করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশে টিকাদান কার্যক্রমের এক বছর পূর্তি হলো। এই এক বছরে দেশের ৫৭ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। তবু দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।
করোনা রুখতে বৈশ্বিক টিকাদান পর্যবেক্ষণ ওয়েসবাইট ‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা’-এর তথ্য পর্যালোচনায় এমন চিত্র উঠে এসেছে।
ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও মালদ্বীপের চেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। কেবল পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও মিয়ানমার টিকাদানে বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে।
টিকাদানে পিছিয়ে থাকার নেপথ্য কারণ হিসেবে বেশকিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, টিকাদানে সঠিক পরিকল্পনা না থাকা, সহজ পথে টিকা সংগ্রহ না করা, টিকা সরবরাহে ঘাটতি, টিকা সংগ্রহে শুরুর দিকে কূটনৈতিক তৎপরতা না থাকা, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর টিকা নিশ্চিত না করে টিকাদানে বয়সসীমা কমানো, ৬ মাস টিকাদান কর্মসূচিতে ধীরগতিসহ নানা কারণে অন্যান্য দেশের তুলনায় টিকাদান কর্মসূচিতে পিছিয়ে আছে দেশ।
সরকার শুরুর দিকে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। সে হিসাবে দেশে টিকা গ্রহণের উপযোগী জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১২ কোটি। তবে গত বছরের ডিসেম্বরে এসে এই লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ কমিয়ে ৭০ শতাংশ করা হয়।
সে লক্ষ্যে ১১ কোটি ৯২ লাখ ২১ হাজার ৯৫৩ জনকে টিকাদানে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কেন ১০ শতাংশ মানুষকে টিকাদানের পরিকল্পনা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করা হয়নি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ২৩ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দেশে ৭০ শতাংশ মানুষকে করোনার টিকা দেয়া তাদের লক্ষ্য, আর এই সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে আগামী মার্চের মধ্যেই টিকার আওতায় আনা হবে। সে অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি শেষে ৮ কোটি মানুষকে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া সম্ভব হবে।
দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার প্রথম প্রয়োগ হয় ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি। রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে প্রয়োগের মাধ্যমে এই টিকা কার্যক্রম শুরু হলেও গণটিকা শুরু হয় ১০ দিন পর ৭ ফেব্রুয়ারি।
টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে শুরুতে মানুষের মধ্যে আগ্রহের ঘাটতি ছিল। এই টিকা নিলে মানুষ মারা যাবে, নানা শারীরিক ক্ষতি হবে- এমন কথাও মানুষকে টিকাবিমুখ করে তুলেছিল।
বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত কোভ্যাক্স প্রয়োগের মাধ্যমে। এই টিকা কিনতে চুক্তি হয়েছিল ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে।
সে সময় তিন কোটি ৪০ লাখ ডোজ টিকা কিনতে চুক্তি হলেও ভারতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় সে দেশের সরকার টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। ফলে মার্চের পর কয়েক মাস ভারত থেকে বাংলাদেশে টিকা পাঠাতে পারেনি সিরাম।
সে সময়ে টিকা সংকট দেখা দেয়ায় পুরো টিকাদান কর্মসূচি একটি ধাক্কা খায়। কমে আসে কর্মসূচির গতি।
এই পর্যায়ে বাংলাদেশ টিকা পেতে চীনের সঙ্গে চুক্তি করে। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা বিতরণে গড়ে তোলা আন্তর্জাতিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের মাধ্যমে কোটি কোটি টিকা আসতে থাকে।
