× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
ERF wants stricter laws to curb money laundering
google_news print-icon

টাকা পাচার রোধে কঠোর আইন চায় ইআরএফ

টাকা-পাচার-রোধে-কঠোর-আইন-চায়-ইআরএফ
ইআরএফ বলেছে, দেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হচ্ছে। এই পাচার রোধে ২০১৩ সালে ট্রান্সফার প্রাইসিং নামে একটি আইন করা হয়েছিল। বাস্তবে এর অগ্রগতি কতটুকু সেটা দেশবাসী জানে না। বর্তমান বাস্তবতায় মুদ্রা পাচার রোধে ভারত অথবা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কঠোর আইন করা এখন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।

দেশ থেকে টাকা পাচার রোধে কঠোর আইন করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে আহ্বান জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম-ইআরএফ।

মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এনবিআর সম্মেলন কক্ষে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এই প্রস্তাবসহ মোট ২১ দফা সুপারিশ করেছে ঢাকায় কর্মরত অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠনটি।

টাকা পাচার বন্ধে কঠোর আইনসংক্রান্ত প্রস্তাবে ইআরএফ বলেছে, দেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হচ্ছে। এই পাচার রোধে ২০১৩ সালে ট্রান্সফার প্রাইসিং নামে একটি আইন করা হয়েছিল। বাস্তবে এর অগ্রগতি কতটুকু সেটা দেশবাসী জানে না। বর্তমান বাস্তবতায় মুদ্রা পাচার রোধে ভারত অথবা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কঠোর আইন করা এখন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।

আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম। সভাপতি শারমীন রিনভী এবং ইআরএফের অন্য নেতারা বক্তব্য রাখেন।

ইআরএফের সুপারিশের ভূমিকায় বলা হয়, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রপ্তানি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে অনেক দেশের সঙ্গেই এফটিএ বা পিটিএর মতো সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন হবে। সে কারণে সরকারের রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রভাব আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের শুল্ক আদায় তথা রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার ধাক্কা মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

আয়করসংক্রান্ত প্রস্তাব

>> এনবিআরের তথ্যানুযায়ী, দেশে ইটিআইনধারীর সংখ্যা ৭০ লাখের মতো। এর মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন ২৪ থেকে ২৫ লাখ। অথচ কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সব টিআইএনধারীর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক। রিটার্ন দাখিল না করা এ বিপুল পরিমাণ টিআইএনধারীকে কর নেটের আওতায় আনতে আইনের বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতনা করা দরকার।

>> সিটি করপোরেশন এলাকার নাগরিকদের সর্বনিম্ন কর ৫ হাজার টাকা। করের এ পরিমাণটি কমিয়ে সব টিআইএনধারীকে কর প্রদানে উৎসাহী করতে হবে।

>> দেশের অর্থনীতির পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত দশ বছরে বিপুলসংখ্যক মানুষ কর প্রদানে সামর্থ্যবান হয়েছেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হচ্ছে, এই মুহূর্তে দেশে করযোগ্য মানুষ অন্তত ২ কোটি। আবার কেউ বলছেন, এই সংখ্যা ২ কোটিরও বেশি। করযোগ্য নাগরিকের সংখ্যা নিয়ে এই বিভ্রান্তি দূর করতে কিংবা দেশে করযোগ্য প্রকৃত নাগরিকের সংখ্যা নিরুপণে এনবিআরের একটি ব্যাপকভিত্তিক জরিপ চালানো জরুরি। একই সঙ্গে তাদের করের আওতায় আনতে সারা দেশের উপজেলা পর্যায়ে এনবিআরের কার্যক্রম বাড়ানো দরকার।

>> স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জাতীয় সংসদে বলেছেন, বাংলাদেশে ৮৫ হাজার ৪৮৬ জন বিদেশি নাগরিক কাজ করেন। কিন্তু এনবিআরের আয়কর জমা দেন মাত্র ১৪ থেকে ১৫ হাজার বিদেশি নাগরিক। দেশে কর্মরত বিদেশিরা বছরে ২৬ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যায় বলে এক গবেষণায় জানিয়েছে টিআইবি। বিদেশি নাগরিকদের করের আওতায় আনতে এনবিআরের উদ্যোগ আরও জোরালো করার প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

>> বর্তমান আইন অনুযায়ী কাঁচামাল বা পণ্য আমদানির সময় ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে উৎসে কর কাটা হয়। এটি পরবর্তীতে সমন্বয় করে এনবিআর। তবে পণ্য বিক্রি করে কর সমন্বয়ের আগ পর্যন্ত ব্যবসায়ীর বড় আকারের মূলধন আটকে যায়। আমরা কর আদায়ের বিরোধিতা করছি না। তবে এভাবে ব্যবসার মূলধন আটকে না রেখে অন্য কোনো বিকল্প পদ্ধতিতে কর আহরণ করা যায় কি না, তা ভাবতে অনুরোধ করছি। একই সঙ্গে কোনো ব্যবসায়ী যেন কর ফাঁকি দিতে না পারেন সে জন্য এনবিআরের অটোমেশন ও কঠোর মনিটরিংয়ের সুপারিশ করছি।

>> অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল পদ্ধতিকে আরও জনপ্রিয় করতে ব্যাপকভিত্তিক প্রচারণা চালানো দরকার।

>> রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটটি আপগ্রেড করার প্রস্তাব করছি। এতে অনেক হালনাগাদ তথ্য ও পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। একই সঙ্গে বোর্ডের গবেষণা সেলটি আরও কার্যকর ও যুগোপযোগী করার প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। একজন সদস্যের নেতৃত্বে গবেষণা ও পরিসংখ্যান বিভাগকে শক্তিশালী করা যেতে পারে।

>> দেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হচ্ছে, এই পাচার রোধে ২০১৩ সালে ট্রান্সফার প্রাইসিং নামে একটি আইন করা হয়েছিল। বাস্তবে এর অগ্রগতি কতটুকু সেটা আমরা জানি না। মুদ্রা পাচার রোধে ভারত অথবা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কঠোর আইন করা যায় কি না সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে।

>> বিনিয়োগকারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কর কাঠামো প্রণয়ন করা যেতে পারে। এটি হলে উদ্যোক্তারা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে বিনিয়োগ করতে পারবেন।

১০. আমরা জানি আয়কর নিয়ে একটি আইন হচ্ছে। এ আইনটি আধুনিক এবং সহজবোধ্য ভাষায় হচ্ছে। তবে আইনটির খসড়া হওয়ার পরপরই দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার। আইনটি বাস্তবায়নের আগে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বসে তাদের মতামতের ভিত্তিতে এটি চূড়ান্ত করার অনুরোধ করছি।

>> কাঠামোগত সমস্যা বাংলাদেশের রাজস্ব ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। এ দুর্বলতা কাটিয়ে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পুর্নগঠন জরুরি। ভারতের মতো ডাইরেক্ট ট্যাক্স এবং ইনডাইরেক্ট ট্যাক্স নামে দুটি বিভাগ গঠন করা যেতে পারে। দুই বিভাগে দুইজন সচিব নিয়োগ করা হবে। অথবা একটি রেভিনিউ কমিশন গঠন করা যেতে পারে। এর একজন প্রধান কমিশনার থাকবেন, যার অধীনে অন্য কমিশনাররা থাকবেন। সরকার তাদের নিয়োগ দেবে।

ভ্যাট কাস্টমস-সংক্রান্ত প্রস্তাব

>> বন্ডেড ওয়্যারহাউস ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে এনবিআর আইনি কাঠামোয় পরিবর্তনসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এ খাতে অনিয়ম রোধ এবং আরও রপ্তানিবান্ধব বন্ড ব্যবস্থাপনা তৈরির জন্য এনবিআরের নেয়া বন্ডেড ওয়্যারহাউস অটোমেশন প্রকল্পের কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করে পুরো প্রক্রিয়াকে অটোমেশনের আওতায় আনা দরকার।

>> এনবিআর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনের সমন্বয়ে একটি ট্যারিফ কমিশন পলিসি করা হয়েছে। তবে ট্যারিফ নির্ধারণের ক্ষমতা শুধু এনবিআরের। কোন খাতের জন্য ট্যারিফ কেমন হবে, কীভাবে রেশনালাইজ করা উচিত তা আউট লাইন করা রয়েছে ওই পলিসিতে। স্থানীয় শিল্পের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কী কী সুবিধা দেয়া উচিত তা নির্ধারণ করে ট্যারিফ পলিসিটি দ্রুত বাস্তবায়নের সুপারিশ করছি।

>> রপ্তানিতে তৈরি পোশাকশিল্পের সফলতা অসামান্য। এর পেছনে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বন্ডেড সুবিধাসহ নানা ট্যারিফ সুবিধা। রপ্তানির ক্ষেত্রে অন্য সম্ভাবনাময় খাত যেন তৈরি পোশাকশিল্পের মতো নিয়মিত বন্ডেড সুবিধা পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

>> একই এইচ এস কোডে মাল্টিপল ট্যারিফ রয়েছে। এক ট্যারিফের পণ্য অন্য পণ্যের এইচ এস কোডে আমদানি করতে গেলে ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হন বলে অভিযোগ করেন। অনেক সময় শুল্ক কর্তৃপক্ষের স্ক্যানিংয়ের ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হয়। প্রতিটি পণ্যের জন্যই আলাদা এইচ এইচ কোড নির্ধারণ প্রয়োজন।

>> ব্যবসায় পরিবেশ সহজ করা এবং এনবিআরের কার্যক্রমকে অটোমেশন করতে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো করার উদ্যোগ রয়েছে এনবিআরের। ২০২২ সালে এটির উদ্বোধন হওয়ার কথা। আমরা প্রত্যাশা করব এ কাজটি যেন নির্ধারিত সময়েই শেষ হয়।

>> বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে, সারা দেশে খুচরা ব্যবসায়ীর সংখ্যা ২০ লাখের বেশি। এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বড় অংশই কমপ্ল্যায়েন্ট নয়। স্বভাবতই তাদের বড় অংশ ভ্যাট দেয় না। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভ্যাটের আওতায় আনার সুপারিশ করছি। পাশাপাশি খুচরা ব্যবসায়ীদের ভ্যাট পণ্য মূল্যের ওপর নির্ধারণ না করে সংযোজিত মূল্যের ওপর নির্ধারণ করা দরকার। কারণ খুচরা ব্যবসায়ীরা ভ্যাট রিফান্ড পান না।

>> ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে ইএফডির ব্যবহার নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

>> পরিবেশবান্ধব বা সবুজ শিল্পায়নে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে এনবিআর সাধারণ কারখানা ও পরিবেশবান্ধব শিল্পের মধ্যে করপোরেট করের ব্যবধান কমপক্ষে ৫ শতাংশ রাখা যেতে পারে। পরিবেশবান্ধব কারখানায় অতিরিক্ত বিনিয়োগের তুলনায় বিদ্যমান ২ শতাংশ কর সুবিধা অপ্রতুল বলে মনে করছে অনেকে।

>> করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে বোতলজাত পানির ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক শিথিল করা যায় কি না সেটি ভেবে দেখা যেতে পারে।

>> জেলা শহরের বাইরে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে উৎসাহ প্রদানে ওই বিনিয়োগকে করমুক্ত সুবিধা দেয়ার সুপারিশ করছে ইআরএফ।

আরও পড়ুন:
এনবিআর কর্মীদের সম্পদের হিসাব দেয়ার নির্দেশ
বাজেট প্রস্তাব চেয়েছে এনবিআর
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিন, ব্যবস্থা নেব: এনবিআর চেয়ারম্যান
এনবিআর চেয়ারম্যান রহমাতুল মুনিমের মেয়াদ দুই বছর বাড়ল
আয়েশা'স বিউটি পার্লারের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির মামলা

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
HBL Presidents visit to Bangladesh New commitment to trade

এইচবিএল প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর: বাণিজ্য-বিনিয়োগে নতুন অঙ্গীকার

এইচবিএল প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর: বাণিজ্য-বিনিয়োগে নতুন অঙ্গীকার এইচবিএল-এর প্রেসিডেন্ট ও সিইও মোহাম্মদ নাসির সেলিম। ছবি: সংগৃহীত

হাবিব ব্যাংক লিমিটেড (এইচবিএল)-এর প্রেসিডেন্ট ও সিইও মোহাম্মদ নাসির সেলিম সম্প্রতি তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। এই সফরে তিনি আঞ্চলিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতি ব্যাংকের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

বাংলাদেশে অবস্থানকালে তিনি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বেসরকারি খাতের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে মূল আলোচ্য বিষয় ছিল চীন, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার মত বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা ।

গত ৪৫ বছরের বেশি সময় ধরে হাবিব ব্যাংক বাংলাদেশে কাজ করছে। দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে বহুজাতিক ব্যাংকটি। চীনে শক্ত অবস্থান তৈরি করা ব্যাংকটির শাখা রয়েছে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর বেইজিংয়ে। হাবিব ব্যাংক দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে চীনে কাজ করা তিনটি ব্যাংকের মধ্যে একটি যারা চীনা মুদ্রায় লেনদেনের পূর্ণাঙ্গ সুবিধা দেয়। এতে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য সহজ করতে বিশেষভাবে অবদান রেখে চলেছে ব্যাংকটি।

ঢাকায় ব্যাংকটির একটি ‘চায়না ডেস্ক’ রয়েছে যা ব্যবসায়ীদের ভাষা, নিয়মকানুন ও ব্যাংকিং সেবা নিয়ে সহায়তা করে। এতে করে চীন-বাংলাদেশ বাণিজ্য আরও সহজ হচ্ছে।

কৌশলগত সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে এইচবিএল সম্প্রতি বাংলাদেশে একটি অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট (ওবিইউ) চালু করেছে। এর মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রায় লেনদেন ও আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং সেবা আরও সহজ হবে। বিশেষ করে দেশের ইকোনমিক জোন ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা থেকে রপ্তানি বাড়াতে এটি সহায়ক হবে।

মোহাম্মদ নাসির সেলিম বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বাজার। আমরা চাই বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা সহজে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রবেশ করুক। চীন, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার মতো দ্রুত বর্ধনশীল বাজারগুলোতে আমরা তাদের পাশে থাকতে চাই।’

এইচবিএল তার আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ও অংশীদার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানকে বিদেশে ব্যবসা বাড়াতে সহায়তা করেছে। ব্যাংকটি ট্রেড ফাইন্যান্স, পরামর্শ সেবা, বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা ও বৈদেশিক মুদ্রা সেবা নিয়ে কাজ করছে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Country on the way to the strongest reserve of expatriate income satisfactory speed

প্রবাসী আয়ে সন্তোষজনক গতি শক্তিশালী রিজার্ভের পথে দেশ

প্রবাসী আয়ে সন্তোষজনক গতি শক্তিশালী রিজার্ভের পথে দেশ
# এপ্রিলের ২১ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি ৪০.৭০% # দেশে মোট রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে প্রায় ২৭ বিলিয়নের কাছাকাছি পৌঁছেছে

বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে ইতিবাচক ধারায় রয়েছে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। সর্বশেষ মার্চ মাসেও রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ওই মাসে ৩২৯ কোটি ডলার বা ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসে দেশে। রেমিট্যান্সের এ গতিধারা চলতি এপ্রিল মাসেও অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এখন দেশের মোট রিজার্ভ বেড়ে প্রায় ২৭ বিলিয়নের কাছাকাছি পৌঁছেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ধীরে ধীরে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। আর রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনের ওপরও চাপ কমেছে। ডলারের দাম না বেড়ে ১২৩ টাকার মধ্যে আটকে রয়েছে। পাশাপাশি অনেক ব্যাংক এখন গ্রাহকদের চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছে। ফলে বাজারে অনেক পণ্যের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করছে।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর কাছে প্রবাসীদের পাঠানো ডলার আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এতে করে ব্যাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে পারছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত, ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনলে অথবা বিদেশি ঋণ ও অনুদান এলেই কেবল রিজার্ভ বাড়ে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রিজার্ভের এই মজবুত অবস্থান রেমিট্যান্সে ভর করে এগিয়ে চলছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি মাস এপ্রিলের প্রথম ২১ দিনেই এসেছে ১৯৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ২৩ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। চলতি মাসে প্রতিদিন গড়ে এসেছে ৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলার বা ১ হাজার ১৪১ কোটি ৯২ লাখ টাকার বেশি। আর গত বছরের এপ্রিলের প্রথম ২১ দিনে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে চলতি মাসের প্রথম ২১ দিনে প্রায় ৫৭ কোটি ডলার বেশি প্রবাসী আয় এসেছে। শতকরা হিসাবে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪০ দশমিক ৭০ শতাংশ।

এ নিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৯ মাস ২১ দিনে দেশে ২ হাজার ৩৭৫ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একইস সময়ে এসেছিল ১ হাজার ৮৪৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ৯ মাস ২১ দিনে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৫২৮ কোটি ডলারের বেশি বা ২৮ দশমিক ৬০ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, একদিকে হুন্ডির দৌরাত্ম্য কমেছে, অন্যদিকে বন্ধ হয়েছে অর্থপাচার। এছাড়া খোলা বাজার এবং ব্যাংকে রেমিট্যান্সের ডলারের একই দাম পাচ্ছেন প্রবাসীরা। এসব কারণে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এতেই প্রবাসী আয় ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলছে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৭৩ কোটি ডলার। তবে আইএমএফ হিসাব পদ্ধতি (বিপিএম-৬) অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২১ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১৩৯ কোটি ডলার। এ দুই হিসাবের বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে জানানো হয়। সেখানে আইএমএফের এসডিআর খাতে থাকা ডলার, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা এবং আকুর বিল বাদ দিয়ে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের হিসাব করা হয়। সেই হিসাবে দেশের ব্যয়যোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।

একটি দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের বেশি সময়ের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব। নিট রিজার্ভ গণনা করা হয় আইএমএফের ‘বিপিএম-৬’ পরিমাপ অনুসারে। মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বিয়োগ করলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ বের হয়।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Islami Bank is auctioning 5 acres of property of S Alam

এস আলমের ১১ একর সম্পত্তি নিলামে তুলছে ইসলামী ব্যাংক

এস আলমের ১১ একর সম্পত্তি নিলামে তুলছে ইসলামী ব্যাংক ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা পাওনা আদায়ে চট্টগ্রামভিত্তিক বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কারখানা-গুদামসহ প্রায় ১১ একর সম্পত্তি নিলামে বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। গতকাল রোববার চট্টগ্রামের স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখা এস আলমের এসব সম্পদ নিলামে কিনতে আগ্রহীদের দরপত্রে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখার বিনিয়োগ গ্রাহক এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ হাছান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের কাছ থেকে ২০২৫ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত লভ্যাংশসহ ব্যাংকের খেলাপি বিনিয়োগ বাবদ ৯ হাজার ৯৪৮ কোটি ৪২ লাখ ৭০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। এ কারণে আদায়কাল পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য খরচ আদায়ের নিমিত্তে অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩এর ১২ (৩) ধারা মোতাবেক ইসলামী ব্যাংকে এস আলমের বন্ধকী রাখা সম্পত্তি নিলামে বিক্রির জন্য আগ্রহী ক্রেতাদের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়।

ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখা প্রধানের দেওয়া এ বিজ্ঞপ্তিতে তিনটি রেজিস্টার্ড মর্টগেজ চুক্তি অনুসারে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর মৌজায় ১০ দশমিক ৯৩ একর জায়গা এবং এসব জায়গার উপর কারখানা-গুদাম ও ভবনসহ পুরো স্থাপনা নিলামে তোলার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ১৩ ও ১৬ মার্চের ৩৭৪৬ নম্বর, ২০১৩ সালের ২৮ ও ২৯ মের ৮০৫৭ নম্বর এবং ২০১৩ সালের ১৪ ও ১৫ জুলাইয়ের ৩৩২৭ নম্বর রেজিস্টার্ড মর্টগেজ চুক্তিবদ্ধ সম্পদ আছে।

