সিটি করপোরেশনের অনুমোদন ছাড়া রাজধানীতে সরকারি-বেসরকারি কোনো স্থাপনা বা অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত এসেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক সমন্বয় সভা থেকে। সেই সঙ্গে আর কেউ যাতে অনুমতি ছাড়া অবকাঠামো নির্মাণ করতে না পারেন সে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে দুই সিটির মেয়রকে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে রোববার সে সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মেয়র, ওয়াসা, রাজউকসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা।
সভায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীন উন্নয়ন কার্যক্রমের কারণে জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ঢাকার দুই মেয়র।
তাদের বক্তব্য শুনে সব স্থাপনা নির্মাণে সিটি করপোরেশনের অনুমোদন নিতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘যে যাই করুক না কেন, এ শহরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বা অন্য কোনো মন্ত্রণালয় অথবা কোনো জনসাধারণ, সরকারি-বেসরকারি, ব্যক্তিগত যেই হোক না কেন, যে কোনো অবকাঠামো করতে হলে সেটা রাস্তা হোক, ব্রিজ হোক, কালভার্ট হোক বা দোকান হোক, এটার জন্য সিটি করপোরেশন থেকে একটি অনুমোদন নিতে হবে।
‘রাজধানীতে সিটি করপোরেশনের অনুমতি ছাড়া কোনো সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, রাস্তাসহ কোনো উন্নয়ন কার্যক্রম নেয়া যাবে না। রাজউক অনুমতি দিলেও যদি সিটি করপোরেশন মনে করে এটা শহরের জন্য কল্যাণকর নয়, তাহলে সে কাজ বন্ধ করে দিতে পারবে।’
রাজধানী ও আশেপাশের এলাকায় যে কোনো ভবন নির্মাণ করতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছ থেকে নকশা ও ভবন নির্মাণের অনুমোদন নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
পাশাপাশি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বেশ কয়েকটি সংস্থার কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। এবার সে তালিকায় যুক্ত হলো সিটি করপোরেশনও।
নতুন পাওয়া ক্ষমতায় সব সংস্থার অনুমোদন থাকলেও সিটি করপোরেশন চাইলে এখন যে কোনো প্রকল্প বাতিল করতে পারবে।
সিটি করপোরেশনে এই অনুমতি নিতে গিয়ে যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হন তাও নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।
সভায় বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রকল্পের কারণে সমস্যায় পড়ার কথা তুলে ধরেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
তিনি বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকটি জায়গায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছি বিআইডব্লিউটিএর মাধ্যমে। তারা বিভিন্ন কার্যক্রম নিচ্ছে যেটা আমাদের সাথে বেশ সাংঘর্ষিক। তারা এমন কিছু কাজ হাতে নিচ্ছে যা সিটি করপোরেশনের একক এখতিয়ার।
‘এ বিষয়ে আপনার নির্দেশনা প্রয়োজন। শুধু প্রকল্প নির্ভর কাজ করেই ঢাকাকে আজকে এই অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা নিজস্ব প্রকল্প নির্ভর কাজে ঢাকা আজ নুইয়ে পড়েছে। আমরা ঢাকাকে পুনর্জীবিত করতে চাই, এখানে আপনাদের সহযোগিতা চাই তাহলে সমাধানগুলো আমরা করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এমআরটি প্রকল্প (মেট্রোরেল) নিয়েও সমস্যায় পড়েছি। আমরা মানিকনগর-কমলাপুর এলাকায় নর্দমার লাইন করে ফেলেছি, কিন্তু এখন তারা বলছে এখানে তাদের কলাম বসবে। এটা নিয়ে তাদের সাথে আমাদের একটু দেন দরবার চলছে। প্রথমে এটি মতিঝিল পর্যন্ত ছিল। পরে এটা বর্ধিত করে কমলাপুর পর্যন্ত তারা নিয়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী তাদের এ নির্দেশনা দিয়েছেন। তাদের কিন্তু কোনো পরিকল্পনা ছিল না।
‘আমরা জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ করার পর এখন তারা এ কথা বলছে। প্রথমে তারা বলেছিল, আমরা যেখানে নর্দমা করছি সেখানে পিলার পড়বে না। আমরা যখন মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনে নিয়েছি তখন তারা বলছে তাদের পিলার পড়বে। তারা কিন্তু এখনো নকশা করেনি। তারা নকশা পরিবর্তন কিন্তু করতে পারে, তারা তো ঘরে বসে কাজ করবে। আমাদের এখন বলছে, আমাদের নর্দমা সরাতে হবে। এই যে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো হয়, এটা আমাদের জন্য সমস্যা তৈরি করছে।’
