বিদেশে অর্থ পাচার রোধে দক্ষিণ কোরিয়াকে উদাহরণ টেনেছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। বলেছেন, দেশটি থেকে একসময় অনেক অর্থ পাচার হতো। কঠোর আইন ও শাস্তির কারণে তা বন্ধ হয়েছে। বাংলাদেশেও তাই করা উচিত।
রাজধানীতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বুধবার আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে টাকা পাচার প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী। অর্থ পাচার রোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে কঠোর হওয়ার তাগিদ দেন তিনি।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ওভার ইনভয়েসিং (বেশি দাম দেখিয়ে পণ্য আমদানি) ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের (বেশি দামের পণ্যকে কম দাম দেখিয়ে রপ্তানি) মাধ্যমে দেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীসহ সরকারি কর্মকর্তারা কর ফাঁকি দিয়ে এ টাকা পাচার করছেন।
‘এই পাচার প্রতিরোধ করতে হলে কাস্টমস বিভাগের বড় ধরনের ভূমিকা পালন করতে হবে। কীভাবে টাকা পাচার কমানো যায়, সে বিষয়ে কাস্টমসকে কাজ করতে হবে।’
এ বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়াকে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরেন মন্ত্রী। বলেন, ‘কোরিয়াতে একসময় বিপুল পরিমাণ মুদ্রা পাচার হতো। এই পাচার রোধে তারা কঠোর আইন করেছে। যারা পাচার করে, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েছে। যে কারণে ওই দেশে টাকা পাচার কমেছে।
‘তাদের মতো বাংলাদেশকেও অর্থ পাচার বন্ধে আইন করতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ব্যবসায়ীরা যাতে কোনোক্রমেই বিদেশে টাকা পাচার না করতে পারেন সে জন্য কাস্টমসকে ভূমিকা রাখতে হবে।’
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ এবং টেক্স জিডিপির অনুপাত বাড়াতেও সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেন আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে যেতে হলে আমাদেরকে আয় বাড়াতেই হবে। এ জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।’
দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ আর স্বপ্ন নয়, এটি এখন বাস্তবতা। এসডিজি গোল বাস্তবায়নে আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি এগিয়েছি।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও। কর আদায় ও আওতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘উপজেলা পর্যন্ত করের আওতা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের কাস্টমস কর্মকর্তাদের বিষয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে যে নেতিবাচক ধারণা ছিল তা এখন কেটে গেছে। কাস্টমস এখন একটা গর্বের জায়গা।’
বাংলাদেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে শিল্পায়নের পাশাপাশি রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ দরকার বলে জানালেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের লক্ষ্য হচ্ছে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে যাওয়া। এ জন্য মাথাপিছু আয় বাড়াতে হবে ৫ হাজার ৫০০ ডলার। এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে শিল্পায়নের কোনো বিকল্প নাই। আমাদের এক্সপোর্ট বাড়াতে হলে পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে। এ জন্য এনবিআর ও প্রাইভেট সেক্টরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
শুধু রাজস্ব আদায়ের ভূমিকাই না, দেশের স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষায় এনবিআর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
কর-জিডিপি অনুপাত কম হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বিপুল পরিমাণ কর ছাড় দেয়া হচ্ছে। প্রাইভেট সেক্টরের পাশাপাশি সরকারিভাবেও কর ছাড়ের চাপ আছে। যে কারণে কর আদায় ব্যাহত হচ্ছে। এটাও ঠিক যে কর ছাড়ের কারণে উন্নয়ন প্র্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেজাদ মুনিম, বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনবিআরের সদস্য (শুল্কনীতি) মাসুদ সাদিক।
ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামসহ অনুষ্ঠানে ২০ কাস্টমস কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের সার্টিফিকেট অফ মেরিট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
আরও পড়ুন:বস্ত্র ও পোশাকশিল্পে উদ্ভাবনকে এগিয়ে নিতে টেক্সটাইল ট্যালেন্ট হান্ট (টিটিএইচ) সিজন-৯- এর উদ্বোধন করেছে টেক্সটাইল টুডে ইনোভেশন হাব।
ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে শনিবার গ্র্যান্ড লঞ্চিং হয়।
সেন্ট্রো টেক্স লিমিটেড প্রেজেন্ট ও ইউরো ডাই-সিটিসি পাওয়ার্ড টেক্সটাইল ট্যালেন্ট হান্ট সিজন-৯-এর উদ্দেশ্য হলো এ খাতে কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যে উদ্ভাবনী সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়া ও বৃহত্তরভাবে ব্যবসায় উদ্ভাবনের প্রসার।
