বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরুর কথা উঠলেই আসে সাভারের শিকড় অ্যাগ্রোর রানির নাম। খর্বাকৃতির গরুটি বাংলাদেশ তো বটেই জায়গা করে নেয় বিশ্ব মিডিয়ায়ও। শেষ পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে মারা যায় রানি। মৃত্যুর পর গিনেস বুকে বিশ্বের সবচেয়ে খর্বাকৃতি গরুর স্বীকৃতি পায় এটি।
রানির এই জায়গা এবার পেতে যাচ্ছে শিকড় অ্যাগ্রোরই আরেকটি গরু, নাম চারু। চূড়ান্ত ঘোষণার আগে গরুর মালিকের কাছে প্রয়োজনীয় নথি চেয়েছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস।
সাভারের আশুলিয়ার চারিগ্রাম এলাকায় শিকড় অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সুফিয়ান বুধবার সকালে নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর শিকড় অ্যাগ্রো থেকে চারুর বিষয়ে গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছে ইমেইলের মাধ্যমে আবেদন করা হয়েছিল। তারা চারুকে এই স্বীকৃতি দেয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। তবে এর আগে গিনেস কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কিছু নথি চেয়েছে।
খামার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চারু নামের গরুটির জন্ম ২০১৯ সালের জুলাই মাসে। সে হিসেবে তার বয়স আড়াই বছর। চারুর এখন চার দাঁত। উচ্চতা ২৩.৫০ ইঞ্চি, লম্বা ২৭ ইঞ্চি ও ওজন ৩৯ কেজি।
২০২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর গিনেস বুকে মৃত গরু হিসেবে রেকর্ড গড়া রানির উচ্চতা ছিল ২০ ইঞ্চি, লম্বা ২৪ ইঞ্চি ও ওজন ২৬ কেজি।
শিকড় অ্যাগ্রো খামারে গিয়ে দেখা মেলে চারু নামের গরুটির। হেলে দুলে পুরো খামারে হেঁটে বেড়াচ্ছে এটি। খামারটিতে আরও বেশ কয়েকটি ভুট্টি জাতের ছোট গরু থাকলেও চারু কিছুটা আলাদা। লালচে রঙের চারুর কান দুটো খাড়া, পা দুটো খাটো ও মোটা।
খুব দ্রুত সময় লেজ নাড়তে নাড়তে আয়েশ করে খাবার খায় চারু। পুরো খামারজুড়েই ঘাস, পাতা এসব খেতে বেশ ব্যস্ত। ছবি তুলতে গেলে ফিরিয়ে নেয় মুখ, ফিরে যায় ক্যামেরার উল্টো দিকে।
চারুকে দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা খামারের কর্মচারী মো. মামুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের শিকড় অ্যাগ্রো ইন্ড্রাস্ট্রিজ খামারে অনেক রকমের পশু-পাখি পালন করি। রানি মারা যাওয়ার পর প্রায় এক বছর আগে চারুকে আমরা সিলেট থেকে সংগ্রহ করেছি। যেভাবে রানিকে সংগ্রহ করা হয়েছে সেভাবেই চারুকে আনা হয়েছে।
‘যেহেতু আমাদের রানি মারা গেছে, তাই চারুর প্রতি একটু বেশি যত্ন নেই। স্যাররা এখানে আসার পর ওর নাম চারু দিয়েছে। গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী একাধিকবার চারুর মাপের ছবি এবং ভিডিও পাঠানো হয়েছে।’
চারুর চলাফেরার ধরন নিয়ে খামারের আরেক কর্মচারী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে অনেক ধরনের গরু আছে। তবে চারুর চলাফেরা, খাওয়া, ঘুমানো সবার চেয়ে একটু ভিন্ন টাইপের। দেখা যায়, ছবি তুলতে চাইলে ও একটু অন্য টাইপের হয়ে যায়। মুখটা ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে, পেছন দিকে দৌড়াতে থাকে। আকারে ছোট আর পাগুলো গোছাগোছা মোটা। কানগুলো খরগোশের মতো।
‘রানি ছিল আমাদের অমূল্য সম্পদ। রানির চেয়ে চারু একটু পিছিয়েই। যেহেতু একবার রানিকে নিয়ে আমাদের একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গেছে। এজন্য ওই দিক থেকে সতর্ক থেকে চারুকে আমরা একটু বেশি কেয়ারিং থাকি। চলাফেরা, খাওয়া, ঘুমানো সব দিক থেকে সতর্ক থাকি। আর সব গরুর মতই চারু ঘাস, খর, দানাদার খাবার খায়। অন্যান্য গরু, ছাগল সবার সঙ্গে মিলে চারু খাবার খায়।’
শিকড় অ্যাগ্রোর পশু চিকিৎসক প্রতি দু সপ্তাহ পরপর চারুকে দেখতে আসেন এবং চারুর ওজন, শরীর চকচকে আছে কি না, গঠন বাড়ছে কি না এসব দেখে যান।
খামারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও কাজী সুফিয়ানের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। এই খামারি চারুকে নিয়ে যেমন উচ্ছ্বসিত এই সৌখিন খামারি, তেমনি রানির কথা মনে করে বাকরুদ্ধ হয় পড়েন। রানির সঙ্গে কোনো গরুকেই তুলনা করতে রাজি নন তিনি। তার মতে শিকড় খামারে রানি ছিল একটি সিগনেচার!
