শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে তীব্র আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৩ বছরে শিক্ষার্থী আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন পাঁচজন উপাচার্য। এমন পরিস্থিতিতে উপাচার্য নিয়োগে সরকারকে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন শিক্ষাবিদরা।
তারা বলছেন, উপাচার্য নিয়োগে সার্চ কমিটি অথবা বিশেষজ্ঞ প্যানেল করা যেতে পারে। তারা যাচাই-বাছাই করে যোগ্য ব্যক্তিদের উপাচার্য নিয়োগের সুপারিশ করবে। নিয়োগপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতের পরামর্শও দিচ্ছেন শিক্ষাবিদরা।
২০০৯ সালে পদত্যাগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম এ ফায়েজ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শরীফ এনামুল কবির পদত্যাগ করেন ২০১২ সালে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক উপাচার্য মো. আনোয়ার হোসেনও পদ ছাড়তে বাধ্য হন ২০১৪ সালে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিন আহমেদ ২০১৯ সালে এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম ইমামুল হক একই বছর পদত্যাগ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার যোগ্য লোককে যোগ্য জায়গায় বসাতে পারছে না বলেই উপাচার্যদের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।’
তার মতে, ‘আচার্য মানেই হচ্ছেন প্রভূত জ্ঞানের অধিকারী। উপাচার্যরা তার সমগোত্রীয়। তাই উপাচার্য নিয়োগ যাচ্ছেতাইভাবে হতে পারে না।’
এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘সার্চ কমিটির মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে। এ রীতি আমাদের পাশের দেশ ভারতেই আছে। এ পদ্ধতি অবলম্বন করলে যোগ্য ব্যক্তিরা সঠিক জায়গায় অধিষ্ঠিত হবেন।’
একই ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘পদের মোহে অনেকেই উপাচার্য পদে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছেন, যা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য সুখকর নয়। এ জন্য উপাচার্য নিয়োগপ্রক্রিয়া খুব স্বচ্ছ হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ প্যানেল করা যেতে পারে। তারা দেখে উপাচার্য নিয়োগের সুপারিশ করবে।
উপাচার্য হিসেবে যারা নিয়োগ পান তাদের মেয়াদ একবারের বেশি হওয়া উচিত নয় বলেও মনে করছেন অধ্যাপক মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘তা না হলে যারা উপাচার্য পদে নিয়োগ পেতে ব্যর্থ হন তারা বিভিন্ন ঘটনায় ইন্ধন জোগান।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে অযাচিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েকটি কারণে উপাচার্যদের বিরুদ্ধে নানা সময়ে অভিযোগ ওঠে। এর মূলে রয়েছে অযাচিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় উপাচার্য ও শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে। এগুলো ক্ষতি করেছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে।’
তার মতে, ‘বিভিন্ন কারণে উপাচার্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। এর পেছনে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্ররাজনীতি। এ ছাড়া বড় বড় কাজের টেন্ডার তো রয়েছেই। কারও (উপাচার্য) বিরুদ্ধে সত্যিকার অর্থে অভিযোগ উঠলে ইউজিসি দেশের গণমান্য শিক্ষাবিদদের নিয়ে একটা প্যানেল করতে পারে। সেই প্যানেল অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থার সুপারিশ করবে।’
উপাচার্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠা ‘অস্বাভাবিক নয়’ বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উপাচার্যদের বিরুদ্ধে অনেক ধরনের অভিযোগ উঠতেই পারে। তবে সব অভিযোগ সত্য নয়। অভিযোগগুলোর মধ্যে দুটি গুরুতর। একটি হচ্ছে নৈতিক স্খলন, আরেকটি দুর্নীতি। এর একটিও যদি কারও বিরুদ্ধে ওঠে, অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে তা তদন্ত করতে হবে। যা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি করে থাকে। তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান আন্দোলনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘সেখানে কিন্তু ফরিদের (শাবি উপাচার্য) বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন বা আর্থিক দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নেই। অদক্ষতা বা অযোগ্যতা সেগুলো অন্য বিষয়। তারপরও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে।’
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতার অন্যতম কারণ আঞ্চলিকতা বলে মনে করছেন সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান (এন আই খান)।
তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকাল ছেলেমেয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছে। নিয়োগ পেয়েই তারা একটি বলয় সৃষ্টি করে। আমেরিকায় কিন্তু যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আপনি পাস করবেন সেখানে প্রথমে শিক্ষক হওয়া যায় না। প্রথমে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে হবে। এরপর সেখানে শিক্ষকতায় নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে সে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে সেখানে নিয়োগের সুযোগ পাবে। এ জন্য আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেন ভারসাম্য থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে।’