বুটেক্সের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জুলহাস উদ্দিন টেক্সটাইল ট্যালেন্ট হান্ট সিজন-৯-এর গ্র্যান্ড লঞ্চিং ঘোষণা করেন।
তিনি টেক্সটাইল টুডে ইনোভেশন হাবের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও তারেক আমিনকে অভিনন্দন জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, অনন্ত কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হক খান, ইনস্টিটিউশন অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড টেকনোলজিস্টের (আইটিইটি) আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার এহসানুল করিম কায়সার, বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ) সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন পাভেল, বাংলাদেশ এপারেল ইউথ লিডার্স এসোসিয়েশন (বায়লা) সভাপতি আবরার হোসেন সায়েম এবং মাসকো গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক এটিএম মাহাবুবুল আলম চৌধুরী।
টিটিএইচ জাজেস প্যানেলের চেয়ারম্যান এবং বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. আইয়ুব নবী খান এবং সদস্য সচিব মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন শিয়াকসহ আরও অনেক বিশিষ্ট শিল্প নেতা, বিশেষজ্ঞ, কারখানার মালিক ও সাংবাদিকরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
টিটিএইচ অষ্টম সিজনের মতো সিজন-৯-এ জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থীকে নির্বাচিত করা হবে। তারা প্রশিক্ষণ ও গ্রুমিং, আইডিয়া অডিশন, অ্যাপটিটিউড টেস্ট এবং নিবিড় তত্ত্বাবধানে গবেষণা বা উদ্ভাবনী প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে উদ্ভাবনী মাস্টারমাইন্ডে (IMs) রূপান্তরিত হবেন।
সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সেরা ১০০ ইনোভেশন মাস্টারমাইন্ড ৩০ লাখ টাকা সমমানের প্রশিক্ষণ পাবেন। তারা ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত বৃত্তিও পাবেন।
প্রতিটি প্রকল্পে তিনজন ইনোভেশন মাস্টারমাইন্ড এসব প্রকল্পে যুক্ত থাকবেন। একই সঙ্গে থাকবেন শিল্প বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ ও টেক্সটাইল টুডে ইনোভেশন হাবের নিজস্ব সমন্বয়কারী।
এভাবে প্রতিটি দল গঠন করা হবে। তাদের ফলাফল টেক্সটাইল টুডে ইনোভেশন হাব ইনোভেশন কনফারেন্স নামে একটি প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিল্পের সঙ্গে শেয়ার করবে।
প্রতিযোগিতার পর, গ্র্যান্ড ফিনালেতে গ্রুপ এবং ব্যক্তিগত উভয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ন এবং প্রথম রানার আপ এবং দ্বিতীয় রানার আপদের মোট ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রাইজমানি দেয়া হবে।
উদ্ভাবনশীলতাকে সংহত করতে ইচ্ছুক যেকোনো শাখার যেকোনো স্নাতক স্তরের শিক্ষার্থীরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন।
টেক্সটাইল টেলেন্ট হান্ট সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করা যাবে বিজনেস ডেভেলপমেন্ট হেড আমজাদ হোসেন মনিরের ০১৭৭৫-৯৯৯৭৪৮ নম্বরে।
আরও পড়ুন:ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত রেখেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বেঞ্চমার্ক সূচক উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘আগাম শেয়ার নিষ্পত্তি, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে তারল্য সহায়তা এবং সম্ভাব্য মূলধন লাভের কর কমানোসহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কারণে বাজারে এই ইতিবাচক পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে।’
বিনিয়োগকারীদেরও সচেতনভাবে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে দেখা যাচ্ছে। তারা হয় পূর্ববর্তী বিনিয়োগ থেকে মুনাফা সুরক্ষিত করেছে বা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উপার্জনের প্রতিবেদনসহ স্টকগুলোতে মূলধন পুনরায় বিনিয়োগ করেছে। এই নির্বাচনমূলক পদ্ধতি আশার সঞ্চার করায় তা সামগ্রিক বাজারের গতিতে অবদান রেখেছে।
বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১৬ দশমিক ৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে পাঁচ হাজার ৩১৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় বাজার লেনদেন ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ৬০৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা হয়েছে।
আগের পাঁচ সপ্তাহে ৬১৬ পয়েন্ট হারানোর পর টানা দুই সপ্তাহে ২০২ পয়েন্ট যোগ করেছে ডিএসইএক্স।
ডিএসইর খাতভিত্তিক সূচকগুলোকেও বেশ ভালো করতে দেখা গেছে। ৩০টি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস৩০ ইনডেক্স ৩৯ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে লেনদেন শেষ করেছে। একইভাবে শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী ডিএসইএস সূচক ৪৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৮৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকায়।
