আগামী ২ মার্চ শেষ হতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের দ্বিতীয় মেয়াদ। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরপর দুজন উপাচার্য মেয়াদ শেষ করতে পারেননি, ছাত্র আন্দোলনে সরে দাঁড়াতে হয়েছে, সেখানে একজন নারী উপাচার্যের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ করাকে একটি বড় সাফল্য বলেই মনে করছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
তবে মেয়াদকালে ফারজানা ইসলামের প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়ে মিশ্র মতামত রয়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোতাহের হোসেন যেমন অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে তহবিল আনতে পারাকে উপাচার্যের সাফল্য হিসেবে দেখেন, তেমনি এসব অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজিকে ‘দুর্নীতির প্রশ্রয়’ হিসেবে দেখেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন।
পূর্বের দুই উপাচার্যের মতো অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধেও ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে, তার বাসভবন ঘেরাও হয় এবং এ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের প্রশাসনিকভাবে হেনস্তা করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। করোনার সময় দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে না এসে বাসায় বসে কাজ করেছেন তিনি। শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন, এ দীর্ঘ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম চলেছে কোনো রকম পরিকল্পনা ছাড়া।
ফারজানা ইসলামের দায়িত্ব গ্রহণের আগে ২০১২-এর ৯ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছিল।
এ দুই বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে দুই আওয়ামীপন্থি উপাচার্যের পতন হয়, যা সরকারের উচ্চমহলকে উপাচার্য নিয়োগে নতুন চিন্তা করতে বাধ্য করে। এ অবস্থায় প্যানেল নির্বাচনের মধ্য দিয়ে উঠে আসে দেশের প্রথম নারী উপাচার্য।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে অন্য এক ছাত্রলীগ কর্মী জোবায়ের নিহত হন। এতে দায়িত্ব শেষ হওয়ার ৯ মাস বাকি থাকতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বদলীয় শিক্ষকদের আন্দোলনে উপাচার্য শরীফ এনামুল কবির পদত্যাগে বাধ্য হন। তার বিরুদ্ধে নিজস্ব প্রভাববলয় তৈরির জন্য গণহারে শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগ ও ছাত্ররাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ ওঠে।
এরপর ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল মালেক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে মারা যান। এ ঘটনায় উপাচার্য আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষক সমিতি। ৯ মাস আন্দোলনে শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার এবং দুই দফায় উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। অবশেষে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি।
সরকার নতুন উপাচার্য নিয়োগের জন্য ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যকে প্যানেল নির্বাচনে ৩০ দিন সময় বেঁধে দেয়।
সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের পক্ষ থেকে ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজে’র ব্যানারে অধ্যাপক আমির হোসেন, অধ্যাপক আবুল হোসেন ও অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম নির্বাচনে অংশ নেন।
অন্যদিকে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও প্রগতিবাদী চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষকদের জোট’-এর ব্যানারে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল বায়েস, ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক এম এ মতিন ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আফসার আহমদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে সর্বোচ্চসংখ্যক ভোট পান নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। রাষ্ট্রপতি চার বছরের জন্য একজন নারী অধ্যাপককে প্রথমবারের মতো একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন। প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আচার্যের নির্বাহী আদেশে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পান ফারজানা ইসলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা মনে করেন, দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া প্রথম মেয়াদের চার বছর মোটামুটি সুশৃঙ্খলভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করেছেন ফারজানা ইসলাম। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক ধারাও বজায় ছিল। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে তাকে ঘিরেও অস্থিরতা ও বিতর্ক দেখা দেয়।
প্রথম মেয়াদে ২০১৫ সালের অক্টোবরে সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন, ২০১৬ সালের এপ্রিলে ডিন নির্বাচন, একই বছরের জুন মাসে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচন, অর্থ কমিটি ও শিক্ষা পর্ষদে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন এবং ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে সিনেটের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন তিনি। এর আগে কোনো উপাচার্যের সময় এক মেয়াদে এতগুলো প্রশাসনিক পর্ষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
২০১৮ সালে জাকসু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনও গঠন করা হয়। তার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সেশনজ্যাম উল্লেখজনক হারে কমে আসে।
