দেশে করোনাভাইরাসের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি আরও দুই সপ্তাহ চলবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এই সময়ে সংক্রমণের বিবেচনায় অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে। এরপর ধীরে ধীরে নিচে নেমে আসবে সংক্রমণের হার।
দেশে দুই বছর ধরে জিন পরিবর্তন করে একাধিক নামে ও রূপে এসেছে করোনাভাইরাস। এবার ডেল্টা ও ওমিক্রনের একযোগে সংক্রমণের ফলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সংক্রমণরোধে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
তবে মাঠপর্যায়ে প্রশাসনের তেমন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। সরকারের নেয়া উদ্যোগ তেমন কাজে আসছে না। এতে সার্বিকভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। এরই মধ্যে দিনে করোনা শনাক্ত ১৬ হাজার ছাড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের সংবাদ দেয় অধিদপ্তর। ওই বছরের শেষ দিকে সংক্রমণের প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসে। গত বছরের এপ্রিল থেকে জুন-জুলাই পর্যন্ত করোনার ডেল্টা ধরন ব্যাপক আকার ধারণ করে। এর প্রভাবে দ্বিতীয় ঢেউ আসে।
বছরের শেষ কয়েক মাস পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল ছিল। কিন্তু এ বছরের শুরু থেকে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে করোনার বিস্তার আবারও বাড়তে শুরু করে। এতে করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে।
এখন ঘরে-বাইরে অবস্থানকারী সব ধরনের মানুষের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হচ্ছে। এর পরও হাট-বাজার, মেলা, বাস-ট্রেন কোনোখানেই কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সর্বশেষ বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৯ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫ হাজার ৫২৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ সময় আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৭ লাখ ৩১ হাজার ৫২৪ জনে দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে ২৮ হাজার ২৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের তেমন প্রস্তুতি নেই বললেই চলে। এই মুহূর্তে শুধু টিকা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আর হাসপাতাল প্রস্তুতির কথা বলছে। আসলে সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
যদিও এই স্বাস্থ্যবিধি মানানোর দায়িত্ব সরকারের একার নয়, এর সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করা জরুরি। কিন্তু সরকার নির্দেশনা দিলেও প্রশাসনের তেমন তৎপরতা নেই।
সংক্রমণ আরও কিছুদিন বাড়বে জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি চলবে আরও দুই সপ্তাহ। এরপর এক সপ্তাহ সমান্তরাল থাকবে। তারপর নিম্নমুখী হবে সংক্রমণ।’
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ এবং সাধারণ মানুষ কী করবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মানুষের উচিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। সঠিক নিয়ম মেনে মাস্ক পরা। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারিভাবে হাসপাতাল প্রস্তুত রাখতে হবে। টিকা কার্যক্রমে গতি বাড়াতে হবে।
হাসপাতালে রোগীদের অক্সিজেন নিশ্চিত করতে হবে। নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে দৈনিক টেস্টের সংখ্যা অবশ্যই এক লাখ হলে ভালো হতো। টেস্ট কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে জনবল নিয়োগ দিতে হবে।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ‘বাংলাদেশে ওমিক্রন প্রথম শনাক্তের ঘোষণা আসে ১১ ডিসেম্বর। ওই মাসেই আইসিডিডিআরবির ল্যাবে পরীক্ষা করা শুধু ঢাকা শহরের ৭৭ জন করোনা রোগীর মধ্যে পাঁচজনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত করা হয়েছিল। অন্যরা ছিলেন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। এর পর থেকে দুই ধরনের আধিপত্য ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। সংক্রমণ পরিস্থিতি ফের উদ্বেগ ছড়াচ্ছে।
