ঢাকায় একটি ব্যাংকের বিভিন্ন বুথ থেকে তিন দিনে ৮৪ বার টাকা তোলার চেষ্টার পর গ্রেপ্তার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পাঁচ দিনের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
১৯ জানুয়ারি বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম হাসিবুল হক এ রিমান্ডের আদেশ দেন।
রিমান্ডে যাওয়া দুই আসামি হলেন তুরস্কের নাগরিক হাকান জানবুরকান এবং বাংলাদেশের নাগরিক মফিউল ইসলাম। এদের এটিএম কার্ড জালিয়াতির আন্তর্জাতিক চক্রের সদস্য বলছে পুলিশ।
পল্টন থানায় করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় দুই আসামিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ।
তিনি নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তবে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।
১৮ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর গুলশান-১ থেকে আসামিদের গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ। তাদের কাছ থেকে পাঁচটি বিভিন্ন মডেলের ফোন, একটি ল্যাপটপ, ১৫টি ক্লোন কার্ডসহ মোট ১৭টি কার্ড জব্দ করা হয়।
এ ঘটনায় সিটিটিসির উপপরিদর্শক পিটার বিশ্বাস পল্টন থানার মামলাটি করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গ্রেপ্তার, পলাতক, অজ্ঞাতনামা আসামিসহ তিন-চারজন আসামি ১৩টি ক্লোন এটিএম কার্ড ব্যবহার করে।
পুলিশ বলছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জার্মানি, কানাডা, সৌদি আরব ও স্পেনে গিয়ে সেসব দেশের নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ড ক্লোন করে হাকান জানবুরকান টাকা তুলে নেন বুথ থেকে। এভাবে প্রায় ৪০টি দেশের বুথ থেকে টাকা তোলার পর বাংলাদেশে আসেন তিনি।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসেন হাকান জানবুরকান। এরপর গত ২-৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ইস্টার্ন ব্যাংকের বিভিন্ন বুথে গিয়ে শতাধিকবার টাকা তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হন।
ইস্টার্ন ব্যাংক তার অ্যান্টি ফেমিং টেকনোলজি ব্যবহার করায় অ্যালার্ম সিস্টেমের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারে। ফলে তারা হ্যাকারদের হাত থেকে স্কেমিং রোধ করতে সক্ষম হয়।
আরও পড়ুন:চলতি বছরে দেশে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পাঁচশ’ ছাড়িয়ে গেল। সবশেষে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৬২৯ জন।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সোমবার সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া সাতজনের মধ্যে চারজন পুরুষ ও তিনজন নারী।
এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট মারা গেছেন ৫০৪ জন। তাদের মধ্যে ২৪৫ জন পুরুষ ও ২৫৯ জন নারী। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৯৩ হাজার ৬৮৫ জন।
আর সবশেষ এই ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৮৪২ জন ডেঙ্গু রোগী।
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মালয়েশিয়া থেকে আসা দুটি ফ্লাইটের পাঁচ যাত্রীর কাছ থেকে ওয়েল্ডিং মেশিনের কয়েলের ভেতরে লুকানো সাত কেজি স্বর্ণ জব্দ করেছে ঢাকা কাস্টম হাউজ। জব্দ করা স্বর্ণের বাজার মূল্য প্রায় ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
সোমবার রাতে এই পরিমাণ স্বর্ণসহ তাদেরকে আটক করা হয়। আটকরা হলেন- রুবেল হোসেন, দুলাল আহম্মেদ, সামিউল ইসলাম, সবুজ আলী ও সাগর মিয়া।
বিমানবন্দর কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার মো. আল আমিন মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মালয়েশিয়া থেকে আসা এয়ার এশিয়ার একটি ফ্লাইট সোমবার রাত আড়াইটায় বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এরপর রাত সাড়ে ৩টার দিকে বাটিক এয়ারের একটি ফ্লাইট বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাস্টম হাউজের প্রিভেন্টিভ দল দুটি ফ্লাইটের পাঁচ সন্দেহভাজন যাত্রীর সঙ্গে আনা কম্বলে প্যাঁচানো অন্যান্য মালামালের সঙ্গে ওয়েল্ডিং মেশিন চিহ্নিত করে স্ক্যান করে। এ সময় প্রতিটি ওয়েল্ডিং মেশিনের কয়েলের ভেতরে মোট পাঁচটি স্বর্ণের চাকতি, দুটি স্বর্ণেরর টুকরো ও ১০০ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। জব্দ স্বর্ণের মোট ওজন প্রায় সাত কেজি এবং বাজার মূল্য সাত কোটি ৫০ লাখ টাকা।
