আগের দুইবারের মতো এবারও রাষ্ট্রপতি যে সার্চ কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছেন, সেটি বিএনপির কাছে অর্থহীন, মূল্যহীন বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বলেছেন, তারা এই সার্চ কমিটির কাছে কোনো নাম প্রস্তাব দেবেন না।
বিআরবি হাসপাতালে সোমবার বেলা ১১টার দিকে নাটোর জেলা বিএনপির নেতা আবদুল আজিজকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের এমন কথা বলেন ফখরুল।
গত শনিবার নির্বাচন কমিশন গঠনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান করে অনুসন্ধান বা সার্চ কমিটি গঠন করে দেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। কমিটির সদস্যদের নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি।
কমিটি দায়িত্ব নিয়ে ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ইসি গঠনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নাম প্রস্তাব চেয়েছে।
সার্চ কমিটিতে বিএনপি কারও নাম দেবে না বলে জানিছেন ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সার্চ কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এটি মূল্যহীন, অর্থহীন। গতবারের অভিজ্ঞতা এবং আগের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, এটাতে কোনো লাভ হয় না। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে যদি আগামী নির্বাচন হয়, তাহলে এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না, কারণ সে নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে না।’
৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নে জেলা বিএনপির সদস্য ও গুরুদাসপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল আজিজের ওপর হামলা হয়।
হামলাকারীরা তাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে আনা হয়।
বিএনপি সার্চ কমিটির কাছে ইসি গঠনে নাম প্রস্তাব করবে কি না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল সাফ বলেন, ‘সার্চ কমিটির কাছে নির্বাচন কমিশন গঠনে নাম দেয়ার প্রশ্নই আসে না। আমাদের কাছে এর কোনো মূল্য নেই।’
কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তাই তাই করছে। নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন হয়েছে, যা সম্পূর্ণ জনগণের ইচ্ছার বিপক্ষে। আগে দুইবার যেভাবে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে, এবারও সেভাবেই হয়েছে।
‘এটা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা ছাড়া আর কিছু না। আমরা দেখছি বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে, সার্চ কমিটি গঠন করা হচ্ছে, কিন্তু সার্চ কমিটিতে যারা আছেন তারা অধিকাংশই আওয়ামী লীগ-সমর্থিত। এমন একজন আছেন যিনি আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নমিনেশন নিয়েছিলেন।’
আওয়ামী লীগ এবারও হুদা কমিশনের মতো আরেকজনকে নির্বাচন কমিশনে বসাবে বলে এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে কোনো সার্চ কমিটি দিয়েই নির্বাচন কমিশন গঠন করে কোনো লাভ হবে না বলেও জানান বিএনপি নেতা।
আরও পড়ুন:দীর্ঘ ১৭ দিন পর বাসায় ফিরেছেন যুক্তরাজ্যে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
স্বাস্থ্যের যথেষ্ট উন্নতি হওয়ায় চিকিৎসকরা আপাতত তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে তিনটা) বেগম খালেদা জিয়াকে তারেক রহমান তার বাসায় নিয়ে যান।
এর আগে তারেক বাংলাদেশি অধ্যুষিত ব্রিকলেন মসজিদে তার প্রয়াত ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর রুহের মাগফিরাত কামনা করে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে অংশ নেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, শুক্রবার রাতের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট হাতে আসবে। সবকিছু ভালো থাকলে তাকে রিলিজ দেওয়া হতেও পারে। তবে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক প্রফেসর পেট্রিক কেনেডি ও জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে থাকবেন।
খালেদা জিয়ার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে আসা যায়নি জানিয়ে তিনি বৃহস্পতিবার বলেন, ‘উনার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। কারণ উনার বয়সটা একটা বিবেচ্য বিষয়।
‘তা ছাড়া জেলে রেখে তাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তখন তাকে বিদেশে নিয়ে আসা গেলে আরও হয়তো দ্রুত সুস্থ করা যেত। এখন আমাদের চিকিৎসকদের বক্তব্য হচ্ছে আগে হলে হয়তো উনার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা যেত।’
ডা. জাহিদ আরও জানান, বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়ার লিভার, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, প্রেশার, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসসহ সব রোগের জন্য ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা চলছে। আপাতত ওষুধের মাধ্যমেই এটি অব্যাহত থাকবে। এর বাইরেও আরও কোনো চিকিৎসা করা যায় কি না, সে লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস হসপিটালের মেডিক্যাল টিমের সদস্যরা এখানে মেডিক্যাল বোর্ডের সভায় অংশ নিয়েছিলেন।
এদিকে দ্য ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শে বেগম খালেদা জিয়াকে প্রতিদিন বাসা থেকে খাবার এনে দেওয়া হতো। ছেলে তারেক রহমান, পুৃত্রবধূ জুবাইদা রহমান, নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি, দুই কন্যা জাফিয়া ও জাহিয়া রহমান বিএনপি চেয়ারপারসনকে নিয়মিত দেখাশোনা করতেন।
এ ছাড়া যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ প্রতিদিন হাসপাতালে উপস্থিত থাকতেন।
গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। সেদিন হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তাকে বিশেষায়িত বেসরকারি হাসপাতাল দ্য লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।
আরও পড়ুন:বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপনের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’ নামের হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা জানান।
বাসসকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেন লন্ডনের বসবাসরত বাংলাদেশি সাংবাদিক শাহেদ শফিক।
ডা. জাহিদকে উদ্ধৃত করে শাহেদ শফিক বলেন, ‘বেগম জিয়ার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায়নি। বৃহস্পতিবার বেগম খালেদা জিয়ার নতুন করে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেওয়া হয়েছে।