সুফিয়ান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট গরু হিসেবে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে স্থান করে নেয় আমাদের শিকড় অ্যাগ্রোর রানি। পরম করুণাময়ের ইচ্ছাতেই অফিশিয়ালি বিশ্বরেকর্ডে নাম লেখাবার আগেই আমাদের সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে রানি মারা যায়। পরবর্তীতে, রানির দেহাবশেষ বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন অ্যান্ড মিউজিয়াম ডেভলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ অফ বাংলাদেশে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
ওই খামারি আরও বলেন, ‘অল্প কদিনেই রানির উল্লেখযোগ্য ভক্ত তৈরি হয়ে গেছিল। আর তাই বেশির ভাগ মানুষই রানির মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি। আমরা অনেক টাকায় বিক্রির অফার পেয়েও কেন বিক্রি করিনি সেটা নিয়েও অনেকে বিদ্রূপ করেছেন। কেউ কেউ আমাদের গাফেলতির কথা বলে আমাদের বকাও দিয়েছেন। ঐ সময়টায় ভীষণ খারাপ লাগলেও আমরা দাঁতে দাঁত চেপে পরিস্থিতি মেনে নিয়েছিলাম। আসলে রানির প্রতি সবার ভালবাসাটা আমরা বুঝতাম।’
সুফিয়ান বলেন, ‘রানির মৃত্যুর পর গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ শোক প্রকাশ করে আমাদের ই-মেইল পাঠান। তারা জানান, রানির সম্মানার্থে পৃথিবীর সবচেয়ে জীবিত ছোট গরু হিসেবে আরও একটা ক্যাটাগরি তারা চালু করবেন এবং আমাদের কাছে কমপিট করার মতন কিছু থাকলে চাইলে এতে অংশগ্রহণ করতে পারি।’
রানির পর চারুকে কীভাবে খুঁজে পেলেন সে প্রসঙ্গও তুলে ধরেন শিকড় অ্যাগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও। তিনি বলেন, ‘যারা শিকড় অ্যাগ্রো সম্পর্কে জানেন, তারা নিশ্চয়ই জানেন, আমাদের সুদক্ষ এবং নির্ভরশীল কর্মীবাহিনী প্রতিদিনই দেশের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ান। রানির জীবদ্দশায়ই আমাদের সংগ্রহশালায় নতুন চমক যোগ হয় ৪ দাঁতের প্রাপ্তবয়স্ক দেশীয় প্রজাতির বামন গরু চারু। এটিকে বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে জীবিত ছোট গরু হিসেবে গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ স্বীকৃতি দিয়েছে।’
চারুকে নিয়ে পরিকল্পণার বিষয়ে সুফিয়ান বলেন, ‘আমাদের ইচ্ছে ছিল বিশ্বরেকর্ডধারী রানিকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে উপহার হিসেবে দেয়া। যেন সরকারের তত্ত্বাবধানে রানি তার জীবনের সর্বোচ্চ সময়টা উপভোগ করতে পারে। কিন্তু রানি অকালে চলে যাওয়ায় সে সুযোগটা আর আমরা পাইনি। এদিকে চারুর বিশ্ব রেকর্ডে স্থান করার আবেদনের শুরু থেকেই আমরা সঙ্গত কারণেই চরম গোপনীয়তা বজায় রেখেছি।
‘বিশ্বরেকর্ডধারী চারু যেন জীবনের সর্বোচ্চ সময়টা উপভোগ করতে পারে এটা আমাদের একান্তই প্রার্থনা। আর তাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কাছে উপহার হিসেবে চারুকে তুলে দিয়ে চারুর জীবনের সর্বোচ্চ সময়টা উপভোগ করার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য বাঙ্গালি জাতিকে শিকড় অ্যাগ্রোর পক্ষ থেকে এটি উপহার দিতে চাই।’
আরও পড়ুন:মালদ্বীপে বসবাসরত ‘আনডকুমেন্টেড’ বাংলাদেশিদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়েছে দেশটির সরকার।
বাংলাদেশের অনুরোধে প্রায় লক্ষাধিক বাংলাদেশি এই সুযোগ পাবেন। সুযোগটি নেয়ার জন্য আনডকুমেন্টেড বাংলাদেশিদের অনুরোধ করেছে মালের বাংলাদেশ দূতাবাস।
শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এই অনুরোধ জানায় দূতাবাস।
এতে বলা হয়, ‘মালদ্বীপে বসবাসরত আনডকুমেন্টেড প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, ইকনোমিক ডেভেলপমেন্ট মিনিস্ট্রির আওতায় বৈধকরণ প্রক্রিয়া বর্তমানে চালু রয়েছে।’
‘যাদের বৈধ ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট নাই তাদেরকে দ্রুত ভিসা/ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করে মালদ্বীপে বৈধভাবে কাজ করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। বৈধকরণ প্রক্রিয়ার সুযোগে যদি কেউ বৈধ ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ না করেন, তবে তার বিরুদ্ধে মালদ্বীপের আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানা গেছে।’
দূতাবাস সে কারণে শাস্তি এড়াতে আনডকুমেন্টেড প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জরুরি ভিত্তিতে বৈধকরণ প্রক্রিয়ায় ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করার জন্য অনুরোধ করেছে।
