ্ট বিধান আছে এবং এ ধরনের মামলায় সকলেই তা অনুসরণ করে।
৬. শরীফ উদ্দিন একটি মামলায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তার জবানবন্দি গ্রহণের জন্য তার দপ্তরে ডেকে এনে নির্মমভাবে প্রহার করেছেন, এ রকম একটি অভিযোগ দুদকে আসে। দুদকের তদন্তে তা প্রমাণিতও হয়েছে। এ ধরনের বহু অভিযোগ রয়েছে। বহু ব্যক্তি তার কাছে নিগৃহীত হয়েছেন।
শরীফের বেপরোয়া মনোভাবের জন্য কেউ প্রকাশ্যে বা লিখিতভাবে অভিযোগ জানাতে সাহস করেননি বলেও দুদকের ব্যাখ্যায় বলা হয়।
২০২০ সালের ১০ মার্চ মো. ইদ্রিস নামে এক সিআইপিকে (কমার্শিয়ালি ইম্পরটেন্ট পারসন) জনাব শরীফ উদ্দিন চট্টগ্রামে দুদকের জেলা কার্যালয়ে এনে মারধর করার সুষ্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
২০২০ সালের ১০ মার্চ কক্সবাজারে একজন সার্ভেয়ারের বাসায় অভিযান চালিয়ে র্যাব ঘুষের ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকা জব্দ করে। সেই টাকা তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে শরীফ উদ্দিনের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। আলামত হিসেবে জব্দ করা টাকা তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে ১ বছর ৪ মাস নিজের হেফাজতে রেখেছেন। দুদক কর্মকর্তার ক্ষমতার অপব্যবহার, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়নি ঘুষের ৯৩ লাখ টাকা’ শিরোনামে গত ৭ অক্টোবর জাতীয় দৈনিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের দৃষ্টিগোচরে এলে সুয়োমোটো রুল জারি করা হয়। এরপর আদালত শরীফের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
৭. চট্টগ্রাম দুদক কার্যালয়ে শরীফ উদ্দিন তিন বছর চাকরি করার পর আরও ২০ জন কর্মচারীর সঙ্গে তাকে বদলি করা হয়। এই আদেশ তিনি ছাড়া সবাই যথাসময়ে কার্যকর করেন। কিন্তু এই আদেশের বিরুদ্ধে তার পক্ষে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার শহিদুল ইসলাম লিটন নামে একজন মানবাধিকারকর্মী (যে প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ভুয়া) হাইকোর্টে রিট করেন।
হাইকোর্ট রিট খারিজ করা সত্ত্বেও কয়েকটি জাতীয় ও চট্টগ্রামের স্থানীয় পত্রিকায় ‘হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে বদলি আদেশ স্থগিত’ শিরোনামে অসত্য সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে সংবাদপত্রগুলো দুঃখ প্রকাশ করে তা আদালতকে জানায়।
কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় কয়েকটি দৈনিকে আসা খবর আদালতের নজরে এলে হাইকোর্টের বিচারপতি এ বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করে দুদক আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এটি আরেক দুর্নীতি, এটি তদন্ত করেন’।
বদলি স্থগিত সংক্রান্ত ভুয়া কপি সরবরাহ করা এবং তার ভিত্তিতে ভুল সংবাদ পরিবেশন করার পেছনে জড়িতদের বের করতে দুদককে তদন্ত করতে বলেছে আদালত। বিচারক বলেছেন, এই ঘটনার সুবিধাভোগী হতেন শরীফ উদ্দিন।
৮. শরীফ উদ্দিনকে ২০২১ সালের ১৬ জুন চট্টগ্রাম-২ থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। অন্য সকলেই যথাসময়ে আদেশ পালন করলেও শরীফ উদ্দিন একমাস পর ১৭ জুলাই ই-মেইলযোগে যোগদানের কথা জানান, পরে ১০ আগস্ট সশরীরে পটুয়াখালীতে উপস্থিত হন। এই বিলম্বের কারণ হিসাবে লকডাউন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
দুদক বলেছে, ‘ইমেইলে যোগদান তো তিনি বদলি আদেশ প্রাপ্তির পর নির্ধারিত সময়ে করতে পারতেন। বিলম্বে যোগদান করে তিনি কমিশনের আদেশ অবজ্ঞা করেছেন।’
৯. বদলির পর কর্মস্থল ত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে সব রেকর্ডপত্রসহ নথি যথাযথভাবে বুঝিয়ে দেয়ার বিধান রয়েছে। তা সত্ত্বেও শরীফ উদ্দিন চট্টগ্রাম কার্যালয়ে তার দায়িত্বে থাকা অনুসন্ধান ও তদন্তের নথি হস্তান্তর করেননি। প্রায় তিন মাস পর তাকে পটুয়াখালী থেকে ডেকে নিয়ে আসা হলে গত ২৯ আগস্ট তিনি নথি হস্তান্তর করেন। এই তিন মাস নথিগুলোর অনুসন্ধান বা তদন্ত করা সম্ভব হয়নি।
