আলোচিত নানা দুর্নীতির ঘটনা তদন্ত করে প্রশংসা কুড়ানো দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন চৌধুরী বিশ্বাস করতে পারছেন না তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। নিউজবাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, চাকরি থেকে অপসারণের মতো কোনো কাজ তিনি করেননি। তিনি প্রভাবশালীদের রোষানলের শিকার হয়েছেন।
শরীফ দুর্নীতি দমন কমিশনের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে থাকার সময় নানা তদন্ত চালিয়ে আলোচিত হন। তাকে সেখান থেকে বদলি করা হয় পটুয়াখালীতে। বুধবার রাতে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় তাকে।
বৃহস্পতিবার শরীফের আদেশটি গণমাধ্যমে আসার পর তোলপাড় পড়ে যায়। দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই আদেশকে সরকারি চাকরিবিধি, দুদকের চাকরিবিধি ও মানবাধিকার পরিপন্থি আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবিতে সংস্থাটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনও করেন।
পরে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন দাবি করেন, শরীফের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। তিনটি অভিযোগের তদন্ত চলছে। আরও ৭ থেকে ১০টি অভিযোগ রয়েছে। তবে এগুলো প্রকাশ্যে বলবেন না তিনি।
শরীফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাকে যে চাকরি থেকে অপসারণ করা হবে, এটা আমি এক সেকেন্ডের জন্যও আঁচ করতে পারিনি।
‘১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে আমি পটুয়াখালীতে অফিস করছিলাম। ওই সময় আমার এক সহকর্মী জানান, একটি চিঠি এসেছে। বলা হয়, দ্রুত এটি রিসিভ করে ঢাকায় পাঠাতে হবে। তখনই চিঠিটি রিসিভ করে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে চলে আসি।’
শরীফ বলেন, ‘চাকরি থেকে অপসারণের মতো কোনো কাজ আমি করিনি। চট্টগ্রামে সাড়ে তিন বছর কর্মরত ছিলাম। সেখানে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর কিছু মামলা এবং অনুসন্ধান করেছি। এসব করতে গিয়ে একটি প্রভাবশালী মহলের রোষানলে পড়ি।
‘সর্বশেষ ৩০ জানুয়ারি বাসায় এসে হুমকি দেয়। একপর্যায়ে তারা এটাও বলে, এক সপ্তাহের মধ্যে চাকরি খেয়ে নেবে। কাকতালীয় হলেও সত্য, ১৬ দিনের মাথায় আমাকে অপসারিত হতে হলো।’
কোন সে প্রভাবশালী মহল?
এই প্রশ্নের জবাব দিতে চান না শরীফ। বলেন, ‘তারা কারা, সেটি আমি বলব না। কক্সবাজারে তিনটি প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে আমি একটি মামলা করি। যার তদন্ত ও চার্জশিট আমি জমা দিয়েছিলাম। ওই প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একশ্রেণির টাউট-দালাল রয়েছে। এ চক্রটি কক্সবাজারে খুব বিখ্যাত ও প্রভাবশালী। এদের মধ্যে রাজনীতিক নেতা, পুলিশ, অ্যাডমিন ও সাংবাদিক আছে। এখান থেকে সবাই কমিশন পায়।
‘র্যাব ও ডিজিএফআই ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভূমি অফিসের দুজন সার্ভেয়ারের বাসায় অভিযান চালিয়ে সাত বস্তার চেয়ে বেশি আলামত ও প্রায় নগদ ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকা জব্দ করে৷ ওই নথিগুলো যাচাই করে আমি প্রমাণ পেয়েছি, এই টাউট সিন্ডিকেট চক্রটি কক্সবাজার এলএ অফিস নিয়ন্ত্রণ করে।
‘অনুসন্ধানে যাদের নাম এসেছে, তার মধ্যে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। যাদের অনেকেই কোর্টে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। সেখান থেকে যাদের নাম এসেছে তাদের সম্পদ অনুসন্ধানের সুপারিশ করেছি।’
শরীফ জানান, তিনি পটুয়াখালীতে বদলি হওয়ার দিন চট্টগ্রামে রিপোর্ট জমা দেন। বলেন, ‘তখন থেকেই তারা বুঝে গেছে এই মামলা থেকে তারা রেহাই পাবে না। যদিও এর আগে তারা আমার সঙ্গে সমাঝোতার চেষ্টা করে। কিন্তু আমি তাতে রাজি হইনি।’
দুদকের অপসারিত উপপরিচালকের ধারণা, এই চক্রটিই তাকে সরানোর পেছনে লেগেছিল।
কক্সবাজার-বান্দরবানে ভোটার নিবন্ধন ইস্যু
এই প্রকল্প নিয়েও অনুসন্ধান করেছিলেন শরীফ। তার চাকরি থেকে অপসারণের পেছনে এ বিষয়টিও কাজ করে থাকতে পারে বলে ধারণা তার।
তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার ও বান্দরবানে ৩২টি উপজেলাকে ইসি স্পেশালাইজড জোন অফ রোহিঙ্গা করে। এসব উপজেলায় ভোটার নিবন্ধন করার সময় খুব যাচাই-বাছাই করা হয়। এটিকে পুঁজি করে এখানকার পলিটিশিয়ান ও জনপ্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পাইয়ে দিত।
‘আমি দীর্ঘদিন তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করতে গিয়ে সফল হয়েছে। একপর্যায়ে ২০টি মামলা করি। সবগুলোই আমি অনুসন্ধান করে রিপোর্ট দিয়েছি। বেশির ভাগ মামলার বাদীও আমি।
