রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকের ওপর ভর করে বস্ত্রকল বা স্পিনিং মিলগুলো এখন রমরমা ব্যবসা করছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন সুদিন এর আগে কখনই আসেনি এ খাতে। সাধারণত স্পিনিং মিল বা বস্ত্রকলগুলো ২ থেকে ৩ শতাংশ মুনাফা করলেও গত বছর ৬ থেকে ৭ শতাংশ হয়েছে। কোনো কোনো মিল ১০ শতাংশের বেশিও মুনাফা করেছে।
সে কারণেই করোনাভাইরাসের মধ্যে বস্ত্র খাতে নতুন বিনিয়োগ আসছে। বেশ কয়েকটি স্পিনিং মিলসহ প্রায় ২০টি নতুন বস্ত্রকল স্থাপিত হচ্ছে দেশে। আবার ২৫-৩০টি পুরোনো বস্ত্রকল উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে বিনিয়োগ করছে। তাতে আনুমানিক ২৫০ কোটি ডলার বা ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে।
মূলত করোনার প্রথম ঢেউয়ের পর থেকেই সুতার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্পিনিং মিলগুলোর ব্যবসা বাড়ছিল। সেই ধারা চলতি বছরও অব্যাহত রয়েছে। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন বিশ্বব্যাপী বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না করলে ২০২২ সালেও এ খাতের ব্যবসা ভালো যাবে বলে জানিয়েছেন স্পিনিং মিল মালিকরা।
বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সত্যিই আমাদের খাতে সুদিন চলছে। পোশাক রপ্তানি বাড়ছে। তার ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বা পশ্চাদসংযোগ শিল্প হিসেবে আমরাও ভালো ব্যবসা করছি। এ ক্ষেত্রে আমরা আসলে ফুটবল মাঠে মিডফিল্ডারের দায়িত্ব পালন করি। পোশাক রপ্তানিকারকরা যে পোশাক রপ্তানি করেন (বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সদস্যরা) তার কাঁচামাল (সুতা-কাপড়) আমরা জোগান দিই।
‘বিষয়টি এভাবে ব্যাখা করা যেতে পারে: বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সদস্যরা হলেন মেসি-রোনাল্ডো। আর আমরা বিটিএমএর সদস্যরা হলাম মিডফিল্ডার। আমরা বল জোগান দিচ্ছি বলেই তারা গোল করতে পারছেন। আমরা যদি বল ঠিকঠাক মতো না দিই, তাহলে তারা গোল করতে পারবেন না। দেশেও বিদেশি মুদ্রা আসবে না। রিজার্ভ বাড়বে না।’
করোনাভাইরাসের মধ্যেই উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে নতুন বিনিয়োগের পথে হাঁটছেন বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা। মহামারির কারণে ২০২০ সালের প্রথম দিকে বিনিয়োগ সেভাবে হয়নি। তখন কোনো রকমে টিকে থাকার চেষ্টা করেন তারা। তবে ওই বছরের শেষ দিক থেকে বড় বিনিয়োগের ঘোষণা আসতে থাকে।
বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সুতা ও কাপড়ের চাহিদাও বাড়তে থাকে। তবে বিদেশি ক্রেতারা আগের চেয়ে কম লিডটাইম (ক্রয়াদেশ থেকে পণ্য জাহাজীকরণ পর্যন্ত সময়) দেওয়ায় সেই চাপ এসে পড়েছে দেশীয় বস্ত্রকলের ওপর। বাড়তি এই চাহিদা আগামী দিনেও বজায় থাকবে। তাই নতুন কারখানার পাশাপাশি ব্যবসা সম্প্রসারণে মনোযোগী হয়েছেন তারা।
বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সূত্রে জানা যায়, তাদের সদস্য হওয়ার জন্য ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে ২০টি নতুন বস্ত্রকল আবেদন করেছে। কারখানাগুলো চলতি বছর থেকে শুরু করে আগামী দুই বছরে উৎপাদনে আসবে।
নতুন বিনিয়োগের ফলে আগামী দুই বছরে স্পিনিং খাতে ২০ লাখ স্পিন্ডল যোগ হবে। তা ছাড়া কাপড় উৎপাদনের নতুন মিলও আসবে।
প্রচুর বিনিয়োগের কারণ সম্পর্কে বিটিএমএর সভাপতি বলেন, ‘গত ২০ বছরে অনেকগুলো মিল ব্যবসা থেকে বেরিয়ে গেছে। অনেকে আবার আধুনিকায়ন করতে না পেরে পিছিয়ে গেছে। তা ছাড়া পাঁচ বছর পরপর বস্ত্রশিল্পে একটি সংস্কার হয়। সে জন্যই অনেক বিনিয়োগ আসছে। তাতে আমাদের সক্ষমতা বাড়বে।’
মোহাম্মদ আলী খোকন দেশের অন্যতম বৃহৎ স্পিনিং মিল ম্যাকসন্স স্পিনিং মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান। তিনি নিজেও ২০২০ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৩০ একর জমিতে দুই ধাপে ৮৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা দেন। তাতে ম্যাকসন্স গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠান মেট্রো স্পিনিং, ম্যাকসন্স স্পিনিং এবং ম্যাকসন্স স্পিনিং (ইউনিট-২) গড়ে উঠবে। এসব কারখানায় ভ্যালু অ্যাডেড বা বেশি মূল্য সংযোজিত হয় এমন সুতা, কাপড় ও রাসায়নিক উৎপাদন হবে।
