আলোচিত নানা দুর্নীতির ঘটনা তদন্ত করে প্রশংসা কুড়ানো দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন চৌধুরী বিশ্বাস করতে পারছেন না তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। নিউজবাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, চাকরি থেকে অপসারণের মতো কোনো কাজ তিনি করেননি। তিনি প্রভাবশালীদের রোষানলের শিকার হয়েছেন।
শরীফ দুর্নীতি দমন কমিশনের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে থাকার সময় নানা তদন্ত চালিয়ে আলোচিত হন। তাকে সেখান থেকে বদলি করা হয় পটুয়াখালীতে। বুধবার রাতে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় তাকে।
বৃহস্পতিবার শরীফের আদেশটি গণমাধ্যমে আসার পর তোলপাড় পড়ে যায়। দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই আদেশকে সরকারি চাকরিবিধি, দুদকের চাকরিবিধি ও মানবাধিকার পরিপন্থি আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবিতে সংস্থাটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনও করেন।
পরে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন দাবি করেন, শরীফের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। তিনটি অভিযোগের তদন্ত চলছে। আরও ৭ থেকে ১০টি অভিযোগ রয়েছে। তবে এগুলো প্রকাশ্যে বলবেন না তিনি।
শরীফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাকে যে চাকরি থেকে অপসারণ করা হবে, এটা আমি এক সেকেন্ডের জন্যও আঁচ করতে পারিনি।
‘১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে আমি পটুয়াখালীতে অফিস করছিলাম। ওই সময় আমার এক সহকর্মী জানান, একটি চিঠি এসেছে। বলা হয়, দ্রুত এটি রিসিভ করে ঢাকায় পাঠাতে হবে। তখনই চিঠিটি রিসিভ করে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে চলে আসি।’
শরীফ বলেন, ‘চাকরি থেকে অপসারণের মতো কোনো কাজ আমি করিনি। চট্টগ্রামে সাড়ে তিন বছর কর্মরত ছিলাম। সেখানে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর কিছু মামলা এবং অনুসন্ধান করেছি। এসব করতে গিয়ে একটি প্রভাবশালী মহলের রোষানলে পড়ি।
‘সর্বশেষ ৩০ জানুয়ারি বাসায় এসে হুমকি দেয়। একপর্যায়ে তারা এটাও বলে, এক সপ্তাহের মধ্যে চাকরি খেয়ে নেবে। কাকতালীয় হলেও সত্য, ১৬ দিনের মাথায় আমাকে অপসারিত হতে হলো।’
কোন সে প্রভাবশালী মহল?
এই প্রশ্নের জবাব দিতে চান না শরীফ। বলেন, ‘তারা কারা, সেটি আমি বলব না। কক্সবাজারে তিনটি প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে আমি একটি মামলা করি। যার তদন্ত ও চার্জশিট আমি জমা দিয়েছিলাম। ওই প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একশ্রেণির টাউট-দালাল রয়েছে। এ চক্রটি কক্সবাজারে খুব বিখ্যাত ও প্রভাবশালী। এদের মধ্যে রাজনীতিক নেতা, পুলিশ, অ্যাডমিন ও সাংবাদিক আছে। এখান থেকে সবাই কমিশন পায়।
‘র্যাব ও ডিজিএফআই ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভূমি অফিসের দুজন সার্ভেয়ারের বাসায় অভিযান চালিয়ে সাত বস্তার চেয়ে বেশি আলামত ও প্রায় নগদ ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকা জব্দ করে৷ ওই নথিগুলো যাচাই করে আমি প্রমাণ পেয়েছি, এই টাউট সিন্ডিকেট চক্রটি কক্সবাজার এলএ অফিস নিয়ন্ত্রণ করে।
‘অনুসন্ধানে যাদের নাম এসেছে, তার মধ্যে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। যাদের অনেকেই কোর্টে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। সেখান থেকে যাদের নাম এসেছে তাদের সম্পদ অনুসন্ধানের সুপারিশ করেছি।’
শরীফ জানান, তিনি পটুয়াখালীতে বদলি হওয়ার দিন চট্টগ্রামে রিপোর্ট জমা দেন। বলেন, ‘তখন থেকেই তারা বুঝে গেছে এই মামলা থেকে তারা রেহাই পাবে না। যদিও এর আগে তারা আমার সঙ্গে সমাঝোতার চেষ্টা করে। কিন্তু আমি তাতে রাজি হইনি।’