‘চট্টগ্রাম থেকে বদলির পরদিন সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৭ জুন যে মামলা করি, সেখানে নির্বাচন কমিশনের একজন সিনিয়র লেভেলের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অনেকজনকে আসামি করা হয়েছে। কক্সবাজারে ঈদগা উপজেলার আউলিয়াবাদ এলাকা আছে যেখানে ১৭০০-১৮০০ লোককের বাস। যাদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা। এখান থেকে প্রতিনিয়ত মধ্যপ্রাচ্যে প্রচুর লোক যায়। মাদকের সঙ্গে জড়িত যারা মাদক ও সন্ত্রাসী অর্থায়নের সঙ্গেও জড়িত এ চক্রটি। এ বিষটি ধরে ফেলার কারণে যেদিন আমি বদলি হয়েছি, সেদিন এ চক্রটি এবং কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের নেতা আব্বাস ফেসবুকে লেখালেখি করে। তারা আমার বিরুদ্ধে প্রচারণা ও সরিয়ে দেয়ার জন্য ফান্ডিংও করে।’
কর্ণফুলী গ্যাস সংযোগ প্রকল্প
শরীফুল বলেন, ‘কর্ণফুলী গ্যাস সংযোগ ও নিয়ম নিয়ে অনিয়ম দুর্নীতির বিষয় উদ্ঘাটন করে মামলাও করেছি। এক সাবেক এমপিপুত্রও এর সঙ্গে জড়িত ছিল। তারা বাড়ি এমডি আইয়ুব খান চৌধুরীর পাশেই। এই আইয়ুব খান মনে করেছে এ বিষয়গুলো আমি তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করেছি। কারণ তার দুই ছেলে সেখানে চাকরি করে। সে মনে করেছে পটুয়াখালী যাওয়ার পরও আমি তার বিরুদ্ধে লেগে আছি। এ ক্ষোভ থেকে সে গত ৩০ জানুয়ারি আমাকে হুমকি ও চাকরি থেকে সরানোর হুমকি দেয়।’
স্বাস্থ্য খাত বিষয়
শরীফুল বলেন, ‘চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাত নিয়েও আমি দুর্নীতি-অনিয়ম খুঁজে বের করেছি। চট্টগ্রামের বিএমএ নেতারা আমার পেছনে উঠেপড়ে লাগে। কক্সবাজারে ৫০ কোটির বেশি টাকা জব্দ করেছি। সেখানের এক কাউন্সিলর জাভেদ কায়সার মোহাম্মাদ নোবেলের ২৫ কোটি টাকা জব্দ করেছি। এসব চক্র একত্রিত হয় আমাকে সরানোর জন্য।
‘আমি পটুয়াখালীতে বদলি হওয়ার দুই মাস পর ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে কমিশনে আমার বিরুদ্ধে টানা একের পর এক অভিযোগ করা হয়েছে। সবগুলোই কক্সবাজারকেন্দ্রিক। অভিযোগের পর আমাকে যখন কমিশনে ডাকা হয়, তখন তাদের অভিযোগগুলোর ভাষা দেখেই আমি বুঝতাম সব একই চক্রের কাজ। অথচ এর আগে চট্টগ্রামে যখন ছিলাম আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই পড়েনি।’
‘দুদকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, তুলে ধরেছি’
দুদক সচিবের দাবি, সংস্থাটির ভাবমূর্তি রক্ষায় শরীফুলকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
দুদকের কোন ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন- এমন প্রশ্ন ছিল শরীফুলের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি রোহিঙ্গা আইডি পাসপোর্ট নিয়ে ২০টি মামলা করেছি। ৫০ কোটি টাকা জব্দ করেছি। আমি ইমেজ ক্ষুণ্ন করার মতো কোনো কাজ করিনি। বরং বৃদ্ধি করেছি বলে মনে করি।
‘দেশের স্বার্থে দেশপ্রেম নিয়ে কাজ করেছি। আমি মামলা করার সুপারিশ করেছি। আমি খুব কম নথিই নথিভুক্ত করেছি। দুদকের কাজ মামলা করে কোর্টে তদন্ত উপস্থাপন করা। আমি তো শুধু সুপারিশ করেছি, মামলা করার এখতিয়ার তো কমিশনের।’
অভিযানে উদ্ধার টাকা জমা না দেয়া প্রসঙ্গ
দুর্নীতি অভিযানে জব্দ করা টাকা জমা না দেয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, সেটিও খণ্ডন করেছেন শরীফুল। তিনি বলেন, ‘১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ র্যাব টাকাসহ ইনভেন্ট্রি করেনি। কোভিডকালীন মামলা হওয়ার পর এ টাকা আমি এনে অফিসে রেখেছি। এটা আমার উপপরিচালক (ডিডি) জানতেন। জব্দকৃত সব টাকা ও নথি ভল্টে রাখতাম। দুদকের বিধিতে বলা নেই কতদিনের মধ্যে এই টাকা জমা দিতে হবে। যদিও এখন বুঝেছি টাকা জমা দিয়ে দিলে ভালো হতো।
‘কিন্তু আট মাসে ৩০ লাখ টাকার বেশি ইনভেন্ট্রি করতে পারিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলি টাকাটি কীভাবে জমা দেয়া যায়। তারা বলে, যদি চালান না থাকে টাকাগুলো একটি ভল্টে রেখে তাদের দিয়ে দিলে তা জমা নেবে।
‘তখন আমি বললাম, দুই-তিন বছর পর যখন মামলাটার ট্রায়াল শুরু হবে তখন তো এটা নষ্ট হয়ে যাবে। ভেতরে কী আছে কেউ জানবে না। এই সেন্সে যে টাকাটা তো সার্কুলেট করতে হবে মার্কেটে। মার্কেটে সার্কুলেট করলে যখন মামলাটার ট্রায়াল শুরু হবে তখন সমপরিমাণ অর্থ কোর্টে দেবে।
‘পরে কক্সবাজার জেলার স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে আলাপ করছি যে, স্যার এটা কী করা যায়। তখন উনি বললেন যে, ‘আপনি চার্জশিটে দিয়ে দিলে আলামতগুলো প্রডিউস করতে পারেন।’
-আপনি কমিশনকে জানিয়েছিলেন?
‘না, আমার এখানে কমিশন বলতে আমার ডিডি। আমার সুপারভাইজার উনি। টাকা যে আমার কাছে সঞ্চিত ছিল তিনি জানতেন। আমি কক্সবাজার থেকে যখন টাকাটা নিয়ে এসেছি স্যাররা তো আমাকে ডেকে বলেছেনও যে, আসো শরীফ কীভাবে টাকাটা জমা দেয়া যায়? আমি বলেছি স্যার, এভাবে এন্ট্রি করেন। আমি একা, তদন্ত করব, অনুসন্ধান করব, গ্রেপ্তার করব, রিমান্ডে নেব, আমার তো কোনো বডি নেই।
-কেন বডি নেই, আপনাদের অফিসের লোকজন ছিল না?
