অদক্ষতার কারণে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা যাবে না বা অদক্ষদের পদোন্নতি দিতে হবে-এমন কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, চাকরিচ্যুতির ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রমাণিত অভিযোগ থাকতে হবে। শুধু আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারা বা কোনো ধরনের প্রমাণিত অভিযোগ ছাড়াই অদক্ষতার অজুহাত দেখিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত অথবা চাকরিচ্যুত অথবা পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে মঙ্গলবার এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়।
গত ২০ জানুয়ারি এ বিষয়ে জারি করা একটি সার্কুলার স্পষ্ট করতে নতুন এই সার্কুলারটি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২০ জানুয়ারির ওই সার্কুলারে দেশের বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি শুরুর বেতনকাঠামো বেঁধে দেয়া হয়।
ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল, অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার/ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার/ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্যাশ অফিসার অথবা সমপর্যায়ের কর্মকর্তা- যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, ব্যাংকের এন্ট্রি লেভেলে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের শিক্ষানবিশকালে ন্যূনতম বেতন হবে ২৮ হাজার টাকা।
শিক্ষানবিশকাল শেষে এ ধরনের ব্যাংক কর্মকর্তাদের শুরুর মূল বেতনসহ ন্যূনতম মোট বেতন-ভাতা হবে ৩৯ হাজার টাকা।
পাশাপাশি শুধু নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে না পারলে বা অদক্ষতার অজুহাতে কোনো ব্যাংকারকে চাকরি থেকে বাদ দেয়া যাবে না বলেও উল্লেখ করা হয় আগের সার্কুলারে।
মঙ্গলবারের নতুন সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, আগের নির্দেশনা সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ না করে কোনো কোনো পর্যায় থেকে খণ্ডিতভাবে বিভ্রান্তিমূলক ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে। এতে সার্কুলারের নির্দেশনা পরিপালনে ব্যাংকগুলোতে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে, যা কাম্য নয়।
‘এক্ষণে, সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূরীকরণ এবং উক্ত সার্কুলারের নির্দেশনা স্পষ্টীকরণের লক্ষ্যে এ মর্মে জানানো যাচ্ছে যে, অদক্ষতার কারণে চাকরিচ্যুত করা যাবে না বা অদক্ষদের পদোন্নতি দিতে হবে- এ ধরনের নির্দেশনা সার্কুলারের কোথাও বলা হয়নি। সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোনো অভিযোগ থাকলে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালা ও বিধিমালা অনুসরণে প্রশাসনিক কার্যক্রমে কোনো বিধিনিষেধও আরোপ করা হয়নি।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এই বিশাল বিনিয়োগের প্রাপ্তি হিসাবের দুটি উপায় আছে। একটি হলো মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) বাড়তি প্রাপ্তি বিবেচনা, অন্যটি সেতু দিয়ে পারাপার হওয়া বিভিন্ন যানবাহন থেকে নির্দিষ্ট হারে টোল আদায়ের মাধ্যমে সরাসরি খরচ উঠিয়ে আনা।
কোন উপায়ে কত বছরে পদ্মা সেতুর ব্যয় উঠে আসতে পারে, সরকারিভাবে তার সুনির্দিষ্ট হিসাব পাওয়া যায় না। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সমীক্ষা এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নানা তথ্য-উপাত্ত থেকে এ বিষয়ে একটি ধারণা পাওয়া যায়।
এই সেতু দিয়ে দেশের ২৩ জেলায় প্রতিদিন ২১ হাজার ৩০০ যানবাহন চলাচল করবে, যা ২০২৫ সাল নাগাদ বেড়ে দাঁড়াবে ৪১ হাজার ৬০০। এদের সবার থেকে টোল বাবদ যে আয় হবে, শুধু তা দিয়ে সেতুর ব্যয় উঠে আসতে সময় লাগবে সাড়ে ৯ বছর।
অন্যদিকে সেতু চালু হওয়ার কারণে আগামী এক বছর বা ১২ মাসে অর্থনীতিতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) বাড়তি প্রাপ্তি যোগ হবে চলতি বাজারমূল্যে ৪২ হাজার ৩৬২ কোটি ২১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা, যা জিডিপির ১.২ শতাংশের সমান।
এই বিবেচনায় মাত্র ৯ মাসে উঠে আসবে ৩১ হাজার ৭৭১ কোটি ৬৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা, অর্থাৎ অর্থনীতিতে মাত্র এই ৯ মাসের প্রাপ্তি হবে পদ্মা সেতুর মোট ব্যয়ের সমান।
যে তথ্যের ভিত্তিতে এই হিসাব