ঢাকার ধামরাইয়ের কালামপুরে ৬৯৫ কোটি টাকা বিনিয়োগে স্পিনিং মিল করছে করিম টেক্স লিমিটেড। ১ লাখ ১০ হাজার স্পিন্ডলের এই কারখানায় দিনে ৮০ টন সুতা উৎপাদিত হবে। চলতি বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ স্পিনিং মিলটি পুরোদমে উৎপাদনে যাবে। এর আগে জুলাই-আগস্টে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে।
জানতে চাইলে করিম টেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদ মিয়া বলেন, ‘করোনাকালে বিশ্বব্যাপী টি-শার্ট, ট্রাউজারের মতো নিট পোশাকের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সে কারণে প্রচুর ক্রয়াদেশ আসছে। বাড়তি চাহিদা মেটানোর জন্যই আমরা নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
ভিয়েলাটেক্স গ্রুপ তাদের স্পিনিং মিলের স্পিন্ডলের সংখ্যা ৪২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ৩২ হাজারে উন্নীত করেছে।
ভিয়েলাটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান কে এম রেজাউল হাসনাত বলেন, ‘করোনাকালে ক্রেতারা লিডটাইম কমিয়ে দিয়েছে। ফলে বিদেশ থেকে সুতা বা কাপড় আমদানি করে রপ্তানি করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ জাহাজ কবে আসবে, কেউ বলতে পারছেন না। দুই সপ্তাহ দেরি হলে ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। সে কারণে বস্ত্রকলগুলোয় ক্রয়াদেশ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ভবিষ্যতে বাড়তি এ ব্যবসা বজায় থাকবে ধরে নিয়ে বিনিয়োগ করছেন উদ্যোক্তারা।’
তিনি বলেন, ‘গত অর্থবছরে বস্ত্রকলগুলো ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছিল। তবে গত বছরের জানুয়ারি থেকে পরিস্থিতি পুরো পাল্টে গেছে। এই পরিমাণ ব্যবসা আগে কখনই আসেনি।’
করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে একের পর এক ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিল হওয়ায় সুতা ও কাপড়ের রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমে যায়। লকডাউনের কারণে পহেলা বৈশাখ ও ঈদের ব্যবসায় ধস নামে। অবশ্য দুই মাসের ব্যবধানে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে।
বস্ত্রকল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশের বস্ত্রকলের সুতার বড় প্রতিযোগী দেশ হচ্ছে ভারত। আর কাপড়ে চীন, ভারত, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশ। লকডাউনের কারণে বিদেশ থেকে সুতা ও কাপড় আমদানির পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমে গেলে দেশীয় বস্ত্রকল সেই ব্যবসা পেয়েছে। তাই করোনার কঠিন সময়ের মধ্যেও ঘুরে দাঁড়ানো তুলনামূলক সহজ হয়েছে।
বিটিএমএর সদস্যভুক্ত ৪৫০টি স্পিনিং, ৮৫০টি উইভিং এবং ১৭০টি ডাইং ও ফিনিশিং কারখানা রয়েছে। স্পিনিং মিল সুতা তৈরি করে। আর উইভিংয়ে সুতা থেকে কাপড়। বস্ত্র খাতে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। তাতে নিট পোশাকের প্রয়োজনীয় সুতার ৮০-৮৫ শতাংশ এবং ওভেন পোশাকের প্রয়োজনীয় কাপড়ের ৩৫-৪০ শতাংশ জোগান দিচ্ছে দেশীয় এই প্রতিষ্ঠানগুলো।
বস্ত্রকলগুলো যে ভালো ব্যবসা করছে তার প্রমাণ তাদের আর্থিক প্রতিবেদনেও পাওয়া যায়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মালেক স্পিনিং মিল গত ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৬৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকার সুতা বিক্রি করেছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে তাদের সুতা বিক্রি ৪৩ শতাংশ বেড়েছে। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি ৯২ কোটি ১২ লাখ টাকার সুতা বিক্রি করেছে।
ম্যাকসন্স স্পিনিংয়ের বিক্রি বেড়েছে আরও বেশি, ৬২ শতাংশ। এই তিন মাসে ১৫৭ টাকার সুতা বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গত অর্থবছরের একই সময়ে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৯৭ কোটি টাকা।
মতিন স্পিনিংয়ের বিক্রি ১০৬ কোটি থেকে বেড়ে ১৫৬ কোটি টাকা হয়েছে। স্কয়ার টেক্সটাইলের বিক্রি ২৬১ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ২৮৩ কোটি টাকা।