শরীফ উদ্দিনের বার্ষিক মূল্যায়ন বা এসিআরে কেন তার কার্যক্রমকে ‘অতি উত্তম’ বলা হয়েছিল- সে প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘সম্ভবত ২০১৪ সালে তিনি যোগ দিয়েছিলেন। স্বভাবগত কারণে তাদের উৎসাহিত করার জন্য এবং তখন যেসব কাজকর্ম করেছেন, সেটির মূল্যায়ন করা হয়েছিল (এসিআরে অতি উত্তম লেখা হয়েছিল)।
১০. রোহিঙ্গাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট প্রদান বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন তিনি। সেই দলে শরীফ উদ্দিন ছিল সর্বকনিষ্ট সদস্য। একজন পরিচালকের নেতৃত্বে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৬ সদস্যের সমন্বয়ে দলটি গঠন করা হয়। তবে সর্বকনিষ্ট সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তিনি বিভ্রান্ত করে চলেছেন যে, তিনি সব উদঘাটন করেছেন।
১১. কক্সবাজার জেলার জমি অধিগ্রহণ বিষয়ে ২০২০ সালের ১০ মার্চ দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শরীফ উদ্দিন যে প্রতিবেদন দিয়েছেন, তাতে কমিশন বিধিমালা ২০০৭ এর বিধি-১০(৪) এর নির্দেশনা অনুসৃত হয়নি।
প্রতিটি ঘটনায় কে, কখন, কীভাবে কী অপরাধ করেছে এবং অপরাধটি সংগঠনের সঙ্গে আসামিদের দায় সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। আসামিদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ক্রিমিনাল চার্জ সমর্থনে সাক্ষ্য প্রমাণাদি সুস্পষ্টকরণ করা হয়নি। যাদেরকে অভিযোগের দায় হতে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে, তাদেরকে কেন অব্যাহতি প্রদান করা হবে, তার ব্যাখ্যা প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হয়নি। এছাড়াও অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি ও দায়সাড়া গোছের প্রতিবেদনের কারণে কমিশন কর্তৃক তা বিবেচিত হয়নি। পরে দুই সদস্যের টিম গঠন করে মামলাটির পুনঃতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
১২. স্বাস্থ্য খাতের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, বদলি, নিয়োগ বাণিজ্য, ক্লিনিক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে শরীফ উদ্দিনের জমা দেয়া অনুসন্ধান প্রতিবেদনের সঙ্গে তার তদারককারী কর্মকর্তাই দ্বিমত পোষণ করেছেন।
বিশেষ করে টেন্ডারে অনিয়ম সংক্রান্তে মালামালের গুণগত মানের তথ্য, জড়িত ব্যক্তিদের সুনির্দিষ্ট সম্পৃক্ততা, মূল্যায়ন কমিটির দায়-দায়িত্ব, আর্থিক বছর, সরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়নি। পরে দুই সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করে নতুন করে অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে।
১৩. শরীফ উদ্দিন ২০১৭ সালে কর্ণফুলী গ্যাসের বিভিন্ন অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর কেডিসিএল কর্তৃপক্ষকে তার আপন ছোট ভাই শিহাব উদ্দিন সবুজকে কোনো বিজ্ঞাপন ছাড়াই ২০১৮ সালের ১ আগস্ট ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে চাকরি দেন। বর্তমানে আইটি ডিপার্টমেন্টে কর্মরত আছেন। এরপর ভাইয়ের চাকরি স্থায়ী বরতে সবাইকে চাপ দিচ্ছিলেন। তিনি সেখানে তার আত্মীয় মুহাম্মদ শাহাব উদ্দিনকে জাল সনদের মাধ্যমে ড্রাইভার পদে চাকরি দিয়েছেন। এ নিয়ে এখন তদন্ত চলছে।
এক নিকটাত্মীয়কে প্রভাব খাটিয়ে নিয়ম বহির্ভুতভাবে কর্ণফুলী গ্যাসে চাকরি দেয়া, অবৈধ অর্থ উপার্জন, অনুসন্ধানের নামে অভিযোগে সংশ্লেষ না থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন ব্যক্তিকে নোটিশ প্রদান করে ডেকে এনে হয়রানি করা ও অর্থ আদায় করা, প্রভাব খাটিয়ে নিজের শাশুড়ির নামে অবৈধ গ্যাস সংযোগ গ্রহণসহ অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি পটুয়াখালীতে অবস্থানকালে দুদকের পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে হয়রানির অভিযোগও পাওয়া গেছে।
শরীফের অভিযোগ খণ্ডন
দুদক সচিব বলেন, ‘অপরাধ ও কর্মের দায় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শরীফ উদ্দিন কিছু মামলাকে গুরুত্বপূর্ণ মামলা বলে প্রচার করে সেই মামলা/ অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে মূল্যায়ন করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসাবে দাবি করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছেন, তাই প্রভাবশালীদের চাপে তাকে অন্যায়ভাবে তাকে অপসারণ করা হয়েছে মর্মে তিনি দাবি করেছেন এবং মিডিয়ায় তাই প্রচার করা হয়েছে, যা প্রকৃত ঘটনা নয়।
