ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করা ব্যবসায়ী আবু মহসিন খানের শেষ দিনগুলো কাটছিল নিঃসঙ্গতায়। ফেসবুক লাইভে তিনি তার একাকিত্বের কথা জানিয়েছেন। তাকে যারা দেখেছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেও জানা গেছে, সচ্ছলতার অভাব না থাকলেও বন্ধুপরিজনহীন জীবন কাটছিল তার।
ধানমন্ডি সাত নম্বর সড়কের ২৫ নম্বর বাসায় ১২ তলা একটি ভবনের ছয় তলায় থাকতেন আবু মহসিন খান। ভবনের ম্যানেজার আব্দুর রহিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ছয় মাস ধরে এখানে আছি। এই বাসাটা স্যারের (মহসিন) নিজের কেনা ফ্ল্যাট। আমি গত ছয় মাসের কথা বলতে পারি। তিনি একাই থাকতেন এই বাসায়। স্যার বাসার সবকিছু একাই হ্যান্ডেল করতেন। কাউকে তার বাসায় যেতে দেখা যায়নি।’
ছয় তলায় ফাইভ-এ ফ্ল্যাটটি এখন ফাঁকা। মৃত্যুর এক দিন পর বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায় গৃহকর্মীরা বাসাটির ধুলা পরিষ্কার করছেন। ভবনের এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন, ‘আমি প্রায় তিন বছর ধরে এই বাড়ির সিঁড়ি মুছি। গত তিন বছর ধরে দেখতেছি তিনি একাই থাকেন এই বাসায়। আমি তো ভেতরে যাইতাম না। তাই বলতে পারব না, ভেতরে কী হতো।’
বৃহস্পতিবার বেলা ২টা থেকে আত্মীয়স্বজন মহসিনকে শেষবারের মতো দেখতে আসা শুরু করেন। তবে তার আত্মীয়স্বজনের সংখ্যা হাতে গোনা। ৮২ বছর বয়সী মহসিনের বাবা তাকে দেখতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেখানে দেখা যায় তার ছোট দুই ভাইকেও।
মহসিনের একাকী চলাচল
ব্যবসায়ী আবু মহসিন খান নিজ বাসা থেকে বেরিয়ে মাঝে মাঝে বাইরে হাঁটতে বেরোতেন। একাই যেতেন জুতায় কালি করাতে, খাবার কিনতে।
২৫ নম্বর ভবনের বিপরীত পাশের একটি চায়ের দোকানি মো. রতন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনি একা একা বের হয়ে মুদি কেনাকাটা করতেন। জুতা কালি করতে আসতেন। সঙ্গে কাউকে দেখি নাই কোনো দিন। মাঝে মাঝে বাসার সামনে দিয়ে একাই ঘুরে বেড়াতেন।’
চায়ের দোকানের পাশেই ফুটপাতে বসেন মুচি রণজিত। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘স্যার আমার কাছে জুতা কালি করাতে আসতেন। দেখতাম মাঝে মাঝে বাইরে একা একা ঘোরাফেরা করতেন।’
নাম প্রকাশ না করে মহসিনের পাশের ফ্ল্যাটের এক প্রতিবেশী নারী জানান, আসা-যাওয়ার পথে তার সঙ্গে দেখা হলে কুশল বিনিময় হতো। তাকে দেখে তার কখনও মনে হয়নি, আত্মহত্যা করার মতো বিষণ্নতায় ভুগছেন।
ভবনের কয়েকজন চালক জানান, মহসিন সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন। চালক রানা নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘স্যার খুব ভালো মানুষ ছিলেন। সবার সাথে হাসিখুশি মুখে কথা বলতেন। বাসায় কেউ থাকত না তার সঙ্গে। মাঝে মাঝে তার ভাইয়ের বাসা থেকে খাবার আসত। তিনি একা একা গাড়ি চালিয়ে খাবার আনতেন। অসুস্থ থাকলে খাবার অর্ডার দিয়ে আনাতেন। একটা ছেলে মাঝে মাঝে এসে তার গাড়ি ধুয়ে দিত। বাসা পরিষ্কার করে দিত।’
রানা বলেন, ‘চালকদের জন্য এই ভবনে আলাদা লিফট। তবে তিনি লিফটে উঠলে আমাদের তার লিফটে ওঠাতেন।’
মহসিন খানের জামাতা চিত্রনায়ক রিয়াজ বলেন, ‘আমরাই খাবার পাঠাতাম। এ ছাড়া তিনি বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করে আনতেন। কতদিন আগে থেকে ক্যানসার সেটা মনে করতে পারছি না। তবে বছর দুয়েক আগে তার অপারেশন করা হয় ক্যানসারের। আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অনেকবার বলেছি। তবে তিনি থাকেননি।’
