দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে জনগণ পছন্দ করছে না মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, জনতা চায় তার দলকে। তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, তিন শ সংসদীয় আসনে প্রার্থী দেয়ার মতো অবস্থা নেই তাদের। তার পরও এককভাবে নির্বাচন বা তাদের নেতৃত্বে জোট এবং সেই জোটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় প্রধান দল হিসেবে যোগ দেয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন তিনি।
ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছে দল, অথচ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পাত্তাই নেই। এ প্রসঙ্গে চুন্নুর যুক্তি হলো, ইউনিয়ন পরিষদের ফল দিয়ে জাতীয় নির্বাচন মাপা যাবে না।
২০০৮ সাল থেকে তিনটি জাতীয় নির্বাচন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ বা সমঝোতা করে অংশ নেয়া জাতীয় পার্টির আগামী দিনে বিএনপির সঙ্গেও সমঝোতা হতে পারে বলে একটি কথা উঠেছিল। সেটিকে অবশ্য নাকচ করেছেন দলের মহাসচিব।
নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব বিষয় উঠে এসেছে।
বেগম রওশন এরশাদ এখন কেমন আছেন?
উনি আছেন, ভালো-মন্দ মিলিয়ে। যেহেতু উনার বয়স হয়েছে, অনেক রোগ উনার। এখন একটু ভালো হন, আবার একটু খারাপ হন। এই অবস্থায় আছেন।
দেশে রাজনীতি নিয়ে আবার অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এমনটা কি হওয়া উচিত ছিল? দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে রাজনীতির উন্নয়নটা হলো না। আসলে কী কারণ বলে মনে করছেন?
দেশে এখনও কোনো অনিশ্চিত অবস্থা আছে বলে মনে করি না। তবে ওমিক্রন ও ক্ষমতাসীন দলের কিছু কিছু সিদ্ধান্তের কারণে ফ্রিলি সবাই মাঠে কাজ করতে পারছে না, এটা ঠিক।
জাতীয় পার্টির আগামী পরিকল্পনার মধ্যে অগ্রাধিকার কী?
আমরা চিন্তা করি, আমরা যদি ক্ষমতায় যাই, আমাদের অগ্রাধিকার থাকবে দেশের বেকার সমস্যার সমাধান। এ ছাড়া আমরা ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের জন্য প্রাদেশিক সরকার গঠন করব। স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে আধুনিক হিসেবে উপজেলা পর্যায়ে যাতে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়া যায়, ওটাকে আমরা অগ্রাধিকার দেব এবং শিক্ষাক্ষেত্রে কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করব। কোনো ছাত্র লেখাপড়া শেষে যাতে তাকে কাজে লাগানো যায়, এই ব্যবস্থা আমরা করব। তবে সব বিষয়ে তো সব দল একমত নাও হতে পারে। অন্যদের সঙ্গে তো আমাদের নাও মিলতে পারে।
সংসদে তো আপনারা প্রধান বিরোধী দল। দেশে এই মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আপনাদের অবস্থান কোথায় বলে মনে করেন?