‘কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের কিছু মামলায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দুর্নীতি উদ্ঘাটনের কারণে তাদের প্রভাবে তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে এটা মোটেও সত্য নয়।’
দুদকের ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘বাস্তবতা বিবেচনায় কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে কর্মরত জেলা পর্যায়ের ব্যক্তিদের আর কতটুকুই বা প্রভাব থাকতে পারে! কমিশনের প্রায় সকল অনুসন্ধান ও তদন্তকারী কর্মচারী চট্টগ্রাম বা কক্সবাজারের সংশ্লিষ্ট মামলায় উল্লিখিত অভিযুক্ত বা আসামি অপেক্ষা অনেক গুরুত্বপূর্ণ/ উঁচু পদ পদবির ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আদালতে বিচারের পর তাদের সাজাও হয়েছে। কিন্তু তারা কেউ এ ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করেননি। তাদের কারও কারণে কমিশনকে এভাবে বিব্রত হতে হয় না।’
প্রশ্নের মুখোমুখি দুদক সচিব
লিখিত ব্যাখ্যা উপস্থাপন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন দুদক সচিব।
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির তদন্তে প্রভাবশালীদের নাম আসায় তাদের চাপে শরীফকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে যেসব বলা হচ্ছে, তা মোটেও সত্য নয়।...চাকরিবিধি না মানার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
অন্য এক প্রশ্নে মাহবুব হোসেন বলেন, ‘কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের কিছু মামলায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দুর্নীতি উদ্ঘাটনের কারণে তাদের প্রভাবে তাঁকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে, এটা মোটেও সত্য নয়। দুর্নীতি দমন কমিশন কোনো প্রভাব আমলে নেয় না এবং প্রভাবিত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে না।’
আরেক প্রশ্নে দুদক সচিব বলেন, ‘আপনি কমিশনের নিয়ম মানবেন না, অনুমোদন ছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করবেন। আমার কোনো কিছুই আপনি মানবেন না, কমিশন কেন আপনাকে রাখবে? তিনি যদি চাকরিবিধি না মানেন, অফিস ব্যবস্থাপনা না মানেন, তাহলে তো হার্ডলাইনে যেতেই হবে।’
শরীফ উদ্দিনের বার্ষিক মূল্যায়ন বা এসিআরে কেন তার কার্যক্রমকে ‘অতি উত্তম’ বলা হয়েছিল- সে প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘সম্ভবত ২০১৪ সালে তিনি যোগ দিয়েছিলেন। স্বভাবগত কারণে তাদের উৎসাহিত করার জন্য এবং তখন যেসব কাজকর্ম করেছেন, সেটির মূল্যায়ন করা হয়েছিল (এসিআরে অতি উত্তম লেখা হয়েছিল)।
‘পরবর্তী সময়ে যেসব তথ্য-উপাত্ত আপনাদের দিয়েছি, আপনি আজ যে অবস্থানে আছেন, এক দিন পর, দুই দিন পর সে অবস্থানে থাকবেন কি না, তা আপনিও জানেন না, আমিও জানি না। তার সিকোয়েন্সিয়াল যে মূল্যায়ন, সেটা তো আমলে নিতে হবে।
‘এটা তো আমার চাকরির পার্ট, শুধু ওই একটা দেখে, বাকি সব ওভারলুক করার তো সুযোগ নেই।’
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেসারাট নিউজে নিবন্ধ লিখেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে গত বছর বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান, অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমটি। এতে প্রফেসর ইউনূস জানিয়েছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। আর নির্বাচন শেষেই তিনি রাষ্ট্রের সব দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন। নির্বাচনে যে সরকার গঠিত হবে সেটির কোনো পদেই থাকবেন না বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি।
ড. ইউনূস লিখেছেন, ‘আমি স্পষ্ট করেছি : জাতীয় নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতে হবে। এরপর যে সরকার আসবে সেখানে নির্বাচিত বা নিযুক্ত করা কোনো পদে আমি থাকব না।’
তিনি বলেছেন, ‘আমার সরকারের মূল লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করা। যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের সঙ্গে তাদের পরিকল্পনাগুলো বলতে পারবে। আমাদের মিশন হলো, সব বৈধ ভোটার যেন তাদের ভোট দিতে পারে, যারা প্রবাসে আছেন তারাও। এটি একটি বড় কাজ। কিন্তু আমরা কাজটি সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