মহসিন খানের ছোট ভাই আবু হাসান মো. ওয়াহিদুজ্জামান লিপু বলেন, ‘ওনার একাকিত্ব ওনাকে খেয়ে ফেলেছে। মানুষ একা বাঁচতে পারে না। একটা মানুষ তিন থেকে চার বছর একটা ফ্ল্যাটে একা থাকেন। তার ওয়াইফ, ছেলে দেশের বাইরে। উনি ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। ওনার অপারেশনও হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে একটা গ্যাপ তৈরি হয়ে গিয়েছিল, কারণ উনি দেশের বাইরেই বেশি ছিলেন। আপনার সঙ্গে আমার গ্যাপ থাকলে আপনার কিছুই আমি জানতে পারব না। ওনার সঙ্গে আমাদের আট বছরের একটা গ্যাপ ছিল। মাঝে মধ্যে কথা হতো, কিন্তু ওরকম যে সবকিছু শেয়ার করবে, সে সুযোগ ছিল না। গ্যাপ হয়ে গেলে শেয়ার করার অবস্থাটা থাকে না।
‘ওনার ক্লোজ ছিল ওনার ছেলেমেয়ে। মেয়ের হাজবেন্ড কতটা ক্লোজ ছিল, আমি জানি না। মেয়ের হাজবেন্ডের সঙ্গে তো আর এত কিছু শেয়ার করা যাবে না। আপনি আপনার সন্তানের সঙ্গে যেভাবে সবকিছু শেয়ার করতে পারবেন, অন্যদের সঙ্গে পারবেন না। বাবাও বেঁচে আছেন। বাবা স্ট্রোক করা রোগী। ওনাকে ঘটনা জানানোর আগে প্রেশার, সুগার লেভেল মেপে জানাতে হয়েছে। ওনাকে জানানোটাই অনেক কষ্ট হয়েছে।’
আবু হাসান মো. ওয়াহিদুজ্জামান লিপু জানান, ক্যানসারের কারণে মহসিন খানের একটি কিডনি অস্ত্রোপচার করে ফেলে দিতে হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ায় এ অস্ত্রোপচার হয়।
কী ধরনের ক্যানসার ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কী ক্যানসার ছিল সেটা আমি বলতে পারব না। আমি কিছুই জানি না।’
মহসিন খান তার ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লিপু বলেন, ‘তার ব্যবসা কীভাবে বন্ধ হয়ে গেল, এটা আমি বলতে পারব না। কারণ ওনার সঙ্গে আট বছরের গ্যাপ। উনি কোথায় ব্যবসা করতেন, কীভাবে করতেন, কিছুই জানি না।’
আট বছরের যোগাযোগহীনতা কীভাবে তৈরি হলো, জানতে চাইলে লিপু বলেন, ‘উনি বেশির ভাগ সময় দেশের বাইরে ছিলেন। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া। এখন আপনি যদি দেশের বাইরে থাকেন, তাহলে আপনার সঙ্গে আমার তো যোগাযোগটা থাকবে না। উনি তিন বছর থাকতেন বিদেশে, এর পর দেশে ১০ দিন থাকতেন, আবার চলে যেতেন।’
শেষ চার বছর দেশেই ছিলেন মহসিন
শেষ চার বছর মহসিন খান দেশে ছিলেন জানিয়ে লিপু বলেন, ‘ওনার ছেলে আর ওয়াইফ তিন-চার বছর আগে শেষ দেশে এসেছিলেন। তারা অস্ট্রেলিয়া থাকেন। উনি স্বাধীনচেতা মানুষ তো, বাসাতেই থাকতেন। আমরা দূর থেকে যতটুকু সাপোর্ট দিতে পেরেছি, দিয়েছি। খাবার-দাবার রান্না করে দিয়ে যাওয়া এতটুকু আমরা করতে পেরেছি। এই ফ্ল্যাটটা ওনার নিজের। উনি অন্য কোথাও থাকতেই চাইতেন না। ওনার মোহাম্মদপুরেও ফ্ল্যাট আছে, কলাবাগানেও আছে।’
তৈরি পোশাক মহসিন খানের পারিবারিক ব্যবসা। তার বাবা ১৯৮২ সাল থেকে দুটি পোশাক কারখানার মালিক। মহসিন খান পরে উনি পৃথক ব্যবসা শুরু করেন।
বুধবার রাত ৯টার দিকে নিজ ফ্ল্যাটে ফেসবুক লাইভে এসে মহসিন খান মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেন। তার আগে তিনি তার নিঃসঙ্গতা, পরিবার নিয়ে হতাশার কথা জানান। এক নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে দুঃখও প্রকাশ করেন তিনি।
আরও পড়ুন:২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়ার দাবিতে দেশের বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীর প্রেস ক্লাব এলাকায়। পুলিশের বাধার মুখে সেখান থেকে সরে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন।
রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে সেখানে সরে গিয়ে ওই স্থান থেকেই তারা লাগাতার কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, জনদুর্ভোগ এড়াতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি এখন থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলবে। প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকেই কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
