সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে সোমবারও বিক্ষোভ হয়েছে দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ঢাকা, রাজশাহী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের ব্যানারে এতে অংশ নেন শিক্ষার্থীরা। শাবি উপাচার্যের নির্দেশে এই ন্যক্কারজনক হামলা হয়েছে- এমন অভিযোগ তুলে এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার দাবি ও উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে অনড় অবস্থানে থাকেন আন্দোলনকারীরা।
অন্যদিকে, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে সেখানে ইন্ধন দিচ্ছে তৃতীয় পক্ষ।
নিজ বাসায় অবরুদ্ধ উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের জন্য সোমবার খাবার নিয়ে হাজির হন প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবীর।
ঢাবিতে মশাল মিছিল
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে করা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করেছে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন।
সোমবার সন্ধ্যায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে এ মশাল মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি শাহবাগ, কাঁটাবন, নীলক্ষেত, রাজু ভাস্কর্য হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এসে শেষ হয়।
এর আগে বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন কয়েকটি ছাত্র সংগঠন নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক রেজোয়ানুল হক মুক্ত বলেন, শাবিপ্রবিতে বীরত্বপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের সমর্থন আছে, শুধু সমর্থনই নয় সিলেটের আন্দোলন সারা দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মুক্ত বলেন, আমরা মনে করি ছাত্ররা ভিসির পদত্যাগের দাবিতে যে আন্দোলন করছে তা ইতোমধ্যে নৈতিকভাবে সফল হয়েছে। কিন্তু মেরুদণ্ডহীন ভিসি এখনো পদত্যাগ করছেন না। তাই আমরা অবিলম্বে এই মেরুদণ্ডহীন ভিসিকে অপসারণ করার দাবি জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে, বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ তাদের প্রতি সমর্থন ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছে; তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছে। কিন্তু এ দাবি বাস্তবায়নের কাজে যারা নিয়োজিত তারা হাসি তামাশা করছেন। ছাত্রদের এই ন্যায়সংগত দাবি কীভাবে ভূলুণ্ঠিত করা যায়, সেটা নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন তারা।
তিনি বলেন, ‘শাবিপ্রবির দুর্নীতি ও হামলাবাজ উপাচার্যের এখনই পদত্যাগ দাবি করছি। যারা উপাচার্যের পক্ষে কথা বলবে তারা তার দালাল, ফ্যাসিবাদের দালাল, অগণতান্ত্রিকতার দালাল।’
ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ বলেন, ‘একটা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ঢুকার কথা না থাকলেও কিন্তু শাবিতে পুলিশ প্রবেশ করেছে। এর আগেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের আন্দোলন হয়েছে; উপাচার্যরা তালাবদ্ধ হয়েছেন কিন্তু পুলিশ আসেনি, লাঠিচার্জ হয়নি। কিন্তু এবার তা হয়েছে। আমরা এই হামলাবাজ উপাচার্যের পদত্যাগ চাই।’
তিনি বলেন, ‘শাবিপ্রবির ছাত্রদের সমর্থনে আমাদের ধারাবাহিক আন্দোলন যেমন চলছে সামনের দিনেও ছাত্রদের যে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রগতিশীল সংগঠন তাদের পাশে থাকবে।’
রাফিকুজ্জামান ফরিদের সঞ্চালনায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুনয়ন চাকমা বিক্ষোভ সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দীপক রায়, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহ সভাপতি জহরলাল রায়, বাংলাদেশ ছাত্র কাউন্সিল এর সহসভাপতি সায়েদুল হক নিশান,সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুহায়েল আহমেদ শুভ ও বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের সোহবত শোভন।
রাষ্ট্রপতির কাছে খোলা চিঠি
উপাচার্য পদে থাকার জন্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের নৈতিক অধিকার নেই উল্লেখ করে খোলা চিঠিতে বলা হয়, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে এহেন বর্বর হামলায় মদদ দেয়ার পর অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের উপাচার্য হিসেবে থাকার আর কোন নৈতিক অধিকার নেই বলে আমরা মনে করি।’
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে খোলা চিঠি পাঠিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট।
সোমবার দুপুরে খোলা চিঠি জমা দিতে জোটের তিন প্রতিনিধি রাষ্ট্রপতির সরকারী বাসভবনে যান।
এই প্রতিনিধিরা হলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সোহাইল আহমেদ শুভ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আরফাত সাদ এবং ছাত্র ইউনিয়নের সহসাধারণ সম্পাদক মাহির শাহরিয়ার রেজা।
এর আগে জোটের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে তাদের বিক্ষোভ শুরু হয়।
বিক্ষোভ শেষে জোটের সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতীকী অনশন কর্মসূচি চলাকালীন এ খোলা চিঠি পাঠ করেন।