বাজার কার্যকলাপের একটি প্রধান সূচক বাজার লেনদেন এই সপ্তাহে তিন হাজার ২৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে, যা আগের সপ্তাহের দু’হাজার ৮৩ কোটি টাকার লেনদেনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। সে হিসাবে দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ৬০৬ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের গড় ৪১৬ কোটি টাকার তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেশি।
আরও পড়ুন:দেশে বৈদেশিক মুদ্রার কোনো ঘাটতি নেই উল্লেখ করে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ে এক সভা শেষে ড. মনসুর সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রায় কোনো ঘাটতি নেই, যে কেউ এলসি খুলতে পারবেন।’
বাজারে চাহিদা পূরণে প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে ড. মনসুর ব্যবসায়ীদের দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এলসি খুলুন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করুন এবং বাজারের চাহিদা মেটান।’
গভর্নর মুক্তবাজার অর্থনীতিতে নিজের বিশ্বাস ও আস্থা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘বাজার শক্তি বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে সহায়তা করবে। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তবে পরিস্থিতি শান্ত হতে সময় লাগবে।’
ড. মনসুর রেশনিং কর্মসূচি সম্প্রসারণসহ মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি ঘোষণা করেন সরকার শিগগিরই কে কোটি সুবিধাভোগী পরিবারের প্রত্যেকের জন্য বর্তমান পাঁচ কেজি থেকে বাড়িয়ে ১০ কেজি করে প্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণ করবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপণ্যের সহজলভ্যতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) উদ্যোগের জন্য ট্রাকের সংখ্যা বাড়াচ্ছি।’
ড. মনসুর বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি শেষ পর্যন্ত একটি আর্থিক ঘটনা এবং এটি অবশ্যই কার্যকর মুদ্রানীতির মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে।’
তিনি অতিরিক্ত বাজার হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্ক করেন এবং অতীতের ঘটনাবলী স্মরণ করিয়ে দেন, যেখানে কঠোর পদক্ষেপের ফলে পণ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল।
গভর্নর বলেন, ‘আমরা যদি খুব বেশি চাপ প্রয়োগ করি তবে পণ্যগুলো বাজার থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে। ১/১১-এর সময়কালে এবং সাম্প্রতিক ডিম সংকটের সময়ও আমরা তা দেখেছি। বরং এর পরিবর্তে আমরা সংলাপের মাধ্যমে চাপ দিচ্ছি, অতিরিক্ত পর্যবেক্ষণ নয়।
‘আমরা বিশ্বাস করি যে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে, এটি কেবল সময়ের প্রয়োজন।’
সরবরাহ বাড়ানোর সরকারি প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত স্বস্তি আনতে সহায়তা করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের অক্টোবরে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ২ দশমিক ২৬ শতাংশ বেড়ে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে বেড়ে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সে হিসাবে এক মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২ দশমিক ২৬ শতাংশ।
আর সাধারণ পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আগের মাস সেপ্টেম্বরে তা ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। বৃদ্ধির হার দশমিক ৯৫ শতাংশ।
এদিকে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে অক্টোবরে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশে নেমে এসেছে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। সে হিসাবে কমার হার দশমিক ১৪ শতাংশ।
গ্রাহকদের আমানত নিরাপদ উল্লেখ করে প্রয়োজন ছাড়া ব্যাংক থেকে টাকা না তোলার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বানের কথা জানিয়েছেন।
ব্যাংকিং খাতে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সব গ্রাহক একসঙ্গে টাকা তুলতে গেলে বিশ্বের কোনো ব্যাংকের পক্ষেই তা দেয়া সম্ভব নয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একসঙ্গে অনেক গ্রাহক টাকা তুলতে যাওয়ায় কয়েকটি ব্যাংক তাদের টাকা দিতে পারছে না। জমাকৃত টাকা নিয়ে আতঙ্কিত হবেন না। সবাই তাদের আমানত করা টাকা ফেরত পাবেন। সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে।’
গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের অধীনে থাকা ব্যাংকগুলোসহ ১১টি ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা দিতো। কিন্তু তা স্থগিত করায় অনেক ব্যাংক এখন গ্রাহকদের নগদ টাকা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
