যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস পালনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
শহীদ মিনারের মূল বেদিসহ পুরো প্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাসহ সৌন্দর্যবর্ধন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরেজমিন এমন চিত্র দেখা গেছে।
সৌন্দর্য বাড়াতে শহীদ মিনারসহ আশপাশের রাস্তার দেয়ালে নতুন রং করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা মিনার প্রাঙ্গণ আলপনা এঁকে রঙের তুলিতে সাজিয়ে তুলছেন। দেয়ালে দেয়ালে ফুটিয়ে তুলছেন বর্ণমালা।
আঁকা হচ্ছে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে লেখা কবি-মনীষীর নানা পঙক্তি-উক্তি। শহীদ মিনারের বিপরীত পাশের দেয়ালগুলোয় রঙের আঁচড়ে আঁকা হচ্ছে বাহান্ন থেকে একাত্তরের গৌরবগাথা এবং উত্তাল দিনগুলোর চিত্রকর্ম।
অন্য বছরের মতো এবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনের তত্ত্বাবধানে অনুষদটির শিক্ষক এবং বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা এ কাজে অংশ নিয়েছেন।
আলপনা আঁকার কাজে সহায়তা করা চারুকলা অনুষদের সাবেক শিক্ষার্থী শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কাজটি চারটি ভাগে বিভক্ত। প্রতিটি ভাগে প্রায় ৫০ জন করে কাজ করছেন। ভাগগুলো হলো বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে পেইন্টিং, ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে বিভিন্ন কবির কবিতার পঙক্তি, শহীদ মিনারের বেদিতে আলপনা, জিমনেশিয়ামের বিভিন্ন গেটের কাজ আর রাস্তায় আলপনা।
এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি লেখাটি প্রতি বছরের মতো এ বছরও চারুকলার প্রিন্টিং বিভাগের শিশির ভট্টাচার্য স্যার আঁকছেন। সব কাজই মূলত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে। তবে কোথাও আগে বা পরে শুরু হয়। মোটামুটি রোববার পর্যন্ত এসব কাজ চলবে। আর রোড আলপনার কাজটি রোববার সকাল থেকে শুরু হবে। ’
শহীদ বেদির আলপনায় তুলির শেষ আঁচড় দিচ্ছেন চারুকলা অনুষদের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী অর্পিতা দেবনাথ মিথু। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছরই চারুকলার শিক্ষার্থীরা আলপনা আঁকেন। এবার আমরা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরাই আলপনা আঁকছি।’
প্রাচ্যকলা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী মো. তাসনিমুল ইজাজ বলেন, ‘চারুকলা অনুষদে আটটি বিভাগে আমরা প্রথম বর্ষের প্রায় ১৩৫ জন শিক্ষার্থী আছি। মোটামুটি সব শিক্ষার্থীই এ কাজে অংশগ্রহণ করেছেন।’
এদিকে শহীদ মিনারের চারপাশে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা এবং পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। পাশেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাদে ঘোষণা মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ প্রাঙ্গণে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কন্ট্রোল রুম, ফায়ার সার্ভিস ও প্রাথমিক চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস সুষ্ঠুভাবে পালনের লক্ষ্যে গত ২৩ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটিসহ ১৪টি উপকমিটি গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি ও উপকমিটিগুলোর যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানিয়েছেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রতিটি সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচজন প্রতিনিধি এবং ব্যক্তিপর্যায়ে একসঙ্গে সর্বোচ্চ দুজন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারবেন। শহীদ মিনারে আগত সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে। এ ছাড়া তিনি সবাইকে টিকা সনদ সঙ্গে রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন।
প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রে অতিথিদের জন্য অভ্যর্থনার ব্যবস্থা থাকলেও এ বছর পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় তা থাকছে না বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান সার্বিক প্রস্তুতি সরেজমিন দেখার জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে উপাচার্য সার্বিক প্রস্তুতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রাচার অনুযায়ী একুশের প্রথম প্রহরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিমূল প্রস্তুত করা হচ্ছে এবং যথাসময়ের মধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে।’