জবাবে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এমআরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আর ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার জন্য এসব নর্দমা খনন কোনোভাবেই উপেক্ষা করার বিষয় না। এখন আমার মনে হয় আপনারা একটি ছোট কমিটি করেন, তারা বসুক, দেখুক কোথায় কোথায় সমস্যা আছে, কীভাবে আমরা কাজ করতে পারি। এটা আমাদের মিলেমিশে সমাধান করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনকে আমার মনে হয় এই গার্ডসটা নিতে হবে। যেখানেই সমস্যা হবে বন্ধ করে দেন। এ জন্য কোনো আকাম-কুকাম করতে দেয়া হবে না। মেয়র তো ফাদার অফ দ্যা সিটি। সব কিছুর মালিকানা তো আপনার। আপনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাজও বন্ধ করে দিতে পারেন।’
৬ খাল বন্ধ করে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের আবাসন
সভায় বেড়িবাঁধ এলাকায় ইস্টার্ন হাউজিংয়ের আবাসন প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ তুলে ধরেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আজকে একটি বিষয়ে দৃষ্টি না দিলেই নয়; মিরপুর বেড়িবাঁধ থেকে ইস্টার্ন হাউজিং বিভিন্ন জায়গায় আফতাবনগর, এই যে মিরপুর বেড়িবাঁধে এতো বড় ইস্টার্ন হাউজিং হলো, নাকের ডগায় ছয়টি খাল তারা বন্ধ করে দিয়েছে।
‘এত বড় সাহস তাদের কীভাবে হলো? খাল বন্ধ করে দুই ফিট করে পাইপ দিয়েছে, আর এখানে ইস্টার্ন হাউজিং ব্যবসা করছে। আমার প্রস্তাব ইস্টার্ন হাউজিংয়ের যতো প্রজেক্ট আছে সব বন্ধ করতে হবে। তাদের বলতে হবে, তোমরা এই খালগুলোতে বেইলি ব্রিজ করে দাও, নিচে দিয়ে যাতে নৌকা যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘ডেভেলপার যারা আছে বড় বড় খাল ছোট পাইপ দিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছে। আদি খালের উপর অবশ্যই বেইলি ব্রিজ করে দিতে হবে, না হলে তাদের কোনো অনুমতি দেয়া যাবে না। এখন তারা মনে করছে তারা কাজ করবে আর আমরা সরকারি টাকায় ব্রিজ বানাবো। এটা হবে না। তারা তো ইনকাম করছে, এটা তাদের দায়িত্ব।
‘এ দেশের কি মা-বাপ বলে কেউ নেই? দেখার কেউ নাই? বছিলাতে রামচন্দ্রপুর খালের উপর বিল্ডিং করে ফেলল, ইউ ল্যাবের মতো একটি বিশ্ববিদ্যালয় তারাও খালের উপর ভবন করে ফেলল; আমরা এখন এই সমস্ত কিছুর ম্যাপিং করছি, এরপর আমি আপনার কাছে দেখাব কতগুলো অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এগুলো সব কিন্তু আমাদের ভেঙে ফেলতে হবে।’
অবশ্য প্রকল্প বন্ধ করার পক্ষে নন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তবে খালগুলো পুনরুদ্ধারের বিষয়ে সিটি করপোরেশনকে উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেন তিনি।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ইস্টার্ন হাউজিংয়ের প্রকল্প বন্ধ করব না। তারা যে অনিয়ম করেছে সেটার জন্য তাদের সরে যেতে হবে। সিটি করপোরেশন এ কাজটা করবে। আমরা সিটি করপোরেশনের সাথে আছি। আগামী বর্ষাতে যাতে কোনো জলাবদ্ধতা না হয়, আশা করি হবে না
আরও পড়ুন:উপজেলা নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের কমিটি গঠন ও সম্মেলন বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে শনিবার এক বিফ্রিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন শুরু হতে যাচ্ছে, আগামী ৮ মে প্রথম পর্যায়ের নির্বাচন হবে। এ নির্বাচন চলাকালে উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে কোনো সম্মেলন, মেয়াদোত্তীর্ণ সম্মেলন, কমিটি গঠন এই প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে।’
মন্ত্রী-এমপির নিকটাত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘নিকটজনেরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। যারা ভবিষ্যতে করতে চায় তাদেরও নির্বাচনি প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। যারা আছে তাদের তালিকা তৈরি করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।’