প্রফেসর ইউনূসের নিবন্ধটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
এক বছর আগে, এই মাসেই বাংলাদেশের হাজার হাজার সাহসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শিক্ষার্থী, যাদের পেছনে ছিল সমাজের সব স্তরের অগণিত মানুষের সমর্থন, আমাদের জাতির ইতিহাসে একটি অন্ধকার অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়েছিল। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, যা শেষ পর্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হয়েছিল, তার মাধ্যমেই তারা একজন স্বৈরাচারকে ৫ আগস্ট দেশ ছাড়তে বাধ্য করে।
এরপর যে ক্ষমতার শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে ছাত্রনেতারা আমাকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দিতে অনুরোধ জানায়। এই সরকারের দায়িত্ব ছিল দেশকে স্থিতিশীল করা এবং গণতন্ত্রের নতুন পথ তৈরি করা। শুরুতে আমি রাজি হইনি। কিন্তু যখন তারা জোর করল, তখন আমি তরুণদের জীবন উৎস্বর্গের কথা ভাবলাম, আমি তাদের ফিরিয়ে দিতে পারলাম না। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট, সুশীল সমাজের নেতাদের নিয়ে গঠিত একটি উপদেষ্টা পরিষেদের সঙ্গে আমি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করি।
এই গণআন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে ন্যায্যতা নিশ্চিত করা থেকে। এর মাধ্যমে বিশ্বের প্রথম ‘জেনারেশন জেড’ বিপ্লবের সূত্রপাত হয়েছিল। এই বিপ্লব তরুণদের জন্য একটি আদর্শ হয়ে উঠেছে, যা দেখায় কীভাবে তারা মানবজাতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো—যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং বৈষম্য—মোকাবিলার জন্য এগিয়ে আসতে পারে।
আমরা ভাগ্যবান যে তারা ‘তাদের পালা আসার জন্য’ অপেক্ষা করেনি। যখন সভ্যতা অনেক দিক থেকে ভুল পথে চালিত হচ্ছে, তখন তারা বুঝতে পেরেছিল যে এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।
স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রে আমাদের উত্তরণের একটি স্পষ্ট প্রমাণ ছিল যখন দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকী বাংলাদেশকে তাদের ‘২০২৪ সালের সেরা দেশ’ হিসেবে ঘোষণা করে। আমরা তখন অর্থনীতি পুনর্গঠন, নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং চুরি যাওয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সম্পদ উদ্ধারে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে, আমরা তখনো বুঝতে পারিনি বিশ্ব আমাদের এই অগ্রগতিকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ্য করছে। ডেসারেট নিউজ আমাদের এই যাত্রার চমৎকার কাভারেজ দিয়েছে, যা আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করি।
আমাদের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার ছিল গণঅভ্যুত্থানে যারা নির্মমভাবে নিহত হয়েছিল এবং যারা গুরুতর আহত হয়েছিল—সেই হাজার হাজার পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা। এরসঙ্গে আমরা বিগত সরকার ও তার সহযোগীদের লুট করা অর্থ উদ্ধারেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে সাবেক স্বৈরাচারী সরকার বছরে ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছে। এই অর্থ পুনরুদ্ধার করার জন্য যুদ্ধ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যখন আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন অব্যবস্থার মাত্রা দেখে আমি হতবাক হয়ে যাই। পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করছিল না। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছিল। অর্থনীতি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। গণতন্ত্র ভেঙে পড়েছিল।
সরকারি কর্মচারীরা, যারা ক্ষমতাসীন দলের প্রতি যথেষ্ট আনুগত্য না দেখানোর কারণে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন, তারা ন্যায়বিচার চেয়েছিলেন।