না, আমাদের কোনো অ্যাসাইন নেই, তদন্ত কর্মকর্তা একা। আমাকে ওরা অফিশিয়ালি সাহায্য করতে বাধ্য। কারণ আমার তো কোনো লোকবল নেই।
সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার আমি বলি, কারণ এখানে তো কর্মকর্তা আরও আছে।
চট্টগ্রাম জেলার দুদকের সমন্বিত কার্যালয়-২ দায়িত্বে থাকাকালীন আমার কাছে ১৩০টা নথি ছিল। চাঞ্চল্যকর নথি, বড় বড় নথি। এসবের কারণে আমি চট্টগ্রামের সাড়ে তিন বছরে ছুটি কাটাতে পারিনি। নথির প্রেশারে আমার হাইপারটেনশন হয়ে গেছে। আমি এখন ১০-১২টা ওষুধ খাই। আমি ঘুমাতে পারিনি। সর্বাবস্থায় যাওয়ার আগে আমি চার্জশিটে উল্লেখ করে গিয়েছিলাম যে, এই টাকাটা আমার কাছে আছে, ভল্টে আছে। আমি যাওয়ার সময়, যখন আমাকে রিলিজ দেয়া হয়েছে, আমি টাকাটা বুঝিয়ে দিয়ে আসছি। আমার তো স্বাক্ষর আছে, আমি তো ডিডি স্যারকে টাকাটা বুঝিয়ে দিয়ে আসছি।
যখন আমি চলে আসছি, তখন কথাবার্তা মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা গত দুয়েক মাস আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে ট্রেজারিতে জমা দিয়েছে।
এই টাকাটা জমা দিতে ওনার সাত-আট মাস লেগেছে। এগুলো ছাড়াও তো আমাদের যে বড় বড় ট্র্যাপ কেইসের টাকাটা- সেগুলো তো এখনও আমাদের অফিসে আছে।
আমি যে টাকাটা একেবারে আত্মসাৎ করে ফেলেছি- ভাই এটা সুযোগ আছে আমার?
আপনার বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে যে আপনি নামে-বেনামে বাড়ি করেছেন বা ফ্ল্যাট নিয়েছেন, আপনার স্ত্রীর নামে, শ্বশুরের নামে?
শ্বশুরের কথা আমি বলব না, কারণ উনি বাংলাদেশের বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা। আমার বিয়ের দুই মাস পরেই উনি মারা গেছেন। আমার শ্বশুরবাড়ির সবাই বড় বড় চাকরি করে, আমার শালা-সম্বন্ধিরা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, গুগলে চাকরি করেন। হিউজ টাকা ওরা উপার্জন করেন। আমার চাকরির পর যদি কোনো সম্পদ নিয়ে থাকি আমার স্ত্রীর নামে, তাহলে আপনারা যাই পাবেন- আমি হেবা করে দেব। বিনা টাকায় আমি হেবা করে দেব।
আমি অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেছি কি না, যদি তদন্ত করে পাওয়া যায়... আমিও আরেকটু বলে রাখি, আমরা চার ভাই। আমি চাকরিতে জয়েন করার আগে ৪৫ হাজার টাকা স্যালারি পেতাম, আমি ভেটেরিনারি ডাক্তার। আমার বাবা মারা গেছেন এই কোভিডকালে। বাবার পেনশনের ২৫ লাখ টাকা থেকে শুরু করে যাবতীয় টাকা সব আমার কাছে আছে। এবং আমরা চার ভাই স্টাবলিশড।
আপনি বাবা মারা যাওয়ার পর আপনার ভাইকে রেলওয়েতে চাকরি পাইয়ে দিতে রেলে হস্তক্ষেপ করেছেন এমন অভিযোগ আছে।
নো, প্রশ্নই ওঠে না। আমার ভাই তো এখনও ওই চাকরি করতে পারেনি। একমাত্র বাংলাদেশ রেলওয়েতে আছে পোষ্য কোটায় নিয়োগ দেয়া। আমার বাবা কর্তব্যরত অবস্থায় মারা গেছেন। এটার তদন্ত কমিটি হয়েছে। কমিটি থেকে তদন্ত রিপোর্ট ঢাকায় যায়। কেউ মারা গেলে তার উপযুক্ত কোনো ছেলে থাকলে চাকরিটা তাকে দেয়া হয়। আর যদি না থাকে তাহলে সে যেই লেভেলের, তাকে ওই লেভেলের একটা চাকরি দেবে।
তো সে (ভাই) মাস্টার্স কমম্প্লিট করছে। তাকে তো আর চতুর্থ শ্রেণির জন্য দেয়া যায় না। তো সে তৃতীয় শ্রেণির জন্য আবেদন করছে। এটা প্রক্রিয়াধীন, ঢাকা থেকে ডিজি মহোদয় অনুমতি দিয়েছেন। এখন তো তার চাকরি হয়নি, কোনো পোষ্য কোটায়ও হয়নি। এখানে আমি কীভাবে ইন্টারফেয়ার করলাম?
আপনি দুদকের কর্মকর্তা হিসেবে কোনো প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছিলেন কি না।
দুদকের কর্মকর্তা হিসেবেও কোনো প্রভাব খাটায়নি। কীভাবে প্রভাব বিস্তার করব? আমি তো বুঝছি না। হ্যাঁ, এটা ঠিক আমি রেলওয়ে পরিবারের সন্তান। আমাকে সবাই চেনেন, কারণ আমি রেলওয়ের তদন্ত অনুসন্ধান করেছি। ৮৬৩ জন খালাসি নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতি- এটা তো যেমন তেমন বিষয় না। ৮৬৩ জন খালাসি নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির মামলা করেছি, সেখানে তো জিএমও আসামি, এজিএমও আসামি, অনেকে আসামি। সেখানে এটা উদ্ধার করেছি আমি।
আমি যদি মামলা করি, তাহলে তো ওরা আমার বিরুদ্ধে লাগবেই। আমি কীভাবে প্রভাব বিস্তার করলাম? আমি তো ওদের পক্ষ নিয়ে আমার ভাইকে সেখানে দিতে পারতাম।
আপনি বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরপত্তাহীনতায় আছেন কি না?