বিটিএমএ সভাপতি ম্যাকসন্স স্পিনিংয়ের কর্ণধার মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘বস্ত্র খাত খুব ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। করোনা ধাক্কা কাটিয়ে গত বছরের আগস্ট থেকে ভালো ক্রয়াদেশ আসতে শুরু করে। এখনও সেটা অব্যাহত আছে। রপ্তানিমুখী বস্ত্রকলের গুদামে বর্তমানে সুতা ও কাপড়ের কোনো স্টক নেই।’
তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে ২০২০ সালে প্রতিটি মিলেই বিপুল পরিমাণ সুতা অবিক্রীত ছিল। তখন গড়ে সুতার দাম ছিল ২ ডলার ৬০ সেন্ট। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ফলে গত বছরের অবিক্রীত সুতা গড়ে এক ডলার বাড়তি দামে বিক্রি করে স্পিনিং মিলগুলো। তাই অধিকাংশ মিল মুনাফা করেছে।’
বিটিএমএ সভাপতি বলেন, ‘সুতার ব্যবসায় মুনাফা অনেকাংশে তুলা কেনার ওপর নির্ভর করে। কম দামে তুলা কিনতে পারলেই বেশি মুনাফা হয়। তৈরি পোশাক খাতে ভালো ক্রয়াদেশ রয়েছে। সে কারণে সুতার চাহিদাও বেশি। বিশ্বব্যাপী ওমিক্রনে আক্রান্তদের মৃত্যুর খবর খুব একটা না থাকায় আশা করছি, চলতি বছরও ভালো ব্যবসা হবে।’
তবে চলমান কোভিড মহামারি পরিস্থিতিতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে বস্ত্র খাতের পাশাপাশি পোশাক রপ্তানিতে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ আলী।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছরে গ্যাসের দাম ৩৬২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। বর্তমানে এক কেজি সুতা উৎপাদনে বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে ২০ টাকা। এর মধ্যে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে এক কেজি সুতা উৎপাদনে বিদ্যুৎ ব্যয় আরও বেড়ে যাবে।
‘অথচ এমনিতে বিশ্ববাজারে তুলার অস্থিতিশীল মূল্যের কারণে চাপে রয়েছে বস্ত্র ও পোশাক খাত। কারণ তুলা-সুতার দর যে হারে বেড়েছে, সে হারে মূল্য দিচ্ছে না বিদেশি ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো। এ অবস্থায় গ্যাসের দর বাড়ানো হলে বস্ত্র ও পোশাক খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
গ্যাসের দাম আবারও বাড়ানো হলে দেশে বৈধ ও অবৈধভাবে আসা সুতা ও কাপড়ের সঙ্গে দর প্রতিযোগিতায় টেকা সম্ভব হবে না বলে জানান তিনি।
জানুয়ারির শুরুতে গ্যাসের দাম দ্বিগুণের বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব করে জ্বালানি বিভাগ। তবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এখনও সে প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি।
কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাতে সমগ্র বিশ্ব যখন টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে পতিত হয়, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে টেনে তুলতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিশ্বের দরবারে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়।
যদিও একটি শ্রেণি বাজারে নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে বরাবরই সক্রিয় ছিল। তবে দূরদর্শী নেতৃত্বগুণে বিনিয়োগকারীদের অর্থের সুরক্ষা দিতে বারবার বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হতে দেননি অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
সম্প্রতি বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে অস্বাভাবিক আচরণ করছে পুঁজিবাজার। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এ পরিস্থিতি সামাল দিতে এরই মধ্যে অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে বাজারকে স্থিতিশীল করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এমনকি পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে গতকাল ফ্লোর প্রাইসমুক্ত সব শেয়ারে একদিনের দর কমার নিম্নসীমা (সার্কিট ব্রেকার) ৩ শতাংশে বেঁধে দিয়েছে সংস্থাটি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএসইসির সময়োপযোগী এমন পদক্ষেপ বাজারকে আবারও টেনে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে সন্দেহভাজন বেশকিছু লেনদেন পরিলক্ষিত হয়েছে বাজারে। এতে বিশেষ একটি শ্রেণি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বাজারকে ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করছে। কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসও এতে জড়িত রয়েছে। বাজারে অবাঞ্ছিত বিক্রির আদেশ দিয়ে তারা অস্থিরতা তৈরি করছে। তাছাড়া বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে বাজারে একটা শ্রেণি স্বার্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। ফলে বেশ কিছুদিন ধরে বাজার কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করছে।
