সম্প্রতি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া কথাসাহিত্যিক হোসেনউদ্দীন হোসেনের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখিত তার আত্মজীবনী গ্রন্থে ‘বিকৃত’ ইতিহাস তুলে ধরা নিয়ে ক্ষুব্ধ যশোরের মুক্তিযোদ্ধারা।
হোসেনউদ্দীন হোসেন তার যুদ্ধদিনের স্মৃতিকথা নিয়ে ‘রণক্ষেত্রে সারাবেলা’ নামে একটি বই লিখেছেন। ২০১২ সালে বইটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই চলছে এই ক্ষোভ।
বইটিতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হামিদকে রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। হোসেনউদ্দীন হোসেন নিজেকে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করলেও সপক্ষে প্রমাণ মেলেনি। অভিযোগ আছে রাজাকারের পক্ষ হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা নির্যাতনেরও।
বইয়ের ২৩৪ পৃষ্ঠায় হোসেনউদ্দীন হোসেন লিখেছেন, ‘কয়েকদিন পরে হানাদার বাহিনী কায়েমখোলা গিয়ে একটা হামলা চালালো।.... পথিমধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা গোপন সংবাদ পেয়ে হানাদার বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। শুরু হয় উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ। হামিদ নামক একজন রাজাকার এই যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করে। সিদ্দিক নামক একজন মুক্তিযোদ্ধা মারাত্মক জখম হন। হানাদার বাহিনীর হাতে তিনি ধরা পড়েন। কয়েকদিন পর যুদ্ধে নিহত রাজাকার হামিদের নামে একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়।’
কে এই শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ
ঝিকরগাছা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের বিবরণ অনুযায়ী, ১০ অক্টোবর ১৯৭১ কায়েমখোলায় (পরে গ্রামটি ভেঙে ছোট কুলি নামে আরেকটি গ্রাম হয়েছে) নিহত হন আব্দুল হামিদ। তিনি ছিলেন ঝিকরগাছা উপজেলা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) সেকেন্ড ইন কমান্ড ও ডেপুটি কমান্ডার।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওইদিন সকালে পাকিস্তানি বাহিনী আমচকা অভিযানে গিয়ে বিলের ব্রিজের উপরে আব্দুল হামিদকে পেয়ে যায়। সঙ্গে থাকা গ্রেনেড ছুড়লেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিস্ফোরিত না হলে ব্রিজ থেকে বিলে লাফ দেন তিনি। কিন্তু বিলে কচুরিপানায় সাঁতার কাটতে না পারায় হানাদাররা তাকে ধরে ফেলে। পরবর্তীতে পাকিস্তানি বাহিনী গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাকে হত্যা করে। আর তার কমান্ডে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বকর সিদ্দিককে হানাদাররা ধরে নিয়ে যায়।
বইয়ের এই অংশ নিয়ে ২০১৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা কমিটি হোসেনউদ্দীন হোসেনের কাছে জানতে চায় তিনি কেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হামিদকে রাজাকার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জবাবে হোসেনউদ্দীন হোসেন বলেন, এই হামিদ যুদ্ধে নিহত মুক্তিযোদ্ধা হামিদ নয়।
যুদ্ধের পর বর্তমান রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ আব্দুল হামিদের নামে একটি হলের নামকরণ করা হয়। যশোরের কুলি-কায়েমখোলা সড়কের নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদের নামে করা হয়েছে। বাঁকড়া-শিমুলিয়া সড়কেরও নামকরণ করা হয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হামিদের সঙ্গে। ঝিকরগাছা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে ১ নম্বরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদের নাম লেখা। এছাড়া ১৯৭২ সালে সরকারি সব তালিকায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার রয়েছে।
বইয়ের এই অংশ নিয়ে ২০১৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা কমিটি হোসেনউদ্দীন হোসেনের কাছে জানতে চায় তিনি কেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হামিদকে রাজাকার হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
জবাবে হোসেনউদ্দীন হোসেন বলেন, এই হামিদ যুদ্ধে নিহত মুক্তিযোদ্ধা হামিদ নয়।
অথচ যাচাই-বাছাই কমিটিকে আহত মুক্তিযোদ্ধা আবু বকর সিদ্দিক জানান, রাজাকার হামিদ বলে সেদিন কেউ ছিল না। ওইদিন যিনি নিহত হন তিনি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হামিদ।