আমরা সংসদে প্রধান বিরোধী দল সন্দেহ নেই। যেহেতু সংসদে আমরা বিরোধী দল, আমরা এখন এমন একটা অবস্থায় আছি, ১৯৯০ সালে এরশাদ সাহেব পদত্যাগ করার পর গত ৩১ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্ষমতায় দুটি দল। সেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আমাদের চেয়ে বড় দুটি দল সন্দেহ নেই। এই দুটি দল, ক্ষমতায় আসছে, ক্ষমতায় গেছে। তাদের যে শাসন, দুর্নীতি, এই দুটি দলকে মানুষ এখন আর চাইছে না। মানুষের চাওয়া এখন এই দুই দলের বাইরে কোনো দল।
এর বাইরে দল কে আছে, আমরা চিন্তা করছি, আমরা আছি। আমরা তো এই সুযোগটা নিতে পারি। আমরা মনে করতেছি, আমরা জনগণের জন্য দুই দলের চেয়ে ভালো কাজ করতে পারব, এই ধরনের কর্মসূচি দিতে পারি। যদি আগামী দুই বছর মানুষের কাছে যেতে পারি, দলকে সংগঠিত করতে পারি, তাহলে মানুষ আমাদের হয়তো একটা সুযোগ দিতে পারে।
তাই আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে মনোনয়ন দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
আপনারা বলছেন, দুই দলের বিকল্প হিসেবে জনগণ জাতীয় পার্টিকে চায়। এটা কীভাবে বুঝব আমরা? স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ফলাফল তো সে কথা বলে না।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ফল দিয়ে তো এটা মাপা যাবে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরই কিন্তু সেখানে অনেকে ফেল করছে। যেখানে ‘নৌকার’ বিরুদ্ধে অনেক লোক পাস করছে।
সে হিসাব করলে তো দেখা যাবে, আমাদেরও অনেক সমর্থন আছে, রাজনৈতিক কারণে…। কারণ এই নির্বাচনটাতে প্রশাসন অন্ধভাবে সরকারের পক্ষে কাজ করছে। অনেক জায়গায় আমাদের লাঙলের প্রার্থী থাকতে পারেনি, তাদের ফোর্স করা হয়েছে। অনেক জায়গায় তাদের এলাকা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
আমরা এমনিতেও এক শর কাছাকাছি চেয়ারম্যান পাইছি আরও অনেকগুলো আসত, কিন্তু এই অব্যবস্থার কারণে ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের জোর করার কারণে আমাদের অনেক লোক মাঠে কাজ করতে পারেনি (প্রকৃতপক্ষে জাতীয় পার্টি ৩০টি ইউনিয়নেও জয় পায়নি)।
এটা দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে তুলনা করলে আমার মনে হয় না ঠিক হবে। কারণ জাতীয় রাজনীতি অন্য বিষয়। সেখানে একটি দল ক্ষমতায় গেলে দেশের জন্য কী করবে, সেই কর্মসূচিকে মানুষ প্রাধান্য দেবে।
আপনাদের হয়তো খেয়াল আছে, ১৯৯১ সালে যখন এরশাদ সাহেব পদত্যাগ করেন। তখন কিন্তু বিএনপির মাঠে তেমন সংগঠন ছিল না। তাদের তিন শ আসনে মনোনয়ন দেয়ার সুযোগ ছিল না। সে সময় তাদের এক শ-দেড় শ প্রার্থী তাদের দিতে হয়েছে হায়ারে (ভাড়া করে)।
তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় চলে গেছে, এমন একটা ভাব ছিল। নির্বাচনের পর দেখা গেল বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে। আমরাও এমন মনে করছি। আমরা যখন কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে যাব, জনগণ যদি কর্মসূচি গ্রহণ করে, ইউনিয়ন-পৌরসভায় কতটা জিতলাম মানুষ ওই দিকে তাকাবে না। আমরা সেই সুদিনের আশায় আছি।
আপনি বললেন, ৩০০ সংসদীয় আসনে প্রার্থী দেবেন। এ বক্তব্য আপনি দলীয় কর্মসূচিতেও বলেছেন। সেটার কি প্রস্তুতি নিচ্ছেন?
দেখুন, সত্য কথা বলতে গেলে, ৩০০ আসনে মনোনয়ন দেয়ার মতো আমার এখন প্রার্থী নেই। সেই প্রার্থী নেই দেখেই আমার দলের চেয়ারম্যান ও আমি সাংগঠনিক টিম করেছি প্রতি বিভাগে। প্রত্যেক জেলায় আমরা যাচ্ছি। আমরা দলকে সংগঠিত করতেছি। একই সঙ্গে আমরা যারা ভালো লোক সমাজে, যারা প্রার্থী হতে পারে, কিন্তু নানা কারণে তারা পিছিয়ে পড়েছে। ওই সব লোক ইতিমধ্যেই আমরা কিছু পেয়েছি।
আরও আমরা সংগ্রহ করার চেষ্টায় আছি। যারা ভালো, সৎ ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য, এমন লোক যাতে আমরা ৩০০ আসনেই দিতে পারি, এ জন্য কাজ করছি।
কীভাবে এগোচ্ছেন?
