সম্প্রতি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া কথাসাহিত্যিক হোসেনউদ্দীন হোসেনের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখিত তার আত্মজীবনী গ্রন্থে ‘বিকৃত’ ইতিহাস তুলে ধরা নিয়ে ক্ষুব্ধ যশোরের মুক্তিযোদ্ধারা।
হোসেনউদ্দীন হোসেন তার যুদ্ধদিনের স্মৃতিকথা নিয়ে ‘রণক্ষেত্রে সারাবেলা’ নামে একটি বই লিখেছেন। ২০১২ সালে বইটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই চলছে এই ক্ষোভ।
বইটিতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হামিদকে রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। হোসেনউদ্দীন হোসেন নিজেকে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করলেও সপক্ষে প্রমাণ মেলেনি। অভিযোগ আছে রাজাকারের পক্ষ হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা নির্যাতনেরও।
বইয়ের ২৩৪ পৃষ্ঠায় হোসেনউদ্দীন হোসেন লিখেছেন, ‘কয়েকদিন পরে হানাদার বাহিনী কায়েমখোলা গিয়ে একটা হামলা চালালো।.... পথিমধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা গোপন সংবাদ পেয়ে হানাদার বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। শুরু হয় উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ। হামিদ নামক একজন রাজাকার এই যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করে। সিদ্দিক নামক একজন মুক্তিযোদ্ধা মারাত্মক জখম হন। হানাদার বাহিনীর হাতে তিনি ধরা পড়েন। কয়েকদিন পর যুদ্ধে নিহত রাজাকার হামিদের নামে একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়।’
কে এই শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ
ঝিকরগাছা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের বিবরণ অনুযায়ী, ১০ অক্টোবর ১৯৭১ কায়েমখোলায় (পরে গ্রামটি ভেঙে ছোট কুলি নামে আরেকটি গ্রাম হয়েছে) নিহত হন আব্দুল হামিদ। তিনি ছিলেন ঝিকরগাছা উপজেলা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) সেকেন্ড ইন কমান্ড ও ডেপুটি কমান্ডার।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওইদিন সকালে পাকিস্তানি বাহিনী আমচকা অভিযানে গিয়ে বিলের ব্রিজের উপরে আব্দুল হামিদকে পেয়ে যায়। সঙ্গে থাকা গ্রেনেড ছুড়লেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিস্ফোরিত না হলে ব্রিজ থেকে বিলে লাফ দেন তিনি। কিন্তু বিলে কচুরিপানায় সাঁতার কাটতে না পারায় হানাদাররা তাকে ধরে ফেলে। পরবর্তীতে পাকিস্তানি বাহিনী গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাকে হত্যা করে। আর তার কমান্ডে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বকর সিদ্দিককে হানাদাররা ধরে নিয়ে যায়।
বইয়ের এই অংশ নিয়ে ২০১৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা কমিটি হোসেনউদ্দীন হোসেনের কাছে জানতে চায় তিনি কেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হামিদকে রাজাকার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জবাবে হোসেনউদ্দীন হোসেন বলেন, এই হামিদ যুদ্ধে নিহত মুক্তিযোদ্ধা হামিদ নয়।
যুদ্ধের পর বর্তমান রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ আব্দুল হামিদের নামে একটি হলের নামকরণ করা হয়। যশোরের কুলি-কায়েমখোলা সড়কের নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদের নামে করা হয়েছে। বাঁকড়া-শিমুলিয়া সড়কেরও নামকরণ করা হয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হামিদের সঙ্গে। ঝিকরগাছা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে ১ নম্বরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদের নাম লেখা। এছাড়া ১৯৭২ সালে সরকারি সব তালিকায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার রয়েছে।
বইয়ের এই অংশ নিয়ে ২০১৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা কমিটি হোসেনউদ্দীন হোসেনের কাছে জানতে চায় তিনি কেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হামিদকে রাজাকার হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
জবাবে হোসেনউদ্দীন হোসেন বলেন, এই হামিদ যুদ্ধে নিহত মুক্তিযোদ্ধা হামিদ নয়।
অথচ যাচাই-বাছাই কমিটিকে আহত মুক্তিযোদ্ধা আবু বকর সিদ্দিক জানান, রাজাকার হামিদ বলে সেদিন কেউ ছিল না। ওইদিন যিনি নিহত হন তিনি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হামিদ।
