অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় যুবলীগের কথিত সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমের মা আয়েশা আক্তার আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে মঙ্গলবার আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন আয়েশা আক্তার।
তার পক্ষে জামিন শুনানি করেন মিজানুর রহমান।
শুনানিতে মিজানুর রহমান বলেন, ‘তিনি (আয়েশা আক্তার) একজন বয়োবৃদ্ধা ও অসুস্থ মানুষ, এ মামলার বিষয়ে তিনি কিছু অবগত নন, তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে হুজুরের আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। যেকোনো শর্ত পূরণে রাজি আছেন, তাই তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করা হোক। যেকোনো শর্তে তার জামিনের প্রার্থনা করছি।’
দুদকের পক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল জামিনের বিরোধিতা করেন।
শুনানিতে তিনি বলেন, ‘উনি নারী হলেও অনেক দিন পলাতক থাকার পর আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। তিনি জামিন নিয়ে পলাতক হলে আবারও মামলার বিচার কাজ বিলম্বিত হবে।’
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয় বলে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন দুদকের আদালত পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম।
গত বছরের ১৬ নভেম্বর আদালত জি কে শামীম এবং তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে দুদকের দেয়া অভিযোগপত্র আমলে নেয়। তখন আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর জি কে শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন। গত বছর দুই জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:রাজধানীর পান্থপথের একটি আবাসিক হোটেল থেকে নারী চিকিৎসকের গলা কাটা দেহ উদ্ধার করেছে কলাবাগান থানা পুলিশ।
‘ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট’ নামের হোটেল থেকে বুধবার রাতে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
২৭ বছর বয়সী ওই চিকিৎসকের নাম জান্নাতুল নাঈম সিদ্দীক। তিনি ঢাকা কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস করেছেন।
জান্নাতুল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একটি কোর্সে পড়ছিলেন।
কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ওই হোটেলে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রেজাউল নামের একজনের সঙ্গে উঠেছিলেন জান্নাতুল। হোটেলটির চতুর্থ তলার ৩০৫ নম্বর কক্ষের বিছানার ওপর থেকে জান্নাতুলের গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, রেজাউলকে আটকের চেষ্টা চলছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:বাসভাড়া নিয়ে রাজধানীতে যে নিত্য প্রতারণা চলছে, তার বাইরে নয় সরকারি সংস্থা রাজউক পরিচালিত বাসও।
রাজধানীর হাতিরঝিলে চক্রাকার যে বাস পরিচালনা করা হয়, তাতে সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর নির্ধারণ করে দেয়া হারের আড়াই গুণের বেশিও ভাড়া আদায় করা হয়। বিআরটিএ সর্বনিম্ন যে ভাড়া ঠিক করে দিয়েছে, রাজউকের কোম্পানি আদায় করে তার দ্বিগুণ।
