ইতালি যাওয়ার সময় ঝড়োবাতাস ও প্রচণ্ড ঠান্ডায় তিউনিউসিয়ার ভূমধ্যসাগরে প্রাণ হারিয়েছেন বাংলাদেশের সাত যুবক।
এই সাতজনের মধ্যে পাঁচজনই মাদারীপুরের। এ ছাড়া অন্য দুজনের বাড়ি যথাক্রমে সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে।
রোববার ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে নিহতদের নাম পরিচয় প্রকাশের পর থেকেই শোকের মাতম চলছে তাদের পরিবারে।
মাদারিপুরের নিহত পাঁচজন হলেন, সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের পশ্চিম পেয়ারপুর গ্রামের শাজাহান হাওলাদারের ছেলে ইমরান হোসেন, মস্তফাপুর ইউনিয়নের চতুরপাড় গ্রামের শাহাজালালের ছেলে জহিরুল, ঘটকচর এলাকার কাশেম মোল্লার ছেলে সাফায়েত, পেয়ারপুর ইউনিয়নের বড়াইলবাড়ি গ্রামের প্রেমানন্দ তালুকদারের ছেলে জয় তালুকদার রতন।
বাপ্পী নামে নিহত আরেকজনের বাড়ি সদর উপজেলা লেখা থাকলেও এখনও তার পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
নিহতদের বাড়ি ঘুরে দেখা গেছে তাদের পরিবারে শোকের মাতম চলছে। নিহত জহিরুলের বাবা শাহাজালাল বলেন, ‘আমার সন্তানের মারা যাওয়ার খবর আমরা সরকারি চিঠির মাধ্যমে জানতে পারলাম। প্রায় ১০ থেকে ১২ দিন ধরে আমার ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা হয় না। দালালরা আমাদের কাছে ফোন করে বলেছে জহিরুল হাসপাতালের আইসিইউতে আছে। যদি আমার সন্তান মারা যায়, তা হলে তার লাশ যেন সরকার আমাদের কাছে এনে দেয়।’
নিহত ইমরান হোসেনের বোন বলেন, ‘গত ২১ জানুয়ারির আগে ভয়েস মেসেজের মাধ্যমে ইমরানের কথা শুনি। তারপর থেকে আর কোনো যোগাযোগ নেই। আমার ভাই মারা যাওয়ার কথা সরকারি চিঠির মাধ্যমে জানতে পারলাম। আমার বাবা-মা এখন পর্যন্ত জানে না।’
নিহত সাফায়েতের বোনের স্বামী রাসেল বলেন, ‘সাফায়েত মারা যাওয়ার কথা আমি শুনেছি। সাফায়েতের সঙ্গে যাওয়া বাড়ির পাশের দুই জন জীবিত আছে। তারা ফোন করে আমাদের বলেছে সাফায়েত মারা গেছে।’
দূতাবাসের চিঠি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ জানুয়ারি লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে অতিরিক্ত ঠান্ডায় মারা যাওয়া ৭ বাংলাদেশির পরিচয় শনাক্তে দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
পরে জীবিত উদ্ধার হওয়া অভিবাসন প্রত্যাশীদের কাছ থেকে মৃতদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয় ওই কমিটি।
সরকারি খরচে মরদেহগুলো দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য জেলা প্রশাসক কিংবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে দূতাবাসের চিঠিতে।
এ বিষয়ে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘যেসব অভিবাসন প্রত্যাশী মারা গেছেন তাদের মরদেহ যেন দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা যায় তার জন্য আমরা সব ব্যবস্থা নেব। আর যারা অবৈধপথে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন, তাদের সচেতন হতে হবে। দালালদের ব্যাপারে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি।’
আরও পড়ুন:লিবিয়ায় অস্ত্রধারীর গুলিতে প্রবাসী বাংলাদেশী এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ওই যুবকের নাম জগদীশ চন্দ্র দাস। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় দুপুরের দিকে লিবিয়ার সাফা এলাকায় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
শুক্রবার সকালে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফিরোজ আলম রিগান।
৩৬ বছর বয়সী জগদীশ নোয়াখালী সেনবাগ উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মোহাম্মদপুর গ্রামের সাহাজীরহাট দাস পাড়ার গোকুল চন্দ্র দাসের ছেলে।