বিশাল বিনিয়োগের প্রকল্প শুরু করার আগে সেটি অর্থনৈতিকভাবে কতটা সুফল দেবে এবং তার প্রাপ্তি কতকাল ধরে অর্থনীতি পেতে থাকবে, তার আগাম সমীক্ষা করা হয়ে থাকে। প্রকল্পের গুরুত্ব বুঝে এ ধরনের সমীক্ষায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিদেশি স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে সরকার এ মূল্যায়নে সম্পৃক্ত করেছে বিশ্বব্যাংক ও জাইকাকে। জাতীয়ভাবে সরকারও প্রকল্পের সমীক্ষা চালায়।
সম্ভাব্যতা জরিপে বলা হয়, সেতুটি নির্মিত হলে দেশের জিডিপি ১ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এতে ওই অঞ্চলের মানুষের আয় বাড়বে ১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে ৭ লাখ ৪৩ হাজার মানুষের।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সমীক্ষাতেও বলা হয়, জিডিপি বাড়বে ১ দশমিক ২ শতাংশ। আর বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষায় বলা হয়, পদ্মা সেতু চালু হলে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে ১ শতাংশ হারে।
সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক মন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে পদ্মা সেতুর প্রভাবে জিডিপি ১ দশমিক ২ থেকে ১ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ার তথ্য দেন। এ ছাড়া দেশীয় একাধিক গবেষণা সংস্থার দাবি, জিডিপি বাড়বে দেড় থেকে দুই শতাংশ পর্যন্ত।
টোল থেকে ব্যয় তুলে আনার হিসাব
সেতু পারাপারে টোল হার কার্যকরের মাধ্যমে সরাসরি ব্যয় তুলে আনার বিষয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) একটি নিজস্ব গণনা পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতিকে যে এলাকায় সেতু নির্মিত হবে, ওই এলাকায় ফেরি পারাপার থেকে দৈনিক যে পরিমাণ টোল আদায় করা হয়, সেতু পারপারে তার দেড় থেকে দুই গুণ টোল ধার্য করার নিয়ম রয়েছে।
পদ্মা সেতুতেও টোল হার নির্ধারণ করার আগে ফেরিতে কী পরিমাণ টোল আদায় হয় এবং কী পরিমাণ যানবাহন পারাপার হয়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) থেকে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই সংস্থার তথ্য মতে, ২০২০ সালের নভেম্বরে মাওয়া এবং জাজিরার মধ্যে ফেরিতে যানবাহন পারাপারে দৈনিক ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা আয় হয়েছে।
সেতু বিভাগ (বিবিএ) এ পরিসংখ্যানকে ভিত্তি ধরে প্রাথমিকভাবে দৈনিক ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা টোল আদায়ের আশা করছে। অর্থাৎ বিআইডব্লিউটিএর আয়ের দেড় গুণের বেশি এবং দুই গুণের কম আয়ের একটি মধ্যবর্তী ভিত্তি নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে টোল হার যেটিই নির্ধারণ করা হোক না কেন, ব্যয় উঠে আসার সময়সীমার ক্ষেত্রে পরিষ্কার কিছু বলা হয়নি। এ নিয়ে নানা গণমাধ্যমে বিচ্ছিন্নভাবে খবর হয়েছে। এতে সেতু বিভাগের প্রাথমিক সমীক্ষায় বলা হয়, ৩৫ বছরে উঠে আসবে পদ্মা সেতুর ব্যয়। একই ইস্যুতে দায়িত্বশীলদের কেউ কেউ বলছেন, সময় লাগবে ২০ থেকে ২৫ বছর এবং কেউ আবার ১৭ বছরের কথা বলছেন।
নিউজবাংলা এসব তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে দেখেছে, টোল থেকে পাওয়া সমুদয় হিসাব বিবেচনায় নিলে সেতুর ব্যয় তুলে আনতে ৯ বছর ৫ মাস ৬ দিনের বেশি লাগবে না।
তবে এ হিসাবে সেতুর পরিচালন খরচ এবং এর সঙ্গে ১৪৭ কিস্তির ১ শতাংশ সুদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. শফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টোল হিসাবে যে রাজস্ব আসবে, সে হিসাবে পদ্মা সেতু নির্মাণ ব্যয় উঠে আসার কথা ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। সেতুটি নিয়ে যখন প্রজেক্ট ডিজাইন করা হয়েছে, তখন এমন সম্ভাব্যতার কথাই বলা হয়েছে। তবে আদায় পর্যায়ে টোল হার বিবেচনায় এই সময় আরও কমবেশি হতে পারে।’
অন্যদিকে সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোরুল ইসলাম মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, ১৭ বছরে উঠে আসতে পারে পদ্মা সেতুর ব্যয়।
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর টাকা সেতু কর্তৃপক্ষকে ১ শতাংশ হারে সুদে সরকারকে ফেরত দিতে হবে। ফিজিবিলিটি স্টাডিতে বলা হয়েছে, ২৪ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে টাকাটা (নির্মাণ ব্যয়) উঠে আসবে। এখন মনে হচ্ছে ১৬ থেকে ১৭ বছরের মধ্যেই টাকাটা উঠে আসবে, কারণ মোংলা পোর্ট যে এত শক্তিশালী হবে, পায়রা বন্দর হবে, এত শিল্পায়ন হবে, সেগুলো কিন্তু ফিজিবিলিটি স্টাডিতে আসেনি।’
জিডিপি বিবেচনায় সেতু থেকে বাড়তি প্রাপ্তির হিসাব