ওমিক্রন দাপটের মধ্যে রেকর্ডসংখ্যক রোগী বাড়তে থাকায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) একটি গবেষণা পরিচালনা করে। সেখানে বলা হয়, খোদ ঢাকা শহরেই করোনার তিনটি সাব-টাইপ রয়েছে। গবেষণায় পরীক্ষিত নমুনার মধ্যে ২৮ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত। আর আক্রান্তদের মধ্যে ওমিক্রন ছিল ৬৯ শতাংশের দেহে।
অন্যদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীদের ৮৫ শতাংশই টিকা নেননি। এমনকি করোনায় মারা যাওয়াদের বেশির ভাগেরও টিকা নেয়া ছিল না। ইতোমধ্যে সরকারি হাসপাতালের ২৫ শতাংশ শয্যায় রোগী ভর্তি রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ ঘটেছে। উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা ৮০ শতাংশই পজিটিভ আসছে। যাদের বেশির ভাগই করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনে আক্রান্ত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয় যে প্রস্তুতি নিলেও তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
সরকারের রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট রোগতত্ত্ববিদ ড. মুশতাক হোসেন বলেন, সারা বিশ্বেই ওমিক্রনের প্রভাবে করোনা শনাক্তের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে। বাংলাদেশেও দু-এক দিনের মধ্যে শনাক্তের আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।
নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো গেলে আক্রান্ত ও শনাক্তের হার আরও বাড়বে। যারা আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসা সুবিধা বাড়াতে হবে। পরীক্ষা করার সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, এখন ৫০ হাজার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। সেখানে ১৫ হাজার শনাক্ত হচ্ছে। ১ লাখ ৫০ থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার রোগী শনাক্ত হবে। করোনা আক্রান্তদের সরকার ফলোআপের ব্যবস্থার আওতায় আনবে। মেডিসিনের মাধ্যমে অসুস্থদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা। সুনির্দিষ্টভাবে আইসোলেশন সেন্টার করতে হবে, যেখানে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
যেসব স্থানে মানুষের উপচেপড়া ভিড় হচ্ছে, সেখানে করোনা টেস্টের ব্যবস্থা রাখা উচিত। যেমন বাণিজ্য মেলা, গণপরিবহন, শপিংমল। এসব জায়গায় বিনা মূল্যে অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হবে। আধা ঘণ্টার মধ্যেই ফলাফল নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে মানুষ আগ্রহী হবে। যেটা করোনা মোকাবিলায় করণীয় নির্ণয়ে সহায়ক হবে।
আরও পড়ুন:সুনামগঞ্জসহ দেশের বন্যাকবলিত এলাকায় মানুষের জন্য ২৪ ঘণ্টা স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাসহ বন্যা পরবর্তী সময়ে সম্ভাব্য রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় পর্যাপ্ত ওষুধ ও উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সোমবার বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন শেষে জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টদের করণীয় বিষয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এমন নির্দেশনা দেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বন্যাকবলিত মানুষ আমাদেরই ভাই, আমাদেরই বোন। তারা এখন পানিবন্দি জীবন-যাপন করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক নির্দেশনায় তাদের ঘরে শুকনা খাবার নিশ্চিত করা হয়েছে, পানিবাহিত নানা রোগব্যাধি থেকে মুক্ত রাখতে স্বাস্থ্যখাতও জোড়ালোভাবে এগিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, এসব এলাকায় এখন সাপের কামড় থেকে বাঁচাতে দ্রুত অ্যান্টিভেনম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন সরবরাহ করতে হবে। কোভিড সমস্যায় জরুরি ব্যাবস্থা নিতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, জরুরি প্রয়োজনে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে গুরুতর রোগীকে ঢাকায় পাঠাতে হবে। বন্যাকবলিত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবার কোনো ঘাটতি মেনে নেয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে বন্যায় কারো খাদ্য, চিকিৎসার কোন ব্যত্যয় হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা নেতৃত্বে আমরা বন্যা ও কোভিড মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি।