নিহতের বাবা গোকুল চন্দ্র দাস জানান, জগদীশ ছয় বছর আগে জীবিকার তাগিদে লিবিয়ার সাফা এলাকায় পাড়ি জমান। এক সন্তানের জনক তিনি। সেখানে নার্সারিতে সবজি ও বিভিন্ন ফল-ফুলের গাছ চাষ করতেন তিনি। কয়েকদিন আগে মালিকের ভাতিজার ছাগলের পাল জগদীশের নার্সারির প্রচুর গাছ নষ্ট করে। এ নিয়ে মালিকের ভাতিজাকে তিনি একাধিকবার অভিযোগ করেন।
তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার সকালের দিকে মালিকের ভাতিজা তার কয়েকটি ছাগল খুঁজে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। পরে দুপুরে জগদীশ খেতে বসলে ওই ব্যক্তি হঠাৎ এসে তাকে গুলি করে হত্যা করেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লিবিয়ায় থাকা জগদীশের ছোট ভাই সন্তোষ মুঠোফোনে দাদার মৃত্যুর বিষয়টি পরিবারকে জানান।
সেনবাগ থানার ওসি নাজিম উদ্দীন বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে জানব।’
লিবিয়া যেতে ইচ্ছুকদের এখনই কোনো এজেন্সির সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। তিনি বলেছেন, ‘লিবিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি-সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। লিবিয়ার নির্মাণ খাত ও স্বাস্থ্য সার্ভিস সেক্টরে বাংলাদেশিদের চাহিদা রয়েছে। তবে এখনই লিবিয়া যাওয়ার জন্য কোনো এজেন্সির সঙ্গে লেনদেন করা যাবে না। দেশটিতে কোন প্রক্রিয়ায় কর্মী যাবে, তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।’
সোমবার দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিদেশে মৃত প্রবাসী কর্মীদের পরিবারের হাতে আর্থিক ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দেয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘লিবিয়ার মাধ্যমে ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইউরোপে পাঠানোর নামে যুবকরা মানবপাচারের শিকার হচ্ছে। এসব মানবপাচারের সঙ্গে বাংলাদেশি দালালরাও জড়িত রয়েছে। এতে বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে্’
প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীনের সভাপতিত্বে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের উদ্যোগে ক্ষতিপূরণের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ১৫ জন মৃত প্রবাসী পরিবারের হাতে মোট প্রায় ৬ কোটি টাকার চেক তুলে দেন। এর মধ্যে একটি পরিবারের হাতে ১০ লাখ টাকার জীবন বিমা ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দেয়া হয়।
চেক গ্রহণকালে অধিকাংশ মৃত প্রবাসী পরিবারের স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার প্রবাসীদের কল্যাণ ও অধিকার আদায়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ। বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের যেকোনো বিপদ-আপদে সরকার পাশে রয়েছে। মন্ত্রণালয় বিদেশস্থ শ্রম কল্যাণ উইংয়ের মাধ্যমে কর্মীদের সামগ্রিক নিরাপত্তা ও সকল ধরনের সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে।’
বিদেশে মৃত কর্মীদের ক্ষতিপূরণের অর্থ নিয়োগকারী কোম্পানি হতে আইনগতভাবে আদায় করে তা মৃত কর্মীর ওয়ারিশদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ সচিব মুনিরুছ সালেহীন বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী কর্মীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশে-বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী কর্মীদের পরিবারকে সরকারের তরফ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। মৃত প্রবাসী কর্মীর ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায় করে দ্রুত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা তাদের পরিবারের নিকট পৌঁছে দিচ্ছি।’
অনুষ্ঠানে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সায়মা ইউনুস এবং ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (অর্থ ও কল্যাণ) শোয়াইব আহমাদ খানও উপস্থিত ছিলেন।