এ অবস্থায় টিকার অনিশ্চয়তা দূর হওয়ার পর প্রয়োগের ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করে কত মানুষকে তা দেয়া হবে।
ইতিমধ্যে দেশে ২৪ কোটি টিকা এসে পৌঁছেছে। সরকারের হাতে এখনও পাঁচ কোটি টিকা মজুত রয়েছে।
২৩ জানুয়ারির ওই সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ‘করোনা প্রতিরোধে ইতিমধ্যে ৯ কোটি ৮৯ লাখ মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেয়া সম্ভব হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ৬ কোটি ৪৬ লাখের বেশি।
‘এ ছাড়া ১ কোটি ৪১ লাখ শিক্ষার্থীকে করোনা টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে। ২৬ লাখের বেশি শিক্ষার্থী দ্বিতীয় ডোজ পেয়ে গেছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ১ কোটি ৮১ লাখ ৮৪ হাজার টিকা দেয়া হয়েছে। এসব ক্লিনিকে ১ কোটি ৪ লাখের বেশি মানুষ দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছে। টিকার ব্যাপক মজুত থাকায় দেশে তৃতীয় টিকা বা বুস্টার ডোজের প্রয়োগও শুরু হয়েছে।’
‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা’ ওয়েবসাইটের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৫৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ মানুষ টিকা পেয়েছে। এই হার ভারতে ৬৮ দশমিক ২০, শ্রীলঙ্কায় ৭৭, পাকিস্তানে ৪৮ দশমিক ০৪, ভুটানে ৮৪ ও মালদ্বীপে ৭৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। আর বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে থাকা নেপালে ৫৬ দশমিক ৭১, মিয়ানমারে ৪০ দশমিক ৩৪ ও আফগানিস্তানে ১১ শতাংশ মানুষ টিকা পেয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে দুই ডোজ করে টিকা পেয়েছেন ৩৬ দশমিক ৯১ শতাংশ মানুষ। এই হার ভারতে ৫২ দশমিক ৩১, পাকিস্তানে ৩৮ দশমিক ৬৩, নেপালে ৪৯ দশমিক ৫৫, শ্রীলঙ্কায় ৬৫ দশমিক ৪৭, ভুটানে ৭৬ দশমিক ৭৮, মালদ্বীপে ৬৮ দশমিক ৫২, মিয়ানমারে ৩৪ দশমিক ৩৯ ও আফগানিস্তানে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ইতিমধ্যে ১০ কোটি ডোজ টিকা দেয়া সম্পন্ন হয়েছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে ১৫ কোটি ডোজ টিকা দেয়া শেষ হবে। এই সময়ের মধ্যে জনপ্রতি দুই ডোজ করে মোট সাড়ে সাত কোটি মানুষ টিকা পেয়ে যাবেন। মার্চের মধ্যে সব মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি পরে শুরু হয়েছে। সরকার টিকাদানের পরিকল্পনা নিতে দেরি করেছেন। মাঝপথে এসে আবার ভারত থেকে টিকার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
‘এ ছাড়া টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৪০ শতাংশ জনবল কম থাকায় এটি স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। শুরুতে মানুষের মধ্যে টিকা নিতেও অনীহা ছিল। তবে গেল দুই মাসে টিকাদান কর্মসূচি গতি পেয়েছে। এই গতি অব্যাহত থাকলে আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।’
বিএসএমএমইউর ফারমাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টিকা সংগ্রহে আমরা একটিমাত্র সোর্সের ওপর নির্ভর করেছিলাম। এ ছাড়া পাইপলাইনে থাকা টিকা আমরা সংগ্রহ করিনি। অনেক দেশ টিকা উৎপাদনে গুরুত্ব দিলেও আমরা দেইনি। ইরান, তাইওয়ান ও থাইল্যান্ডের মতো দেশ টিকা উৎপাদনে গুরুত্ব দিয়েছে।
‘এক সোর্সের টিকার ওপর নির্ভর করায় প্রায় ৬ মাস টিকাদান কর্মসূচিতে ধীরগতি ছিল। তবে চীন থেকে টিকার সরবরাহ আসার পর কিছুটা হলেও গতি বেড়েছে কর্মসূচিতে।’
ডা. সায়েদুর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা সহজ পথে টিকা সংগ্রহ করতে পারিনি। অনেক রাষ্ট্র পরীক্ষামূলকভাবে টিকাদানে সম্মতি দিলেও এখানে সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। কূটনৈতিক তৎপরতাও ছিল না। এসব কারণে টিকাদান কর্মসূচিতে পিছিয়ে আছে দেশ।’
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য