আরও পড়ুন:রাজধানী ঢাকার পাঁচটি এলাকায় ৭০০টি অস্থায়ী কেন্দ্রে রোববার সকাল থেকে কলেরার মুখে খাওয়ার টিকার ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে।
রোববার বেলা ২টায় রাজধানীর মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) সাসাকাওয়া মিলনায়তনে এই ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
এই টিকাদান কর্মসূচি চলবে ২ জুলাই পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে ২৩ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ মুখে খাওয়ার কলেরা টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব বয়সের মানুষকে ডায়রিয়ার ওর্যাল ভ্যাকসিন দেব। ঢাকার সংক্রমণপ্রবণ পাঁচটি এলাকার ২৩ লাখ মানুষকে এই টিকা দেব।
আমরা প্রথমবারের মতো দেশে বড় পরিসরে এই ভ্যাকসিন দিচ্ছি। এর আগে ট্রায়ালে যেসব এলাকায় টিকা দিয়েছি সেখানে কলেরার প্রাদুর্ভাব একদম কমে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একসময় কলেরা-ডায়রিয়ায় হাজার হাজার মানুষ মারা যেত। এখন তা হয় না। এর পেছনে সরকার ও আইসিডিডিআর,বির গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে।
‘সরকার সারা দেশে নিরাপদ পানি ও স্যানিটারির ব্যবস্থা করেছে। সরকার সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছে। আমরা প্রতিটি জেলা-উপজেলার হাসপাতালে কলেরা-ডায়রিয়া ইউনিট চালুর নির্দেশ দিয়েছি।’
করোনা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইদানীং করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। আমরা আতঙ্কিত না হলেও চিন্তিত। তবে সতর্ক অবস্থায় রয়েছি। আমরা বেশি বেশি করোনা পরীক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা দ্বিতীয় ডোজ দেয়া প্রায় শেষ করেছি। আজকের মধ্যে ৭০ শতাংশ নাগরিকের দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শেষ হবে।
যারা বুস্টার ডোজ এখনও নেননি তাদের টিকা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বুস্টার ডোজ নেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:ঢাকার পাঁচটি এলাকায় রোববার থেকে কলেরার মুখে খাওয়ার টিকার ক্যাম্পেইন শুরু হচ্ছে। চলবে ২ জুলাই পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে ২৩ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ মুখে খাওয়ার কলেরা টিকাদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
রোববার বেলা ২টায় রাজধানীর মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) সাসাকাওয়া মিলনায়তনে এই ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
আইসিডিডিআর,বি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতীয় কলেরা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সবুজবাগ, মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও দক্ষিণখানের প্রায় ২৩ লাখ মানুষকে কলেরা টিকাদান কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গর্ভবতী বাদে এক বছরের বেশি বয়সী শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সীদের মুখে খাওয়ার এই টিকা দেওয়া হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কলেরা টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে। এই টিকাদান কার্যক্রমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে কাজ করবে আইসিডিডিআর,বি।