ধীরে ধীরে আমরা পুনর্গঠন শুরু করেছি। যেসব রাজনৈতিক দল স্বৈরাচারের প্রতিরোধ করেছিল, তাদের পাশাপাশি নতুন গঠিত দলগুলোও নতুন ধারণা, শক্তি এবং কর্মপ্রচেষ্টা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। সশস্ত্র বাহিনী, যারা ৫ আগস্ট বিক্ষোভকারীদের ওপর গণহত্যা চালাতে দেয়নি, তারা তাদের পেশাদারিত্ব বজায় রেখেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে।
আমি এটি স্পষ্ট করে দিয়েছি: আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমি এরপরের সরকারের কোনো নির্বাচিত বা নিযুক্ত পদে থাকব না।
আমাদের প্রশাসনের মূল লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করা, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের কাছে তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারবে। বিদেশে বসবাসকারী নাগরিকসহ সব যোগ্য নাগরিককে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া একটি বিশাল কাজ। কিন্তু আমরা এটি সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমরা আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতেও পরিবর্তন এনেছি। যেন আমাদের প্রতিবেশী এবং বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক জোরদার করা যায়।
বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে, বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির একটি মূল কেন্দ্র হতে পারে এবং হওয়া উচিতও। আমরা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ।
রুবিওরে সঙ্গে সম্প্রতি আমার একটি ফলপ্রসূ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে, যা আমাদের উভয় দেশের বাণিজ্যের জন্য ইতিবাচক ছিল।
যুক্তরাজ্য, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্বব্যাংক গোষ্ঠী এবং জাতিসংঘও আমাদের সহায়তা করার জন্য এগিয়ে এসেছে। আমরা এই পথে একা নই।
নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল এবং নাগরিকদের নিয়ে একটি ব্যাপক সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছি। সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো একটি সাংবিধানিক সংশোধনী আনা। যা এমন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে যাতে বাংলাদেশ আর কখনো স্বৈরাচারী শাসনে ফিরে না যায়।
বাংলাদেশ যদি শেষ পর্যন্ত এমন একটি দেশে পরিণত হয় যেখানে দেশের সব মানুষ নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে। তবে তা হবে লাখ লাখ বাংলাদেশির দৃঢ়তা, কল্পনা এবং সাহসের ফল।
এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমাদের সঙ্গে যারা আছেন তাদের সকলের দায়িত্ব রয়েছে। তারাই আমাদের সর্বোত্তম আশা—এবং সম্ভবত আমাদের শেষ আশা।
সরকারি এবং কূটনীতিক পাসপোর্টে পারস্পারিক ভিসা অব্যাহতি সুবিধা পেতে পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।
প্রেস সচিব বলেন, ‘পাকিস্তানের মতো এ রকম চুক্তি আমরা আরও ৩১টি দেশের সঙ্গে করেছি। এই চুক্তি পাঁচ বছরের জন্য করা হবে । এর ফলে যারা অফিসিয়াল পাসপোর্ট এবং কূটনীতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন, তারা এখন বিনা ভিসায় পাকিস্তান সফর করতে পারবেন। একইভাবে পাকিস্তানের যারা অফিসিয়াল এবং কূটনীতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন— তারাও বাংলাদেশে সফর করতে পারবেন কোন ভিসা ছাড়াই। এটা একটা স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস।’
উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, এ বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের সম্মতি পাওয়া গেছে।
উপদেষ্টা পরিষদের ৩৯তম বৈঠকে আজ ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে।
ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীগণের পারস্পরিক ভিসা অব্যাহতি চুক্তির খসড়া অনুমোদন করা হয়।
এছাড়া, উপদেষ্টা পরিষদকে সংস্কার কমিশনসমূহের সুপারিশ বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ উপস্থিত সকলের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যে গতিতে এগোচ্ছে আরও গতি বাড়াতে সমন্বয় টিমের মাধ্যমে কাজ করতে চাই। আমি সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় সেবা দরিদ্র, দুঃস্থ, অসহায়, অসচ্ছল মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে সকলের সহযোগিতা চাই। এজন্য আমরা সবাই একসাথে কাজ করবো।