উপাচার্য আখতারুজ্জামান চলমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ, বাধ্যতামূলক মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২২ উদযাপনের জন্য সর্বসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও আজিমপুর কবরস্থানে যাতায়াতের জন্য একটি রুট-ম্যাপ দেয়া হয়েছে। তা যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্যও উপাচার্য সবার প্রতি অনুরোধ জানান।
দিবসটি পালনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।
২১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৬টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে সীমিত পরিসরে একটি প্রভাতফেরি বের করা হবে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রভাতফেরিতে নেতৃত্ব দেবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট-সিন্ডিকেট সদস্য, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এতে অংশ নেবেন। প্রভাতফেরি সহকারে তারা আজিমপুর কবরস্থান হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাবেন এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
এ ছাড়া বাদ জোহর বা সুবিধাজনক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদুল জামিয়া, সব হলের মসজিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাষাশহীদদের রুহের মাগফিরাত বা শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত বা প্রার্থনা করা হবে।
আরও পড়ুন:দশ দফা দাবিতে সারাদেশে চলছে আধাবেলা পেট্রোল পাম্প ধর্মঘট, বন্ধ ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও পরিবহন, বিপাকে পড়েছেন রাজধানীবাসী।
উত্তর বাড্ডার বাসিন্দা বাইক চালক জিয়া হোসেন সকালে স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বের হলে দেখেন আশপাশের সব পেট্রোল পাম্প বন্ধ।
নিজের দুরবস্থার কথা জানিয়ে জিয়া বলেন, অনেকেই জানে না আজকে ধর্মঘট চলছে। বাইক ঢেলে ঢেলে নানা পাম্পে ঘুরেও তেল পাওয়া যায়নি।
রাইড শেয়ারের আরেক বাইক চালক মনসুর বলেন, "আমরা প্রতিদিন সকালে তেল নিয়ে কাজে বের হই। আজকে সকাল থেকে প্রতিটা পাম্প বন্ধ। বাইকে তেল না থাকায় বসে থাকতে হচ্ছে।"
প্রাইভেট গাড়ির ড্রাইভার নজরুল জানান, পাম্পে তেল থাকলেও বিক্রি বন্ধ রেখেছে কর্মচারীরা। জ্বালানি না থাকায় সড়কে গাড়ির চাপও তুলনামূলক কম।
সরেজমিনে রাজধানীর মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, মধুবাগ, শাহজাহানপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায় বেশিরভাগ পাম্প বন্ধ।
রামপুরার হাজিপাড়া পেট্রোল পাম্পের কর্মচারী আকবর বলেন, সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে। এসময় তেল উত্তোলন এবং বিপণন বন্ধ থাকবে।
বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক ঐক্য পরিষদের ডাকা এই ধর্মঘটের মূল দাবি তেল বিক্রির কমিশন ন্যূনতম ৭ শতাংশ করা এবং সড়ক জনপথ অধিদপ্তরের ইজারা মাশুল আগেরটাই বহাল রাখা।
পাম্প সংযোগ সড়কের ইজারা নবায়নের সময় পে-অর্ডারকে নবায়ন হিসাবে গণ্য করা, বিএসটিআই কর্তৃক আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংক ক্যালিব্রেশন, ডিপ রড পরীক্ষণ ফি এবং নিবন্ধন প্রথা বাতিল, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিইআরসি, কলকারখানা পরিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স গ্রহণের নিয়ম বাতিল, বিপণন কোম্পানি থেকে ডিলারশিপ ছাড়া সরাসরি তেল বিক্রি বন্ধ, অননুমোদিতভাবে ঘর বা খোলা স্থানে তেল বিক্রয় বন্ধ, ট্যাংকলরি চালকদের লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন লাইসেন্স ইস্যুতে জটিলতা দূর করা এবং সব ট্যাংকলরির জন্য আন্তঃজেলা রুট পারমিট প্রদানের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এছাড়া যেখানে-সেখানে ট্যাংকলরি থামিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা না করে ডিপো গেইটে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা এবং সব ট্যাংকলরির জন্য আন্তঃজেলা রুট পারমিট ইস্যু করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলে গঠিত এ ঐক্য পরিষদ।
এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে সকালে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বৈঠকের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছে ঐক্য পরিষদ নেতারা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তাদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে রাজধানীর এনবিআর প্রধান কার্যালয়ের সামনে সেনা ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
শনিবার (২৪ মে) সকাল থেকেই এনবিআর ভবনের সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা যায় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক এনবিআর কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা জেনেছি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ এনবিআর চেয়ারম্যান কার্যালয়ে আসার কথা রয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, আজ সরকারি, আধা-সরকারি অফিস, ব্যাংক, স্কুল-কলেজ খোলা রয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সেনা ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
এর আগে, বুধবার আন্দোলনের অংশ হিসেবে এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে সব ধরনের অসহযোগিতাসহ একাধিক নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। ঘোষণা অনুযায়ী, শনিবার সকাল থেকে এনবিআর ভবনে প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান নেয় কর্মকর্তারা।
সংগঠনের বিবৃতি অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ সারাদেশের এনবিআর কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। তবে রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।
আগামী ২৪ ও ২৫ মে ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব কার্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হবে, কাস্টমস হাউস ও এলসি স্টেশন বাদে। রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কর্মবিরতির বাইরে থাকবে।
২৬ মে থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা বাদে ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব কার্যালয়ে পূর্ণ কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে সংগঠনটি। বুধবার এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানের অবিলম্বে অপসারণের নতুন দাবি যোগ করেছে সংগঠনটি।
এর আগে, সংগঠনের তিনটি প্রধান দাবি ছিল—প্রথমত, প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে; দ্বিতীয়ত, রাজস্ব সংস্কার বিষয়ে উপদেষ্টা কমিটির সুপারিশ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে; এবং তৃতীয়ত, এনবিআরের প্রস্তাবিত খসড়া ও উপদেষ্টা কমিটির সুপারিশ পর্যালোচনার পর সব স্টেকহোল্ডার—অকাঙ্ক্ষী সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন, সিভিল সোসাইটি ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মতামতের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য ও টেকসই রাজস্ব সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে।
এদিকে, এনবিআরের কাস্টমস, ভ্যাট ও ট্যাক্স বিভাগের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের একটি অ্যাড হক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।
টানা বৃষ্টি এবং আন্দোলন-অবরোধে রাজধানী ঢাকাবাসীর নগর জীবন বিষিয়ে উঠেছে। একটু বৃষ্টি হলেই ঢাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে যানবানবাহনের গতি কমে গিয়ে মানুষের চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি ঢাকায় চলমান বিভিন্ন আন্দোলন ও সড়ক অবরোধের কারণে যানজটের মাত্রা বেড়েছে। এতে মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
বেশ কিছুদিন ধরে তীব্র দাবদাহের পর গত কয়েক দিন থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে কমবেশি বৃষ্টি হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় আজ (বৃহস্পতিবার) সকালেও ঢাকায় বৃষ্টি নামে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এদিন সকালে ঢাকায় ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে টানা মৌসুমি বর্ষণে ঢাকার অলিগলির পাশাপাশি প্রধান সড়কগুলোরও অনেকাংশ তলিয়ে যায়। কয়েক দিনের ভ্যাপসা গরমের পর এই বৃষ্টি স্বস্তি নিয়ে এলেও ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
এদিন সকালে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে ধীর হয়ে গেছে যানবাহনের গতি।
এদিকে, বিভিন্ন দাবিতে ঢাকার কয়েকটি স্থানে আন্দোলন ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই রাজধানীর শাহবাগ থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক নেতা-কর্মী শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয়ে দিনব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন।
