ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে গেস্টরুমে অসুস্থ এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে হল ছাত্রলীগের ছয় কর্মীর বিরুদ্ধে। এতে সেই শিক্ষার্থীর অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে ইসিজি করিয়ে আবার হলে নিয়ে আসা হয়েছে।
বুধবার রাত ১০টায় বিজয় একাত্তর হলের টিভি রুমে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।
ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার আখতারুল ইসলাম লিটন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি জানান, অসুস্থতার কারণে গেস্ট রুমে যেতে পারছিলেন না। পরে ডেকে নিয়ে গেস্ট রুমে লাইটের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকতে বাধ্য করা হয়। পরে আরও আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার চেয়ে লিটন বৃহস্পতিবার সকালে হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন লিটন। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করবেন বলে জানিয়েছেন প্রাধ্যক্ষ আবদুল বাছির।
লিখিত অভিযোগে লিটন যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন সেই ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের কামরুজ্জামান রাজু, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ওমর ফারুক শুভ, সমাজকল্যাণ বিভাগের ইয়ামিম ইসলাম, ইতিহাস বিভাগের হৃদয় আহমেদ কাজল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাইফুল ইসলাম, লোক প্রশাসন বিভাগের সাইফুল ইসলাম রোমান।
তারা বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ প্রত্যাশী আবু ইউনুস এবং রবিউল হাসান রানার ছোট ভাই বলে পরিচিত। রবিউল ও ইউনুস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী।
অভিযোগপত্রে লিটন লিখেছেন, ‘গতকাল রাতে আমি অসুস্থ থাকা স্বত্ত্বেও অভিযুক্তরা জোরপূর্বক গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে আমাকে লাইটের দিকে তাকিয়ে থাকতে বলে। এতে আমি চেতনা হারিয়ে ফেলি। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। এখন আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
এ বিষয়ে কথা বলতে বুধবার রাতেই লিটনকে ফোন দেয়া হলে অসুস্থ আছেন জানিয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান। সকালে ফোন দেয়া হলে রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাত নয়টায় আমাদের গেস্টরুম শুরু হয়। হলে অবস্থান করা স্বত্ত্বেও গেস্টরুমে উপস্থিত হয়নি এরকম কেউ আছে কি না দেখার জন্য বড় ভাইয়েরা আমাদের এক বন্ধুকে গণরুমে পাঠায়। অসুস্থ হওয়ায় লিটন সেখানে শুয়ে ছিল।
‘বড় ভাইদের নির্দেশ মোতাবেক তাকে গেস্টরুমে নিয়ে আসা হয়। ছুটি না নিয়ে কেন অনুপস্থিত ছিল সেটি জানতে চেয়ে উপস্থিত বড় ভাইয়েরা তাকে বকা দেয়। এসময় পাশে থাকা রাজু (কামরুজ্জামান রাজু) ভাই বলে উঠেন, এই কুত্তার বাচ্চা, তোকেতো আমি আজকেও কলা ভবনের সামনে দেখেছি। অসুস্থ হওয়ার ভান ধরছিস কেন?’
ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘বড় ভাইদের মতে গেস্টরুমে টুপিওয়ালা সুয়েটার পরা যাবে না, কিন্তু লিটন অসুস্থ হওয়ায় সেটি পরে আসায় তাকে আরও বাজে ভাষায় গালাগাল করা হয়। এরপর শাস্তি স্বরূপ রাজু ভাই লিটনকে এক ঘণ্টা লাইটের দিকে তাকিয়ে থাকতে বলে।
‘প্রায় পাঁচ মিনিট তাকিয়ে থাকার পর কাজল (হৃদয় আহমেদ কাজল) ভাই তাকে ছুটি দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দেয়৷ কিছুক্ষণ পর খবর আসলো লিটন অসুস্থ হয়ে গেছে। তার বুকে ব্যথা শুরু হয়েছে। এরপর গেস্টরুম থেকে আমাদের ছুটি দিয়ে বড় ভাইয়েরাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ছাত্রলীগ কর্মী ইয়ামিম বলেন, ‘তার খোঁজ নেয়ার জন্যই আমরা তাকে গেস্টরুমে ডেকে এনেছি। গেস্টরুমে টুপিওয়ালা হুডি পরার নিয়ম না থাকায় আমরা তাকে টুপি খুলতে বলেছি। কারণ, তার সাথে আমরা কথা বলছি, কিন্তু তাকে ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না।’
লাইটে তাকিয়ে থাকার নির্দেশের ব্যাপারে ইয়ামিম বলেন, ‘আমরা লাইটে তাকিয়ে থাকতে বলেছি, কিন্তু আমরাই তো আবার তাকে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
তবে এ ঘটনা অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের অপরকর্মী রাজু। তিনি বলেন, ‘আমাকে ফাঁসানোর জন্য এগুলো বলা হচ্ছে। ছোট ভাইদের অনেকেই বাড়ি থাকায় আমরা গেস্টরুমই করি না।’
এ ঘটনা শুনে বুধবার মধ্যরাতেই হলে ছুটে আসেন বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল বাছির। তিনি অসুস্থ শিক্ষার্থীকে দেখতে গণরুমে যান। এ সময় তিনি ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দকে তিরষ্কারও করেন।
বাছির বলেন, ‘এত রাতে বিজয় একাত্তর হলে আসতে হয়েছে, বিষয়টা খুবই দুঃখজনক। ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান থাকবে সব কিছুতে ইতিবাচক ভুমিকা রাখার।’
প্রাধ্যক্ষ জানান, এ বিষয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। সেই আলোকে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদেরকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হবে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগেন সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা খতিয়ে দেখব। সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কেউ যদি কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে অসম্মানজনক ব্যবহার করে সেক্ষেত্রে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’
আরও পড়ুন:তরুণ লেখকদের সংগঠন বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ২০২৪-২৫ কার্যবর্ষের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রাজীবকে সভাপতি এবং ফার্মেসি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল মাসুম হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের সভাপতি আমজাদ হোসেন হৃদয় ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান উদ্দিন এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলে জমা দিতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ‘সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হোক লেখনীর ধারায়’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি। তরুণ লেখকদের পরামর্শ দেয়া, পত্রিকায় লেখা প্রকাশে সহযোগিতা করাসহ লেখালেখি বিষয়ক সভা, সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করে থাকে বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম।
বর্তমানে দেশের সরকারি, বেসরকারি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ১৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সংগঠনের কার্যক্রম চলমান।
মাদারীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত কাওয়ালি অনুষ্ঠানে বহিরাগতদের হামলার অভিযোগ উঠেছে। ছাত্র আন্দোলনের তিনজন আহত হয়েছেন। পরে সেনাবাহিনী ও সদর থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পণ্ড হয়ে যায় অনুষ্ঠান।