তিনি আজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের সাথে পরিচিতি ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
নতুন সচিব বলেন,
আমি এই মন্ত্রণালয়ের সুনাম কাজের মাধ্যমে, আইন কানুন মেনে মানুষের সেবা দ্রুত নিশ্চিত করতে আপনাদের সহযোগিতা চাই। তিনি বলেন, সচিবের রুম আপনাদের জন্য সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে এবং ফাইল দ্রুত নিষ্পত্তি করে কাজের যথার্থতা নিশ্চিত করবেন। আপনারা নির্ভয়ে কাজ করবেন, আমার সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আমিও আপনাদের থেকে শিখতে চাই এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের নয়টি সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আয়োজন করা হচ্ছে জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ২০২৫। জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ২০২৫ এর প্রতিপাদ্য "বাংলাদেশ ২.০: তারুণ্যের নেতৃত্বে আগামীর পথে " নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা ধারণাপত্র জমা দিয়ে শুরু করবে এবং নির্বাচিত দলসমূহ পূর্ণাঙ্গ নীতিপত্র প্রস্তুত ও উপস্থাপনা করবে। বিজয়ীরা পুরস্কৃত হওয়ার পাশাপাশি তাদের নীতি প্রস্তাবগুলো সরকারিভাবে পলিসি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।
নীতি প্রতিযোগিতার বিষয়গুলো হল-
১. রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ
২. জুলাই পরবর্তীতে সময়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি: জাতীয় স্বার্থ ও বৈদেশিক সম্পর্কের পুনঃসংজ্ঞায়ন
৩. নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ: শিক্ষা ও দক্ষতার রূপান্তর
৪.দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সাংস্কৃতিক সংযোগ: জুলাই অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশী তরুণদের ভূমিকা
৫. গুজব প্রতিরোধে বাংলাদেশের করণীয় ও বাংলাদেশের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি
৬. জুলাই গণভুত্থান ও সাংবিধানিক পুনর্গঠন: তরুণদের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ
৭.বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ: সম্ভাবনার ব্যবহার ও নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা প্রস্তুতি
৮. সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের পথে: ব্যবস্থা পুনর্গঠন ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
৯. চতুর্থ শিল্প বিপ্লব: বাংলাদেশের উদ্বোধনী সম্ভাবনা ও প্রয়োগের ক্ষেত্র
রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী বিষয়সহ রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে তারুণ্যের অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণ অপরিহার্য। আমাদের কাঙ্ক্ষিত দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নীতিগতভাবে অগ্রসর হওয়া। তরুণদের চিন্তাপ্রক্রিয়া, মননশীলতা এবং গবেষণাধর্মী সক্ষমতাকে সামনে রেখে এক নতুন পরিবর্তনের সূচনা করা সম্ভব আর সেটি হতে হবে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় তারুণ্যের অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে।
এ সময় যুব ও ক্রীড়া সচিব বলেন, এই প্রতিযোগিতা কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয় এটি আগামী প্রজন্মের নেতৃত্বে বিনিয়োগ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তরুণদের বুদ্ধিবৃত্তিক অংশগ্রহণই আমাদের রাষ্ট্রকে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেবে এবং বাংলাদেশ ২.