একই সময়ে, সকাল ১০টা থেকে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবন থেকে হাইকোর্ট এলাকা ও মৎস্য ভবন হয়ে কাকরাইল যাওয়ার রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন। ফলে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে তীব্র যানজট; সবকিছু মিলিয়ে নাকাল নগরবাসী। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে যানবাহন আটকে থাকতে দেখা যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী ও অফিসফেরত, পথচারী, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। অফিসকর্মীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন। ছাতা থাকলেও ভারি বর্ষণের কারণে আধভেজা হয়ে অফিসের পথে রওনা দিতে হয় অনেককে।
এদিন ভারি বৃষ্টিপাতে নিউমার্কেট এলাকার সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতা ও তীব্র যানযট সৃষ্টি হয়। এতে জনবহুল নিউমার্কেটের স্বাভাবিক ব্যবসা কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি হয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে আলী খান নামে নিউমার্কেট এলাকার এক হকার বলেন, ‘সকালে মাত্র দোকান খুলেছি, তার কিছু পরেই বৃষ্টি নামল। বৃষ্টি হলেই এই রাস্তায় পানি উঠে যায়, দোকানপাট খোলা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘গত ৪-৫ বছর ধরেই নিউমার্কেট এলাকার এই অবস্থা দেখে আসছি। সিটি করপোরেশন এই বিষয়ে অবশ্যই জানে, তারপরও তারা এ নিয়ে কোনো কাজ করে না। এ কারণে আমাদের কষ্টও আর ফুরায় না।’
আরেক ব্যবসায়ী আব্দুর রব আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘কোনো সরকারই আমাদের দিকে সুনজর দেয়নি। নিউমাকের্ট এলাকায় দ্রুততার সঙ্গে ড্রেন করে পানি বের করার ব্যবস্থা করা দরকার।’
পানি ওঠার কারণে ভোগান্তির কথা তুলে ধরে এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখন দুপুর ২টা বাজে, অথচ দিনের বেচাকেনা শুরু করলাম মাত্রই। এভাবে চললে তো আমাদের ব্যবসা গুটিয়ে যাবে। আমাদের সব শেষ। ঋণ হতে হতে এমন অবস্থা যে, নিজের রক্ত বেঁচলেও ঋণ পরিশোধ হবে না।’
জরুরিভিত্তিতে সিটি করপোরেশন যাতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি করে, অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে সেই দাবি জানান নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ (বৃহস্পতিবার) ফের রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এতে শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের হল পর্যায়ের নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে এই কর্মসূচি পালন করে আসছে ছাত্র সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।
গতকাল (বুধবার) সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শাহবাগ ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে অবস্থানের ঘোষণা দেয় ছাত্রদল। সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নেই আজ আরও একবার শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে তারা।
আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টা থেকেই শাহবাগ মোড়ে জড়ো হতে থাকেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এর কিছুক্ষণ পরই ঝুম বৃষ্টি নামে। তবে বৃষ্টি তাদের অবস্থান কর্মসূচি পণ্ড করতে পারেনি। ১০টার পরপরই বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাস্তা নেমে যান ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী। তাদের অনুসরণ করেন আরও অনেকে।
এ সময় তারা ‘আর চাই না, আর চাই না, এনএসআইয়ের প্রক্টর’, ‘ক্যাম্পাসে লাশ ঝোলে, প্রক্টর কী করে’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই ,সাম্য হত্যার বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
আজ বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত তাদের এই অবস্থান কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
অবস্থান কর্মসূচিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির রয়েছেন। এ ছাড়াও ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা রয়েছেন।