চিঠিতে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুত্রপাত এবং আন্দোলনের বর্তমান অবস্থার সার্বিক দিক তুলে ধরা হয়।
রাবিতে অবস্থান কর্মসূচি
সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্ত্বরে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত তারা এ কর্মসূচি পালন করেন। এসময় তারা, শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরে, প্রশাসন চুপ কেনো, শাবিপ্রবি নির্লজ্জ ভিসির অপসারন চাই, শিক্ষার্থীরা এক হও, অধিকার আদায় করো- সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাব্বত হোসেন মিলনের সঞ্চালনায় শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আজ জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে আছে। ক্যম্পাসের স্বৈরাচারী কাঠামো ভাঙতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন নারী বিদ্বেষী, দালাল, স্বজনপ্রীতি, রক্ত পিপাসু হামলাকারী ভিসিকে শিক্ষার্থীরা আর চায় না। এমন ভিসির ক্যাম্পাসে জায়গা হবে না। শুধু পদত্যাগ নয়, এমন নজির রাখতে হবে যেনো সারাজীবন এটি শিক্ষনীয় হয়ে থাকে।’
রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুর মজিদ অন্তর বলেন, ‘আজ প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে তাকালে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত অবহেলার শিকার হচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে, শিক্ষকদের দ্বারা লাঞ্চিত হচ্ছে, প্রশাসন কর্তৃক মারধরের শিকার হচ্ছে, মামলা হামলার শিকার হচ্ছে। যে শিক্ষার্থীদেরকে কেন্দ্র করে জাতি গঠনের স্বপ্ন দেখা হয়, আজকে সেই শিক্ষার্থীদেরকে মেরুদ-হীন করার জন্য একের পর নির্যাতন চালানো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ওপর।
‘শিক্ষার্থী সমাজের বিরুদ্ধে লেগে জাতি কখনোই ভালোভাবে এগিয়ে যেতে পারেনি। শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে সকল সমস্যার সমাধান করুন। নির্লজ্জ বেহায়া ভিসিকে অপসারণ করুন।’
এসময় অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দাবি তোলেন।
দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে শাবিপ্রবির স্বৈরাচারী ভিসিকে অপসারণ করতে হবে, তিনি যেভাবে নির্লজ্জভাবে হামলা চালিয়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা বানোয়াট মামলা দেয়া হয়েছে সে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, একই সঙ্গে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র প্রতিনিধি নিশ্চিত করার জন্য ছাত্র সংসদ চালু করতে হবে, পূর্নাঙ্গভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সকল প্রতিনিধি নিশ্চিত করে সিনেট কার্যকর করতে হবে। যদি এর কোন সুরাহা না করা হয়, তাহলে আরো কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন অবস্থানরত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচি আরও বক্তব্য দেন আমানউল্লাহ আমান, নাঈম, রাকিব, সাকলাইন গৌরব ও মেহেদী হাসান মুন্না।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগের দাবিতে বরিশালে মশাল মিছিল করেছে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সোমবার সন্ধ্যার পর নগরীতে এই মিছিল করা হয়।
নাজির মহল্লা এলাকা থেকে মশাল মিছিলটি শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়ন বিএম কলেজ শাখার সভাপতি কিশোর কুমার বালা, ছাত্র ফেডারেশনের জেলা সভাপতি মো. জাবের, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল জেলা সংগঠক হুজাইফা রহমান, রাকিব মাহামুদ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহবায়ক সুজয় শুভ, কবি ছোটন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও সুমাইয়া আরেফিন।
মশাল মিছিলে শাবিপ্রবি ভিসি বিরোধী নানা শ্লোগান দেয় নেতাকর্মীরা।
মিছিল শেষে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক সুজয় শুভ বলেন, ‘শাবিপ্রবির ভিসিকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে এবং নারীদের নিয়ে উনি যে উক্তি করেছেন সে কারণে তাকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা রেখে আমরাও কঠোর আন্দোলনে যাবো প্রয়োজন হলে।’
শাবিতে তৃতীয় পক্ষের ফায়দা হাসিলের চেষ্টা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বলছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বাইরে তৃতীয় একটি পক্ষ শাবির আন্দোলনে ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে যে ধরনের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপিত হয়েছে, তা থেকে প্রতীয়মান হয় যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বাইরে তৃতীয় একটি পক্ষ এই আন্দোলনে ফায়দা হাসিল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে সেখানে ইন্ধন দিচ্ছে তৃতীয় পক্ষ।
সমিতি বলছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বাইরে তৃতীয় একটি পক্ষ এই আন্দোলনে ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
একটি বিশেষ মহল এই আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপান্তরের অপচেষ্টা করছে বলেও প্রতীয়মান হয়েছে দাবি শিক্ষক সমিতির।
