পণ্য খালাস বা কর দেয়ার ক্ষেত্রে হয়রানির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এনবিআরের সম্মেলনকক্ষে আন্তর্জাতিক কাস্টম দিবসের আগের দিন মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বন্দরগুলোতে পণ্য খালাস ও কর আদায় নিয়ে হয়রানির অভিযোগ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘ঢালাওভাবে অভিযোগ করা ঠিক নয়। অভিযোগের সত্যতা থাকতে হবে। আমাদেরকে লিখিতভাবে জানান। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই যে কর্মকর্তা হয়রানি করেছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সম্প্রতি এফবিসিসিআইয়ের এক সভায় মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তোলেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানাতে হবে। জেনারেল কথা বলে কোনো লাভ নেই।’
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘কবে কোথায় কখন কীভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন লিখিত অভিযোগ দেন। তারপর আমরা ব্যবস্থা নেব। সাংবাদিক কিংবা ব্যবসায়ী নেতাদের কাছে অভিযোগ করলে হবে না। অভিযোগ জানাতে হবে এনবিআরের কাছে।
‘যদি কোনো ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তাহলে প্রশ্ন করতে পারেন। অযথা ভিত্তিহীন অভিযোগ করে কোনো লাভ নেই। এতে কোনো পক্ষ উপকৃত হবে না।’
কাস্টমসে অহেতুক কোনো পণ্য আটকানো হয় না বলে দাবি করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, কোনো ব্যবসায়ীর মালামাল আটক করলে অবশ্যই কোনো কারণ থাকে।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর শুল্ক আদায়ে কোনো চ্যালেঞ্জ হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটা ঠিক আমরা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারি। তবে এর জন্য আমাদের প্রস্তুতি আছে।’
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবকে আহ্বায়ক করে জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, অনেকগুলো সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারাও কাজ করছে।
রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘কাজ করতে গিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে। তা মোকাবিলা করাই হবে আমাদের লক্ষ্য। আয়কর ও ভ্যাট আদায় বাড়ছে। এর মাধ্যমে কাস্টমসের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে।’
সংবাদ সম্মেলনে এনবিআরের সদস্য (শুল্কনীতি) মাসুদ সাদিক জানান, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে প্রতিদিন পণ্য খালাসের জন্য প্রায় সাড়ে ৭ হাজার বিল অফ এন্ট্রি দাখিল করা হয়। এর মধ্যে আমদানিকৃত বিল অফ এন্ট্রির সংখ্যা আড়াই হাজার।
তিনি বলেন, ‘এত বিপুলসংখ্যক পণ্য খালাসে কিছু অভিযোগ তো থাকতেই পারে। তবে আমরা চেষ্টা করছি যেখানে অভিযোগ পাওয়া গেলে তার সমাধান করতে। পণ্য খালাসের সময় অনেক রকম প্রত্যয়ন পত্র দাখিল করতে হয়। কেউ সংক্ষুব্ধ হলে অভিযোগ করতে পারেন। এতে দুপক্ষের শুনানির সুযোগ রয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলন জানানো হয়, এবারের কাস্টম দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ‘তথ্য সংস্কৃতির বিকাশ এবং তথ্য ইকোসিস্টেম বিনির্মাণের মাধ্যমে ডিজিটাল কাস্টমসের সম্প্রসারণ’।
দিবসটি পালন উপলক্ষে একটি সেমিনারের আয়োজন করবে এনবিআর। কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
আরও পড়ুন:দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ তাদের লোগোতে পরিবর্তন এনেছে।
টেকসই শিল্প নির্মাণের প্রত্যয় নিয়ে মঙ্গলবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নতুন লোগো উন্মোচন করেন। এতে নয়টি অগ্রাধিকার সম্পন্ন বিষয়কে প্রকাশ করা হয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পোশাক শিল্পের টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পোশাক শিল্পের জন্য নতুন রূপকল্প প্রণয়নের ঘোষণা দেয়া হয়।
ফারুক হাসান বলেন, ‘প্রযুক্তির ব্যাপক পরিবর্তনের সঙ্গে পোশাক শিল্প এমন একটি জায়গায় পৌছেঁছে, যে শিল্পের প্রচলিত নিয়মগুলো খাটছে না, প্রায়শই চ্যালেঞ্জের সম্মুক্ষীন হতে হচ্ছে। শিল্পকে আরও এগিয়ে নেয়ার জন্য পণ্যেও ডিজাইন পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া, লিড টাইম হ্রাস করা, সর্বশেষ প্রযুক্তি গ্রহণ, উৎপাদন ব্যয় হ্রাস এবং কারখানাগুলোকে আরও টেকসই করার কোন বিকল্প নেই।’
‘আর এ প্রচেষ্টাগুলো শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে জ্ঞানার্জনের জন্য আমরা উত্তরায় বিজিএমইএর প্রধান কার্যালয়ে নতুন সেন্টার ফর ইনোভেশন, এফিসিয়েন্সি অ্যান্ড অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ প্রতিষ্ঠা করেছি। এই কেন্দ্রের লক্ষ্য হচ্ছে- পোশাক শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও ক্যাপাসিটি বিল্ডিং করা।’