ছাত্রদল সাম্য হত্যার বিচারের কোনো আশ্বাস পায়নি জানিয়ে সংগঠনটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সাম্যকে হত্যার প্রকৃত খুনিদের আজকে পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি। এই মামলাটি পুলিশের পর ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা ডিবির সঙ্গেও কথা বলেছি। কিন্তু একজন প্রকৃত আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে—এমন কিছু বলে তারা আমাদের আশ্বস্ত করতে পারেনি। আবার যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের চার দিন পর রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এখানে সময়ক্ষেপণের বিষয়টি লক্ষ করা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই আন্দোলনের অন্যতম ভূমিকা পালনকারী একজন শিক্ষার্থীকে যদি এভাবে হত্যা করা হয় এবং তার খুনিদের যদি প্রশাসন গ্রেপ্তারে এভাবে ব্যর্থ হয়, তাহলে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসন ঠিক কী ভূমিকা পালন করছে, তা এই ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারি।
এর আগে (জাহিদুল ইসলাম) পারভেজকে হত্যা করা হয়েছে, এখন সাম্য হত্যাকাণ্ডের শিকার হলো জানিয়ে রাকিব বলেন, সাম্য হত্যার প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তার করে যাতে সঠিক আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের বিচার হয়, সেই দাবিতেই আমরা আজকের অবরোধ কর্মসূচি পালন করছি।
ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাত্রীসাধারণের ভোগান্তি বেড়েছে। পরে ফার্মগেট-কারওয়ানবাজার হয়ে শাহবাগগামী যানবাহনগুলোকে বিকল্প সড়ক হিসেবে বাংলামোটর মোড় থেকে মগবাজারমুখি সড়ক ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেট অবৈধ ঘোষণার দাবি এবং তাকে শপথ পড়ানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট মামলা খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট।
আদালতের এই আদেশের ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ নিতে আর কোনো বাধা থাকল না বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন।
এ রিট মামলার ওপর মঙ্গল ও বুধবার কয়েক দফা শুনানির পর বৃহস্পতিবার তা খারিজ করে আদেশ দেয় বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চ।
ইশরাককে মেয়রের চেয়ারে বসাতে এক সপ্তাহ ধরে তার সমর্থকদের আন্দোলনের মধ্যে আদালতের এই সিদ্ধান্ত এল।
রাজধানীর হাজারীবাগের জাফরাবাদ পুলপাড় ঋষিপাড়া এলাকায় ফটোগ্রাফার নূরুল ইসলামকে হত্যা করে ক্যামেরা ছিনতাইয়ের মামলায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের সবাই ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সী তরুণ। টিকটক ভিডিও বানাতেই তারা ক্যামেরা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ মে) ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরা এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাপাতি, একটি রামদা ও একটি বড় ছোরা উদ্ধার করা হয়। পূর্বপরিকল্পনা অংশ হিসেবেই ওই ফটোগ্রাফারকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হাজারীবাগ থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন— নাঈম আহম্মেদ (২০), শাহীন অকন্দ ওরফে শাহিনুল (২০), শাহীন চৌকিদার (২২), রহিম সরকার (১৯), নয়ন আহম্মেদ (১৯), রিদয় মাদবর (১৮), আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজা (১৯), আনোয়ার হোসেন (১৯), শহিদুল ইসলাম (২০) ও মোহাম্মদ আরমান (১৮)।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নুরুল ইসলাম (২৬) একটি ফেসবুক পেজ পরিচালনা করে বিভিন্ন ইভেন্টে ফটোগ্রাফির কাজ করতেন। গত ১৫ মে একটি অজ্ঞাত মোবাইল নম্বর থেকে তার ফোনে কল আসে। অজ্ঞাত ব্যক্তি একটি বিয়ের ইভেন্টে ছবি তোলার জন্য তাকে বুকিং দিয়ে ৫০০ টাকা বিকাশের মাধ্যমে অগ্রিমও পাঠান। পরের দিন (১৬ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাকে একই নম্বর থেকে ফোন করে তাকে শংকর চৌরাস্তায় অপেক্ষা করার কথা জানানো হয়।
পরে সহযোগী মোহাম্মদ ইমন ও নুরে আলমকে নিয়ে মতিঝিলের এজিবি কলোনির বাসা হতে বের হয়ে সেই অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন নুরুল। সন্ধ্যায় এক ব্যক্তি শংকর বাসস্ট্যান্ডে তাদের সঙ্গে দেখা করেন। তারা ওই ব্যক্তির কথামতো একটি অটোরিকশাযোগে জাফরাবাদ পুলপাড় ব্লুমিং চাইল্ড স্কুলের কাছে বিয়ের অনুষ্ঠানের উদ্দেশে রওনা হন। এরপর রাত ৮টার দিকে জাফরাবাদ পুলপাড় ঋষিপাড়া এলাকায় পৌঁছানোমাত্র দুষ্কৃতকারীরা তাদের রিকশার গতিরোধ করে।