বিভাগীয় যে টিম করেছি তারা সব জেলা-উপজেলায় যাবে। সেখানে আমাদের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলবে। নতুন কর্মী সৃষ্টি করবে। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড লেভেলে যাকে কমিটি করা হয়। আমরা আগামী নির্বাচনে কী করতে চাই, সেই কর্মসূচিও আমরা দেব। ইতিমধ্যেই আমাদের টিম কাজ শুরু করেছে। ইনশআল্লাহ আগামী ২ বছরে একটি অবস্থায় পৌঁছতে পারব।
আপনি বলেছেন, জাতীয় পার্টি কোনো জোটে যাবে না? এটা কি আওয়ামী লীগের জন্য কোনো বার্তা?
জোট সারা পৃথিবীতে এখন একটি সংস্কৃতি। ইংল্যান্ডের মতো দেশেও নির্বাচনি জোট হয়, কিন্তু আমাদের টার্গেট ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে এককভাবে নির্বাচন করা। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কী করব, সেটা সময়ের বিষয়।
২০০৮ সাল থেকে বারবার দেখা যায়, আপনারা আলাদা নির্বাচন করার কথা বলেন। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গেই জোট। এবারও শেষ পর্যন্ত তাই হবে?
অগ্রিম বলা তো মুশকিল যে আওয়ামী লীগের জোটে যাব কি না। যদি বলি আওয়ামী লীগ আমাদের সঙ্গে জোটে আসবে কি না। এমনও তো হতে পারে, জি এম কাদেরের নেতৃত্বে যে জোট হবে সেখানে আওয়ামী লীগ আসতে পারে।
আমরা যদি দুই বছর কাজ করি, তারপর দেখি মানুষ আমাদের সমর্থন দিচ্ছে তখন জোটে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন পড়বে না।
শেষ পর্যন্ত কী হয়, এটা বলা মুশকিল। আওয়ামী লীগ নিশ্চিতভাবে নাই যে আমেরিকা থেকে তাদের নিষেধাজ্ঞা দেবে। কাজেই অগ্রিম কোনো কিছু বলা মুশকিল।
আর আমরা তো মনে করি, আমাদের নেতৃত্বেই একটা জোট হতে পারে আগামীতে। আমাদের নেতৃত্বে একটা জোট ছিল, আমরা আগামী নির্বাচনে ভাবছি, এখনই চিন্তা করছি না। জনগণের কাছে যাচ্ছি, যাব। জনগণের সাড়া পেলে তখন অনেকে আসবে আমাদের কাছে আমাদের নেতৃত্বে জোট করার জন্য। তখন আমরা চিন্তা করব, জোট করব কি না।
আপনি বিএনপির কাছ থেকেও প্রস্তাব পাওয়ার কথা বলেছেন। একটু বিস্তারিত বলবেন কি? প্রস্তাব নিয়ে কী ভাবছেন?
আমি ঠিক কথাটা এভাবে বলিনি। জাতীয় পার্টির এমন একটা অবস্থা আছে যে, বড় দুটি দলই মনে করে, আমাদের ছাড়া তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে না। আমরা এটা মনে করছি, দুটি দল ছাড়াই আমরা ক্ষমতায় যেতে পারব। কাজেই এটাকে প্রত্যেকের দলের নিজস্ব বিষয় বলে মনে করি।
বিএনপি জোটে যাওয়ার বিষয়ে আপনাদের শর্ত কী থাকবে?