এ ঘটনার পর কমিটি হোসেনউদ্দীন হোসেনের কাছে জানতে চায়, তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এমন কী প্রমাণ আছে এবং মুক্তাঞ্চলে কোন ক্যাম্পের অধীনে তিনি যুদ্ধ করেছেন। হোসেনউদ্দীন হোসেন ওই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ ঘটনার পর কমিটি হোসেনউদ্দীন হোসেনের কাছে জানতে চায়, তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এমন কী প্রমাণ আছে এবং মুক্তাঞ্চলে কোন ক্যাম্পের অধীনে তিনি যুদ্ধ করেছেন। হোসেনউদ্দীন হোসেন ওই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি (২০১৭ সালের সেই শুনানির ভিডিও নিউজবাংলার কাছে আছে)।
ইতিহাসের ভুল তথ্য দেয়ার অভিযোগ এনে হোসেনউদ্দীন হোসেনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের সুপারিশ করে বাছাই কমিটি।
পরে ঝিকরগাছার তৎকালীন ইউএনও আব্দুল জলিলসহ কমিটির সব সদস্যের স্বাক্ষর করা এক প্রতিবেদনে হোসেনউদ্দীন হোসেনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের প্রস্তাব করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে তার ভাতা বন্ধ করে দেয় সরকার।
২০২০ সালে আরাফাত হোসেন ইউএনও থাকার সময় হাইকোর্টের একটি রিটের বিপরীতে তাঁর কাছে তথ্য চাওয়া হলে সেখানেও হোসেনউদ্দীন হোসেনের এই ‘বিতর্কিত’ তথ্যগুলো তিনি নথিভুক্ত করে প্রতিবেদন পাঠান।
নিউজবাংলার পক্ষ থেকে শহীদ হামিদ সম্পর্কে জানতে চাইলে হোসেনউদ্দীন হোসেন বলেন, ‘আমি যে হামিদের কথা বলেছি তিনি সেই হামিদ নন। তবে হামিদ যুদ্ধে অংশ নেননি, এমনকি মুজিব বাহিনীরও কেউ যুদ্ধে অংশ নেয়নি।’
রাজাকার হামিদের গ্রাম কোনটি- এমন প্রশ্নেরও উত্তর দেননি তিনি।
রাজাকার কমান্ডারের প্রশংসা
মুক্তিবাহিনী ৬ ডিসেম্বর ঝিকরগাছা শত্রুমুক্ত করে। তখন মুক্তিযুদ্ধকালে লুটপাট, ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে ঝিকরগাছা থানা আনসার কমান্ডার সিদ্দিককে হত্যা করে।
হোসেনউদ্দীন হোসেন তার বইয়ের ১৬৩-১৬৫ পৃষ্ঠায় লিখেছেন- অন্য রাজাকাররা যখন আমাকে ডেকে নিয়ে যায় তখন আনসার কমান্ডার সিদ্দিক আমাকে চা-নাস্তা খেতে দেয় এবং পাকিস্তানি বাহিনীর অফিসার সম্মানের সঙ্গে কথা বলে আমাকে ছেড়ে দেয়।
তিন পৃষ্ঠা জুড়ে ওই সাক্ষাৎকারের বিবরণ লিখে এই রাজাকার কমান্ডার সিদ্দিকের প্রশংসা করেছেন হোসেনউদ্দীন হোসেন।
যুদ্ধে অংশগ্রহণে প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য পায়নি কমিটি
মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে গঠিত ঝিকরগাছা উপজেলা কমিটি হোসেনউদ্দীন হোসেনের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে জীবিত কোনো মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষ্য পায়নি। তার পক্ষে একমাত্র সাক্ষ্য দিতে আসেন ভাগ্নি জামাই মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের। কাদেরের সঙ্গে কোথায় যুদ্ধ করেছেন জানতে চাইলে উত্তর না দিয়েই কমিটির শুনানি থেকে বেরিয়ে যান তিনি।
যা বললেন হোসেনউদ্দীন হোসেন
এসব অভিযোগের বিষয়ে হোসেনউদ্দীন হোসেনের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী কথা হয় এই প্রতিবেদকের। পুরো কথোপকথনে সহযোদ্ধা হিসেবে আব্দুল কাদের ছাড়া আর কোনো জীবিত মুক্তিযোদ্ধার নাম বলতে পারেননি তিনি। আব্দুল কাদেরের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল নম্বর চাইলেও তিনি দিতে রাজি হননি।
একাত্তরে একটিমাত্র যুদ্ধের কথা বলেছেন তিনি, সেটি হচ্ছে ১০ জুলাইয়ের লাউজানি যুদ্ধ।
কিন্তু সীমান্তবর্তী হওয়া সত্ত্বেও ওই যুদ্ধের খবর জীবিত কোনো মুক্তিযোদ্ধা যেমন জানেন না, তেমনি কলকাতা ও বঁনগা থেকে প্রকাশিত কোনো পত্রিকায় এই যুদ্ধের বিবরণ নেই। এমনকি লাউজানির বয়োবৃদ্ধরাও এখানে ওই তারিখে যুদ্ধ হওয়ার কথা জানেন না।
ঝিকরগাছা থানার দুই মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রশিদ ও লিয়াকত আলী বলেন, ‘এরকম কোনো যুদ্ধ হয়নি। একাত্তরে আমরা এ অঞ্চলে সার্বক্ষণিক সক্রিয় থেকেছি। এমন যুদ্ধ হলে আমাদের জানার কথা।’
মুক্তিযোদ্ধা নির্যাতনের অভিযোগ
ঝিকরগাছার নাভারণ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা হাশেম অভিযোগ করেছেন, তাকে যখন রাজাকারেরা ধরে নিয়ে যায় তখন নির্যাতকদের মধ্যে হোসেনউদ্দীন হোসেনও ছিলেন।
যশোর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘রাজাকাররা আমাকে যখন নাভারন ক্যাম্পে নিয়ে যায় তখন হোসেন সেখানে ছিল।’
মুক্তিযোদ্ধা হাশেমের গ্রুপ কমান্ডার লিয়াকত আলী বলেন, “হোসেনউদ্দীন ১৯৬৫ সালে যখন পাক-ভারত যুদ্ধে মুজাহিদ বাহিনীতে যোগ দেন তখন থেকেই ঝিকরগাছার মানুষ তাকে চেনে। মুক্তিযোদ্ধা হাশেম আমাকে বলেছিল- আমাকে যখন ধরে নিয়ে যায় তখন সেখানে হোসেন ভাই ছিল।”