রাজউক নিজে অবশ্য এই বাস পরিচালনা করে না। অর্থের বিনিময়ে ইজারা নিয়েছে কোম্পানি। আর ইজারাদারের স্বার্থ দেখতে গিয়ে উপেক্ষা করছে জনগণের স্বার্থ।
বিআরটিএর হারের দ্বিগুণের বেশি ভাড়া আদায়ের পেছনে এক রাজউক কর্মকর্তার দাবি, তাদের বাসযাত্রী পরিবহনের সাধারণ বাহন নয়, এটি পর্যটন সংশ্লিষ্ট। ফলে বেশি ভাড়া আদায় করা যায়। অথচ এই বাসে ঢাকার লোকাল যেকোনো বাসের মতোই দাঁড়িয়ে যাত্রী বহন করা হয়। আর পর্যটন নয়, হাতিরঝিলের এক পাশ থেকে অপর পাশে যাতায়াতের জন্যই যাত্রীরা বাসটি ব্যবহার করে।
রাজধানীর হাতিরঝিলে চক্রাকার যে বাস পরিচালনা করা হয়, তাতে সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর নির্ধারণ করে দেয়া হারের আড়াই গুণের বেশিও ভাড়া আদায় করা হয়। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/নিউজবাংলা
২০১৬ সালে এই সড়কে যাত্রী পরিবহনে ১০টি মিনিবাস চালু হয়। বর্তমানে চলছে ২০টি। ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে সেগুলো।
এইচআর ট্রান্সপোর্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান রাজউকের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে চালাচ্ছে এগুলো।
গত নভেম্বর এবং চলতি আগস্টে তেলের দাম দুই দফা বাড়ানোর পর বাসের ভাড়া দুই দফা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে ফেলা হয়েছে। অথচ দুইবার বাড়ানোর পর যে বাসভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ভাড়া আগেই আদায় করা হতো।
২০১৬ সালে রাজধানীর হাতিরঝিলে যাত্রী পরিবহনে ১০টি মিনিবাস চালু হয়। বর্তমানে চলছে ২০টি। সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে সেগুলো। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/নিউজবাংলা
দূরত্ব, বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়া- কোনো কিছুই খাটে না এখানে
গত শুক্রবার লিটারে ৩৪ টাকা করে ডিজেলের দাম বাড়ানোর পরদিন বিআরটিএ রাজধানীতে প্রতি কিলোমিটারে বাসভাড়া আড়াই টাকা নির্ধারণ করে জানায়, সর্বনিম্ন ভাড়া হবে ১০ টাকা। অর্থাৎ চার কিলোমিটার যাওয়া যাবে এই ভাড়ায়। এরপর প্রতি কিলোমিটার হিসেবে যোগ হবে আরও আড়াই টাকা করে।
কিন্তু নিউজবাংলা হিসাব করে দেখেছে, হাতিরঝিলে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে কিলোমিটার প্রতি ৬ টাকারও বেশি হারে।
এফডিসি কাউন্টার থেকে রামপুরা পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ কিলোমিটার দূরত্বে এখানে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ২৫ টাকা। প্রতি কিলোমিটার ভাড়া পড়ছে ৫ টাকা ৯৫ পয়সা।
এত দিন আদায় করা হতো ২০ টাকা। তখন কিলোমিটার পড়ত ৪ টাকা ৭৬ পয়সা। তাতেও পোষেনি ইজারাদারের।
অথচ বিআরটিএর বেঁধে দেয়া হিসেবে ভাড়া আসে ১০ টাকা ৫০ পয়সা। এই হারের চেয়ে বেশি নেয়া সম্ভব নয় বিধায় যাত্রীদের আসলে ১০ টাকায় চলাচল করার কথা ছিল।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ১০ টাকায় বাসে ওঠারই জো নেই। প্রথম যখন বাস চালু করা হয়, সে সময়ই এই পথের ভাড়া ঠিক করা হয় ১৫ টাকা আর সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল ১০ টাকা।
এরপর নভেম্বরে সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক করা হয় ১৫ টাকা, এবার ঠিক করা হয়েছে ২০ টাকা।
এই ২০ টাকায় কত দূর যাওয়া যায়?