নির্দেশনা দেয়া হলেও অনেকেই এখনও নির্বাচনে আছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রত্যাহারের তারিখ শেষ হোক, তার আগে এ বিষয়ে কীভাবে বলা যাবে।’
ঈদুল ফিতরকেন্দ্রিক যাত্রায় দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও এক হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
যাত্রীদের স্বার্থ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা সংস্থাটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন।
ঈদযাত্রায় অন্যান্য পথে দুর্ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একই সময়ে রেলপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত, ২১ জন আহত হয়েছে। নৌপথে দুটি দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত, পাঁচজন আহত হয়েছে।
‘সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৪১৯টি দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত ও ১ হাজার ৪২৪ জন আহত হয়েছে।’
যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মোজাম্মেল বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানীর বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবত পর্যবেক্ষণ করে আসছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ শতাংশ মানুষের বেশি যাতায়াত হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিগত ১৫ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো থাকায় যানবাহনে গতি বেড়েছে।
‘দেশের সবকটি সড়ক-মহাসড়কের পাশাপাশি পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচলের কারণে মোট যাত্রীর সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ মোটরসাইকেলে যাতায়াত করেছে। সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি চরমে উঠেছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যর কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনের ঈদে বাড়ি যেতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৪ এপ্রিল থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও ১ হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছে। বিগত ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত ও ৫৬৫ জন আহত হয়েছিল।
‘বিগত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ, প্রাণহানি ২৪ দশমিক ০৮ শতাংশ, আহত ১৪৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পঞ্চম তলায় শিশু হৃদরোগ (কার্ডিয়াক) বিভাগের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) লাগা আগুন পুরোপুরি নিভিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
শুক্রবার দুপুর দেড়টার কিছু সময় পর ওই আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট প্রায় এক এক ঘণ্টার চেষ্টার পর ২টা ৪০ মিনিটে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আগুন থেকে বাঁচতে ছোটাছুটি করে যে যেভাবে পেরেছেন সেভাবেই তাদের সন্তানদের নিয়ে হাসপাতালের বাইরের ফ্লোরে অবস্থান নিয়েছেন। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে এমনিতেই বাইরে অসহনীয় গরম। গরম সহ্য করতে না পেরে শিশুরা কান্নাকাটি করছে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের গণমাধ্যম কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের তিনটি ইউনিট, সিদ্দিক বাজার থেকে একটি ইউনিট, তেজগাঁও থেকে একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ২টা ৪০ মিনিটে আগুন পুরো নিভিয়ে ফেলা হয়।
তবে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে লাগা এই আগুনে রোগীদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, রোগীদের সবাইকে নিচে নামিয়ে আনা হয়েচে। ইউসিইউতে ১৭ জন রোগী ছিলেন আমরা নামিয়ে এনেছি। কারো কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
তিনি বলেন, হাসপাতালের বি ব্লকের ৫ তলার কার্ডিয়াক বিভাগের আইসিইউতে আগুন লেগেছে। আগুনের চেয়ে ধোঁয়া একটু বেশি ছড়িয়েছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।