তিনি বলেন, ‘পোশাক শিল্পের মুখপাত্র সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনটি শিল্পকে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং সময়ের প্রয়োজনে শিল্পকে এগিয়ে নিতে যখন যে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন তাই নিচ্ছে। পোশাক শিল্পকে টেকসই উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নেয়ার জন্য বিজিএমইএ শিল্পের জন্য একটি টেকসই শিল্পায়নে রোডম্যাপ তৈরি করতে যাচ্ছে, যা সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হচ্ছে।’
‘যেহেতু বিজিএমইএ আমাদের পোশাক শিল্পের মূখপাত্র, তাই এই শিল্পের এগিয়ে যাওয়া এবং ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য বিজিএমইএর নিজস্ব ব্র্যান্ডিংও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই আমরা বিজিএমইএর অতীত ঐতিহ্যকে অটুট রেখে আগামীর টেকসই শিল্প নির্মাণের প্রত্যয় নিয়ে বিজিএমইএর কর্পোরেট আইডেনটিটি অর্থাৎ লোগোতে পরিবর্তন এনেছি।’
‘আমরা মনে করি বিজিএমইএর রিনিউড ভিশন বা নতুন প্রত্যয় সমগ্র পৃথিবীতে আমাদের পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ অগ্রাধিকার সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট বার্তা প্রদান করবে। এটি একটি ডাইনামিক লোগো যাতে ৯টি অগ্রাধিকার সম্পন্ন বিষয়কে ডটের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। এগুলোর প্রত্যেকটিরই স্বতন্ত্র অর্থ আছে।’
গত ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে ৫২ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ফারুক হাসান বলেন, ‘তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে একসময় তাচ্ছিল্য করা হলেও নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি অসাধারণ অর্জন।’
‘গত ৫ দশকে যে অর্জনগুলো আমাদের দেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি এনে দিয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অর্জন হলো প্রথম সারির তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে উঠে আসা।
‘আনন্দের বিষয় হলো- পোশাক শিল্পের ৪০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো আমাদের রপ্তানি আয় ৪০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। আর আমাদের এই খাতটির ওপর ভর করেই এবার দেশেল মোট রপ্তানি আয় ৫২ দশমিক শূন্য আট ০৮ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে।’
‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আয় অর্জন করতে পারাটা অনেক বড় অর্জন বলে আমরা মনে করি।’
অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী, বর্তমান সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম, মিরান আলী, পরিচালক ব্যারিষ্টার শেহরিন সালাম ঐশী, আসিফ আশরাফ, মহিউদ্দিন রুবেল, হারুন অর রশিদ, নাভিদুল হক, ব্যারিষ্টার ভিদিয়া অমৃত খান, ইনামুল হক খান (বাবলু), ইমরানুর রহমান, হোসনে আরা নীলা, জায়ান্ট গ্রুপের পরিচালক শারমিন হাসান তিথীসহ অন্য পোশাক শিল্পমালিকরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্রোকারেজ হাউজ ক্রেস্ট, বাংকো ও তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ৪৩১ জন পাওনাদার ৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই শেষে অর্থ ফেরত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তাদেরকে এই টাকা ফেরত দেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসই।
সংস্থাটির উপ-মহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান নিউজবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্দেশেনা অনুযায়ী অর্থ ফেরত কার্যক্রম শুরু করেছে ডিএসই।
ওই তিন হাউজের যে সব বিনিয়োগকারী ১৫ মের মধ্যে ডিএসইতে অভিযোগ দাখিল করেছেন তাদের নিজ নিজ বিও হিসাবে উল্লেখিত ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে আনুপাতিক হারে অর্থ ফেরত শুরু করা হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ২৯ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বিইএফটিএনের মাধ্যমে ৪৩১ বিনিয়োগকারীকে ৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা দেয়া হয় বলে জানান ডিএসই কর্মকর্তা।
শফিকুর রহমান বলেন, ‘ডিএসই আশা করছে পর্যায়ক্রমে সকল বিনিয়োগকারীদের পাওনা পরিশোধ করা হবে৷ সকল পাওনা পরিশোধের জন্য ডিএসই সংশ্লিষ্ট ব্রোকারদের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে৷ এ ধরনের ঘটনা যেন ভবিষ্যতে না ঘটে সে বিষয়েও সতর্ক রয়েছে৷’
চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ওই তামহা সিকিউরিটিজের বিওধারী বিনিয়োগকারীরা এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ তোলেন, অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে দুই শতাধিক বিনিয়োগকারীর ৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এই সিকিউরিটিজের মালিক ডুপ্লিকেট সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের সব শেয়ার বিক্রি করে দেয় বলে অভিযোগ করেন তারা। বিএসইসি ওই সিকিউরিটিজের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করে দেয়ার পর সিডিবিএলে যোগাযোগ করে বিনিয়োগকারীরা জানতে পারেন তাদের হিসাবে কোনো শেয়ার নেই।