এ বছর মার্চের মাঝামাঝি সময়ে আইসিডিডিআর,বির কলেরা হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়ায়। এই পরিস্থিতিতে মে মাসে কলেরা টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে টিকা হাতে পেতে দেরি হওয়ায় জুনে এই কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। প্রথমে রাজধানীতে শুরু হলেও এই কার্যক্রম ধীরে ধীরে সারা দেশে চালু হবে।
সাড়ে তিন মাস পর করোনাভাইরাসে এক দিনে তিনজনের মৃত্যুর তথ্য দিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত কয়েক দিনে এক দিনে সর্বোচ্চ একজনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়েছিল।
গত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে শনাক্তের সংখ্যা ও পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার প্রতিদিনই আগের দিনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মধ্যে মৃত্যুর এ সংখ্যাটি জানানো হলো শনিবার।
শুক্রবার সকাল থেকে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর এই সংখ্যা গত ১১ মার্চের পর সর্বোচ্চ। সেদিন ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছিল।
অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আগের দিনের চেয়ে পাঁচ হাজার নমুনা কম পরীক্ষা করা হয়েছে। যে কারণে নতুন রোগীর সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় কিছটা কমে এসেছে। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮ হাজার ৪৯২টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ১ হাজার ২৮০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার বিবেচনায় রোগী শনাক্তের ১৫ দশমিক শূন্য ৭। গতদিন এই হার ছিল ১২ দশমিক ১৮ শতাংশ। বৃহস্পতিবার এই হার ছিল ১৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। আগের দিন বুধবার ছিল ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ।
করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর গত ১৬ জুন প্রথমবারের মতো পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ শতাংশ ছাড়ায়। এ নিয়ে টানা ১০ দিন শনাক্তের হার ৫ শতাংশের ওপরে থাকল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় শনাক্তের হার পরপর দুই সপ্তাহ ৫ শতাংশের বেশি হলে পরবর্তী ঢেউ ছড়িয়েছে বলে ধরা হবে।
এই হিসাবে আর চার দিন শনাক্তের হার ৫ শতাংশের বেশি হলে দেশে করোনার চতুর্থ ঢেউ ছড়িয়েছে বলে ধরা যাবে।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। একই বছরের মার্চে ডেল্টা ধরনের করোনায় আসে দ্বিতীয় ঢেউ। এ পর্যায়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয় গত জুলাইয়ে। একপর্যায়ে শনাক্তের হার ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর দেশে তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আসে করোনার আরেক ধরন ওমিক্রন। তৃতীয় ঢেউয়ের সময় ২৮ জানুয়ারি করোনা শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ দাঁড়ায়, যা দেশে করোনা সংক্রমণ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। তবে তৃতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত বেশি হলেও মৃত্যু ছিল তুলনামূলক কম। এই ঢেউ দ্রুত নিয়ন্ত্রণেও আসে। গত ১১ মার্চ তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর মাস্ক পরা ছাড়া করোনাসংক্রান্ত সব বিধিনিষেধ তুলে দেয়া হয়। তবে জনগণের মধ্যে মাস্ক পরা নিয়ে অনীহার বিষয়টি আবার দেখা যায়। করোনা সংক্রমণ ক্রমেই বাড়তে থাকলেও এ বিষয়ে সচেতনতার অভাবের বিষয়টি এখনও স্পষ্ট।
করোনা পরিস্থিতির অবনতিতে সব সরকারি চাকরিজীবীর মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে নির্দেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন:প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার। অথচ করোনা প্রতিরোধে মাস্ক পরা নিয়ে মানুষের মধ্যে নেই আগ্রহ। অনেকের ধারণা, করোনার টিকা নেয়ার ফলে মাস্ক পরার দরকার নেই। বেশিরভাগ মানুষের এ নিয়ে রয়েছে উদাসীনতাও। একই সঙ্গে মাস্ক পরা নিয়ে মানুষের আগ্রহ কম থাকায় কমেছে মাস্কের বিক্রি।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরঝিল, মগবাজার ঘুরে মানুষের মাস্ক না পরার এমন প্রবণতার চিত্র দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারে দেখা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ইসতিয়াক মিয়ার সঙ্গে। মুখে মাস্ক নেই কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মাস্ক পরতে ভুলে গেছি। আর অনেক দিনের অভ্যাস তো, তাই মাঝে মাঝে ভুলে যাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘টিকা তো নিয়েছি, তাই মাস্ক পরা নিয়ে আমার তেমন মাথাব্যাথা নেই।’