তিনি আরও বলেন, আমাদের শীর্ষ নেতারা এরইমধ্যে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন। যারা এখনো প্রেস ক্লাবে আছেন, তাদের অনুরোধ করছি মিছিলসহ শহীদ মিনারে চলে আসতে। আমরা এখান থেকেই আমাদের আন্দোলন পরিচালনা করব এবং বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে লাগাতার আন্দোলনকে সাজাবো ইনশাআল্লাহ।
অধ্যক্ষ আজিজী বলেন, আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি—যতক্ষণ পর্যন্ত জাতীয়করণের প্রজ্ঞাপন জারি না হবে, আমরা শহীদ মিনার ছাড়ব না, ঢাকার রাজপথও ছাড়ব না। আলোচনার মাধ্যমে, সহযোগিতার মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন নিয়েই বিজয়ী বেশে আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরব।
অন্যদিকে প্রেস ক্লাব এলাকা থেকে শিক্ষক নেতাদের সরাতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেকেই আবার প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টাও করেন। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোন সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের সাথে বৈঠক করেন। ছবি: ফেসবুক
বাংলাদেশে আগামী বছর একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যুক্তরাজ্যের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক।
আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সাথে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
সারাহ কুক বলেন, ‘যুক্তরাজ্য কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে বৈঠকে খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আগামী বছর বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যুক্তরাজ্যের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছি।'
তিনি বলেন, 'নির্বাচন কমিশন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করি। যুক্তরাজ্য বিশেষ করে জাতীয় নাগরিক শিক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে, বিশেষ করে দেশের দুর্বল গোষ্ঠীগুলির জন্য এবং ভোটগ্রহণ কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করছে। তাই আমাদের এজেন্ডা ছিল নির্বাচন কমিশনের সাথে যুক্তরাজ্যের সমর্থন নিয়ে আলোচনা করা। যেমনটি আমি বলেছি, জাতীয় নাগরিক শিক্ষা এবং ভোটগ্রহণ কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্যও আমরা কাজ করছি। এই বিষয়গুলো নিয়ে আজ নির্বাচন কমিশনের সাথে আলোচনা করেছি।'
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি যে যুক্তরাজ্য আগামী বছর বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন করছে।’
রাজধানীর উত্তরার কবি জসীমউদ্দীন রোডে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় এক মোটরবাইক চালক নিহত হয়েছেন। মোহাম্মদ আরমান মির্জা (২১) নামের ওই তরুণ কলেজ শিক্ষার্থী ছিলেন।
সোমবার ভোররাত ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পথচারীরা আহত আরমানকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর সাড়ে ৬ টার দিকে মারা যান।
নিহতের খালা নাজনীন আক্তার জানান, ‘খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেল জরুরি বিভাগে এসে আমার ভাগিনা আরমানের মরদেহ দেখতে পাই। সে আব্দুল্লাহপুরের নবাব হাবিবুল্লাহ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। গভীর রাতে আরমান মোটরবাইক চালিয়ে যাওয়ার সময় জসিম উদ্দিন রোডে বেপরোয়া গতির একটি বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়।