প্রাথমিক পরীক্ষায় সেগুলো স্বর্ণ বলে নিশ্চিত হলে জব্দ করা হয়। আটক যাত্রীদের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় ফৌজদারি মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন। চোরাচালানের মাধ্যমে আনা স্বর্ণের উৎস শনাক্ত করতে তদন্ত চলছে।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানী ঢাকার বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে এই বিক্ষোভ ও মিছিল করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ইউনুস আহমাদ বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ চাই। আমাদের ১৫ কোটি মানুষের শক্তিশালী ৩০ কোটি হাত সাম্যের জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত। ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই এই হামলার তদন্ত করতে হবে এবং দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা সীমান্তে বাংলাদেশিদের নির্যাতনের খবর পেয়েছি। তারা সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে। আমরা ভারতের পক্ষ থেকে এই ধরনের আচরণ সহ্য করব না।’
সংগঠনটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি ইমতিয়াজ আলম বলেন, ‘শুধু ক্ষমা চাওয়াই যথেষ্ট নয়। ভারতীয় মন্ত্রীদের আত্মমূল্যায়ন করতে হবে। মুসলিম, খ্রীষ্টান, হিন্দু সবাই বাংলাদেশের নাগরিক।’
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘ভারত ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিচ্ছে। ভারতের গণমাধ্যমগুলো সহিংসতায় ইন্ধন জোগাচ্ছে। তারা বাংলাদেশে সংঘাত উস্কে দেয়ার চেষ্টা করছে।’
ভারত প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাইলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানাবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।
বিক্ষোভ মিছিলটি বায়তুল মুকাররমের উত্তর গেট থেকে শুরু হয়ে বিজয়নগর পানির ট্যাংক এলাকা হয়ে পল্টন মোড়ে এসে শেষ হয়।
বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে গত সোমবার ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে হামলা চালায় হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সমর্থকরা।
আরও পড়ুন:ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, গত ১৫ বছরে দেশে সার্বিকভাবে ৭০ দশমিক ৯ শতাংশ খানা দুর্নীতির শিকার হয়েছে। বেশি দুর্নীতি হয়েছে পাসপোর্ট, বিআরটিএ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায়।
রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে মঙ্গলবার ‘সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ-২০২৩’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরে টিআইবি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জরিপে অন্তর্ভুক্ত ঘুষদাতা খানার ৭৭ দশমিক ২ শতাংশ বলেছে, ঘুষ না দিলে সেবা পাওয়া যায় না। ঘুষ আদায়ে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ অব্যাহত রয়েছে। জরিপবর্ষে ১০ হাজার ৯০২ কোটি টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। আর আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে (২০০৯ থেকে এপ্রিল-২০২৪) ঘুষ লেনদেনের প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকার।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জাতীয় খানা জরিপ ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতি বছর করে আসছে টিআইবি। এই জরিপ ধারণাভিত্তিক গবেষণা নয়, সেবা নিতে গিয়ে যে হয়রানি শিকার হতে হয়, তাদের অভিজ্ঞতাভিত্তিক।’
তিনি জানান, ১৫ হাজার ৫১৫টি খানার ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়। এতে ছিল শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, ভূমি, কৃষি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, বিচারিক প্রক্রিয়া, বিদ্যুৎ, ব্যাংকিং, বিআরটিএ, কর ও শুল্ক, এনজিও, পাসপোর্ট, বিমা, গ্যাস, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ সহায়তা এবং এনআইডি সেবা।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ২০২৩ সালে সার্বিকভাবে গড়ে ৫ হাজার ৬৮০ টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন সেবাগ্রহীতারা। বিচারিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায় দুর্নীতি ও ঘুষের উচ্চহার অব্যাহত, যা সাধারণ জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে বড় বাধা।
তিনি বলেন, ভূমি সেবা, পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র সেবায় উচ্চ দুর্নীতি ও ঘুষ বিদ্যমান, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সেবা প্রাপ্তির অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করছে।
দুর্নীতি প্রতিরোধ, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, তদারকি জোরদার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন, অভিযোগের ব্যবস্থা সম্পর্কে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত সম্পদের হিসাব প্রকাশ ও নিয়মিত গণশুনানির আয়োজনের ওপর জোর দিতে বলেছে টিআইবি।