এ ঘটনার পর কমিটি হোসেনউদ্দীন হোসেনের কাছে জানতে চায়, তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এমন কী প্রমাণ আছে এবং মুক্তাঞ্চলে কোন ক্যাম্পের অধীনে তিনি যুদ্ধ করেছেন। হোসেনউদ্দীন হোসেন ওই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ ঘটনার পর কমিটি হোসেনউদ্দীন হোসেনের কাছে জানতে চায়, তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এমন কী প্রমাণ আছে এবং মুক্তাঞ্চলে কোন ক্যাম্পের অধীনে তিনি যুদ্ধ করেছেন। হোসেনউদ্দীন হোসেন ওই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি (২০১৭ সালের সেই শুনানির ভিডিও নিউজবাংলার কাছে আছে)।
ইতিহাসের ভুল তথ্য দেয়ার অভিযোগ এনে হোসেনউদ্দীন হোসেনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের সুপারিশ করে বাছাই কমিটি।
পরে ঝিকরগাছার তৎকালীন ইউএনও আব্দুল জলিলসহ কমিটির সব সদস্যের স্বাক্ষর করা এক প্রতিবেদনে হোসেনউদ্দীন হোসেনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের প্রস্তাব করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে তার ভাতা বন্ধ করে দেয় সরকার।
২০২০ সালে আরাফাত হোসেন ইউএনও থাকার সময় হাইকোর্টের একটি রিটের বিপরীতে তাঁর কাছে তথ্য চাওয়া হলে সেখানেও হোসেনউদ্দীন হোসেনের এই ‘বিতর্কিত’ তথ্যগুলো তিনি নথিভুক্ত করে প্রতিবেদন পাঠান।
নিউজবাংলার পক্ষ থেকে শহীদ হামিদ সম্পর্কে জানতে চাইলে হোসেনউদ্দীন হোসেন বলেন, ‘আমি যে হামিদের কথা বলেছি তিনি সেই হামিদ নন। তবে হামিদ যুদ্ধে অংশ নেননি, এমনকি মুজিব বাহিনীরও কেউ যুদ্ধে অংশ নেয়নি।’
রাজাকার হামিদের গ্রাম কোনটি- এমন প্রশ্নেরও উত্তর দেননি তিনি।
রাজাকার কমান্ডারের প্রশংসা
মুক্তিবাহিনী ৬ ডিসেম্বর ঝিকরগাছা শত্রুমুক্ত করে। তখন মুক্তিযুদ্ধকালে লুটপাট, ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে ঝিকরগাছা থানা আনসার কমান্ডার সিদ্দিককে হত্যা করে।
হোসেনউদ্দীন হোসেন তার বইয়ের ১৬৩-১৬৫ পৃষ্ঠায় লিখেছেন- অন্য রাজাকাররা যখন আমাকে ডেকে নিয়ে যায় তখন আনসার কমান্ডার সিদ্দিক আমাকে চা-নাস্তা খেতে দেয় এবং পাকিস্তানি বাহিনীর অফিসার সম্মানের সঙ্গে কথা বলে আমাকে ছেড়ে দেয়।
তিন পৃষ্ঠা জুড়ে ওই সাক্ষাৎকারের বিবরণ লিখে এই রাজাকার কমান্ডার সিদ্দিকের প্রশংসা করেছেন হোসেনউদ্দীন হোসেন।
যুদ্ধে অংশগ্রহণে প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য পায়নি কমিটি
মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে গঠিত ঝিকরগাছা উপজেলা কমিটি হোসেনউদ্দীন হোসেনের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে জীবিত কোনো মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষ্য পায়নি। তার পক্ষে একমাত্র সাক্ষ্য দিতে আসেন ভাগ্নি জামাই মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের। কাদেরের সঙ্গে কোথায় যুদ্ধ করেছেন জানতে চাইলে উত্তর না দিয়েই কমিটির শুনানি থেকে বেরিয়ে যান তিনি।
যা বললেন হোসেনউদ্দীন হোসেন
এসব অভিযোগের বিষয়ে হোসেনউদ্দীন হোসেনের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী কথা হয় এই প্রতিবেদকের। পুরো কথোপকথনে সহযোদ্ধা হিসেবে আব্দুল কাদের ছাড়া আর কোনো জীবিত মুক্তিযোদ্ধার নাম বলতে পারেননি তিনি। আব্দুল কাদেরের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল নম্বর চাইলেও তিনি দিতে রাজি হননি।
একাত্তরে একটিমাত্র যুদ্ধের কথা বলেছেন তিনি, সেটি হচ্ছে ১০ জুলাইয়ের লাউজানি যুদ্ধ।
কিন্তু সীমান্তবর্তী হওয়া সত্ত্বেও ওই যুদ্ধের খবর জীবিত কোনো মুক্তিযোদ্ধা যেমন জানেন না, তেমনি কলকাতা ও বঁনগা থেকে প্রকাশিত কোনো পত্রিকায় এই যুদ্ধের বিবরণ নেই। এমনকি লাউজানির বয়োবৃদ্ধরাও এখানে ওই তারিখে যুদ্ধ হওয়ার কথা জানেন না।
ঝিকরগাছা থানার দুই মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রশিদ ও লিয়াকত আলী বলেন, ‘এরকম কোনো যুদ্ধ হয়নি। একাত্তরে আমরা এ অঞ্চলে সার্বক্ষণিক সক্রিয় থেকেছি। এমন যুদ্ধ হলে আমাদের জানার কথা।’
মুক্তিযোদ্ধা নির্যাতনের অভিযোগ
ঝিকরগাছার নাভারণ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা হাশেম অভিযোগ করেছেন, তাকে যখন রাজাকারেরা ধরে নিয়ে যায় তখন নির্যাতকদের মধ্যে হোসেনউদ্দীন হোসেনও ছিলেন।
যশোর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘রাজাকাররা আমাকে যখন নাভারন ক্যাম্পে নিয়ে যায় তখন হোসেন সেখানে ছিল।’
