মায়ের কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন তুমুল পাঠকপ্রিয় থ্রিলার সিরিজ মাসুদ রানা ও কুয়াশা সিরিজের স্রষ্টা এবং সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার কাজী আনোয়ার হোসেন।
বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে মা সাজেদা খাতুনের কবরে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
এর আগে সেগুনবাগিচার কাঁচাবাজার মসজিদে বাদ জোহর কাজী আনোয়ার হোসেনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল সোয়া ৯টার দিকে বারডেম হাসপাতালের হিমঘর থেকে মরদেহ সেগুনবাগিচায় তার বাসায় নেওয়া হয়।
প্রতিবেশী ও সংবাদকর্মীরা সেখানে লেখককে শেষবারের মতো দেখতে গেলেও অন্য লেখক বা প্রকাশকদের তেমন দেখা যায়নি।
কাজী আনোয়ার হোসেনের চাচাতো ভাই কাজী রওনাক হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা একটা বিরাট ইতিহাসের অংশ হারালাম। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো ওনার মূল্যায়ন সেভাবে হয়নি। যখন কম্পিউটার ছিল না, মোবাইল ছিল না, অ্যাপস ছিল না সেই সময়ে এ দেশের যুব সমাজকে অবক্ষয় থেকে রোধ করেছিল মাসুদ রানা এবং কুয়াশা।
‘অবাক হবেন, যারা শোকবার্তা পাঠাচ্ছেন, তারা লিখছেন, কেউ হয়তো ২০ বছর বয়সে মাসুদ রানা পড়েছেন এখন তার বয়স ৬০ বা ৬৫। তার জীবনটা পুরো প্রভাবিত মাসুদ রানা চরিত্রটি দিয়ে।’
রওনাক জানান, কাজী আনোয়ার হোসেন অত্যন্ত ভালো কণ্ঠশিল্পী ছিলেন। উনি সিনেমায় গানও গেয়েছেন। ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৬ পর্যন্ত রেডিওতে নিয়মিত নজরুলসংগীত, আধুনিক গান করতেন। সৈয়দ শামসুল হকের কথায় সত্য সাহার সুরে, আব্দুল আলীমের সঙ্গে ‘এই যে আকাশ, এই যে বাতাস’ গেয়েছেন কাজী আনোয়ার হোসেন। উর্দু তালাশ সিনেমাতেও গান করেছেন তিনি।
মূল্যায়ন না হওয়ার বিষয়ে রওনাক হোসেন বলেন, ‘দেশের জন্য, যুব সমাজের জন্য যিনি এতকিছু করে গেলেন সরকারের থেকে কোনো রকম স্বীকৃতি নেই। তিনি সব সময় নিভৃতচারী ছিলেন, কখনই চাননি তাকে ঢাকঢোল পিটিয়ে পদক দেয়া হোক।
‘আমি মনে করি দেশ-জাতি, সরকারের একটা কর্তব্য আছে। বাংলা একাডেমি সাহিত্যের জন্য যাদের পুরস্কার দিচ্ছে, ওনার যোগ্যতা কি তাদের চেয়ে কম? এই জিনিসগুলো নিয়ে একটু কষ্ট পাই।’
কাজী আনোয়ার হোসেন প্রোস্টেট ক্যানসারে ভুগছিলেন। বুধবার বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে বারডেম হাসপাতালে মারা যান তিনি।
সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার হিসেবে কাজী আনোয়ার হোসেন ষাটের দশকের মধ্যভাগে মাসুদ রানা নামের স্পাই চরিত্র সৃষ্টি করেন। মাসুদ রানার চরিত্রটি মূলত ইয়ান ফ্লেমিংয়ের সৃষ্ট জেমস বন্ড চরিত্রের বাঙালি সংস্করণ হিসেবে গণ্য করা হয়।
মাসুদ রানা সৃষ্টির কিছু আগে কুয়াশা নামক আরেকটি জনপ্রিয় চরিত্র তার হাতেই জন্ম নেয়। কাজী আনোয়ার হোসেন ছদ্মনাম হিসেবে বিদ্যুৎ মিত্র ও শামসুদ্দীন নওয়াব নাম দুটি ব্যবহার করতেন। তবে সেবা প্রকাশনীর ভক্ত পাঠকের কাছে তিনি কাজীদা নামেই বেশি পরিচিতি পান।
কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই ঢাকায়। পুরো নাম কাজী শামসুদ্দিন আনোয়ার হোসেন। ডাক নাম ‘নবাব’। তার বাবা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন, মা সাজেদা খাতুন।
কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৫২ সালে সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএ এবং বিএ পাস করেন। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন তিনি।
বেশ কয়েক বছর রেডিওতে নিয়মিত গান গাইতেন কাজী আনোয়ার হোসেন। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বেতারের সংগীতশিল্পী ছিলেন। ১৯৬২ সালে বিয়ে করেন কণ্ঠশিল্পী ফরিদা ইয়াসমিনকে।
কাজী আনোয়ার হোসেনের তিন বোন সনজীদা খাতুন, ফাহমিদা খাতুন ও মাহমুদা খাতুনও রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী।
কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৬৩ সালের মে মাসে বাবার দেয়া ১০ হাজার টাকা নিয়ে সেগুনবাগিচায় প্রেস চালু করেন। দুজন কর্মচারী নিয়ে শুরু হওয়া এই প্রেসের নাম পরে পাল্টে হয় সেবা প্রকাশনী। সেবা প্রকাশনী বাংলাদেশে পেপারব্যাক বই প্রকাশ, বিশ্ব সাহিত্যের প্রখ্যাত উপন্যাসের অনুবাদ এবং কিশোর সাহিত্যের ধারা এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন:সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন তথ্য জানায়।
এতে বলা হয়, শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এ ছাড়া অস্থায়ীভাবে মেঘলা আকাশসহ সারা দেশে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় হালকা অথবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
পূর্বাভাসে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রংপুর বিভাগের তেঁতুলিয়ায় ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালীতে ৩১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আগামী জাতীয় নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই মন্তব্য করে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, নির্বাচন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সংস্কার আগে হতে হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তারিখ নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তবে নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার আগে হতে হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জনগণের আকাঙ্ক্ষা স্থানীয় নির্বাচন আগে হোক। আমরা সেটাকে সমর্থন করি।’
