দেশে করোনাভাইরাসের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি আরও দুই সপ্তাহ চলবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এই সময়ে সংক্রমণের বিবেচনায় অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে। এরপর ধীরে ধীরে নিচে নেমে আসবে সংক্রমণের হার।
দেশে দুই বছর ধরে জিন পরিবর্তন করে একাধিক নামে ও রূপে এসেছে করোনাভাইরাস। এবার ডেল্টা ও ওমিক্রনের একযোগে সংক্রমণের ফলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সংক্রমণরোধে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
তবে মাঠপর্যায়ে প্রশাসনের তেমন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। সরকারের নেয়া উদ্যোগ তেমন কাজে আসছে না। এতে সার্বিকভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। এরই মধ্যে দিনে করোনা শনাক্ত ১৬ হাজার ছাড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের সংবাদ দেয় অধিদপ্তর। ওই বছরের শেষ দিকে সংক্রমণের প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসে। গত বছরের এপ্রিল থেকে জুন-জুলাই পর্যন্ত করোনার ডেল্টা ধরন ব্যাপক আকার ধারণ করে। এর প্রভাবে দ্বিতীয় ঢেউ আসে।
বছরের শেষ কয়েক মাস পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল ছিল। কিন্তু এ বছরের শুরু থেকে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে করোনার বিস্তার আবারও বাড়তে শুরু করে। এতে করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে।
এখন ঘরে-বাইরে অবস্থানকারী সব ধরনের মানুষের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হচ্ছে। এর পরও হাট-বাজার, মেলা, বাস-ট্রেন কোনোখানেই কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সর্বশেষ বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৯ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫ হাজার ৫২৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ সময় আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৭ লাখ ৩১ হাজার ৫২৪ জনে দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে ২৮ হাজার ২৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের তেমন প্রস্তুতি নেই বললেই চলে। এই মুহূর্তে শুধু টিকা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আর হাসপাতাল প্রস্তুতির কথা বলছে। আসলে সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
যদিও এই স্বাস্থ্যবিধি মানানোর দায়িত্ব সরকারের একার নয়, এর সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করা জরুরি। কিন্তু সরকার নির্দেশনা দিলেও প্রশাসনের তেমন তৎপরতা নেই।
সংক্রমণ আরও কিছুদিন বাড়বে জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি চলবে আরও দুই সপ্তাহ। এরপর এক সপ্তাহ সমান্তরাল থাকবে। তারপর নিম্নমুখী হবে সংক্রমণ।’
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ এবং সাধারণ মানুষ কী করবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মানুষের উচিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। সঠিক নিয়ম মেনে মাস্ক পরা। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারিভাবে হাসপাতাল প্রস্তুত রাখতে হবে। টিকা কার্যক্রমে গতি বাড়াতে হবে।
হাসপাতালে রোগীদের অক্সিজেন নিশ্চিত করতে হবে। নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে দৈনিক টেস্টের সংখ্যা অবশ্যই এক লাখ হলে ভালো হতো। টেস্ট কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে জনবল নিয়োগ দিতে হবে।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ‘বাংলাদেশে ওমিক্রন প্রথম শনাক্তের ঘোষণা আসে ১১ ডিসেম্বর। ওই মাসেই আইসিডিডিআরবির ল্যাবে পরীক্ষা করা শুধু ঢাকা শহরের ৭৭ জন করোনা রোগীর মধ্যে পাঁচজনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত করা হয়েছিল। অন্যরা ছিলেন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। এর পর থেকে দুই ধরনের আধিপত্য ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। সংক্রমণ পরিস্থিতি ফের উদ্বেগ ছড়াচ্ছে।
ওমিক্রন দাপটের মধ্যে রেকর্ডসংখ্যক রোগী বাড়তে থাকায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) একটি গবেষণা পরিচালনা করে। সেখানে বলা হয়, খোদ ঢাকা শহরেই করোনার তিনটি সাব-টাইপ রয়েছে। গবেষণায় পরীক্ষিত নমুনার মধ্যে ২৮ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত। আর আক্রান্তদের মধ্যে ওমিক্রন ছিল ৬৯ শতাংশের দেহে।
অন্যদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীদের ৮৫ শতাংশই টিকা নেননি। এমনকি করোনায় মারা যাওয়াদের বেশির ভাগেরও টিকা নেয়া ছিল না। ইতোমধ্যে সরকারি হাসপাতালের ২৫ শতাংশ শয্যায় রোগী ভর্তি রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ ঘটেছে। উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা ৮০ শতাংশই পজিটিভ আসছে। যাদের বেশির ভাগই করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনে আক্রান্ত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয় যে প্রস্তুতি নিলেও তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
সরকারের রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট রোগতত্ত্ববিদ ড. মুশতাক হোসেন বলেন, সারা বিশ্বেই ওমিক্রনের প্রভাবে করোনা শনাক্তের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে। বাংলাদেশেও দু-এক দিনের মধ্যে শনাক্তের আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।
নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো গেলে আক্রান্ত ও শনাক্তের হার আরও বাড়বে। যারা আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসা সুবিধা বাড়াতে হবে। পরীক্ষা করার সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, এখন ৫০ হাজার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। সেখানে ১৫ হাজার শনাক্ত হচ্ছে। ১ লাখ ৫০ থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার রোগী শনাক্ত হবে। করোনা আক্রান্তদের সরকার ফলোআপের ব্যবস্থার আওতায় আনবে। মেডিসিনের মাধ্যমে অসুস্থদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা। সুনির্দিষ্টভাবে আইসোলেশন সেন্টার করতে হবে, যেখানে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
যেসব স্থানে মানুষের উপচেপড়া ভিড় হচ্ছে, সেখানে করোনা টেস্টের ব্যবস্থা রাখা উচিত। যেমন বাণিজ্য মেলা, গণপরিবহন, শপিংমল। এসব জায়গায় বিনা মূল্যে অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হবে। আধা ঘণ্টার মধ্যেই ফলাফল নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে মানুষ আগ্রহী হবে। যেটা করোনা মোকাবিলায় করণীয় নির্ণয়ে সহায়ক হবে।
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য