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সবশেষ পূর্ণাঙ্গ হিসাব আছে গত ২০২০-২১ অর্থবছরের। সেখানে টাকার অঙ্কে মোট দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ ৩৫ লাখ ৩০ হাজার ১৮৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
আগামী বছর পদ্মা সেতুর প্রভাবে জিডিপি দেড় শতাংশ বাড়লে অর্থনীতিতে প্রথম বছর এর বাড়তি অর্থমূল্য দাঁড়াবে ৫২ হাজার ৯৫২ কোটি ৭৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। জিডিপি ১ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়লে সার্বিক অর্থনীতিতে ৪৫ হাজার ৮৯২ কোটি ৪০ লাখ ২৪ হাজার টাকার বাড়তি স্ফীতি ঘটবে। আর জিডিপি ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়লে টাকার অঙ্কে জিডিপির বাড়তি প্রাপ্তি আসবে মোট ৪২ হাজার ৩৬২ কোটি ২১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। জিডিপি সর্বনিম্ন ১ শতাংশ ধরা হলে আগামী বছর জিডিপির অতিরিক্ত প্রাপ্তি মিলবে মোট ৩৫ হাজার ৩০১ কোটি ৮৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, ‘আমরা সম্ভাব্যতার বড় জায়গাটায় না গেলাম, সর্বনিম্ন সমীক্ষাটিই যদি গ্রহণ করি, তাও তো জিডিপি বাড়ার হার ন্যূনতম ১ শতাংশ হবে। এটাই হলো আমাদের পদ্মা সেতু, যা বাংলাদেশের সক্ষমতা, সমৃদ্ধি, অহংকার ও সাহসের প্রতীক, যার স্বপ্ন দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর দেশের অর্থনীতিতে বিরাট বিস্ফোরণ ঘটেছিল, যার ধারাবাহিকতা এখনও আছে। পদ্মা সেতু চালুর ফলে আগামীর অর্থনীতিতে তার চেয়েও বড় বিস্ফোরণ ঘটাতে যাচ্ছে।
সম্ভাব্যতার ভিত্তি যেখানে
পদ্মা সেতুর কারণে দেশের দক্ষিণ-পর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৭টি জেলার কৃষি খাত বেগবান হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) খাতে বিপ্লব ঘটবে। এতে শিল্পোৎপাদন বাড়বে। দ্রুত পণ্য আনা-নেয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ার প্রভাবে সারা দেশের বাণিজ্য নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে শিক্ষা ব্যবস্থায়। এ ছাড়া কুয়াকাটা, সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যটন খাত বিকশিত হবে। ফলে হোটেল-মোটেল-রেস্তোরাঁ গড়ে উঠবে।
মোংলা বন্দর, পায়রা বন্দর ও এনার্জি হাব, ইপিজেড, রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বরিশাল-পিরোজপুরে শিপ বিল্ডিং শিল্পসহ সার্বিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উল্লম্ফন দেখা যাবে কর্মসংস্থানে।
এখন জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের যেসব মানুষ জীবিকার তাগিদে ঢাকামুখী হয়েছে, তারা এলাকায় ফিরে যাবে এবং সেখানেই উৎপাদন, সেবা ও বাণিজ্যমুখী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবে। এসবেরও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জিডিপি এবং টোল আদায়ে।
আরও পড়ুন:
দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে পদ্মা সেতু চালুর মাধ্যমে। মানুষের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে বহুল প্রতীক্ষিত এই সেতু।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হলে বাংলাদেশের জাতীয় আয় বাড়বে ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। প্রতি বছর দারিদ্র্য হ্রাস পাবে ১ দশমিক ০২ শতাংশ হারে। প্রতি বছর কর্মসংস্থান হবে ১ দশমিক ২ শতাংশ হারে।
যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত সেতুটি। অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে শনিবার।
এই সেতু আবেগ, জাতীয় অহংকার ও সাহসের আরেক নাম, সক্ষমতার প্রতীক। আর এই আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরেকটি নাম, গ্রি এসি।
সেতুর সার্ভিস পয়েন্ট, মাল্টিপারপাস হল, রিসোর্ট, মোটেল ম্যাচ, সুপারভিশন অফিস, ডরমেটরিসহ সব জায়গায় ব্যবহার হচ্ছে গ্রি এসি। এ সব পয়েন্টে ব্যবহার করা হয়েছে গ্রি এয়ারকন্ডিশনারের মাল্টি ভিআরএফ, স্প্লিট ওয়াল মাউন্টেড, সিলিং টাইপ, পোর্টেবল, ফ্লোর স্ট্যান্ডিং এবং ক্যাসেট এসি।
গ্রি এসি উৎপাদন ও বাজারজাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ ছিল চ্যালেঞ্জের কাজ। আর সেই চ্যালেঞ্জের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে তারা গর্বিত।
দেশে এসি উৎপাদন ও বাজারজাতের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম ইলেকট্রো মার্ট। তারা বাজারজাত করে গ্রি ব্যান্ডের এসি।