আরও পড়ুন:ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সোমবার রাতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ একাধিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অ্যাকটিভিস্ট জাহিদ আহসান বলেন, ‘আগরতলায় হাইকমিশনে হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই, ভারতের সঙ্গে খেলা হবে সমানে সমান। কোনো রাজা-প্রজার সম্পর্ক থাকবে না। শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতে আমরা ভারতের আধিপত্য মেনে নেব না।’
সমাবেশের একপর্যায়ে সেখানে মিছিল নিয়ে যোগ দেন জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা।
ওই সময় তারা ‘হিন্দু মুসলিম ঐক্য করো, বাংলাদেশ রক্ষা করো’, ‘ভারতীয় আগ্রাসন, চলবে না চলবে না’, ‘দূতাবাসে হামলা, জগন্নাথ হল মানবে না’ ধরনের স্লোগান দেন। ওই সময় বাকি শিক্ষার্থীরা হাততালি দিয়ে তাদের স্বাগত জানান।
সমাবেশে জগন্নাথ হলের ছাত্র জয় পাল বলেন, ‘ধর্ম,বর্ণ, জাত-পাত নির্বিশেষে আমরা সকলেই বাংলাদেশি। এটাই আমাদের একমাত্র পরিচয়। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা সকলেই এক।
‘বাংলাদেশের সনাতনীসহ সকল নাগরিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সেই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের একসাথে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসে যে হামলা হয়েছে, সেটির বিরুদ্ধে শুধু জগন্নাথ হল নয়, সকলের উচিত প্রতিবাদ জানানো। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে আমাদের উদ্দেশে বলা হয়, আমরা নাকি ভারতের দালাল।
‘আমরা যদি ভারতের দালালই হতাম তাহলে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সংহতি জানাতে আমরা এখানে আসলাম কেন?’
পরবর্তী সময়ে এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেন বিভাজন না করা হয়, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান জয় পাল।
ছাত্রদলের প্রতিবাদ
ভারতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনে হামলা এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কূটনৈতিক শিষ্টাচার-বহির্ভূত বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ভারত সরকার ভিয়েনা কনভেনশনের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী কূটনীতিকদের সুরক্ষা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সহিংস ঘটনার সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ত অবস্থান উক্ত ঘটনার পেছনে কর্তৃপক্ষের মৌন সম্মতির স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।
‘বিগত ২৮ নভেম্বরে কলকাতায়ও একই ধরণের সহিংস ঘটনা ঘটেছে, যা একটি বিপজ্জনক পরম্পরা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।’
ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশি কূটনীতিকদের পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদান, হামলার ঘটনার যথাযথ তদন্তপূর্বক দায়ীদের চিহ্নিত করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তি নিশ্চিতকরণ এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার জন্য ভারত সরকার ও রাজনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানান ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
আরও পড়ুন:এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশে আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার এই সময়কালে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৮২ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুসারে, নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৭৭ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৪০৫ জন ডেঙ্গু রোগী।
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৪৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ ও ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ নারী।
আর চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১ ডিসেম্বর রোববার পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৯২ হাজার ৩৫১ জন। তাদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ ও ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ নারী।
ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে সাজা দেয়ার নজির নেই বলে উল্লেখ করেছেন একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
হামলা মামলার হাইকোর্টের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রোববার তিনি এ কথা উল্লেখ করেন।
শিশির মনির বলেন, ‘৪০০ বছরের ইতিহাসে ভারতীয় সাবকন্টিনেন্টে (উপমহাদেশ) দ্বিতীয় স্বীকারোক্তির ওপর ভিত্তি করে কাউকে সাজা দেয়া হয়েছে, আর কোনো নজির নেই।'
তিনি বলেন, ‘এ মামলার আসামি মুফতি হান্নান দুবার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। টর্চার করে তার কাছ থেকে দ্বিতীয় স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ ছিল। দ্বিতীয় স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করেছিলেন তিনি।
‘এ স্বীকারোক্তির কোনো আইনগত ভিত্তি নেই, এ কথা আমরা আদালতে বলেছি।’
