দ্বিতীয়বারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
বুধবার তার করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসে।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন সংগঠনের প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী।
বর্তমানে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিখিল মিরপুরের বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
নিখিলের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে পরিবারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথমার্ধেও আক্রান্ত হয়েছিলেন নিখিল। গত কয়েক দিন ধরে হালকা উপসর্গ দেখা দিলে তিনি করোনা পরীক্ষা করান। তাতে ফলাফল পজিটিভ আসে।
দেশের মানুষের চিকিৎসা সেবা ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে বিমা চালু করা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস প্রফেসর এবিএম আব্দুল্লাহ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন হলে আয়োজিত ‘হৃদরোগ প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শনিবার এবিএম আব্দুল্লাহ এ মন্তব্য করেন।
আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করে জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং বাংলাদেশ কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশন।
প্রফেসর আব্দুল্লাহ বলেন, ‘হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুততম সময়ে চিকিৎসা না দিতে পারায় অনেক সময় রাস্তায় মারা যান। তাই হৃদরোগের চিকিৎসাকেন্দ্রগুলো শহর বা বিভাগ কেন্দ্রিক না হয়ে জেলা শহরে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়া উচিত। এতে লোকজন দ্রুত চিকিৎসা পাবে এবং মৃত্যুর হার অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।’
প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের প্রফেসর ও বাংলাদেশ কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সভাপতি ডা. এস এম মোস্তফা জামান।
আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, উপ-কমিটির স্বাস্থ্য ও সদস্য কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক বখতিয়ার রাণাসহ অন্যরা।
প্রেস ক্লাব সদস্যদের চিকিৎসায় সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত হার্ট ক্যাম্প হয়। ক্যাম্পে তিন শতাধিক সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।
হার্ট ক্যাম্পে ব্লাড প্রেসার পরিমাপ, রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপ, লিপিড প্রোফাইল, ইসিজি পরীক্ষাসহ চিকিৎসা বিষয়ক নানা পরামর্শ দেয়া হয়। হার্ট ক্যাম্পের সহযোগিতায় ছিল ল্যাব এইড।
প্রফেসর ডা. এবিএম আবদুল্লাহ হৃদরোগকে নীরব ঘাতক উল্লেখ করে বলেন, ‘হৃদরোগ বিশ্বের এক নম্বর ঘাতক ব্যাধি।’
তিনি হৃদরোগ চিকিৎসা সহজলভ্য এবং এর ব্যয় কমানোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বুকে ব্যথা হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার উপদেশ দেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
মূল প্রবন্ধে প্রফেসর মোস্তফা জামান হৃদরোগ প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ে বলেন, ‘দেশে প্রতি বছর ৫ লাখ ৭২ হাজার ৬০০ মানুষের মৃত্যু হয়। এর ৩০ শতাংশ মৃত্যু হৃদরোগের কারণে হয়। হৃদরোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ সহজ। প্রতিটি নাগরিকের হৃদরোগের আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ তৈরিতে কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে হবে।’
এ জন্য তিনি ধূমপান বর্জন, সাদাপাতা, জর্দা পরিহার, চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার, নিয়মিত হাঁটাহাটি এবং ব্যায়াম করার কথা বলেন।
ওয়াল্ড হার্ট ফাউন্ডেশনের তথ্য উল্লেখ মোস্তফা জামান জানান, বিশ্বে প্রতিবছর অসংক্রামক রোগে চার কোটি ১০ লাখ লোক মারা যান। এর মধ্যে ১ কোটি ৭৯ লাখের মৃত্যু হয় হৃদরোগে। ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ, ভারতসহ এ অঞ্চলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি।