মুক্তিযোদ্ধা হাশেমের গ্রুপ কমান্ডার লিয়াকত আলী বলেন, “হোসেনউদ্দীন ১৯৬৫ সালে যখন পাক-ভারত যুদ্ধে মুজাহিদ বাহিনীতে যোগ দেন তখন থেকেই ঝিকরগাছার মানুষ তাকে চেনে। মুক্তিযোদ্ধা হাশেম আমাকে বলেছিল- আমাকে যখন ধরে নিয়ে যায় তখন সেখানে হোসেন ভাই ছিল।”
এ প্রসঙ্গে হোসেনউদ্দীন হোসেন বলেন, ‘রাজাকার হোসেন নামে আরেকজন ছিল, আমি না। আমি নাভারণে যাইনি।’
অথচ নিজের ‘রণক্ষেত্রে সারাবেলা’ বইয়ে তিনি একাধিকবার নাভারন যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
বিষয়টির উল্লেখ করে স্ববিরোধী বক্তব্য দেয়ার কারণ জানতে চাইলে হোসেনউদ্দীন রেগে যান। এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন- ‘আপনার সব সাক্ষ্যদাতাকে আমার সামনে আনেন।’
পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে তিনি ভারতেই আছেন নাকি অন্য কোনো দেশে পাড়ি জমিয়েছেন সে বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নিশ্চিত কোনো বার্তা নেই।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমনটাই জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থানের বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। আমরা দিল্লিতেও এ বিষয়ে খোঁজ করেছি। কনফারমেশন (নিশ্চয়তা) কেউ দিতে পারেনি।
‘মিডিয়ায় আপনারা যেমন দেখেছেন, আমরাও দেখেছি যে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আজমানে গেছেন। তবে আমরা কনফার্ম (নিশ্চিত) হতে পারিনি।’
সরকারের পতনের পর ভারতে অবস্থান নেয়া সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ট্রাভেল পাস নিয়ে অন্য দেশে পালিয়ে যাচ্ছেন। এমনটা উল্লেখ করে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে বাংলাদেশে ফেরার জন্য ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হয়ে থাকে। এটা অন্য কোনো দেশে যাওয়ার জন্য নয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে ভারত শেখ হাসিনাকে অন্য কোনো দেশে পাঠিয়ে দিল কি না- এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকেই জেনে নেয়ার পরামর্শ দেন।
আরও পড়ুন:গুম সংক্রান্ত কমিশনে অভিযোগ দেয়ার সময় আরও সাতদিন বাড়ানো হয়েছে। আগামী ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারিতে এ সংক্রান্ত অভিযোগ দেয়া যাবে।
মঙ্গলবার কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত অভিযোগ জানানোর সময় বেঁধে দিয়েছিল কমিশন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে গুমের ঘটনার ভিকটিম নিজে বা পরিবারের কোনো সদস্য বা আত্মীয়-স্বজন বা গুমের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী যে কোনো ব্যক্তি সশরীরে কমিশনের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। ডাকযোগে বা ই-মেইলেও অভিযোগ জানানো যাবে।
অভিযোগ জানানোর ঠিকানা: গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারি, ৯৬, গুলশান অ্যাভিনিউ, ঢাকা-১২১২। ই-মেইল: [email protected]
অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৭ আগস্ট এই কমিশন গঠন করে। কমিশন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাদের শনাক্ত এবং কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিল তা নির্ধারণ করবে।
কমিশন ‘কমিশন অফ ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬’ অনুসারে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে তিন মাসের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
এই কমিশনের সভাপতি হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। কমিশনে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন।
আরও পড়ুন:বাগেরহাটের রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণ সীমার মধ্যে রয়েছে কি না, সরকার তা নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়নের কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সচিবালয়ে মঙ্গলবার ‘সুন্দরবন বাঘ জরিপ-২০২৪’-এর ফল ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সুন্দরবনের হুমকি বাস্তবতা থেকে সরে যায়নি। এটা নিয়ে ইউনেসকোর কাছে একটা স্ট্র্যাটেজিক এনভায়রনমেন্ট অ্যাসেসমেন্ট বিগত সরকার জমা দিয়েছে। সেখানে ইউনেসকো আপত্তি দিয়েছে। যে এলাকাটা চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখানে রক্ষিত এলাকাটা অনেকাংশেই বাদ দিয়েছে।