এ বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বেশ কিছু ট্রেডার নিজেদের মধ্যে যোগশাজসের মাধ্যমে প্রথমে কম দরে শেয়ার বিক্রি করত। পরে তাদের দেখাদেখি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যখন প্যানিক হয়ে শেয়ার বিক্রি করত তখন তারা আবার কম দরে শেয়ারগুলো কিনে নিত। এভাবে তারা নিজেদের মধ্যে শেয়ার লেনদেন করে প্যানিক সৃষ্টির মাধ্যমে ভালো শেয়ারগুলোর দাম কমাত। এই কাজে তাদের বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসও সহযোগিতা করত।’
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে শেয়ারের দর কমার কথা নয়। গুটি কয়েক অসাধু ট্রেডারের কারসাজিতে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে বড় বড় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আল-আমিন বলেন, ‘এক শ্রেণির অসাধু বিনিয়োগকারী চাচ্ছেন বর্তমান কমিশন বিদায় হয়ে নতুন কেউ দায়িত্বে আসুক, যাতে তারা নতুন করে আরও সুযোগ নিতে পারেন। তারাই বিভিন্ন দুর্বল শেয়ারে কারসাজি করে সুবিধা নিচ্ছেন।
‘ফোর্সড সেলের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার তারা কম দরে কিনে নিচ্ছেন। কমিশনের উচিত হবে কারসাজিকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা, যাতে তারা বারবার বাজারকে ম্যানিপুলেট করার সাহস না পায়।’
এদিকে শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক সময়ের টানা পতন ঠেকাতে আবারও শেয়ারের মূল্যসীমায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে বিএসইসি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে।
ওই আদেশে বলা হয়, এখন থেকে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। বর্তমানে দরভেদে কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হতে পারে।
দেশের পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে আদেশে জানানো হয়েছে। সার্কিট ব্রেকারের এ সিদ্ধান্ত বুধবার থেকে কার্যকর করতে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আজকের এই সার্কিট ব্রেকার আরোপ বাজারে কারসাজি রোধ করবে। এটি সন্দেহভাজন লেনদেন বন্ধ করবে। আর এ সিদ্ধান্তের ফলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও উচ্চ সম্পদশালী একক বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি সক্রিয় হবে বলে আশা করছি।’
তিনি বলেন, ‘অনেক ভালো শেয়ার বর্তমানে আন্ডারভ্যালুতে আছে। এখানে তারা বিনিয়োগ করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’
সার্কিট ব্রেকার বাজারের দরপতন ফেরাতে ব্যর্থ হলে আবারও ফ্লোর প্রাইস দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আশা করছি, আমাদের বাজারে আর কখনও ফ্লোর প্রাইস দিতে হবে না। শিগগিরই বাজার একটা স্থিতিশীল অবস্থানে ফিরবে।’
আরও পড়ুন:দেশের পুঁজিবাজারে শেয়ারের দরপতনের গতি কমিয়ে আনার চেষ্টার অংশ হিসেবে এবার মূল্যসীমায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার আগের দিনের শেষ হওয়া দরের ভিত্তিতে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না।
শেয়ারের দাম কমার ক্ষেত্রে আগে মূল্যসীমা ছিল ১০ শতাংশ। তবে ঊর্ধ্বসীমা অর্থাৎ কোনো শেয়ারের দাম বাড়ার সীমা ১০ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বুধবার এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে। বৃহস্পতিবার থেকেই এ আদেশ কার্যকর হবে বলে আদেশে জানানো হয়েছে।