রোববার বিকেলে মাদারীপুর শিল্পকলা একাডেমীতে দু’দফায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও আয়োজকরা জানান, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে কাওয়ালি সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রোববার বেলা ২টার দিকে শিল্পকলা একাডেমীতে অনুষ্ঠান শুরুও হয়। হঠাৎ জুবায়ের আহমেদ নাফিজ, মুন্না কাজীসহ বেশকিছু লোক অনুষ্ঠানস্থলে এসে আয়োজকদের ওপর হামলা করে। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী নেয়ামত উল্লাহ ও আশিকুল তামিম আশিক আহত হন। সেনাবাহিনী ও সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তবে অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়। বিষয়টি সমাধানের জন্যে দুপক্ষের লোকজন নিয়ে বসেও কোনো ফল আসেনি। পরে সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফেরার পথে ইখতিয়ার আহমাদ সাবিদ নামে আরেকজন আয়োজককে ইট দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয় প্রতিপক্ষ। পরে আহতদের উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আয়োজকদের একজন আব্দুর রহিম বলেন, ‘যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকে সম্পৃক্ত রয়েছে, তাদের নিয়েই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিন্তু কয়েকজন নিজেদের ছাত্র আন্দোলনের কর্মী দাবি করে অনুষ্ঠানে আমাদের ওপর হামলা করে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগের কর্মী রয়েছে। আমরা এদের বিচার দাবি করছি।’
তবে হামলাকারী জুবায়ের আহমেদ নাফিজ দাবি করেছেন, তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন। তাকে না জানিয়ে কাওয়ইল গানের আয়োজন করায় বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখা হয়েছে।
মাদারীপুর সদর থানার ওসি এইচএম সালাউদ্দিন বলেন, ‘অনুষ্ঠানস্থলে আসার আগেই হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে আসার পর আর কোনো ঘটনা ঘটেনি। আহতরা অভিযোগ দিলে বিষয়টি তদন্ত করে মামলা নেয়া হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রাম অনেক হয়েছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। এখন আমাদের পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে হবে এবং পড়ার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।’
রোববার বিকেলে মানিকগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতদের পরিবারের সদস্য ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কার হচ্ছে এবং রাষ্ট্র কাঠামো গঠন করতে হবে। প্রতিটি সেক্টরে মেধাবীর প্রয়োজন রয়েছে। কারণ দেশের বাইরের মেধাবী লোকজন এসে চাকরি করছে। আর আমাদের দেশের টাকা নিয়ে যাচ্ছে তারা। এতে করে আমাদের রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে এবং যোগত্যা দিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।’
সারজিস আলম আরো বলেন, একটা সফল অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশকে স্বৈরাচর মুক্ত করেছি। আমরা যখন রাষ্ট্রকে গঠন করতে যাব, তখন আমাদের মানসম্মত মেধা দরকার। আর সে মেধার জন্য পড়াশোনার বিকল্প নেই। দেশ গঠন করতে হলে প্রতিটি ক্ষেত্রে মেধা সম্পন্ন মানুষ লাগবে।
এই সমন্বয়ক বলেন, ‘এতো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করতে না পারলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। তবে দেশে আবার কোনো রাজনৈতিক দল স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড করতে চাইলে প্রয়োজনে আবারও আন্দোলনের মাধ্যমে তাদেরকে প্রতিহত করা হবে। তার জন্য আমরা সব সময় প্রস্তুত থাকব।’
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল্লা সালেহিন নয়ন, সামিয়া মাসুদ মুমু, মবাশ্বিরু জামান হাসান মৃধা, মেহেরাব হোসেন সিফাত, মুহাম্মদ হৃদয় হোসেন, আদিনা খান. খোন্দকার রায়হা, কাজী ইসমাইল হোসেন রুদ্র ও কাজী জুবায়ের উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাড়ে চার শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য কমন বাথরুম রয়েছে ২৮টি। এর ২৭টিই পুরনো এবং জীর্ণ দশা। কেবল একটি বাথরুমের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।
