বরিশালের বিশাল একটি আয়তনজুড়ে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ ও পরিবহন শ্রমিক নেতা কামাল হোসেন মোল্লা লিটন ও তার বড় ভাই আজাদ হোসেন মোল্লা কালামের বিরুদ্ধে। থ্রি হুইলার যানসহ যাত্রীবাহী বাস কাউন্টার থেকে চাঁদাবাজি, এমনকি ধর্ষণ ও এতে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
এ দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ও পরিবহন শ্রমিকদের নানা অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রকাশ্যে কেউ কোনো কথা বলার সাহস পান না। দুই ভাই জনপ্রতিনিধি হওয়ায় তাদের পৃথক বাহিনীও আছে।
এর আগেও কালাম মোল্লা সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি করা নিয়ে আলোচনায় ছিলেন। অন্যদিকে ধর্ষণের ঘটনায় কালাম মোল্লা গ্রেপ্তার হওয়ার পর সাংবাদিকদের ফোন করে গালাগাল ও হামলা-মামলার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে তার ছোট ভাই লিটন মোল্লার বিরুদ্ধে। বরিশালের বিভিন্ন থানায় এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে। পাশাপাশি আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকরা ছবি তোলায় তাদের জেল থেকে বের হয়ে দেখে নেয়ার হুমকি দেন কালাম মোল্লা।
গত ১৩ জানুয়ারি রাতে কাশিপুরের মগরপাড়া এলাকায় এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ১৪ জানুয়ারি বিকেলে পুলিশ কালাম মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে।
কালাম মোল্লাকে ১৫ জানুয়ারি আদালতে তোলা হলে বরিশাল মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক পলি আফরোজ তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে এবং অভিযোগকারীকে মারধরের বিষয়টিও নিশ্চিত হয়েছে বলে আদালতকে জানায়। আসামি প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ আদালতে আসামিকে জামিন না দিতে আবেদন জানায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ থেকে রহমতপুর পর্যন্ত বিশাল এলাকাজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেছেন কালাম মোল্লা ও লিটন মোল্লা। কালাম মোল্লা ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও তার ভাই লিটন মোল্লা কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। এই দুই ভাই আবার বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর একনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
লিটন মোল্লার বিরুদ্ধে বরিশাল শহরে থ্রি হুইলার থেকে ‘বরিশাল জেলা থ্রি হুইলার মোটরযান শ্রমিক ইউনিয়নের’ ব্যানারে চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে। তিনি ওই সংগঠনের সভাপতি। পাশাপাশি নথুল্লাবাদের বিএমএফ কাউন্টারের সামনে বাস থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
চাঁদাবাজির অভিযোগে ২০২০ সালের আগস্ট মাসে তার শ্যালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ওই ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি ছিলেন লিটন মোল্লা। এর আগে চাঁদার দাবিতে বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গোল্ডেন লাইন পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজারকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ ওঠে লিটন মোল্লার বিরুদ্ধে। এরপর থেকে তিনি দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থেকে আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠায়। জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে তিনি তার পুরোনো কর্মকাণ্ড আবার শুরু করেন।
জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কমিটি থাকলেও এর অঘোষিত নিয়ন্ত্রক লিটন মোল্লা। তার বিরুদ্ধে প্রতিটি পরিবহন কাউন্টার থেকে প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা চাঁদা তোলার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ তুলেছিলেন কাউন্টার ম্যানেজাররা। করোনার লকডাউনের সময় গভীর রাতে অবৈধভাবে মাইক্রোবাসে যাত্রী পরিবহন করার অভিযোগ ছিল লিটনের বিরুদ্ধে, যা তৎকালীন উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) খায়রুল আলমের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়ে যায়। এই সব ঘটনায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে ১০ নভেম্বর বহিষ্কারও করেছিল।