‘শুক্রবার সেসব রিপোর্ট পাওয়া যাবে। রিপোর্টে যদি সব ঠিক থাকে, তাহলে সন্ধ্যার দিকে হাসপাতাল থেকে তার ছুটি হতে পারে। এরপর তিনি বাসায় ফিরবেন।’
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, পরবর্তী সময়ে বাসা থেকে নিয়মিত চিকিৎসা নেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সার্বক্ষণিকভাবে অধ্যাপক পেট্রিক কেনেডি ও জেনিপার ক্রসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন থাকবেন তিনি।
ডা. জাহিদ আরও বলেন, ‘গত ১৭ দিনে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়েছে। দুই-একটি রিপোর্ট এখনও আসেনি। কয়েকটি পরীক্ষা ‘দ্য ক্লিনিকে’ করা যায় না। সেগুলো বাহিরের হাসপাতাল থেকে করাতে হয়।
‘তবে খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে আগের চেয়ে এখন অনেকটাই বেটার আছেন।’
খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপনের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে না আসার কারণ জানিয়ে ডা. জাহিদ বলেন, ‘ম্যাডামের লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। কারণ, বয়সটা এখানে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। তা ছাড়া জেলে রেখে তাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।’
ডা. জাহিদ আরও বলেন, ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিকের ডাক্তাররা বলছেন, আরও অনেক আগে ম্যাডামকে বিদেশে নিয়ে আসা গেলে তার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা যেত। তাকে দ্রুত সুস্থ করা যেত।
‘এখন ওষুধের মাধ্যমে উনার যে চিকিৎসা চলছে, তা অব্যাহত রাখার জন্য সব চিকিৎসকরা একমত এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা চলবে।’
ওই সময় যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হলে ফ্যাসিবাদীরা ফিরে আসবে বলে শুক্রবার মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে সকালে জেলা জামায়াত আয়োজিত কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘এমন কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন না যাতে আমাদের জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয় এবং ফ্যাসিস্টরা ফিরে আসার সুযোগ পায়।’
তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজি ও দখল বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হলে পুনরায় ফিরে আসার সুযোগ পাবে ফ্যাসিস্টরা। জাতীয় ঐক্য অটুট রেখে মানবিক বাংলাদেশ গড়তে হবে।’
উন্নয়নের নামে আওয়ামী লীগ সরকার ২৬ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে অভিযোগ করে শফিকুর বলেন, সেই ফ্যাসিস্টদের আশ্রয় আর বাংলার মাটিতে হবে না।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সংঘটিত সকল হত্যার বিচার চাই। মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই যুদ্ধ চলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ ৫৩ বছরের প্রত্যেকটি খুন, গুম ও অপকর্মের বিচার বাংলার মাটিতে হবে। যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মের মানুষের ওপর জুলুম-অত্যাচার করেছে, জমি দখল করেছে, ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করেছে, অন্যায়ভাবে সম্পদ লুণ্ঠন করেছে,তাদের ইজ্জতে হাত দিয়েছে, সেসব দুষ্কৃতিকারীদের তালিকা তৈরি করে জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে।’
আরও পড়ুন:সবার আগে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
তিনি বলেন, একদিকে মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপণ্য ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে, অন্যদিকে শতাধিক পণ্য ও সেবায় নতুন করে ভ্যাট আরোপ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
এক বিবৃতিতে সোমবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন বা সংস্কার নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। মানুষের জীবন ও জীবিকা নিয়ে চিন্তা করার যেন কেউ নেই। টিসিবির ট্রাকের সামনে লাইন দিনে দিনে বড় হচ্ছে।
‘এখন প্যান্ট-শার্ট পড়েও স্বল্প দামে চাল-ডাল কিনতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অসংখ্য মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছে। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম হওয়ায় অনেকেই ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে না পেরে একবুক কষ্ট নিয়ে খালি হাতে ঘরে ফিরছে।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের কাছে মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম কেনা দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিভাবকরা সন্তান ও পরিজনের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছেন না। সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারছেন না; কিনতে পারছেন না জীবন রক্ষাকারী ঔষধ।
‘এমন বাস্তবতায় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা।’
জিএম কাদের বলেন, ‘দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করি। আমরা মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা বলেই যাব।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে সরকার দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
আরও পড়ুন:বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংস্কার ও নির্বাচন একটি থেকে আরেকটি পৃথক নয়। দুটোই নির্বিঘ্নে এবং সমান্তরালে এগিয়ে যেতে পারে।
জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। সংস্কার অব্যাহত থাকবে; নির্বাচনও চলবে।
তিনি বলেন, যে দল নির্বাচনে জয়ী হবে এবং সরকার গঠন করবে, তারাই সংস্কার এগিয়ে নিয়ে যাবে।
বিএনপির বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে এটা পরিষ্কারভাবে বলতে পারি যে, আমরা প্রতিটি সংস্কার (যদি আমরা সরকার গঠন করি) এগিয়ে নেব।’
চার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মির্জা ফখরুল।
তিনি উল্লেখ করেন, সরকার বলেছে যে, তারা প্রতিবেদন পাওয়ার পরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে এবং তার পরে সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