তামহা কর্তৃপক্ষ দুই শতাধিক বিনিয়োগকারীর মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে ডুপ্লিকেট সফটওয়্যার ব্যবহার করে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্য বিনিয়োগকারীদের ফোনে এসএমএস ও মেইল পাঠাতো। এ কারণে তারা জালিয়াতি বুঝতে পারেনি।
হাউজটি ১৩৯ কোটি টাকা ৭০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে বিএসইসির এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে ওঠে আসে। অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে গত ২৮ নভেম্বর ব্রোকারেজ হাউসটির শেয়ার কেনাবেচার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় ডিএসই।
গত বছরের জুনে বাংকো সিকিউরিটিজের কার্যক্রমও বন্ধ করে দেয়া হয় অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে। বিএসইসির তদন্ত অনুযায়ী, এ ব্রোকারেজ হাউসের মালিকপক্ষ গ্রাহকদের ৬৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে।
এ ঘটনায় ডিএসই মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি বা জিডিও করে। পরে দুদক প্রতিষ্ঠানটির ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেছে। আসামিরা হলেন বাংকো সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান আবদুল মুহিত এবং পরিচালক শফিউল আজম, ওয়ালিউল হাসান চৌধুরী, নুরুল ঈশান সাদাত, এ মুনিম চৌধুরী ও জামিল আহমেদ চৌধুরী।
২০২০ সালের জুনে ডিএসইর এক তদন্তে উঠে আসে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের মালিকপক্ষ গ্রাহকের ৮০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছে। ৫৭ পুরানা পল্টনে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ। আর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির এমডি শহিদ উল্লাহ ও তাঁর স্ত্রী নিপা সুলতানাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
২১ হাজার বিনিয়োগকারীর হিসাব ছিল এই হাউসে। আর গ্রাহকদের টাকা ছিল ১০০ কোটি। শেয়ার কেনাবেচার বাইরে বেআইনিভাবে লভ্যাংশের বিনিময়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকাও নিতেন তাঁরা। মালিকপক্ষ ১৮ কোটি টাকা সরিয়ে নিয়েছিলেন নিজেদের ব্যাংক হিসাবে।
আরও পড়ুন:জনগণ সহজেই যেন কর দিতে পারে সে জন্য সংস্কারের মাধ্যমে রাজস্বব্যবস্থাকে বদলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব ভবনে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জোর করে কারো কাছ থেকে রাজস্ব আহরণ করা যায় না। সে জন্য জনগণকে সচেতন করতে হবে।’
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা জোর দিয়েছি সিস্টেমের ওপর। সিস্টেম যাতে সহজ হয় সে জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।’
এ সময় এনবিআরের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ১৮তম লটারির ড্রয়ের পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে রহমাতুল মুনিম জানান, গত তিন বছর পর পর করহার কমানো হয়েছে। ধারণা করা হয়, করহার কমলে রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু এটা ঠিক নয়, বরং করহার কমালে ও আদায় প্রক্রিয়া সহজ করলে রাজস্ব আদায় বাড়ে। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে এনবিআর কাজ করছে।
বর্ধিত কর আহরণের জন্য নেট বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। দেশে করদাতা শনাক্তকারী নম্বর বা টিআইএনধারীর সংখ্যা অনেক বেশি হলেও সে অনুযায়ী রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা কম বলে জানান তিনি।
এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, রিটার্ন জমার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে নতুন অর্থবছরে। সেটি হলো রিটার্ন দাখিলের সঙ্গে আগের বছরের দলিলপত্র ও আনুষঙ্গিক প্রমাণাদি জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে করে আশা করা হচ্ছে, রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বাড়বে।
তিনি বলেন, 'উপজেলা পর্যন্ত নতুন করদাতার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সে জন্য আমরা উপজেলা পর্যন্ত কর অফিস সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করেছি এবং এ বিষয়ে সম্প্রসারণ প্রস্তাব জনপ্রশাসনের জমা দেয়া হয়েছে। আশা করছি, এটি কার্যকর হলে উপজেলা পর্যায়ে করদাতা শনাক্ত করা সহজ হবে।'
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আয়কর, মূল্য সংযোজন কর ও কাস্টমসে আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া চলছে। ফলে গোটা রাজস্বব্যবস্থা বদলে যাবে। রাজস্ব আহরণে বাড়বে গতি। সামগ্রিকভাবে দেশের চেহারা বদলে দেয়ার জন্য এনবিআর বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে আগামী দিনে।
ভ্যাটব্যবস্থায় প্রবর্তিত আধুনিক প্রযুক্তির মেশিন
ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস বা ইএফডি নিয়ে কথা বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এটি একটি নতুন প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত হতে একটু সময় লাগবে। সারা দেশে ৭ হাজার ভ্যাট মেশিন বসানো হয়েছে। যদিও গত বছর পর্যন্ত টার্গেট ছিল ১০ হাজার মেশিন বসানোর।