এদিকে লিটনের বড় ভাই কাউন্সিলর কালাম মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নগরীর প্রবেশদ্বার গড়িয়ারপারে দিনভর ট্রাক থেকে চাঁদা তোলেন। তিনি বরিশাল জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি। শুধু তা-ই নয়, সিটি করপোরেশনের জমিতে দোকান নির্মাণকে কেন্দ্র করে কয়েক বছর আগে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর সঙ্গেও দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন কালাম। সংবাদ সম্মেলন করে মেয়রের বিরুদ্ধে বিবৃতিও দিয়েছিলেন তিনি।
এই দুই ভাই মেয়রের নাম ভাঙ্গাইয়া যত ধরনের অপকর্ম আছে, সব করে। রাস্তাঘাটে ওনাগো লোকজনে মানুষগো কম হেনস্তা করে না। জেল খাইটাও শিক্ষা হয় না।
দুই ভাই মিলে কাশিপুর এলাকাজুড়ে মাদকদ্রব্য কেনাবেচার বিশাল সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন বলে গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন এই প্রতিবেদকের কাছে।
কাশিপুরের গণপাড়া এলাকার হাফিজ মল্লিক নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘কালাম মোল্লা ও লিটন মোল্লার অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এরা বিশাল এলাকাজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করে। কোনো জায়গায় জমি নিয়ে ঝামেলা থাকলে সেখানে একটি পক্ষে অবস্থান নিয়ে জমি দখল করে দেন তারা। নারী কেলেঙ্কারি তাদের নতুন কেচ্ছা নয়। এর আগেও এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে, তবে ভয়ে এগুলো প্রকাশ্যে আসেনি।
‘এ ছাড়া লিটন নিজেই সারা দিন মাদক সেবনের মধ্যে থাকেন। মাদকসেবী ব্যক্তি যা করতে পারার কথা, ঠিক তা-ই করেন তিনি। কালাম নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন সব জায়গায়। নামসর্বস্ব পত্রিকার কার্ড বানিয়ে দিয়েছেন তার লোকজনকে। তাদের সঙ্গে নিয়েই সব অপকর্ম করেন তিনি।’
মগরপাড়া এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর মোহাম্মদ জিয়াউর বলেন, ‘এই দুই ভাই মেয়রের নাম ভাঙ্গাইয়া যত ধরনের অপকর্ম আছে, সব করে। রাস্তাঘাটে ওনাগো লোকজনে মানুষগো কম হেনস্তা করে না। জেল খাইটাও শিক্ষা হয় না। কোনো লজ্জা শরমও নাই। জেল দিয়া বাইরাইলে মনে হয়, এরা আরও বেশি ক্ষমতা পায়।’
এমন একটা অবস্থা, টার্মিনালে লিটনের ভয়ে তটস্থ সবাই। কেননা সবাই তো জানে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ তাকে সাপোর্ট দেয়।
বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের দুই পরিবহন শ্রমিক নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজির নেপথ্যে লিটন ও কালাম মোল্লা। একজন বাস, থ্রি হুইলার ও মাইক্রোবাস থেকে এবং অন্যজন ট্রাক থেকে চাঁতা তোলেন। বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ও জেলা বাস মালিক গ্রুপের সদস্য লিটন মোল্লা। বাস মালিক গ্রুপের সদস্য হয়েছেন বছর কয়েক আগে। বাস টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণে নিতে বাস মালিক গ্রুপের সদস্য হওয়াটা জরুরি ছিল তার।
‘এমন একটা অবস্থা, টার্মিনালে লিটনের ভয়ে তটস্থ সবাই। কেননা সবাই তো জানে, মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ তাকে সাপোর্ট দেন। কিন্তু আসলে দেন, নাকি শুধু মেয়রের নাম বিক্রি করে এমনটা সে করছে, তা আল্লাহ জানে। প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা পরিবহন সেক্টর থেকে চাঁদাবাজি করে থাকে লিটন ও কালাম।’
এদিকে কালাম মোল্লা গ্রেপ্তারের সংবাদ প্রকাশ করায় কয়েকজন সাংবাদিককে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
বরিশালের স্থানীয় দৈনিক দেশ জনপদ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ও ঢাকা টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের বরিশাল প্রতিনিধি এস এন পলাশ বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যার পর একটি অপরিচিত নম্বর থেকে কল করে লিটন মোল্লা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন কালাম মোল্লাকে গ্রেপ্তারের সংবাদ করার কারণে। আমার বিরুদ্ধে মামলা করে জেল খাটানোর হুমকি দেয়া হয় এবং আমি যাতে সাংবাদিকতা করতে না পারি, সেই জন্য ১০ লাখ টাকা বাজেট রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি। এই ঘটনায় আমি কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন মোল্লা লিটন ওরফে লিটন মোল্লাকে টানা দুই দিন তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। খুদেবার্তা দিয়েও মেলেনি উত্তর। তবে তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, পলাতক রয়েছেন লিটন মোল্লা।
