ভর্তির আগে করোনা টেস্ট বাধ্যতামূলক। ফলে দেশে ক্যানসার আক্রান্তদের চিকিৎসা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দুই বছর ধরে চলা ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবে ক্যানসার রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা পেতে দেরি হচ্ছে।
এ ছাড়া ঢাকার বাইরে প্রান্তিক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেই। রাজধানীতেও যে কয়েকটি বিশেষায়িত হাসপাতালে আছে, সেগুলোতে শয্যাসংকট।
জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন মাগুরার ৫৮ বছর বয়সী রোকেয়া বেগম। প্রতি মাসে কেমোথেরাপি নেন তিনি। প্রতিবার থেরাপি দেয়ার আগে করোনা পরীক্ষা করতে বলেন চিকিৎসক। তবে এই হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই।
অন্য হাসপাতালে নমুনা দিয়ে তিন-চার দিন অপেক্ষা করতে হয়। গত নভেম্বরে করোনা আক্রান্ত হন রোকেয়া। ফলে থেরাপি দেয়া বন্ধ রেখে করোনা চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যালে নেয়া হয়। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে ক্যানসারের চিকিৎসা না নিয়েই গ্রামের বাড়িতে ফিরে যান এই নারী।
স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে রওশন আরা বেগম কুমিল্লা থেকে চিকিৎসা নিতে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন। গত ডিসেম্বরে করোনা আক্রান্ত হওয়ায় কেমো দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। করোনা থেকে সেরে উঠলেও রওশনের ক্যানসারের জটিলতা বাড়ে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, রওশন আরার স্তন ক্যানসার প্রথম পর্যায়ে থাকলেও করোনা আক্রান্ত হওয়ায় কেমো দিতে দেরি হয়েছে। ফলে তার ক্যানসার বেড়ে তৃতীয় স্তরে পৌঁছেছে।
দেশে সবচেয়ে বড় একটি ক্যানসার হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার সুযোগ না থাকায় সেবা নিতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। শুধু করোনা নেগেটিভ হওয়ার প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর শুরু হচ্ছে কেমোথেরাপি, তাতে প্রক্রিয়াটি পিছিয়ে যাচ্ছে চার থেকে পাঁচ দিন।
ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য বলছে, ক্যানসার রোগীদের করোনা হওয়ায় ক্যানসার চিকিৎসা শেষ না করেই ৩০ শতাংশ রোগী বাসায় ফিরছেন। চিকিৎসা শেষ না করা রোগীদের ৭৫ শতাংশই এক বছরের মধ্যে মারা গেছেন বলে ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের করা এক গবেষণায় উঠে এসেছে। একই সঙ্গে করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারণে ক্যানসার চিকিৎসা বন্ধ থাকায় রোগীর শরীরে ক্যানসারের জটিলতা বাড়ছে। করোনার সময়ে ৫০ শতাংশ কম রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান গ্লোবোক্যানের সর্বশেষ হিসাব বলছে, দেশে বর্তমানে ১৫ লাখ ক্যানসার রোগী রয়েছে। এ ছাড়া প্রতি বছর ১ থেকে দেড় লাখ মানুষের নতুন করে ক্যানসার শনাক্ত হচ্ছে। প্রতি বছর ১ লাখ ৯ হাজার রোগী ক্যানসারে মারা যায়। সে হিসাবে গত দুই বছরে ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে ২ লাখ ১৮ হাজার মানুষ মারা গেছে।
স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে করোনার মধ্যে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি হচ্ছে ক্যানসারে মৃত্যু। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীরা করোনা আক্রান্ত হলে মৃত্যুর ঝুঁকি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। দেশে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে কত জন মারা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে এমন তথ্য না থাকলেও জানানো হয়েছে, এক বছরে ৬৭ শতাংশ অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
শয্যা ফাঁকা নেই, রোগীরা রাস্তায়
ঢাকায় ১৫০ শয্যার জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা দেয়া হয় ৫০০ জনের। সারা দেশে ক্যানসারের সমন্বিত চিকিৎসাব্যবস্থা না থাকায় ঢাকার এই হাসপাতালে সব সময় রোগীর চাপ থাকে।
গত বুধবার সকাল গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটির নিচতলায় বি ব্লকের গেটের সামনে খোলা আকাশের নিচে ৩০ জন রোগী ও স্বজন কয়েক দিন করে রাত্রিযাপন করছেন। তাদের অভিযোগ, আসন না পাওয়ায় হাসপাতালে বাইরে এভাবে থাকতে হয়। এক সপ্তাহ পরপর কেমোথেরাপি দেয়ার কারণে স্বজনদের নিয়ে এভাবে থাকেন তারা।
বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন। অন্তত ২০০ রোগী টিকিট সংগ্রহের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। টিকিট পাওয়ার পর দ্বিতীয় তলায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার জন্য আবারও দাঁড়াতে হচ্ছে লাইনে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর অনেকে ক্লান্ত হয়ে ফ্লোরে বসে পড়ছেন। কেউ কেউ মাদুর পেতে শুয়ে আছেন। রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজনদের চোখেমুখেও রাজ্যের ক্লান্তি।