‘এখন সেই অ্যাসেসমেন্ট আবার নতুন করে ইউনেসকোর অবজারভেশনের আলোকে আমাদের দেখতে হচ্ছে, যাতে সুন্দরবনের পুরো এলাকা থেকে কোনো রক্ষিত জায়গা বাদ না দিই।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘হয়তো বিগত সরকার ঝুঁকি কম দেখাতে পুরো রক্ষিত এলাকাকে কম দেখিয়ে অন্য জায়গা বেশি দেখিয়েছে। আর জাতীয় পর্যায়ে যে কাজ করা হচ্ছে, সেটা হচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে দূষিত বায়ু বা ধোঁয়া বের হওয়ার ফলে বায়ুদূষণ হচ্ছে, সেটা আমরা নিরপেক্ষভাবে মনিটর করার চেষ্টা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবসময় তো আমরা মনিটর করে বলে দিই, ধলেশ্বরীর পানি পরিষ্কার, ট্যানারি নোংরা করেনি; রামপালের বাতাস খুব পরিষ্কার, সুন্দরবনের ক্ষতি হবে না, কিন্তু সেখানে যারা থাকে তারা কিছু অসুবিধার কথা বলছেন।
‘ফলে যে নিঃসরণটা হচ্ছে, সেটা আসলে আইনের সীমার মধ্যে আছে কি না, সেটা দেখতে হবে। এ জন্য আমরা একটা নিরপেক্ষ অ্যাসেসমেন্টের কাজ শুরু করেছি।’
রিজওয়ানা বলেন, ‘শুধু সুন্দরবন নয়, শালবন বাঁচানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ৪১ হাজার একর শালবন ছিল। সেটা কমতে কমতে এখন ২০ হাজার একরে চলে এসেছে।
‘আমার চেষ্টা থাকবে আমি কতটুকু বাড়াতে পারি। সেখানে আপনাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন:দুর্গাপূজার ছুটি এক দিন বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।
এ বিষয়ে মঙ্গলবারের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) ছুটি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে মঙ্গলবার মতবিনিময়ের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
মাহফুজ বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।’
বৌদ্ধ সম্প্রদায় যেন কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে করতে পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান মাহফুজ আলম।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম ও প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তারা মঙ্গলবার সকালে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শন করেন।
আরও পড়ুন:সুন্দরবনে ২০২৩-২৪ সালের জরিপে ১২৫টি বাঘ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মঙ্গলবার প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা জানান, ২০২৩-২৪ সালে সুন্দরবনের জাতীয় পশু বাঘ জরিপে ১২৫টি বাঘ পাওয়া গেছে। প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটারে বাঘের ঘনত্ব ২.৬৪।
তিনি জানান, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে ১১টি। বৃদ্ধির এ হার ৯.৬৫ শতাংশ। ২০১৫ সালের তুলনায় বৃদ্ধির হার ১৭.৯২ শতাংশ।
রিজওয়ানা জানান, ২০১৫ সালে সুন্দরবনে ১০৬টি বাঘ ছিল। আর ঘনত্ব ছিল ২.১৭। ২০১৮ সালে ১১৪টি বাঘ পাওয়া যায়। আর ঘনত্ব ছিল ২.৫৫। ২০১৮ সালে বাঘের সংখ্যা আটটি বেড়েছিল এবং বৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ৮ শতাংশ।
তিনি আরও জানান, ২০২৩-২৪ সালের জরিপে ২১টি বাঘ শাবকের ছবি পাওয়া গেছে, তবে শাবকদের সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কারণ ছোট বয়সে শাবকের মৃত্যুর হার অনেক বেশি। ২০১৫ ও ২০১৮ সালে মাত্র পাঁচটি শাবকের ছবি পাওয়া গিয়েছিল।
পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, জরিপের ছবি ও তথ্য বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। এ কাজে ভারত, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞদের মতামতও নেয়া হয়।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, জরিপটি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের মার্চে শেষ হয়। সুন্দরবনের ৬০৫টি গ্রিডে ১ হাজার ২১০টি ক্যামেরা ৩১৮ দিন রেখে দেয়া হয়, যার মধ্যে ৩৬৮টি গ্রিডে বাঘের ছবি পাওয়া যায়।
ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়, ১০ লক্ষাধিক ছবি ও ভিডিও থেকে সাত হাজার ২৯৭টি বাঘের ছবি পাওয়া যায়। এত বেশিসংখ্যক বাঘের ছবি এর আগে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর বাজার পরিস্থিতি ও সরবরাহ চেইন তদারক এবং পর্যালোচনার জন্য জেলা পর্যায়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট ‘বিশেষ টাস্কফোর্স’ গঠন করেছে সরকার।
সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মেহদি হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
বিশেষ টাস্কফোর্সে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালককে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বা উপযুক্ত প্রতিনিধি, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বা উপযুক্ত প্রতিনিধি, জেলা মৎস্যসম্পদ কর্মকর্তা বা উপযুক্ত প্রতিনিধি, কৃষি বিপণন কর্মকর্তা বা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা, ক্যাবের প্রতিনিধি এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি দু’জন।
টাস্কফোর্স প্রয়োজনে সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।
টাস্কফোর্সের কার্যপরিধি
টাস্কফোর্স নিয়মিত বিভিন্ন বাজার/বৃহৎ আড়ত/গোডাউন/কোল্ড স্টোরেজ ও সাপ্লাই চেইনের অন্যান্য স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন করবে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার বিষয়টি তদারক করবে।
টাস্কফোর্স উৎপাদন, পাইকারি ও ভোক্তা পর্যায়ের মধ্য দামের পার্থক্য ন্যূনতম থাকা নিশ্চিত করবে। সব স্টেক হোল্ডাররের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবে।
টাস্কফোর্স প্রতিদিনের মনিটরিং শেষে প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল হোয়াটসঅ্যাপ (০১৯১২৯৩০৫৯২), ই-মেইল [email protected] জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে (০১৭১১৩৭৩৮০২ নম্বরে (হোয়াটসঅ্যাপ) ও ই-মেইল [email protected] ঠিকানায় প্রেরণ করবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষণ অধিদপ্তর বিভিন্ন জেলা থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন সংকলন ও পর্যালোচনা করে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাবে।
আরও পড়ুন:সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে গঠিত হবে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যম-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সংবাদমাধ্যমের সংস্কার: কেন, কীভাবে?’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ডসহ বেতনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘সাংবাদিকদের সঙ্গে দাসসুলভ আচরণের সুযোগ নেই। আর সাংবাদিকরা কেন পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করতে পারেন না, সেসব বিষয় পর্যালোচনা করা হচ্ছে।’
দেশে গণমাধ্যম সক্ষমতা গড়ে ওঠেনি উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমে পেশাদারত্বের সংস্কৃতি অনুপস্থিত। অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ বিষয়ে কাজ করা হবে। এ ক্ষেত্রে সাংবাদিক সংগঠনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা বলেন, ‘এই অভ্যুত্থান গণমাধ্যমের জন্য বড় কেস স্টাডি। এই অভ্যুত্থানে গণমাধ্যমের কী ভূমিকা ছিল তা নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করতে হবে।
‘আন্দোলনের সময় মাঠ পর্যায়ে অনেক সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহ করলেও মিডিয়া হাউজ পলিসির কারণে সেসব সংবাদ প্রকাশ করেনি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া আন্দোলনের পক্ষে কোনো তথ্যই প্রচার করেনি। এই অভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিরোধও দেখা যায়নি।’
মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য সাংবাদিকদের পেশাদারত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে সাংবাদিকদের পেশাদারত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি তরুণদের এই পেশায় আগ্রহী করে তুলতে হবে।’
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা এ সময় রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে সংস্কারের বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন।
মুক্ত আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, প্রেস ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. সাইফুল আলম চৌধুরী প্রমুখ।
মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্কের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন সাংবাদিক জিমি আমির। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য