এ প্রসঙ্গে হোসেনউদ্দীন হোসেন বলেন, ‘রাজাকার হোসেন নামে আরেকজন ছিল, আমি না। আমি নাভারণে যাইনি।’
অথচ নিজের ‘রণক্ষেত্রে সারাবেলা’ বইয়ে তিনি একাধিকবার নাভারন যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
বিষয়টির উল্লেখ করে স্ববিরোধী বক্তব্য দেয়ার কারণ জানতে চাইলে হোসেনউদ্দীন রেগে যান। এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন- ‘আপনার সব সাক্ষ্যদাতাকে আমার সামনে আনেন।’
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে বলে পুনরায় জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। সরকারের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে।”
আজ সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কোর কমিটির সভা শেষে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাচনের সফল আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা, বিশেষ করে গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বডিওর্ন ক্যামেরা কেনা হবে এবং এ বিষয়ে সরকার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
তিনি আরও বলেন, বিগত তিনটি সাধারণ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের আগামী সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডসহ সাম্প্রতিক কিছু বড় অগ্নিকাণ্ডের পেছনে নাশকতা আছে কিনা- এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, এসব ঘটনা তদন্তের জন্য একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আগুন লাগার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি মিশনগুলোতে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করা হবে।
প্রবাসীদের জন্য পাসপোর্ট ফি কমানো এবং বিমান ও বিমানবন্দরে সর্বোত্তম সেবা প্রদানের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে বলেও তিনি জানান। সূত্র: বাসস
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার ইসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
তিনি বলেন, ‘আইনগতভাবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। স্থগিত দল হওয়া মানে তাদের যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত। তাই আগামী নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করতে পারবে না।’
তিনি আজ রোববার সকালে সিলেটে সাংবাদিকদের এই কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনার জেলা পুলিশ লাইনে নির্বাচনী দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আয়োজিত প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র প্রতীক সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতীক নির্ধারণ সংবিধান ও নির্বাচনী বিধিমালার আওতায় করা হয়। শাপলা প্রতীক সেই তালিকায় নেই।
তাই তা বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগও নেই।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে না হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
নির্বাচনকে সামনে রেখে সব বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ইসি আনোয়ারুল বলেন, ‘অতীতের মতো বিতর্কিত নির্বাচন আর হবে না। সবার সহযোগিতায় একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ কোনো কর্মকর্তা যাতে নির্বাচনী দায়িত্বে না থাকেন, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’ সূত্র: বাসস
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটওয়ারীকে।
অন্য সদস্যরা হলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব মুঃ রইচ উদ্দিন খান ও মোঃ তারেক হাসান এবং ঢাকা কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মুহাম্মদ কামরুল হাসান। কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের উপসচিব পঙ্কজ বড়ুয়া।
কমিটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকা কাস্টম হাউসে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার উদ্যোগ নিয়েছে। সূত্র: বাসস
গত ১৬ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড SRO No-404-Law/2025 এর মাধ্যমে বাংলা ভাষায় প্রণীত আয়কর আইন, ২০২৩ এর Authentic English Text সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে।
আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ বাতিল করে ২০২৩ সালে বাংলা আয়কর আইন, ২০২৩ প্রণয়ন করার পর হতেই বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ সরকারি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে আয়কর আইনের Authentic English Text প্রকাশের দাবি জানাচ্ছিলেন।