এক যুগ আগেও এসির ব্যবহার ছিল বিলাসিতা। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে যাপিত জীবনের প্রয়োজনীয় অনুসঙ্গ হয়ে উঠেছে যন্ত্রটি। বর্তমানে উচ্চবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও এটি ব্যবহার করছেন। শুধু রাজধানী শহরেই নয়, জেলা, উপজেলা পর্যায়ের এর ব্যবহার প্রচুর।
এসব কারণে এসির বাজার দ্রুত বাড়ছে। উপজেলাতেও গড়ে উঠেছে শো রুম। বাজার বাড়তে থাকায় এখন দেশে উৎপাদন ও সংযোজনও হচ্ছে।
বড় হচ্ছে বাজার
বাংলাদেশ এয়ার কন্ডিশনিং ইকুইপমেন্টস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইআইএ) তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে এসির বাজার প্রায় ৩০ শতাংশ হারে বেড়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৬২ কোটি টাকার ৫.৮৮ লাখ কম্প্রেসার ইউনিট (মূল উপাদান) আমদানি করা হয়। আগের বছর আমদানি করা হয় ১৬৫ কোটি টাকার ৩.৩৪ লাখ ইউনিট। করোনার কারণে কম্প্রেসার ইউনিটের আমদানি কমলেও বর্তমানে তা দ্রুত বাড়ছে।
এসি তৈরিতে প্রযুক্তির অভাবনীয় আগমন ঘটেছে। ইনভার্টার অথবা এয়ার পিউরিফিকেশন প্রযুক্তি বাজারে আসার কারণে বিদ্যুৎ বিল কম হচ্ছে।
করোনার আগে ২০১৯ সালে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার এসি বিক্রি হয়। পরের বছর করোনার বিধিনিষেধের সময় তা সাড়ে তিন লাখে নেমে আসে। তবে গত বছর বিক্রি বেড়ে প্রায় ৪ লাখে উঠেছে। চলতি বছর ৪ লাখ ৩০ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গ্রি এসির বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রো মার্টের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আফসার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এসি এখন অতি প্রয়োজনীয় যন্ত্র হয়ে উঠেছে। এটা এখন আর বিলাসিতার জিনিস নয়। আধুনিক কর্মময় জীবনে প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে কাজের মান, স্বাচ্ছন্দ্যময় কর্মপরিবেশ ও শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে এটি এখন অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। তাই অন্যান্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের মধ্যে ঘরে জায়গা করে নিচ্ছে যন্ত্রটি।’
তিনি বলেন, ‘করোনায় সময় এসির বাজারে একটা বড় ধাক্কা এসেছিল, যা মানুষের ভুল ধারণা ছিল। বর্তমানে গ্রি এসিতে ব্যবহৃত প্রযুক্তি যেমন বায়োলজিক্যাল ফিল্টার, ক্যাচেইন ফিল্টার, সিলভার আয়রন ফ্লিটার এবং ক্লোজসমা এয়ার পিউরিফিকেশন টেকনোলজি থাকার কারণে ঘরের বাতাসের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে সম্পূর্ণরূপে বিশুদ্ধ করে করোনা প্রতিরোধে সক্ষম। তাতে এখন আবার দ্রুত বিক্রি বাড়ছে। বর্তমানে দেশের এয়ারকন্ডিশনার চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ গ্রি পূরণ করে যাচ্ছে।’
দেশেই উৎপাদন
এক সময় দেশের এসির বাজারের পুরোটাই ছিল আমদানির্ভর। এ জন্য দামও ছিল বেশি। দেশে চাহিদা বাড়তে থাকায় ধীরে ধীরে কারখানাগুলো বিদেশ থেকে সরঞ্জাম এনে দেশে সংযোজন শুরু করে। আর এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে গ্রি এসি।
প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৮ সাল থেকে প্রায় দুই যুগের ও বেশি সময় ধরে বাজারজাতকরণ করে যাচ্ছে এবং ২০২০ সাল থেকে দেশেই এসি উৎপাদন করছে । এ কারণে দামও কিছুটা কমেছে। তবে মূল কমপ্রেসরসহ কিছু যন্ত্রাংশ আসছে বিদেশ থেকে।
আসছে নতুন নতুন প্রযুক্তি
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে পথ চলাই গ্রির সাফল্যের অন্যতম কারণ। তাই তো নতুন নতুন প্রযুক্তি যুক্ত হচ্ছে।
বাজারে এখন দুই ধরনের এসি পাওয়া যায়। ইনভার্টার ও নন-ইনভার্টার। এর মধ্যে ইনভার্টারের দাম কিছুটা বেশি। কারণ, এ ধরনের এসিতে বিদ্যুৎ খরচ কম। এটি ঘরের আরামদায়ক তাপমাত্রা ঠিক রেখে এসির শক্তি খরচ কমিয়ে নিয়ে আসে।
কেমন দাম
বাজারে ব্র্যান্ডভেদে এক টনের বিদেশি ইনভার্টার এসির দাম ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। আর নন-ইনভার্টারের দাম ৫০ হাজার টাকার মধ্যে। দেড় টন ইনভার্টার এসির দাম ৭৫ থেকে ৮৫ হাজার টাকা।
এবার গরমের শুরুতেই এসি কিনেছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মোহাম্মদ এহসান। একটি জেলা শহরের থাকেন তিনি।
এহসান বলেন, ‘গরমে বাচ্চাটা রাতে একদম ঘুমাতে পারে না। সারাদিন অফিস করে বাড়িতে ফিরে গরমে আমারও আর ভালো লাগে না। তাই প্রয়োজনের জন্যই এসি কিনেছি। রাতে যদি ভালো ঘুম না হয় তাহলে পরের দিন অফিসে মনোযোগ দিয়ে কাজ করা যায় না। এতে নিজের মধ্যেও এক ধরনের চাপ তৈরি হয়।’
বিদ্যুৎ খরচ কি অনেক বেশি?