‘লিবিয়ায় পড়ে আছি আজ কেউ ৯ মাস, কেউ ১০ মাস, কেউ এক বছর ধরে। দালাল চক্রের হাতে পড়ে এক মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি। এখানে নেই কোনো কাজ। খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটাতে হচ্ছে।’
লিবিয়ায় আটকে পড়া আরও আটজনকে সঙ্গে নিয়ে ইমোতে পাঠানো একটি ভিডিওবার্তায় কথাগুলো বলছিলেন মোহাম্মদ করিম।
তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ করে বলেন, ‘আমরা পরিবারের অভাব-অনটন দূর করার জন্য নিজের শেষ সম্বলটুকুও বিক্রি করে এসেছি। বেশি কিছু প্রত্যাশা করি না, আমাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করুন।’
এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কার্যালয়ে একে একে জমায়েত হন লিবিয়ায় আটকে পড়া ৯ জনের স্বজন। হাতে ছিল সন্তানদের ফিরে পাওয়ার লিখিত আবেদন।
স্বজনদের অভিযোগ, উপার্জনের লোভ দেখিয়ে অবৈধ পথে তাদের লিবিয়ায় নিয়ে যায় প্রতারক চক্র। সেখানে নিয়ে জিম্মি করে চাওয়া হয় মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ। প্রথম দফায় মুক্তিপণ পেয়ে অন্য একটি চক্রের কাছে তাদের বিক্রি করে দেয়া হয়।
প্রবাসীদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, এভাবে হাত বদলে কয়েক দফায় মুক্তিপণ দিতে হয় পরিবারকে। টাকা পাঠাতে দেরি হলে চলে চরম নির্যাতন আর বাড়ানো হয় মুক্তিপণের অঙ্ক।
লিবিয়ায় আটকে পড়া ৯ জন হলেন বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়নের শহীদ রুকনুল ইসলাম, মো. মোরশেদুল আলম, মোহাম্মদ কাউছার মিয়া, আজগর হোসেন, গিয়াস উদ্দিন, মোহাম্মদ আশেক ও তার ভাই ইব্রাহিম খলিল, বাঁশখালী পৌরসভার আইয়ুব আলী ও কাথরিয়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ করিম।
আটকে পড়া আটজনকে নিয়ে একটি ভিডিওবার্তা পাঠান মোহাম্মদ করিম। দুই মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ভিডিওবার্তায় তারা জানান বাঁশখালীর ইউএনও সেখানে বাংলাদেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করায় তারা এখন একটি নিরাপদ স্থানে অবস্থান করছেন।
ভিডিওবার্তায় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপির কাছে দেশে ফেরার আকুতি জানান তারা।
রুকনুল ইসলামের বাবা শহীদ উল্লাহ বলেন, ‘আমার ছেলে কাজ করত দুবাইয়ে। সেখানে পাশের ইউনিয়নের একটি ছেলে ইমোতে যোগাযোগ করে আমার ছেলেকে লিবিয়াতে নিয়ে যাওয়ার লোভ দেখাতে থাকে। অনেক টাকা বেতন আর অনেক সুযোগ-সুবিধার কথা বলে।
‘আমার ছেলের বয়স কম ও অনভিজ্ঞ হওয়ায় সে লোভে পা দিয়ে আটকে যায়। সেখানে গিয়ে কাজ তো পায়নি; উল্টো মানব পাচারকারী একটি চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে যায়। দফায় দফায় মুক্তিপণ দাবি করে তারা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি জায়গা-জমি বন্ধক রেখে প্রায় ছয় লক্ষ টাকার মতো দিয়েছি। অন্যান্য যারা আছেন তারাও এইভাবে মুক্তিপণেরর টাকা দিয়েছেন। টাকা দেয়ার সব কাগজপত্র আমার কাছে আছে।’
বাঁশখালীর ইউএনও জেসমিন আক্তার বলেন, ‘লিবিয়ায় আটকে পড়া ৯ বাঁশখালীর প্রবাসীকে ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে দূতাবাসের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সর্বশেষ তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।’
আরও পড়ুন:কর্মসংস্থানের জন্য ভিসা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় গমনেচ্ছুদের সতর্ক থাকার অনুরোধ করেছে ক্যানবেরায় বাংলাদেশ হাইকমিশন।
শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ হাইকমিশন লক্ষ্য করেছে যে, কতিপয় অসাধু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অস্ট্রেলিয়ায় কাজের প্রলোভন দেখিয়ে আগ্রহীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