একই অবস্থা দেখা গেল হাতিরঝিলে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা আব্দুল মালেকের বেলায়ও। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবসময়ই মাস্ক পরি। আজ বেড়াতে আসছি তো তাই মাস্ক পরা হয়নি। আর আমি তো তিন ডোজ টিকাও নিয়েছি। তাই মাস্ক পরা নিয়ে তেমন একটা ভাবছি না।’
মাস্ক পরা নিয়ে অবশ্য ভিন্নমত রয়েছে মগবাজারের বাসিন্দা আরমান শেখের। তার দাবি, মাস্ক পরলেও করোনা ঠেকানো যাবে না।
তিনি বলেন, ‘মরণ যখন আসবে তা কেউ ঠেকাতে পারবে না। মাস্ক পরলেই কী করোনা ঠেকানো যাবে? মাস্ক পরে কী হবে? কিছুই হবে না। কপালে যা আছে তাই হবে।’
এ দিকে মাস্ক নিয়ে মানুষের উদাসীনতার বিষয়টির প্রভাব পড়েছে মাস্ক বিক্রির দোকানগুলোতেও। সেখানে আগের মতো মাস্ক বিক্রি হচ্ছে না।
জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের পাইকারি মাস্ক বিক্রেতা সেন্টু বেগ বলেন, ‘যখন করোনা খুব বেড়েছিল তখন দিনে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মাস্ক বিক্রি করতাম, আর এখন তা ৩-৪ হাজারে নেমে এসেছে।’
একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন মগবাজারের মা ফার্মেসির মালিক সবুজ। তিনি বলেন, ‘আগের মতো মাস্ক বিক্রি হচ্ছে না। মানুষ ধারণা করছে, টিকা যেহেতু নেয়া হয়েছে তাই মাস্ক পরার দরকার নেই। আগে ৫০-৬০ বক্স মাস্ক বিক্রি করলেও এখন তা ১০-১৫ বক্সে নেমে এসেছে।’
বিশেজ্ঞরা যা বলছেন
রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা বাড়ছে মানুষের মধ্যে উদাসীনতা চলে আসার জন্য। সারা দেশেই মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। এ ছাড়া জনসমাবেশ ও বিয়ের অনুষ্ঠান বেড়েছে। সেখানে তারা ফেস মাস্ক পরছে না, মানা হচ্ছে না সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব।’
প্রকৃতপক্ষে সংক্রমণ আরও অনেক বেশি বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘প্রতিদিন যে সংক্রমণের হার দেখছেন, প্রকৃতপক্ষে সংক্রমণ আরও বেশি। একজনের শনাক্ত হলে, আরও পাঁচজন শনাক্তহীন হয়ে ঘুরে বেড়ায়।’
ড. আলমগীর বলেন, ‘আগের মতো সবাই মিলে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আশা যায় খুব শিগগিরই সংক্রমণ কমে আসবে।’
করোনা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কমিটির সদস্য ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে অবশ্যই আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এর জন্য সরকার থেকে জোরালো নির্দেশনা থাকতে হবে। একইসঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির সংশ্লিষ্টতাও নিশ্চিত করতে হবে। যাতে জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মানতে আগ্রহী হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে সবধরনের প্রস্তুতি থাকতে হবে, পর্যাপ্ত অক্সিজেন মজুত রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোভিডের পাশাপাশি রোগীর অন্যান্য ক্লিনিক্যাল অবস্থা মোকাবিলার সক্ষমতা থাকতে হবে। আইসিইউয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে। আমরা গত বছরেও দেখেছি, এক হাসপাতালে আইসিইউ না পেয়ে রোগীকে অন্য হাসপাতালে যেতে হয়েছে। এবার যেন সে পরিস্থিতিতে না পড়তে হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘দীর্ঘদিন করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকায় মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে উদাসীনতা দেখা দিয়েছে। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে যা করণীয় সেটি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া চিঠি দিয়ে হাসপাতালগুলো প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে সারা দেশের সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