আয়কর আইনের Authentic English Text না থাকায় বিদেশী বিনিয়োগকারীগণ আইনের সঠিক ব্যাখ্যা ও অনুশীলনের বিষয়ে সংশয়ের মধ্যে থাকতেন এবং বিভিন্ন আইনি জটিলতার সম্মুখীন হতেন।
আয়কর আইনের Authentic English Text সরকারী গেজেটে প্রকাশ হবার ফলে দেশী-বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ আয়কর আইন সম্পর্কে স্বচ্ছ ব্যাখ্যা পাবেন বিধায় করদাতাগণের আস্থা অধিকতর বৃদ্ধি পাবে এবং আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে দ্ব্যর্থবোধকতা দূর করে স্বচ্ছতা ও সঠিকতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
কাস্টমস আইন, ২০২৩ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর Authentic English Text সরকারি গেজেটে প্রকাশের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অচিরেই এই দুটি আইনের Authentic English Text সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশের মাধ্যমে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগকারীগনের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটবে মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশা করছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আওতাধীন পদ্মা সেতুতে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ক্যাশলেস, টোল কালেক্টর ব্যতীত ননস্টপ ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ETC) সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের টোল পরিশোধ প্রক্রিয়া আরও দ্রুত, স্বচ্ছ ও ডিজিটাল ব্যবস্থার আওতায় এসেছে।
বর্তমানে বিকাশ, ট্রাস্ট ব্যাংকের TAP অ্যাপ এবং মিডল্যান্ড ব্যাংকের অ্যাপ এর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর টোল পরিশোধ করা যাচ্ছে। ব্যবহারকারীরা বিকাশ অ্যাপে গিয়ে “টোল” অপশনের অধীনে “মোটরযান রেজিস্ট্রেশন করুন” এ প্রবেশ করে গাড়ির নম্বর ও চেসিস নম্বরের শেষ ৪ (চার) ডিজিট প্রদান করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন। সফল রেজিস্ট্রেশনের পর ফিরতি এসএমএসে একটি Ekpass ID প্রেরণ করা হবে।
এই Ekpass ID ব্যবহার করে বিকাশ অ্যাপের “Pay Bill” অপশনের “D-Toll Top-Up” সেবার মাধ্যমে রিচার্জ করতে হবে। এরপর পদ্মা সেতুর মাওয়া টোল প্লাজার নিকটস্থ রেজিস্ট্রেশন বুথে বিআরটিএ অনুমোদিত RFID ট্যাগ প্রথমবারের মতো যাচাই করে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। একবার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে, যানবাহন কমপক্ষে ৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিতে ETC লেন ব্যবহার করে নির্বিঘ্নে পারাপার হতে পারবে।
১৮ অক্টোবর সেতু বিভাগের সচিব এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ আবদুর রউফ পদ্মা সেতুর ইটিসি বুথ পরিদর্শন করেন এবং ইটিসি সেবা ব্যবহার করে পদ্মা সেতু পারাপার করেন।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ট্রাস্ট ব্যাংকের TAP অ্যাপের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর ETC সিস্টেমের লাইভ পাইলটিং কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে এই সেবার পরিসর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে ETC সিস্টেমের মাধ্যমে মোট ১,৮১৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে এবং মোট ৩৪,৯১,৭০০ টাকা টোল আদায় সম্পন্ন হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান মহোদয়ের বিশেষ নির্দেশনা ও দিকনির্দেশনায় পদ্মা সেতুতে এই ETC সিস্টেম বাস্তবায়িত হয়েছে। এটি দেশের টোল ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা সময়, জ্বালানি ও মানবসম্পদের অপচয় হ্রাসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
ভবিষ্যতে আরও বিভিন্ন ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাপ এই সেবার আওতায় যুক্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ-এর a2i (এটুআই) কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং নতুন ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারদের সাথে সংযুক্তির কাজ অব্যাহত রয়েছে।