সোমবার বিকেলে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমতউল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৩ জানুয়ারি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের বিভিন্ন ইস্যুতে প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলন চলাকালে পুলিশের বলপ্রয়োগের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে ওই হলের প্রভোস্ট পদত্যাগ করেন। আন্দোলনকে পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের মূল দাবি পূরণ হওয়া সত্ত্বেও উপাচার্যের পদত্যাগের আন্দোলনে রূপ নেয়।
আন্দোলনের এই রূপান্তরের বিষয়টি অত্যন্ত অনভিপ্রেত এবং উদ্বেগের দাবি করে এটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করে শিক্ষক সমিতি।
উপাচার্যের বাসার পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা অমানবিক উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল আন্দোলনকারীরা হঠাৎ করেই উপাচার্যের বাসার পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে, যা অমানবিক এবং শিক্ষাঙ্গনের আন্দোলনে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত মাত্রা যুক্ত করেছে।
শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেকোনো সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করাই বাঞ্ছনীয়।
প্রেক্ষাপট
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। রোববার আন্দোলনের চতুর্থ দিনে এসে তা সহিংসতায় রূপ নেয়।
এদিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করলে সন্ধ্যায় অ্যাকশনে যায় পুলিশ। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ক্যাম্পাস। লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছুড়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে পুলিশ, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সন্ধ্যার পর থেকে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে অবস্থা নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের অভিযোগ, ভিসির নির্দেশেই পুলিশ হামলা ও গুলি চালিয়েছে।
এই বিক্ষোভের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ও হল ছাড়ার নির্দেশনা আসে। এরপর উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ দাবিতে রোববার রাত থেকেই আন্দোলন শুরু করেন আন্দোলনকারীরা।
এ সময় বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরাও এসে যোগ দেন এই বিক্ষোভে। তারা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
বিকল্প বিদ্যুতে রাত পার শাবি উপাচার্যের
আন্দোলনের একপর্যায়ে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বাসভবনের পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও খুব বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে। বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থায় রোববার রাত পার করেছেন তিনি।
তবে ১৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও উপাচার্য ভবনে কারো যাতায়াত লক্ষ করা যায়নি। বিদ্যুৎ-পানির সমস্যার কথা জানিয়ে উপাচার্যের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়াও আসেনি।
বিদ্যুৎ-পানিবিহীন রাত কেমন কেটেছে তা জানতে সোমবার সকালে উপাচার্যের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল ধরেননি।
আরও পড়ুন:
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল আগামী রোববার শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজ জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য আপিলটি ছিলো। কিন্তু এই মামলায় হাইকোর্টের অথর জাজ বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান আজ আপিল বিভাগের বেঞ্চে ছিলেন।
নিয়ম অনুযায়ী হাইকোর্টে রায় দানকারী বিচারপতি একই মামলা আপিল বেঞ্চে শুনানি গ্রহণ করতে পারেন না।
এজন্য আগামী রোববার পুনর্গঠিত বেঞ্চে আপিলটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে। আদালত বিষয়টিতে আজ নট টুডে আদেশ দিয়েছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন। ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সিআইডি এই মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিলে শুরু হয় বিচার।
তবে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই মামলায় অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে।
দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত মামলার রায় দেন।
আলোচিত ওই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি’র সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জল, এনএসআই-এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ।
বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। সে রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামীরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।
এছাড়া, বিচারিক আদালতের রায়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহিদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআই-এর মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপি’র সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডি’র সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই মামলার আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