দেশটিতে চাকরি পেতে আগ্রহীদের কাজের ভিসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করার জন্য প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং ক্যানবেরায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহায়তা নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। খবর বাসসের।
এতে আরও বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ায় অস্থায়ী ও স্থায়ী ভিসায় কর্মী নেয়ার জন্য ‘টেম্পোরারি স্কিল শর্টেজ সাবক্লাস ৪৮২’ নামে একটি ভিসা চালু রয়েছে। এই ভিসার ক্ষেত্রে বয়সের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও পেশাদার কর্মীদের অস্ট্রেলিয়ায় কাজের জন্য যাওয়ারর সুযোগ রয়েছে। এই ভিসা পাওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়া সরকার অনুমোদিত একজন স্পন্সর (নিয়োগকারী) প্রয়োজন হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট পেশার শিক্ষাগত যোগ্যতা, বিশেষ করে ট্রেড পেশার জন্য অস্ট্রেলিয়ান কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী সার্টিফিকেট-৩/৪ অথবা ডিপ্লোমা প্রয়োজন হয়। স্কিল লেভেল ১ মাত্রার পেশার জন্য ব্যাচেলর বা মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন। যেকোনো পেশার ক্ষেত্রে কমপক্ষে তিন থেকে চার বছরের পূর্ণকালীন কাজের অভিজ্ঞতা দরকার হয়।
অভিজ্ঞতা প্রমাণের জন্য চাকরির নিয়োগপত্র, বিগত দুই বছরের বেতন বিবরণী, ব্যাংকের হিসাব বিবরণী প্রয়োজন হয়। সংশ্লিষ্ট পেশায় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলে পাঁচ থেকে ছয় বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। তবে সংশ্লিষ্ট পেশায় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে রিকগনিশন অব প্রায়োর লারনিংয়ের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ায় নিদিষ্ট সংখ্যক কলেজ থেকে পেশা সংক্রান্ত শিক্ষাগত সনদ অর্জন করা যায়। পেশা বিবেচনায় আইইএলটিএসের স্কোর প্রয়োজন হয় ৫ থেকে ৬। আইইএলটিএস ছাড়াও অন্যান্য স্বীকৃত পরীক্ষা যেমন টোফেল, পিটিই গ্রহণযোগ্য।
বিজ্ঞতিতে জানানো হয়, বিদেশি কর্মীদের কাজের দক্ষতা অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যাচাই করাতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের কয়েকটি পেশার জন্য দক্ষতা যাচাই করানোর প্রয়োজন হয় না। সেগুলো হলো-অটোমোটিভ ইলেকট্রিশিয়ান, ক্যাবিনেট মেকার, কারপেন্টার, কারপেন্টার ও জয়েনার, ডিজেল মোটর মেকানিক, ইলেকট্রিশিয়ান (জেনারেল), ইলেকট্রিশিয়ান (স্পেশাল ক্লাস), ফিটার (জেনারেল), ফিটার ও টারনার, ফিটার-ওয়েল্ডার, জয়েনার, মেটাল ফেবরিকেটার, মেটাল মেকানিস্ট (ফার্স্টক্লাস), মোটর মেকানিক (জেনারেল), প্যানেল বিটার, পেস্ট্রিকুক, সিটমেটাল ট্রেড ওয়ার্কার, টুলমেকার, ওয়েল্ডার (ফার্স্টক্লাস)। টেম্পোরারি স্কিল শর্টেজ ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া কর্মীদের বার্ষিক বেতন কমপক্ষে ৭০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার।
এ ভিসার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে অস্ট্রেলিয়ার হোম অফিসের লিংকে।
আরও পড়ুন:দালালের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় লিবিয়ায় গিয়ে আটকে পড়েছেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর নয়জন। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে স্বজনরা গত রোববার বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আবেদন করেছেন।