নির্বাচন সংস্কার বিষয়ে জামায়াত একটি লিখিত প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছে বলেও জানান জামায়াতের সেক্রেটারি।
তিনি জানান, প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে আনুপাতিক হারে (পিআর) নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯১ অনুচ্ছেদের (এ) ধারা পুনর্বহাল, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনে নিবন্ধনের শর্তগুলো শিথিল।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব করেছি যে আরপিওর ৯১ অনুচ্ছেদের (এ) ধারা পুনর্বহাল করতে, যাতে নির্বাচন কমিশন কোনো নির্বাচন আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ বাতিল করার ক্ষমতা পায়।'
অপর এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর ৩০০ আসনে প্রার্থিতা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবদুর রহমানেল মাসুদ, তাহমিদা আহমদ ও আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং ইসি সচিব আখতার আহমেদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৩ সালে নিবন্ধন বাতিলের পর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এটি জামায়াতের প্রথম কোনো বৈঠক।
এর আগে দলটির নিবন্ধন থাকা অবস্থায় বার্ষিক অডিট রিপোর্ট দিতে ইসি সচিবালয়ে গিয়েছিলেন জামায়াত প্রতিনিধিরা।
বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনে এসেছি। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনারদের সাথে কথা বলব।
আমাদের বক্তব্য তাদের জানাব। পরে গণমাধ্যমের সাথেও আমরা কথা বলব।’
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদসহ ছয়জনের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেন।
লিবিয়ায় আটকে পড়া ১৪৫ অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশি ঢাকায় পৌঁছেছেন।
বুরাক এয়ারের চার্টার্ড ফ্লাইটে বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে তারা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীর বেশির ভাগই সমুদ্র পথে অবৈধভাবে ইউরোপ গমনের উদ্দেশ্যে মানব পাচারকারীদের প্ররোচনা ও সহযোগিতায় লিবিয়ায় অনুপ্রবেশ করেন। তাদের অধিকাংশই লিবিয়াতে বিভিন্ন সময়ে অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হন।
এতে জানানো হয়, দেশে ফেরত আসার পর এই ভয়ংকর পথ পাড়ি দিয়ে আর যেন কেউ লিবিয়াতে না যান, এ বিষয়ে তাদের সচেতন হওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আহ্বান জানিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার পক্ষ থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের প্রত্যেককে ছয় হাজার টাকা, কিছু খাদ্যসমগ্রী উপহার, মেডিক্যাল চিকিৎসা ও প্রয়োজনে অস্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, লিবিয়ার বিভিন্ন বন্দিশালায় আটক বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং আর্ন্তজাতিক অভিবাসন সংস্থা একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
ভোলার তজুমদ্দিনে স্থানীয়দের সংঘবদ্ধ পিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন।
সোনাপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভূঁইয়া বাড়িতে বৃহস্পতিবার ভোররাতে এ ঘটনা ঘটে।
পিটুনিতে প্রাণ হারানো দুজন হলেন তজুমদ্দিনের বালিয়াকান্দি গ্রামের মো. নয়ন (৩০) ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার খাসমহল এলাকার আমির হোসেন (২৮)। তারা নিয়মিত গরু চুরি করেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ প্রতিবেদন লেখার সময় পিটুনিতে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
স্থানীয়দের ভাষ্য, ভূঁইয়া বাড়িতে একদল ব্যক্তির গরু চুরি করতে ঢোকেন। বিষয়টি টের পেয়ে পরিবারের সদস্যরা চিৎকার করলে গ্রামবাসী জড়ো হয়ে চোরদের ধাওয়া করেন। এর একপর্যায়ে জনতার হাতে দুই যুবক ধরা পড়ে, যাদের সংঘবদ্ধভাবে পেটানো হয়।
তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন দুজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘ভোরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গণপিটুনির শিকার দুই যুবককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।’
ওসি জানান, ময়নাতদন্তের জন্য দুজনের মরদেহ ভোলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিট-২০২৫-এ যোগ দিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
স্থানীয় সময় বুধবার রাত সোয়া ১১টায় তিনি সেখানে পৌঁছান বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রীড়ামন্ত্রী আহমেদ বেলহৌল আল ফালাসি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে দুবাইয়ে স্বাগত জানান।
ড. আহমেদ বেলহৌল আল ফালাসি ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে অংশগ্রহণের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান এবং গত এক দশক ধরে দুবাইয়ে হয়ে আসা আন্তর্জাতিকভাবে অত্যন্ত সমাদৃত এই সম্মেলনের বিষয়ে অবহিত করেন।
উভয় নেতা দুই দেশের মধ্যে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সহযোগিতা বিনিময়সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