প্রায় দুই বছর ধরে এসি ব্যবহার করছেন উত্তরার বাসিন্দা আমজাদ কবির। তিনি বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, এসি কিনলে বোধহয় বিদ্যুৎ খরচ অনেক হবে। তাই পোষাতে পারবেন না। কিন্তু ব্যাপারটি আসলে তা নয়।’
তিনি বলেন, ‘দুই ধরনের এসি আছে। এর মধ্যে ইনভার্টারের দাম কিছুটা বেশি। একটু বেশি দাম দিয়ে ইনভার্টার এসি কিনলে বিদ্যুৎ খরচ তেমন বাড়বে না।’
ব্যবহার বেশি যেখানে
আমদানিকারক ও বিপণন সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে, ঢাকা শহরে এসি বেশি ব্যবহার হয়। তারপরেই রয়েছে চট্টগ্রাম। তবে এখন মফস্বল শহরগুলোতেও প্রচুর বিক্রি হচ্ছে।
তারা বলছেন, এসি ইনস্টল করার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রুমের আকার, জানালার সংখ্যা, সূর্যমুখী জানালার সংখ্যা। এসব বিবেচনায় রেখে বেশিরভাগ মানুষই দেড় টন এসি ব্যবহার করে থাকে।
কেনার আগে অবশ্যই যা জানতে হবে
সেসব ঘরে এসি স্থাপন করতে হবে যেগুলো সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। এতে বিদ্যুৎ খরচ অনেক কম হবে।
সাধারণত চার প্রকারের এসি বাজারে দেখা যায়। স্প্লিট ওয়াল মাউন্টেড, সিলিং টাইপ, পোর্টেবল এবং ক্যাসেট টাইপ।
বসবাসের জায়গা মধ্যম মানের তাপমাত্রার এলাকায় হলে এবং শুধু একটি ঠান্ডা বা গরম করতে হলে স্প্লিট টাইপ এসি উপযোগী। ঘরের বিদ্যমান ওয়ারিংয়েই সংযোগযোগ্য এবং ইনস্টল করা সহজ।
বর্তমানে খুব সহজে এসি স্থাপন এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়।
ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেড গ্রি এসির প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ফ্রি ইনস্টলেশন এবং তিন বছর বিনা মূল্যে বিক্রয়োত্তর সেবা দিয়ে থাকে। ফলে ব্যবহারকারীরা এ বিষয়ে পুরোপুরি চিন্তামুক্ত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:বোরো ধান ওঠার পরও চালের দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এবার আমদানি বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সরকার। এর অংশ হিসেবে আমদানিতে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে শুল্ক।
তবে নিয়ন্ত্রণমূক শুল্ক, অগ্রিম আয়কর, অ্যাডভান্সড ট্রেড ভ্যাট বা এটিভি এখনও কিছু বহাল আছে, যদিও এর হার কমানো হয়েছে অনেকটাই।
চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আবেদন বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এতদিন চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো সরকারকে। অর্থাৎ আমদানিতে ১০০ টাকা খরচ হলে সরকারকে দিতে হতো ২৫ টাকা। এই খাতে এখন কোনো টাকা দিতে হবে না।
যদিও নিয়ন্ত্রণমূলক যে ২৫ শতাংশ শুল্ক ছিল, সেটি পুরোপুরি প্রত্যাহার হয়নি, তবে কমানো হয়েছে অনেকটাই।
এতদিন এই শুল্ক ছিল ২৫ শতাংশ, সেটি কমিয়ে করা হয়েছে ১০ শতাংশ। এর বাইরে অগ্রিম আয়কর, এটিভি মিলিয়ে শুল্ক দিতে হবে ২৫ শতাংশ।
এতদিন আমদানি শুল্কের সঙ্গে এগুলো মিলিয়ে শুল্ক ছিল ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ টাকার পণ্য আনতে সরকারকে দিতে হতো ৬২ টাকা। এখন কম দিতে হবে ৩৭ টাকা।
আমদানি করা চালের মূল্য আগের চেয়ে কম পড়লে দেশি উৎপাদকরা প্রতিযোগিতার স্বার্থে দাম কমাতে বাধ্য হবে বলে আশা করছে এনবিআর। আর এর ফলে চালের বাজার স্থিতিশীল হবে এবং ভোক্তারা কম দামে চাল কিনে খেতে পারবে।
চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত শুল্কহার কমানোর এই আদেশ বহাল থাকবে বলে জানিয়েছে এনবিআর।
সরকারি হিসাবে দেশে চালের সরবরাহ ও মজুতের মধ্যে কোনো ঘাটতি নেই। তারপরও চালের দাম বেড়ে চলেছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবির হিসাবে গত এক বছরে সরু চালের দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।
এর মধ্যে গত এক মাসেই সরু চালের দাম বেড়েছে ১৪.২৯ শতাংশ আর মোটা চালের দাম বেড়েছে ৮.৬০ শতাংশ।
এক মাস আগেও সরু চালের দাম ছিল কেজিতে ৫৮ থেকে ৬৮ টাকা। সেটি এখন বেড়ে হয়েছে ৬৪ থেকে ৮০ টাকা।
মোটা চালের দাম এক মাস আগে ছিল ৪২ থেকে ৪৫ টাকা। সেটি এখন বেড়ে হয়েছে ৪৮ থেকে ৫৩ টাকা।
চালের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি সরকারও অস্বাভাবিক হিসেবেই দেখছে। সম্প্রতি বিভিন্ন চালকল ও বাজারে সরকার অভিযানও চালাচ্ছে। বৈধ মাত্রার চেয়ে বেশি মজুত করায় মামলাও হয়েছে স্কয়ার গ্রুপের বিরুদ্ধে। তবে এসব অভিযানের সুফল বাজারে কমই মিলছে।