এফডিসি বাসস্টপ থেকে পুলিশ প্লাজা পর্যন্ত ৩ দশমিক ১ কিলোমিটার আর পুলিশ প্লাজা থেকে রামপুরা পর্যন্ত আরও ১ দশমিক ১ কিলোমিটারের জন্যও এই ভাড়া ঠিক করা হয়েছে।
বিআরটিএ সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা ঠিক করে না দিলে প্রথম গন্তব্যে সর্বোচ্চ ভাড়া হওয়া উচিত ছিল ৭ টাকা ৭৫ পয়সা এবং দ্বিতীয় গন্তব্যে হওয়া উচিত ছিল ২ টাকা ৭৫ পয়সা।
কিন্তু এখন এফডিসি থেকে পুলিশ প্লাজা পর্যন্ত ভাড়া পড়ছে ৬ টাকা ৪৫ পয়সা হারে, আর পুলিশ প্লাজা থেকে রামপুরা পর্যন্ত ১৮ টাকা ১৮ পয়সা হারে।
রামপুরা থেকে মধুবাগ পর্যন্ত ৩ দশমিক ৬ কিলোমিটারের জন্যও আদায় করা হচ্ছে ২০ টাকা, যা আগে ছিল ১৫ টাকা।
আগে ভাড়ার হার ছিল ৪ টাকা ১৬ পয়সা, এখন হয়েছে ৫ টাকা ৫৫ পয়সা।
শুরু থেকেই হাতিরঝিলের চক্রাকার পুরো পথ যাওয়ার সুযোগ ছিল। একেবারে শুরুতে ঠিক করা হয় ৩০ টাকায় যাওয়া যাবে ৭ দশমিক ৪ কিলোমিটারের এই পথ। দুই বার ৫ টাকা করে বাড়িয়ে এখন তা করা হয়েছে ৪০ টাকা।
প্রতি কিলোমিটার ভাড়া পড়ছে ৫ টাকা ৪০ পয়সা হারে।
ভাড়া বাড়িয়েছে কর্তৃপক্ষ, নেই কারও সই
গত মঙ্গলবার থেকে বাড়তি ভাড়া কার্যকর করা হয়েছে। কাউন্টারের সামনে একটি তালিকা টানানো হয়েছে ভাড়া বাড়ানোর। নিচে লেখা আছে ‘কর্তৃপক্ষ’। তবে এই কর্তৃত্ব কার তা জানা যায়নি, কারণ, কোনো কর্মকর্তার সই নেই।
এফডিসি বাস স্টপেজের টিকিট বিক্রেতা মাসুদ করিমকে ১৫ টাকা দিয়ে পুলিশ প্লাজার টিকিট দিতে বলা হলে তিনি বলেন, ‘১৫ টাকার কোনো টিকিট নেই, ২০ টাকা।’
এরপর তিনি ভাড়া বাড়ানোর বিজ্ঞপ্তি দেখতে বলেন। বিজ্ঞপ্তিতে কারও সই না থাকার বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ‘এইটাই। গেলে ২০ টাকা দেন।’
যাত্রীরা রাগে গজ গজ করতে করতে টিকিট কাটছিলেন আর একজন আরেকজনের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে থাকেন, বলতে থাকেন, কোন যুক্তিতে এইটুকু পথের জন্য এত ভাড়া হয়।
আবার বাড়তি ভাড়া নেয়া হলেও টিকিট দেয়া হচ্ছে আগের হারের। সেই টিকিটে একটা সিল দেয়া হয়েছে কেবল। এ নিয়ে টিকিট বিক্রেতার মন্তব্য দায়সারা গোছের।
কখনও চলেনি বিআরটিএর অভিযান
জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর গত নভেম্বরে বাস ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়ার পর বাড়তি ভাড়া আদায় ঠেকাতে বিআরটিএ রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে যে অভিযান চালায়, তখন বাদ পড়ে হাতিরঝিলের চক্রাবাস বাস।
এবার যখন বাড়তির ওপর আরও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে, তখনও বিআরটিএ এই পথের বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না।
গতবার বাসভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যের বিষয়ে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের ফোন দিলে তারা কথা বলতেন। এবার কোনো ফোনই তারা রিসিভ করছেন না। একবার বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার কল রিসিভ করার পর তিনি এসএমএস করতে বলেন। বাসভাড়ায় নৈরাজ্য এবং বিআরটিএর কার্যত ঘুমিয়ে থাকার বিষয়ে প্রশ্ন লিখে পাঠানো হলে তিন দিনেও তার জবাব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি তিনি।
সুপারভাইজারের দাবি, এই জগত ভিন্ন
নির্ধারিত হারের দ্বিগুণের বেশি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে লাইন সুপারভাইজার শওকত হোসেনের বক্তব্য বিবেচনায় নিলে বলতেই হয়, হাতিরঝিল একটি ভিন্ন জগৎ। এখানে সরকারের করা নিয়মকানুন খাটে না। তারা যা বলবে, সেটিই বিধান।
তিনি বলেন, ‘বাইরের ভাড়ার সঙ্গে এখানের ভাড়া কমপেয়ার করলে হবে না। এই গাড়িগুলো সম্পূর্ণ আলাদা। এটা হাতিরঝিল প্রজেক্টের গাড়ি। এটা টুরিস্ট বাস হিসেবে চলে।’
বাইরের বাসের সঙ্গে এই বাসের সার্ভিসের কী পার্থক্য- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হাতিরঝিলে টুরিস্ট বাস হিসেবে বরাদ্দ।’
যাত্রীরা তো দাঁড়িয়ে যায় আপনাদের বাসে। তাহলে বেশি ভাড়া কেন নিচ্ছেন- উত্তরে তিনি বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে প্রজেক্ট এইভাবেই চুক্তিবদ্ধ।’