মামলার এ আইনজীবী বলেন, ‘বিচারিক আদালত এ মামলায় ৪৯ জনকে সাজা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অন্যান্যদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে রায় দিয়েছিল।
‘বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত আপিলের শুনানি শেষে সকলের আপিল মঞ্জুর (অ্যালাউ) করেছেন উচ্চ আদালত। বিষয়টি নিয়ে ইতোপূর্বে জারি করা রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করেন আদালত। সকলকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রায়ে নিম্ন আদালতের ট্রায়ালকে অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। আইনের ভিত্তিতে বিচারিক আদালতে বিচার (ট্রায়াল) কার্যক্রম হয়নি।
‘বিচারিক আদালতে দেয়া এক সাক্ষীর সাথে অন্য সাক্ষীর সাক্ষ্যে কোনো সামঞ্জস্যতা (কোলাবরেশান) নেই। এ ধরনের কেইসে ঘটনা পরস্পর দেখেছেন, এমন কোনো সাক্ষ্য নেই।’
এর আগে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট।
বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ রায় ঘোষণা করে। এর আগে চার দিন আপিলের ওপর শুনানি হয়।
বিচারিক আদালত এ মামলায় ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিল।
রায়ে আদালত বলে, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার ছিল অবৈধ। আইনে এটা টেকে না।
রায়ে উল্লেখ করা হয়, যে অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে বিচারিক আদালত বিচার করেছিল, তা আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল না।
এর আগে বেলা ১১টায় রায় ঘোষণা শুরু হয়। ১১টা ৪৫ মিনিটে রায় পড়া শেষ হয়। রায়ের মূল অংশ পাঠ করেন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান।
আদালতে আসামিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তারা এ মামলা শুরু থেকে আসামিপক্ষে শুনানি করেন।
আদালতে বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল ও আমিনুল ইসলাম।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে ফাঁসি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত।
পরে ওই বছরের ২৭ নভেম্বর মামলার বিচারিক আদালতের রায় প্রয়োজনীয় নথিসহ হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছায়।
বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যে ১৯ আসামি খালাস পেলেন
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, মাওলানা তাজউদ্দীন, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা আবু সাইদ, মুফতি মঈনউদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, হাফেজ আবু তাহের, মো. ইউসুফ ভাট ওরফে মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক, মফিজুর রহমান ওরফে মহিবুল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হোসাইন আহমেদ তামিম, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ও মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত যে ১৯ আসামি খালাস পেলেন
শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফের আবু ওমর, আবু হোরাইরা ওরফে পীরসাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, আরিফ হাসান ওরফে সুজন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বকর ওরফে সেলিম হাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ, মহিবুল মোত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর ওরফে ওস্তাদ জাহাঙ্গীর, মো. ইকবাল, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন্, তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া, হারিছ চৌধুরী (প্রয়াত) কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই এবং রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে বাবু ওরফে রাতুল বাবু।
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হওয়া দুই মামলার রায়সহ প্রায় ৩৭ হাজার ৩৮৫ পাতার নথি ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৌঁছায়।
পরে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানির জন্য মামলার পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। সেই আদেশের ধারাবাহিকতায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাড়ে ১০ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়।
আসামিদের মধ্যে ২২ জন খালাস চেয়ে আপিল করেন। অন্যদিকে ১২ আসামির জেল আপিল করা হয়।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কয়েক শ নেতা-কর্মী।
এ মামলায় বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে সম্পৃক্ত করা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বারবার দাবি করে আসছিল দলটি। আজ রায়ে সেটিই প্রমাণ হলো বলে দাবি করেছেন আইনজীবীরা। তারা রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য