৩০ জানুয়ারি যে হুমকি দেয়া হয়েছিল বাসায় এসে, আসলে এটা নিয়ে আমি জিডি করেছি। সেখানে বেশ কিছু স্লাং ওয়ার্ড ছিল। এরপর হুমকির বিষয়টি আমি মাননীয় কমিশনার স্যারকে জানিয়েছি। তো এরপর ১৬ দিনের মধ্যে তো চাকরি থেকেই রিমুভ হয়ে গেলাম।
রিমুভেলের দিন বিকেলে আমি কিছু বিষয় জেনেছিলেম, আমার তো বন্ধু-বান্ধব রয়েছে, তো এক ধরনের ডিজএভিয়ারেন্সের বিষয় এখানে আছে। ক্ষতি করার বিষয় আছে। আর যেহেতু চাকরি করাকালীন সময়ে হুমকি দিয়েছে সে, চাকরি না থাকলে কী হবে?
আর একটা জিনিস কি, আমি যে মামলাগুলো করেছি বা নথিগুলো দিয়েছি- এগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে তাহলে? আমি তো নেই এখন।
ওদের জন্য একটা সুবিধা আছে। শরীফকে যদি কোনোভাবে অ্যাসল্ট করা যায় বা তার কোনো ক্ষতি করা যায়। এটা তো ওদের সুবিধা। কারণ এটা তো ওদের ইউনিটি। সবকিছুই এখানে হতে পারে।
হুমকি পাওয়ার পর কমিশনকে যেহেতু জানিয়েছেন, কমিশন আপনাকে কোনো ধরনের সাপোর্ট করেছে?
হ্যাঁ, ডিডি স্যার আমাকে ডাকিয়েছিলেন। আমি লিখিত স্টেটমেন্ট দিয়েছি।
হুমকি আপনার বাসায় এসে দেয়া হয়েছিল বলছেন। এর বাইরে অন্য কোনোভাবে অন্য কারও কোনো হুমকি ছিল?
একটাই কথা বলি, স্রোতের প্রতিকূলে গেলে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি আসবেই। এটা ধরে নিয়েই সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করেছি। আসলে এগুলো তো ডকুমেন্টারিয়েল বিষয় না, এটা স্বাভাবিক থাকবে। আমরা তো এই দেশের নাগরিক। আর একটার সঙ্গে আরেকটা যোগসূত্র রয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজারকেন্দ্রিক এটার যোগসূত্র রয়েছে।
আপনি এখন অনেকটা আত্মগোপনে থেকে দিন কাটাচ্ছেন...
আত্মগোপনে ঠিক না, একটু লুকিয়ে আছি আরকি। কারণ ভালো লাগে না। আমি তো আসলে চাকরির বয়স তো আমার খুব কম, মাত্র সাত বছর। তো এই বয়সে আমার জন্য ধাক্কাটা একটু হয়ে গেল আরকি। মানে আমার মনে হয় আমি সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি।
যত যা-ই বলি না কেন, আমি তো দুদকের একজন কর্মীই ছিলাম। আমি তো দুদকের একজন স্টাফ হিসেবে দুদকের ইমেজের বাইরে যাওয়ার কখনও সুযোগ নেই। মাননীয় কমিশনার স্যার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, আমি এটা রিভিও করব। সর্বোপরি কমিশনার স্যারও হয়তো বুঝবেন জিনিসটা।
আপনি কমিশনে রিভিউ আবেদন করবেন নাকি উচ্চ আদালতে যাবেন?
না, আইনত যা যা করা লাগে, আমি তা তা করব। কারণ আমার তো চাকরি করতে হবে। আমি তো সমাজের কাছে একেবারে অপদস্ত হয়ে গেলাম।
সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া বলতে আপনি কী বোঝাতে চাচ্ছেন?
দেখুন, বাংলাদেশের সাংবিধানিক আইনের ১৩৫-এ বলা আছে, প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মচারীকে যদি আপনি চাকরি থেকে বহিষ্কার করতে চান, তাহলে অবশ্যই তাকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দিতে হবে। আমাদের দুদকের ৫৪-২ যে বিধিটা আছে, স্থায়ী কর্মচারীর ক্ষেত্রে একেবারে বাদ দেয়া, আমার মনে হয় বিধিটা এখনও সাব-জুডিশিয়ারি। এই বিধি নিয়ে মাননীয় চেম্বার বিচারপতি আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। তবে আপিল বিভাগ বোধহয় এটা স্টে করছে।
এই বিধির প্রথম শিকার আপনিই?
হ্যাঁ, এটা আমার ক্ষেত্রেই প্রথম।
আপনার চাকরিচ্যুতির পর আপনার সহকর্মীরা আন্দোলনে নেমেছেন, এটা নিয়ে কিছু বলবেন?
আসলে এ বিষয়ে কোনো কথাই বলতে চাচ্ছি না। আমি তো এখন চাকরিতে নেই। তবে সিনিয়র কলিগ এবং স্যাররা আমার প্রতি যে পরিমাণ সহমর্মিতা ও আন্তরিকতা দেখিয়েছেন- এটা আসলে প্রত্যাশা ছিল না। দুদকের কর্মকর্তারা, আমরা যারা আছি, এটা আসলে রাষ্ট্রের একটা সেনসিটিভ প্রতিষ্ঠান। এটা কেন হলো তা আসলে আমি বুঝতে পারিনি। ওনারা ওনাদের জায়গা থেকে করেছেন হয় তো।
পটুয়াখালীতে গিয়ে কী করেছেন?
পটুয়াখালীতে আমি প্রায় আট মাস ছিলাম তো, খুব কম ছুটিই আমাকে দেয়া হতো। ওখানে ফাইলের তেমন কোনো কাজ করতাম না, ফাইল আমাকে দেয়া হতো না।
ঢাকায় সচিব বলেছিলেন আপনাকে অপসারণের আগে কয়েকবার ডাকা হয়েছে, আসলে কয়বার ডাকা হয়েছে?
হ্যাঁ, আমাকে তিনবার ডেকেছিলেন। আমাদের তিনটা ডিপি তো, এই তিনটায় মাননীয় চেয়ারম্যান স্যার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। আমি ওনাকে সন্তুষ্ট করার মতো উত্তর দিয়েছি। আমাদের ডিপার্টমেন্ট প্রসিডিউর যেগুলা, সেগুলো তদন্ত চলতেছে। এখনও তদন্ত চলে, মনে হয় একটা রিপোর্ট দেয়নি। পটুয়াখালীতে যাওয়ার পর পরই ডিপিগুলো হয়েছে, সবগুলো চট্টগ্রাম-২ কেন্দ্রিক।
আপনি এখন অনেকটা নীরবে থাকতে চাচ্ছেন?