উল্লেখ্য, দেশের বেসরকারি ব্যাংক খাতে সুনামের সঙ্গে নেতৃত্ব দেওয়া ইসলামী ব্যাংক গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘দখলে’ নিয়েছিল এস আলম গ্রুপ। ব্যাংকটির সিংহভাগ মালিকানায় তাদের নিয়ন্ত্রিত ছিল। ইসলামী ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাত করে পাচারের অভিযোগ আছে এস আলমের বিরুদ্ধে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর দৃশ্যপট পাল্টে যায়। অন্তর্বর্তী সরকার এসে ব্যাংকটিকে এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করেছে। এখন ইসলামী ব্যাংক সেই এস আলম গ্রুপের কাছ থেকেই ঋণের নামে হাতিয়ে নেওয়া টাকা উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেছে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The new hope of export of mango is in China

আম রপ্তানির নতুন আশা চীনে

আম রপ্তানির নতুন আশা চীনে ছবি: সংগৃহীত
# চীনে ফল পাঠাতে প্রতি কেজিতে ভাড়া দিতে হয় ৭০-৮৫ টাকা, যা বর্তমান গন্তব্যগুলোর চেয়ে অনেক কম।

আম উৎপাদনে শীর্ষ দশে থাকলেও রপ্তানিতে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। রপ্তানিকারকরা বলছেন, এর প্রধান কারণ আকাশপথে পণ্য পরিবহনের অস্বাভাবিক উচ্চ ব্যয়—যা প্রতিযোগীদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এই চড়া ব্যয়ই ধীরে ধীরে বাংলাদেশকে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো থেকে ছিটকে দিচ্ছে।

তবে সম্প্রতি আম রপ্তানি নিয়ে চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা দেশের রপ্তানিকারকদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুণগত মান ঠিক রেখে আম উৎপাদন করতে পারলে কম পরিবহন ব্যয়ের সুবাদে বাংলাদেশের জন্য বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার হয়ে উঠতে পারে চীন।

রপ্তানিকারকরা জানান, বর্তমানে প্রতি কেজি ফল পাঠাতে ইউরোপে ৩৫০-৩৮০ টাকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে ২০০-২২০ টাকা ভাড়া দিতে হয়।

অন্যদিকে চীনে ফল পাঠাতে ভাড়া দিতে হয় আরও কম, কেজিতে ৭০-৮৫ টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান মনে করেন, আম রপ্তানির জন্য বাংলাদেশ ‘প্রস্তুত’।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের আম অন্যান্য দেশের তুলনায় গুণগত মানে ও স্বাদে ভালো। চীনের বাজারে এটা আমাদের এগিয়ে রাখবে।’

আরিফুর আরও বলেন, চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকে আমের জন্য স্পেশাল কার্গো দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আশা করছি চীনে আম রপ্তানি নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করবে।

‘চীনের প্রতিনিধিদল কয়েক দফায় আমাদের দেশে এসেছে। তারা অনেক ইতিবাচক রিভিউ দিয়েছে। এর সঙ্গে তারা কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা বলেছে। আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি চীনে আম রপ্তানি নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করবে,’ বলেন তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে আম উৎপাদন হয়েছে ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩২১ টন। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ হাজার ১০০ টন ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৫৭ টন আম রপ্তানি হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বছরই রপ্তানি কমছে।

বাংলাদেশ থেকে গত বছর ২১টি দেশে আম রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ইতালি ও সিঙ্গাপুরের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ রয়েছে। যদিও এর আগের অর্থবছরে ৩৬টি দেশে আম রপ্তানি হয়।

এনএইচবি কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী ও আম রপ্তানিকারক নাজমুল হোসেন ভূঁইয়া ১৯৯১ সাল থেকে আম রপ্তানি করছেন। গত বছর তিনি সুইডেন ও ইউরোপে আম পাঠিয়েছেন। তিনি টিবিএসকে বলেন, গত বছর প্যাকেজিং ও বিমান ভাড়া মিলে কেজিতে প্রায় ৫০০-৬০০ টাকা খরচ হয়েছে। গতবার অস্বাভাবিক ভাড়ার কারণে রপ্তানিকারক ও যারা কিনেছিলেন, সবাই লোকসান দিয়েছেন।

নাজমুল বলেন, ‘আম রপ্তানি নিয়ে আমাদের কোনো সমন্বিত কৌশল নেই। প্যাকিং হাউস করা হয়েছে শ্যামপুরে, পণ্য পাঠাতে হয় বিমানবন্দর থেকে। অথচ দুটো একই জায়গায় হওয়া প্রয়োজন ছিল। এতে খরচ কমত। আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে পিছিয়ে। আমাদের প্রণোদনা ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নিয়ে আসা হয়েছে।’

আম রপ্তানিকারক ও গ্লোবাল ট্রেড লিংকের স্বত্বাধিকারী রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘ভারত, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলো আম রপ্তানিতে আলাদা কার্গো ফ্লাইট ব্যবহার করে, অথচ বাংলাদেশ নির্ভর করে যাত্রীবাহী বিমানের ওপর।