চেয়ারম্যান জানান, ইএফডি মেশিন ব্যবহার উৎসাহিত করতে লটারি সিস্টেম চালু করা হলেও এর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ তেমন নেই। কেন আগ্রহ নেই সেটি বোধগম্য নয় বল জানান তিনি।
এ বিষয়ে তিনি আরো জানান, লটারি ড্রর পর পুরস্কারের জন্য আবেদন জমা হয়েছে প্রায় ১৮০০। কিন্তু দাবি এসেছে মাত্র একটি। অবশ্য পুরস্কারের জন্য দাবি কেন কম পড়েছে তার ব্যাখ্যা দেননি এনবিআর চেয়ারম্যান।
খুচরা পর্যায় ভ্যাট আদায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। বলেন, এই খাতে ভ্যাট আদায় প্রক্রিয়া এখনো অস্বচ্ছ। চেষ্টা করা হচ্ছে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার। কিন্তু সফল হতে পারছি না। এর একটি কারণ হতে পারে, খুচরা ব্যবসায়ীদের সংখ্যা অনেক বেশি। যে কারণে তাদের কাছ থেকে যথাযথ ভ্যাট আদায় করা কঠিন।
তিনি বলেন, এখানে তদারকি ব্যবস্থা দুর্বল। এটি শক্তিশালী করা গেলে খুচরা পর্যায়ে ভ্যাট আদায়ের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। এ জন্য অটোমেশনে কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুন:ঈদকে সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে দাম নির্ধারণ করে দিল সরকার। ট্যানারি মালিকদের এবার আগের তুলনায় প্রতি বর্গফুটে গরুর চামড়া ৭ টাকা ও খাসির চামড়া ৩ টাকা বাড়তি দরে কিনতে হবে।
অবশ্য এই দর ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ভিন্ন হবে। এবার ঢাকায় লবণযুক্ত চামড়া কিনতে হবে ৪৭-৫২ টাকায়, যা গত বছর ৪০ থেকে ৪৫ টাকা বর্গফুট হিসেবে কিনেছিলেন ব্যবসায়ীরা।
এই দর তার আগের বছর বা ২০২০ সালে ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।
ঢাকার বাইরে এবার সারা দেশে ট্যানারি মালিকরা লবণযুক্ত গরুর চামড়া কিনবেন ৪০ থেকে ৪৪ টাকা দরে। গত বছর এই দাম ছিল ৩৩-৩৭ টাকা। আর ২০২০ সালে ছিল ২৮ থেকে ৩২ টাকা বর্গফুট।
এ ছাড়া সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়ার দর ৩ টাকা বাড়িয়ে প্রতি বর্গফুটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ থেকে ২০ টাকা। গত বছর খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ছিল ১৫ থেকে ১৭ টাকা, যা ২০২০ সালে ছিল ১৩ থেকে ১৫ টাকা।
তবে এবার বকরির চামড়ার বর্গফুটপ্রতি দাম গত বছরেরটাই বহাল রাখা হয়েছে। গত বছর বকরির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ছিল ১২ থেকে ১৪ টাকা, যা ২০২০ সালে ছিল ১০ থেকে ১২ টাকা।
মঙ্গলবার ঈদুল আজহা ২০২২ উপলক্ষে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত বৈঠক শেষে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ চামড়ার এই মূল্যস্তর নির্ধারণ করেন।
এর আগে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি চামড়ার এই মূল্য নির্ধারণ করে দেন।
তবে এবার সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাই প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৫ টাকা ও খাসির চামড়ার দাম ৩ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের গরুর চামড়ার দাম প্রস্তাবের সঙ্গে দুই টাকা বাড়তি যোগ করে খাসির চামড়ার দাম ৩ টাকা অপরিবর্তিত রাখেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ বৈঠকে কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ, ক্রয়-বিক্রয়, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, মজুত, চামড়ায় লবণ লাগানো ও মিডিয়ায় প্রচারের বিষয়ে আলোচনা হয়।
আরও পড়ুন:দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানির দর বৃদ্ধি প্রবণতার সঙ্গে টানা দুই দিন পতনের পরে ঘুরে দাঁড়াল পুঁজিবাজার। গতি এলো লেনদেনেও।
আগের সপ্তাহে টানা চার দিন সূচকে অল্প অল্প করে মোট ৭৫ পয়েন্ট যোগ হয়। সর্বশেষ কর্মদিবসে লেনদেন ৯০০ কোটির ঘর অতিক্রম করেছিল। তবে চলতি সপ্তাহের শুরুতে বড় ব্যবধানে লেনদেন হ্রাস পায়, কমে সূচকও। দ্বিতীয় দিনেও সেই ধারা অব্যাহত ছিল।
প্রথম দিনে ১৭ ও দ্বিতীয় দিনে ১২ অর্থাৎ দুই কর্মদিবসে ২৯ পয়েন্ট সূচক হ্রাস পায়। তৃতীয় কর্মদিবস মঙ্গলবার কিছুটা পুষিয়ে দিল ২৫ পয়েন্ট বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে।
নতুন বছর শুরু হতে না হতেই আন্তর্জাতিক নানা ঘটনাপ্রবাহ, ইউক্রেন যুদ্ধ, শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়, ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন- ইত্যাদি কারণে মন্দা যেন কাটছিল না। এমতাবস্থায় নতুন অর্থবছরে নতুন বিনিয়োগে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে এমন আশার বাণী শোনান পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা।
তাদের ভাষ্যমতে, অর্থবছরের শেষে বিভিন্ন কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যা দেখে বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগের ছক আঁকেন। বাজারে নতুন ফান্ড ইনজেক্ট হয়। যার কারণে ইতিবাচক চাঞ্চল্য দেখা যায়।
কিন্তু অর্থবছরের শুরু দুই দিনে লেনদেন হাজার কোটির কাছাকাছি থেকে ৬০০ কোটির ঘরে নেমে আসে। এতে শঙ্কা তৈরি হয় কোনদিকে যাচ্ছে পুঁজিবাজার।