ফারজানা ইসলামের আমলে নেয়া ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম ধাপে ছয়টি হল নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আরও ১৫টি ভবন নির্মাণের জন্য প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপের কাজে এ মাসে শুরু হবে।
বিতর্ক পিছু ছাড়েনি
২০১৭ সালের ২৬ মে ২০১৭ সাভারের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় বাসের ধাক্কায় জাবির দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে ৪২ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে পরিস্থিতি শান্ত করতে ওই দিন রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
২০১৮ সালের মে মাসে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নতুন সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতা করেন অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। ‘বঙ্গবন্ধু আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’ নামে এই সংগঠন আত্মপ্রকাশ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। পরে শিক্ষকদের বিভিন্ন গ্রুপ বিভিন্ন ঘটনায় প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে রাখে। এ সময় শিক্ষক সংগঠনগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক পর্ষদের নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখলেও কোনো নির্বাচন দেয়নি প্রশাসন।
অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম ধাপেই ২ কোটি টাকা ছাত্রলীগকে দেয়ার অভিযোগ ওঠে উপাচার্য ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের বাসভবন অবরোধ করে রাখেন। ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর ছাত্রলীগের হামলায় আন্দোলনকারীদের অনেকে আহত হন।
পরবর্তী সময়ে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করার অভিযোগ ওঠে অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে।
মহামারি-পরবর্তী শিক্ষাকার্যক্রম স্বাভাবিক হলেও এখনও কর্মস্থলে ফেরেননি উপাচার্য। তিনি বাসায় বসে অফিস করায় দুই হাজারের বেশি ফাইল উপাচার্য অফিসে জমা পড়ে আছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৯ সালের মধ্যে জাকসুর নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দেন অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম এবং ৩১ জুলাই জাকসু নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। কিন্তু এখনও তিনি তা করতে পারেননি।
দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম উপাচার্য হিসেবে টিকে থাকার ক্ষেত্রে সফল, দুর্নীতির প্রমাণ থাকার পরও। কোনো রকম শিক্ষা পরিকল্পনা ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয় চলেছে। করোনা মহামারিতে পরিকল্পনাহীনভাবে বিশ্ববিদ্যালয় দিনের পর দিন বন্ধ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে তিনি পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন।
‘আন্দোলন ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ন্যায্য অধিকার পাওয়া অসম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য মাস্টারপ্ল্যান ছিল অপরিকল্পিত। তিনি ৬০৬ দিন বাসায় বসে অফিস করে রেকর্ড গড়েছেন। নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের সময় ৫৪ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে প্রশাসন। ক্ষমতাসীন দলের পেটোয়া বাহিনী দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয় এবং এটিকে তিনি বলেছেন “গণ-অভ্যুত্থান”। এগুলোই তার সাফল্য।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোতাহের হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য সরকারের কাছ থেকে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এনে দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছেন। এ ছাড়া দুর্যোগকালীন শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রাখতে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করেন।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার সভাপতি আবু সাঈদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই মেয়াদের দ্বিতীয় মেয়াদে এসে ফারজানা ইসলাম নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে পার হয়েছেন। তিনি যে দুর্নীতি করেছেন, তা সর্বমহলে প্রমাণিত। কিন্তু অদৃশ্যভাবে সেটিকে গায়েব করে ফেলা হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে পারেননি।’
ছাত্রবান্ধব কাজ করার ফলেই তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসি হতে পেরেছেন বলে মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল।
তিনি আরও বলেন, ‘কাজ করলে সমালোচনা হবেই। তবে শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি অবদান রেখেছেন। বর্তমান ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট কমিয়েছেন পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাও বৃদ্ধি পেয়েছে।’
আরও পড়ুন:প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং কোনো দাবির কারণে ভোট পিছিয়ে দেওয়া হবে না।
ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ড. কমফোর্ট ইরোর নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৃহস্পতিবার আলোচনায় অধ্যাপক ইউনূস এ কথা বলেন।
তিনি জানান, সরকার নির্বাচনের জন্য দুটি সম্ভাব্য সময়সীমা নির্ধারণ করেছে এবং নির্ধারিত তারিখ পরিবর্তন করা হবে না।
ভোটের তারিখের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে সীমিতসংখ্যক সংস্কার চায়, তাহলে নির্বাচন এ বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। আর যদি বৃহত্তর সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের কোনো কারণ নেই। আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।