উপাচার্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে ত্বরিত ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করেন এই সাবেক শিক্ষাসচিব।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে আছে, প্রশাসনে যারা থাকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে ন্যায়-অন্যায় যা-ই হোক তাদের সরিয়ে দিতে হবে। এটাই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। যারা উপাচার্য তারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। তাই পদ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেন কলুষিত না হয় সে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক মনে করছেন, কোনো উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে নৈতিক অবস্থান থেকে সে বিষয়ে তার নিজেরই পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উপাচার্যের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে বিশ্ববিদ্যালয়-কাঠামোর মধ্যেই এর সমাধান আছে। যেমন, সিনেট ও সিন্ডিকেট। এ দুটোতেই সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য। তাই উপাচার্যরা যখন দেখবেন তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এসেছে, তখন তিনি নৈতিক অবস্থান থেকে সেখানে আর সভাপতিত্ব করবেন না।
‘তা যদি তিনি না করেন তাহলে উচিত ইউজিসিতে অভিযোগগুলো তদন্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ যাওয়া। এটাই নিয়ম ও বিধিবিধান। এ ছাড়া উপাচার্য স্বপ্রণোদিত হয়েও ইউজিসিকে তদন্তের অনুরোধ করতে পারেন।’
অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘আমি মনে করি নৈতিক অবস্থান থেকে উপাচার্যদের উচিত তার বিষয়ে যে অভিযোগগুলো এসেছে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইউজিসি গঠন করেছিলেন যাতে শিক্ষকদের ওপর অন্যরা কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করতে পারে। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন শিক্ষকদের স্বশাসনের ওপর।’
উপাচার্য নিয়োগে আরও সতর্ক হতে সরকারকে পরামর্শ দেন এই শিক্ষাবিদ।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ জন্য আমি মনে করি নিয়োগপ্রক্রিয়ায় আরও সতর্ক হতে হবে।’
আরও পড়ুন:দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যে অচলাবস্থা চলছে, শিগগিরই সে সমস্যার সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার।
মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে অচলাবস্থা চলছে, তা দুঃখজনক। এজন্য মন্ত্রণালয়ও উদ্বিগ্ন। তবে আলোচনা করেই এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। শিগগিরই এসব ঘটনার সমাধান হবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ফলে শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতি কারও কাম্য নয়। তবে সবকিছু আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে।
চলমান সমস্যাগুলো দ্রুততম সময়ে সমাধান করা হবে এবং এক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলেও আশ্বস্ত করেন উপদেষ্টা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আজ মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) থেকে বৈধ শিক্ষার্থী ব্যতিত কোন বহিরাগত বা অতিথি অবস্থান করতে পারবে না।
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর চীফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য আজ এক বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশনা প্রত্যাখান করে এবার ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সংবাদ সম্মেলনে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে সকালে বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কে আর মার্কেটে এসে জড়ো হন। এসময় শিক্ষার্থীরা 'রাজপথ ছাড়ি নাই', 'রাজপথ ছাড়বো না', 'প্রশাসনের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে'সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।
শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত ৬ দফা দাবি হলো-
১. অবৈধভাবে হল ভ্যাকেন্টের নির্দেশনা দুপুর ২ টার মধ্যে প্রত্যাহার করে আদেশ তুলে নিতে হবে।
২. হলগুলোতে চলমান সব ধরনের সুবিধা নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে হবে।
৩. এই প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপর শিক্ষকদের মদদে বহিরাগত দিয়ে হামলার দায়ে প্রক্টোরিয়াল বডিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে।
৪. বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দ্বারা ককটেল বিস্ফোরণ, লাইব্রেরি ও স্থাপনা ভাঙচুর এবং দেশীয় অস্ত্র দ্বারা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা এবং নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তার ঘটনার জন্য উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