বিএসইসি জানিয়েছে, যেসব শেয়ার ফ্লোর প্রাইসের আওতায় আছে সেসব শেয়ারের ক্ষেত্রে নতুন আদেশ প্রযোজ্য হবে না।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে বাজার সূচকের অবাধ পতন ঠেকাতে এর আগে ২০২২ সালের জুলাই শেষে প্রতিটি শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দিয়েছিল বিএসইসি। ফ্লোর প্রাইস ছিল ২০২২ সালের ২৮ জুলাই ও তার আগের চার দিনের ক্লোজিং প্রাইসের গড়।
বর্তমানে বেক্সিমকো, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও শাহজীবাজার পাওয়ার কোম্পানির ক্ষেত্রে ওই ফ্লোর প্রাইস কার্যকর রয়েছে।
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম একদিনের ব্যবধানে আরেক দফা কমেছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ভরিতে দু’হাজার ১৩৯ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। বলা হয়েছে,
স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নতুন নির্ধারিত দাম বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিকেল ৪টা ৫০ মিনিট থেকে কার্যকর হবে।
বাজুস এর আগের দিন মঙ্গলবার ঘোষণা দিয়ে ওই দিন থেকে ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯০ টাকা নির্ধারণ করে। সে হিসাবে দুদিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে কমলো ৫ হাজার ২৭৭ টাকা।
নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ১৩৯ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৯৯৫ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের ভরি ১ হাজার ৭১৪ টাকা কমিয়ে ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৩৭৭ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫ হাজার ২০৯ টাকা।
অবশ্য স্বর্ণালঙ্কার কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের এর চেয়ে বেশি অর্থ গুনতে হবে। কারণ বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে স্বর্ণের গহনা বিক্রি করা হয়। সে সঙ্গে ভরি প্রতি মজুরি ধরা হয় নূন্যতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের গহনা কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হবে ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৫৮ টাকা।
স্বর্ণের দাম কমানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রূপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেট ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রূপার ভরি ১ হাজার ২৮৩ টাকা নির্ধারণ করা আছে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের বাজারে গত বছর প্রথমবারের মতো ল্যাপটপ নিয়ে আসে ট্রেন্ডি প্রযুক্তি ব্র্যান্ড ইনফিনিক্স। ইনবুক ওয়াইটু প্লাস নামের ল্যাপটপটি দিচ্ছে চমৎকার ডিজাইন, শক্তিশালী পারফরম্যান্স ও সাশ্রয়ী দামের প্রতিশ্রুতি। অল্প সময়ের মধ্যেই প্রযুক্তিপ্রেমী শিক্ষার্থী ও এক্সিকিউটিভদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে এ ল্যাপটপ।
দেখে নেওয়া যাক কী আছে ইনফিনিক্স ইনবুক ওয়াইটু প্লাস ল্যাপটপটিতে। এর ফিচার, পারফরম্যান্স ও ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতাই বা কেমন।
ডিজাইন ও গঠন
স্লিক ও হালকা ডিজাইনের ইনফিনিক্স ইনবুক ওয়াইটু প্লাস সহজেই সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। শিক্ষার্থী ও ব্যস্ত এক্সিকিউটিভদের জন্য এ ল্যাপটপ যথার্থ। এর পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক মেটালিক ডিজাইন স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে। একই সঙ্গে দেয় প্রিমিয়াম অনুভূতি। স্লিক প্রোফাইল ও প্রাণবন্ত ডিসপ্লের সঙ্গে যুক্ত সরু বেজেল ল্যাপটপটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। ফলে বাজারের একই ধরনের দামি ল্যাপটপের সমকক্ষ হয়ে ওঠে ওয়াইটু প্লাস।
তা ছাড়া এর মসৃণ এজি গ্লাস টাচ প্যানেলের কারণে সিল্কি-স্মুথ ও স্থায়ী টাচের অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। ১.৫ মিলিমিটার কি ট্র্যাভেল এবং ব্যাকলাইটিংযুক্ত রেসপনসিভ কি-বোর্ড টাইপিংকে করে তোলে সহজ ও আরামদায়ক। তাই কম আলোতেও টাইপ করতে কোনো সমস্যা হয় না।
পারফরম্যান্স ও প্রোডাক্টিভিটি