তিনি আরও জানান, আরমানের বাড়ি চাঁদপুর জেলার হাজিগঞ্জ থানার পূর্ব হাতিআলা গ্রামে।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে জানানো হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্টিতব্য লঘূচাপের প্রভাবে রাজধানী ঢাকায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি এবং ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে, রাত হতে রাজধানীতে বজ্রসহ মুষলধারে বৃষ্টির ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বেশ কিছু এলাকায় অস্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতিটি ওয়ার্ডে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া, ওয়ার্ডভিত্তিক ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম (Emergency Response Team) কাজ করে চলেছে। গ্রীন রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, শান্তিনগর, বেইলি রোড, কাকরাইল, পল্টন, সাত মসজিদ রোড, ধানমণ্ডি এলাকার জলাবদ্ধতা ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছে। তবে, পানি নির্গমনের আউটলেট অংশ এবং খাল-নদীর অংশের পানির লেভেল প্রায় একই হওয়ার ফলে পানি নিষ্কাশনের ধীরগতি বিদ্যমান থাকায় কিছু এলাকার পানি নামতে আরও কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। এ সব এলাকা থেকে অস্থায়ী পোর্টেবল পাম্পের মাধ্যমে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, কমলাপুরে স্থাপিত হাই প্রেসার ভার্টিক্যাল পাম্পের মাধ্যমে দ্রুত পানি নামানোর কাজ চলমান রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৭০৯৯০০৮৮৮ (01709900888) মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি অব্যাহত রয়েছে।
রাজধানীতে গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টি। মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া অবিরাম বৃষ্টি আজ সোমবার সকালেও থামেনি। বৃষ্টির সঙ্গে ছিলো বজ্রপাতও। মুষলধারে হওয়া এই বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমেছে। ফলে সড়কে আটকে আছে গণপরিবহন। এতে সাতসকালেও ঘর থেকে কাজে বের হওয়া লোকজন পরেছেন ভোগান্তিতে।
এদিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ধানমন্ডি, আসাদগেট, কলাবাগান, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ১০, মিরপুর শেওড়াপাড়া, নিউমার্কেট, মগবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় পানি জমতে দেখা যায়। এসব এলাকায় কোথাও হাঁটুপানি পরিমাণ জমলেও আসাদগেট, মগবাজার, মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় ছিল কোমরসমান পানি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার দিবাগত রাত ১২টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে রাজধানীতে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী অবস্থায় রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি লঘূচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্ব মধ্যে বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর আরেকটি লঘূচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি ঘণীভূত হতে পারে।