আমরা তো…বিএনপি জোটে যাওয়ার কোনো চিন্তা আমাদের মধ্যে নাই। শর্ত তো পরের প্রশ্ন। কারণ বিএনপি এরশাদ সাহেবকে অমানবিকভাবে কষ্ট দিছে। বিএনপি বেগম এরশাদকে অন্যায়ভাবে তার শিশুসন্তানসহ জেলে রাখছে। এরশাদ সাহেব তখন জেলখানায় অসুস্থ ছিলেন, উনার বিলোরোবিনের (রক্তের একটি উপাদান) মাত্রা ছিল ২৯। তখন মেডিক্যাল বোর্ড বলেছিল, উনার চিকিৎসা দরকার। আমরা সেদিন নাজিমুদ্দিন রোড থেকে এরশাদ সাহেবকে পিজি (বর্তমান বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে এনে চিকিৎসা করানোর জন্য দরখাস্ত দিয়েছিলাম তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। কিন্তু বিএনপি সেদিন উনাকে হাসপাতালে আনেনি। এগুলো তো আমরা ভুলে যেতে পারি না।
সংসদে আপনারা প্রধান বিরোধী দল, কিন্তু রাজপথে কোনো কর্মসূচিই নেই। আপনাদের মাঠে দেখা যায় না কেন?
কোনো কোনো পার্টি আছে, যাদের কোনো অফিস নাই, কিন্তু প্রেস ক্লাবের সামনে সাইনবোর্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এ ধরনের রাজনীতির কোনো দরকার জাতীয় পার্টির নাই। জাতীয় পার্টি সংসদীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। কারণ সংসদ হলো সব গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের মূল কেন্দ্র, আমরা সেখানে আমাদের যথাযথ ভূমিকা রাখছি।
সরকারের অনেক বিষয় আছে, যেগুলো জনস্বার্থের না। সেগুলো নিয়ে আমরা সরকারকে বলছি। যেমন: দ্রব্যমূল্য, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, তেলের দাম বৃদ্ধি, সুশাসন, দুর্নীতি-ঘুষ নিয়ে।
একটি পর্যায়ে দেখা যাবে, আমরাও হয়তো মাঠে গেছি, তবে কথায় কথায় মাঠে যাওয়া এমন তথাকথিত রাজনীতি, আমি মনে করি, বাংলাদেশের মানুষ এখন চায় না। মাঠে যখন আমরা যাব, এমনভাবেই যাব, জনগণ যেন সম্পৃক্ত হয়। মাঠে গেলে যেন মাঠ থেকে ফিরে আসতে না হয়, যাতে মাঠে সিদ্ধান্ত হয়।
আপনারা কি সেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন?
সেই অবস্থায় আমরা যাব, যদি সরকার এখনই সাবধান না হয়।
র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে জাতীয় পার্টি কীভাবে দেখছে?
এটা আসলে সরকার ভালো বলতে পারবে, কিন্তু এটুকু বলতে পারি, এটা একটি ভালো লক্ষণ নয়। যেহেতু আমেরিকার সঙ্গে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা বিষয়ে যোগাযোগ আছে, কাজেই এমন নিষেধাজ্ঞা সরকারের জন্য সম্মানহানিকর। আমি মনে করি, এটা সরকার সঠিকভাবে হ্যান্ডেল করতে পারেনি।
বিএনপি তো ২০১৪ সালের নির্বাচনে না গিয়ে ভোট ঠেকাতে পারেনি। আন্দোলনেও তখন ব্যর্থ হয়েছিল। এখন বড় জোট করে আন্দোলনের কথা বলছে। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
আমি জানি না, বিএনপির বড় জোট কী? জোট তো তাদের আছেই, ২০-৩০ দলের। আওয়ামী লীগেরও ১৪ দল আছে। শুধু আমরা একা আছি। বিএনপি-আওয়ামী লীগ বড় জোট করতে চাইলে আমি তো দলই দেখি না। আর দল কোথায়? বিএনপির সঙ্গে কামাল হোসেনসহ অনেক দলই তো আছে। অবশ্য বামপন্থি কিছু দল আছে, যারা নিজস্বভাবে চলে।
আরও পড়ুন:এপ্রিল মাসকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় নয় উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সময়সূচি পুনঃবিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘অন্তবর্তী সরকার বাস্তবতার ভিত্তিতে এই বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করবে।’
আজ মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখনো (এপ্রিলের প্রথম দিকে নির্বাচন) নিয়ে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। আমরা আশা করি, সরকার এই বিষয়টি বাস্তবতার আলোকে বিবেচনা করবে।’
অন্তবর্তী সরকার যে সময়ে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে, তা সঠিক নয় বলেও দাবি এই বিএনপি নেতার।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা প্রথম দিনই বলেছি যে, এই সময় নির্বাচনের জন্য ভালো নয়। রমজান মাস শেষ হবে, ঈদ হয়ে যাবে, তারপর কয়েকদিন পর নির্বাচন হবে। একটু ভাবুন, রমজান মাস জুড়ে প্রার্থী এবং রাজনৈতিক কর্মীরা কী ধরনের পরিস্থিতিতে পড়বেন।’
ফখরুল আরও বলেন, তিনি এখন থেকেই চিন্তিত যে প্রতিদিন ইফতার পার্টি আয়োজন করতে হবে, যা নির্বাচনী ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিগুণ করবে।
তিনি রমজান মাসে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর অসুবিধাগুলো তুলে ধরে বলেন, বিশেষত তীব্র গরম এবং বৃষ্টিপাত বা ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া, তিনি উল্লেখ করেন, তীব্র গরমের কারণে নির্বাচনী সমাবেশের জন্য লোকজন জড়ো করা সম্ভব হবে না। ‘কর্মসূচিগুলো রাতের দিকে নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, অতীতে দুটি বিতর্কিত নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশে প্রায় সব জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দল বলেছে যে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব, এবং আমরা দৃঢ় বিশ্বাস করি যে এটি একটি বাস্তবসম্মত বিকল্প।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপি যেকোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, কারণ এটি নির্বাচনমুখী দল। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিপ্লবী দল না, আমরা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসতে চাই।’