আরও পড়ুন:সরকারি গুদামগুলোতে খাদ্যশস্যের মজুত বাড়ছে; তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চাল-আটার দাম। বন্যার কারণে দেশে চালের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে কি না তা নিয়ে শঙ্কিত ব্যবসায়ীরা। তবে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, বন্যায় খাদ্যঘাটতি হবে না। প্রয়োজনে চাল আমদানি করে চাহিদা পূরণ করা হবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন বলছে, বৃহস্পতিবার দেশে মোট খাদ্যশস্য মজুতের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৪৯ হাজার টন। এর মধ্যে চালের মজুত হচ্ছে ১৩ লাখ ২৪ হাজার টন। গম ১ লাখ ৬৫ হাজার; আর ধান ৯২ হাজার টন।
ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এই মজুত ২০ লাখ টন ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যা ছিল রেকর্ড। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই সরকারিভাবে এত খাদ্যশস্য মজুত ছিল না। কিন্তু এর পর থেকে কমতে কমতে সেই মজুত মে মাস শেষে ১২ লাখ ৫২ হাজার টনে নেমে আসে।
এরই মধ্যে ২৮ এপ্রিল থেকে দেশে বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু করে সরকার। এর ফলে আবার বাড়ছে খাদ্যের মজুত।
বিস্ময়কর হলো, তারপরও চালের দাম কমছে না; উল্টো বেড়েই চলেছে। এবারই প্রথম ভরা বোরো মৌসুমেও মোটা চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়েছে। সরু চালের দাম বেড়েছে আরও বেশি; ১০ থেকে ১২ টাকা।
চালের দামের লাগাম টেনে ধরতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে চালকল, আড়ত, বড় বড় পাইকারি বাজারে অভিযান চালানোর পরও দাম কমেনি।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাজারগুলোতে ৪৮ থেকে ৫৩ টাকা কেজি দরে মোটা চাল বিক্রি হয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। আর বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর সরু চাল (মিনিকেট-নাজিরশাইল) বিক্রি হয়েছে ৬৪ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। এক মাসে এই চালের দাম ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়েছে। বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৭ দশমিক শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।
আটার দাম বেড়েছে আরও বেশি। প্রতি কেজি খোলা আটাই এখন ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।
আটার দাম বাড়ার জন্য অবশ্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।
বর্তমান মজুত ‘সন্তোষজনক’ উল্লেখ করে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বোরো সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বুধবার পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৫১ টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ১ হাজার ৬১০ টন ধান, ৪ লাখ ৫১ হাজার ১০৫ টন সেদ্ধ চাল এবং ৭ হাজার ৭৮০ টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। ধান, চালের আকারে মোট মজুতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ হিসাবে মোট চাল সংগ্রহ করা হয়েছে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৩১ টন। আর গম ২০ লাখ টন।
গত ২৮ এপ্রিল থেকে বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে; চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এবার প্রতি কেজি বোরো ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ টাকা, সেদ্ধ চাল ৪০ টাকা এবং আতপ চাল ৩৯ টাকা।
এই মৌসুমে ৬ লাখ ৫০ হাজার টন ধান, ১১ লাখ টন সেদ্ধ চাল এবং ৫০ হাজার টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার।
নতুন চালেও কমছে না দাম
বুধবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে চালের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। নতুন চালও প্রচুর এসেছে। কিন্তু দাম কমছে না।
রাজধানীর শেওড়াপাড়া বাজারের একটি মুদি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভালো মানের সরু চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৪ থেকে ৮২ টাকা; যা এক মাস আগেও ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা।