বিচারিক আদালতে এই রায়ের দেড় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্সসহ মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল শুনানি শুরু হয়। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি চলছিল।
তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন হলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি হয়। শুনানি শেষে গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এই মামলার সব আসামীকে খালাস দিয়ে রায় দেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পটি শুক্রবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে অনুভূত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ডেটা অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের সাগাইংয়ের ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে।
এ ভূমিকম্পে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত বৃহত্তম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সাহায্য কমে যাওয়ার ফলে সংকট আরও গভীর হওয়ার উদ্বেগের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন (সাত কোটি ৩০ লাখ) ডলার নতুন আর্থিক সহায়তা দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক্সে একটি পোস্টে বলেন, ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিওইএফ) মাধ্যমে এ খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা ১০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করবে।
‘এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা এ ধরনের জীবন রক্ষাকারী সহায়তার মাধ্যমে বোঝা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত।’
সিনহুয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডার অংশ হিসেবে বিদেশি সহায়তায় ব্যাপক কাটছাঁট এবং ফেডারেল ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কিছু অংশ ভেঙে ফেলার বিস্তৃত প্রচেষ্টার মধ্যেই এ অনুদান দেওয়া হলো।
জাতিসংঘের দুটি সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছিল যে, তহবিলের ঘাটতি গত আট বছর ধরে প্রতিবেশী মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য রেশনের পরিমাণ কমিয়ে দেবে।
রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন, তহবিল হ্রাসের ফলে ক্ষুধা পরিস্থিতির অবনতি হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা এবং জ্বালানি হ্রাস পাবে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় সহায়তা প্রদানকারী দেশ ছিল। প্রায় ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে আসছে দেশটি। কিন্তু জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর সাম্প্রতিক তহবিল স্থগিত করার ফলে কমপক্ষে পাঁচটি হাসপাতাল তাদের সেবা কমিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে।
ট্রাম্প ও বিলিয়নেয়ার মিত্র ইলন মাস্ক প্রধান মার্কিন বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি বন্ধ করে দিয়েছেন এবং এর অবশিষ্টাংশগুলোকে পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে একীভূত করেছেন। শত শত কর্মী এবং ঠিকাদারকে বরখাস্ত করেছেন এবং কোটি কোটি ডলারের পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছেন, যার ওপর বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ নির্ভরশীল।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফেব্রুয়ারিতে সমস্ত জীবন রক্ষাকারী সহায়তা এবং এ ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় যুক্তিসঙ্গত প্রশাসনিক খরচ মওকুফ করেছিলেন।
ওয়াশিংটন টাইমস জানায়, এ মাসের শুরুতে ইউএসএআইডি ভেঙে দেওয়ার তত্ত্বাবধানকারী ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যায়ক্রমে সাহায্য বন্ধের প্রস্তাব করেছিলেন।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা হ্রাস করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে।
কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন শিবিরের বাসিন্দারা এখন জনপ্রতি মাসিক ১২ ডলার করে খাদ্য বরাদ্দ পাবেন, যা আগের ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কম।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ডব্লিউএফপি একটি চিঠিতে এই সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানিয়েছে, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।’
তিনি আরও বলেন, ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ১৩ ডলার করে পাবে, যা কক্সবাজারের তুলনায় এক ডলার বেশি।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমানোর পরিকল্পনা ডব্লিউএফপি পূর্বে জানানোর পর এ পরিবর্তন এসেছে।
গত ৫ মার্চ বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশন ডব্লিউএফপি থেকে একটি চিঠি পায়, যেখানে বলা হয়, তহবিল সংকটের কারণে এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাদ্য বরাদ্দ জনপ্রতি ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলার করা হবে।
চিঠিতে শরণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন।