ফখরুল বিএনপির সংস্কার না করার যে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে, তা খণ্ডন করে বলেন, ‘এটা মিথ্যা প্রচারণা।’
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বিএনপি প্রথম দল হিসেবে ভিশন-২০৩০ কর্মসূচি তুলে ধরে এবং গণঅভ্যুত্থানের আগেই ৩১ দফা সংস্কারের খসড়া উপস্থাপন করেছিল।
ফখরুল সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কর্মীদের জাতিকে বিভক্ত না করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘দেশ একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ: আমরা গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চাই এবং আমরা চাই দেশটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচালিত হোক। আমরা ভোট দিতে চাই, আমাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচন করতে চাই এবং সংস্কার দেখতে চাই। সুতরাং, অযথা বিভেদ সৃষ্টি করবেন না।’
ফখরুল সতর্ক করে বলেন, দেশে কোনো ধরনের বিভেদ সৃষ্টি হলে তা বিদেশি শক্তি এবং ষড়যন্ত্রকারীদের দেশের ক্ষতি করার সুযোগ করে দেবে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠক রাজনীতিতে এই মুহূর্তে প্রধান ইভেন্ট বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে এই বৈঠকের গুরুত্ব অনেক বেশি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও এই ইভেন্টের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাদের সাক্ষাতের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে রাজনীতির নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ অনেক কিছুর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এখন এটা নির্ভর করবে আমাদের নেতারা সেটাকে কীভাবে নেবেন। বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে সম্পূর্ণ এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। এই সাক্ষাৎকারে তার সাফল্য প্রার্থনা করছি।
বৈঠকের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা না থাকলেও আগামী নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা এর মাধ্যমে সমাধান হতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছে। আমরা তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছি। তাদের যথেষ্ট রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। তবে, তারা প্রত্যেকে নিজ-নিজ সেক্টরে যথেষ্ট অভিজ্ঞ।
আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে বলে জাতীর উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঘোষণা গোটা জাতিকে হতাশ করেছে বলে অভিহিত করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএনপি।
শনিবার (৭ জুন) সকালে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেছে দলটি।
বিবৃতিতে বিএনপি জানায়, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রসমাজ ও জনতার বিপুল ত্যাগের মধ্য দিয়ে জনগণের বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের অযৌক্তিক বিলম্ব জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।’
এ সময় রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি।
এর আগে, শুক্রবার (৬ জুন) রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে শনিবার ভোরে বিবৃতিটি দেওয়া হয়।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়বস্তু বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে এই ঘোষণা দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রায় দেড় দশক ধরে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত এ দেশের জনগণ। বারবার গুম, হত্যা, কারাবরণ, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও তারা ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।’
ঐকমত্য গঠনের কথা বললেও অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
তারা বলেন, ‘এ কারণে বৈঠকে মনে করে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না; তা নিয়ে জনগণ উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভাষ্যে, এপ্রিলের শুরুতে নির্বাচন দিলে তা আবহাওয়াজনিত জটিলতা ও রমজান মাসে প্রচার-প্রচারণা ও নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে, যা পরবর্তীতে নির্বাচনের সময়সূচি পেছানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
তারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়— এমন কোনো সুস্পষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করা হয়নি।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আরও বলা হয়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাণী দেওয়ার কথা থাকলেও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য এক পর্যায়ে জাতির উদ্দেশ্য ভাষণে রূপ নেয়।
দীর্ঘ ওই ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস নিজেই স্বীকার করেছেন বন্দর ও করিডর ইস্য অন্তবর্তী সরকারের তিনটি নির্দিষ্ট দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
এ ছাড়াও ওই ভাষণে ব্যবহৃত কিছু শব্দ রাজনৈতিক সৌজন্যের সীমা অতিক্রম করেছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির নেতারা।
চোখের চিকিৎসা শেষে থাইল্যান্ড থেকে আজ শুক্রবার রাতে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি ব্যাংককের রুটনিন আই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী মির্জা ফখরুলের দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান শুক্রবার দুপুরে বাসস’কে জানান, দলের মহাসচিব রাতে দেশে ফিরবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘রাত ১১টায় ব্যাংকক থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন মির্জা ফখরুল। তাকে বহনকারী ফ্লাইটটি রাত ১টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
এর আগে, চোখের জটিলতাসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে গত ১৩ মে রাত ২টা ৪৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন মির্জা ফখরুল। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম।
নতুন অর্থবছরের (২০২৫-২৬) প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটকে অকার্যকর ও গতানুগতিক এবং একতরফা বলে সমালোচনা করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও দরিদ্রতার মতো অর্থনৈতিক দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলো সমাধানে এবারের বাজেট সুর্নিদিষ্ট কৌশল দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
বুধবার (৪ জুন) বাজেট নিয়ে দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিএনপি সব ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে অন্তর্বতী সরকারকে। আমরা আশা করেছিলাম যে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জড়িত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বাজেট তৈরি করবে, যাতে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ন্যূনতম স্তর তৈরি হয়।’
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতা ও যুব প্রতিনিধিদের নিকট থেকে মতামত নিতে পারত।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যদি এমনটি হতো, তাহলে বাজেট একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক হত। এটি দেশের বিভিন্ন অংশের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত করত। কিন্তু সেই সুযোগটি ব্যবহার করা হয়নি। ফলে, বাজেটটি একপেশে, অংশগ্রহণমূলক নয় এবং গতানুগতিক হয়ে গেছে। এতে নতুন চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন নেই।’
বর্তমান বিশেষ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বাজেট চূড়ান্ত করার আগে এই ধরনের আলোচনা আরও জরুরি ছিল, যেহেতু ২০২৫-২৬ অর্থবছরে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে।
প্রস্তাবিত বাজেটের উপর তাদের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে তাদের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এই প্রেস কনফারেন্স আয়োজন করে বিএনপি।
সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। এটি জুলাই মাস থেকে কার্যকর হবে।
বাজেট সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানকে মাথায় রেখে তৈরি করা উচিত উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট সেই বৈষম্যমুক্ত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়নি, যার জন্য আন্দোলন করা হয়েছিল।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাজেটে চলমান অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর যেমন উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, দরিদ্রতা বৃদ্ধি, কম বেসরকারি বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের কম সুযোগের স্পষ্ট সমাধান দেওয়া হয়নি।
