স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছর পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার (ইসি) নিয়োগ আইনসংক্রান্ত বিল পাস হয়েছে। এটিতে এখন রাষ্ট্রপতি সই করলেই আইনে রূপ নেবে। এই আইনের অধীনেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে।
জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার বেলা ১টা ৫৫ মিনিটে কণ্ঠ ভোটে পাস হয়েছে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল ২০২২।' এটি রাষ্ট্রপতির সইয়ের জন্য পাঠানো হবে।
দীর্ঘ আলোচনার পর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বিল সংসদে পাস করতে ভোটে দেন। এরপর কণ্ঠ ভোটে বিলটি পাস হয়।
এর আগে বিলটির তীব্র বিরোধিতা করেন জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা।
আইনটি প্রণয়নে তাড়াহুড়া না করে তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠানোর দাবি করেন সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান।
৫০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এই বিল সংসদে আনায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের প্রতি ধন্যবাদ জানান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু। তবে ইসি গঠনে সার্চ কমিটিতে কোনো রাজনীতিক না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
মুজিবুল হক বলেন, ‘আপনাদের জন্ম সেনানিবাসে হয়নি। আপনারা স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাহলে কেন বিচারক ও আমলানির্ভর হলেন।’
সার্চ কমিটিতে আইনপ্রণেতাদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান এই সাংসদ।
সংরক্ষিত আসনে বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন বাধ্যতামূলক। কিন্তু সব অংশীজনের মতামত ছাড়া তাড়াহুড়া করে এত জনগুরুত্বপূর্ণ একটি আইন পাস করা আইওয়াশের বেশি কিছু নয় বলে আমি মনে করি।’
বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো এবং সুশীল সমাজ, আইনবিদরা এই আইন প্রত্যাখ্যান করেছেন বলেও দাবি করেন রুমিন।
তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলগুলোর মতামত ছাড়া সরকারের ইচ্ছেতে এই কমিশন গঠিত হবে। এখনকার মতো সেটিও কোনো স্বাধীন কমিশন হবে না, হবে সরকারের নির্বাচনবিষয়ক মন্ত্রণালয়।’
সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘বিএনপি যুদ্ধ করছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। সুতরাং তারা যেকোনো ছুঁতোয় নির্বাচন বর্জন করার নামে, বানচাল করার নামে অস্বাভাবিক সরকার তৈরি করতে চায়। যদিও বিএনপি এখানে বলছে সংশোধনী আনতে। তবে তাদের নেতারা ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন আগামী নির্বাচন বর্জন করবেন।’
বিএনপির সমালোচনা করে জাসদ সভাপতি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনার সাংবিধানিক সরকারকে উৎখাত করে একটি অস্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠার হুমকি দিয়েছে বিএনপি। সুতরাং তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন ভালো করা বা মন্দ করা না। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচনের আগে ক্ষমতা নিশ্চিত করা। সেটা হলেই তারা শান্ত হবে।’
এরা আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার (ইসি) নিয়োগ বিলে দুটি সংশোধনী দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশন শুরু হলে বিলটি পরীক্ষার পর এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার।
এর আগে ২৩ জানুয়ারি সিইসি ও ইসি নিয়োগ বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ সময় বিএনপির সংসদ সদস্যরা বিলটির বিরোধিতাও করেছিলেন। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য বিলটি উত্থাপনের পক্ষে মত দিলে বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পাঠানো হয় স্থায়ী কমিটিতে।
আইনমন্ত্রী যে বিলটি উত্থাপন করেছিলেন তাতে বলা হয়েছে, সিইসি ও ইসি হতে গেলে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদে তার কমপক্ষে ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
এ ক্ষেত্রে বিলটি পরীক্ষা করে স্থায়ী কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদের পাশাপাশি ‘স্বায়ত্তশাসিত ও পেশা’ যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
আবার অযোগ্যতার অংশে মূল বিলে বলা হয়েছিল, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ড হলে সিইসি ও কমিশনার হওয়া যাবে না।
এ ক্ষেত্রে দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান উঠিয়ে কারাদণ্ড যুক্ত করার সুপারিশ করেছে স্থায়ী কমিটি। এর ফলে যেকোনো মেয়াদে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে আর সিইসি বা ইসি হওয়া যাবে না।