ব্যাংক খাত সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্সের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে মুখপাত্র বলেন, ব্যাংকিং সংস্কার নিয়ে একটি টাস্কফোর্স কাজ করছে। জনবলের দক্ষতা বাড়াতে আরেকটি টাস্কফোর্স কাজ করছে। তৃতীয় টাস্কফোর্স পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে কাজ করছে। টাস্কফোর্সে বিভিন্ন দেশ থেকে আইনজীবী ও পরামর্শক নিয়োগের কাজ চলছে।
বর্তমান গভর্নরের মেয়াদে তিন দফায় নীতি সুদহার বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়িয়েছে বলেই এখন মূল্যস্ফীতি কমেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে নয় দশমিক ৯২ শতাংশ, যা আগস্টে ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আগামী ছয় মাস এই পতনের ধারা অব্যাহত থাকলে তা ছয় শতাংশে নেমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম নভেম্বর মাসেও প্রায় একই রয়েছে। কেজিতে কমেছে ৭ পয়সা। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে এই নতুন দাম কার্যকর হয়েছে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) হিসাবে, নভেম্বর মাসে প্রতি কেজি এলপিজির দাম ১২১ টাকা ৩২ পয়সা থেকে কমে ১২১ টাকা ২৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিইআরসি নতুন দাম ঘোষণা করে বলেছে, ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কমানো হয়েছে এক টাকা।
একজন খুচরা গ্রাহক এখন ১২ কেজির সিলিন্ডার এক হাজার ৪৫৫ টাকায় (ভ্যাটসহ) কিনতে পারবেন, যা আগে ছিল এক হাজার ৪৫৬ টাকা।
মঙ্গলবার ঢাকায় নিজস্ব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসি জানায়, অন্যান্য আকারের এলপিজি সিলিন্ডারের দাম সাড়ে পাঁচ কেজি থেকে কমিয়ে ৪৫ কেজি পর্যন্ত একই হারে কমবে।
বিইআরসির কর্মকর্তারা জানান, দেশের এলপিজি অপারেটররা সাধারণত সৌদি সিপির ভিত্তিতে মধ্যপ্রাচ্যের বাজার থেকে তাদের পণ্য আমদানি করে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম উঠা-নামা না করায় স্থানীয় বাজারে এলপিজির দাম অপরিবর্তিতই থাকছে।
বিইআরসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অটো গ্যাসের (মোটরযানে ব্যবহৃত এলপিজি) দাম আগের ৬৬ টাকা ৮৪ পয়সা থেকে কমে ৬৬ টাকা ৮১ পয়সা (ভ্যাটসহ) হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এলপি গ্যাস কোম্পানির বাজারজাত করা স্থানীয় এলপিজির দাম একই থাকবে। এর মার্কেট শেয়ার ৫ শতাংশের কম।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয় বাজারে এলপিজি ১২ কেজি সিলিন্ডারের সর্বোচ্চ দাম ছিল এক হাজার ৪৯৮ টাকা।
আরও পড়ুন:বকেয়া ঋণের টাকা আদায়ে এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি নিলামে তুলছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। এস আলম গ্রুপের কাছে পাওনা এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য জনতা ব্যাংক গ্রুপটির অন্যতম সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেডের জামানত সম্পত্তি নিলাম করার ঘোষণা দিয়েছে।
গত ১ নভেম্বর জনতা ব্যাংক পত্রিকায় নিলাম সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ২০ নভেম্বর নিলামের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তথ্য অনুযায়ী, এই ঋণের বিপরীতে বন্ধক রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম ও গাজীপুরে এস আলম গ্রুপের ১৮৬০ শতাংশ জমি, যার বাজারমূল্য সর্বোচ্চ ৩৫৮ কোটি টাকা। এই দাম পাওনা টাকার এক পঞ্চমাংশেরও কম। ফলে এই সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করেও খেলাপি ঋণ পুরোপুরি আদায় করা সম্ভব নয়।
বকেয়া বাকি টাকা আদায়ে আরও আইনি পদক্ষেপের প্রয়োজন হতে পারে। অর্থঋণ আদালত আইনের ১২(৩) ধারা অনুযায়ী, ব্যাংক মামলা করার আগেই জামানতের সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা আদায় সম্ভব।
দেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) ২০২১ সালের এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিকা না মেনে ঋণসীমা অতিক্রম করে অতিরিক্ত ঋণ নিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ সালে সাধারণ বিমা ভবনে অবস্থিত জনতা ব্যাংকের চট্টগ্রাম করপোরেট শাখা থেকে গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন প্রাথমিকভাবে ৬৫০ কোটি টাকা ঋণ নেয়। এই ঋণ ২০২১ সাল পর্যন্ত সুদ-আসলে মোট এক হাজার ৭০ কোটি ৬৫ লাখ টাকায় পৌঁছেছে।
এর মধ্যে ৬১৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা পিএডি (পেমেন্ট এগেইনস্ট ডকুমেন্ট), ২২৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা এলটিআর (ট্রাস্ট রিসিপ্ট) ঋণ এবং ২২৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা সিসি হাইপো ঋণ। সুদ-আসল মিলিয়ে ঋণের পরিমাণ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য