বিএনপির এই নেতা বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, বাজেটটি অপ্রয়োজনীয় এবং দুর্নীতিপ্রবণ প্রকল্পগুলোতে বেশি মনোযোগ দিয়েছে, অথচ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে গুমের অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। মঙ্গলবার (৩ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তিন এই অভিযোগ দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য যাদের নাম অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম। এ ছাড়া আরও অজ্ঞাতনামা অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
আজ বেলা ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসেন সালাহউদ্দিন। এ সময়ে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ আইনজীবীরা সাথে ছিলেন। পরে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের কাছে অভিযোগ তুলে দেন তিনি।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে সালাহউদ্দিনকে তুলে নেওয়া হয় বলে তখন অভিযোগ করেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। অন্যদিকে তখন বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সালাহউদ্দিনকে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন।
সে সময় সালাহউদ্দিন বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছিলেন। একই বছরের ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
সালাহউদ্দিনকে আটক করার পর বৈধ নথিপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে দেশটির ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। ২০১৫ সালের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে সেখানেই থাকতে হয়।
২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও খালাস পান সালাহউদ্দিন। আদালত তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই বছরের ৮ মে সালাহউদ্দিন ভ্রমণ অনুমোদনের জন্য আসাম রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে তিনি ভারতে আটকে আছেন। দেশটিতে তার বিরুদ্ধে যে অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছিল, সেই মামলায় আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন। ২০১৬ সালের ১১ জুলাই তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে।
ভারতে থাকার কারণে তিনি নিজের পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ পাননি। ভ্রমণ অনুমোদন দেওয়া হলে তিনি নিজের দেশে ফিরতে চান। দেশবাসী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হতে চান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৬ আগস্ট সালাহউদ্দিন দেশে ফেরার জন্য ভ্রমণ অনুমোদন বা ট্রাভেল পাস পান। ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা ছিলেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম। পরে পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা হন নাহিদ। তবে নাহিদ ইসলামের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) উপদেষ্টা পদে থাকাবস্থায় লক করে রেখেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এনআইডির তথ্য ফাঁসের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সংস্থাটি।
তবে অভিযোগের প্রমাণ না মেলায় ৫ দিন পর আনলক করে দেওয়া হয় নাহিদের এনআইডি।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগকে এনটিএমসি জানায়, ‘ভণ্ডবাবা’ গ্রুপের অ্যাডমিন নাহিদ ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তার এনআইডির নম্বরও দেওয়া হয় জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগকে। এরপর তদন্তে নামে অনুবিভাগ। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর লক করা হয় নাহিদের এনআইডি।
তদন্তে বেরিয়ে আসে, ‘ভণ্ডবাবা’ হোয়াটসঅ্যাপের কোনো গ্রুপ নয়। এটি টেলিগ্রামের একটি গ্রুপ। আর নাহিদ ওই গ্রুপের অ্যাডমিন নন।
তার এনআইডির বিপরীতে কোনো তথ্য পাচারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায়, গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর এনআইডি আনলক করে দেয় সংস্থাটি।
এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যেহেতু এই ভোটার কর্তৃক ডাটা সরবরাহ করার বিষয়ে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি এবং অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, সেহেতু মো. নাহিদ ইসলামের এনআইডি আনলক করার জন্য সুপারিশ করে কমিটি। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নথি উত্থাপন করা হলে ২২ সেপ্টেম্বর এনআইডির মহাপরিচালক তখন এনআইডিটি আনলক করার সিদ্ধান্ত দেন।
এভাবেই পাঁচ দিনের জন্য লক থাকে সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের এনআইডি।
বর্তমান এনআইডি মহাপরিচালক এসএম হুমাযুন কবীর গণমাধ্যমকে বলেন, সে সময় আমি ছিলাম না। তাই সেটি আমার বিবেচনার বিষয় নয়। আর পুরোনো বিষয় যেটির সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই, সেটির মতামতও দিতে চাই না।
মন্তব্য