ওই সময় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ এবং ঢাকায় নিযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলী খাসেফ আল হামৌদি উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইনসের বাণিজ্যিক ফ্লাইটটি বুধবার রাত ৭টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়ে।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে।
এ কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু করবে।
সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বুধবার এ কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
কমিশনের সহসভাপতি করা হয় সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজকে। অন্য সদস্যরা হলেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. মো. ইফতেখারুজ্জামান।
কমিশনের কার্যপরিধির বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘কমিশন আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তিসমূহের সঙ্গে আলোচনা করবে এবং এ মর্মে পদক্ষেপ সুপারিশ করবে।
‘কমিশনের মেয়াদ হবে কার্যক্রম শুরুর তারিখ থেকে ৬ মাস। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এ কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা করবে।’
আরও পড়ুন:সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রক্রিয়াকে অতীতে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে এবং আইনি পদ্ধতিতে চলতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন এ মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী।
মোহাম্মদ শিশির মনির সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ১৩ বছরে এই মামলার তদন্ত শেষ করে রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি। আমরা মনে করি, এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে একটি বড় ধরনের ব্যর্থতা। তবে এই সরকার আসার পর হাইকোর্ট বিভাগের এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে একটি উচ্চতর টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।
‘সে টাস্কফোর্স আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করবেন।’
এ আইনজীবী আরও বলেন, ‘অতীতে এই মামলাটিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে দেওয়া হয়নি। এই মর্মেও তদন্তে কিছু তথ্য-উপাত্ত এসেছে। অতীতে এই ইনভেস্টিগেশন (তদন্ত) সিস্টেমকে (প্রক্রিয়াকে) অবস্ট্রাকশন (বাধাগ্রস্ত) করা হয়েছে। ইনভেস্টিগেশন প্রসেসকে সঠিকভাবে আইনি পদ্ধতিতে চলতে দেওয়া হয়নি।
‘১৩ বছরে অনেক সাক্ষ্য-প্রমাণই গায়েব হয়ে গেছে। তবে সবকিছুর পরও এখন একটি আশার আলো দেখা যাচ্ছে। আমরা আশা করি স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই হাইকোর্ট তদন্তকারী কর্মকর্তারা একটি গ্রহণযোগ্য এবং সত্যিকার একটি বিচার পরিচালনা করার মতো উপযুক্ত তদন্ত রিপোর্ট আদালতের সামনে দাখিল করবেন।’
সাংবাদিক রুনির ভাই ও মামলার বাদী নওশের রোমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আশা করব, যেহেতু আগের সরকার এখন নেই। আগের সরকারকে আমরা মনে করতাম যে, আগের সরকারের সংশ্লিষ্ট কেউ বা সরকার স্বয়ং এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। কারণ যত ধরনের নাটক হয়েছে, ডিএনএ টেস্ট থেকে শুরু করে আমাদের হয়রানি এবং নানা সময়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী যেসব কথাবার্তা বলেছেন, স্বয়ং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, কারও বেডরুমের পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব তার না।
‘এই শব্দটা থেকেই আমরা আসলে মনে করি যে, তৎকালীন সরকার বা তাদের সংশ্লিষ্ট কেউ এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তবে এখন যেহেতু সব কিছু পরিবর্তন হয়েছে, এখন কিছুটা আশার আলো আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
এ মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে সাগর-রুনির একমাত্র ছেলে মেঘ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন তো দেখতেছি ওরা কাজ করতেছে। একটু হইলেও আমরা হোপফুল। আশা করা যাচ্ছে পজেটিভ কিছু একটা শুনতে পারব।’
রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া করা বাসায় ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। এ সময় বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ।
সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এ হত্যার ঘটনায় রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা করেন রুনির ভাই নওশের আলম। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। পরবর্তী সময়ে মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে তদন্তে ব্যর্থতার একপর্যায়ে ডিবি থেকে র্যাবকে এই মামলা তদন্ত করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এ হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের ধরা হবে বলে সময় বেঁধে দেন। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি কথার ফানুস হয়েই নিষ্ফল হয়। বহুল আলোচিত এই হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে এখন পর্যন্ত ১১৬ বার সময় নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য