দুদকের অপসারিত উপপরিচালকের ধারণা, এই চক্রটিই তাকে সরানোর পেছনে লেগেছিল।
কক্সবাজার-বান্দরবানে ভোটার নিবন্ধন ইস্যু
এই প্রকল্প নিয়েও অনুসন্ধান করেছিলেন শরীফ। তার চাকরি থেকে অপসারণের পেছনে এ বিষয়টিও কাজ করে থাকতে পারে বলে ধারণা তার।
তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার ও বান্দরবানে ৩২টি উপজেলাকে ইসি স্পেশালাইজড জোন অফ রোহিঙ্গা করে। এসব উপজেলায় ভোটার নিবন্ধন করার সময় খুব যাচাই-বাছাই করা হয়। এটিকে পুঁজি করে এখানকার পলিটিশিয়ান ও জনপ্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পাইয়ে দিত।
‘আমি দীর্ঘদিন তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করতে গিয়ে সফল হয়েছে। একপর্যায়ে ২০টি মামলা করি। সবগুলোই আমি অনুসন্ধান করে রিপোর্ট দিয়েছি। বেশির ভাগ মামলার বাদীও আমি।
‘চট্টগ্রাম থেকে বদলির পরদিন সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৭ জুন যে মামলা করি, সেখানে নির্বাচন কমিশনের একজন সিনিয়র লেভেলের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অনেকজনকে আসামি করা হয়েছে। কক্সবাজারে ঈদগা উপজেলার আউলিয়াবাদ এলাকা আছে যেখানে ১৭০০-১৮০০ লোককের বাস। যাদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা। এখান থেকে প্রতিনিয়ত মধ্যপ্রাচ্যে প্রচুর লোক যায়। মাদকের সঙ্গে জড়িত যারা মাদক ও সন্ত্রাসী অর্থায়নের সঙ্গেও জড়িত এ চক্রটি। এ বিষটি ধরে ফেলার কারণে যেদিন আমি বদলি হয়েছি, সেদিন এ চক্রটি এবং কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের নেতা আব্বাস ফেসবুকে লেখালেখি করে। তারা আমার বিরুদ্ধে প্রচারণা ও সরিয়ে দেয়ার জন্য ফান্ডিংও করে।’
কর্ণফুলী গ্যাস সংযোগ প্রকল্প
শরীফুল বলেন, ‘কর্ণফুলী গ্যাস সংযোগ ও নিয়ম নিয়ে অনিয়ম দুর্নীতির বিষয় উদ্ঘাটন করে মামলাও করেছি। এক সাবেক এমপিপুত্রও এর সঙ্গে জড়িত ছিল। তারা বাড়ি এমডি আইয়ুব খান চৌধুরীর পাশেই। এই আইয়ুব খান মনে করেছে এ বিষয়গুলো আমি তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করেছি। কারণ তার দুই ছেলে সেখানে চাকরি করে। সে মনে করেছে পটুয়াখালী যাওয়ার পরও আমি তার বিরুদ্ধে লেগে আছি। এ ক্ষোভ থেকে সে গত ৩০ জানুয়ারি আমাকে হুমকি ও চাকরি থেকে সরানোর হুমকি দেয়।’
স্বাস্থ্য খাত বিষয়
শরীফুল বলেন, ‘চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাত নিয়েও আমি দুর্নীতি-অনিয়ম খুঁজে বের করেছি। চট্টগ্রামের বিএমএ নেতারা আমার পেছনে উঠেপড়ে লাগে। কক্সবাজারে ৫০ কোটির বেশি টাকা জব্দ করেছি। সেখানের এক কাউন্সিলর জাভেদ কায়সার মোহাম্মাদ নোবেলের ২৫ কোটি টাকা জব্দ করেছি। এসব চক্র একত্রিত হয় আমাকে সরানোর জন্য।
‘আমি পটুয়াখালীতে বদলি হওয়ার দুই মাস পর ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে কমিশনে আমার বিরুদ্ধে টানা একের পর এক অভিযোগ করা হয়েছে। সবগুলোই কক্সবাজারকেন্দ্রিক। অভিযোগের পর আমাকে যখন কমিশনে ডাকা হয়, তখন তাদের অভিযোগগুলোর ভাষা দেখেই আমি বুঝতাম সব একই চক্রের কাজ। অথচ এর আগে চট্টগ্রামে যখন ছিলাম আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই পড়েনি।’
‘দুদকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, তুলে ধরেছি’
দুদক সচিবের দাবি, সংস্থাটির ভাবমূর্তি রক্ষায় শরীফুলকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