ভাড়ার চার্টে বিআরটিএ বা রাজউকের কোন স্বাক্ষর নাই। কীভাবে বুঝব আপনারা প্রতারণা করছেন না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আপনার তো অপশন আছে। আপনি রাজউকের কাছে যান।’
এইচআর ট্রান্সপোর্টের ফিল্ড অফিসার মাসুদ করিমও বলেন, ‘আপনি রাজউকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’
বিআরটিএ বা রাজউকের সই ছাড়া এই চার্ট কেন ভিত্তিহীন ধরা হবে না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘রাজউক স্বাক্ষরিত যে চার্ট, সেটা অফিসে আছে।’
তবে রাজউকের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। ফলে তারা কোনো নতুন চার্ট তৈরি করে দেননি।
এই বিষয়টি জানালে মাসুদ করিম বলেন, ‘তাহলে আমি জানি না। আপনি রাজউকে যোগাযোগ করেন।’
রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (প্রজেক্ট অ্যান্ড ডিজাইন) এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তারা বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে রাজউকের কাছে আবেদন করেছে। কিন্তু রাজউক তো অনুমোদন দেয় নাই এখনও।’
রাজউকের অনুমোদন ছাড়া কি বাড়তি ভাড়া নিতে পারে?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘রাজউক অনুমোদন দেবে না দেবে না, সে জন্য তো তেলের দাম বাড়া বসে থাকে না। আমরা স্বাক্ষর দিয়ে দেব।’
তাহলে আপনাদের কথাতেই তারা ভাড়া বাড়িয়েছে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা বলতে যাব কেন। তারা তাদের হিসেবে বাড়িয়েছে।’
সরকারের নির্ধারিত ভাড়ার দুই গুণের বেশি ভাড়া নিচ্ছে তারা। আপনাদের হিসাব কীভাবে হয়- এমন প্রশ্নে রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, ‘এখানে কিলোমিটার ধরে ভাড়া নিচ্ছে না তো। এখানে কিলোমিটারের হিসেব চলে না।’
‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে এমন নৈরাজ্য হলে অন্যরা করবেই’
যাত্রী অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যখন সরকারের বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে ভাড়ার নৈরাজ্য হয় তখন নগরীর অন্য বাসগুলো আরও সুযোগ নিতে চায়। আমি মনে করি রাজউকের এখানে দায়বদ্ধতা আছে, বিআরটিএ এর দায়বদ্ধতা আছে, ঢাকা সিটি করপোরেশনের দায়বদ্ধতা আছে।’
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় আহত হয়ে সিঙ্গাপুরে হাসপাতালে মৃত্যু হওয়া র্যাবের এয়ার উইং পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেনের প্রথম জানাজা হয়েছে।
রাজধানীর কালশীর বাইতুর রহমান জামে মসজিদে বুধবার রাত সোয়া ৯টার দিকে তার জানাজা হয়।
এর আগে সন্ধ্যা ৭টার দিকে সিঙ্গাপুর থেকে ইসমাইলের মরদেহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এসে পৌঁছায়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখা থেকে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় র্যাব সদরদপ্তরে ইসমাইলের দ্বিতীয় জানাজা হবে। সে জানাজায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, র্যাবের মহাপরিচালক ও অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
জোহরের নামাজের পর ঢাকা সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে ইসমাইলের তৃতীয় জানাজা হবে। সে জানাজা শেষে তার মরদেহ বনানীর সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
গত ২৭ জুলাই ঢাকার নবাবগঞ্জে প্রশিক্ষণ চলাকালে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার শিকার হন র্যাবের এয়ার উইং পরিচালক ৫৪ বছর বয়সী ইসমাইল হোসেন। তাকে শুরুতে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়।
পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৫ আগস্ট সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ইসমাইলকে। ৬ আগস্ট তার মেরুদণ্ডের সফল অস্ত্রোপচার হয়, কিন্তু অন্যান্য শারীরিক জটিলতায় তার অবস্থার অবনতি ঘটে। ৯ আগস্ট আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন:রাজধানীর মিরপুরে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে রুবেল হোসেন ও মুক্ত নামে দুইজনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। রুবেলের বয়স ২২ বছর এবং মুক্তের বয়স ২২ বছর। তারা দুজন চিকিৎসাধীন।
তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন সহকর্মী রাকিব হোসেন। নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া।
তিনি বলেন, ‘রুবেল ও মুক্ত দক্ষিণ খান মোল্লারটেক (ইউ এল ফ্যাশন) পোশাক কারখানায় কাজ করেন। সেখান থেকে এক লক্ষ টাকা নিয়ে গার্মেন্টস এক্সোসরিজ কিনতে উত্তরা থেকে প্রজাপতি বাসে মিরপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
‘ঐ বাসেই তারা অজ্ঞান পার্টি খপ্পরে পড়েন। পরে মিরপুর ২ বাস স্ট্যান্ড যাওয়ার পর অচেতন অবস্থায় বাসের ভিতরে পড়ে থাকতে দেখে বাসের কন্টাক্টর রুবেল কে সেখানে নামিয়ে দেন। মিরপুর ১০ নম্বর বাস স্ট্যান্ড যাওয়ার পর মুক্ত কে সেখানে তাকে নামিয়ে দেওয়া হয়।’
পরে তাদের পকেটে থাকা ফোন দিয়ে খবর দিলে রাকিব তাদেরকে উদ্ধার করে প্রথম কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে পরে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসলে দুজনকে পাকস্থলী পরিস্কাষ্কার করে চিকিৎসক ভর্তি দেন বলে জানান রাকিব। তিনি ওই পোশাক কারখানার সুপারভাইজার।
তিনি আরও বলেন, ‘ভুক্তভোগী দুজনই (ইউ এল ফ্যাসন) পোশাক কারখানার পারচেজ ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা। তাদের সাথে এক লক্ষ টাকা ছিল। সেটি আমরা পাইনি। শুধু দুজনের পকেটে থেকে দুটি মোবাইল আর কিছু দরকারি কাগজপত্র পেয়েছি।’
ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘মিরপুর থেকে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া দুইজন কে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাদেরকে স্টমাক ওয়াস দিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি দেন। তাদের অভিযোগ তাদের কাছ থেকে প্রতারক চক্র এক লক্ষ টাকা নিয়ে যায়।’
আরও পড়ুন:ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক সাজ্জাদ হোসেনকে মারধরের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ।
বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের শনাক্ত করে বিচারের দাবি জানানো হয়। অন্যথায় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতিতে যাবেন বলে হুশিয়ারি দেয়া হয়।
মানববন্ধনে পরিষদের সদস্যরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘মানুষের গায়ে হাত তোলার কে দিল অধিকার’, ‘জিরো টলারেন্স ফর ভায়োলেন্স’ ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্লাকার্ড প্রদর্শন করা হয়।
এর আগে সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে আলোচনা করেন পরিষদের নেতারা। এ সময় উপাচার্য হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার আশ্বাস দেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
মানববন্ধনে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. মহিউদ্দিন জিলানী বলেন, ‘শুধু ডা. সাজ্জাদ নন, অনেকের সঙ্গেই এরকম ঘটনা ঘটে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি এই ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা চাই আজকের মধ্যেই দোষীদের শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হোক। অন্যথায় বৃহস্পতিবার থেকে আমরা কর্মবিরতি পালন করব।’
‘কিছু ছাত্রের জন্য পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বদনাম হচ্ছে। আমরা এসব বিপথগামী শিক্ষার্থীর বিচার দাবিতে মানববন্ধন করছি।’
চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মারুফ উল আহসান বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। শহীদ মিনারে অনেকেই পরিবার, বন্ধুবান্ধব নিয়ে আসেন, আড্ডা দেন। আজ সাজ্জাদ ডাক্তার হওয়ার কারণে হয়তো আমরা প্রতিবাদ করছি, কিন্তু অনেকেই তো সেটা করতে পারে না।’
পরিষদের সদস্য জাকিউল ইসলাম ফুয়াদ বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে মিটিং করেছি। আমাদের ডিরেক্টর, প্রিন্সিপালসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, আপনারা সিসিটিভি ফুটেজ দেখেন, দোষীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনেন। তা না হলে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।’