তবে ভাটা পড়া লেনদেনে কিছুটা জোয়ার এলো। দিনভর হাতবদল হয়েছে ৯৬০ কোটি ৭৯ লাখ ৬১ হাজার টাকা, যা ১৩ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে এর চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল ১৬ জুন। ওই দিন ডিএসইতে হাতবদল হয় ১ হাজার ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ ২২ হাজার টাকার।
সমানসংখ্যক শেয়ারদর বৃদ্ধি ও পতন হয়েছে। ১৬০টি শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৫৯টির। অপরিবর্তিত দামে লেনদেন হয়েছে ৬৩টি কোম্পানির শেয়ার।
লেনদেনের বিষয়ে এক্সপো ট্রেডার্সের প্রধান নির্বাহী শহিদুল হোসেন বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনার ফলে লেনদেন ও সূচক উভয়ই বেড়েছে। ঈদের আগে মানুষের টাকার প্রয়োজন পড়ে, সেটা বিগত কয়েক দিনে তুলে ফেলেছে। এখন আর টাকার প্রয়োজন নেই। ফলে যে টাকা ছিল তাতে কিছু কেনাবেচা করেছেন বিনিয়োগকারীরা।’
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০
দর বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে ইস্টার্ন ক্যাবলস। গতকাল দর বৃদ্ধির তৃতীয় স্থানে ছিল কোম্পানিটি। আজ ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেড়ে ১৬১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে সর্বশেষ দাম ১৭৭ টাকা ৬০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। গতকালও প্রায় সমান পরিমাণ দর বেড়েছিল কোম্পানিটির।
গতকাল ডিএসইর মাধ্যমে কোম্পানি জানায়, তারা অ্যালুমিনিয়াম তার সরবরাহের লক্ষ্যে চায়না ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি সই করে। এ খবরে টানা দুই দিন সর্বোচ্চ সীমায় দর বাড়ল।
২০১৭ সালে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ১৯ পয়সায় আয় হয়েছিল। এরপর টানা চার বছর লোকসানে রয়েছে কোম্পানি। বিগত দুই বছর লভ্যাংশ না দিলে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছে ইস্টার্ন ক্যাবলস। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ১০ শতাংশ ছাড়া সবই নগদ ছিল।
প্রায় একই সমান দর বেড়েছে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। ১২৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে ১৩৬ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে প্রতিটি শেয়ার।
৮ মাস আগেও বর্তমানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে শেয়ার লেনদেন হতে দেখা গেছে। গত বছরের ১৮ নভেম্বর শেয়ারটির দর উঠেছিল ২৩২ টাকা ৯০ পয়সা।
ডিএসইর ওয়েবসাইটে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন-সংশ্লিষ্ট পর্যাপ্ত তথ্য নেই। ২০১৮ সালের পরে আর কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি।
দর বৃদ্ধির তৃতীয় স্থানে রয়েছে আমান কটন লিমিটেড। ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ দর বেড়ে শেয়ার বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা ৫০ পয়সায়। গতকাল সর্বশেষ দর ছিল ২৭ টাকা ৮০ পয়সা।
গত দুই বছরে তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক বছরেরও কম সময়ে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর কোম্পানির দর উঠেছিল ৫২ টাকা ৬০ পয়সায়। এর পরে শুধুই কমেছে দর।
দর বৃদ্ধির তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা এনার্জি প্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের দর বেড়েছে ৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ৩৮ টাকা ৮০ পয়সা থেকে সমাপনী দর দাঁড়িয়েছে ৪১ টাকা ৮০ পয়সায়।
গত বছর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর সেই বছরই বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানি। এ ছাড়া তিন বছরের আর্থিক প্রতিবেদন বলছে, শেয়ার প্রতি প্রায় ৩ টাকার মতো আয় রয়েছে।
চলতি বছরের ২২ মে থেকে দর বাড়ছে শেয়ারের। ওই দিন শেয়ার লেনদেন হয়েছিল ৩৪ টাকা ৪০ পয়সায়।
তালিকার পরের স্থানে থাকা আমান ফিডের দর ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়ে হাতবদল হয়েছে ৩৭ টাকা ৮০ পয়সা।
২০১৫ সালে তালিকাভুক্তির পর কোম্পানিটি প্রতি বছরই নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। সঙ্গে ২০১৯ ও ২০২১ সালে ছাড়া বোনাসও পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। গত বছরের ৩১ আগস্ট ৭৮ টাকা ১০ পয়সায় শেয়ার লেনদেনের পর দর শুধু কমেছেই।
তালিকার দশে স্থান পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে এর পরের স্থানে রয়েছে যথাক্রমে সোনালী পেপার, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, মীর আখতার হোসেন লিমিটেড, ফু-ওয়াং ফুড ও তিতাস গ্যাস লিমিটেড।
দরপতনের শীর্ষ ১০
দরপতনের শীর্ষে রয়েছে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। শেয়ারটির দর ৫০ পয়সা বা ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে সর্বশেষ ২৪ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়।
১৩৩ বারে কোম্পানিটির মোট ২ লাখ ৩৯ হাজার ৩৪৮টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার বাজারমূল্য ৫৯ লাখ টাকা।