ফলে ইউরোপে প্রতি কেজিতে আমাদের প্রায় ১.৫০ ডলার পরিবহন খরচ বেশি পড়ে। জিএসপি থেকে কিছুটা সুবিধা পেলেও আমাদের স্থানীয় আমের দাম তুলনামূলক বেশি। স্বাদে হয়তো আমরা এগিয়ে, কিন্তু গুণমানের ধারাবাহিকতায় ওরা আমাদের থেকে অনেকটা সুশৃঙ্খল। এখানেই আমরা পিছিয়ে আছি।’

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরে আম রপ্তানি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে ঢাকা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে চীনও।

রপ্তানিকারক ও কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চীন বছরে প্রায় ৪ লাখ টন আম আমদানি করে। মূলত থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন থেকে বেশি আম আমদানি করে চীন। তারা বলছেন, চীনে আম রপ্তানি করলে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের তুলনায় খরচ কম পড়বে। তবে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আম রপ্তানিতে টিকে থাকতে পারবে কি না সেটা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে।

২০ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘চীনের মানুষ বাংলাদেশি আম পছন্দ করে’ বলে বৃহৎ পরিসরে আম রপ্তানির সুযোগ তৈরি হয়েছে।

চীন বছরে প্রায় ৪ লাখ টন আম আমদানি করে। মূলত থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন থেকে বেশি আম আমদানি করে দেশটি। রপ্তানিকারক ও কর্মকর্তারা মনে করেন, গুণগত মান বজায় রাখতে পারলে বাংলাদেশ এই ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।

নাজমুল ভূঁইয়া বলেন, ‘চীনে নতুন বাজার তৈরি হয়েছে, এটা নিয়ে আমি আশাবাদী। তবে টিকে থাকতে হলে আমাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। কারণ আমরা যাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করব, তারা আমাদের চেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছে।’

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, চীন থেকে যেসব কার্গো বিমান পণ্য নিয়ে আসে, সেগুলো অনেক সময় খালি ফেরত যায়। এ কারণে চীনে রপ্তানিতে বিমান ভাড়া কম পড়বে।

‘এসব রিটার্ন ফ্লাইট পুরোটা ব্লক করা গেলে খরচ আরও কমে আসবে। হয়তো কেজিতে ৫০-৬০ টাকায় নেমে আসবে,’ বলেন তিনি।

বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটে চীন-বাংলাদেশ পার্টনারশিপ প্ল্যাটফর্মের মহাসচিব অ্যালেক্স ওয়াং বাংলাদেশি আমের প্রতি চীনের আগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ম্যাঙ্গো হারভেস্টিংয়ের সময় চীনের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল বাগান ও প্যাকেজিং কার্যক্রম পরিদর্শন করবে। ইতোমধ্যে আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।’

শেরে-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যান্ট প্যাথলজি বিভাগের চেয়ারম্যান এবং গ্লোবাল এপি প্রশিক্ষক অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহমেদ বলেন, চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমসের গাইডলাইন অনুযায়ী আম রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে ৩০টি শর্ত পূরণ করতে হবে।

এ ছাড়া বাংলাদেশের আমে চীনের জন্য ২১টি কোয়ারেন্টিইন পেস্ট শনাক্ত করা হয়েছে। রপ্তানির ক্ষেত্রে আমকে এসব থেকে মুক্ত থাকতে হবে। ‘পরিবহন-পূর্ব পরিদর্শনে প্রতি ব্যাচের ২ শতাংশ বা ৬০০টি আম—যেটি বেশি হয়—টেস্ট করতে হবে, এবং এর মধ্যে সন্দেহজনক ৬০টি আম কেটে পরীক্ষা করতে হবে। কোনো কোয়ারেন্টিন পেস্ট পাওয়া গেলে পুরো ব্যাচ বাতিল করা হবে।’

অধ্যাপক ফারুক বলেন, শুধু চীনের ক্ষেত্রে নয়, বরং বৃহত্তর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের জন্যই গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসেস (গ্যাপ) কমপ্লায়েন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘গ্যাপ অনুসরণ করে রপ্তানির জন্য আম উৎপাদন করলে বা গ্যাপ সার্টিফিকেট থাকলে চীনের শর্ত মানা কঠিন হবে না।’

তিনি আরও বলেন, কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বাড়তি সুবিধা দেয়। যেমন, থাইল্যান্ডের সঙ্গে চীনের ডুরিয়ান চুক্তি কিংবা আমের ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে থাইল্যান্ডের চুক্তি বাংলাদেশের জন্য মডেল হতে পারে। ‘চীনের সঙ্গে রপ্তানি চুক্তি করলে বাজারে প্রবেশ অনেকটাই সহজ হবে।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Expatriate income from the United States has increased by 5 percent

যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় ১০৩ শতাংশ বেড়েছে

যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় ১০৩ শতাংশ বেড়েছে

দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। রেমিট্যান্সের এই উল্লম্ফনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছেন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির এই দেশটি থেকে জুলাই-মার্চ সময়ে ৩৯৪ কোটি ৬১ লাখ (৩.৯৪ বিলিয়ন) ডলার এসেছে, যা মোট রেমিট্যান্সের ১৮ দশমিক ১১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা এই রেমিট্যান্সের গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে ১০৩ শতাংশের বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জুলাই-মার্চ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৯৪ কোটি ৩১ লাখ (১.৯৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ পরিসংখ্যানে এসব তথ্যে উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ২ হাজার ১৭৮ কোটি ৪৪ লাখ (২১.৭৮ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থ বছরের জুলাই-মার্চ সময়ের ৩.৯৪ বিলিয়ন ডলারের মধ্য দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে পেছনে ফেলে রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষ দেশের তালিকায় উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের চেয়ে অনেক কম বাংলাদেশি অবস্থান করেন আমেরিকায়।

