দেশে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনে যতজন শনাক্ত হয়েছে, তার ৫০ দশিমক ১৭ শতাংশই ঢাকা বিভাগে। আবার করোনায় মৃত্যুর ৪৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ এ বিভাগে।
প্রশ্ন হলো, কেন করোনার সংক্রমণ ঢাকায় বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় করোনা সংক্রমণ বেশি হওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে আছে সামাজিক দূরত্ব না মানা, আবদ্ধ জায়গায় যথেষ্ট ভেন্টিলেশন (বায়ু চলাচল) কম থাকা, জনসংখ্যা অনুপাতে টিকার আওতায় কম আসা এবং দেশ ও বিদেশ থেকে ঢাকায় বেশি লোকের আগমন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রায় দুই কোটি মানুষের এই নগরে ভাইরাস প্রতিরোধে মানুষের সতর্ক আচরণের প্রবণতা কম, ফলে অন্যান্য জেলার তুলনায় এখানে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া করোনা সংক্রমণ রুখতে যে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা ছিল, তা নেয়নি সরকার। এটি রোধে যে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন।
করোনাসংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে ভাইরাসটিতে এ পর্যন্ত ১৮ লাখ ৫৩ হাজার ১৮৭ জন শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছে ২৮ হাজার ৫৬০ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরসহ ঢাকা জেলায় আক্রান্ত ৯ লাখ ২৯ হাজার ৮৭৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ১৪৪ জনের। আর ঢাকা বিভাগে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১১ লাখ ১৮ হাজার ২৪৯ জন এং মারা গেছে ১২ হাজার ৫২৪ জন।
দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ চলছে। এই ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে জানুয়ারিতে। এই মাসে রোগী শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ জুন-জুলাইতে দেখা দিলেও আগস্টে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়। সে মাসে রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩৯৪ জন। ফেব্রুয়ারিতেও মোট শনাক্তের অর্ধেক ছিল ঢাকা বিভাগে।
প্রথম ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি করোনা শনাক্ত হয় এপ্রিলে। সেই মাসেও ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৩৭ শনাক্তের অর্ধেক হয়েছিল ঢাকায়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘মৃত্যুর কারণ ভিন্ন হতে পারে। তবে ঢাকায় সংক্রমণের উচ্চ হারের কারণ হলো এই বিভাগের জনসংখ্যা অনেক বেশি। প্রতিনিয়ত দেশ ও দেশের বাইরে থেকে লোক ঢাকায় চাকরির জন্য আসা-যাওয়া করছে। এদের অধিকাংশ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। এখানে ভাসমান লোক অনেক বেশি। এ ছাড়া এই সংক্রমণ রোধ করার জন্য যেমন উদ্যোগ নেয়ার দরকার ছিল, সেটা হয়নি।
‘এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গুরুতর অসুস্থ হলেই লোকজন ঢাকার হাসপাতালে আসছে। এসে সঠিক চিকিৎসাও পাচ্ছে না। শয্যাসংকটের কারণে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। সেই জন্য ঢাকায় এসে মৃত্যুটা বেশি।
‘এ ছাড়া ঢাকায় অফিস-আদালতে এসি রুমের কারণে বাইরের বাতাস ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। আবদ্ধ জায়গায় বিয়ে-সাদি বেশি হচ্ছে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারমাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশে করোনার প্রথম থেকে শুরু করে তৃতীয় ঢেউয়ে এসেও অন্যান্য জায়গার চেয়ে ঢাকায় শনাক্ত ও মৃত্যু বেশি। এর কারণ রাজধানী শহরে জনসমাগম বেশি। ফলে শুধু ঢাকা নয়, বিশ্বের অন্যান্য রাজধানী যেমন দিল্লি, লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, ব্রাজিলের রিওডিজেনিরোতেও বেশি।
‘মূলত জনঘনত্ব বেশি হওয়ায় ভাইরাসটির ট্রান্সমিশন বেশি হয়েছে। ঢাকার ক্ষেত্রে তাই ঘটছে। আর আবদ্ধ জায়গা, যেখানে বাতাস প্রবাহিত হয় না, যেমন- শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিং মল, অফিস, চেম্বারে রোগটি ছড়াতে সহায়ক পরিবেশ পায়।’
বিশিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, ‘ঢাকায় সংক্রমণ ছড়ানোর প্রধান কারণ করোনার নতুন নতুন ধরন ও উপধরন। কারণ ডেল্টা, ওমিক্রন বা এর সাব-ভ্যারিয়েন্ট যেটাই বলা হোক, সেগুলো দ্রুত ছড়ায়। ঢাকায় ঘনবসতি হওয়ায় সংক্রমণ সহজেই ত্বরান্বিত হয়। তা ছাড়া করোনার উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, আক্রান্তরা হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ভাইরাসটি বাতাসে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
‘কিন্তু যেখানে ভেন্টিলেশন কম অর্থাৎ আবদ্ধ জায়গায় ভাইরাসটির ঘনত্ব বেড়ে যায় আর আরেকজন যখন নিঃশ্বাসের তা মাধ্যমে নেয়, তখন সহজেই আক্রান্ত হয়। কারণ মানুষের সংক্রমণ প্রতিরোধ ক্ষমতা জীবাণুর ভাইরাল লোডের উপর নির্ভর করে। ফলে খোলা জায়গা থেকে বদ্ধ ঘরে বায়ু প্রবাহ না থাকায় সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। এ জন্য সবাইকে মাস্ক পরা, ভেন্টিলেশন সুবিধায় থাকা, দ্রুত টিকা নেয়া ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উপর গুরত্বরোপ করতে হবে।’
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য