১১তম প্রজন্মের কোর আই৫ প্রসেসর ও ৮ জিবি র্যাম রয়েছে ইনফিনিক্স ওয়াইটু প্লাসে। স্টোরেজের প্রয়োজন মেটাতে এতে আছে ৫১২ জিবি এনভিএমই পিসিআইই এসএসডি। প্রোডাক্টিভিটি সফটওয়্যার, ওয়েব ব্রাউজ করা কিংবা কনটেন্ট স্ট্রিম করাসহ সব ধরনের উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন অ্যাপ্লিকেশন চালানো যায় খুব সহজেই। এর ইন্টিগ্রেটেড ইন্টেল ইউএইচডি গ্রাফিকস সাধারণ গেমিং ও মাল্টিমিডিয়া এডিটিংয়ের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যময় গ্রাফিকস পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে। উইন্ডোজ ১১ পরিচালিত ইনফিনিক্স ইনবুক ওয়াইটু প্লাসের অপারেটিং সিস্টেম সবার পরিচিত ও ব্যবহার করা সহজ।
ডিসপ্লে ও মাল্টিমিডিয়া অভিজ্ঞতা
উজ্জ্বল রং ও ওয়াইড অ্যাঙ্গেলের সঙ্গে স্পষ্ট ও পরিষ্কার ভিজ্যুয়াল দেয় ১৫.৬ ইঞ্চি ফুল এইচডি আইপিএস ডিসপ্লেযুক্ত ইনবুক ওয়াইটু প্লাস। ৮৫ শতাংশ স্ক্রিন-টু-বডি রেশিওর সঙ্গে চমৎকার মাল্টিমিডিয়া অভিজ্ঞতার জন্য ডিসপ্লেটি দারুণ। কাজেই আপনার প্রিয় নেটফ্লিক্স সিরিজ দেখা কিংবা ফটো এডিট করা— সবই হবে স্বাচ্ছন্দ্যে।
ল্যাপটপটিতে আছে ডুয়েল এলইডি ফ্ল্যাশ ও এআই নয়েজ ক্যান্সেলেশন প্রযুক্তিযুক্ত ১ হাজার ৮০ পিক্সেলের ফুল এইচডি+ ক্যামেরা। এর ফলে ভিডিও কলের অভিজ্ঞতা হবে আরও উন্নত।
ব্যাটারি লাইফ ও চার্জিং
ইনবুক ওয়াইটু প্লাসের ৫০ ওয়াট-আওয়ার ব্যাটারি ক্যাপাসিটি কোনো চার্জ ছাড়াই প্রতিদিনের কাজে আট ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাকআপ দিতে সক্ষম। পাশাপাশি এর ৪৫ ওয়াট টাইপ-সি পোর্টযুক্ত চার্জারে ডিভাইসটি দ্রুত ও সহজেই চার্জ করা যায়। ফলে ভারী চার্জার বহনের প্রয়োজন হয় না।
দাম
ল্যাপটপটির বর্তমান বাজারমূল্য ৫৮ হাজার ৯৯০ টাকা। অনুমোদিত ইনফিনিক্স রিটেইলার থেকে ল্যাপটপটি কেনা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:‘ডিজিটাল আর্কিটেকচার ট্রান্সফরমেশন ইন লোকাল গভর্মেন্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক উদ্যোগের পাইলটিং কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্মার্ট সার্ভিস ট্রান্সফরমেশন অ্যান্ড প্রসেস ডিজাইন ও অবহিতকরণ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় রাজশাহীতে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নির্দেশিত স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র জনাব এএইচএম খায়রুজ্জামা (লিটনের) পরামর্শক্রমে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের (বিএমজিএফ) অর্থায়ন এবং এটুআই, আইসিটি ডিভিশনের বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটের ৫টি পাবলিক ফাইন্যানশিয়াল ম্যানেজমেন্ট (হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স, বিভিন্ন ধরনের সনদ যেমন জাতীয়তা সনদ, রিকশা/ভ্যান লাইসেন্স, বিদ্যুৎ/গ্যাসসহ বিভিন্ন ধরনের বিল) সংক্রান্ত সেবার স্মার্ট রূপান্তরের লক্ষ্যে ‘ডিজিটাল আর্কিটেকচার ট্রান্সফরমেশন ইন লোকাল গভর্মেন্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক উদ্যোগ রাজশাহীতে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
উদ্যোগের পাইলটিং কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্মার্ট সার্ভিস ট্রান্সফরমেশন অ্যান্ড প্রসেস ডিজাইন ও অবহিতকরণ কর্মশালায় প্রায় ৬০ জনের অংশগ্রহণে ৩ দিনব্যাপী কর্মশালার প্রথম দিন মঙ্গলবার রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হয়। এ উদ্যোগটি রাজশাহী সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদে পাইলটিং কার্যক্রম বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়।
উক্ত উদ্যোগের প্রধান সমন্বায়ক এটুআই, আইসিটি ডিভিশন চিফ ই-গর্ভনেন্স ড. ফরহাদ জাহিদ শেখ বর্ণিত কর্মশালায় স্মার্ট সার্ভিস ট্রান্সফরমেশন অ্যান্ড প্রসেস ডিজাইন এবং পাইলটিং কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশন, রাজশাহী জেলা পরিষদ, পবা উপজেলা পরিষদ, চারঘাট পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ, কাটাখালী পৌরসভা ও পারিলা, হরিপুর, হরিয়ান, হুজরীপাড়া ও ইউনিয়নের সম্মানিত মেয়র, চেয়ারম্যান, মেম্বার, কাউন্সিলর, প্রধান প্রকৌশলী, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিব, সিস্টেম অ্যানালিস্ট এবং এটুআই আইসিটি ডিভিশনের কর্মকর্তারা।