আগুনের সূত্রপাত কীভাবে করা হলো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখনও বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না। তবে আশঙ্কা করছি এসি থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, কার্ডিয়াক বিভাগের আইসিইউতে লাগা আগুনের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির পাঁচ সদস্যের মধ্যে কার্ডিয়াক আইসিইউ বিভাগের প্রধানকে আহ্বায়ক করা হয়েছে।
এ ছাড়া কমিটিতে একজন মেইনটেইন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ওয়ার্ড মাস্টার, একজন নার্স ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি রয়েছেন। তারা তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
এদিকে বিকেলে দেখা যায়, আগুন লাগার পর হাসপাপতালের ৫ তলা ও ৪ তলার পুরো ধোঁয়ায় ভরে গেছে। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে। আগুন থেকে বাঁচতে ছোটাছুটি করে যে যেভাবে পেরেছেন সেভাবেই তাদের সন্তানদের নিয়ে হাসপাতালের বাইরের ফ্লোরে অবস্থান নেন।
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে এমনিতেই বাইরে অসহনীয় গরম। গরম সহ্য করতে না পেরে শিশুরা কান্নাকাটি করছে। ওপরে সবকিছু কখন ঠিক হবে তা জানেন না এ রোগী ও স্বজনরা। রোগীর অভিভাবক ও স্বজনরা আশঙ্কা করছেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে তাদের বাচ্চারা আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে।
প্রচণ্ড জ্বর, সর্দি ও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ৭ দিন আগে শিশু হাসপাতাল আইসিইউতে ভর্তি হয় পাঁচ মাসের শিশু রাইয়ান। আগুন লাগার পর শিশুটির মা আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে শিশুটিকে নিয়ে নিচে নামে আসেন। বাচ্চাকে নিয়ে এই অসহনীয় গরমে অবস্থান নিয়েছেন হাসপাতালের বাইরে।
কয়েকজন শিশুর অভিভাবক জানান, পাঁচতলার আইসিইউতে যেসব বাচ্চা ছিল তাদের সমস্যা হচ্ছে। অনেক বাচ্চাকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছিল। তাদের অক্সিজেন ছাড়া নিচে নামানো হয়। তাদের প্রত্যেকের অবস্থা খুবই নাজুক ছিল।
মধ্যসত্ত্বভোগীরা যেন সুবিধা নিতে না পারে, সিন্ডিকেট করে কৃষকদের যেন বিপদে ফেলতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ।
শুক্রবার সকালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওরে বোরো ধান কাটা উৎসবে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীরা যেন সুবিধা নিতে না পারে, সিন্ডিকেট করে কৃষকদের যেন বিপদে ফেলতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সজাগ থাকলে কৃষকরা বঞ্চিত হবেন না।
মন্ত্রী বলেন, কৃষকের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য দিতে চায় সরকার। সরকারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সুনামগঞ্জ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এখানে বন্যা দুর্যোগ বেশি হয়। খড়াও হয়। জেলা প্রশাসনকে বলেছি, কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে।
তিনি বলেন, কৃষিকে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ। কৃষকের ধানের মূল্য নির্ধারণ করতে আগামী পরশু মিটিং করব। দাম নির্ধারণ করে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠাব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ সাদিক, ১ আসনের সংসদ সদস্য রনজিত চন্দ্র সরকার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ধরা আগুন প্রায় এক ঘণ্টা পর নিভিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
বাহিনীর মিডিয়া সেল জানায়, শুক্রবার বেলা দুইটা ৩৯ মিনিটে আগুন নেভানো হয়।
এর আগে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্মকর্তা লিমা খানম নিউজবাংলাকে জানান, বেলা একটা ৪৭ মিনিটে হাসপাতালের শিশু হৃদরোগ কেন্দ্রে আগুন ধরার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাহিনীর পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করে।