০-কে বাস্তবায়নের ভিত্তি গড়ে তুলবে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আজ বুধবার ইসির উপ-সচিব মো. মাহবুব আলম শাহ স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে, যা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫’ কমিশনে অনুমোদিত হয়েছে এবং তা ২৬ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৮ (১) ও (২) অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের তালিকা সংরক্ষণ ও চূড়ান্তকরণের জন্য গেজেটে কমপক্ষে ২৫ দিন পূর্বে তা প্রকাশ করার বিধান রয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এলাকা ভিত্তিক ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ, এই তালিকার ওপর দাবি/আপত্তি গ্রহণ এবং তা নিষ্পত্তির মাধ্যমে নীতিমালা অনুযায়ী চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কমিশন নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী : খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, দাবি/আপত্তি গ্রহণের শেষ তারিখ: ২৫ সেপ্টেম্বর, দাবি/আপত্তি নিষ্পত্তির শেষ তারিখ: ১২ অক্টোবর, সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত ও প্রকাশ: ২০ অক্টোবর।
উল্লেখিত সময়সূচি অনুযায়ী এবং ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা অনুসারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নির্ধারিত ছকের আলোকে খসড়া ও সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের সংখ্যাগত তথ্য (সফটকপিসহ) আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন সহায়তা-১ শাখায় পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, সারাদেশ জলাশয়গুলো চিহ্নিত করে দেশি মাছের প্রজাতি রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন জলাশয়ে মাছের নানান প্রজাতি রয়েছে। এসব জলাশয় চিহ্নিত করে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি করতে হবে।
উপদেষ্টা বুধবার (২০ আগষ্ট) রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে 'টেকসই মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনায় অভয়াশ্রমের গুরুত্ব ও ভবিষ্যত করণীয়' -শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। সেমিনারটির আয়োজন করে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, অভয়াশ্রম গড়ে তোলা ও রক্ষা করা মৎস্যসম্পদ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মুক্ত জলাশয়ের পরিমাণ দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে কমছে।
এর পেছনের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখানে আগে নীতি-নির্ধারণীতে হয়তোবা মনোযোগ কমছিল। তাই আমরা এখাতে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের মুক্ত জলাশয় গড়ে তুলতে যা করণীয় তা করতেই হবে।
জিনগত বিলুপ্তি রোধ করা দরকার উল্লেখ করে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, মাছের প্রজাতিগুলো রক্ষা করা এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় বরং আন্তর্জাতিক মৎস্যসম্পদের প্রয়োজনে করতে হবে। কারণ আমরা প্রাকৃতিকভাবে এমন স্থানে রয়েছি যেখানে মাছ না খেয়ে বাঁচার উপায় নেই।
৪১ প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, দেশে ৬৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। সেখানে বিএফআরআইর গবেষণার ফলে ৪১ প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
মাছ শিকারে বিষ ও বিদ্যুতের ব্যবহারকে উদ্বেগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষ কত নিষ্ঠুর তারা মাছ শিকারে বিষ ও বিদ্যুতের ব্যবহার করছে। এটি হচ্ছে মানুষের লোভ ও তাৎক্ষণিক লাভের কারণে।
প্লাস্টিকদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মৎস্যসম্পদ ধ্বংসের পেছনে পানি ও প্লাস্টিকদূষণ অন্যতম ক্ষতির কারণ। সম্প্রতি প্লাস্টিক বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কোন সমঝোতায় আসতে পারেনি। প্লাস্টিক চুক্তি মানুষের পক্ষে ও প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় বাংলাদেশও স্বাক্ষর না করে চলে এসেছে।
বিএফআরআইর মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্রের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. তোফাজ্জেল হোসেন, সম্মানিত অতিথি ছিলেন মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ফারাহ শাম্মী ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফআরআইর ঊধ্বর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মশিউর রহমান। এসময় বিএফআরআই এর বিজ্ঞানীবৃন্দ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, মৎস্যজীবী ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য