দুদকের কোন ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন- এমন প্রশ্ন ছিল শরীফুলের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি রোহিঙ্গা আইডি পাসপোর্ট নিয়ে ২০টি মামলা করেছি। ৫০ কোটি টাকা জব্দ করেছি। আমি ইমেজ ক্ষুণ্ন করার মতো কোনো কাজ করিনি। বরং বৃদ্ধি করেছি বলে মনে করি।
‘দেশের স্বার্থে দেশপ্রেম নিয়ে কাজ করেছি। আমি মামলা করার সুপারিশ করেছি। আমি খুব কম নথিই নথিভুক্ত করেছি। দুদকের কাজ মামলা করে কোর্টে তদন্ত উপস্থাপন করা। আমি তো শুধু সুপারিশ করেছি, মামলা করার এখতিয়ার তো কমিশনের।’
অভিযানে উদ্ধার টাকা জমা না দেয়া প্রসঙ্গ
দুর্নীতি অভিযানে জব্দ করা টাকা জমা না দেয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, সেটিও খণ্ডন করেছেন শরীফুল। তিনি বলেন, ‘১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ র্যাব টাকাসহ ইনভেন্ট্রি করেনি। কোভিডকালীন মামলা হওয়ার পর এ টাকা আমি এনে অফিসে রেখেছি। এটা আমার উপপরিচালক (ডিডি) জানতেন। জব্দকৃত সব টাকা ও নথি ভল্টে রাখতাম। দুদকের বিধিতে বলা নেই কতদিনের মধ্যে এই টাকা জমা দিতে হবে। যদিও এখন বুঝেছি টাকা জমা দিয়ে দিলে ভালো হতো।
‘কিন্তু আট মাসে ৩০ লাখ টাকার বেশি ইনভেন্ট্রি করতে পারিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলি টাকাটি কীভাবে জমা দেয়া যায়। তারা বলে, যদি চালান না থাকে টাকাগুলো একটি ভল্টে রেখে তাদের দিয়ে দিলে তা জমা নেবে।
‘তখন আমি বললাম, দুই-তিন বছর পর যখন মামলাটার ট্রায়াল শুরু হবে তখন তো এটা নষ্ট হয়ে যাবে। ভেতরে কী আছে কেউ জানবে না। এই সেন্সে যে টাকাটা তো সার্কুলেট করতে হবে মার্কেটে। মার্কেটে সার্কুলেট করলে যখন মামলাটার ট্রায়াল শুরু হবে তখন সমপরিমাণ অর্থ কোর্টে দেবে।
‘পরে কক্সবাজার জেলার স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে আলাপ করছি যে, স্যার এটা কী করা যায়। তখন উনি বললেন যে, ‘আপনি চার্জশিটে দিয়ে দিলে আলামতগুলো প্রডিউস করতে পারেন।’
-আপনি কমিশনকে জানিয়েছিলেন?
‘না, আমার এখানে কমিশন বলতে আমার ডিডি। আমার সুপারভাইজার উনি। টাকা যে আমার কাছে সঞ্চিত ছিল তিনি জানতেন। আমি কক্সবাজার থেকে যখন টাকাটা নিয়ে এসেছি স্যাররা তো আমাকে ডেকে বলেছেনও যে, আসো শরীফ কীভাবে টাকাটা জমা দেয়া যায়? আমি বলেছি স্যার, এভাবে এন্ট্রি করেন। আমি একা, তদন্ত করব, অনুসন্ধান করব, গ্রেপ্তার করব, রিমান্ডে নেব, আমার তো কোনো বডি নেই।
-কেন বডি নেই, আপনাদের অফিসের লোকজন ছিল না?
না, আমাদের কোনো অ্যাসাইন নেই, তদন্ত কর্মকর্তা একা। আমাকে ওরা অফিশিয়ালি সাহায্য করতে বাধ্য। কারণ আমার তো কোনো লোকবল নেই।
সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার আমি বলি, কারণ এখানে তো কর্মকর্তা আরও আছে।
চট্টগ্রাম জেলার দুদকের সমন্বিত কার্যালয়-২ দায়িত্বে থাকাকালীন আমার কাছে ১৩০টা নথি ছিল। চাঞ্চল্যকর নথি, বড় বড় নথি। এসবের কারণে আমি চট্টগ্রামের সাড়ে তিন বছরে ছুটি কাটাতে পারিনি। নথির প্রেশারে আমার হাইপারটেনশন হয়ে গেছে। আমি এখন ১০-১২টা ওষুধ খাই। আমি ঘুমাতে পারিনি। সর্বাবস্থায় যাওয়ার আগে আমি চার্জশিটে উল্লেখ করে গিয়েছিলাম যে, এই টাকাটা আমার কাছে আছে, ভল্টে আছে। আমি যাওয়ার সময়, যখন আমাকে রিলিজ দেয়া হয়েছে, আমি টাকাটা বুঝিয়ে দিয়ে আসছি। আমার তো স্বাক্ষর আছে, আমি তো ডিডি স্যারকে টাকাটা বুঝিয়ে দিয়ে আসছি।
যখন আমি চলে আসছি, তখন কথাবার্তা মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা গত দুয়েক মাস আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে ট্রেজারিতে জমা দিয়েছে।
এই টাকাটা জমা দিতে ওনার সাত-আট মাস লেগেছে। এগুলো ছাড়াও তো আমাদের যে বড় বড় ট্র্যাপ কেইসের টাকাটা- সেগুলো তো এখনও আমাদের অফিসে আছে।
আমি যে টাকাটা একেবারে আত্মসাৎ করে ফেলেছি- ভাই এটা সুযোগ আছে আমার?