এসব বিষয়ে বরিশাল জেলা সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, ‘দুই ব্যক্তি একের পর এক অপরাধ করছেন, আর সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় সেই অপরাধ বেড়েই চলছে। এদের লাগাম টানা দরকার। এরাই সমাজের বিষফোঁড়া। দিনভর মাদকের নেশায় বুদ হয়ে থেকেই এমন অপকর্ম করছেন তারা।
‘পরিবহন সেক্টরে সুষ্ঠু পরিবেশ দরকার। পুলিশ ইচ্ছা করলে কি না পারে। জনগণের শান্তির জন্য এমন অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, যাতে তারা রাজনৈতিক প্রশয়ে এমন কর্মকাণ্ড আর না করতে পারে। যারা ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধ করতে পারেন, তাদের দিয়ে সমাজ নষ্ট ছাড়া আর কিছু করা সম্ভব নয়।’
উদীচী বরিশালের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরণ বলেন, ‘একে তো কাউন্সিলর ধর্ষণে অভিযুক্ত হয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন, তার ওপর সেই সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের আদালতে চত্বরে হুমকি দিচ্ছেন। এটা অসুস্থ মানসিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এরা বরিশালের চিহ্নিত সন্ত্রাসী। এমন কোনো দিন নেই যে তাদের অপকর্ম নেই। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে মনে হয় না কোনো বিশেষ মহল ছাড়া কেউ ক্ষুব্ধ হবে। সাধারণ জনগণ ও পরিবহন শ্রমিকরা নির্যাতন থেকে বাঁচবে।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এনামুল হক বলেন, ‘জনগণের নিরাপত্তায় যারা বাধা হচ্ছেন বা বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। কারও রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে আমরা ছাড় দিচ্ছি না। অপরাধ করলে সাজা ভোগ করতেই হবে। আপনারা ইতিমধ্যে দেখছেন, কীভাবে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি অপরাধের বিরুদ্ধে। জনগণকে যারা রক্তচক্ষু দেখাবে বা নির্যাতন করবে, পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে দাঁড়িয়েছে। আর সাংবাদিকদের হুমকির বিষয়টিও আমাদের নজরে এসেছে। দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৮৮ জন সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিটিএ জেটি ঘাট থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের টাগবোটে তুলে দেয়া হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, গভীর সাগরে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে অপেক্ষায় থাকা মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইনে তাদের তুলে দেয়া হবে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওই জাহাজ বুধবারই বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছায়। ওই জাহাজে করেই ১৭৩ জন বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। যারা বিভিন্নভাবে মিয়ানমারে আটকা পড়েছিলেন বা সাজা পেয়ে জেলখানায় ছিলেন।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর ওই জাহাজে করে দেশটির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও বুধবার দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছায়। পরে তারা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নে বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
বিজিবি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ১১টি বাসে করে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে আনার পর ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুরু হয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতসহ দেশটির প্রতিনিধি দলের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।