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লুজার তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। শেয়ারটির দর ৫ টাকা ৩০ পয়সা বা ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমেছে। শেয়ারটির সর্বশেষ দর দাঁড়িয়েছে ২৬১ টাকা ৯০ পয়সা।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে সাভার রিফ্যাক্টরিজ। ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ দর বেড়ে শেয়ারটির দর দাঁড়িয়েছে ২৪৩ টাকা ১০ পয়সায়। লোকসানে ডুবে থাকা এক কোটি ৩৯ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটি কোনো দিনই বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
এর পরেই মনস্পুল পেপারের দর ৩ টাকা ২০ পয়সা বা ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ কমে ১৫৯ টাকা ৫০ পয়সায় হাতবদল হয়েছে।
দরপতনের শীর্ষ দশে রয়েছে যথাক্রমে পেপার প্রসেসিং, ইমাম বাটন, নিউ লাইন ক্লোথিং, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল, শ্যামপুর সুগার মিলস ও কেডিএস অ্যাক্সেসরিজ।
সূচক বাড়াল যারা
সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৬১ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে গ্রামীণফোন। এদিন কোম্পানিটির দর ৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বেড়েছে।
সূচকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পয়েন্ট যোগ করেছে রবি। দর ১ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ৩ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট।
বেক্সিমকো লিমিটেড সূচকে যোগ করেছে ২ দশমিক ৯২ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
এ ছাড়া তিতাস গ্যাস, ওয়ালটন হাইটেক, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বিকন ফার্মা, পাওয়ার গ্রিড, সোনালী পেপার ও বার্জার পেইন্টস সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৯১ পয়েন্ট।
সূচক কমাল যারা
সবচেয়ে বেশি শূন্য দশমিক ৮২ পয়েন্ট সূচক কমেছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ-আইসিবির কারণে। কোম্পানিটির দর কমেছে ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৭ পয়েন্ট কমিয়েছে ইউনাইটেড পাওয়ার। কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে শূন্য দশমিক ৫২ শতাংশ।
এর পরই স্কয়ার ফার্মার দর শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ৬৬ পয়েন্ট।
এ ছাড়া আল-আরাফাহ ব্যাংক, বেক্সিমকো সুকুক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ট্রাস্ট ব্যাংক, বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং কোম্পানি, সাউথ ইস্ট ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংকের দরপতনে সূচক কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি কমিয়েছে ৪ দশমিক ৬ পয়েন্ট।
আরও পড়ুন:অর্থনীতিতে আমদানি ব্যয়ের চাপ কমাতে এবং বিলাস পণ্য আমদানির লাগাম টেনে ধরতে আরও কড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সব ধরনের মোটরকার, হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, প্রসাধনী, স্বর্ণালংকার, তৈরি পোশাক, গৃহস্থালি বৈদ্যুতিক সামগ্রী বা হোম অ্যাপ্লায়েন্স, পানীয়সহ বেশকিছু পণ্য আমদানিতে এখন থেকে ব্যাংক থেকে কোনো ধরনের ঋণসুবিধা পাবেন না আমদানিকারকরা।
এসব পণ্যের আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে শতভাগ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে। এর আগে যা ছিল ৭৫ শতাংশ।
অর্থাৎ এসব বিলাসজাতীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে পণ্যের পুরো আমদানিমূল্য ব্যাংকে জমা দিতে হবে আমদানিকারকদের। এসব পণ্য আমদানির জন্য ব্যাংক কোনো ধরনের ঋণ দিতে পারবে না।
সব ধরনের মোটরকারসহ বেশকিছু বিলাস পণ্য আমদানিতে এখন থেকে ব্যাংক থেকে কোনো ধরনের ঋণসুবিধা পাবেন না আমদানিকারকেরা। ফাইল ছবি
দেশের সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো এক সার্কুলারে সোমবার এই নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় চাপের মুখে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। বাণিজ্য ঘাটতি ৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
ফলে ডলারের দাম বেড়েই চলেছে। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারেই এখন এক ডলারের জন্য ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা খরচ করতে হচ্ছে।
ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রি করছে এর চেয়ে সাড়ে পাঁচ-ছয় টাকা বেশি দরে।