‘রেমিট্যান্স মানেই সৌদি থেকে আসে’ সবার মুখে মুখে ছিল এতদিন। কিন্তু গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ঘটে ব্যতিক্রম; ওই অর্থ বছরে সৌদিকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে সেটাও উল্টে গেছে। এখন সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এতদিন প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত যুক্তরাষ্ট্রের ধারেকাছেও নেই।

চলতি অর্থ বছরের জুলাই-মার্চ সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ৩ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। সৌদি আরবের প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার।

অন্য দেশগুলোর মধ্যে এই নয় মাসে যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। মালয়েশিয়ার প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জুলাই-মার্চ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন। আরব আমিরাত থেকে এসেছিল ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। সৌদি আরব থেকে এসেছিল ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাজ্য থেকে এসেছিল ২ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। মালয়েশিয়ার প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ১ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। হিসাব বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-মার্চ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স বেড়েছে ১০২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তবে গত অর্থ বছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল যে দেশ থেকে, সেই আরব আমিরাত থেকে এই নয় মাসে কমেছে ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ।

সৌদি আরব থেকে অবশ্য ৪০ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেড়েছে। মালয়েশিয়া থেকে আরও বেশি বেড়েছে, ৫৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাজ্য থেকে বেড়েছে ১ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলছেন, নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস রেমিটেন্সে যে উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে তা মূলত যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণেই হয়েছে।

ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্সপ্রবাহের চিত্র পাল্টে যায়। প্রতি মাসেই বেশি প্রবাসী আয় আসছে দেশটি থেকে।

প্রবাসী আয় সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থ বছরের নবম মাস মার্চে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা মোট ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ (৩.২৯ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। একক মাসের হিসাবে যা রেকর্ড। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই কোনো মাসে এত বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসেনি।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৪ কোটি ৬১ লাখ ৩০ হাজার ডলার এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার এসেছে আরব আমিরাত থেকে। সৌদি আরব থেকে এসেছে ৪৪ কোটি ৮৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ৩৮ কোটি ৭১ লাখ ৯০ হাজার ডলার। মালয়েশিয়া থেকে এসেছে ২৯ কোটি ১০ লাখ ডলার।

হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় এভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী ও প্রবাসী আয় আহরণের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তার বলেন, প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে এক ধরনের বড় পরিবর্তন এসেছে। এখন প্রবাসী আয় প্রেরণকারী বৈশ্বিক বড় বড় প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দেশ থেকে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রবাসী আয় কিনে নেয়। পরে সেসব আয় একত্র করে নির্দিষ্ট একটি দেশ থেকে তা গন্তব্য দেশে পাঠায়। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রামসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠান অ্যাগ্রিগেটেড (সমন্বিত) পদ্ধতিতে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করে প্রেরণ করছে।

এ বিষয়ে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংক নির্বাহী সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক সভাপতি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রামসহ প্রবাসী আয় প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী আয় সংগ্রহের পর তা এক জায়গা থেকে গন্তব্য দেশে পাঠাচ্ছে। ফলে পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, যে প্রতিষ্ঠান যে দেশ থেকে এসব আয় পাঠাচ্ছে, সেসব দেশে থেকে প্রবাসী আয়ে বড় প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় বেড়ে যাওয়া মানে দেশটি থেকে প্রকৃত প্রবাসী আয় বেড়েছে হয়তো তেমন নয়। অন্যান্য দেশের আয়ও প্রবাসী আয় প্রেরণকারী বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর হাত ঘুরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসছে। এ কারণে পরিসংখ্যানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় বড় প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে কাগজে-কলমে।’

অন্য কারণও বলেছেন অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রথমত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিও এক ধরনের চাপের মধ্যে পড়েছিল; মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। দেশটির মানুষের পাশাপাশি সেখানে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদেরও খরচ বেড়েছিল।’ ‘সে কারণে সেখানকার প্রবাসীরা দেশে পরিবার-পরিজনের কাছে কম টাকা পাঠিয়েছিলেন। এখন যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি কমে স্বাভাবিক হয়েছে; ২ শতাংশে নেমেছে। অর্থনীতিও চাঙা হচ্ছে। তাই এখন আমাদের প্রবাসীরা বেশি টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Loan installment exemption has not negotiated in June IMF

ঋণের কিস্তি ছাড়ের সমঝোতা হয়নি, সিদ্ধান্ত জুনে: আইএমএফ

ঋণের কিস্তি ছাড়ের সমঝোতা হয়নি, সিদ্ধান্ত জুনে: আইএমএফ ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে এ দফার পর্যালোচনা বৈঠক শেষে সমঝোতা হয়নি বাংলাদেশের। ফলে চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত মতামত জানায়নি সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল। আইএমএফ বলেছে, এ বিষয়ে আলোচনা আরও চলবে এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দুই কিস্তির অর্থ পাওয়া যেতে পারে আগামী জুনের শেষ দিকে।