এ ছাড়া বিএসএমএমইউর কার্ডিওলজি বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৩৫ বছরের কম বয়সী নারী ও পুরুষের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি উন্নত বিশ্বের সমবয়সী মানুষের তুলনায় ১৭ গুণ বেশি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন হৃদরোগের আধুনিক চিকিৎসা দেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান।
প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান ক্লাব সদস্যদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং ল্যাব এইড কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি হাসান হাফিজ, যুগ্ম সম্পাদক মাঈনুল আলম ও আশরাফ আলী, কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আইয়ুব ভূঁইয়া, কাজী রওনাক হোসেন, শাহনাজ সিদ্দিকী সোমা, শাহনাজ বেগম পলি, সৈয়দ আবদাল আহমদ, ভানুরঞ্জন চক্রবর্তীসহ ক্লাবের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা।
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী মারা যায়নি। তবে এই সময়ে শনাক্ত হয়েছে ২৮ জন, যার ২০ জনই ঢাকা বিভাগের।
শনিবার বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন করে মৃত্যু সংবাদ না দেয়ায় মোট মৃত্যু ২৯ হাজার ১৩০ জনেই আছে।
আর এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৫৩ হাজার ৪০৭ জনে।
শনিবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩ হাজার ৩৫৬টি নমুনা পরীক্ষায় ২৮ জনের শরীরে ভাইরাসটি ধরা পড়ে। পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের নতুন হার শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ। গতকাল এই হার ছিল শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ।
সরকারি হিসাবে, গত এক দিনে সুস্থ হয়েছেন আরও ১৯১ জন। এ পর্যন্ত ১৯ লাখ ২ হাজার ২০৭ জন সুস্থ হয়েছেন।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
একই বছরের মার্চে ডেল্টা ধরনে ভর করে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসে। এ পর্যায়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয় গত জুলাইয়ে। সংক্রমণ এতটাই বেড়ে যায় যে শনাক্তের হার ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
দেশে করোনার ওমিক্রন ধরন শনাক্ত হয় গত বছরের ১১ ডিসেম্বর। এরপর দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। ২০ জানুয়ারি করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে প্রবেশ করে দেশ। ২৮ জানুয়ারি করোনা শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ দাঁড়ায়, যা দেশে করোনা সংক্রমণ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। তবে তৃতীয় ঢেউয়ে মৃত্যু ছিল তুলনামূলক কম। এই ঢেউ নিয়ন্ত্রণেও আসে তুলনামূলক দ্রুত।
আরও পড়ুন:দেশে যতো অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে সেগুলো ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে হিসাবে রোববারের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ না হলে কঠোর ব্যবস্থার হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক বেলাল হোসেন শনিবার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
এর আগে বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সিভিল সার্জনদের সঙ্গে বৈঠকে অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। এ লক্ষ্যে রাজধানীতে পরিচালিত অভিযানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিজস্ব মনিটরিং টিম থাকবে। আর ঢাকার বাইরে জেলা সিভিল সার্জনদের নেতৃত্বে এই তদারকি করা হবে।
বেলাল হোসেন বলেন, ‘অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। ৭২ ঘণ্টা পর অভিযান চলুক। তারপর আমরা বসে দেখব যে কতদূর হলো। সিভিল সার্জেন্ট, বিভাগীয় পরিচালকদের সঙ্গে বসে এনালাইসিস করবো- কতগুলো বন্ধ করতে পারলাম, কতগুলো রয়ে গেছে। এই পদক্ষেপের সাফল্য দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘রোববার পর্যন্ত সময় দেয়া আছে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পর সোমবার আমরা বসব। পরে ফাইনাল করতে পারব যে কতগুলো বন্ধ হয়েছে। এরপর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