গত ১৭ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা প্রস্তাবিত আইনটির (বিল) খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করে। পরে এ নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
তিনি বলেছিলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২-এর খসড়া চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটা আর্টিকেল ১৮(১)-এর একটি বিধানে আছে, রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিতে পারেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এই আইন নিয়ে আসা হয়েছে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছিলেন, এখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশের জন্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে। এটা অন্যান্য আইনে যেভাবে আছে, ঠিক সেভাবেই অনুসন্ধান কমিটি করা হবে। সেটা রাষ্ট্রপতির অনুমতি নিয়ে। সেটার দায়িত্ব ও কার্যাবলি একজন যোগ্য প্রতিনিধির সুপারিশ করা।
কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে। এমন বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সরগরম দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন।
আইন করার উদ্দেশ্য তুলে ধরে সংসদে দেয়া বক্তব্যে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘প্রস্তাবিত বিলটি আইনে পরিণত হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে, গণতন্ত্র সুসংহত ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে এবং জনস্বার্থ সমুন্নত হবে আশা করা যায়।’
বিলটিতে বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ইতিপূর্বে গঠিত অনুসন্ধান কমিটির ও তৎকর্তৃক সম্পাদিত কার্যাবলি এবং উক্ত অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ বৈধ ছিল বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত বিষয়ে কোনো আদালতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।’
বিলে সার্চ কমিটির কাজ সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে। আইনে বেঁধে দেয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।
সার্চ কমিটি সিইসি ও কমিশনারদের প্রতি পদের জন্য দুজন করে ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে। কমিটি গঠনের ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে দেবে বলে বিলে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার পদে যোগ্যদের অনুসন্ধানের জন্য রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করতে পারবে।
সার্চ কমিটিতে থাকতে পারবেন যারা
বিলে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করবেন। এর সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক।
সদস্য হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কমিশনের চেয়ারম্যান ও রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক। তিনজন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিটির সভার কোরাম গঠন হবে। কমিটির কাজে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
কারা হতে পারবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কাকে নিয়োগ দেয়া হবে তাও নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে বিলে। এতে বলা হয়েছে, এই দুই পদে নিয়োগ পাওয়াদের অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, ন্যূনতম ৫০ বছর বয়স হতে হবে এবং কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদে তার অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
যোগ্যতার পাশাপাশি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের অযোগ্যতাও নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। বিলে মোট ছয়টি অযোগ্যতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার সহনীয় রাখতে অসাধু ব্যবসায়ীদের ফৌজদারি আইনের আওতায় শাস্তি চায় কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বালাদেশ-ক্যাব। বেসরকারি এই সংগঠন মনে করে, ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে ভোক্তা অধিদপ্তর যথেষ্ট নয়; এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘ভোক্তা অধিকার বিভাগ’ জরুরি।
সোমবার ‘অতিমুনাফা ও প্রতারণার শিকার ভোক্তারা: আইন মানার তোয়াক্কাই নেই’ শীর্ষক এক অনলাইন সেমিনারে বক্তারা এমন বক্তব্য তুলে ধরেন।
ওয়েবিনারে ক্যাবের নেতারা বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার সহনীয় রাখতে উচ্চ পর্যায়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হলেও বেপরোয়া কিছু ব্যবসায়ীর কারণে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। চাল-ডাল থেকে শুরু করে ভোগপণ্যের বাজারে কিছু ব্যবসায়ী নিম্ন মানের পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। তাদের অপতৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় এসব ব্যবসায়ীকে ঠেকাতে কেবল জরিমানা নয়, আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।’