এই বাজারের এক মুদি দোকানের মালিক রিপন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে চালের দাম বাড়েনি। ১৫/২০ দিন আগে যে দাম বেড়েছিল, সেই দামেই বিক্রি করছি।’
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ধানের দাম বেশি। সে কারণে চালের দাম কমছে না। ১৪০০/১৫০০ টাকা মণ দরে ধান কিনে আমরা কীভাবে কম দামে চাল বিক্রি করব।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে হাওর অঞ্চলে বন্যার কারণে বোরো ধানের ফলনের ক্ষতি হয়েছে। এখন সিলেট-সুনামগঞ্জ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা দেখা দিয়েছে। এর ফলে ফলনের পাশাপাশি যারা ধান তুলে বাড়িতে বা গুদামে রেখেছিলেন সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে আমরা বুঝতে পারছি না।’
ধানের দাম না কমলে চালের দাম কমবে না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেন লায়েক আলী।
কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়াটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রচুর চাল মজুত আছে। এ অবস্থায় দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।’
‘এটা সরকারকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে অভিযান শুরুর নির্দেশ নিয়েছেন তা সারা দেশে পরিচালনা অব্যাহত রাখতে হবে।’
বন্যার কারণে দেশে খাদ্য ঘাটতি হবে না বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘‘বন্যা পরিস্থিতির কারণে দেশে খাদ্য ঘাটতির কোনো শঙ্কা নেই। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। দেশে এখনও ১৬ লাখ টন ধান-চাল মজুত আছে। তারপরও আমাদের সংগ্রহ অভিযান চলছে। এ ছাড়া সে রকম কোনো অবস্থা দেখলে আমরা চাল আমদানি করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে জিরো ট্যাক্সে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছেন।’
প্রয়োজনে চাল আমদানি করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ধান কাটার আগেও কিছুটা বন্যা হয়েছিল, তা আমরা কাটিয়ে উঠেছি। ওই সময় ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছিল। তবে চলমান বন্যার কারণে প্রধান খাদ্যশস্য ধানসহ অন্যান্য ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি। মাঠে এখন তেমন ফসল নেই। কিছু হয়তো আউশ ধান ছিল। সরকারি খাদ্যগুদামে যে মজুত রয়েছে, তাতে এখন পর্যন্ত দেশে খাদ্যের কোনো ঘাটতি হবে না। প্রয়োজনে চাল আমদানি করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে।’
আরও পড়ুন:এবার দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি।
কোরবানির হাটে এসব পশু সরবরাহের মাধ্যমে কোরবানি উদযাপনে সরকারের পক্ষ থেকে পরিপূর্ণ প্রস্তুতি আছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে কোরবানির পশুর চাহিদা নিরূপণ, সরবরাহ ও অবাধ পরিবহন নিশ্চিতকরণ বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভায় এ কথা জানানো হয়।
মন্ত্রী বলেন, ‘চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত পশু প্রস্তুত আছে। ফলে কোরবানির জন্য কোনোরকম সংশয়, সংকট বা আশঙ্কার কারণ নেই।
তিনি জানান, কোরবানির হাটে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হবে। রোগগ্রস্ত পশু হাটে বিক্রি করতে দেয়া হবে না।
মন্ত্রী বলেন, ‘কোরবানির পশুর জন্য অতীতে পরমুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হতো। আমাদের প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা, খামারি ও উদ্যোক্তারা সম্মিলিতভাবে কাজ করায় প্রাণিসম্পদ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এ খাতে আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন মাংসে আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে।’
কোনো খামারি নিজ বাড়ি থেকে পশু বিক্রি করলে তাকে হাসিল দিতে হবে না বলেও জানান মন্ত্রী। বলেন, কোনো খামারি তার পশু দূরবর্তী হাটে নিতে চাইলে, রাস্তায় জোর করে নামাতে বাধ্য করা যাবে না। হাটে আনার পথে কেউ প্রাণী বিক্রি করলে তার কাছ থেকে ইজারা গ্রাহক জোর করে চাঁদা বা হাসিল গ্রহণ করতে পারবে না।
নগদ টাকা বহন না করে বিকল্প উপায়ে স্মার্ট পদ্ধতিতে খামারিরা যাতে আর্থিক লেনদেন করতে পারে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান রেজাউল করিম।