দেশে মোট অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা এবং সেগুলোর তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কাছে কীনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এমন তালিকা আমাদের কাছে ওভাবে নেই। আমাদের কাছে জমা পড়া আবেদনের সংখ্যা, কতগুলো লাইসেন্স দেয়া হয়েছে এবং কতগুলো পেন্ডিং আছে এটা বলতে পারি। আবেদনই করা হয়নি এমন অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা পাওয়াটা কঠিন।’
আবেদন না করা অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলা কীভাবে চিহ্নিত করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে বেলাল হোসেন বলেন, ‘জেলায় যদি রেজিস্ট্রিকৃত ৫০টি প্রতিষ্ঠান থাকে সেগুলো সম্পর্কে অধিদপ্তরে তথ্য আমরা জানি। তবে এর বাইরে যেগুলো আছে সেগুলোও আমরা ধরতে পারব। কাউন্ট করতে পারব।’
বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সিভিল সার্জনদের সঙ্গে বৈঠকে বেশকিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান বেলাল হোসেন। তার মধ্যে রয়েছে-
৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের অনিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধ করতে হবে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে তদারকি কার্যক্রম চলমান থাকবে।
এই কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নিয়ে নবায়ন করেনি, তাদের নবায়নের জন্য একটি সময়সীমা দিতে হবে।
নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নবায়ন না করলে সেসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে অস্ত্রোপচারের সময় অ্যানেস্থেশিয়া দেয়া এবং ওটি অ্যাসিস্ট করার ক্ষেত্রে নিবন্ধিত চিকিৎসক ছাড়া অন্যদের রাখা হলে সেসব প্রতিষ্ঠান ও জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬. যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে, তাদের লাইসেন্স দেয়ার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে হবে। লাইসেন্সপ্রাপ্তির আগে এসব প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাতে পারবে না।
আরও পড়ুন:৭২ ঘণ্টা বা তিন দিনের মধ্যে দেশের সব অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশের পর সারা দেশে অভিযান চালাচ্ছে প্রশাসন। প্রতিষ্ঠান বন্ধের পাশাপাশি করা হচ্ছে জরিমানা। দেয়া হচ্ছে কারাদণ্ডও।
চট্টগ্রাম
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করায় চট্টগ্রামের চারটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন ইলিয়াস চৌধুরীর নেতৃত্বে শনিবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে এগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়।
ওই চার প্রতিষ্ঠান হলো চট্টেশ্বরী এলাকার কসমোপলিটন হাসপাতাল, ডিটি রোডের পপুলার মেডিক্যাল সেন্টার ও ক্লিনিক্যাল ল্যাব, পাঁচলাইশ এলাকার সিএসটিসি হাসপাতাল এবং ওয়াসা মোড়ের নিরুপণী ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
সিভিল সার্জন বলেন, ‘ছয়টি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চারটি মৌখিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এগুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো লাইসেন্স দেখাতে পারেনি।
‘বাকি দুটির সেবার মূল্য তালিকা নেই। এদের সতর্ক করে মূল্য তালিকা প্রদর্শনের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’
টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইল সদরে শনিবার সকাল ১০টা থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রানুয়ারা খাতুনের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়।
বৈধ কাগজপত্র না থাকায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিনটি ক্লিনিক সিলগালা ও এর মালিকদের জরিমানা করা হয়েছে।
ওই তিন ক্লিনিক হলো স্বদেশ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পদ্মা ক্লিনিক ও আমানত ক্লিনিক অ্যান্ড হসপিটাল। এ ছাড়া ডিজিল্যাব নামের আরেকটি ক্লিনিকে সিজারিয়ান রোগী থাকায় রোববার দুপুর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে দ্য সিটি ক্লিনিককে ২০ হাজার টাকা, কমফোর্ট হাসপাতালকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ইউএনও রানুয়ারা বলেন, ‘কোনো বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তিনটি ক্লিনিককে সিলগালা ও মালিকদের জরিমানা করা হয়েছে। ডিজিল্যাবেরও বৈধ কাগজ নেই। তবে সেখানে সিজারিয়ান রোগী থাকায় রোববার দুপুরের পর সিলগালা করা হবে।’
চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গা সদরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আওলিয়ার রহমানের নেতৃত্বে চালানো অভিযানে তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা ও দুইটি মৌখিকভাবে বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সদর হাসপাতাল সড়ক এলাকায় শনিবার দুপুর ১টার দিকে এই অভিযান চালানো হয়।
আওলিয়ার বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গায় ২৫টি ক্লিনিক ও প্যাথলজি চিহ্নিত করে অভিযান চালানো হচ্ছে। তার মধ্যে আজকে সদর হাসপাতাল সড়কের বেশ কিছু ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজিতে অভিযান চালানো হয়।
‘বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করা হয়েছে। এগুলো হলো সেন্ট্রাল মেডিক্যাল সেন্টার, আমাদের সনো এবং চুয়াডাঙ্গা আলট্রাসনোগ্রাফি সেন্টার। এ ছাড়া ইসলামী হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক বিভাগ ও তিশা ডায়াগনস্টিক সেন্টার মৌখিকভাবে বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
অভিযানের সময় সঙ্গে ছিলেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ মহসীন।
নাটোর
নাটোরে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে সাতটি অবৈধ ক্লিনিক ও হাসপাতাল সিলগালা করেছে।
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অভিযান চালানো হয়।
সিলগালা করা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকার পদ্মা ক্লিনিক, সেন্ট্রাল ল্যাব ও প্রাইম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চকরামপুরের হেলথ কেয়ার অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চকবৈদ্যনাথের মদিনা চক্ষু হাসপাতাল, হাফরাস্তার তামান্না ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং বড়হরিশপুরের বরাত ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
মাহবুবুর রহমান জানান, জেলায় ১৭০টি ক্লিনিক, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ব্লাড ব্যাংক আছে। এগুলোর মধ্যে অনিবন্ধিত সাতটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করে সিলগালা করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বন্ধ করে দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের দাবি, তারা নিবন্ধনের জন্য দেড় বছর আগে অনলাইনে আবেদন করে টাকা ও কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। এখনও নিবন্ধন নম্বর পাননি।
কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সিভিল সার্জন আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে পাঁচটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে একটি ক্লিনিককে।
খোকসা উপজেলায় দুপুর ২টার দিকে অভিযান চালিয়ে ১১টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে টাস্কফোর্সের সদস্যরা। নিবন্ধন নবায়ন না করায় সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে।
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় ১৫০টি বৈধ বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান আছে। এর বাইরে অবৈধগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে।
‘প্রত্যন্ত এলাকাতেও অবৈধ প্রতিষ্ঠান আছে। সেগুলোতেও অভিযান চালানো হবে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে এগুলো বন্ধ করা সম্ভব নয়। সেই পরিমাণ জনবল স্বাস্থ্য বিভাগের নেই।’
রাজবাড়ী
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে লাইসেন্স না থাকায় একটি ক্লিনিক ও তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করে দেয়া হয়েছে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আম্বিয়া সুলতানার নেতৃত্বে শনিবার দুপুর অভিযান চালানো হয়।