আপনার বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে যে আপনি নামে-বেনামে বাড়ি করেছেন বা ফ্ল্যাট নিয়েছেন, আপনার স্ত্রীর নামে, শ্বশুরের নামে?
শ্বশুরের কথা আমি বলব না, কারণ উনি বাংলাদেশের বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা। আমার বিয়ের দুই মাস পরেই উনি মারা গেছেন। আমার শ্বশুরবাড়ির সবাই বড় বড় চাকরি করে, আমার শালা-সম্বন্ধিরা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, গুগলে চাকরি করেন। হিউজ টাকা ওরা উপার্জন করেন। আমার চাকরির পর যদি কোনো সম্পদ নিয়ে থাকি আমার স্ত্রীর নামে, তাহলে আপনারা যাই পাবেন- আমি হেবা করে দেব। বিনা টাকায় আমি হেবা করে দেব।
আমি অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেছি কি না, যদি তদন্ত করে পাওয়া যায়... আমিও আরেকটু বলে রাখি, আমরা চার ভাই। আমি চাকরিতে জয়েন করার আগে ৪৫ হাজার টাকা স্যালারি পেতাম, আমি ভেটেরিনারি ডাক্তার। আমার বাবা মারা গেছেন এই কোভিডকালে। বাবার পেনশনের ২৫ লাখ টাকা থেকে শুরু করে যাবতীয় টাকা সব আমার কাছে আছে। এবং আমরা চার ভাই স্টাবলিশড।
আপনি বাবা মারা যাওয়ার পর আপনার ভাইকে রেলওয়েতে চাকরি পাইয়ে দিতে রেলে হস্তক্ষেপ করেছেন এমন অভিযোগ আছে।
নো, প্রশ্নই ওঠে না। আমার ভাই তো এখনও ওই চাকরি করতে পারেনি। একমাত্র বাংলাদেশ রেলওয়েতে আছে পোষ্য কোটায় নিয়োগ দেয়া। আমার বাবা কর্তব্যরত অবস্থায় মারা গেছেন। এটার তদন্ত কমিটি হয়েছে। কমিটি থেকে তদন্ত রিপোর্ট ঢাকায় যায়। কেউ মারা গেলে তার উপযুক্ত কোনো ছেলে থাকলে চাকরিটা তাকে দেয়া হয়। আর যদি না থাকে তাহলে সে যেই লেভেলের, তাকে ওই লেভেলের একটা চাকরি দেবে।
তো সে (ভাই) মাস্টার্স কমম্প্লিট করছে। তাকে তো আর চতুর্থ শ্রেণির জন্য দেয়া যায় না। তো সে তৃতীয় শ্রেণির জন্য আবেদন করছে। এটা প্রক্রিয়াধীন, ঢাকা থেকে ডিজি মহোদয় অনুমতি দিয়েছেন। এখন তো তার চাকরি হয়নি, কোনো পোষ্য কোটায়ও হয়নি। এখানে আমি কীভাবে ইন্টারফেয়ার করলাম?
আপনি দুদকের কর্মকর্তা হিসেবে কোনো প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছিলেন কি না।
দুদকের কর্মকর্তা হিসেবেও কোনো প্রভাব খাটায়নি। কীভাবে প্রভাব বিস্তার করব? আমি তো বুঝছি না। হ্যাঁ, এটা ঠিক আমি রেলওয়ে পরিবারের সন্তান। আমাকে সবাই চেনেন, কারণ আমি রেলওয়ের তদন্ত অনুসন্ধান করেছি। ৮৬৩ জন খালাসি নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতি- এটা তো যেমন তেমন বিষয় না। ৮৬৩ জন খালাসি নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির মামলা করেছি, সেখানে তো জিএমও আসামি, এজিএমও আসামি, অনেকে আসামি। সেখানে এটা উদ্ধার করেছি আমি।
আমি যদি মামলা করি, তাহলে তো ওরা আমার বিরুদ্ধে লাগবেই। আমি কীভাবে প্রভাব বিস্তার করলাম? আমি তো ওদের পক্ষ নিয়ে আমার ভাইকে সেখানে দিতে পারতাম।
আপনি বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরপত্তাহীনতায় আছেন কি না?