আগুনে হতাহতের কোনো কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, আগুন ধরার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয় তদন্তের পর বলা যাবে।
এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বার্তায় জানায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় নৌবাহিনী।
আরও পড়ুন:রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজি বিভাগে শুক্রবার আগুন ধরেছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম দুপুরে নিউজবাংলাকে জানান, বেলা একটা ৪৭ মিনিটে আগুন ধরার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাহিনীর পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করছে।
আগুনে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, আগুন ধরার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয় তদন্তের পর বলা যাবে।
আসন্ন জুলাইয়ের আগেই পান্থকুঞ্জকে নান্দনিক উদ্যানে পরিণত করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বুধবার সকালে নগরীতে পান্থকুঞ্জ পার্কের অভ্যন্তরে পান্থপথ বক্স কালভার্টের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মেয়র এ কথা জানান।
মেয়র তাপস বলেন, পান্থকুঞ্জ উদ্যান এই এলাকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যান। এটা উন্নয়নের জন্য ২০১৭ সালে মেগা প্রকল্পের আওতায় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক কারণে ঢাকা লিমিটেড এক্সপ্রেসওয়ে এদিক দিয়ে নওয়ার একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ফলে এই পার্কের উন্নয়ন কাজটা বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে তাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে আলোচনা করেছি, দেন-দরবার করেছি। এর ফলশ্রুতিতে তারা সুনির্দিষ্ট জায়গায় কাজ করবে। বাকি জায়গা আমাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে। সেই জায়গায় আমরাই কাজ শুরু করেছি। বর্তমানে এটার অবকাঠামো উন্নয়ন চলছে।
মেয়র আরও বলেন, আমরা ঢাকাবাসীকে একটি নান্দনিক উদ্যান উপহার দিতে চাই। যদিও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের কারণে উদ্যানের বড় একটা অংশ তাদের কাছে চলে যাবে। তারপরও যতটুকু রক্ষা করতে পেরেছি তা ঢাকাবাসীর জন্য অচিরেই উন্মুক্ত করে দিতে পারব। পার্কের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। জুলাইয়ের আগে পান্থকুঞ্জকে একটি নান্দনিক উদ্যানে পরিণত করা হবে।
নিউমার্কেট এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র তাপস বলেন, গত বছর কয়েকটি জায়গায় জলাবদ্ধতা হয়েছে বিশেষ করে নিউমার্কেটের সামনে ও শান্তিনগরে। যেসব কারণে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আমরা সেগুলো পরিষ্কার করেছি। আশা করি এবার আর জলাবদ্ধ থাকবে না। নিউমার্কেট এলাকার জন্য নতুন প্রকল্প নিয়েছি।
তিনি বলেন, এর মূল কারণ হচ্ছে পিলখানা ভেতর দিয়ে আগে যে পানি প্রবাহ প্রবাহের নর্দমা ছিল সেগুলো ২০০৯ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য গত বছর সেখানে বড় ধরনের জলবদ্ধতা হয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি এবং সম্মতি পেয়েছি। আমরা পিলখানার ভেতর দিয়ে পানি প্রবাহের বড় নর্দমা করছি। এটা করতে পারলে ওই এলাকায় আর জলাবদ্ধতা থাকবে না। এভাবে প্রত্যেকটা এলাকায় বিচার-বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ঢাকায় বিচ্ছিন্ন কয়েকটি জায়গা ছাড়া তেমন কোন জায়গায় এখন দীর্ঘ সময় জলবদ্ধতা থাকে না উল্লেখ করে মেয়র বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের আগে সূচি অনুযায়ী বক্স কালভার্ট, খাল ও নর্দমাগুলো পরিষ্কার করে থাকি। কারণ যাতে করে বর্ষার সময় পানি প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে। এছাড়া ঢাকা শহরে আমরা ব্যাপকভাবে নর্দমা অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলমান রেখেছি।
পরে মেয়র সায়েদাবাদ টার্মিনাল সংলগ্ন সায়েদাবাদ সুপার মার্কেট, গেন্ডারিয়ার জহির রায়হান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র পাঠাগার ও ওয়ারীর তাজউদ্দীন স্মৃতি পাঠাগার পরিদর্শন করেন।
মন্তব্য