সিলগালা করা প্রতিষ্ঠান চারটি হলো বালিয়াকান্দি হাসপাতাল রোডের অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চন্দনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ডাক্তার চেম্বার, দি আরোগ্য ক্লিনিক ও জামালপুর প্যাথলজি সেন্টার। এর মধ্যে জামালপুর প্যাথলজির মঞ্জুরুল ইসলামকে ১৫ দিন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
ইউএনও আম্বিয়া বলেন, ‘আমরা আজকে অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে অভিযান চালাই। এ সময় একটি ক্লিনিক ও তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার তাদের বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এ কারণে এগুলো সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিককে।’
মাগুরা
মাগুরা শহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ১৫টি অনিবন্ধিত ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন মো. শহীদুল্লাহ দেওয়ানের নেতৃত্বে শনিবার দুপুরে শহরের ভায়না, সরকারি কলেজ রোড, ঢাকা রোড, নতুন বাজার, স্টেডিয়াম গেটসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়।
জেলা শহরের বাইরে শালিখা উপজেলায় স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নিয়ে অভিযান চলেছে।
সিভিল সার্জন বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে সারা দেশের মতো মাগুরাতেও অবৈধ প্রাইভেট হাসপাতালের তালিকা করে অভিযান চালানো হচ্ছে। আমাদের কাছে কয়েক বছর আগের ডেটা ছিল। সে অনুযায়ী মাগুরায় প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিকের সংখ্যা ১৪১টি।
‘এখন মাঠে নেমে দেখি অনেক জায়গায় গোপনে হাসপাতাল, ক্লিনিকের হাট বসেছে। নিবন্ধন না থাকলেই বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। শনিবার ১৫টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
এ ছাড়া শেরপুরে ৪২টি, বরিশালে ৭টি, হবিগঞ্জে ১২টি, ধামরাইয়ে ৪টি, যশোরে ৬টি, ফরিদপুরে ২০টি, বগুড়ায় ২টি ও ভোলায় ১টি অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন চট্টগ্রামের আব্দুল্লাহ রাকীব, টাঙ্গাইলের শামীম আল মামুন, চুয়াডাঙ্গার জহির রায়হান সোহাগ, নাটোরের নাজমুল হাসান, কুষ্টিয়ার জাহিদুজ্জামান, রাজবাড়ীর রবিউল আউয়াল ও মাগুরার ফয়সাল পারভেজ।
আরও পড়ুন:মা ও নবজাতকের মৃত্যুর হার কমাতে অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য বিশেষ সেবা দিয়ে আসছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। সাড়ে ৯ মাসে ৪ বার সেবা নিতে হয় গর্ভবতী নারীকে; তবে সচেতনতার অভাবের পাশাপাশি করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এই সেবা নেয়ার হার আশঙ্কাজনকভাবে কমছে।
এই কারণে মাতৃত্বকালীন জটিলতা বেড়েছে। সরকারের প্রত্যাশা অনুযায়ী কমছে না নবজাতক ও মাতৃমৃত্যুর হার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গর্ভাবস্থায় প্রথমবার সেবা নেয়ার হার কিছুটা আশা জাগালেও পরের তিনটিতে একেবারে কমে আসছে। ফলে গর্ভবতী মায়েরা সঠিক পরামর্শ না পাওয়ায় জটিলতা বাড়ছে।
অনেক অভিভাবক এ বিষয়ে সচেতন নন। শহরের তুলনায় সেবা নেয়ার প্রবণতা গ্রামে অনেক কম। এ কারণে প্রসব-পরবর্তী জটিলতাও বাড়ছে।
নবজাতকের মৃত্যুহার কমাতে হলে সর্বপ্রথম প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বাড়ানোর পরামর্শও এসেছে। একই সঙ্গে প্রসূতি সেবা নেয়ার হার বাড়ানোর কথা বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, স্বাভাবিক সময়ে এমনিতেই সেবা কেন্দ্রগুলোতে মাতৃসেবায় জনবল ও অবকাঠামোগত নানা সংকট ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ২০২০ সালে করোনাকালে সেবা আরও ব্যাহত হয়। চারবারের মধ্যে প্রথমবার সবচেয়ে বেশি প্রসূতি এই সেবার আওতায় এসেছে।
প্রথম দফায় সেবা নেন ৬৮ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা, কিন্তু চতুর্থ দফায় গিয়ে সেবা নেয়ার হার কমে দাঁড়ায় ৪৮ শতাংশে। অর্থাৎ সেবার বাইরে ২০ শতাংশের বেশি অন্তঃসত্ত্বা। ২০২১ সালেও প্রথম দফায় সেবা নেয়ার হার কিছুটা বাড়লেও পরের তিন ধাপের অবস্থা আগের মতই।
এক-তৃতীয়াংশের বেশি নবজাতকের জন্ম অস্ত্রোপচারে