দৃঢ় নেতৃত্বের মাধ্যমে বিগত বছরগুলোর প্রতিকূলতা কাটিয়ে রেকর্ড ও টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে পুঁজিবাজারে প্রকৌশল খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি। চলতি বছর ওয়ালটন পণ্যের বিক্রয় বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। যার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই’২০২৩-মার্চ’২০২৪) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ওয়ালটন হাই-টেকের মুনাফা বেড়েছে ৫১২.৪২ কোটি টাকা বা ২০৫ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির মুনাফা ব্যাপক বৃদ্ধিসহ আর্থিক প্রায় সব সূচকেই উন্নতি হয়েছে।
ওয়ালটন হাই-টেকের চলতি হিসাব বছরের জুলাই-২০২৩ থেকে মার্চ-২০২৪ পর্যন্ত সময়ের প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
রোববার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের ৩৮তম সভায় আলোচ্য সময়ের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর আর্থিক ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২০২৪ হিসাব বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়ে অর্থাৎ প্রথম নয় মাসে কোম্পানিটির মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৬২.৩৪ কোটি টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা হয়েছিল ২৪৯.৯১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আলোচ্য সময়ে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা বেড়েছে ৫১২.৪২ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২০৫ শতাংশ।
এদিকে চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২০২৪) ওয়ালটনের মুনাফা হয়েছে ৪২১.৯৮ কোটি টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা হয়েছিল ২৩৫.৫৫ কোটি টাকা।
বিক্রয় বৃদ্ধির পাশাপাশি কস্ট অব গুড্স সোল্ড উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাওয়ায় কোম্পানিটির মোট মুনাফার শতকরা হার পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য আর্থিক সূচকেও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে ওয়ালটন হাই-টেকের। তাছাড়া মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রার মান কমে যাওয়ার ফলে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যাপক হারে হ্রাস পাওয়ায় কোম্পানিটির কর পরবর্তী নিট মুনাফার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস), শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস)।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সমাপ্ত সময়ে (জুলাই’২০২৩-মার্চ’২০২৪) প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫.১৭ টাকা; যা আগের অর্থ বছরের একই সময়ে ছিলো ৮.২৫ টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির এনএভিপিএস পুনর্মূল্যায়ন ব্যতীত দাঁড়িয়েছে ২৫৮.২২ টাকা এবং পুনর্মূল্যায়নসহ ৩৫৯.৬৮ টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ২২.৮৮ টাকা।
চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে কোম্পানির আর্থিক ব্যয়ের পরিমাণ ও শতকরা হার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। প্রথম নয় মাসে বিক্রয়ের বিপরীতে আর্থিক ব্যয়ের শতকরা হার দাঁড়িয়েছে ৬.১৪ শতাংশ। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিলো ১৪.৭৯ শতাংশ।
এ ছাড়াও মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রার মান কমে যাওয়ায় গত অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে কোম্পানিটি ৩৯২.৭৩ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলো। সেই ক্ষতি চলতি বছরের আলোচ্য সময়ে উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়ে মাত্র ৪১.৬০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
এদিকে জুলাই-২০২৩ থেকে মার্চ-২০২৪ পর্যন্ত সময়ে কোম্পানির মোট আর্থিক ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬৩.০৭ কোটি টাকা, যা পূর্বের অর্থ বছরের একই সময়ে ছিল ৬০৪.৭৯ কোটি টাকা।
এছাড়া, শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন’২০২৪) কোম্পানির মুনাফা আরো দৃঢ় অবস্থানে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ওয়ালটন ম্যানেজমেন্ট। প্রেস রিলিজ