হ্যাঁ। কারণ আমি ভেটেরিনারিতে পড়াশোনা করেছি তো, বেসরকারি চাকরি করব। কারণ আমার তো রিজিক লাগবে। রিজিকের মালিক তো আল্লাহ। আর আইনি লড়ায়ও চালিয়ে যাব, আইনি লড়াই চালিয়ে যাব এই জন্যই যে কারণ আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। আমি এটা অবিচারের ফল দেখতে চাই, আমি অন্তত চাকরিতে যোগদান করতে চাই।
আমি একজন ডিএডি, আমি রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করব, আল্লাহ না করুক- আমার তো এর আগে মৃত্যু হওয়া শ্রেয়। আমার মাদার প্রতিষ্ঠানকে যদি বিতর্কিত করি, আমি তো থাকলাম না। কারণ দুদকের ইমেজ ই তো আমার ইমেজ। আর আমি বিতর্কিত করেছি কি না, চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা আর কক্সবাজারের সাংবাদিকরা এটা ভালো বলতে পারবেন।
আরও পড়ুন:ইতালির রোমে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব খাদ্য ফোরাম ২০২৫-এ যোগ দিয়েছেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলে আরও রয়েছেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান ও অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি উইং) ড. মো. মাহমুদুর রহমান।
উপদেষ্টার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল ফোরামে দেশের কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিয়ে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সদস্য দেশসমূহের সাথে বিভিন্ন সেশনে অংশগ্রহণ করবে। সফরকালে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা ইতালির ইন্টেরিয়র মিনিস্টার এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ইতালির রোমস্থ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিতব্য এ ফোরাম ১০ অক্টোবর শুরু হয়ে চলবে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত। সূত্র: বাসস
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের প্রশাসনিক সংস্কার, পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণ করে মোট ১২ টি নতুন কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস ও বিশেষায়িত ইউনিট সৃজন করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক গতকাল একটি সরকারি আদেশ জারী করা হয়েছে। কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগ দু’টির বিদ্যমান কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস এবং বিশেষায়িত ইউনিটসমূহে জনবল বৃদ্ধি এবং নতুন ১২টি কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস এবং বিশেষায়িত ইউনিটসমূহে ৩৭৩টি ক্যাডার পদ এবং ৩,২২৪ টি নন-ক্যাডার পদসহ মোট ৩,৫৯৭টি পদ নতুনভাবে সৃজন করা হয়েছে।
কর জাল সম্প্রসারণ করে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে স্বনির্ভরতা অর্জন, সেবার মান উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সর্বোপরি পরোক্ষ কর ব্যাবস্থাকে অধিকতর গতিশীল ও কার্যকর করার লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের প্রশাসনিক সংস্কার, পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ এবং মন্ত্রি পরিষদ বিভাগসহ প্রয়োজনীয় সকল প্রশাসনিক অনুমোদন শেষে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক উক্ত আদেশ জারী করা হয়। উক্ত আদেশ অনুযায়ী ৩ পর্যায়ে ৫টি নতুন মূল্য সংযোজন কর কমিশনারেট, ৪টি নতুন কাস্টমস হাউস এবং ৩ টি বিশেষায়িত দপ্তর সৃজন করা হলো।
নতুন ১২ টি কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস ও বিশেষায়িত ইউনিট সৃজন ছাড়াও উক্ত সরকারি আদেশের মাধ্যমে বিদ্যমান কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস ও বিশেষায়িত ইউনিটসমূহের সম্প্রসারণ, ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের কাস্টমস কার্যক্রম এবং কাস্টমস ও ভ্যাট গোয়েন্দা কার্যক্রমের সম্প্রসারণ ও বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে।
কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের প্রশাসনিক সংস্কার, পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের ফলে পরোক্ষ কর আহরণ কার্যক্রমের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি পাবে, ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারের মাধ্যমে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশা করছে।
-জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, আগামীর স্বপ্নপূরণে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য প্রস্তুতি লাগবে।
তিনি বলেন, যোগ্য হয়েই সুযোগ্য স্থানে অধিষ্ঠিত হতে হবে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল ক্ষেত্রে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে হবে। দেশ ও জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে।
গতকাল সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠানটির ছাত্র সংসদের আয়োজনে ১ম এমডিসি জাতীয় স্কুল, কলেজ ও আন্তঃমাদ্রাসা বিতর্ক প্রতিযোগিতার গ্রান্ড ফিনালে ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘আমাদেরকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আমরা একটি স্থানে আসতে পেরেছি। এখানেই শেষ নয়, আরো বহুদূর যেতে হবে। এই পথ পাড়ি দিতে কোনো বাঁধা আসলে আমাদেরকে থেমে গেলে চলবে না। সকল বাঁধা অতিক্রম করেই এগিয়ে যেতে হবে।’
ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. খালিদ বলেন, সকল ভেদাভেদ ও মতপার্থক্য ভুলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যে সুযোগ এসেছে সেটাকে পরিপূর্ণ কাজে লাগাতে হবে। এ সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেলে আমাদেরকে বহুবছর সুযোগের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তিনি সকলকে কালেমা তায়্যেবার পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনুরোধ জানান।
পরে উপদেষ্টা চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ ক্যাটাগরিতে বিজয়ী দলের সদস্যদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
উল্লেখ্য, তিন মাসব্যাপী স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা ক্যাটাগরিতে এ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সারাদেশের ৫৪টি প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে।
স্কুল ক্যাটেগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মুগদা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং রানারআপ হয়েছে বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
কলেজ ও উন্মুক্ত ক্যাটাগরিতে নটর ডেম কলেজ চ্যাম্পিয়ন এবং মনিপুর স্কুল ও কলেজ রানারআপ হয়েছে।
মাদ্রাসা ক্যাটাগরিতে তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা চ্যাম্পিয়ন এবং বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসা রানারআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ খলিলুর রহমান মাদানীর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চেয়ারম্যান ড. শামসুল আলম, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব মো. মনিরুজ্জামান ভূইয়া, আল ফাতাহ পাবলিকেশন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সাঈদ, ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি আবু সাদিক কায়েম, তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান প্রফেসর নুরুন্নবী মানিক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
দেশে ক্যান্সার চিকিৎসায় অধিক সংখ্যক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। ক্যান্সার রোগী বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান।
গতকাল সোমবার রাজধানীর ন্যাশনাল বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, শুধু স্তন ক্যান্সার নয়, আমাদের দেশে এখন ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ক্যান্সার প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা থেকে শুরু করে আমাদের আরও বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে।
পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির আহ্বান জানান তিনি।
নূরজাহান বেগম আরও বলেন, আমাদেরকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি করতে হবে, যাতে করে আমরা ৬৪ জেলায় ক্যান্সার সচেতনতার বিষয়টি পৌঁছে দিতে পারি।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিটি বিভাগীয় হাসপাতালে ক্যান্সার, কিডনি ও ডায়ালাইসিস চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে।
উপদেষ্টা আরো বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য লিনাগ মেশিন খুবই প্রয়োজনীয়। বর্তমান সরকার ৩৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও ছয়টি লিনাগ মেশিন ক্রয়ের ব্যবস্থা নিয়েছে।
আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মেশিন গুলো দেশে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় যুগোপযোগী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ন্যাশনাল বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতা সরকার অব্যাহত রাখবে।
দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দায়ী করে উপদেষ্টা বলেন, আপনারা জানলে অবাক হবেন যে একটি ফাইল একজনের কাছেই ছিল এক মাস দশ দিন। তাহলে বলুন, উন্নয়ন কাজ কিভাবে এগিয়ে নেয়া যায়?
তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
নূরজাহান বেগম আরো বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের পর হয়তো আমরা কেউ থাকব না। তবে আমাদের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণ এনজিও আপনাদের পাশে থাকবে সব সময়।
তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে আমরা সাধারণ মানুষের পাশে থাকব এবং আপনারা আমাদেরকে যখনই ডাকবেন, আমরা তখনই আপনাদের ডাকে সাড়া দেব।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের টাকার অভাব রয়েছে। তাই আমরা হয়তো পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সব সময় বিদেশে যেতে পারি না। কিন্তু বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেশে এনে তো আমরা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি। এক্ষেত্রে তো কোন বাধা নাই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সকলকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মহা-পরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার মো. আবু জাফর বলেন, স্তন ক্যান্সার ধরা পড়লে শতভাগ নিরাময় সম্ভব। এজন্য আমাদের লজ্জা বা ভয় না পেয়ে যথাসময়ে স্ক্যানিং করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বৈশ্বিক খাদ্য ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পূর্ণ সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গঠনের জন্য ছয় দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ক্ষুধা কোনো অভাবের কারণে নয়, এটি আমাদের তৈরি করা অর্থনৈতিক কাঠামোর ব্যর্থতা। আমাদের এই ব্যবস্থা বদলাতে হবে।’
সোমবার ইতালির রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দপ্তরে আয়োজিত বিশ্ব খাদ্য ফোরাম (ডব্লিউএফএফ) ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বৈশ্বিক খাদ্য ও অর্থনৈতিক কাঠামো সংস্কারের ছয় দফা প্রস্তাবে অধ্যাপক ইউনূস প্রথমেই বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ করুন, সংলাপ শুরু করুন এবং সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে খাদ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন’—এর মাধ্যমে ক্ষুধা ও সংঘাতের দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে অর্থায়নের অঙ্গীকার পূরণ করতে হবে, জলবায়ুুসংকট মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে টিকে থাকার সক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়তা করতে হবে।
তৃতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক গঠন করে খাদ্য সরবরাহ চেইন স্থিতিশীল রাখতে হবে।
চতুর্থ প্রস্তাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অর্থায়ন, অবকাঠামো ও বৈশ্বিক অংশীদারত্বের মাধ্যমে সহায়তা দিতে হবে।
পঞ্চম প্রস্তাবে তিনি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাণিজ্যনীতিকে খাদ্য নিরাপত্তার সহায়ক হতে হবে, বাঁধা নয়।
ষষ্ঠ প্রস্তাবে তিনি বলেন, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের তরুণ কৃষক ও উদ্যোক্তাদের জন্য।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘২০২৪ সালে ৬৭৩ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার্ত ছিল, অথচ আমরা যথেষ্ট খাদ্য উৎপাদন করেছি। এটি উৎপাদনের ব্যর্থতা নয়— এটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা, নৈতিক ব্যর্থতা।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষুধা দূর করতে যেখানে কয়েক বিলিয়ন ডলার জোগাড় করা যায়নি, সেখানে অস্ত্র কিনতে বিশ্ব ব্যয় করেছে ২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার। একে কি আমরা অগ্রগতি বলব?’
অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তনের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনা করতে হবে। পুরোনো মুনাফাভিত্তিক ব্যবসা পদ্ধতি কোটি কোটি মানুষকে পিছনে ফেলে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন এক নতুন ব্যবসা পদ্ধতি গড়ে তুলতে হবে— সামাজিক ব্যবসা, যা ব্যক্তিগত মুনাফার জন্য নয়, বরং সমাজের সমস্যা সমাধানের জন্য।’
অধ্যাপক ইউনূস তাঁর স্বপ্নের ‘তিন-শূন্য বিশ্ব’ (শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ) ধারণা ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এটি কোনো কল্পনা নয়, এটি অপরিহার্য— বিশ্ব বাঁচানোর একমাত্র পথ।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সামাজিক ব্যবসার সাফল্য আমরা দেখেছি। গ্রামীণ ব্যাংক দেখিয়েছে, দরিদ্র নারীরাও উদ্যোক্তা হতে পারেন। গ্রামীণ দানোন শিশু অপুষ্টির বিরুদ্ধে কাজ করছে। বিশ্বজুড়ে এমন বহু সামাজিক ব্যবসা মানুষের জীবন বদলে দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘তরুণ, নারী, কৃষক, কৃষিুউদ্যোক্তা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবকদের সহায়তায় সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠন করতে হবে। এই ধরনের উদ্যোগের জন্য আইনগত ও আর্থিক কাঠামো তৈরি করতে হবে, বাঁধা নয়।’
তরুণদের ভূমিকা তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আজকের তরুণ প্রজন্ম আগের তুলনায় অনেক বেশি সংযুক্ত, সৃজনশীল ও প্রযুক্তিনির্ভর। তাদের চাকরি খোঁজার কথা বলবেন না, বরং চাকরি সৃষ্টির ক্ষমতায়ন করুন।’
তিনি বলেন, ‘তরুণদের বিনিয়োগ তহবিল ও সামাজিক ব্যবসা তহবিলের মাধ্যমে মূলধনে প্রবেশাধিকার দিতে হবে। কৃষি-উদ্ভাবন কেন্দ্র, কৃষিুপ্রযুক্তি, চক্রাকার খাদ্য ব্যবস্থা ও জলবায়ুুস্মার্ট উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা দিতে হবে।’
তিনি যোগ করেন, ‘যুব সমাজের ওপর বিনিয়োগ করলে শুধু বিশ্বকে খাদ্য দিতে পারব না, বিশ্বকেই বদলে দিতে পারব।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্েযর বিরুদ্ধে বৈশ্বিক জোটের (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার অ্যান্ড পোভার্টি) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আমরা এফএও ও জি-২০-এর সঙ্গে মিলিতভাবে প্রযুক্তিগত, আর্থিক ও নৈতিক সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
তিনি আহ্বান জানান, ‘আসুন, একটি তিন-শূন্য বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করি।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এই ফোরামের তিনটি স্তম্ভ—যুব, বিজ্ঞান ও বিনিয়োগ—শুধু স্লোগান নয়, এটি আমাদের খাদ্যব্যবস্থা ও সমাজ রূপান্তরের প্রধান হাতিয়ার।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বে সম্পদ ও প্রযুক্তি রয়েছে, ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তি আসবে। এখন দরকার সৃজনশীল চিন্তা ও সঠিক ব্যবসা কাঠামো—যার মাধ্যমে আমরা নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে পারব। আমরা যদি কল্পনা করতে পারি, আমরা তা বাস্তবেও সৃষ্টি করতে পারব।’
বক্তৃতার শুরুতে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এফএও’র ৮০ বছর পূর্তি শুধু উদযাপন নয়, এটি ভবিষ্যতের প্রস্তুতির আহ্বান।’
তিনি বলেন, ‘এ বছরের প্রতিপাদ্য— ‘হাত ধরে হাতে, উন্নত খাদ্য ও উন্নত ভবিষ্যতের পথে’—আমাদের মনে করিয়ে দেয়: খাদ্য শুধু ক্যালরির ব্যাপার নয়, এটি মর্যাদার, ন্যায়ের এবং আমরা কেমন পৃথিবীতে বাস করতে চাই তার প্রতিচ্ছবি।’
তিনি এফএওুর নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী খাদ্য নিরাপত্তা ও শান্তি জোটের প্রশংসা করে বলেন, এটি ভবিষ্যতেও বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ২০২৪ সালের বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ তরুণ নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘তরুণরা সাহস ও আশায় ভরপুর হয়ে গণতন্ত্র, শান্তি ও মানবাধিকারের জন্য লড়াই করেছে। তাদের দাবি ছিল ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া, ন্যায়, অন্তর্ভুক্তি ও আস্থার ভিত্তিতে সমাজ গঠন।’
তিনি যোগ করেন, ‘এ তরুণরাই এখন নতুন বাংলাদেশ গঠনে কাজ করছে—যেখানে জনগণ শাসনের কেন্দ্রে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হবে, যার মাধ্যমে আমরা ন্যায় ও জনগণের ক্ষমতায়নের প্রতিশ্রুতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেব।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করছে এবং মিয়ানমারের সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকেও আশ্রয় ও খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে আছি ধান, সবজি ও স্বাদুপানির মাছ উৎপাদনে। কৃষকরা ফসলের নিবিড়তা ২১৪ শতাংশে উন্নীত করেছেন এবং আমরা জলবায়ুুসহনশীল ১৩৩ প্রজাতির ধান উদ্ভাবন করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ করেছি, ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দিচ্ছি, শক্তিশালী খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি, অপুষ্টি কমিয়েছি, খাদ্যাভ্যাসে বৈচিত্র্য এনেছি এবং কৃষিকে সবুজ করেছি— মাটি, পানি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কাজ করছি।’ সূত্র: বাসস
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলকে (আইএফএডি) বাংলাদেশের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা, নারী, কৃষক ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারীদের সহায়তার জন্য একটি সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার ইতালির রোমে ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের ইভেন্টের ফাঁকে আইএফএডির প্রেসিডেন্ট আলভারো লারিওর সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমি আপনাদের একটি সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের আহ্বান জানাই। এমন তহবিল দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, তরুণ, কৃষক, নারী ও মৎস্য খাতের উদ্যোক্তাদের সহায়তা দেবে।’
বৈঠকে দুই নেতা বিভিন্ন কৌশলগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এর মধ্যে ছিল বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে মৎস্য শিল্প গড়ে তোলা, আম ও কাঁঠালের রপ্তানি সম্প্রসারণ, জলবায়ু সহনশীল কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি এবং মহিষের দুধ দিয়ে মোজারেলা চিজসহ দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনে সহায়তা।
অধ্যাপক ইউনূস আইএফএডি প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং কৃষি, সামাজিক ব্যবসা ও প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতার সম্ভাবনা যাচাইয়ে একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর অনুরোধ করেন।