করোনার মধ্যে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব কিছুটা বাড়লেও এখনও প্রত্যাশার বেশি শিশুর জন্ম হচ্ছে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে গত এক বছরে তিন লাখ ৮৪ হাজার ১৮৫টি প্রসব হয়েছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে, সংখ্যায় যা এক লাখ এক হাজার ২৫৯টি।
সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৯৭৭ জন মা। আর নবজাতক মারা গেছে ১৫ হাজার ১৮টি। গ্রামে এখনও অধিকাংশ সন্তান প্রসব হয় বাড়িতে। বাড়িতে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ছে ৭০ শতাংশের বেশি মা ও শিশু। এই ঝুঁকি এড়াতে গর্ভবতীদের সেবা নেয়া অব্যাহত রাখার দাবি বিশেষজ্ঞদের।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বেগম নাসরীন বলেন, ‘করোনার সময়ে অনেক গর্ভবতী নারী আতঙ্ক বোধ করেছেন। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের লকডাউনের ফলে অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে যাননি। হাসপাতালগুলোতেও স্বাভাবিক সেবা পাওয়াটা ছিল দুষ্কর। ফলে বাড়িতেই সন্তান প্রসব করতে গিয়ে অনেক মা মারা গেছেন; বহু নবজাতকেরও মৃত্যু হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণ বাল্যবিয়ে, ২০ বছরের নিচে সন্তান নেয়া। এ ছাড়া প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণ, খিঁচুনি, বিলম্বিত প্রসব ও ঠিকমতো প্রসব করতে না পারায় ইনফেকশন। অন্যদিকে কম ওজন নিয়ে জন্ম, প্রি-ম্যাচিউর, জন্মের পর পর শ্বাস না নেয়া ও নাভিতে ইনফেকশনের কারণে নবজাতকের মৃত্যু হয়।’
জনবল ঘাটতির কারণে ব্যাহত হচ্ছে সেবা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার বাইরে দেশে স্বাভাবিক সময়েও এখনও ৫০ শতাংশ সন্তান প্রসব হয় বাড়িতে। এর বাইরে ২৮ শতাংশ হাসপাতালে, ২৬ শতাংশ ক্লিনিকে এবং মা ও শিশু হাসপাতালে হয় ২ শতাংশ প্রসব।
প্রসূতি সেবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে জনবল ঘাটতির কারণে ব্যাহত হচ্ছে সেবা। ফলে বাড়িতে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ছে ৭০ শতাংশেরও বেশি মা ও শিশু। কারণ বাড়িতে প্রসব সেবাদানকারী হওয়া প্রায় ৯০ ভাগই অপ্রশিক্ষিত।
সন্তান গর্ভধারণের আগে থেকে প্রসবের সময় পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শের মধ্যে আসাকে প্রসবপূর্ব সেবা বা অ্যান্টিন্যাটাল কেয়ার (এএনসি) বলা হয়। এতে গর্ভের সন্তান চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকে। ফলে প্রসবের সময় কোনো ধরনের জটিলতা তৈরির শঙ্কা কম থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এই সেবা আটবার নেয়ার পরামর্শ দিলেও বাংলাদেশে সেটি চারবার নেয়া হয়।
পরিবার ও পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (মা ও শিশু) মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবাগুলো দেয়ার কথা, কিন্তু অবকাঠামো ও জনবলের ঘাটতি থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। সারা দেশে আমাদের পরিবার কল্যাণ সহকারীর (এফডব্লিউসি) পদ যেখানে সাড়ে পাঁচ হাজার, সেখানে লোকবল আছে অর্ধেক।’
তিনি বলেন, ‘নবজাতকের মৃত্যুহার কমাতে হলে সর্বপ্রথম প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি বাড়াতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এটাকে ৭০ শতাংশে নিয়ে আসতে চাই, কিন্তু ৫০ শতাংশ পর্যন্ত করা গেলেও বাকি অর্ধেক এখনও বাড়িতেই হচ্ছে।’
পরিবার পরিকল্পনার অগ্রগতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ১০ শতাংশ সনাতন ও ৫২ শতাংশ আধুনিক পদ্ধতি মিলে ৬২ দশমিক ৩ শতাংশ দম্পতি এর আওতায় এসেছেন। এর মধ্যে স্থায়ী আছে মাত্র ৯ শতাংশ, কিন্তু আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল আগামী বছরের মাঝামাঝিতে এটাকে ২০ শতাংশে উন্নীত করা, কিন্তু জনবল না থাকায় লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছা কঠিন হচ্ছে।
‘১৯৭৪ সালে যখন জনসংখ্যা ৭ কোটি ছিল, তখন এই কাজের জন্য পরিবার কল্যাণ সহকারীর ২৩ হাজার ৫০০ পদ সৃষ্টি করা হয়। বর্তমানে জনসংখ্যা ১৭ কোটি হলেও সেই পদই রয়েছে, যা এখন ৪৭ হাজার হওয়ার কথা। আবার যে পদ আছে, সেখানে খালি সাড়ে ছয় হাজার। তাহলে কাজ করব কীভাবে?’
পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, ২০১০ সালে প্রতি লাখ শিশুর জন্মে মাতৃমৃত্যু ছিল ১৯৪ জন। এক দশকে তা কমে ১৬৫ জনে নেমেছে, তবে গ্রামে এখনও এই হার ১৯১; শহরে ১২৩।
প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ সরকারিতে এবং ৮৫ শতাংশই বেসরকারি হাসপাতালে হয়ে থাকে।
দেশে প্রান্তিক পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ধাত্রীবিদ্যার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে, কিন্তু সেগুলো ঠিকঠাক জোরদার নেই। দুই-একটি ছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে সন্তান প্রসবের তেমন ইতিহাস পাওয়া যায় না। একই সঙ্গে সরকারি হাসপাতালে নানা ভোগান্তির কথা চিন্তা করে বাধ্য হয়ে বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে বেসরকারিতে। সেখানে অস্ত্রোপচারের (সিজার) সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
এ বিষয়ে অবসটেট্রিক্যাল গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অফ বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক গুলশান আরা বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী বেড়ে গেছে সিজারিয়ান ডেলিভারি। এর কিছু উপকার থাকলেও এর ক্ষতির দিক অনেক বেশি। তাই এই ডেলিভারি কমিয়ে আনা জরুরি।’
আরও পড়ুন:গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২৩ জন। শনাক্তদের মধ্যে ১৮ জনই ঢাকা বিভাগের।
শুক্রবার বিকেলে বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ঢাকা বিভাগ ছাড়া সিলেটে চার জন এবং বগুড়ায় এক জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
এ সময়ের মধ্যে কারও মৃত্যু সংবাদ দেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন করে মৃত্যু সংবাদ না দেয়ায় মোট মৃত্যু ২৯ হাজার ১৩০ জনে রয়ে গেল। সব মিলিয়ে করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৫৩ হাজার ৩৭৯ জনে।
শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩ হাজার ৮৮৯টি নমুনা পরীক্ষায় ২৩ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের নতুন হার শূন্য দশমিক ৫৯ শতাংশ। গতকাল এই হার ছিল শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ।
সরকারি হিসাবে গত এক দিনে সুস্থ হয়েছেন আরও ২২১ জন। এ পর্যন্ত ১৯ লাখ ২ হাজার ১৬ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে।একই বছরের মার্চে ডেল্টা ধরনে ভর করে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসে। এ পর্যায়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয় গত জুলাইয়ে। সংক্রমণ এতটাই বেড়ে যায় যে শনাক্তের হার ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
দেশে করোনার ওমিক্রন ধরন শনাক্ত হয় গত বছরের ১১ ডিসেম্বর। এরপর দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। ২০ জানুয়ারি করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে প্রবেশ করে দেশ।
২৮ জানুয়ারি করোনা শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ দাঁড়ায়, যা দেশে করোনা সংক্রমণ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। তবে তৃতীয় ঢেউয়ে মৃত্যু ছিল তুলনামূলক কম। এই ঢেউ নিয়ন্ত্রণেও আসে তুলনামূলক দ্রুত।
আরও পড়ুন:ক্যানসারের চিকিৎসা হয় এমন হাসপাতালগুলোতে মেডিক্যাল ফিজিসিস্ট বা চিকিৎসা পদার্থবিদদের কাজে লাগানো জরুরি বলে মনে করছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল ফিজিক্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিএ)।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে চিকিৎসায় পদার্থবিদ্যার প্রয়োগ নিয়ে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার বিএমপিএর আলোচকরা এ মত দেন।
বিএমপিএ ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনের এবারের প্রতিপাদ্য ‘ক্যানসার সারাতে মেডিক্যাল ফিজিক্সের সচেতনতা তৈরি’।
সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা ইউনিভার্সিটির মেডিক্যাল ফিজিক্স অ্যান্ড ডসেমেট্রির পরিচালক অধ্যাপক সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, চিকিৎসা পদার্থবিদদের কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে। পাশাপাশি সব হাসপাতালে যেসব আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতির ব্যবহার হচ্ছে, তার সঠিক ও দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহারের জন্য বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দেয়া দরকার। এ বিষয়ে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন চেয়ারম্যান ড. মো. আজিজুল হক বলেন, রেডিয়েশন থেরাপির মাধ্যমে ক্যানসারের মানসম্পন্ন চিকিৎসা নিশ্চিত করতে গবেষণা বাড়াতে হবে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড হসপিটালের (এনআইসিআরএইচ) পরিচালক অধ্যাপক ডা. স্বপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, স্বাস্থ্যসেবায় চিকিৎসায় পদার্থবিদ্যার প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। এক্সটার্নাল-বিম রেডিওথেরাপি বা ব্র্যাকিথেরাপির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের চিকিৎসা হয়। চিকিৎসা পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা বাড়ানো অপরিহার্য।
তিনি বলেন, রেডিয়েশন থেরাপি ক্যানসার চিকিত্সার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে রয়ে গেছে। ক্যানসার রোগীদের প্রায় ৫০ শতাংশ রেডিয়েশন থেরাপি নেন।
এনআইসিআরএইচের পরিচালক আরও বলেন, বাংলাদেশে যোগ্য চিকিৎসা পদার্থবিদের অভাবে রোগীরা রেডিয়েশন থেরাপির সর্বোত্তম সুবিধা পান না। চিকিৎসা পদার্থবিদ্যা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব থাকায় এ সমস্যাটি নজরে আসেনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য