এরপর সকাল ৭টার দিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কর্ণফুলি টাগবোটে তুলে দেয়া হয়। কোস্ট গার্ডের একটি ট্রলার টাগবোটটিকে পাহারা দিয়ে গভীর সাগরে নিয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতেও। সীমান্তের ওপারের মর্টার শেল ও গুলি এসে এপারে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
ওই সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জনকে প্রথম দফায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেরত পাঠিয়েছিল সরকার।
তাদের মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
এরপর বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত নিয়ে কয়েক দফায় আরো ২৮৮ জন সীমান্তরক্ষী ও সেনা সদস্য এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এবার তাদের ফেরত পাঠানো হলো।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন সাজেকে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
বাঘাইছড়ি থানার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তিনজনকে মৃত বলে জানান।
এর আগে বিকেলে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মাণের জন্য ডাম্প ট্রাকে ১৪ জন শ্রমিক জামান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সেতুর কাজে যাচ্ছিলেন। পথে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয়জনের মৃত্যু হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ২৮৮ জন বিজিপি ও সেনা সদস্যকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ভোর রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে কক্সবজার ইনানী নৌবাহিনী জেটি ঘাটে নেয়া হয় তাদের। সেখানে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে তাদেরকে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
গত ১১ মার্চ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির জামছড়ি ও আশারতলী সীমান্তে দিয়ে প্রথম দফায় ১৭৯ জন মিয়ানমারের বিজিপির সদস্য আশ্রয় নেন। পরে কয়েক দফায় ঘুমধুম, তুমর্রু ও কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে দিয়ে মোট ২৮৮ জন মিয়ারমারের সেনা ও বিজিপির সদস্য আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিজিপি ও সেনা সদস্যদেরকে নাইক্ষ্যংছড়ি বর্ডার গার্ড সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছিল। তাদের সে দেশের নৌবাহিনীর জাহাজে করে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি কর্মকর্তারা।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জন। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার উখিয়ার ইনানী নৌ-বাহিনীর জেটিঘাট দিয়ে তাদের মিয়ানমারে পাঠানো হয়েছিল।
ছিয়াত্তর বছর বয়সী আবদুর রহিম স্ত্রীকে হারিয়েছেন দেড় যুগ আগে। পরিবারের সদস্য বলতে এক ছেলে, তাও থাকেন প্রবাসে। ছেলে প্রবাসে যাওয়ার পর অন্য ঘরে চলে গেছেন ছেলের বৌও। তাই রান্না-বান্না থেকে শুরু করে সব কিছুই করতে হয় নিজেকে।
জীবন যুদ্ধে তিনি কখনও দমে যাননি, তবে এবার হার মেনেছেন টিউবওয়েলের পানির কাছে। ১৫ থেকে ১৬ বার টিউবওয়েল চাপার পরেও মিলছে না এক গ্লাস পানি। তাই পানি সংকটের কারণে গোসল থেকে শুরু করে গৃহস্থালির সব কাজ হচ্ছে ব্যাহত।
তাই অধিকাংশ সময় বাড়ির পাশে থাকা মসজিদে গিয়ে পানির চাহিদা পূরণ করছেন আবদুর রহিম।
এদিকে গৃহবধূ ছানোয়ারা খাতুন গৃহস্থালির সব কাজ করেন একাই। বাড়িতে রয়েছে তিনটি গাভি ও চারটি ছাগল। এর মধ্যেই আজ সপ্তাহ দুয়েক ধরে টিউবওয়েলে উঠছে না পানি। খাওয়া থেকে ওজু, গোসল সব কিছুতেই বেগ পেতে হচ্ছে পানি সংকটের কারণে।
ছানোয়ারা খাতুন জানান, তীব্র তাপদাহের মধ্যে আজ সপ্তাহখানেক ধরে বাড়িতে থাকা গরুর গোসল করাতে পারেননি তিনি, তবে নিজে প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে গোসল করে আসেন।