ওয়েবিনারটি পরিচালনা করেন ক্যাবের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন।
মূল প্রবন্ধে নাজের হোসাইন বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা ঠেকাতে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশনের বাজারে অভিযান পরিচালনা করছে। অপরাধের জন্য সতর্ক করার পাশাপাশি জরিমানাও আদায় করা হচ্ছে। তারপরও অপতৎপরতা বন্ধ হচ্ছে না।’
সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রমের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীদের ভিত এতটাই শক্তিশালী যে সরকারি প্রশাসন যন্ত্র মনে হয় তাদের কাছে অসহায়। এরা টাকার জোরে সরকারি আমলা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিভিন্ন মিডিয়াকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেন।’
ব্যবসায় অসাধু প্রক্রিয়ায় কোটিপতির সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আগে একই কায়দায় গুঁড়োদুধে ময়দা মিশ্রিত করার হোতাসহ চিনি, সয়াবিন, চাল কেলেঙ্কারির হোতাদের কোনো শাস্তি হয়নি। তারা বরাবরই পর্দার আড়ালে থেকে রেহাই পেয়ে যায়।’
‘ব্যবসায় এমন প্রতারণা ফৌজদারি অপরাধও বটে। তবে আইন দিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সব সময় সম্ভব না-ও হতে পারে। এজন্য প্রয়োজন অতিমুনাফালোভী, প্রতারক, মজুতকারী ও অসাধু ব্যবসায়ীদের সামাজিকভাবে বয়কট করা। তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্যে জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত হতে পারে।’
ক্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এম সামসুল আলম বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ছাড়া আর কোথাও ভোক্তাদের যাওয়ার জায়গা নেই। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের জন্য কেবল ভোক্তা অধিদপ্তরই যথেষ্ট নয়, বিভাগ চাই।
‘দেশে এমন কোনো খাত নেই যেখানে অসাধু ব্যবসায়ীরা মাথাচাড়া দেয়নি। আমরা ভোক্তারা অনেকটা বন্দি হয়ে গেছি। এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি দিতে দেশের আইন, সরকারি প্রতিষ্ঠান কেউ-ই সফল নয়।’
‘দেশে অসাধু ব্যবসায়ীর সংখ্যা কম। কিন্তু সৎ ব্যবসায়ীরা এই অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারছেন না। তারা অসাধু ব্যবসায়ীদের দ্বারা নির্যাতিত, নিপীড়িত হচ্ছেন।’
ভোক্তাদের প্রতি অনুরোধ রেখে তিনি বলেন, ‘আপনারা জেলায় জেলায় অন্তত একটা করে ঘটনা চিহ্নিত করুন। যাতে এসব ঘটনাকে ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা আইনের আওতায় ফৌজদারি আইনে মামলা করা যায়। ভোক্তা অধিদপ্তরের হয়তো এখনও মামলা করার অধিকার নেই। তবে আইন করা হচ্ছে। ক্যাক একমাত্র সংগঠন, যাকে মামলা করার অধিকার দেয়া হয়েছে। ভোক্তা স্বার্থবিরোধী এসব ঘটনায় আমরা প্রয়োজনে প্রমাণসহ আদালতে যাব।
আরও পড়ুন:বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চাপ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) উদ্যোগ নিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ‘বিলাস ও অনভিপ্রেত’ পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী বাজেট ঘোষণার আগেই এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
আগামীকাল মঙ্গলবার অথবা তার পরের দিন এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে তা কার্যকর করবে এনবিআর। রাজস্ব বোর্ডের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একটি সূত্র নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করছে।
পণ্যের তালিকা এবং কত হারে শুল্ক বসানো হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে যেসব পণ্য ব্যবহার না করলে ভোক্তাদের আপাতত সমস্যা হবে না কিংবা দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, তালিকায় সেইসব পণ্য যুক্ত করা হচ্ছে।
এনবিআরের একটি সূত্র বলেছে, পণ্যের সংখ্য দুই শতাধিক হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: আমদানি করা বিস্কুট, চকলেট, বিভিন্ন জাতের ফল, জুস ও বিদেশি তৈরি পোশাক।
এসব পণ্যের ওপর তিন ধরনের শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। আমদানি শুল্ক বা কাস্টম ডিউটি, সম্পূরক শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা আরডি।
বর্তমানে যে পরিমাণ শুল্কহার আছে তার সঙ্গে বিভিন্ন হারে বাড়তি শুল্ক ধার্য করা হবে।
মূলত ওইসব পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। বাড়তি শুল্কহার কার্যকর হলে দেশীয় বাজারে পণ্যগুলোর দাম বেড়ে যাবে।