বৈধকরণের জন্য যে শ্রমিক যেখানে কাজ করছেন সে মালিককে ইকনোমিক ডেভেলপমেন্ট মিনিস্ট্রিতে আবেদন করতে হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
এ বিষয়ে কোন তথ্য প্রয়োজন হলে অফিস সময়ে ইকনোমিক ডেভেলপমেন্ট মিনিস্ট্রি (ফোন ১৫০০) (ইমেইল [email protected]) বা বাংলাদেশ হাইকমিশনে (ফোন ৩৩২০৮৫৯) (Viber ৭৬১৬৬৩৬) যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করেছে দূতাবাস।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। এ দেশের নাগরিকদের সঙ্গে উগ্রবাদের সম্পর্ক নেই বলে মনে করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ।
শনিবার শরীয়তপুরে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
শরীয়তপুর পুলিশ লাইন্স মিলনায়তনে শনিবার দুপুরে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় আইজিপি বলেন, ‘উগ্রবাদ একটি বিজাতীয় সংস্কৃতি। বিদেশিরা এই সংস্কৃতির বিস্তার ঘটাতে চেয়েছিল এ দেশে। ৯০ শতাংশ মুসলিমের দেশকে জঙ্গিবাদের মোড়কে যদি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানানো যায়, তাহলে অস্ত্র ব্যবসা করতে ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে তাদের সুবিধা হয়।
‘বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া দেশ পরিচালনা করছেন তার সুযোগ্য কন্যা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শ ও দূরদর্শিতায় আমরা জঙ্গিবাদকে নিশ্চিহ্ন করতে পেরেছি। যদি আমরা উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে ব্যর্থ হতাম, তাহলে উন্নয়নের মহাসড়কে যেতে পারতাম না।’
বিদেশি চক্রান্তের কথা জানিয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশকে জঙ্গিদের আস্তানা হিসেবে প্রচার করতে চেয়েছিল পশ্চিমা বিশ্ব। এ দেশে আইএসএস ঘাঁটি গাড়ছে এমন তথ্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালায় তারা। অনেক দেশ বাংলাদেশকে অনিরাপদ বলে ঘোষণা দিয়ে তাদের লোকজনকে সরিয়ে নিচ্ছিল। কিন্তু সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এ দেশে বর্তমানে জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান ও শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুজ্জামান।
উগ্রবাদ প্রতিরোধে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ অন্যান্য অংশীজনের করণীয় শীর্ষক এ মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
সভায় মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসকসহ জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু ব্যবহারের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হতে আর কয়েক দিন বাকি। জুনের শেষ সপ্তাহের যেকোনো দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের এই সেতু উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ১৫ বছরের মধ্যেই পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় উঠে আসবে।
শনিবার দুপুরে শরীয়তপুর পুলিশ লাইন্সে উগ্রবাদ প্রতিরোধে মতবিনিমিয় সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
সচিব বলেন, জুনের শেষ সপ্তাহের মধ্যে পদ্মা সেতু ব্যবহারের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হবে। শেষ সপ্তাহের যেকোনো দিন প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক করবেন। পদ্মা সেতু চালু হলে প্রথম দিকে দেশের জিডিপি ১ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধির কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে জিডিপি ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, ২৫ বছর লাগবে না, ১৫ বছরের মধ্যেই পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় উঠে আসবে।