মেহেরপুরের গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের হস্তচালিত টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। ফলে এলাকার মানুষের মধ্যে পানির সংকট এখন চরমে পৌঁছেছে। একদিকে গৃহস্থালির কাজে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বোরো চাষে পানির সংকটের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললে তারা সুপেয় পানির সংকটের কথা জানান। বিশেষ করে মুজিবনগর উপজেলার, জয়পুর, আমদহ, তারানগর, বিশ্বনাথপুর; সদর উপজেলার শালিকা, আশরাফপুর, আমদাহ, বুড়িপোতা, আলমপুর এবং গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের আমতৈল, মানিকদিয়া, কেশবনগর, শিমুলতলা, রইয়েরকান্দি, সহড়াবাড়িয়া, মিনাপাড়া, ভোলাডাঙ্গা, কুমারীডাঙ্গা কাথুলি ইউনিয়নের গাঁড়াবাড়িয়া, ধলাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় চলতি শুষ্ক মৌসুম শুরু থেকেই সুপেয় পানির সংকট প্রকট হচ্ছে।
দীর্ঘ সময় ধরে অনাবৃষ্টি, ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা, এবং পুকুর-খাল-বিল ভরাটের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সীমান্তবর্তী মেহেরপুর জেলার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে। আগামীতে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে বলেও জানান তারা।
গ্রামবাসীরা বলছেন, গ্রীষ্মকাল শুরু না হতেই এবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। অথচ গ্রামে সুপেয় পানির জন্য নলকূপই শেষ ভরসা।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলার গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির স্তর প্রতি বছর ১০ থেকে ১১ ফুট নিচে নামছে। ১০ বছর আগেও এই এলাকায় ৬০ থেকে ৭০ ফুটের মধ্যে ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর পাওয়া যেত। অথচ এখন পানির জন্য যেতে হয় ৩০০ ফুটেরও বেশি গভীরে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, গত কয়েক বছরে এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর ১০ থেকে ১৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। ফলে অকেজো হয়ে পড়েছে হস্তচালিত অনেক টিউবওয়েল। যেখানে আগে ভূগর্ভের ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীরতা থেকেই পাওয়া যেত সুপেয় পানি। গত এক দশকে ক্রমেই পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।
জেলায় গভীর-অগভীর মিলিয়ে ৯ হাজার ৯১৩টি নলকূপ আছে। এর মধ্যে অকেজো হয়ে পড়ে আছে ২ হাজার ২৩৯টি।
গাংনী উপজেলার ভোলাডাঙ্গা গ্রামের পল্লি চিকিৎসক মতিন বলেন, ‘আমি ২০ বছর ধরে গ্রামে গ্রামে চিকিৎসা দিয়ে বেড়াই। আজ ১০ দিন ধরে আমার বাড়ির নলকূপে পানি উঠছে না। রোদের মধ্যে সারা দিন গ্রাম গ্রাম ঘুরে বাড়ি এসে যদি পানি না পাই তাহলে কেমন লাগে? আমি তাই মসজিদের নলকূপে গিয়ে গোসল সেরে আসি।’
একই এলাকার দিনমজুর সিরাজ বলেন, ‘আমি সারা দিন মাঠে কাজ করি। বাড়িতে দুটি গরুও পালন করি অথচ গরু দুটি আজ কয়দিন গা ধোয়াতে পারিনি। আবার মাঠে এক বিঘা ধানের আবাদ আছে, তাতে সেচ দিতে গিয়ে বিপদে পড়তে হচ্ছে। যেখানে দুই ঘণ্টা মেশিনে পানি দিলে হয়ে যেতো। সেখানে এখন চারটা ঘণ্টা পানি দিয়েও হচ্ছে না।’
এ অঞ্চলের আবহাওয়া নির্ণয়কারী চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘কয়েকদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গাসহ এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এখানে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অঞ্চলে আপাতত আজকে বৃষ্টির সম্ভবনা নেই।’
মেহেরপুরের জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন জানান, সুপেয় পানির সমস্যা নিরূপণে যেসব এলাকায় সংকট সেখানে ১০টি বাড়িকে কেন্দ্র করে একটি ৯০০ ফুট গভীর নলকূপ স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এসব এলাকায় ৫০০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে, তবে অতিবৃষ্টি ও পানির অপচয় রোধ করা না গেলে পানি সংকটের সমাধান মিলবে না।
আরও পড়ুন:নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার উত্তর পাকুরীয়া গ্রামের এক নাবালিকা ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা মামলায় এক মাদ্রাসা শিক্ষককে দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে।
নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. মেহেদী হাসান তালুকদার বুধবার এ রায় দেন। জরিমানার অর্থ ভুক্তভোগী ছাত্রীকে প্রদানের নির্দেশ দেন বিচারক।