৩০ জানুয়ারি যে হুমকি দেয়া হয়েছিল বাসায় এসে, আসলে এটা নিয়ে আমি জিডি করেছি। সেখানে বেশ কিছু স্লাং ওয়ার্ড ছিল। এরপর হুমকির বিষয়টি আমি মাননীয় কমিশনার স্যারকে জানিয়েছি। তো এরপর ১৬ দিনের মধ্যে তো চাকরি থেকেই রিমুভ হয়ে গেলাম।
রিমুভেলের দিন বিকেলে আমি কিছু বিষয় জেনেছিলেম, আমার তো বন্ধু-বান্ধব রয়েছে, তো এক ধরনের ডিজএভিয়ারেন্সের বিষয় এখানে আছে। ক্ষতি করার বিষয় আছে। আর যেহেতু চাকরি করাকালীন সময়ে হুমকি দিয়েছে সে, চাকরি না থাকলে কী হবে?
আর একটা জিনিস কি, আমি যে মামলাগুলো করেছি বা নথিগুলো দিয়েছি- এগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে তাহলে? আমি তো নেই এখন।
ওদের জন্য একটা সুবিধা আছে। শরীফকে যদি কোনোভাবে অ্যাসল্ট করা যায় বা তার কোনো ক্ষতি করা যায়। এটা তো ওদের সুবিধা। কারণ এটা তো ওদের ইউনিটি। সবকিছুই এখানে হতে পারে।
হুমকি পাওয়ার পর কমিশনকে যেহেতু জানিয়েছেন, কমিশন আপনাকে কোনো ধরনের সাপোর্ট করেছে?
হ্যাঁ, ডিডি স্যার আমাকে ডাকিয়েছিলেন। আমি লিখিত স্টেটমেন্ট দিয়েছি।
হুমকি আপনার বাসায় এসে দেয়া হয়েছিল বলছেন। এর বাইরে অন্য কোনোভাবে অন্য কারও কোনো হুমকি ছিল?
একটাই কথা বলি, স্রোতের প্রতিকূলে গেলে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি আসবেই। এটা ধরে নিয়েই সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করেছি। আসলে এগুলো তো ডকুমেন্টারিয়েল বিষয় না, এটা স্বাভাবিক থাকবে। আমরা তো এই দেশের নাগরিক। আর একটার সঙ্গে আরেকটা যোগসূত্র রয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজারকেন্দ্রিক এটার যোগসূত্র রয়েছে।
আপনি এখন অনেকটা আত্মগোপনে থেকে দিন কাটাচ্ছেন...
আত্মগোপনে ঠিক না, একটু লুকিয়ে আছি আরকি। কারণ ভালো লাগে না। আমি তো আসলে চাকরির বয়স তো আমার খুব কম, মাত্র সাত বছর। তো এই বয়সে আমার জন্য ধাক্কাটা একটু হয়ে গেল আরকি। মানে আমার মনে হয় আমি সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি।
যত যা-ই বলি না কেন, আমি তো দুদকের একজন কর্মীই ছিলাম। আমি তো দুদকের একজন স্টাফ হিসেবে দুদকের ইমেজের বাইরে যাওয়ার কখনও সুযোগ নেই। মাননীয় কমিশনার স্যার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, আমি এটা রিভিও করব। সর্বোপরি কমিশনার স্যারও হয়তো বুঝবেন জিনিসটা।
আপনি কমিশনে রিভিউ আবেদন করবেন নাকি উচ্চ আদালতে যাবেন?
না, আইনত যা যা করা লাগে, আমি তা তা করব। কারণ আমার তো চাকরি করতে হবে। আমি তো সমাজের কাছে একেবারে অপদস্ত হয়ে গেলাম।
সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া বলতে আপনি কী বোঝাতে চাচ্ছেন?
দেখুন, বাংলাদেশের সাংবিধানিক আইনের ১৩৫-এ বলা আছে, প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মচারীকে যদি আপনি চাকরি থেকে বহিষ্কার করতে চান, তাহলে অবশ্যই তাকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দিতে হবে। আমাদের দুদকের ৫৪-২ যে বিধিটা আছে, স্থায়ী কর্মচারীর ক্ষেত্রে একেবারে বাদ দেয়া, আমার মনে হয় বিধিটা এখনও সাব-জুডিশিয়ারি। এই বিধি নিয়ে মাননীয় চেম্বার বিচারপতি আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। তবে আপিল বিভাগ বোধহয় এটা স্টে করছে।
এই বিধির প্রথম শিকার আপনিই?
হ্যাঁ, এটা আমার ক্ষেত্রেই প্রথম।
আপনার চাকরিচ্যুতির পর আপনার সহকর্মীরা আন্দোলনে নেমেছেন, এটা নিয়ে কিছু বলবেন?