সম্পূর্ণ টাইলস করা এবং বেসিন ও কমোডসহ বেশ কিছু অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে বাথরুমটিতে। প্রায় দুই লাখ টাকা ব্যয়ে গত বছর নতুন করে এসব সুযোগ-সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। অত্যাধুনিক ফিটিংস দিয়ে সাজানো বাথরুমটি ব্যবহার করতেন শাখা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা। তাই স্বপ্রণোদিত হয়ে বাথরুমটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেন হলের সাবেক প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শায়খুল ইসলাম মামুন জিয়াদ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি গঠিত হয় ২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর। কমিটি গঠনের পর শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু এই হলের ২৩০ নম্বর কক্ষে এবং সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব ২২৮ নম্বর কক্ষে থাকা শুরু করেন। তারা দুজন হলের ২৩৪ নম্বর বাথরুমটি ব্যবহার করতেন।
নেতাদের তুষ্ট করতে বাথরুমটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেন তৎকালীন প্রাধ্যক্ষ। তিনি বাথরুমটি আধুনিকীকরণ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী বরাবর ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর একটি আবেদনপত্র পাঠান। এই আবেদনপত্রের একটি কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
আবেদনপত্রটিতে বলা হয়েছে, ‘...জরুরি ভিত্তিতে বাথরুমটি আধুনিকীকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি। উল্লেখ্য যে, উক্ত বাথরুমটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি ব্যবহার করে থাকেন।’
এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর বাথরুমটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘হল প্রশাসনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বাথরুমটি আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেই। এ কাজে আনুমানিক দুই লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘বিষয়টিকে মোটেও ভালোভাবে দেখার সুযোগ নেই। আমাদের শিক্ষার্থীরা হলগুলোতে মানবেতর জীবনযাপন করে। যেখানে অন্য বাথরুমগুলোর অবস্থা খারাপ সেই পরিস্থিতিতে দুজন বিশেষ ছাত্রনেতার জন্য বিপুল অর্থ খরচ করে বিশেষ সুযোগ দেয়া অন্যায় এবং বৈষম্য। কারণ এই টাকাগুলো কারও ব্যক্তিগত না; বরং শিক্ষার্থীদের ও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।’
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান মুন্না বলেন, ‘বিগত ১৬ বছরে হলগুলোর প্রাধ্যক্ষ হিসেবে তাদেরকেই নিয়োগ দেয়া হতো, যারা ছাত্রলীগের পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারবেন। ছাত্রলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও ছাত্রলীগের রাজত্ব বজায় রাখতে পারবেন।
‘বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ শায়খুল কখনোই ছাত্রদের জন্য কিছু করেননি। উল্টো বিভিন্ন সময় ছাত্রদেরকে বিপদে ফেলেছেন তিনি। এমন বাথরুম-সেবা ছাড়াও তিনি সবসময় ছাত্রলীগকে নানামুখী সেবা দিয়ে গেছেন। এমন একজন ব্যক্তির বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার কোনো অধিকার নেই।’
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাবেক প্রাধ্যক্ষ শাইখুল ইসলাম মামুন জিয়াদ বলেন, ‘ওরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এসেছিল। এখানে আমার কিছু করার ছিল না।’
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক শায়খুল হল প্রাধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে গণবিয়ের আয়োজন করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে পাত্রকে অবশ্যই এই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হতে হবে। আর উপস্থিত রাখতে হবে দুই পরিবারের অভিভাবকদের।
আগামী ২০ সেপ্টেম্বর হল প্রাঙ্গণে এই গণবিয়ের আয়োজন করা হবে। আয়োজকরা বলছেন, সমাজে বিয়ের বিষয়টিকে সহজ করতে তাদের এই আয়োজন। সেদিন যারা সব শর্ত পূরণ করে বিয়ে করতে চাইবেন তাদের সেদিনের খরচ বহন করবেন হলের অন্য শিক্ষার্থীরা।
এদিকে জহুরুল হক হলের এমন আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপগুলোতে ধুম পড়ে গেছে পাত্রপাত্রী খোঁজার। তবে এখানেও সতর্ক বার্তা দিয়েছেন আয়োজকরা।
আয়োজকদের অন্যতম একজন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আল আমিন সরকার ফেসবুক গ্রুপে লিখেছেন, ‘হঠাৎ করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়াটাকে নিরুৎসাহিত করছি আমরা। বিয়ে জীবনের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তাই আবেগের বশে কেউ প্ররোচিত হবেন না, আশা করছি। তবে কাউকে নিষেধও করছি না আমরা।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘এই গণবিবাহের মূল টার্গেট, ক্যাম্পাসে প্রেমিক যুগলদের সম্পর্কটাকে হালাল এবং সামাজিক স্বীকৃতি প্রদান করা।’