তার সফরের সময় তাকে ছয় ডলারে রোহিঙ্গারা কী খাবার পাবে তার বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছিল। সে সময় অপর্যাপ্ত পরিমাণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার আন্তরিক ও একমত বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাদিসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক ও একমত। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড মনিটর করা হচ্ছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক দাবির নামে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি, অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ, নৈরাজ্য ও সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং তা কখনোই মেনে নেয়া হবে না।
‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সরকার তা কঠোরভাবে প্রতিহত করবে। গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানায় সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সরকার এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ উভয়ের সহযোগিতা কামনা করছে।’
আরও পড়ুন:পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আন্তসীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় কার্যকর আঞ্চলিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের বায়ুদূষণের ৩০-৩৫ শতাংশ আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। তাই এ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক আলোচনার গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব পদক্ষেপ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জরুরি।
তিনি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর কাঠমান্ডু রোডম্যাপ ও অন্যান্য সমঝোতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এগুলো যথেষ্ট নয়, আরও জোরালো উদ্যোগ প্রয়োজন।
কলম্বিয়ার কার্টাগেনায় অনুষ্ঠিত ডব্লিউএইচওর দ্বিতীয় বৈশ্বিক সম্মেলনের বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া সাইড ইভেন্টে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ঢাকাস্থ বাসভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে তিনি বাংলাদেশের বায়ুদূষণ সমস্যা, বিশেষ করে ঢাকার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন।
উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের বহুমাত্রিক বায়ুদূষণ সমস্যা মোকাবিলায় বায়ুমান নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা ডব্লিউএইচওর অন্তর্বর্তীকালীন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ আইনি বিধিমালায় দূষণকারী খাতগুলোর জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
তিনি জানান, ২০২৪ সালে চূড়ান্ত হওয়া জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পিছিয়ে ছিল, তবে এখন তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো মানুষের দূষণজনিত ঝুঁকি কমানো ও পরিষ্কার বায়ুর দিন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে শিগগিরই বাস্তবায়ন শুরু হবে। এ প্রকল্প নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করা, আইন প্রয়োগ জোরদার করা, শিল্প কারখানায় দূষণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং গণপরিবহন খাত আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দেবে।
তিনি ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলোকে ইটভাটামুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনার কথা জানান, যেখানে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকবে।
এ ছাড়া ২০২৫ সালের মে থেকে পুরনো বাস ধাপে ধাপে তুলে দেওয়া হবে, যা পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ ধুলাবালি দূষণ রোধে ঢাকা শহরের খোলা সড়কগুলোতে সবুজায়নের উদ্যোগ এবং রাস্তা পরিস্কারে আরও শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানান।
উপদেষ্টা জানান, অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের ফলে এরই মধ্যে বায়ুমানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এ অগ্রগতি ধরে রাখতে কঠোর নজরদারি ও খাতগুলোর আধুনিকায়ন জরুরি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায় এবং ঢাকার মতো দূষিত শহরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৫-৭ বছর কমে যাচ্ছে। এই সংকট আমাদের সবার জন্য, আমাদের শিশু, বাবা-মা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি। নিষ্ক্রিয়তার মূল্য অনেক বেশি। আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী। কারণ আমি বিশ্বাস করি, এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রযুক্তি ও বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের হাতে রয়েছে, শুধু প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন দরকার।
‘বায়ুদূষণ শুধুই পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি মানবিক সংকট।’
সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি, পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, গবেষক, স্থানীয় প্রশাসন, পরিবহন ও শিল্প খাতের বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তারা দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ রোধে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
আরও পড়ুন:পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর বৃহস্পতিবার। এর অর্থ ‘অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত’ বা ‘পবিত্র রজনী’।
আজ সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে কদরের রজনী।
যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সারা দেশে রাতটি পালন করা হবে।
মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম।
এ রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষণ করা হয়। নির্ধারণ করা হয় মানবজাতির ভাগ্য।
৬১০ সালে কদরের রাতেই মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) কাছে সর্বপ্রথম সুরা আলাকের পাঁচ আয়াত নাজিল হয়। এরপর আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর বহনকৃত ওহির মাধ্যমে পরবর্তী ২৩ বছর ধরে মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে বিভিন্ন সুরা নাজিল করা হয়।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে।
‘শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরা আল- কদর, আয়াত ১-৫)।’
হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে লাইলাতুল কদর সন্ধান করো (বুখারি ও মুসলিম)।’
মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় পবিত্র রাতটি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে দেন। কামনা করেন মহান রবের অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফিরাত।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ রাত থেকে পরের দিন ভোররাত পর্যন্ত মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত করবেন তারা।
এই উপলক্ষে শুক্রবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে রাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের সব মসজিদেই তারাবির নামাজের পর থেকে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন থাকবে।
পবিত্র লাইলাতুল কদর/শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।
এ ছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে।
এশীয় দেশগুলোকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও যৌথ সমৃদ্ধির জন্য সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
চীনের হাইনানে বৃহস্পতিবার বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পরিবর্তনশীল এ বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে যা অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং যৌথ সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।’
আর্থিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোর এ প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন নির্ভরযোগ্য তহবিল দরকার যা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে।’
বাণিজ্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এশিয়া এখনও বিশ্বের অন্যতম কম সংযুক্ত অঞ্চল।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এ দুর্বল সংযুক্তি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবশ্যই বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।’
খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এশীয় দেশগুলোকে অবশ্যই সম্পদ-সাশ্রয়ী কৃষিকে উৎসাহিত এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। টেকসই প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি সমাধান ও জলবায়ুবান্ধব চাষাবাদের ক্ষেত্রে উদ্ভাবন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, যা পুনর্গঠনমূলক, সমবণ্টনমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।
তিনি বলেন,‘আমাদের জ্ঞান, তথ্য ভাগ করে নিতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানে সহযোগিতা আমাদের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিশেষে বলব আমাদের সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে মেধা সম্পদ ও যুবশক্তিকে রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে—একটি আত্মরক্ষা ও আত্মস্থায়ী সমাজ। আমাদের শূন্য-বর্জ্যের জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে একটি পাল্টা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। ভোগ সীমিত রাখতে হবে মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে।
‘আমাদের অর্থনীতিকে সামাজিক ব্যবসার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে হবে, যা ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক কাঠামো হিসেবে উদ্ভাসিত হবে, যেখানে উদ্ভাবন, লক্ষ্য ও দায়িত্ববোধ একীভূত থাকবে।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, বোয়াও ফোরাম ও অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগগুলোকে যুবসমাজ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে হবে, যেন আগামী প্রজন্মের জন্য এশিয়াকে আরও উন্নত করা যায়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য