তবে ঐকমত্য ছাড়া কোনো সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে না বলে জানান বিএনপির মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে আমরা সকল মানুষের মধ্যে শক্তিশালী ঐক্য কামনা করি এবং আশা করি যে, আমরা শিগগিরই একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে ফিরে আসতে পারি; একটি সঠিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারি।’
এর আগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মির্জা ফখরুল।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির কয়েক হাজার নেতা-কর্মী শেরেবাংলা নগরে জিয়ার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পরে তারা জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত করেন।
ওই সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরাফত আলী, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাইফুল আলম নীরব, ডা. রফিকুল আলম মঞ্জুসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও জিয়ার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
আরও পড়ুন:বাজার নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে দুষেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেছেন, পূর্ববর্তী সরকারের মিথ্যা তথ্যের কারণেই বাজার নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে বর্তমান সরকার।
সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, আলুর উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বেড়েছে। যদিও বিগত সরকার আলুর বাম্পার ফলন দেখিয়েছে।
কৃষি সাংবাদিকতাবিষয়ক প্রশিক্ষণের উদ্বোধন শেষে রবিবার সকালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রেস সচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার এতদিন দেশবাসীকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে; বলেছে, উৎপাদন বেড়েছে।কিন্তু ঘটনা উল্টো, যার ফলে অন্তর্বর্তী সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের জুট চুক্তি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছিল। এর ফলাফল ১৯৭৪ সালে ১০ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা গেছে।’
নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে প্রেস সচিব বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট চূড়ান্ত করা হবে। সেই সঙ্গে কী পরিমাণ সংস্কার চায়, তার ওপর ভিত্তি করে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ হবে।’
আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যাদের হাতে রক্ত আছে, তাদের সবার বিচার হবে। দলটির নেতাদের মধ্যে এখনও কোনো অনুশোচনা নাই।
‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা এই সরকারের নেই। তাদের নিষিদ্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে রাজনৈতিক দলগুলো।’
২০২৫ সালের বাজেট জনবান্ধব হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যৌক্তিকতা বিবেচনা করেই সরকারি চাকরিজীবীদের মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
আরও পড়ুন:বহুদলীয় গণতন্ত্রের রূপকার, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী রবিবার।
১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলীর নশিপুর ইউনিয়নের বাগবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
রসায়নবিদ মনসুর রহমান ও জাহানারা খাতুন দম্পতির পাঁচ ছেলের মধ্যে জিয়াউর রহমান ছিলেন দ্বিতীয়। তার ডাকনাম কমল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিপথগামী একদল সেনা সদস্যের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যার শিকার হন। এরপর ঘটনাবহুল ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে একদল বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নিহত হন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি।
কর্মসূচি
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল বেলা ১১টায় শেরে বাংলানগরে তার কবরে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের পুষ্পস্তবক অর্পণ।
অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে দুপুর ২টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ মিলনায়তনে বিএনপির আলোচনা সভা। এতে বক্তব্য দেবেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য, জাতীয় নেতা ও বিশিষ্টজনরা।
সভায় সভাপতিত্ব করবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন দলটির বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এ ছাড়া বেলা ৩টায় ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ-এ আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বিএনপির শরিক দলের নেতারা। এতে বক্তব্য দেবেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিসহ জাতীয় নেতারা।
জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘জিয়া স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট’-এর আয়োজন করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। ২৬ থানার অংশগ্রহণে প্রতিযোগিতার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে সন্ধ্যা ৫টা ৩০ মিনিটে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
পুরস্কার বিতরণ করবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন বিএনপির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক।
এ ছাড়া জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।
দলের অঙ্গ, সহযোগী ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো আলোচনা সভা ও শীতবস্ত্র বিতরণ করবে। সারা দেশে একই কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।
এদিকে জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বাণীতে তিনি বলেন, ‘মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্সের অধিনায়ক, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শনের প্রবক্তা ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘দেশের সব ক্রান্তিকাল উত্তরণে শহীদ জিয়া জাতির দিশারী।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের জনগণের ওপর আক্রমণ করার পর তিনি পাকিস্তানি অধিনায়ককে বন্দি করে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘২৬ মার্চ তিনি চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেন অসীম বীরত্বে।
‘সেদিন থেকেই দেশবাসী তার অসাধারণ নেতৃত্বের পরিচয় পায়। দেশের সব সংকটে তিনি ত্রাণকর্তা হিসেবে বারবার অবতীর্ণ হয়েছেন।’
মন্তব্য