৫. হামলার সাথে জড়িত শিক্ষকবৃন্দ: কৃষি অনুষদের আসাদুজ্জামান সরকার স্যার, তোফাজ্জল স্যার, শরীফ আর রাফি স্যার, কামরুজ্জামান স্যার, পশুপালন অনুষদের বজলুর রহমান মোল্যা স্যার, জেনেটিক্সের মুনির স্যার, ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের আশিকুর রহমান স্যার এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. গত ১ মাস ধরে চলমান যে একক কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলন করে আসছি, সেই একক ডিগ্রি অবিলম্বে প্রদান করতে হবে। তিনটি ভিন্ন ডিগ্রি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
শিক্ষার্থীরা জানায়, এই ছয় দফা দাবি দ্রুত মেনে না নিলে পুরো বাকৃবি লকডাউন এবং ব্ল্যাকআউট করে দেয়া হবে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি, তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ছি না।
তিন দফা দাবিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) গতকাল রোববার তৃতীয় দিনের মতো ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালিত হলেও রাতে তা প্রত্যাহার করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এর আগে বুয়েটে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। দাবি আদায়ে নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ওয়ালি উল্লাহ গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। তবে নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি চলবে।’ এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।
এর আগে বুধবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে দেশের সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম প্রকৌশল অধিকার আন্দোলন।
রোববার বুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায়, কোথাও ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। বিভাগগুলোতে কোনো শিক্ষার্থী আসেননি। পুরো ক্যাম্পাস কার্যত ফাঁকা। তবে প্রশাসনিক ভবনসহ অফিসগুলো খোলা। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস করেছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো– নবম গ্রেড সহকারী প্রকৌশলী পদে কেবল পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ ও ন্যূনতম যোগ্যতা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার করা। দশম গ্রেডে শুধু ডিপ্লোমাধারীরা আবেদন করতে পারেন, সেখানে যেন উচ্চ ডিগ্রিধারীরাও আবেদন করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা। শুধু বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং যারা সম্পন্ন করবেন, তারাই যেন প্রকৌশলী (ইঞ্জিনিয়ার) লিখতে পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া।
তিন দফা দাবিতে গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় তাদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়। ব্যবহার করা হয় জলকামান। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটার ঘটনাও ঘটে। এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হন।
প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারী ব্যক্তিদের পেশাগত দাবির যৌক্তিকতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে।
কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগতদের হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্তে হল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। সকাল ৯ টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে দেখা যায়। ক্যাম্পাসে মোতায়েন রয়েছে র্যাব, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি।
তবে হল যারা ছাড়ছেন তারা বেশিরভাগই ছাত্রী। ছেলেদের হল ঘুরে দেখা যায়, তারা হল ছাড়ার বিপক্ষে।
এসময় জুলাই ৩৬ হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের পরীক্ষা চলছিল। হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হবো। নিরাপত্তা সংকটে বাধ্য হয়েই হল ছাড়তে হচ্ছে, তবে আমরা চাই দ্রুতই স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসুক এবং আবার পড়াশোনা শুরু করতে পারি।”
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল পরবর্তী উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রাত সাড়ে ৯ ঘটিকায় অনলাইনে অনুষ্ঠিত জরুরী সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং সকল ছাত্র-ছাত্রীদের (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯ টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন ও শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসজুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
গতকাল (৩১ আগস্ট) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পরপরই বাকৃবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক, সদস্য সচিব এবং যুগ্ম আহ্বায়ক পৃথকভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ জানান।
ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. আতিকুর রহমান তার নিজস্ব ফেসবুক প্রোফাইলে লেখেন, ‘তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ষড়যন্ত্রের হয়নি শেষ, সজাগ থাকো বাংলাদেশ।’
সদস্য সচিব মো. শফিকুল ইসলাম লেখেন, ‘বহিরাগতদের হামলা এই ক্যাম্পাসে মানবো না। ১৯শে সেপ্টেম্বর বিসিএস প্রিলি পরীক্ষা। প্রিলি পরীক্ষার্থীরা হল ছেড়ে যাবে কোথায়? ছেলে–পেলেদের কিছু করে খেতে দেন।’