বিশ্বের সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে উল্লেখ করে সচিব বলেন, রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে পদ্মা সেতু যানবাহন বোঝাই অবস্থায় থাকলেও কোনো ক্ষতি হবে না। এমনকি পাঁচ হাজার টন ধারণক্ষমতার জাহাজের ধাক্কায়ও পদ্মা সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও মুন্সীগঞ্জের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও পদ্মা সেতু করতে সহযোগিতা করেছেন এই এলাকার মানুষ।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ও দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন সরকারের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, বিশ্বে চলমান অর্থনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলায় সবাইকে মিতব্যয়ী হতে হবে। এক দিনের তেল, গ্যাস দিয়ে দুই দিন রান্না করতে হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনিতিতে মন্দা তৈরি হয়েছে। এখন থেকেই আমাদের সতর্ক হতে হবে এবং দেশবাসীকে বিষয়টি বোঝতে হবে। এই পরিস্থিতিতে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট দিয়ে চলতে হবে। নয়তো বিপদে পড়তে হবে।
সচিব বলেন, ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায় শিগগিরই তেলের ঘাটতি পূরণ হবে এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের আয়োজনে উগ্রবাদবিরোধী মতবিনিময় সভায় যোগ দিতে বেলা ১১টায় আকাশপথে ঢাকা থেকে শরীয়তপুর যান মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকতার হোসেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ, র্যাবপ্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ ও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান।
আরও পড়ুন:ভর্তুকি দিয়ে হলেও বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো অবিলম্বে চালুর দাবি জানিয়েছে পাটকল চিনিকল রক্ষায় শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদ।
রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে শনিবার এক সেমিনারে এ দাবি জানান সংগঠনের নেতারা।
সেমিনারে বলা হয়, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে চিনি একটি কৌশলগত খাদ্যপণ্য। বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে এর সরাসরি সম্পর্ক। ফলে দাম এবং সরবরাহের ক্ষেত্রে সব সময় একটা অনিশ্চয়তা কাজ করে। এ থেকে স্বস্তি পেতে সাময়িক লোকসান হলেও ভর্তুকি দিয়ে এসব চিনিকলগুলো বাঁচিয়ে রাখা জরুরি।
একই সঙ্গে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে এর ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা, লোকসান কমানো এবং জনস্বার্থ বিবেচনায় এর বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটেই এ বিষয়ে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চান তারা। সেটি না করা হলে দেশের ১৭ কোটি ভোক্তাকে এর চরম খেসারত দিতে হবে বলেও দাবি করেন তারা।
সেমিনারে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের রাজেকুজ্জামান রতন ও বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম।
সেমিনারে ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেল ও গমের পর চিনির বাজারেও অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
বক্তারা বলেন, ২০২০ সালের শেষ দিকে দেশের ১৫টি রাষ্ট্রীয় চিনিকলের মধ্যে ছয়টি রাষ্ট্রীয় চিনিকল বন্ধের ঘোষণা আসে। ২০২০-এর মাড়াই মৌসুমের পাবনা চিনিকল, কুষ্টিয়া চিনিকল, রংপুর চিনিকল, পঞ্চগড় চিনিকল, শ্যামপুর চিনিকল, সেতাবগঞ্জ চিনিকলের আখ মাড়াই বন্ধ করে উৎপাদিত চিনি পার্শ্ববর্তী চিনিকলগুলোয় মাড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বন্ধ হওয়ার পর থেকে দুটি মাড়াই মৌসুম চলে গেল। এ বছরের নভেম্বরে তৃতীয় মাড়াই মৌসুম শুরু হবে।
এরই মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন আগ্রাসন শুরুর পর বিশ্বজুড়ে তীব্র জ্বালানি সংকট শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে শুরু হয়েছে আসন্ন তীব্র খাদ্য সংকটের অশনিসংকেত। এ বছরের শুরু থেকে জ্বালানি তেলের মূল্য শুধু বাড়েনি, বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। দুটি বৃহৎ গম রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেন-রাশিয়ার গম উৎপাদন ও গুদামজাতকরণ হুমকির মুখে গমের দাম বেড়ে গেছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের চাহিদা বৃদ্ধি এবং মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ভারত গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে। এখন চিনির দাম বেড়ে গেলে চিনি রপ্তানিতে ভারত কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে না সে বিষয়েও কোনো নিশ্চয়তা নেই। ইতোমধ্যে সর্বোচ্চ চিনি উৎপাদনকারী দেশ ব্রাজিলের চিনিকলগুলো চিনি রপ্তানির চুক্তি বাতিল করে আখ থেকে ইথানল উৎপাদন করে রপ্তানি করতে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে সব ধরনের জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় আখ থেকে উৎপাদিত বায়োফুয়েলের চাহিদা বেড়েছে।