ঘটনার আকস্মিকতায় ইমন রিকশা থেকে লাফিয়ে নেমে দৌড়ে পালিয়ে যান। তবে নুরুল ইসলামকে ধরে ফেলেন দুষ্কৃতকারীরা। তারা ধারালো চাপাতি দিয়ে নুরুলের মাথা, ঘাড়, বাহু ও হাতের আঙুলে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে তার কাছে থাকা দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরাসহ ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। আহত নুরুলের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে গেলে দুষ্কৃতকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নূরুল ইসলামের বড় ভাই ওসমান গনি বাদী হয়ে হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
হাজারীবাগ থানা সূত্রে আরও জানা যায়, গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। তারা টিকটকে বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও তৈরি করে পোস্ট করত। উন্নতমানের ও আকর্ষণীয় ছবি ও ভিডিও করার জন্য ডিএসএলআর ক্যামেরা সংগ্রহের পরিকল্পনা করে তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্যামেরা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে তারা।
সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ আগে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী খেলার মাঠে ফুটবল খেলার পর নাঈম আহম্মেদের নেতৃত্বে ক্যামেরা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। তারা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের নাম করে ফটোগ্রাফারদের কাছ থেকে কৌশলে ক্যামেরা ছিনতাইয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার নাঈম শংকর বাসস্ট্যান্ডে নূরুল ইসলাম ও তার সহযোগী ইমনের সঙ্গে দেখা করে।
নাঈম তাদের একটি অটোরিকশাযোগে ব্লুমিং চাইল্ড স্কুলের কাছে বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা বলে নিয়ে যান। এরপর রাত ৮টার দিকে ঋষিপাড়ার ‘ক্ষণিকালয়’ নামক বাসার গেটের সামনে অটোরিকশাটি পৌঁছালে নাঈমসহ শাহীন, শাহীনুল, রহিম, নয়ন, রিদয়, রাজ্জাক, আনোয়ার, শহিদুল ও আরমান অটোরিকশার গতিরোধ করে নূরুল ইসলামের কাছ থেকে ডিএসএলআর ক্যামেরা ও ব্যাগ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। ক্যামেরা না দিতে চাইলে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে নূরুলের শরীরে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন এবং ক্যামেরাসহ ব্যাগ ছিনিয়ে নেন।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
দলের ঢাকা মহানগর শাখার আয়োজনে বুধবার (২১ মে) দুপুর ১২টায় আগারগাঁও এলাকায় এ কর্মসূচি শুরু হয়। তারা বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশনের বিরুদ্ধে এই কর্মসূচি পালন করে।
বক্তব্যে এনসিপি নেতারা অভিযোগ করেন, এই নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে কোনো সংস্কার কার্যক্রম শুরুর আগেই। ফলে কমিশন তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে বলে তারা মন্তব্য করেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির গুলশান থানা শাখার নেতা নুর ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘এই কমিশন ইতোমধ্যে নিরপেক্ষতা হারিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শাসনামলে প্রণীত একটি আইনের ভিত্তিতে এই কমিশন গঠিত হয়েছে। আমরা এই কমিশন চাই না, এটি রকিব কমিশনের মতো।’
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে এনসিপি নেতারা বলেন, জাতীয় নির্বাচনে যাওয়ার আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা যাচাই করা উচিত।
এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আবু আবদুল্লাহ বলেন, ‘অবৈধ উপায়ে গঠিত এ ইসি মেনে নেব না।’
দলটির পল্লবী থানা শাখার প্রতিনিধি রেহানা আক্তার রুমা বলেন, ‘আমরা এখানে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছি। এ ইসির পরিবর্তন চাচ্ছি।’
রমনা থানা শাখার নারী প্রতিনিধি ডা. ইশরাত জাহান বলেন, ‘বড় দলগুলোর ব্যর্থতায় আমরা এনসিপিতে যোগ দিয়েছি। এ ইসিকে ধিক্কার জানাই, একটি বড় দলকে তারা সাপোর্ট করছে।’
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনের মেয়র পদে শপথ পড়ানোর দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির মধ্যে এনসিপি নির্বাচন ভবনের সামনে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করল।
মঙ্গলবার রাতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘অবিলম্বে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।’
মন্তব্য