থানায় জিডি
এদিকে মারধরের ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন মারধরের শিকার সাজ্জাদ হোসেন। শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক রাজু মুন্সীকে এই ঘটনার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জিডির বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার বলেন, ‘ভুক্তভোগী জিডি করেছেন। ঘটনাস্থলে সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় আমরা আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো চেক করছি। এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। আজকের মধ্যেই সব ক্যামেরার ফুটেজ চেক করা শেষ হবে।’
আরও পড়ুন:নির্বাচন বর্জনের সংস্কৃতি গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার জন্য হুমকি বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কিংবা গণতন্ত্রকে সংহত করা কোনো একক রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নয়।
রাজধানীর একটি হোটেলে বুধবার সকালে ইউএসএইড ও বেসরকারি আন্তর্জাতিক সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে গণতান্ত্রিক সরকার রাষ্ট্র চালাচ্ছে। সব রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত দায়িত্ব হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখা।
‘সাংঘর্ষিক রাজনীতি এবং সবকিছুতে না বলার সংস্কৃতি আমাদের রাজনীতিতে তিক্ততা বাড়িয়েছে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ হবে। আমি আশা করব, আগামী নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে এবং অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে আগামী সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের গত ৫০-৫১ বছরের ইতিহাসে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা তখনই হুমকির মুখে পড়েছে যখন অস্ত্র উঁচিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা হয়েছে। আর সেই ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে।
‘দেশের কল্যাণে রাজনীতিসহ সব অঙ্গনে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। দেশ ও সমাজের উন্নয়নে দেশাত্মবোধ, মানবিকতা এবং মমত্ববোধ জাগ্রত করতে রাজনৈতিক কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। রাজনৈতিক কর্মীরা অনেকেই জানেন না যে রাজনীতি একটা ব্রত।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর কচুক্ষেতে রজনীগন্ধা মার্কেটে স্বর্ণের দোকানে চুরির মামলায় আসামি আলাউদ্দিন ও শাহজালালকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
দুই দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার আসামিদের আদালতে হাজির করে তদন্ত কর্মকর্তা মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে রাখার আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিন তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে রোববার দুই আসামিকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
স্বর্ণের দোকানে চুরির মামলায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার স্বর্ণারটেক গ্রাম থেকে ৫ আগস্ট রাতে আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৭ আগস্ট সন্ধ্যায় কুমিল্লার সদর দক্ষিণ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শাহজালালকে। এ সময় তার হেফাজত থেকে বাদীর শনাক্তমতে উদ্ধার করা হয় ১৬ ভরি ৪ আনা ওজনের স্বর্ণালংকার।
মামলা থেকে জানা যায়, রজনীগন্ধা মার্কেটের নিউ বিসমিল্লাহ্ জুয়েলার্সের মালিক ২৯ জুলাই দুপুরে পার্শ্ববর্তী রূপনগর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে যান। নামাজ শেষে ফেরার পথে তিনি জানতে পারেন যে তার দোকানের শাটার খোলা। তিনি দ্রুত দোকানে গিয়ে দেখেন স্বর্ণের বিভিন্ন ধরনের ৪০ ভরি ও রুপার ৫০ ভরি গয়না চুরি হয়ে গেছে। এ ঘটনার পরদিন রূপনগর থানায় একটি মামলা করেন তিনি।
মন্তব্য