প্রবাসে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি কর্মীদের ভোগান্তি নতুন কিছু নয়। প্রতি বছরই অসংখ্য স্বপ্ন ঝরে পড়ে শুধু সময়মতো বিএমইটি বহির্গমন ছাড়পত্র না পাওয়ার কারণে। তবে বর্তমানে ঘরে বসেই কোনো প্রকার ভ্রমণ ও বাড়তি খরচ ছাড়া স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রবাসীরা নিতে পারবেন এই বহির্গমন ছাড়পত্র।
২০২৩ সাল থেকে এমন সেবাই দিয়ে আসছে বিশ্বের একমাত্র ওয়ান স্টপ অভিবাসন সেবা প্রদানকারী অ্যাপ ‘আমি প্রবাসী’। চলুন জেনে নিই, কীভাবে বিএমইটি বহির্গমন ছাড়পত্রের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন ঘরে বসেই।
ক্লিয়ারেন্সের আবেদন করার জন্য প্রথমে বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন ও প্রাক বহির্গমন ওরিয়েন্টেশন (পিডিও) কোর্স সম্পন্ন করতে হবে আগ্রহী প্রার্থীকে। এরপর তিনি ‘আমি প্রবাসী অ্যাপ থেকে সরাসরি বহির্গমন ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আর রিক্রুটিং এজেন্সির (RA) মাধ্যমে আবেদন করলে তারা নিজস্ব পোর্টাল থেকে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করবে।
বহির্গমন ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে হলে বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর, প্রাক বহির্গমন সার্টিফিকেট বা শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, পাসপোর্ট, ভিসা, ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে করা চুক্তিপত্র, নারীদের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট দেশে গমনের ক্ষেত্রে স্বামী বা অভিভাবকের অনুমতিপত্র (স্ট্যাম্প পেপারে), ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত কাগজপত্র, ওয়ান স্টপ ফরম (শুধু ওয়ান স্টপ সেবা গ্রহণকারী প্রার্থীদের জন্য), মেডিক্যাল টেস্ট রিপোর্ট, নির্দিষ্ট কিছু দেশের জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত কিছু নথিপত্র এবং চাকরির চুক্তিপত্র (শুধু রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য প্রযোজ্য) জমা দিতে হবে।
ঘরে বসে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চাইলে প্রথমেই প্রার্থীদের আবেদন ফি বাবদ ৫০ টাকা দিতে হয়। এরপর প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র নিয়ে ইন্টারভিউর জন্য বিএমইটি অফিসে উপস্থিত হতে হয়। আবেদন জমা দেওয়ার পর এটি বিএমইটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে পর্যায়ক্রমে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়।
ওয়ান স্টপ সেবা গ্রহণকারী বা নিজ উদ্যোগে আবেদন করা প্রার্থীদের আবেদন চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে সরকারি ফি ও আবেদন চার্জ পরিশোধ করতে হয় তাদের। পেমেন্ট সম্পন্ন হওয়ার পর ব্যক্তি কিংবা রিক্রুটিং এজেন্সি উভয়েই বিএমইটি স্মার্ট বহির্গমন ছাড়পত্র কার্ড ডাউনলোড করতে পারেন।
আরও পড়ুন:এখন থেকে ঢাকায় অবস্থিত হাইকমিশন থেকে বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্ক।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৃহস্পতিবার ফোনালাপে টনি এ কথা জানান।
প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বৃহস্পতিবার এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।
পোস্টে বলা হয়, ‘এখন থেকে অস্ট্রেলিয়া ঢাকায় অবস্থিত তাদের হাইকমিশন থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রসেস করবে। বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এই তথ্য জানান।
‘এ সময় তিনি উপদেষ্টা পরিষদকে জানান যে, এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
পোস্টে উল্লেখ করা হয়, ‘উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত বছরের অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বার্কের বাংলাদেশ সফরের সময় তার কাছে এই অনুরোধ করেছিলেন। এর আগে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা নয়াদিল্লি থেকে প্রসেস করত।’
এবারের ঈদুল ফিতরে টানা ৯ দিন ছুটি পাবেন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
আগেই টানা পাঁচ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর নির্বাহী আদেশে ৩ এপ্রিল এক দিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বৃহস্পতিবার এক দিন ছুটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছে।
আগামী ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর হতে পারে। সম্ভাব্য এ তারিখ ধরে আগেই পাঁচ দিনের ছুটির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল।
সে হিসাবে কাগজপত্রে ২৯ মার্চ শুরু হচ্ছে ঈদুল ফিতরের ছুটি। কিন্তু নির্ধারিত ছুটি শুরুর আগের দিন ২৮ মার্চ সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার। একই সঙ্গে একই দিন পবিত্র শবে কদরেরও ছুটি। ফলে বাস্তবে ছুটি শুরু হচ্ছে ২৮ মার্চ থেকে।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, ছুটি শেষে অফিস খোলার কথা ছিল ৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার। এর পরের দুই দিন আবার সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার। এখন ৩ এপ্রিলও নির্বাহী আদেশে ছুটি হওয়ায় ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিন ছুটি পাবেন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
এ ছুটি শুরুর দুই দিন আগে আছে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ছুটি। পরের দিন বৃহস্পতিবার ২৭ মার্চ এক দিন অফিস খোলা থাকবে। ফলে ছুটির সুযোগ আরও বেশি থাকছে।
এদিকে সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) নতুন কার্যনির্বাহী কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন, এবারের ঈদে সংবাদমাধ্যমগুলোতে তিন দিন ছুটি থাকবে। তবে রোজা যদি ৩০টি হয়, তাহলে এক দিন বেশি চার দিন ছুটি হবে।