প্রত্যুত্তরে আইএফএডি প্রেসিডেন্ট আলভারো লারিও বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের সঙ্গে যৌথভাবে সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগে কাজ করার ব্যাপারে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, বর্তমানে আইএফএডি বাংলাদেশের কৃষিখাতে অর্ধডজনেরও বেশি প্রকল্পে অর্থায়ন করছে।
প্রধান উপদেষ্টা ফল প্রক্রিয়াকরণ, কোল্ড স্টোরেজ, গুদাম সুবিধা ও আম-কাঁঠালের বৃহৎ পরিসরে রপ্তানিতে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে আম রপ্তানি শুরু করেছি, তবে পরিমাণ এখনো কম। চীন বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ আম ও কাঁঠাল আমদানির আগ্রহ দেখিয়েছে।’
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি জানান, বাংলাদেশের নারী দুগ্ধ খামারিরা মহিষের দুধ দিয়ে মোজারেলা চিজ তৈরি করছেন। তিনি এ খাত সম্প্রসারণে আইএফএডির সহায়তা চান।
বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্রের মৎস্যসম্পদ নিয়ে আলোচনায় অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাবে বাংলাদেশের জেলেরা এখনো অগভীর পানিতেই সীমাবদ্ধ।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো গভীর সমুদ্রে যেতে সাহস পাই না। আইএফএডি এই খাতে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি সহায়তার মাধ্যমে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’
বাংলাদেশে ১৯৭৮ সালে কার্যক্রম শুরুর পর থেকে আইএফএডি ৩৭টি প্রকল্পে অংশীদার হয়েছে, যার মোট প্রকল্প ব্যয় ৪ দশমিক ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার সরাসরি আইএফএডি অর্থায়ন করেছে। বর্তমানে ৪১২ মিলিয়ন ডলারের ছয়টি প্রকল্প চলমান এবং আরও একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন।
অধ্যাপক ইউনূস স্থানীয় সময় রোববার বিকেল ৫টার দিকে রোমে পৌঁছেন। তিনি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আয়োজিত ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামে অংশ নেবেন এবং সেখানে মূল অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ, পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম এবং আইএফএডির এসোসিয়েট ভাইস প্রেসিডেন্ট ডোনাল ব্রাউন। সূত্র: বাসস
লুকানো নয়, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নির্বাচন উপহার দিতে চান উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ. এম. এম. নাসির উদ্দিন বলেছেন, আমরা একটি স্বচ্ছ নির্বাচন করতে চাই, রাতের অন্ধকারে গোপন কোনো নির্বাচন দিতে চাই না। আমরা চাই এমন একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নির্বাচন, যা সবাই নিজের চোখে দেখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভোটারদের জন্য এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই, যাতে প্রতিটি বাংলাদেশি ভোট দিতে পারে। প্রবাসে যারা আছেন, তাদের জন্যও আমরা ভোটের ব্যালটের ব্যবস্থা করেছি। রিটার্নিং কর্মকর্তা নিজেই ভোট দিতে পারেন না— এটা কেমন কথা ? তিনি ভোট সংগ্রহ করবেন, কিন্তু দিতে পারবেন না, এটা তো যুক্তিসঙ্গত নয়। এবার আমরা তাদেরও ভোট দেওয়ার সেই ব্যবস্থা করছি।’
আজ রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বিভাগের প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রশাসন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
সিইসি এ. এম. এম. নাসির উদ্দিন বলেন, একটি জিনিস ধরে রাখেন—আমাদের নিয়তের মধ্যে কোনো গলদ নেই। আমরা অতি স্বচ্ছ একটি নির্বাচন চাই। সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহে কোনো অসুবিধা সৃষ্টি করতে চাই না। বরং আমরা সাংবাদিকদের সহযোগিতা চাই, পার্টনার হিসেবে পাশে পেতে চাই। সিইসি হিসেবে যেমন আমার দায়িত্ব আছে, আপনাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। গণতন্ত্রের যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে, এখানেও আপনাদেরও অবদান রাখতে হবে। আমি যেমন সিইসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি, তেমনি নাগরিক হিসেবেও আমাদের সবার একটি দায়িত্ব আছে। আমি আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি এবং পাশে পেতে চাই।
এনসিপির শাপলা প্রতীক প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, শাপলা প্রতীক যেহেতু আমাদের নির্ধারিত তালিকায় নেই, তাই দিতে পারিনি। দেখেন, ২০২৪-এর আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যারা ছিল, তারাই কিন্তু এনসিপির নেতৃত্বে রয়েছেন। তারা গণতন্ত্রের পথে বাধা সৃষ্টি করবেন এটা আমি মনে করি না। কোনো অংশে তাদেরকে আমরা কম দেশপ্রেমিক ভাবতে চাই না। এনসিপিতে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২৪-এর অভ্যুত্থানে যোগদান করেছিল। সুতরাং তারাও দেশের মঙ্গল চান, গণতন্ত্র চান, ভালো চান। আমার বিশ্বাস, গণতন্ত্র উত্তরণের পথটা যাতে সুন্দর হয় সেরকম একটা পরিবেশের তারা সম্মতি দেবে।
চট্টগ্রামের ভোটের পরিবেশ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, আমরা চট্টগ্রামের ভোটের ইতিহাস বদলাতে চাই। আগের মতো যেন না হয়, সেই নিশ্চয়তা আমি এখানে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পেয়েছি। ইনশাল্লাহ আগের মতো হবে না। আমি সাংবাদিকদের পূর্ণ সহযোগিতা চাই।
তিনি আরও বলেন, আমরা এই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে চাই, যাতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই সুন্দরভাবে নিজের ভোট দিতে পারে নিরাপদ পরিবেশে। যাতে নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার হতে না পারে সেই লক্ষ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে নাসির উদ্দিন বলেন, যখন আপনারা আমাদের সম্পর্কে প্রচার বা অপপ্রচার যা শুনবেন, দয়া করে আগে ফ্যাক্ট চেক করে নেবেন। আমরা এজন্য একটি ফ্যাক্ট চেক সেল গঠন করছি। যাতে তথ্য পেলে আগে সত্য-মিথ্যা যাচাই করা হয়। সত্য হলে প্রচার করবেন।
বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটি সমস্যা উল্লেখ করে সিইসি বলেন, এআই সমস্যাটা শুধু আমাদের দেশের সমস্যা নয়। এটি বিশ্বের একটি সমস্যা। এআই-এর ৫০ শতাংশ সোর্স শনাক্ত করা যায় না। আলোচনায় কেউ কেউ বলেছে ইন্টারনেট বন্ধ করতে। আমরা ইন্টারনেট বন্ধের পক্ষে নই।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দীনের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি অংশ নেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারাও। সভায় বিভাগের নির্বাচন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। সূত্র: বাসস
মন্তব্য