শীর্ষস্থানীয় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ উবারের লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড ইনডেক্স-এর অষ্টম সংস্করণ প্রকাশ হয়েছে রোববার।
উবার ব্যবহারকারীরা কোন জিনিসগুলো গাড়িতে সবচেয়ে বেশি ফেলে রেখে গেছেন এবং দিনের কোন সময়ে, সপ্তাহের কোন দিনে ও বছরের কোন সময়ে হারানো জিনিস রিপোর্ট করেছেন, এসব তথ্যের একটি স্ন্যাপশট হলো এ ইনডেক্স।
গত এক বছরের মে ও জুন মাসে বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি জিনিসপত্র ভুলে ফেলে রেখে গেছেন। বেশির ভাগ জিনিসপত্র ফেলে রেখে আসার ঘটনাটি ঘটেছে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে।
গত বছর বাংলাদেশজুড়ে যাত্রীদের ভুলে যাওয়া জিনিসের তালিকায় প্রথম দুটি স্থানে ছিল পোশাক ও ছাতা। তালিকায় এর পরেই ছিল ওয়ালেট, বালিশ ও হেডফোন।
বাংলাদেশিরা উবারে এ রকম সাধারণ জিনিসপত্র যেমন ভুলে ফেলে রেখে গেছেন, স্পিকারের মতো অপ্রত্যাশিত জিনিসও তেমনি ভুলে রেখে গেছেন।
উবার বাংলাদেশের কান্ট্রি হেড নাশিদ ফেরদৌস কামাল লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড ইনডেক্স সম্পর্কে বলেন, ‘যাত্রীদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য উবারের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ট্রিপের সময় যাত্রীদের ফেলে যাওয়া জিনিস নিরাপদে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়াও এর অন্তর্ভুক্ত। হারানো জিনিস খুঁজে পেতে উবারের কিছু ইন-অ্যাপ অপশন আছে।
‘এ ব্যাপারে যাত্রীদের জানানোর জন্য লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড ইনডেক্স একটি চমৎকার শিক্ষণীয় উপায়। যাত্রীদের আমরা জানাতে চাই যে, রাইডের সময় তারা কিছু ভুলে ফেলে গেলে তাদের সাহায্য করার জন্য আমরা প্রস্তুত।’
ফেলে যাওয়া জিনিস উদ্ধারের উপায়
গাড়িতে ফেলে যাওয়া কোনো জিনিস উদ্ধারের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো চালককে কল করা। কীভাবে করবেন জেনে নিন।
১. ‘ইয়োর ট্রিপস’ অপশনে ট্যাপ করুন এবং যে ট্রিপে আপনার জিনিসটি হারিয়ে গেছে, তা সিলেক্ট করুন
২. নিচে স্ক্রল করে ‘ফাইন্ড লস্ট আইটেম’ অপশনে ট্যাপ করুন
৩. ‘কনটাক্ট ড্রাইভার অ্যাবাউট আ লস্ট আইটেম’ অপশনে ট্যাপ করুন
৪. স্ক্রল করে নিচে নামুন এবং আপনার সঙ্গে যোগযোগ করা যাবে এমন একটি ফোন নম্বর লিখুন। সাবমিট অপশনে ট্যাপ করুন
৫. যদি নিজের ফোন হারিয়ে যায়, তাহলে আপনার বন্ধুর ফোন নম্বর ব্যবহার করুন (এর জন্য আপনাকে কম্পিউটার বা বন্ধুর ফোন থেকে নিজের অ্যাকাউন্টে লগ ইন করতে হবে)
৬. আপনার ফোন বেজে উঠবে এবং আপনার চালকের মোবাইল নম্বরের সঙ্গে আপনাকে সরাসরি যুক্ত করে দেয়া হবে
৭. যদি চালক ফোন ধরেন এবং নিশ্চিত করেন যে আপনার জিনিসটি পাওয়া গেছে, সেটি ফিরিয়ে নিতে উভয়ের জন্য সুবিধাজনক একটি সময় ও স্থান নির্বাচন করুন
৮. যদি চালকের সাথে যোগাযোগ করতে না পারেন, আপনার হারানো জিনিসটির বিস্তারিত বর্ণনা এবং আপনার সঙ্গে যোগাযোগের উপায় জানিয়ে চালককে একটি ভয়ে সমেইল পাঠিয়ে রাখুন
উবারে কিছু হারিয়ে ফেললে সহজে কীভাবে তা ফিরে পেতে পারেন, এই ভিডিও থেকে তা দেখে নিন।
উবার যাত্রীরা যেসব জিনিস সবচেয়ে বেশি ভুলে ফেলে রেখে গেছেন, তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে পোশাক। এরপরই রয়েছে ছাতা, ওয়ালেট, নেক-পিলো, হেডফোন ও স্পিকার।
যে শহরগুলোতে যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি জিনিস হারিয়েছেন, তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। এরপরের স্থানগুলো যথাক্রমে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল।
বছরের যে দিনগুলোতে যাত্রীরা সবচেয়ে বেশিসংখ্যক জিনিস ভুলে রেখে গেছেন তার মধ্যে রয়েছে ১৩ মে, ২০২৩। এ ছাড়া ৯ জুন এবং ১৬ জুন, ২০২৩ বেশি ভুল করেছেন যাত্রীরা।
সপ্তাহের শুক্র, শনি ও রোববার সবচেয়ে বেশি জিনিস হারিয়েছে।
দিনের যে সময়ে যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি জিনিস ফেলে রেখে যান, তার সময় রাত আটটা। এরপরই সন্ধ্যা সাতটা ও রাত ৯টায় বেশি জিনিস ফেলে রেখে গেছেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য