আটকে পড়া নয়জন হলেন গন্ডামারা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার শহীদ উল্লাহের ছেলে রুকনুল ইসলাম, নুরুল আমিনের ছেলে মোরশেদুল আলম, আহমদ কবিরের ছেলে মোহাম্মদ কাউছার মিয়া, আবদুল মোনাফের ছেলে আজগর হোসেন, আবদুল মজিদের ছেলে গিয়াস উদ্দিন, মৃত অলি আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আশেক ও তার ভাই ইব্রাহিম খলিল, বাঁশখালী পৌরসভার উত্তর জলদী ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত ওমর আলীর ছেলে আইয়ুব আলী ও কাথরিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বাগমারা এলাকার আবু আহমদের ছেলে মোহাম্মদ করিম।
আটকে পড়া নয়জনের পারিবারিক সূত্র জানায়, ভালো চাকরি ও কর্মসংস্থানের কথা বলে মানবপাচারকারী দালালেরা তাদের লিবিয়ায় নিয়ে গিয়ে সেখানকার সন্ত্রাসী চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। লিবিয়ার সন্ত্রাসীরা তাদের সেখানে কোনো কাজকর্ম কিংবা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেনি, উল্টো তাদের বিভিন্ন স্থানে আটকে রেখে নির্যাতন চালায় এবং দেশে স্বজনদের কাছে মোবাইলে মুক্তিপণ দাবি করে।
এদিকে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে দেশীয় দালালদের মাধ্যমে মুক্তিপণের টাকা পাঠানো হলেও ওই নয়জনকে দেশে ফেরানোর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। বর্তমানে তারা বেনগাজীর শেরা অ্যালবাম নামক এলাকার পাহাড়ে দিন পার করছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীদের স্বজনরা।
সূত্র আরও জানায়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর ওই নয়জনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে স্বজনরা প্রশাসনিক সহযোগিতা ও সরকারি হস্তক্ষেপ চেয়ে বাঁশখালী ইউএনওর কাছে লিখিত আবেদন করেন।
এ বিষয়ে বাঁশখালীর ইউএনও জেসমিন আক্তার বলেন, ‘দালালের মাধ্যমে লিবিয়া গিয়ে নয়জন আটকে পড়ায় তাদের পরিবার প্রশাসনিক সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ নিয়ে কাজ করা হবে।’
আরও পড়ুন:রিক্রুটিং এজেন্সির জরিমানা এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের জবাবদিহিতার বিধান রেখে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী (সংশোধন) বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সংসদে বিলটি উত্থাপন করেন বৈদেশিক ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। বিলের ওপর আনা বিরোধী সদস্যদের জনমত যাচাইবাছাই কমিটিতে প্রেরণ এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
বিলের সংজ্ঞায় ‘সাব এজেন্ট বা প্রতিনিধি’ সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সাব এজেন্ট বা প্রতিনিধি অর্থ এই আইনের অধীনে নিবন্ধিত কোনো ব্যক্তি, যিনি কোনো রিক্রুটিং এজেন্টের সাব–এজেন্ট বা প্রতিনিধি হিসেবে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য এই এজেন্টের চাহিদা অনুযায়ী অভিবাসী কর্মী সংগ্রহ করেন।
এতে জবাবদিহিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদ্যমান প্রশাসনিক ব্যবস্থার অতিরিক্ত হিসেবে অপরাধ সংঘটনের জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিকে ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হয়েছে। তদন্ত ও শুনানি ছাড়া অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় রিক্রুটিং লাইসেন্সের কার্যক্রম স্থগিত করার বিধান করা হয়েছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের রিক্রুটিং প্রক্রিয়ায় মধ্যস্বত্বভোগীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার লক্ষ্যে সাব-এজেন্ট বা প্রতিনিধি নিয়োগ এবং সংশ্লিষ্টদের দায়-দায়িত্বের বিধান সংযোজন করা হয়েছে ।
এছাড়া বিলে অভিবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে ব্যাংক ঋণ, কর রেয়াত, সঞ্চয়, বিনিয়োগ, আর্থিক সহায়তা, বৃত্তি দেওয়া ইত্যাদি প্রবর্তন ও সহজ করার ব্যবস্থা করার বিধান রাখা হয়েছে।
বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘নারীরা লাশ হয়ে ফিরে আসছেন। কিন্তু স্বাভাবিক মৃত্যু বলে দিচ্ছে। দেশে মরদেহ আসার পর পোস্টমর্টেম করা উচিত। এভাবে গিয়ে নির্যাতিত হয়ে মৃত্যুবরণের চেয়ে দেশে কাজের সুযোগ করে দেয়া উচিত। যারা কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে যান, এয়ারপোর্টে তারা এমনভাবে নিগৃহীত হন যেন তারা অপরাধী। আসার সময়ও হয়রানির শিকার হন। এয়ারপোর্টে তাদের জন্য আলাদা ডেস্ক করা দরকার।’
জাতীয় পার্টির এমপি শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিসে আসতে হবে। এই রেমিট্যান্স বাদ দিলে কী আছে? গার্মেন্টস ৮০ ভাগ কাঁচামালে চলে যায়। একমাত্র রেমিট্যান্স সরাসরি রিজার্ভে যোগ হয়। তাদের বরাদ্দ খুবই কম। এয়ারপোর্টে হয়রানি হচ্ছে। তাদের জন্য আলাদা লাউঞ্জ হওয়া দরকার।’
গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, ‘নারী শ্রমিকরা মধ্যপ্রাচ্যে যান। তাদের দুরবস্থার কথা সবার জানা। কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ দূতাবাস নেয় কি না তা সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে।’
আরও পড়ুন:ভূমধ্যসাগরীয় প্রলয়ংকরী ঝড় ‘দানিয়েল’-এর আঘাতে বাঁধ ভেঙে সৃষ্ট বন্যায় লিবিয়ার পূর্ব উপকূলীয় শহর দারনায় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৬ বাংলাদেশি রয়েছেন বলে জানা গেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বুধবার জানায়, এ দুর্যোগে নিখোঁজ হয়েছেন কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ। বন্যায় ভেসে গেছে অনেক ভবন; নিশ্চিহ্ন হয়েছে শহরের এক-চতুর্থাংশ এলাকার বিভিন্ন স্থাপনা।
স্থানীয় সময় ১০ সেপ্টেম্বর রাতে লিবিয়ার ত্রিপলী শহর থেকে ১৩৪০ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দূরবর্তী উপকূলীয় শহর দারনায় সাইক্লোন দানিয়েল আঘাত হানে। এতে দেশটির বেনগাজী, আল-মারজ, শাহাত, আল-বাইদা এবং দারনা শহর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহরের সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তারিক আল-খারাজের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সাইক্লোনে মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যুর এই সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, উপকূলীয় শহর দারনায় বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের অবস্থা জানার জন্য ত্রিপলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, আইসিআরসি ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম-এর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
দারনা হাসপাতালে কর্মরত বাংলাদেশি একজন নার্সের মাধ্যমে পাওয়া খবরে জানা যায়, ওই শহরে সাইক্লোন ‘দানিয়েল’-এর আঘাতে ৬ বাংলাদেশি নাগরিক মারা গেছেন। তাদের মধ্যে চারজনের নাম-ঠিকানা জানা গেছে। তারা হলেন- রাজবাড়ী জেলার শাহীন ও সুজন এবং নারায়ণগঞ্জের মামুন ও শিহাব।
অপর দুজনের বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, এলাকাটি দুর্যোগকবলিত হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় মারা যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের মরদেহ সংরক্ষণ এবং আটকেপড়া বাংলাদেশি প্রবাসীদের উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসন, আইসিআরসি ও আইওএম-এর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।
এছাড়াও মারা যাওয়া অজ্ঞাত দুই বাংলাদেশির নাম ও ঠিকানা জানার জন্য দূতাবাস থেকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
দুর্যোগকবলিত এলাকায় সরেজমিনে যাওয়ার জন্য ত্রিপলিতে লিবিয়া সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছে দূতাবাস। অনুমতি পেলেই দূতাবাস থেকে একটি প্রতিনিধি দল দুর্যোগকবলিত ওই উপকলীয় এলাকায় যাবে। সে জন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য