এদিকে রাজধানীতে সকালে হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষ। শ্যামলী থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তায় আসতে গিয়ে আসাদগেট কোমরসমান পানিতে আটকা পড়েন ওবায়দুর রহমান। তিনি বলেন, সকালে বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বের হলেও বৃষ্টির কারণে সময়মত অফিসের জন্য বের হতে পারিনি। কোনোভাবে যাও বের হয়েছিলাম, তা পথের বিভিন্ন জায়গায় হাঁটুসমান থেকে কোমরসমান পানির জন্য আটকে থাকতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাস্তায় পানি জমে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে পরেছে। অফিসগামী লোকজনদের পরতে হয়েছে দুর্ভোগে।
এছাড়া শেওড়াপাড়া থেকে ফাহিম নামের এক তরুণ বলেন, বৃষ্টির কারণে গাড়ি পাচ্ছি না। রাস্তায় এত পরিমাণ পানি জমেছে যে, হেঁটে যাওয়ারও কোনো উপায় নেই। রিকশায়ও ভাড়া অনেক বেশি চাচ্ছে।
রোববার সন্ধ্যা ৬টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
প্রসঙ্গত, গতকয়েক দিন ধরেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরম ছিল। এ অবস্থায় গত শনিবার ও রোববার রাজধানীর আকাশ খানিকটা ঘোলাটে ছিল। তবে আজ সোমবার থেকে বৃষ্টি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল।
রাজধানীর বনানীতে যাত্রা শুরু করলো ভ্রমণ ও পর্যটনভিত্তিক নতুন প্রতিষ্ঠান ট্রিপোলজি। শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জুই গার্ডেনে অবস্থিত ট্রিপোলজির অফিসে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে এর উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ট্রাভেল ব্লগার শিশির দেব। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও যোগ দেন ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী এবং কোরিওগ্রাফার গৌতম সাহা।
উদ্বোধনী আয়োজনে ছিল রিবন কাটিং, অফিসিয়াল ফটো সেশন এবং দর্শকদের জন্য বিশেষ মিট অ্যান্ড গ্রিট সেশন। অনুষ্ঠান ঘিরে ভ্রমণপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় এবং তারা বাংলাদেশের ভ্রমণ শিল্পে ট্রিপোলজির সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ট্রিপোলজির কো-ফাউন্ডার তাজরিন আখতার, আবু বক্কর সিদ্দিক ও তৌহিদুল ইসলাম জানান, তাদের লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বাংলাদেশে ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রিকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়া। কোম্পানির সিইও ইমতিয়াজ কাইসুল বলেন, “ট্রিপোলজি শুধুমাত্র একটি ট্রাভেল এজেন্সি নয়; আমরা চাই মানুষ যেন ভ্রমণের প্রতিটি ধাপে নিশ্চিন্ত সেবা পায়। ভিসা প্রসেসিং থেকে শুরু করে এয়ার টিকিট, হোটেল বুকিং ও হলিডে প্যাকেজ সবকিছুতেই আমরা সর্বোচ্চ পেশাদার মান নিশ্চিত করতে চাই।”
ট্রিপোলজি বর্তমানে প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর ভিসা প্রসেসিংয়ে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছে। পাশাপাশি সব ধরনের দেশি-বিদেশি হলিডে প্যাকেজ, এয়ার টিকিট, হোটেল বুকিং, থার্ড ওয়ার্ল্ড ভিসা প্রসেসিং ও স্টুডেন্ট ভিসা সংক্রান্ত সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করেন, ট্রিপোলজির উদ্যোগ বাংলাদেশের ভ্রমণশিল্পকে আরও গতিশীল করবে।
ঠিকানা: জুই গার্ডেন, হাউস ২/এ, লেভেল-৭, ব্লক এল, রোড ২/১, বনানী-১২১৩, ঢাকা।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৩১৩টি মামলা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
এছাড়াও অভিযানকালে ৩৫৭টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১০২টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।
ডিএমপি’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বুধবার ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব মামলা করা হয়।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
মন্তব্য