এই টোল কালেক্টর ব্যতীত নন স্টপ ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেমের মাধ্যমে পদ্মা সেতু ব্যবহারকারীরা দ্রুত, নিরাপদ ও স্বচ্ছভাবে টোল পরিশোধ করতে পারবেন—যা বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের যাত্রায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ এবং ২০২১ সালের মার্চ মাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি দমনে পরিচালিত হত্যাকাণ্ডে শাহাদাতবরণকারী শহিদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে চেক বিতরণ অনুষ্ঠান ২০২৫ আজ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রধান অতিথি হিসেবে এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ডা. আ ফ ম খালিদ হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞে শহিদ ৫৮ টি পরিবার এবং ২০২১ সালের মার্চ মাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি দমনে পরিচালিত হত্যাকাণ্ডে শহিদ ১৯টি পরিবারের সদস্যদের মাঝে পরিবার প্রতি ১০ লক্ষ টাকা করে, মোট ৭ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার চেক প্রদান করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, "শহীদদের রক্ত কখনো বৃথা যায় না। ঐতিহাসিক শাপলা চত্বর এবং মোদি বিরোধী আন্দোলনে শহীদদের আজকের এই স্বীকৃতি তারই প্রমাণ।" শহীদ পরিবারদেরকে স্বীকৃতি দিতে পেরে সরকার গর্বিত উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন ইতিহাস থেকে যেনো কেউ ঐতিহাসিক শাপলা চত্বরের শহীদদের নাম মুছতে না পারে, এজন্য শাপলা চত্বরেই খোদাই করে লেখা হবে শহীদদের নাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ডা. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন,"শাপলা চত্বর এবং মোদি বিরোধী আন্দোলনে শহিদদের আর্থিক সহায়তা প্রদান স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এক ঐতিহাসিক উদ্যোগ।" এই উদ্যোগের মাধ্যমে দুই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়ার সূচনা হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের হত্যাযজ্ঞ এবং ২০২১ সালের মোদি বিরোধী বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে শাহাদতবরণকারী শহিদ পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে আন্তরিক সাধুবাদ জানিয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মাওলানা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, "স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার এই মহতী উদ্যোগে সারা বাংলার আলেম সমাজ সম্মানিত হয়েছে। "
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব জনাব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, এবি পার্টির চেয়ারম্যান জনাব মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি জনাব নুরুল হক নুর, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা সাজিদুর রহমান এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক জনাব মোঃ শাহজাহান মিয়া।
‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষরকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঐক্য ও সংস্কারের পথে বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার।
তিনি আরও বলেন, এটি ২০২৬ সালের নির্বাচনের প্রস্তুতিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার ফেসবুক পোস্টে মিলার লেখেন, ‘জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত। এই দলিল মৌলিক সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গড়ে ওঠা ব্যাপক ঐকমত্যের প্রতিফলন।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদলের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ২০২৬ সালের নির্বাচনের পথে দেশটি ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এটি তারই প্রমাণ।
‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ মোট ২৫টি রাজনৈতিক দল যোগ দেয়।
অনুষ্ঠানে মিলারের উপস্থিতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও শাসনব্যবস্থা সংস্কারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগীতা অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত বহন করে।
সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা বাড়াতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতের পক্ষে তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
এ লক্ষ্যে ইইউ কারিগরি সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর প্রস্তাবও দিয়েছে। এসব উদ্যোগ গণতান্ত্রিক চর্চা ও টেকসই উন্নয়নের প্রতি ইইউর প্রতিশ্রুতির অংশ। সূত্র: বাসস
মন্তব্য