ফলে চিনির চেয়ে আখ থেকে ইথানল উৎপাদন অধিক লাভজনক হয়ে উঠছে। এ পরিস্থিতিতে চিনির বাজারে সংকট ঘনীভূত হবে এবং এ কারণে চিনির দাম বাড়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।
বক্তারা বলেন, ডলারের দাম বাড়ছে হু হু করে। ফলে চিনির মতো অপরিহার্য খাদ্য আমদানি আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। সবদিক থেকে চিনির দামের ওপর ঊর্ধ্বগতি চাপ শুধু এখন অপেক্ষার বিষয়।
সেমিনারে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে বলা হয়, চিনিকলগুলো বন্ধ রাখার পর দেশের চিনির উৎপাদন পরপর দুই বছর ৪১ শতাংশ ও ৫৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অথচ বৈশ্বিক এই অস্থির পরিস্থিতির মধ্যেও এ সময়ে ভারতে ৪০ ও ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ ভারতে চিনিশিল্পের বিকাশ ঘটলেও দেশের চিনিশিল্প মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না।
সেমিনার থেকে আগামী অর্থবছরের বাজেটে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সাত দফা সুপারিশ করা হয়।
১. বন্ধ করে দেয়ার ছয়টি মিল পুনরায় চালু করা।
২. চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী স্থগিত মিলগুলো পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে। মিলগুলো বসিয়ে না রেখে এবং যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে না দিয়ে অবিলম্বে মিলগুলো চালুর উদ্যোগ নেয়া।
৩. বকেয়া বেতন-ভাতা ১৩ কোটি ১১ লাখ টাকা, পিএফ বকেয়া ১১১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, গ্রাচুইটি বকেয়া ২৮৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা অবিলম্বে পরিশোধ করার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে।
৪. আখ ক্রয়ের জন্য ২৫ শতাংশ ভর্তুকি দিতে হবে।
৫. আখ চাষের জন্য ১৫টি চিনিকল সবগুলো চিনিকলসংলগ্ন এলাকায় আগের মতো ঋণ দিতে হবে।
৬. মিলগুলোর পুঞ্জিভূত ৩ হাজার ৮৫ কোটি টাকা মওকুফ করতে হবে।
৭. মিলগুলো পুনরায় চালুর পর সেগুলোকে কীভাবে লাভজনক করা যায়, তার সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে।
আরও পড়ুন:আসন্ন জাতীয় বাজেটে আয়করে মধ্যবিত্তদের স্বস্তি দেয়ার মতো কোনো খবর নেই। অন্তত আয়করের দিক থেকে। আসন্ন ২০২২-২৩ বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির আয়করে ছাড় দেয়ার ক্ষেত্রে নতুন কোনো ঘোষণা এখন পর্যন্ত নেই।
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণি করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা একই থাকতে পারে। আয়কর ধাপে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।
করোনা-পরবর্তী জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সীমিত আয়ের মানুষ কষ্টে আছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা বিদ্যমান ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় উন্নীত করার দাবি ওঠে ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকে ব্যক্তি করে ছাড় দেয়ার বিষয়ে কোনো প্রস্তাব করা হয়নি।
এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়, সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড় দেয়া হলে আয়কর আহরণের দিক থেকে অনেক ক্ষতি হবে।
এর চেয়ে কম ছাড় দেয়া হলে প্রান্তিক করদাতারা তেমন উপকৃত হবে না। যে কারণে ব্যক্তি করদাতার আয়করে ছাড়ের প্রস্তাবটি আগের মতোই অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে এনবিআর।
অর্থ মন্ত্রণালয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ না থাকলেও অর্থবিল পাসের দিন সংসদে কিছু সুবিধা দেয়ার কথা বলতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা অতিমারি শুরু হওয়ার পর অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বিরূপ প্রভাব পড়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে। এতে করে দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
তখনকার প্রেক্ষাপটে, সাধারণ মানুষের অবস্থা বিবেচনা করে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি করদাতার আয়ে ব্যাপক ছাড় দেয়া হয়।