এনবিআর বলেছে, সাময়িকভাবে এ শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। যেদিন থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে সেদিন থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে। তবে সরকার ইচ্ছা করলে বাস্তবতার আলোকে মেয়াদ আরও বাড়াতে পারে।
আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্য, কাঁচামাল ও তেলের দামসহ সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। সঙ্গে বেড়েছে জাহাজ ভাড়াও। এতে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। এর চাপ পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর।
আমদানি যে হারে বেড়েছে, রপ্তানি সে হারে বাড়েনি। আবার প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সও কমে গেছে। ফলে প্রতি মাসে বিশাল ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এ কারণে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে জোগান দিতে হচ্ছে আমদানির খরচ। সোমবার পর্যন্ত রিজার্ভের পরিমাণ ৪২ বিলিয়ন ডলার।
এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বিলাস ও অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১০ মে এক পরিপত্র জারি করে ওইসব পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে এলসি মার্জিন বা ঋণপত্র খোলার জন্য নগদ টাকা জমার পরিমাণ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর এবার এনবিআর বিভিন্ন হারে বাড়তি শুল্ক ধার্য করতে যাচ্ছে।
রাজস্ব বোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে এনবিআরের কর্মকর্তাদের জরুরি বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। কোন কোন পণ্যের শুল্ক বাড়ানো হবে, তা যাচাই-বাছাই করে দেখছে এনবিআর।
রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে সরকার দুটি ব্যবস্থা নিতে পারে। আমদানিকে নিরৎসাহিত করতে এলসির বিপরীতে নগদ টাকা জমার পরিমাণ বাড়ানো এবং সাময়িক সময়ের জন্য বাড়তি শুল্ক আরোপ করা। সরকার এখন সেই পথেই হাঁটছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকার চাইলে কাস্টম আইনের ১৫ ধারা অথবা আমদানি নীতির ১৬ ধারা প্রয়োগ করে পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করতে পারে।
এনবিআরের সাবেক সদস্য ফরিদউদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, কাস্টমস আইনে উল্লেখ থাকলেও সাধারণত এনবিআর পণ্য আমদানি বন্ধ বা নিষিদ্ধ করে না। শুল্ক আরোপ করাই এনবিআরের কাজ। পণ্য আমদানি নিষিদ্ধের বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
কাস্টমস আইনে বিলাস পণ্যের কোনো সংজ্ঞা নেই। তবে যেসব পণ্যে উচ্চহারে শুল্ক আরোপ রয়েছে, সাধারণত সেইসব পণ্য ‘বিলাস ও অনভিপ্রেত’ বলে বিবেচনা করা হয়।
বর্তমানে আমদানি করা প্রস্তুতকৃত প্রায় সব পণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা আরডি আরোপ আছে। এর সর্বোচ্চ হার ৩৫ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন হার ৩ শতাংশ। অপরদিকে আমদানি করা ১ হাজার ৮৭৮টি পণ্যের ওপর বিভিন্ন হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ রয়েছে।
আরও পড়ুন:পায়রা বন্দরের জন্য উচ্চক্ষমতার দুটি টাগবোট নির্মাণ করছে খুলনা শিপইয়ার্ড।
৭০ টন বোলার্ড পুলবিশিষ্ট দুটি টাগবোট তৈরি করা হবে। নির্মাণ শেষ হলে এ দুটি হবে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বোলার্ড পুল ক্ষমতার টাগবোট।
সোমবার দুপুরে খুলনা শিপইয়ার্ডে দুটি টাগবোটের কিল লেয়িং উদ্বোধন করেন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল।
তিনি বলেন, পায়রা বন্দরের মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। অচিরেই এটি দেশের আমদানি-রপ্তানির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে যাচ্ছে। এই বন্দরকে কেন্দ্র করে প্রচুর দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসছে।
পায়রা বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, জাহাজ নির্মাণে খুলনা শিপইয়ার্ডের ঐতিহ্য রয়েছে। ভবিষ্যতেও পায়রা বন্দর ও খুলনা শিপইয়ার্ড পারস্পরিক উন্নয়নে এক সঙ্গে কাজ করবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর এম সামছুল আজিজ। উপস্থিত ছিলেন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) কমডোর এম মামুনুর রশীদসহ শিপইয়ার্ডের কর্মকর্তারা।
খুলনা শিপইয়ার্ড সূত্রে জানা যায়, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির টাগ বোট দুটিতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন হবে। এটা আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় যাতায়াতে সক্ষম।
বোট দুটি বন্দরের সক্ষমতা বহুগুণ বাড়াবে। এ ছাড়া পায়রা বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বন্দরে পরিণত করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