আরও পড়ুন:বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক সাব্বির হত্যা মামলার আসামি সাফিয়াত সোবহান সানভীরকে দায়মুক্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ২১ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আটজনকে খালাস দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
খালাস পাওয়া অন্যরা হলেন তারেক রহমানের তৎকালীন এপিএস মিয়া নুর উদ্দিন অপু, কাজী সালিমুল হক কামাল, আহমেদ আকবর সোবহান, সাফিয়াত সোবহান, সাদাত সোবহান ও আবু সুফিয়ান।
ঢাকার বিশেষ জজ-৩ আদালতের বিচারক বৃহস্পতিবার মো. আবু তাহের এ রায় ঘোষণা করেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী বোরহান উদ্দিন ও আমিনুল গনি টিটু বাসসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক সাব্বির হত্যা মামলার আসামি সাফিয়াত সোবহান সানভীরকে দায়মুক্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ২১ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে ২০০৭ সালের ৪ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় মামলাটি করা হয়।
মামলাটিতে ২০০৮ সালের ২৪ এপ্রিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন দুদক। পরে ওই বছর ১৪ জুলাই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, সাব্বির হত্যা মামলার ঘটনা ধামাচাপা দিতে তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর ও শাহ আলমের মধ্যে বাবরের বেইলি রোডের সরকারি বাসায় একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে শাহ আলমের কাছে ১০০ কোটি টাকা দাবি করেন তারেক রহমান ও লুৎফুজ্জামান বাবর। ৫০ কোটি টাকার বিনিময়ে এ হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তারেক ও বাবরের সঙ্গে শাহ আলমের চুক্তি হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, চুক্তি অনুসারে শাহ আলমের কাছ থেকে বাবর ২১ কোটি টাকা নেন। এ টাকার মধ্যে বাবরের নির্দেশে বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক আবু সুফিয়ান ২০০৬ সালের ২০ আগস্ট হাওয়া ভবনে ১ কোটি টাকা তারেকের ব্যক্তিগত সহকারী অপুকে বুঝিয়ে দেন। বাবর ৫ কোটি টাকা আবু সুফিয়ানের মাধ্যমে নগদ গ্রহণ করে কাজী সালিমুল হক কামালের কাছে জমা রাখেন। বাকি ১৫ কোটি টাকা বাবরের নির্দেশে আবু সুফিয়ান প্রাইম ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় সালিমুল হক কামালকে ২০টি চেকের মাধ্যমে দেন।
আরও পড়ুন:সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খিজির হায়াতকে অপসারণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ছয় দফা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাকে অপসারণ করেছেন।
প্রজ্ঞাপন অনুসারে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬-এর দফা ছয় মোতাবেক সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খিজির হায়াতকে বিচারক পদ থেকে ১৮ মার্চ তারিখে অপসারণ করেছেন।
১৯৬৭ সালের ২৪ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া খিজির হায়াত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। পরে ১৯৯৭ সালের ৬ আগস্ট ঢাকা জেলা জজ কোর্টে এবং ২০০১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।
২০১৮ সালের ৩১ মে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান খিজির হায়াত খান। এর দুই বছর পর স্থায়ী হন তিনি।
দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টের দোসর বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে প্রাথমিকভাবে হাইকোর্ট বিভাগের ১২ বিচারপতিকে ২০ অক্টোবর থেকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়।
ওই ১২ বিচারপতির মধ্যে বিচারপতি খিজির হায়াতও ছিলেন। বিচারপতি খিজির হায়াত ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলেন।
আরও পড়ুন:দেশে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও যথাযথ প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বুধবার এক বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি।
এর আগে গত ১৭ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন ও কী ধরনের সুবিধাগুলো পেয়ে থাকেন, তা নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
আজকের বৈঠকে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের উত্থাপিত বিষয়গুলোর সমাধান খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তাদের, বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবস্থার উন্নয়নে তাৎক্ষণিক বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন ড. ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার আজকের মূল নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে পুলিশে প্রচলিত ঝুঁকি ভাতার সিলিং তুলে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা, পুলিশের জন্য নতুন ৩৬৪টি পিকআপ ও ১৪০টি প্রিজনার ভ্যান কেনার উদ্যোগ নেওয়া, পুলিশের চলমান নির্মাণ প্রকল্পের ৭০ শতাংশের নিচে সম্পাদিত হওয়া প্রকল্পগুলোতে অর্থ ছাড় করা, ভাড়াকৃত ভবনে অবস্থিত ৬৫টি থানার জমি অধিগ্রহণের জন্য অর্থ ছাড় করা এবং পুলিশের এসআই ও এএসআই পদবির কর্মকর্তাদের মোটরসাইকেল কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণের বিষয়টি বিবেচনা করা।
কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে জেলা পুলিশকে শ্রেণিবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন প্রধান উপদেষ্টা। এ ছাড়াও তিনি নিম্ন কর্মদক্ষতার ইউনিটগুলোর কর্মক্ষমতা উন্নত করার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালানোর ওপরও জোর দেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য