খোলা আকাশের নিচে থাকা রহিমার সঙ্গে কথা বলেন জানা যায়, তিনি মাগুরা থেকে তার বোনের ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকায় এসেছেন। ৫ ফেব্রুয়ারি তার থারাপি দেয়ার কথা। এ জন্য করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। আসা-যাওয়ার বাসভাড়া বেশি হওয়ায় শীতের রাত উপেক্ষা করে হাসপাতালের বারান্দায় আছেন তারা। তিনি আরও জানান, অপারেশনের জন্য গড়ে এক মাস, কেমোথেরাপির জন্য দুই থেকে তিন সপ্তাহ, বিকিরণ চিকিৎসার জন্য চার মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় রোগীদের।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকট
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে ক্যানসার চিকিৎসায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২৬টি প্রতিষ্ঠান কাজ করলেও সমন্বিত ক্যানসার চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে মাত্র ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটে। তবে এই হাসপাতালে বছরে মাত্র ৩০ হাজার রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাকি ১ লাখ ২০ হাজার রোগী ২৫টি কেন্দ্রে সেবা নিচ্ছে। সেইসব রোগীর চিকিৎসায় তেমন সুযোগ-সুবিধা নেই।
দেশে করোনা চিকিৎসায় আট বিভাগের আটটি ক্যানসার ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। তিন-চার বছরে এগুলো চিকিৎসা দেয়ার উপযোগী হবে।
ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের দাবি, ক্যানসার রোগীর চিকিৎসাসংকট নিরসনে বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ গড়ে তুলতে হবে। সেই সঙ্গে চিকিৎসাও সম্প্রসারিত করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ক্যানসার রোগী দ্বিগুণ হবে। তাই সেভাবে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। কিছু বেসরকারি হাসপাতালে ক্যানসার চিকিৎসার সুযোগ থাকলেও টাকার অভাবে দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা সেবার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
করোনায় ক্যানসার রোগীর মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে
করোনা মহামারি ক্যানসার নির্ণয় ও চিকিৎসায় মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব হওয়া এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। কেমোথেরাপি দিতে দেরি হচ্ছে। এ কারণে মৃত্যু বাড়ছে। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যানসার দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘বৈষম্য কমাই, ক্যানসার সেবায়।’
ক্যানসার রোগতত্ত্ববিদ ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন নিউজবাংলাকে বলেন, করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর ক্যানসার আক্রান্তদের যত্নের ওপর তীব্র প্রভাব পড়েছে। মহামারির কারণে বিশ্বের অনেক দেশে ক্যানসার রোগীর সেবা আংশিক বা পুরোপুরি বিঘ্নিত হয়েছে। এ কারণে আগামী বছরগুলোতে ক্যানসারে আক্রান্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যায় প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে।
ক্যানসার বিশেষজ্ঞ মহাম্মদ রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, করোনার শুরুর দিকে ক্যানসার রোগী আসার পরিমাণ অনেক কমে যায়। এ ছাড়া করোনা পরীক্ষা নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়। তবে এখন করোনা উপসর্গ না থাকলে কেমোথেরাপি বা অপরেশন করাতে করোনা সনদ লাগছে না।
তিনি আরও বলেন, ‘২০২১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এক বছরে ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে সেবা নেয়া রোগীর ৪৫ শতাংশই মারা গেছেন। যারা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের সবাই ক্যানসারের চিকিৎসা নিচ্ছে না এটা বলার সুযোগ নেই। তবে করোনা মহামারি থেকে গেলে মৃত্যু বাড়বে।’
দেশে ক্যানসার চিকিৎসার সার্বিক চিত্র তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘দেশে আট বিভাগে আটটি ক্যানসার হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এটির কাজ শেষ হলে শহরে চাপ কমে আসবে। রেডিওথেরাপি যন্ত্রপাতিসহ আধুনিক বিভাগ গড়ে তোলা হবে।’
আরও পড়ুন:এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
দেশে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে আরও ১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। ১৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এই রোগী শনাক্ত হয়। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ৭৩ জনে। এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন করে করোনা আক্রান্ত ১০ জনসহ চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২৮ জনে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনের মৃত্যু হওয়ায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৯ হাজার ৫১৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে করোনাভাইরাস মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দুদিন করোনায় সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।
মন্তব্য