ওই অর্থবছর বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ও যাতায়াত ভাতা বাদ দিয়ে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ টাকার পরিবর্তে বার্ষিক ৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর পর থেকে তা অপিরবর্তিত রাখা হয়।
করোনা নিয়ন্ত্রণে এলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালেও রাশিয়া-ইউক্রেন সাম্প্রতিক যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সবকিছুর দাম বেড়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বাড়ে।
বর্তমান বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণি করে আরও ছাড় দেয়ার জোরালো দাবি ওঠে।
গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, তাতে করমুক্ত আয়ের সীমা আরও বাড়ানো উচিত। তবে এটাও ঠিক, বাংলাদেশে অনেকেরই কর দেয়ার সামর্থ্য আছে । তাদের বেশির ভাগই এখনও করের নেটে নেই। যোগ্য সবাইকে করের আওতায় আনতে হবে।’
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এবারের বাজেটে ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা আগের মতো অর্থাৎ ৩ লাখ টাকা বহাল রাখা হয়েছে। ভারতে মোট জনসংখ্যার ৪ শতাংশ মানুষ আয়কর দেন। আর বাংলাদেশ মাত্র ১ শতাংশ লোক কর দেন।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেই ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা কয়েক বছরের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়, যাতে করদাতা আগাম তার হিসাব সহজেই করতে পারেন।
বাংলাদেশে জোট সরকারের আমলে একবার তিন বছরের জন্য করমুক্ত সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা বাতিল করা হয়।
জনসংখ্যা অনুপাতে বাংলাদেশে ব্যক্তি করদাতার সংখ্যা খুবই কম। অথচ কর দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে অনেকেরই।
এখন নিবন্ধিত বা টিআইএনধারীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ হলেও আয়কর রিটার্ন জমা দেন মাত্র ২৫ লাখ। এর মধ্যে কমপক্ষে তিন লাখ রিটার্ন আছে যাদের আয় শূন্য। তাদের কাছ থেকে কোনো কর পায় না সরকার। ফলে নিয়মিত রিটার্ন দিচ্ছেন মাত্র ২২ থেকে ২৩ লাখ।
আয় অনুযায়ী বাংলাদেশে কতজনের কর দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। এনবিআর এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো জরিপ করেনি।
তবে অর্থনীতিবিদসহ আয়কর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তিন-চার কোটি লোকের কর দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও তাই মনে করেন।
আয়কর আইনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার করদাতার রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আয় থাকুক আর না থাকুক, বার্ষিক রিটার্ন জমা দিতেই হবে। না দিলে প্রচলিত আইনে জরিমানার বিধান রয়েছে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের হজযাত্রীদের সেবা দিতে সৌদি আরব যাচ্ছেন ৫৩২ কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ তালিকায় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, চিকিৎসক থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা থাকছেন। এতে সরকারের খরচ হবে অন্তত ২৪ কোটি ৫৭ হাজার ৮৪ হাজার টাকা।
স্বাভাবিক সময়ে প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫ লাখ মুসল্লি পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পেয়ে থাকেন। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর সৌদি আরবের বাইরের কেউ হজ করার সুযোগ পাননি। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সৌদি সরকার এবার সারা বিশ্বের ১০ লাখ মানুষকে হজ পালনের অনুমতি দিচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে এ বছর সাড়ে ৫৭ হাজার মুসল্লি হজব্রত পালনে সৌদি আরবে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন চার হাজার মুসল্লি। বাকিরা যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়।
প্রতি বছরই হজ ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সৌদি আরবে পাঠানো হয়। এই দলে থাকেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, চিকিৎসকসহ নানা পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এ বছর কতজন কর্মকর্তা-কর্মচারী সৌদি আরব যাচ্ছেন জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে অনেকগুলো ক্যাটাগরি আছে। একটি হলো প্রতিনিধি দল। ১০ জনের এই দলে মন্ত্রী বা সচিবরা থাকতে পারেন। আমাদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বা অন্য সদস্যরাও থাকতে পারেন।