আসলে এ বিষয়ে কোনো কথাই বলতে চাচ্ছি না। আমি তো এখন চাকরিতে নেই। তবে সিনিয়র কলিগ এবং স্যাররা আমার প্রতি যে পরিমাণ সহমর্মিতা ও আন্তরিকতা দেখিয়েছেন- এটা আসলে প্রত্যাশা ছিল না। দুদকের কর্মকর্তারা, আমরা যারা আছি, এটা আসলে রাষ্ট্রের একটা সেনসিটিভ প্রতিষ্ঠান। এটা কেন হলো তা আসলে আমি বুঝতে পারিনি। ওনারা ওনাদের জায়গা থেকে করেছেন হয় তো।
পটুয়াখালীতে গিয়ে কী করেছেন?
পটুয়াখালীতে আমি প্রায় আট মাস ছিলাম তো, খুব কম ছুটিই আমাকে দেয়া হতো। ওখানে ফাইলের তেমন কোনো কাজ করতাম না, ফাইল আমাকে দেয়া হতো না।
ঢাকায় সচিব বলেছিলেন আপনাকে অপসারণের আগে কয়েকবার ডাকা হয়েছে, আসলে কয়বার ডাকা হয়েছে?
হ্যাঁ, আমাকে তিনবার ডেকেছিলেন। আমাদের তিনটা ডিপি তো, এই তিনটায় মাননীয় চেয়ারম্যান স্যার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। আমি ওনাকে সন্তুষ্ট করার মতো উত্তর দিয়েছি। আমাদের ডিপার্টমেন্ট প্রসিডিউর যেগুলা, সেগুলো তদন্ত চলতেছে। এখনও তদন্ত চলে, মনে হয় একটা রিপোর্ট দেয়নি। পটুয়াখালীতে যাওয়ার পর পরই ডিপিগুলো হয়েছে, সবগুলো চট্টগ্রাম-২ কেন্দ্রিক।
আপনি এখন অনেকটা নীরবে থাকতে চাচ্ছেন?
হ্যাঁ। কারণ আমি ভেটেরিনারিতে পড়াশোনা করেছি তো, বেসরকারি চাকরি করব। কারণ আমার তো রিজিক লাগবে। রিজিকের মালিক তো আল্লাহ। আর আইনি লড়ায়ও চালিয়ে যাব, আইনি লড়াই চালিয়ে যাব এই জন্যই যে কারণ আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। আমি এটা অবিচারের ফল দেখতে চাই, আমি অন্তত চাকরিতে যোগদান করতে চাই।
আমি একজন ডিএডি, আমি রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করব, আল্লাহ না করুক- আমার তো এর আগে মৃত্যু হওয়া শ্রেয়। আমার মাদার প্রতিষ্ঠানকে যদি বিতর্কিত করি, আমি তো থাকলাম না। কারণ দুদকের ইমেজ ই তো আমার ইমেজ। আর আমি বিতর্কিত করেছি কি না, চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা আর কক্সবাজারের সাংবাদিকরা এটা ভালো বলতে পারবেন।
আরও পড়ুন:২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল আগামী রোববার শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজ জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য আপিলটি ছিলো। কিন্তু এই মামলায় হাইকোর্টের অথর জাজ বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান আজ আপিল বিভাগের বেঞ্চে ছিলেন।
নিয়ম অনুযায়ী হাইকোর্টে রায় দানকারী বিচারপতি একই মামলা আপিল বেঞ্চে শুনানি গ্রহণ করতে পারেন না।
এজন্য আগামী রোববার পুনর্গঠিত বেঞ্চে আপিলটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে। আদালত বিষয়টিতে আজ নট টুডে আদেশ দিয়েছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন। ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সিআইডি এই মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিলে শুরু হয় বিচার।
তবে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই মামলায় অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে।
দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত মামলার রায় দেন।
আলোচিত ওই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি’র সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জল, এনএসআই-এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ।
বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। সে রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামীরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।
এছাড়া, বিচারিক আদালতের রায়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহিদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআই-এর মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপি’র সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডি’র সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই মামলার আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
বিচারিক আদালতে এই রায়ের দেড় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্সসহ মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল শুনানি শুরু হয়। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি চলছিল।
তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন হলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি হয়। শুনানি শেষে গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এই মামলার সব আসামীকে খালাস দিয়ে রায় দেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পটি শুক্রবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে অনুভূত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ডেটা অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের সাগাইংয়ের ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে।
এ ভূমিকম্পে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত বৃহত্তম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সাহায্য কমে যাওয়ার ফলে সংকট আরও গভীর হওয়ার উদ্বেগের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন (সাত কোটি ৩০ লাখ) ডলার নতুন আর্থিক সহায়তা দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক্সে একটি পোস্টে বলেন, ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিওইএফ) মাধ্যমে এ খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা ১০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করবে।
‘এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা এ ধরনের জীবন রক্ষাকারী সহায়তার মাধ্যমে বোঝা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত।’
সিনহুয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডার অংশ হিসেবে বিদেশি সহায়তায় ব্যাপক কাটছাঁট এবং ফেডারেল ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কিছু অংশ ভেঙে ফেলার বিস্তৃত প্রচেষ্টার মধ্যেই এ অনুদান দেওয়া হলো।
জাতিসংঘের দুটি সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছিল যে, তহবিলের ঘাটতি গত আট বছর ধরে প্রতিবেশী মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য রেশনের পরিমাণ কমিয়ে দেবে।
রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন, তহবিল হ্রাসের ফলে ক্ষুধা পরিস্থিতির অবনতি হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা এবং জ্বালানি হ্রাস পাবে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় সহায়তা প্রদানকারী দেশ ছিল। প্রায় ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে আসছে দেশটি। কিন্তু জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর সাম্প্রতিক তহবিল স্থগিত করার ফলে কমপক্ষে পাঁচটি হাসপাতাল তাদের সেবা কমিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে।
ট্রাম্প ও বিলিয়নেয়ার মিত্র ইলন মাস্ক প্রধান মার্কিন বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি বন্ধ করে দিয়েছেন এবং এর অবশিষ্টাংশগুলোকে পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে একীভূত করেছেন। শত শত কর্মী এবং ঠিকাদারকে বরখাস্ত করেছেন এবং কোটি কোটি ডলারের পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছেন, যার ওপর বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ নির্ভরশীল।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফেব্রুয়ারিতে সমস্ত জীবন রক্ষাকারী সহায়তা এবং এ ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় যুক্তিসঙ্গত প্রশাসনিক খরচ মওকুফ করেছিলেন।
ওয়াশিংটন টাইমস জানায়, এ মাসের শুরুতে ইউএসএআইডি ভেঙে দেওয়ার তত্ত্বাবধানকারী ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যায়ক্রমে সাহায্য বন্ধের প্রস্তাব করেছিলেন।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা হ্রাস করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে।
কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন শিবিরের বাসিন্দারা এখন জনপ্রতি মাসিক ১২ ডলার করে খাদ্য বরাদ্দ পাবেন, যা আগের ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কম।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ডব্লিউএফপি একটি চিঠিতে এই সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানিয়েছে, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।’
তিনি আরও বলেন, ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ১৩ ডলার করে পাবে, যা কক্সবাজারের তুলনায় এক ডলার বেশি।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমানোর পরিকল্পনা ডব্লিউএফপি পূর্বে জানানোর পর এ পরিবর্তন এসেছে।
গত ৫ মার্চ বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশন ডব্লিউএফপি থেকে একটি চিঠি পায়, যেখানে বলা হয়, তহবিল সংকটের কারণে এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাদ্য বরাদ্দ জনপ্রতি ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলার করা হবে।
চিঠিতে শরণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন।
তার সফরের সময় তাকে ছয় ডলারে রোহিঙ্গারা কী খাবার পাবে তার বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছিল। সে সময় অপর্যাপ্ত পরিমাণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার আন্তরিক ও একমত বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাদিসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক ও একমত। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড মনিটর করা হচ্ছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক দাবির নামে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি, অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ, নৈরাজ্য ও সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং তা কখনোই মেনে নেয়া হবে না।
‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সরকার তা কঠোরভাবে প্রতিহত করবে। গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানায় সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সরকার এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ উভয়ের সহযোগিতা কামনা করছে।’
আরও পড়ুন:পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আন্তসীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় কার্যকর আঞ্চলিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের বায়ুদূষণের ৩০-৩৫ শতাংশ আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। তাই এ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক আলোচনার গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব পদক্ষেপ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জরুরি।
তিনি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর কাঠমান্ডু রোডম্যাপ ও অন্যান্য সমঝোতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এগুলো যথেষ্ট নয়, আরও জোরালো উদ্যোগ প্রয়োজন।
কলম্বিয়ার কার্টাগেনায় অনুষ্ঠিত ডব্লিউএইচওর দ্বিতীয় বৈশ্বিক সম্মেলনের বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া সাইড ইভেন্টে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ঢাকাস্থ বাসভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে তিনি বাংলাদেশের বায়ুদূষণ সমস্যা, বিশেষ করে ঢাকার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন।
উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের বহুমাত্রিক বায়ুদূষণ সমস্যা মোকাবিলায় বায়ুমান নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা ডব্লিউএইচওর অন্তর্বর্তীকালীন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ আইনি বিধিমালায় দূষণকারী খাতগুলোর জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
তিনি জানান, ২০২৪ সালে চূড়ান্ত হওয়া জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পিছিয়ে ছিল, তবে এখন তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো মানুষের দূষণজনিত ঝুঁকি কমানো ও পরিষ্কার বায়ুর দিন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে শিগগিরই বাস্তবায়ন শুরু হবে। এ প্রকল্প নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করা, আইন প্রয়োগ জোরদার করা, শিল্প কারখানায় দূষণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং গণপরিবহন খাত আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দেবে।
তিনি ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলোকে ইটভাটামুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনার কথা জানান, যেখানে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকবে।
এ ছাড়া ২০২৫ সালের মে থেকে পুরনো বাস ধাপে ধাপে তুলে দেওয়া হবে, যা পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ ধুলাবালি দূষণ রোধে ঢাকা শহরের খোলা সড়কগুলোতে সবুজায়নের উদ্যোগ এবং রাস্তা পরিস্কারে আরও শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানান।
