দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনা এক বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২১ সালে দেশে ১০১ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন বলে এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে বেসরকারি একটি সংস্থা।
২০২০ সালে দেশে ৪২ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছিলেন বলে রেকর্ড করেছিল বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন।
যেসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আত্মহনন করছেন তার মধ্যে সম্পর্কের অবনতিকে প্রধান কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতি চারজনে একজন এ কারণেই আত্মহনন করছেন বলে সম্প্রতি করা একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে।
বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন শনিবার সমীক্ষা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। ২০২১ সালের জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক, অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে সংস্থাটি।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা যেসব কারণে আত্মহত্যা করছেন তার অন্যতম কারণ সম্পর্কের অবনতি। আত্মহত্যা করাদের মধ্যে ২৪ দশমিক ৭৫ শতাংশই বিভিন্ন ধরনের সম্পর্কের অবনতির কারণে করেছে।
এরপর রয়েছে পারিবারিক সমস্যার কারণে, যা ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ।
এ ছাড়া মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ, পড়াশোনাসংক্রান্ত কারণে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ, আর্থিক সমস্যায় ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ, মাদকাসক্ত হয়ে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণে ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
তবে গবেষকরা জানান, মূলত সম্পর্কের অবনতি, পারিবারিক জটিলতা, পড়াশোনা নিয়ে হতাশা, আর্থিক সংকট আত্মহত্যার মূল কারণ।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই বেশি আত্মহত্যা করেছেন
দেশে গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার যে সংখ্যা জানিয়েছে আঁচল ফাউন্ডেশন তার মধ্যে ৬২ জনই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এ ছাড়া মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
১০১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯ জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের, এরপরই আছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারজন।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তিনজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন বলে উঠে এসেছে সমীক্ষা জরিপে।
সংস্থাটির হিসাবে, ২০১৮ সালে ১১ এবং ২০১৭ সালে ১৯ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছিলেন।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তের পর থেকে ১৫ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সেই সময় মানসিক চাপে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়। সে বছর দেশে ৫০ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছিল, যার ৪২ জন ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
শীতকালে আত্মহত্যার হার বেশি
সমীক্ষার জরিপের তথ্য তুলে ধরে আঁচল ফাউন্ডেশনের গবেষকরা জানান, গত এক বছরে যারা আত্মহত্যা করেছেন, তাদের মধ্যে ডিসেম্বরে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে। এই মাসে গড়ে ১৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ আত্মহত্যা করেছে, যা সংখ্যায় ১৫ জন। সবচেয়ে কম এপ্রিলে, যা ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ বা ২ জন।
এতে দেখা গেছে, গ্রীষ্মকালের চেয়ে শীতকালে আত্মহত্যার হার বেশি। স্নাতক তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার তুলনামূলক বেশি, যা শতকরা হিসাবে ৩৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
ছাত্রদের আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি
গত বছর আত্মহত্যার শিকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রদের সংখ্যা বেশি। ১০১ জনের মধ্যে ৬৫ জনই ছাত্র, ৩৬ জন ছাত্রী।
বয়স বিবেচনায়, ২২-২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। এ বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬০টি আত্মহত্যার ঘটনা দেখা গেছে, যা মোট ঘটনার ৫৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।
অন্যদিকে ২১ বছর বয়সী ২৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ বা ২৭ জন। ২৬-২৯ বছর ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ বা ১০ জন এবং ২৯ বছরের ওপরে ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ বা চারজন।
২০১৯ সাল থেকে আঁচল ফাউন্ডেশন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে। এর আগে আলাদা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার সংখ্যা নিয়ে কাজ করেনি সংগঠনটি।
বেরসকারি সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, ‘সম্পর্কের অবনতির কারণে আত্নহননের ঘটনা ঘটছে সবচেয়ে বেশি। নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষার সুযোগ অপর্যাপ্ত হওয়ায় জীবনে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলে শিক্ষার্থীরা সেটা সামলাতে পারেন না। প্রেমে বিচ্ছেদ হলে তারা যেমন ভেঙে পড়েন, তেমনি পরীক্ষায় খারাপ ফলাফলও তাদের আশাহত করে।’
তিনি বলেন, ‘ভালো-মন্দ যাই ঘটুক, সেটি জীবনেরই অংশ। আত্মবিশ্বাস না হারিয়ে ধৈর্যশীল হতে হবে। জীবনটা অনেক মূল্যবান।’
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য