এ নাজুক পরিস্থিতিতে আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে বিলাস পণ্য আমদানি কমাতে আরও কড়াকড়ি আরোপ করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, করোনার দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব এবং বহির্বিশ্বে সাম্প্রতিক যুদ্ধাবস্থা প্রলম্বিত হওয়ার কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশের মুদ্রা ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অধিকতর সুসংহত রাখার লক্ষ্যে আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে নগদ মার্জিন হার পুনর্নির্ধারণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হলো।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মোটরকার (সেডানকার,এসইউভি, এমপিভি ইত্যাদি), ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিকস হোম অ্যাপ্লায়েন্স, স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকার, মূল্যবান ধাতু ও মুক্তা, তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, প্রসাধনী, আসবাব ও সাজসজ্জার সামগ্রী, ফল ও ফুল, নন–সিরিয়াল ফুড (যেমন অশস্য খাদ্যপণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্য ও পানীয়, যেমন টিনজাত খাদ্য, চকলেট, বিস্কুট, জুস, সফট ড্রিংকস ইতাদি), অ্যালকোহল–জাতীয় পানীয়, তামাক, তামাকজাত বা এর বিকল্প পণ্যসহ অন্যান্য বিলাসজাতীয় পণ্যের আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে শতভাগ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে।
অর্থাৎ কোনো ব্যবসায়ী বা ব্যক্তি ১ কোটি টাকার একটি গাড়ি আমদানি করতে চাইলে তাকে পুরো টাকা নগদ দিতে হবে। ব্যাংক কোনো ঋণ দেবে না।
গত ১১ এপ্রিল জরুরি পণ্য ছাড়া অন্য সকল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ এলসি মার্জিন রাখার নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
এরপর ১০ মে সে নির্দেশনায় পরিবর্তন এনে সব ধরনের গাড়ি, ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিকস সামগ্রী আমদানির এলসি খুলতে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ নগদ মার্জিন রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। জরুরি পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ মার্জিন রাখতে বলা হয়।
আরও পড়ুন:বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) বিশাল ঘাটতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। অর্থবছরের এক মাস বাকি থাকতেই অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে এই ঘাটতি ১৭ বিলিয়ন (১ হাজার ৭০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই কোনো অর্থবছরে এত বড় ঘাটতি দেখা যায়নি। আমদানির উল্লম্ফনে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকে এই বেহাল দশা হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষকরা।
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেই ১ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে ২০২২-২৩ অর্থবছর। করোনাভাইরাস নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রের যুদ্ধের আঘাত তো লেগেই আছে। সিলেট-সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং হচ্ছে।
সব মিলিয়ে নানা চ্যালেঞ্জ নিয়েই শুরু হলো নতুন অর্থবছর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা। অস্বাভাবিক আমদানি বৃদ্ধি অর্থনীতিকে যে সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে, সেই ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরাও আরেকটি চ্যালেঞ্জ।
৩০ জুন ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার বিদায়ী অর্থবছরের ১১ মাসের (জুলাই-মে) ব্যালান্স অফ পেমেন্টের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, ওই ১১ মাসে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার।
আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে এই সূচক মাত্র ২ দশমিক ৭৮ বিলিলয়ন ডলার ঘাটতি ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছর শুরুই হয়েছিল লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি নিয়ে। প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৩১ কোটি ৪০ লাখ (২.৩১ বিলিয়ন) ডলার। চার মাস শেষে (জুলাই-অক্টোবর) তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭৭ কোটি ডলার। এভাবে প্রতি মাসেই বাড়তে বাড়তে ১১ মাস শেষে অর্থাৎ মে মাস শেষে এই ঘাটতি ১৭ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
অর্থবছরের বাকি এক মাসের তথ্য যোগ হলে এই ঘাটতি ২০ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছতে পারে বলে হিসাব দিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘অস্বাভাবিক আমদানি বৃদ্ধির কারণে বৈদেশিক লেনদেনে এই বিশাল ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ কথা ঠিক যে, আমদানি বাড়ার একটা ভালো দিকও আছে। দেশে বিনিয়োগ বাড়ে; কর্মসংস্থান হয়। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি খাতে খরচ যেভাবে বাড়ছে, তা ধারণ করার মতো ক্ষমতা বাংলাদেশের অর্থনীতির নেই। সে কারণেই মুদ্রাবাজার তথা ডলারের বাজারে অসিস্থরতা বা সংকট দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাজারে ডলার ছেড়েও নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না।’
‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসের ঊর্ধ্বমূল্য আমদানি খরচ বাড়ার একটি কারণ। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। এই ব্যয় বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতিও বাড়ছে। সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে সংকট বাড়ছে।’