করোনা সংক্রমণ এখনও নিয়ন্ত্রণে বাইরে যায়নি জানিয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘সংক্রমণের হার এখনও ১৫ শতাংশের নিচে। এটি ২০ শতাংশের বেশি হলে অবশ্যই বিধিনিষেধ দেয়া হবে। পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণ
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ৮৩৩টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন এক হাজার ৬৮৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। যা চার মাসের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত ২১ ফেব্রুয়ারি এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্তের সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেদিন এক হাজার ৯৫১ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এ নিয়ে এক দিন ছাড়া টানা ২৪ দিন নতুন করোনা রোগীর সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে বাড়ল।
শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার বিবেচনায় রোগী শনাক্তের ১২ দশমিক ১৮ শতাংশ। গতকাল এই হার ছিল ১৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। আগের দিন বুধবাব ছিল ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ।
করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর গত ১৬ জুন প্রথমবারের মতো পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ শতাংশ ছাড়ায়। এনিয়ে টানা ৯ দিন শনাক্তের হার ৫ শতাংশের উপরে থাকল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় শনাক্তের হার পরপর দুই সপ্তাহ ৫ শতাংশের বেশি হলে পরবর্তী ঢেউ ছড়িয়েছে বলে ধরা হবে।
নতুন শনাক্তের মধ্যে ১ হাজার ৫১১ জন ঢাকা জেলার। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৯ লাখ ৬২ হাজার ২১৩ জন।
আরও পড়ুন:সরকারি নিয়ম অনুসারে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) আওতায় শিশুদের সব টিকা বিনা মূল্যে দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু রাজধানীর উত্তর বাড্ডার নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে (বাংলাদেশ হসপিটাল ট্রাস্টের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান) টাকার বিনিময়ে টিকা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
উত্তর বাড্ডার এই নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০টি শিশু টিকা নিতে আসে। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকেই আদায় করা হচ্ছে ৫০ টাকা করে।
মূলত নারী-শিশু এবং শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস প্রকল্পের অধীনে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে আছে নারী মৈত্রী সেবা সংস্থা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সিটি করপোরেশন। সপ্তাহে দুদিন রোববার ও বুধবার নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে টিকা দেয়া হয়। শিশুমৃত্যুর হার কমাতে শূন্য থেকে ১৫ মাস বয়সী শিশুদের ৭টি টিকা নিতে হয়।
৯ মাসের সন্তান আহামেদ জারিফকে টিকা দিতে সোমবার দক্ষিণ বনশ্রী থেকে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী আয়েশা বিনতে ইসলাম। এখান থেকে আগেও সন্তানকে চারটি টিকা দিয়েছেন। প্রতিবারই তাকে ৫০ টাকা করে দিতে হয়েছে। একই অভিযোগ করেছেন আরও দশ অভিভাবক।
উত্তর বাড্ডার বাসিন্দা রুম্পা রায় সোমবার স্থানীয় এই নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান টিটেনাসের টিকা নিতে। চার্জ হিসেবে তার কাছেও ৫০ টাকা চাওয়া হয়।
এ সময় রুম্পা প্রশ্ন তোলেন- ‘সরকার এই টিকা সারা দেশে ফ্রিতে দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটিও সরকারের নিবন্ধনভুক্ত। এর পরিচালন ব্যয়ও দিচ্ছে সরকার। তাহলে এটা কিসের চার্জ? টাকা নেয়ার রসিদও তো দিচ্ছেন না!’
জবাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, ‘এখানে যেকোনো টিকা নিতে হলেই টাকা দিতে হবে। সবার কাছ থেকেই নেয়া হচ্ছে। তবে এটা টিকার দাম নয়, সার্ভিস চার্জ। আমাদের এখানে চারজন চিকিৎসক ও চারজন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। কেন্দ্র পরিচালনা ব্যয়ও বলতে পারেন।’
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইপিআই-এর আওতায় শিশুদের সব টিকাই এই কেন্দ্রে পাওয়া যায়। সরকারি টিকাগুলো ফ্রি দেয়া হয়। এজন্য সরকার থেকে আমরা কিছু অর্থ পাই। তবে সার্ভিস চার্জ বাবদ ৫০ টাকা নেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের চার্জ হিসেবে এটা নেয়া হয়। এই টাকা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ব্যয় করা হয়।
‘বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নারী মৈত্রী থেকে ইপিআইয়ের সব টিকা আনা হয়। তাদের কাছে খোঁজ নিলে টাকা নেয়ার কারণ সম্পর্কে পরিষ্কার জানতে পারবেন।’
কবে থেকে টিকা দিয়ে চার্জ নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ ৫০ টাকা সার্ভিস চার্জ নেয়ার নির্দেশ দেয়ায় এটা নেয়া হচ্ছে।’ তবে নির্দেশনার চিঠি বা প্রজ্ঞাপন চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি।
নারী মৈত্রী সংস্থার পরিচালক আকরামুল হোসাইন বলেন, ‘ইপিআইয়ের আওতাভুক্ত সব টিকা বিনামূল্যে দেয়ার নিয়ম। তারপরও কেউ টাকা নিলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ইপিআই টিকা ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক বলেন, ‘সারা দেশে এই টিকা বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। বিনামূল্যের টিকা নিতে টাকা দিতে হচ্ছে এমন অভিযোগ আমাদের কাছে এখনও আসেনি। আসলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:দেশে করোনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ওমিক্রনের ৯১ শতাংশই বিএ.২ উপ-ধরন (সাব-ভ্যারিয়েন্ট) পাওয়া গেছে। বাকি ৯ শতাংশ বিএ.৫ উপ-ধরন। মে মাসে দেশে ওমিক্রনের নতুন উপ-ধরনে বিএ.২-এর প্রাধান্য দেখা গেছে।
‘সার্স-সিওভি-২ ভ্যারিয়েন্টস ইন বাংলাদেশ টেকনিক্যাল ব্রিফিং রিপোর্ট: মে ২০২২’ শীর্ষক রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, মে মাসের ১ থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত দেশে করোনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ওমিক্রনের ৯ শতাংশ বিএ.৫ ও ৯১ শতাংশ বিএ.২ উপ-ধরন পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনটি যৌথভাবে তৈরি করেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর), আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি), ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভস (আইডেশি), চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ) এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।
ওমিক্রনের এই দুটি উপ-ধরন জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হয়। মে মাসের শেষের দিকে এটি দক্ষিণ ভারতে শনাক্ত হয়। উপ-ধরনটি দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনা সংক্রমণের পঞ্চম ঢেউ এবং সম্প্রতি ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। ভ্যাকসিন নেয়া ব্যক্তিরাও করোনার এই উপ-ধরনে আক্রান্ত হচ্ছেন।
আগামী দিনে এটি সংক্রমণশীল অন্যান্য উপ-ধরনের তুলনায় বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বিশ্বজুড়ে করোনার দুটি ধরনকে নজরদারির মধ্যে রেখেছে। ২০২১ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে ‘ভ্যারিয়েন্টস অব কনসার্ন’ হিসেবে সবশেষ সংযোজিত হয় ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টটি। সংক্রমণের ক্ষমতা, ইমিউনিটি সিস্টেমকে আক্রমণের সক্ষমতা এবং ভ্যাকসিন রেসিস্ট্যান্সের কারণে এটিকে এই তালিকায় রাখা হয়।
সবশেষ ২০ জুন পর্যন্ত দেশে ওমিক্রন ধরন শনাক্ত হয়েছে ১২৮০ জনের দেহে।
অন্যদিকে গত মাসের ২৪ তারিখে দেশে প্রথম ওমিক্রনের বিএ.৫ ধরন শনাক্ত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মে মাস জুড়ে দেশে যতগুলো করোনা কেস শনাক্ত হয়েছে তার শতভাগের ক্ষেত্রেই ওমিক্রন দায়ী।
সারা দেশে কোভিড-১৯ এর পজিটিভিটি রেট কমায়, মে মাসে নমুনার পরিমাণ কম ছিল। ফলে কনসোর্টিয়ামটি ১-৩১ এর মধ্যে কেবল ১১টি নমুনার সিকোয়েন্স করতে সক্ষম হয়। নমুনাগুলো ৬টি বিভাগ থেকে সংগ্রহ করা হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য