চলতি মৌসুমের হজ ফ্লাইট ৩১ মে উদ্বোধন হলেও নিয়মিত ফ্লাইট শুরু হচ্ছে আরও দেরিতে। তাই অপেক্ষা করতে হবে হজ যাত্রীদের। ৫ জুন থেকে নিয়মিত হজ ফ্লাইট শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।
অবশ্য সূচি চূড়ান্ত না হলেও আগামীকাল মঙ্গলবার তা চূড়ান্ত হবে বলে জানান তিনি।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজকে (সোমবার) সৌদি সরকারের কর্মকর্তারা আমাদের এখানে এসেছিলেন। আমাদের একটি মিটিং হয়েছে। আমরাও একটি মিটিং করব, এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
‘৫ জুন থেকে ফ্লাইট হবেই। আমাদের একটি বিষয় ঠিক করা আছে যে, ৩১ মে প্রথম ফ্লাইট করব; আর ৫ জুন থেকে বাকি ফ্লাইটগুলো শুরু করব।’
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও বলছেন, চূড়ান্ত ফ্লাইট শুরু হতে পারে ৫ জুন থেকে।
প্রায় দুই বছর পর এবার বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে হজ পালনের সুযোগ পাচ্ছেন মুসল্লিরা। এবার হজ মৌসুমে সৌদি আরবে হজযাত্রীদের নিয়ে হাজির হওয়া প্রথম ফ্লাইট হতে চায় বাংলাদেশ। সে লক্ষ্য নিয়ে এগোনোর কথা জানায় ধর্ম মন্ত্রণালয়।
২০১৫ সালে মৌসুমের প্রথম হজ ফ্লাইট পরিচালনা করে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।
এরই মধ্যে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রস্তাবিত হজ সূচিতে অনুমোদনও দিয়েছে সৌদি সরকার।
উদ্বোধনী ফ্লাইটের পর আরও কিছু সময় চূড়ান্ত ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে এমন ধারণা দিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষও।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ৩১ মের উদ্বোধনী ফ্লাইটের জন্য প্রস্তুত আছি। তারপরও যেভাবে ধর্ম মন্ত্রণালয় আমাদের বলেছে যে, গ্যাপ দিয়ে মনে হয় বাকিগুলো করতে পারবে, আমরা সেভাবেই ঠিক রেখেছি। আমাদের দিক থেকে প্রস্তুত আছি।
‘আমরা যেভাবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছে ফ্লাইট চেয়েছি বা বলেছি, সেভাবেই অনুমোদন পাওয়া গেছে। আমরা অনুমোদিত সিডিউল পেয়েছি, আমরা আমাদের দিক থেকে প্রস্তুত আছি।’
স্বাভাবিক সময়ে প্রতি বছর সারা বিশ্বের ২০ থেকে ২৫ লাখ মুসল্লি পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পেয়ে থাকেন। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর সৌদি আরবের বাইরের কেউ হজ করার সুযোগ পাননি। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সৌদি সরকার এবার সারা বিশ্বের ১০ লাখ মানুষকে হজ পালনের অনুমতি দিচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে এ বছর সাড়ে ৫৭ হাজার মুসল্লি হজব্রত পালনে সৌদি আরবে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ৪ হাজার মুসল্লি। বাকিরা যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়।
এবার সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের জন্য দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ প্যাকেজটি হলো ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। সর্বনিম্নটি ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ টাকার।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে জনপ্রতি ন্যূনতম খরচ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৭৪৪ টাকা নির্ধারণ করেছে হজ এজেন্সিস অফ বাংলাদেশ (হাব)।
এবার হজ হতে পারে ৮ জুলাই (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে)। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ৫৭ হাজার হজযাত্রীর অর্ধেক বহন করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। বাকি অর্ধেক করবে সৌদি রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস ও ফ্লাই নাস।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান এ বছর ৭৫টি ডেডিকেটেড ফ্লাইটের মাধ্যমে ৩১ হাজার যাত্রী বহন করবে। যাত্রী পরিবহনে বিগত বছরগুলোর মতোই বহরে থাকা বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হবে।
আরও পড়ুন:‘তামাক ব্যবহারে শুধু স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, অনেক ধরনের সামাজিক সম্ভাবনারও ক্ষতি হচ্ছে। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গঠনের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে তামাকের সহজলভ্যতা কমাতে হবে। এজন্য কার্যকর করারোপের বিকল্প নেই। তাহলে তামাক পণ্যের দাম বাড়বে, সহজলভ্যতা কমবে, ব্যবহারও কমবে।’
সোমবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমুন্নয়ের আয়োজনে ‘তামাক পণ্যে কার্যকর করারোপ বিষয়ক প্রাক-বাজেট আলোচনায়’ বক্তারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এই অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, বদরুদ্দোজা মো. ফরহাদ হোসেন, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, শামীমা আক্তার খানম ও হাবিবা রহমান খান বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন বারডেমের দন্ত্য চিকিৎসা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী ও সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
আলোচনা অনুষ্ঠানে স্তর ভেদে ১০ শলাকার এক প্যাকেট সিগারেটের সর্বনিম্ন দাম ৩৯ থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা, ৬৩ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা, ১০২ থেকে বাড়িয়ে ১২০ টাকা এবং সর্বোচ্চ স্তরে ১৩৫ থেকে বাড়িয়ে ১৫০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়। একইসঙ্গে এই মূল্যের ওপর যথাক্রমে ৩২.৫০ টাকা, ৪৮.৭৫ টাকা, ৭৮ টাকা এবং ৯৭.৫০ টাকা শুল্ক নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। বিড়ি ও ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের দামও বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, তামাক পণ্যের দাম বাড়লে বর্তমানে তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ১৩ লাখ এই পণ্য ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হবে। পাশাপাশি ৯ লাখ তরুণকে তামাক ব্যবহার থেকে বিরত রাখা যাবে। প্রায় সাড়ে ৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ও সাড়ে ৪ লাখ তরুণের অকাল মৃত্যু রোধ করা যাবে। উপরন্তু বছরে সরকার ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব পাবে।
আয়োজক সংস্থা উন্নয়ন সমুন্নয়ের সভাপতি ড. আতিউর রহমান ভিডিও বক্তব্যে বলেন, ‘তামাক পণ্য ব্যবহারে স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে। অর্থের অপচয় হচ্ছে। এজন্য তামাক পণ্যে আরো বেশি কর আরোপ করতে হবে। তাহলে একদিকে রাজস্ব বাড়বে, অন্যদিকে স্বাস্থ্যের ক্ষতি এড়ানো যাবে।’
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘কর হার বাড়ায় সিগারেটের ব্যবহার আগের চেয়ে কমেছে। কর আরও বাড়ানোর মাধ্যমে ব্যবহার আরও কমিয়ে আনা যাবে। সরকারের আয়ও বাড়বে।’
অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, ‘মাদকাসক্তদের ৯৮ শতাংশের নেশার জগতে প্রবেশ ঘটে তামাক দিয়ে। তবে আমরা সিগারেটের দিকে যেভাবে নজর দিচ্ছি সেভাবে জর্দা, খৈনি ও গুলের দিকে নজর দেয়া হচ্ছে না।
‘গবেষণায় দেখা গেছে, পরোক্ষ ধূমপানের কারণে মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হচ্ছে। তাই পরিবারের সদস্যদের তামাকের আসক্তি কমাতে ভূমিকা রাখতে হবে। ইদানীং ই-সিগারেট ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটিও সমান ক্ষতিকর। এটিকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সব মিলিয়ে কর বৃদ্ধিই তামাক নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।’
বদরুদ্দোজা মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, তামাক কোম্পানি থেকে যে কর পাওয়া যায় তার চেয়ে বেশি স্বাস্থ্য খাতে সরকারের ক্ষতি হয়। তাই তামাককে আরও করের আওতায় আনতে হবে। লাভ বেশি হওয়ায় চাষীরা তামাকের দিকে ঝুঁকছে। তাদের বিকল্প লাভজনক ফসল দিতে হবে।’
শামীমা আক্তার খানম বলেন, ‘গুলশান ও ধানমণ্ডির প্রতিটি রেস্টুরেন্টে স্মোকিং জোন করায় তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এসব জোনে প্রবেশ করলে কোনো মানুষ দেখা যায় না। শুধু ধোঁয়া আর ধোঁয়া। এতে তরুণ-যুবকরা তামাকে আসক্ত হচ্ছে।’
মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘তামাকের কর বৃদ্ধির পাশাপাশি এর উৎপাদন বন্ধের দিকেও নজর দিতে হবে। এই খাতে নতুন বিনিয়োগের পথও বন্ধ করতে হবে। কারণ অনেক কোম্পানিই এ খাতে বিনিয়োগের সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে।’
আলোচক অধ্যাপক ড. তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘তামাক ব্যবহারে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম রয়েছে। ১৫ শতাংশের বেশি মানুষ তামাক পণ্য ব্যবহার করছে।’
আরও পড়ুন:প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শর্ত রইল না আর।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে রিজার্ভে টান পড়ার মধ্যে রেমিট্যান্স পাঠানোর পথ সহজ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এখন থেকে পাঁচ হাজার ডলার বা ৫ লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্স এলে কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই পাওয়া যাবে প্রণোদনা।
সোমবার সিদ্ধান্তটি জারির দিন থেকেই তা কার্যকর করা হয়েছে।
বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্সের বিপরীতে প্রণোদনার প্রক্রিয়া সহজ করতে এ নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর আগে পাঁচ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে গেলে রেমিটারকে (অর্থপ্রেরক) বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসের কাছে বিস্তারিত কাগজপত্র জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল।
সেটি তুলে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘পাঁচ হাজার অথবা পাঁচ লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্স পাঠালে প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা পাওয়ার জন্য প্রবাসীর কাগজপত্র বিদেশের এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এখন থেকে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৈধ উপায়ে দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণের বিপরীতে রেমিট্যান্স প্রণোদনা/নগদ সহায়তা প্রদানে রেমিটারের কোনো কাগজপত্র ব্যতীত বিদ্যমান হারে (২.৫০ শতাংশ) রেমিট্যান্স প্রণোদনা/নগদ সহায়তা প্রযোজ্য হবে।’
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিপরীতে কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই নগদ সহায়তা পাওয়া যাবে।
প্রতি ডলারের বিপরীতে নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত পাওয়া যাবে আরও আড়াই টাকা। ডলারের সবশেষ বিনিময় হার ঠিক হয়েছে ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা। এর সঙ্গে আড়াই টাকা যোগ হয়ে পাওয়া যাবে ৯০ টাকা ৪০ পয়সা।
পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।
জ্বালানি ও পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ডলারের মজুত এখন দেশের প্রধান দুশ্চিন্তার একটি হয়ে গেছে।
গত বছরের ২৪ আগস্ট এই রিজার্ভ অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। তখন ওই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যেত। তখন অবশ্য প্রতি মাসে ৪ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হতো।
তবে আমদানি ব্যয় বাড়ায় গত ৯ মে আকুর (এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন) রেকর্ড ২২৪ কোটি (২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন) ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। এরপর সপ্তাহ খানেক রিজার্ভ ৪২ বিলিয়নন ডলারের নিচে অবস্থান করে।
রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় গত বুধবার রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। গত কদিন তা আরও বেড়ে রোববার দিন শেষে ৪২ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।
জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ- প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য আমদানি হয়েছে দেশে। এ হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের ক্রিকেটে আরও উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) চেয়ারম্যান গ্রেগ বারক্লে।
ঢাকা সফররত আইসিসি চেয়ারম্যান গণভবনে সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে এই আশ্বাস দেন।
বারক্লে বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে আইসিসি সব ধরনের সহায়তা দেবে।’
আইসিসির সর্বাত্মক সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশ ক্রিকেট আরও এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
আইসিসি চেয়ারম্যানকে শেখ হাসিনা বলেন, তার পুরো পরিবারই ক্রীড়ামোদী। কারণ, তার দাদা, বাবা ও ভাইয়েরা খেলোয়াড় এবং ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন।
গত সাত বছরে বাংলাদেশ পুরুষ ও নারী ক্রিকেট দলের অসাধারণ নৈপুণ্যের প্রশংসা করেন আইসিসি চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের গত সাত বছরের পারফরম্যান্স তাকে বাংলাদেশ সফরে অনুপ্রাণিত করেছে, যাতে তিনি সরাসরি বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করতে পারেন।’
প্রথমবারের মতো আইসিসি নারী বিশ্বকাপ ক্রিকেটে পাকিস্তানকে ৯ রানে পরাজিত করে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ জয়ের কথা উল্লেখ করেন আইসিসি চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ‘আইসিসি নারী ক্রিকেটের উন্নয়নেও প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দিবে।’
বাংলাদেশকে কোচিং, আম্পায়ারিং এবং উইকেট বা পিচের উন্নয়নে সহায়তা করারও অঙ্গীকার করেন বারক্লে।
এসময় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
আইসিসি চেয়ারম্যান ও নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের সাবেক এক পরিচালক দুই দিনের সফরে রোববার ঢাকায় পৌঁছেছেন।
২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর আইসিসির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বারক্লে। ঢাকায় এসে পূর্বাচলে শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য