দুই সপ্তাহের পর্যালোচনার পর গতকাল বৃহস্পতিবার আইএমএফ আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এ ব্রিফিংয়ে আইএমএফের গবেষণা বিভাগের উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান (তিনি মিশনপ্রধান) ক্রিস পাপাজর্জিওসহ অন্য ৯ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

মিশনপ্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠেয় আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে। এ বৈঠক হবে ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল।

পাপাজর্জিও মনে করেন, বাংলাদেশের রিজার্ভের পাশাপাশি বিনিময় হারও স্থিতিশীল। রিজার্ভের পরিমাণ এমনকি তাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার আরও নমনীয় হলে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বাড়বে।

করব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আইএমএফ বলেছে, করনীতি ও প্রশাসনের মধ্যে পরিষ্কার পার্থক্য থাকা উচিত। এ ছাড়া করছাড় কমাতে হবে, করনীতিকে সহজ করতে হবে এবং রাজস্ব বৃদ্ধির টেকসই পথ খুঁজে বের করতে হবে।

ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে আইনগত সংস্কার ও কার্যকর সম্পদ মান যাচাই এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও সুশাসন জোরদারের প্রতিও গুরুত্বারোপ করে আইএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার জোরালো অগ্রগতি দরকার।

মিশনটি ৬ এপ্রিল থেকে গত বুধবার পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ইত্যাদি দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ৬ ও ১৬ এপ্রিল এ মিশন বৈঠক করেছে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও।

এর আগেও কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে আইএমএফ মিশন এসেছিল। মিশন শেষে উভয়পক্ষের মধ্যে একটি ‘স্টাফ লেবেল’ চুক্তি হয়েছিল। এটি আসলে কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে প্রাথমিক ইতিবাচক মনোভাবের প্রকাশ। এবার এ ধরনের স্টাফ লেবেল চুক্তি হয়নি বলে জানা গেছে।

আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার।

২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। বিপত্তি দেখা দেয় চতুর্থ কিস্তির অর্থছাড়ের বেলায়। অন্তর্বর্তী সরকারের আশা চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পাওয়া যাবে আগামী জুনে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The threat of stopping egg chicken production from May

মে থেকে ডিম-মুরগি উৎপাদন বন্ধের হুমকি খামারিদের

মে থেকে ডিম-মুরগি উৎপাদন বন্ধের হুমকি খামারিদের ছবি: সংগৃহীত

আগামী মে মাস থেকে ডিম-মুরগি উৎপাদন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে দেশের প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। খামার বন্ধ রেখে এই কর্মসূচি পালনের হুমকি দিয়েছে তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সংগঠনটি।

সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, যতক্ষণ না সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, ততক্ষণ আমাদের এই কর্মসূচি চলবে।

সভাপতির সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রমজান ও ঈদ উপলক্ষে প্রান্তিক খামারিরা প্রতিদিন ২০ লাখ কেজি মুরগি উৎপাদন করেছে। প্রতি কেজিতে ৩০ টাকা ধরে এক মাসে লোকসান হয়েছে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। দৈনিক ৪ কোটি ডিম উৎপাদনের মধ্যে প্রান্তিক খামারিরা ৩ কোটি ডিম উৎপাদন করে। প্রতি ডিমে ২ টাকা করে লোকসানে, দুই মাসে ডিমে লোকসান হয়েছে ৩৬০ কোটি টাকা। মোট দুই মাসে ডিম ও মুরগির খাতে লোকসান দাঁড়িয়েছে ১২৬০ কোটি টাকা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিদিন শত শত খামার বন্ধ হচ্ছে। একসময় এই খাত ছিল দেশের অন্যতম কর্মসংস্থানের উৎস, অথচ আজ তা ধ্বংসের পথে। সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর নীরবতায় কিছু করপোরেট কোম্পানি পুরো পোলট্রি শিল্প দখলের ষড়যন্ত্রে নেমেছে। তারা শুধু ফিড, বাচ্চা ও ওষুধ নয়- ডিম ও মুরগির বাজারও নিয়ন্ত্রণ করছে।

বিপিএ আরও জানায়, ঈদের আগে ২৮–৩০ টাকায় উৎপাদিত বাচ্চা করপোরেট কোম্পানিগুলো ৭০–৮০ টাকায় বিক্রি করে। এখন সেই বাচ্চাই ৩০–৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার উৎপাদন খরচ ১৬০–১৭০ টাকা, অথচ করপোরেটরা বাজারে বিক্রি করছে ১২০–১২৫ টাকায়। লোকসান গুনছে খামারিরা। খামারিদের সংগঠনটি বলছে, ‘ডিমের উৎপাদন খরচ ১০–১০.৫০ টাকা, অথচ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮–৮.৫০ টাকায়। বাজার মূলত করপোরেটের হাতে; তারা দাম নির্ধারণ করে- খামারিদের বাধ্য করা হয় মানতে।’

মন্তব্য

p
উপরে