এ অবস্থায় আমদানি কমাতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরামর্শ দেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর।
বেশ কয়েক বছর পর ২০২০-২১ অর্থবছরে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতিতে পড়ে বাংলাদেশ। প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ওই বছর।
তার আগে ৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারের বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষ হয়েছিল। তার আগের বছরে উদ্বৃত্ত ছিল ৩১৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি
সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালেন্স) ঘাটতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। বিদায়ী অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার।
অথচ গত বছরের একই সময়ে এই উদ্বৃত্ত ছিল ৮ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার।
নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।
আর্থিক হিসাবে বড় উদ্বৃত্ত
তবে আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যানশিয়াল অ্যাকাউন্ট) এখনও বড় উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে এই উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের এই সময়ে ১১ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।
করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ অন্য দাতাদেশ ও সংস্থার কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত ঋণসহায়তা পাওয়ায় আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত হয়েছে বলে জানান আহসান মনসুর।
বাণিজ্য ঘাটতি ৩১ বিলিয়ন ডলার
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এর পর থেকেকই আমদানিতে জোয়ার বইতে শুরু করেছে। আর এতে আমদানি-রপ্তানির মধ্যে ব্যবধানও চূড়ায় উঠতে শুরু করে।
বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) বাংলাদেশে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার। এক্ষেত্রেও রেকর্ড হয়েছে। এর আগে কখনই এত বাণিজ্য ঘাটতির মুথে পড়েনি দেশ।
গত অর্থবছরের একই সময়ের এই ঘাটতি ছিল ২০ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। আর পুরো অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল ২২ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-মে ৭৫ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৯ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ বেশি।
২০২০-২১ অর্থবছরের এই ১১ মাসে ৫৪ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।
অন্যদিকে জুলাই-মে সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৩ শতাংশ বেশি।
এ হিসাবেই ১১ মাসে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩১ বিলিয়ন ডলার।
নতুন বছরে বাণিজ্য ঘাটতি হবে ৩৭ বিলিয়ন ডলার
আমদানি কমার কোনো সুখবর দিতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। উল্টো উদ্বেগের সঙ্গে জানিয়েছে, নতুন বছরে বাণিজ্য ঘাটতি ৩৭ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে। আর বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে এই ঘাটতি ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৃহস্পতিবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে এই পূর্বাভাস দিয়েছে।
নতুন মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, দেশে রপ্তানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ৩০ জুন শেষ হওয়া বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি ৩৩ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। ২০২১-২২ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে ২৬ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ঘাটতি হতে পারে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছিল।
নতুন মুদ্রানীতিতে বাণিজ্য ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার।
নতুন মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানিতে ৩২ শতাংশ প্রবিৃদ্ধি হবে। অর্থাৎ বিদায়ী অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ৩২ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় দেশে আসবে। অন্যদিকে আমদানি ব্যয় বাড়বে ৩৫ শতাংশ। প্রবাসীয়দের পাঠানো প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমবে ১৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৭ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার।
নতুন অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি কমে ১৩ শতাংশে নেমে আসবে। আমদানি ব্যয় বাড়বে ১২ শতাংশ। রেমিট্যান্স ঊর্ধ্বমুখী হবে এবং ১৫ শতাংশ বাড়বে। ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৬ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার।
সেবা বাণিজ্যে ঘাটতিও বাড়ছে
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ২ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার।
মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য