নির্বাচন কমিশন (ইসি) আইন প্রণয়নের উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপি অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তার দাবি, আইনটি নিয়ে বিএনপি নেতাদের স্পষ্ট ধারণা না থাকার জন্যই তারা অন্ধকারে ঢিল ছুড়ছেন।
বুধবার দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি এমন অভিযোগ করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
‘দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে ইসি আইন নিয়ে যে খসড়া অনুমোদিত হয়েছে, সে সম্পর্কে গঠনমূলক আলোচনা ও দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানাচ্ছি।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি নেতারাসহ একটি চিহ্নিত মহল ইসি আইন প্রণয়নের উদ্যোগকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে অপপ্রচার করছে। দেশের বিশিষ্টজন ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধানের নির্দেশনা মেনে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। সেখানে বিএনপি ও তাদের দোসর দেশবিরোধী অপশক্তি দূরভিসন্ধিমূলক বক্তব্য দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে।’
কাদের বলেন, ‘সংসদীয় রীতি অনুযায়ী খসড়া আইনটি সংসদে উত্থাপনের পর আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। সেখান থেকে সুপারিশ আকারে সংসদের বৈঠকে উঠবে।
‘সংসদীয় বিধান অনুযায়ী সংসদে আলোচনার মধ্য দিয়ে আইনটি চূড়ান্ত হবে। জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল ও বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যরা তাদের মতামত ও প্রস্তাব উপস্থাপনের সুযোগ পাবেন। অথচ গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার না মেনে আগে থেকেই বিএনপি নেতারা এই আইন নিয়ে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করতে শুরু করেছেন।’
বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান সব সময়ই গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়াবিরোধী বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। বলেন, ‘যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা দখল ও গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধারই হলো বিএনপির রাজনৈতিক গতিপথ। তাই বিএনপি নেতারা ইসি-সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের উদ্যোগকে স্বাগত না জানিয়ে এটি নিয়ে অপরাজনীতি শুরু করেছেন।’
ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেন, ‘আইনটি নিয়ে বিএনপি নেতাদের স্পষ্ট ধারণা না থাকার জন্যই তারা অন্ধকারে ঢিল ছুড়ছেন। কারণ তাদের জন্মই সাংবিধানিক ও প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে চোরাগুপ্তা পথে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এই আইন প্রণয়ন নিয়ে কোনো ধরনের লুকোচুরি করা হয়নি। রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে এ বিষয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক রীতি ও প্রক্রিয়াকে ভয় পায় বলেই বিএনপি সংলাপে অংশ নেয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরে ইসি আইনের দাবি জানিয়ে আসছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় ২০১২ ও ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সার্চ কমিটির মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। ওই দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে অংশ নেয়া সব রাজনৈতিক দল ইসি আইন প্রণয়নের দাবি জানায়। বিএনপিও তখন একই দাবি জানিয়েছিল।
‘নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সদ্য সমাপ্ত হওয়া সংলাপে আইন প্রণয়নের দাবি উঠেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও সংলাপে অংশ নিয়ে এই আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছে।’
আরও পড়ুন:নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, রাষ্ট্রীয় সংস্কারের আড়ালে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় থাকা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
জাতীয় প্রেসক্লাবে শনিবার এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোশররফ বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অঙ্গীকার ছিল বৈষম্যবিরোধী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু সংস্কারের নামে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।’
‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনের বিকল্প নেই’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত নির্বাচন ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়া সংস্কারকে অগ্রাধিকার দেয়া। এই সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা রয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কার বাস্তবায়নেও তাদের অঙ্গীকার রয়েছে।
‘এসব সংস্কার দ্রুত করা দরকার। কোনো একটি সরকার একবারে সুর্নিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করে সব সংস্কার বাস্তবায়ন করতে পারে না। এই প্রক্রিয়া এখনই শুরু করতে হবে এবং আগামী নির্বাচিত সরকার তা অব্যাহত রাখবে।’
তিনি বলেন, ‘গত ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তারা সেই অধিকার প্রয়োগের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।’
বিএনপির এই বর্ষীয়াণ নেতা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সমালোচনা করেন।
সংস্কারের নামে সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে থাকলে ষড়যন্ত্র ও অস্থিতিশীলতা বাড়বে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘জনগণকে সুস্পষ্ট নির্বাচনি রোডম্যাপের মাধ্যমে নির্বাচনের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। তবেই সব ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা ব্যর্থ করা যাবে।’
আরও পড়ুন:আগামী বছর বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা ও অর্থ উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
রাজধানীর একটি হোটেলে শনিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) আয়োজিত অ্যানুয়াল বাল্টিক কনফারেন্স অন ডিফেন্সের (এবিসিডি) উদ্বোধন অধিবেশনে তিনি দেশের জটিল অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক অগ্রগতির ইঙ্গিত দেন।