দণ্ডাদেশ পাওয়া ওই শিক্ষকের নাম আবুল হাসান। ২৫ বছর বয়সী আবুল হাসান বদলগাছী উপজেলার উত্তর পাকুরীয়া গ্রামের বাসিন্দা ও একটি মাদ্রাসার আরবি বিষয়ের শিক্ষক।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৯ মে সকাল ছয়টার সময় নয় বছর বয়সী ওই মেয়েটি একই গ্রামের আরবি শিক্ষক আবুল হাসানের বাড়িতে আরবি পড়তে যায়। সে সময় অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীরা না আসায় তাকে একা পেয়ে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন তিনি। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর মা বদলগাছী থানায় অভিযোগ করলে তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা মেলায় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আদালত আট জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বুধবার রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।
এদিন আসামির উপস্থিতিতে তাকে দেয়া সাজার রায় পড়ে শোনানো হয় এবং শেষে তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন বিচারক।
রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আজিজুল হক ও আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামলা পরিচালনা করেন। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করে এবং আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানায়।
রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পূর্তিতে বুধবার প্রাণ হারানো শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন হতাহত শ্রমিক, তাদের পরিবার, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও পুলিশ সদস্যরা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ওই দুর্ঘটনায় পাঁচটি পোশাক কারখানার এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। পঙ্গুত্ব নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই সহস্রাধিক শ্রমিক।
ট্র্যাজেডির বার্ষিকীতে আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শ্রমিক ও সংগঠনগুলোর সদস্যরা।
সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বুধবার সকাল থেকে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানো শুরু হয়।
একে একে নিহত শ্রমিকের পরিবার, আহত শ্রমিক, পুলিশ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ফুলের শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে ওঠে বেদি। ওই সময় নিহত শ্রমিকদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পরে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ, র্যালি ও মানববন্ধন করা হয়।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারানো শ্রমিকদের অনেক স্বজন প্রিয়জনের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
সমাবেশে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পর এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান বক্তারা।
একই সঙ্গে ভবনের মালিক সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডেরও দাবি জানান তারা।
আরও পড়ুন:পঞ্চগড়ের বোদা-দেবীগঞ্জ জাতীয় মহাসড়কে ট্রাক ও ট্রলির (ট্রাক্টর) মুখোমুখি সংঘর্ষে এক পথচারী নারীসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চার জন।
বুধবার সকালে বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের কলাপাড়া নামক স্থানে মহাসড়কে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
নিহতরা হলেন- বোদা পৌরসভার সদ্দারপাড়া গ্রামের সাফিরের স্ত্রী ৬০ বছর বয়সী নুরজাহান ও একই উপজেলার মাজগ্রাম এলাকার মানিক ইসলামের ছেলে ২৫ বছর বয়সী জাহিদ ইসলাম।
বোদা থানার ওসি মোজাম্মেল হক দুজনের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেবীগঞ্জ থেকে পঞ্চগড়গামী একটি দ্রুতগামী ট্রাক ও বিপরীতমুখী একটি ট্রলির সংঘর্ষ হয়। এ সময় ঘটনাস্থলের পাশে থাকা এক পথচারী নারীকে গাড়িদুটি চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। দুর্ঘটনায় ট্রলির চালক জাহিদও ঘটনাস্থলে নিহত হন। এছাড়া স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদের দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। বর্তমানে তারা সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মন্তব্য