উপদেষ্টা জানান, অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের ফলে এরই মধ্যে বায়ুমানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এ অগ্রগতি ধরে রাখতে কঠোর নজরদারি ও খাতগুলোর আধুনিকায়ন জরুরি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায় এবং ঢাকার মতো দূষিত শহরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৫-৭ বছর কমে যাচ্ছে। এই সংকট আমাদের সবার জন্য, আমাদের শিশু, বাবা-মা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি। নিষ্ক্রিয়তার মূল্য অনেক বেশি। আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী। কারণ আমি বিশ্বাস করি, এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রযুক্তি ও বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের হাতে রয়েছে, শুধু প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন দরকার।
‘বায়ুদূষণ শুধুই পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি মানবিক সংকট।’
সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি, পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, গবেষক, স্থানীয় প্রশাসন, পরিবহন ও শিল্প খাতের বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তারা দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ রোধে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
আরও পড়ুন:পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর বৃহস্পতিবার। এর অর্থ ‘অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত’ বা ‘পবিত্র রজনী’।
আজ সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে কদরের রজনী।
যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সারা দেশে রাতটি পালন করা হবে।
মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম।
এ রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষণ করা হয়। নির্ধারণ করা হয় মানবজাতির ভাগ্য।
৬১০ সালে কদরের রাতেই মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) কাছে সর্বপ্রথম সুরা আলাকের পাঁচ আয়াত নাজিল হয়। এরপর আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর বহনকৃত ওহির মাধ্যমে পরবর্তী ২৩ বছর ধরে মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে বিভিন্ন সুরা নাজিল করা হয়।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে।
‘শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরা আল- কদর, আয়াত ১-৫)।’
হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে লাইলাতুল কদর সন্ধান করো (বুখারি ও মুসলিম)।’
মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় পবিত্র রাতটি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে দেন। কামনা করেন মহান রবের অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফিরাত।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ রাত থেকে পরের দিন ভোররাত পর্যন্ত মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত করবেন তারা।
এই উপলক্ষে শুক্রবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে রাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের সব মসজিদেই তারাবির নামাজের পর থেকে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন থাকবে।
পবিত্র লাইলাতুল কদর/শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।
এ ছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে।
এশীয় দেশগুলোকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও যৌথ সমৃদ্ধির জন্য সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
চীনের হাইনানে বৃহস্পতিবার বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পরিবর্তনশীল এ বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে যা অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং যৌথ সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।’
আর্থিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোর এ প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন নির্ভরযোগ্য তহবিল দরকার যা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে।’
বাণিজ্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এশিয়া এখনও বিশ্বের অন্যতম কম সংযুক্ত অঞ্চল।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এ দুর্বল সংযুক্তি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবশ্যই বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।’
খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এশীয় দেশগুলোকে অবশ্যই সম্পদ-সাশ্রয়ী কৃষিকে উৎসাহিত এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। টেকসই প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি সমাধান ও জলবায়ুবান্ধব চাষাবাদের ক্ষেত্রে উদ্ভাবন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, যা পুনর্গঠনমূলক, সমবণ্টনমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।
তিনি বলেন,‘আমাদের জ্ঞান, তথ্য ভাগ করে নিতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানে সহযোগিতা আমাদের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিশেষে বলব আমাদের সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে মেধা সম্পদ ও যুবশক্তিকে রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে—একটি আত্মরক্ষা ও আত্মস্থায়ী সমাজ। আমাদের শূন্য-বর্জ্যের জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে একটি পাল্টা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। ভোগ সীমিত রাখতে হবে মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে।
‘আমাদের অর্থনীতিকে সামাজিক ব্যবসার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে হবে, যা ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক কাঠামো হিসেবে উদ্ভাসিত হবে, যেখানে উদ্ভাবন, লক্ষ্য ও দায়িত্ববোধ একীভূত থাকবে।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, বোয়াও ফোরাম ও অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগগুলোকে যুবসমাজ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে হবে, যেন আগামী প্রজন্মের জন্য এশিয়াকে আরও উন্নত করা যায়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য