মন্ত্রী বলেন, ‘গত বছর অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রচুর গবাদিপশু বিক্রি হয়েছিল। এ বছরও এই পদ্ধতি অব্যাহত থাকবে, যা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য সুখকর অবস্থা তৈরি করবে। অনলাইনে ক্রয়কৃত গরু পছন্দ না হলে টাকা ফেরত নেয়ার ব্যবস্থাও এ বছর সংযোজন করা হচ্ছে। যাতে ক্রেতারা কোনোভাবেই প্রতারিত না হয়।’
মহাসড়কে বা যান চলাচলে বিঘ্ন হতে পারে, এমন স্থানে হাট বসানো যাবে না বলেও সভায় বলা হয়। সড়কে বা সেতুতে কোরবানির পশু পরিবাহী গাড়িকে প্রাধান্য দেয়ার কথাও জানানো হয়।
এ ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হবে। অধিদপ্তরের হটলাইন ১৬৩৫৮ চালু থাকবে। পশু পরিবহনে খামারিদের সমস্যা সমাধানে এ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ কাজ করবে।
সিলেট অঞ্চলে বন্যায় গবাদিপশুর ক্ষতির কারণে খামারিদের সহায়তা করার বিষয়টিও চিন্তাভাবনা করছে সরকার। কোরবানির সময় ওই অঞ্চলে দেশের অন্য এলাকা থেকে পশু নেয়ার ব্যবস্থাও করা হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইয়ামিন চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, তৌফিকুল আরিফ ও এস এম ফেরদৌস আলম, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা ছাড়াও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা সভায় অংশ নেন।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে ১০০ টাকা মূল্যমান স্মারক নোট ছাড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রোববার থেকে নোটটি বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস এবং পরে অন্যান্য শাখা অফিসে পাওয়া যাবে।
ফোল্ডার ছাড়া শুধু খামসহ স্মারক নোটটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ এবং ফোল্ডার ও খামসহ স্মারক নোটটির মূল্য ২০০ টাকা।
স্মারক নোটটির জন্য পৃথকভাবে বাংলা ও ইংরেজি লিটারেচার সংবলিত ফোল্ডার প্রস্তুত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নোটের ডিজাইন ও নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির স্বাক্ষরিত ১৪৬ মিলিমিটার গুণক ৬৩ মিলিমিটার পরিমাপের এ স্মারক নোটের সম্মুখভাগের বামপাশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি রয়েছে।
ব্যাকগ্রাউন্ডে পদ্মা সেতুর ছবি মুদ্রিত।
নোটের উপরিভাগে সামান্য ডানে নোটের শিরোনাম ‘জাতির গৌরবের প্রতীক পদ্মা সেতু’ লেখা রয়েছে।
নোটের ওপরে ডান কোণে স্মারক নোটের মূল্যমান ইংরেজিতে ১০০, নিচে ডান কোণে মূল্যমান বাংলায় ‘১০০’ এবং উপরিভাগে মাঝখানে ‘একশত টাকা’ লেখা রয়েছে।
নোটের পেছনভাগে পদ্মা সেতুর একটি ছবি দেয়া হয়েছে।
নোটের উপরিভাগে ডান দিকে নোটের শিরোনাম ইংরেজিতে ‘পদ্মা ব্রিজ দি সিম্বল অফ ন্যাশনাল প্রাইড ওয়ান হান্ড্রেড টাকা’ লেখা।
নোটের ওপরে বাম কোণে ও নিচের ডান কোণে মূল্যমান ইংরেজিতে ১০০ এবং নিচে বাম কোণে বাংলায় ‘১০০’ লেখা রয়েছে।
নোটের নিচে মাঝখানে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম এবং এর বামপাশে ইংরেজিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ডানপাশে ইংরেজিতে ওয়ান হান্ড্রেড টাকা’ লেখা।
নোটটির সম্মুখভাগে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির বামে মিলিমিটার চওড়া নিরাপত্তা সুতা এবং ডানদিকে জলছাপ এলাকায় ‘বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি’, ‘২০০’ এবং ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম’ মুদ্রিত।
নোটের উভয় পাতায় ভার্নিশের প্রলেপ দেয়া।
আরও পড়ুন:সিস্টেম উন্নয়নের জন্য চার ঘণ্টা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের সব ধরনের লেনদেন বন্ধ থাকবে।
বৃহস্পতিবার রাত ১টা থেকে শুক্রবার ভোর ৫টা পর্যন্ত ব্যাংকটির এটিএম বুথ থেকে কোনো গ্রাহক টাকা তুলতে পারবেন না।
ব্যাংকটির ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত্র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিস্টেম আপগ্রেশনের কারণে বৃহস্পতিবার রাত ১টা থেকে শুক্রবার ভোর ৫টা পর্যন্ত কার্ড সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
বিষয়টি গ্রাহকদের অবহিত করতে ক্ষুদে বার্তাও দিয়েছে ইউসিবি।
এতে বলা হয়েছে, কারিগরি কারণে ২৪ জুন রাত ১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সকল ইউসিবি কার্ড সেবা স্থগিত থাকবে।
মন্তব্য