যোগাযোগ করা হলে আল আমিন সরকার বলেন, ‘এটা আমাদের প্রতীকী প্রতিবাদ, যেন সমাজে বিয়ে বিষয়টিকে আরেকটু সহজ করা হয়। ছেলের চাকরি থাকতেই হবে- এরকম বাধ্যবাধ্যকতা যেন বন্ধ করা হয়।’
এই আয়োজনের পরিকল্পনা কীভাবে এসেছে জানতে চাইলে আল আমিন সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আমাদের সবাই একটা ট্রমাটাইজ পরিস্থিতি অতিবাহিত করছি। তাই আগামী ২০ তারিখ আমরা একটা ভোজের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেই। এখানে আমাদের হলের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা উপস্থিত থাকবেন।
‘পরে মাথায় এলো আমাদের হলের অনেক ভাই প্রেম করেন। বিয়ে বিষয়টিকে অনেক জটিল করে রাখায় অনেকে বিয়ে করতে পারছেন না। তাই গণবিয়ের সিদ্ধান্তটা নেই। তবে পাত্রকে অবশ্যই আমাদের হলের হতে হবে। পাত্রী যে কেউ হতে পারেন। আর অবশ্যই এই বিয়ে হবে দুই পরিবারের অভিভাবকদের অনুমতি এবং উপস্থিতিতে।’
তিনি বলেন, বিষয়টি প্রথমে আমি আমাদের হলের গ্রুপে পোস্ট দেই। ভালো সাড়া পাওয়ার পর আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপে পোস্ট দিয়েছি।’
এখন পর্যন্ত কতজন যুগল আগ্রহ দেখিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অন্য হলের অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কিন্তু এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন না পাওয়ায় আমরা সেদিকে যাচ্ছি না। তবে আমাদের হলের দুই ভাইয়ের বিয়ে কনফার্ম। ওনারা পারিবারিকভাবে বিয়েটা করবেন আর ঘরোয়াভাবে এটির আয়োজন আমরা হলে করব।’
এদিকে জহুরুল হক হলের এমন আয়োজনের পর হাফসাতুল জান্নাত চৈতী নামের এক শিক্ষার্থী সব পাত্রীকে হাতে মেহেদী লাগিয়ে দেয়া এবং সাজিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘পুলিশ বাহিনীকে বলে দিতে চাই যে আপনারা হুঁশিয়ার হয়ে যান; যদি মনে করেন যে কিছু হবে না তাহলে তা হবে ভুল ধারণা। আর যারা দিবাস্বপ্ন দেখছেন তারা ভাইবেন না যে এক ফ্যাসিস্টকে দেশছাড়া করার পর আরেক ফ্যাসিস্টকে ক্ষমতায় বসাব।’
টাঙ্গাইল শহরের পৌর উদ্যানে বৃহস্পতিবার বিকেলে গণঅভ্যুত্থান প্রেরণায় শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে সারজিস আলম বলেন, ‘আপনারা রাজনীতি করবেন; তবে যোগ্য হয়ে আসবেন, যাতে করে কেউ আপনাদের কটু কথা না বলে। এমন লোক আসবেন যারা সঠিক কথা বলবেন। যারা সাধারণ মানুষের কথা বলবেন তারাই রাজনীতি করবেন।
‘একটি বিষয় মনে রাখবেন, কেউ কোনো ধরনের চাঁদাবাজি করলে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে। আজকের পর থেকে সব চাঁদাবাজি, সব সিন্ডিকেট বন্ধ করতে হবে।’
এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম আইনি, মোবাশ্বিরুজ্জামান হাসান, মিতু আক্তার, আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন, এলমা খন্দকার এ্যানী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক রাকিবুল হাসান।
তারা বলেন, ‘প্রশাসনে আওয়ামী লীগের যেসব প্রভুর বসে আছেন তারা হারুনের দিকে তাকান; তাহলেই বুঝতে পারবেন। সাবধান হয়ে যান।
ছাত্ররা যখন মাঠে নামে খালি হাতে ফেরে না। ১৯৫২ সালে তারা ফেরেনি। ১৯৯০ সালেও শাসক গদি থেকে নেমেছিলে। এবারও ছাত্র-জনতা মাঠে নামার পর ফ্যাসিস্ট হাসিনা নেমে গেছেন।’
তারা আরও বলেন, ‘আগামীতে যদি কেউ ফ্যাসিস্ট সরকার হতে চায় তাহলে ছাত্র-জনতা কঠিনভাবে তা মোকাবিলা করবে। আমরা মাঠ থেকে সরে যাইনি। আমরা ট্রাফিকের কাজ করেছি, ক্লিনের কাজ করেছি, বন্যায় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।’
আরও পড়ুন:বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) পূর্ণকালীন দুজন সদস্য নিয়োগ দিয়েছে সরকার। নিয়োগ পাওয়া দুজন হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-১ শাখার উপ-সচিব ড. মো. ফরহাদ হোসেনের সই করা প্রজ্ঞাপনে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আদেশ, ১৯৭৩ এর সংশোধিত আইন, ১৯৯৮-এর ৪ (১) (বি) ধারা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনকে কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
তাদের এই নিয়োগের মেয়াদ হবে চার বছর। তবে সরকার প্রয়োজন মনে করলে নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে দায়িত্ব থেকে তাদেরকে অব্যাহতি দিতে পারবে।
মন্তব্য