‘এ ছাড়া ৪০ জনের একটি প্রশাসনিক টিম আছে। এই টিমে সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব বা উপসচিবরা থাকেন। এ রকম প্রত্যেক সেক্টরেই কোটাভিত্তিক ভাগ করা আছে। যেমন ডাক্তার কতজন যাবেন বা নার্স কতজন যাবেন তাদের একটি কোটা আছে। এখানে সবই কোটাভিত্তিক ভাগ করা আছে। সব মিলিয়ে ৫৩২ জন যাবেন।
সৌদি সরকারই এই বিভাজনটা করে রেখেছে, আমাদের করা নয়। তারা পাঠিয়েছে, আমরা সেটা করার চেষ্টা করছি।’
এবার সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের জন্য দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ প্যাকেজটি হলো ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। আর সর্বনিম্নটি হলো ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ টাকা। সর্বনিম্ন প্যাকেজটি ধরে হিসাব করলেও যে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সৌদি আরব যাচ্ছেন তাদের পেছনে সরকারের খরচ হবে ২৪ কোটি ৫৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
চলতি হজ মৌসুমে বছরের প্রথম হজ ফ্লাইট ৩১ মে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা। শুরুর ফ্লাইটে ৪১৯ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে যাওয়ার কথা রয়েছে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অন্যান্য বছর হজ মৌসুমে হজযাত্রীদের সহায়তা করতে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ লোক সৌদি আরবে যেতেন। এবার যাচ্ছেন মাত্র ৫৩২ জন। বাংলাদেশ থেকে এবার হজে যাচ্ছেন অন্য সময়ের তুলনায় অর্ধেক। সে হিসাবে ৯০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী যাওয়ার কথা। সেখানে এবার যাচ্ছেন মাত্র ৫৩২ জন।’
হজযাত্রীরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থেকে তেমন কোনো সেবা পান না বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, ‘আমরা আলোচনা করেছি। বিগত সময়ে যারা গেছেন, আল্লাহর মেহমানদের সেবা করতেই গেছেন। সেবাদানে ত্রুটি করে থাকলে আল্লাহর কাছে তাদের দায়বদ্ধতা আছে; সরকারের কাছেও আছে। সেটা হয়তো সেভাবে দেখা হয়নি। এবার আমরা খুঁটিনাটি বিষয় আলোচনা করে অতীতের ভুলত্রুটির পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সে ব্যবস্থা করেছি।’
এবার হজ হতে পারে ৮ জুলাই (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে)। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ৫৭ হাজার হজযাত্রীর অর্ধেক করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। বাকি অর্ধেক বহন করবে সৌদি রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস ও ফ্লাই নাস।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান এ বছর ৭৫টি ডেডিকেটেড ফ্লাইটের মাধ্যমে ৩১ হাজার যাত্রী বহন করবে। যাত্রী পরিবহনে বিগত বছরগুলোর মতোই বহরে থাকা বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হবে।
আরও পড়ুন:আগামী সপ্তাহজুড়ে দেশে কালবৈশাখীর আশঙ্কা রয়েছে। এই সময়ে তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকলেও ২৮ মে’র পর থেকে আবারও বাড়তে শুরু করবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে শনিবার এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগামী এক সপ্তাহ সারা দেশেই কালবৈশাখী বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে চলতি মাসের ২৫ তারিখের পর বৃষ্টিপাত কমে আসবে। আর সার্বিকভাবে ২৮ তারিখের পর তাপমাত্রা আবার বাড়তে শুরু করবে।’
শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের দক্ষিণে আন্দামান সাগরের কাছে মার্তবান উপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপটি ঘণীভূত হয়ে প্রথমে সুস্পষ্ট লঘুচাপ এবং পরবর্তীতে নিম্নচাপে পরিণত হয়। এরপর এটি দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে বর্তমানে থাইল্যান্ড ও তৎসংলগ্ন মিয়ানমার এলাকায় অবস্থান করছে। লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বিজলী চমকানোসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সে সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
যশোর ও সাতক্ষীরা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তা প্রশমিত হতে পারে। এছাড়া সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য