এ ছাড়া শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো. তরিকুল ইসলাম তুষার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ধিক্কার জানাই এই প্রশাসনকে। অযোগ্য ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগ চাই।’
এদিকে, আজ (সোমবার) সকালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বাকৃবি শাখাও এক বিবৃতিতে এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। বহিরাগতদের বর্বরোচিত হামলা এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস ও হল বন্ধের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সংগঠনটি।
বিবৃতিতে সংগঠনটির নেতারা বলেন, বহিরাগতদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে আশ্রয় নিলেও সেখানে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। নারী শিক্ষার্থী হেনস্তাসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজন ময়মনসিংহের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ওপর এ ধরনের ন্যাক্কারজনক হামলা নিন্দনীয় ও অনভিপ্রেত। এই ঘটনার জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস ও হল বন্ধ ঘোষণা শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ অনাকাঙ্ক্ষিত ও অযৌক্তিক।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, যা প্রবল আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়াও, গতকাল (রোববার) মধ্যরাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলার বিচার, ক্যাম্পাস বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির দাবিতে বিবৃতি দিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বাকৃবি শাখার নেতারা।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা সন্ত্রাস–দখলদারিত্বমুক্ত গণতান্ত্রিক শিক্ষা অঙ্গন। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা সে আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী। শত শহীদের রক্তের অর্জনকে এভাবে ভূলুণ্ঠিত হতে দেওয়া হবে না।
তারা আরও বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই অবিলম্বে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন, ক্যাম্পাস বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন, ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তাদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনুন।
তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষায় বাস্তব অভিজ্ঞতার গুরুত্বকে সামনে রেখে সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি)-এর কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে একটি বিশেষ আইটি কর্মশালার আয়োজন করেছে দেশের অন্যতম বিকাশমান আইটি কোম্পানি ‘সার্ভিসিং২৪’।
সার্ভার, স্টোরেজ, আইটি হার্ডওয়্যার, সাইবার সিকিউরিটি ও নেটওয়ার্কিং এই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিখাত নিয়ে অনুষ্ঠিত ওয়ার্কশপটিতে সহযোগী আয়োজক হিসেবে ছিল ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক-এর সাইবার সিকিউরিটি ক্লাব-সিএসই।
এই কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে সার্ভিসিং২৪-এর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) নাসির ফিরোজ বলেন, “বর্তমান যুগে বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সার্ভিসিং২৪ এদেশের তরুণদের যুগোপযোগী আইটি দক্ষতায় দক্ষ করে তুলতে বদ্ধপরিকর। আমরা বিশ্বাস করি- এ ধরনের ওয়ার্কশপ শিক্ষার্থীদের দেশে ও বিদেশে আইটি সেক্টরে অবদান রাখতে এবং তাদের ক্যারিয়ার গড়তে সাহায্য করবে।”
ওয়ার্কশপে সার্ভিসিং২৪-এর অভিজ্ঞ টেকনিক্যাল টিম শিক্ষার্থীদের সামনে আধুনিক সার্ভার প্রযুক্তি, স্টোরেজ সলিউশন এবং নেটওয়ার্কিংয়ের বিভিন্ন দিক হাতে-কলমে উপস্থাপন করে। পাশাপাশি সাইবার সিকিউরিটির সমসাময়িক বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। শিক্ষার্থীরা এই আয়োজনের মাধ্যমে শুধু প্রযুক্তিগত দিকই নয়, বরং আইটি ক্যারিয়ার গঠনে প্রয়োজনীয় দক্ষতা, পরিকল্পনা এবং সঠিক দিক নির্ধারণ সম্পর্কেও দিকনির্দেশনা পান।
ওয়ার্কশপ শেষে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে একটি কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এবং সনদপত্র সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে ইউএপি-এর সিএসই বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ সার্ভিসিং২৪-এর এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
‘সার্ভিসিং২৪’ সম্পর্কে: ‘সার্ভিসিং২৪’ বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধমান, আইএসও-সার্টিফাইড এবং সাসটেইনেবিলিটি গুরুত্বারোপ করা একটি আইটি সার্ভিসেস ও টিপিএম প্রোভাইডার। কোম্পানিটি ২০২৩ সাল থেকে টেকসই পদ্ধতিতে ও আস্থার সঙ্গে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইটি সেবা দিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে ‘সার্ভিসিং২৪’ এর গ্রাহক সন্তুষ্টির হার ৯৯ শতাংশ। কোম্পানিটি পরিবেশবান্ধব উপায়ে দেশের আইটি খাতের টেকসই উন্নয়নে অগ্রগণ্য ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
মন্তব্য