আয় বৈষম্যকে দেশের অন্যতম উদ্বেগের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেন এ উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘এই বৈষম্য মোকাবিলায় মানসম্মত শিক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এখনও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।’
বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু সুবিধা ধরে রাখার প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন ড. মাহমুদ।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের আর এলডিসি হিসেবে থাকা সম্ভব নয়। উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে কিছু সুবিধা বজায় রাখার জন্য আলোচনা চলছে। অনেক দেশের পক্ষ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে।’
একটি আলাদা অধিবেশনে বাংলাদেশ কীভাবে মধ্যম আয়ের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে, তার চিত্র তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্ডারমিট এস গিল।
বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি ফোকাল পয়েন্ট হওয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি দেশে উদ্যোক্তা গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণের আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন:কাজের সুবিধার্থে নির্বাচন কমিশন (ইসি) চার নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে চারটি নতুন কমিটি গঠন করেছে।
নির্বাচন কমিশন বিধিমালা, ২০১০-এর বিধি ৩-এর উপ-বিধি ২-এর উপ-বিধি অনুযায়ী চারটি কমিটি গঠন করা হয় এবং বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত চারটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
নবগঠিত কমিটিগুলোর মধ্যে ৮ সদস্যের ‘আইন ও বিধি সংস্কার কমিটি’র প্রধান করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছুউদকে। এই কমিটির অন্যতম প্রধান কাজ হবে বিদ্যমান নির্বাচনি আইনসহ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সব আইন ও বিধিবিধান পর্যালোচনা করা এবং সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য ও ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার জন্য সুপারিশ করা।
নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদের নেতৃত্বে গঠিত ৯ সদস্যের কমিটির কাজ হবে নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রশাসনিক সংস্কার ও পুনর্বিন্যাস এবং দক্ষতা উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকারকে সীমানা পুনঃনির্ধারণ, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি, ভোট কেন্দ্র স্থাপন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত ও মনিটরিং এবং সুবিধাভোগীদের সঙ্গে আলোচনা সংক্রান্ত ছয় সদস্যের কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহকে ১০ সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন পরিচালনায় তথ্য-প্রযুক্তির প্রয়োগ সংক্রান্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বের কমিশনের প্রথম বৈঠকে সোমবার এসব কমিটি গঠন করা হয়।
গত ২৪ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনসহ চার নির্বাচন কমিশনার শপথ নেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সিইসি ও ইসিদের শপথ পাঠ করান।
আরও পড়ুন:ভারতের সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক।
শুক্রবার বিকেলে নওগাঁ সদর উপজেলার আমতলী মোড় জামে মসজিদ এলাকায় তাফসিরুল কুরআন ও শানে রিসালাম সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।
মামুনুল হক বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার, আলেম সমাজ ও সব রাজনৈতিক দলসহ সারা বাংলাদেশ আজ ঐক্যবদ্ধ। জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকলে যত বড় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হোক না কেন বাংলাদেশের মানুষকে পরাজিত করতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের সাম্রাজ্যবাদের সূচনা হয়েছিল ১৯৭২ সালে সংবিধানে। এজন্য এই সরকারকে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সংবিধান বাতিল করতে হবে। তাহলে ফ্যাসিবাদের শেকড় উপড়ে যাবে। আর কোনোদিন তারা বাংলাদেশের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাবে না।’
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের জন্য যে যার মতামত দিচ্ছেন। আমরা তোহিদি জনতার পক্ষে স্পষ্ট মতামত দিতে চাই। বাংলাদেশে কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন থাকবে না। কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন থাকলে তা প্রতিহত করতে যুদ্ধের প্রয়োজন হলেও আলেম সমাজ প্রস্তুত।’
উপমহাদেশে আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় ভারত অজুহাত হিসেবে সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করতে কট্টরপন্থী হিন্দু গোষ্ঠীগুলোকে উস্কানি দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রাজধানীর গুলশানে শুক্রবার ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা ভারত সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে আপনারা উগ্র হিন্দুদের উস্কে দিয়ে উপমহাদেশে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন।
‘ঘৃণ্য ও বিদ্বেষপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ভারতের সঙ্গে আর সম্পর্ক নেই নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও পাকিস্তানের।
‘বাংলাদেশও আপনাদের সঙ্গে নেই। এটি হয়েছে আপনাদের ঔদ্ধত্য ও শোষণমূলক মনোভাবের কারণে।’
রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। ৩০ লাখ মানুষের আত্মত্যাগ ও দুই লাখ নারীর সম্ভ্রম হারানোর মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে।
‘আপনারা ১৮-১৯ কোটি মানুষের এই দেশকে কি শুধু চোখ রাঙিয়ে মিথ্যা প্রচার করে, আমাদের ভয় দেখিয়ে দমন করতে পারবেন? আপনাদের কী এমন হয়েছে যে হঠাৎ মরিয়া হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেছেন?’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি ঘৃণ্য সরকার ক্ষমতায় ছিল। যে সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য শিশুদের হত্যা করতে দ্বিধা করেনি।
‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকার গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষদের চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দিতে দ্বিধা করেনি। তারা ক্রসফায়ারের মাধ্যমে নদী ও খালের পাড়ে মানুষ হত্যা করত। সেই হাসিনা সরকার আপনাদের এত প্রিয় ছিল কেন? কারণ, আপনাদের উস্কানিতে শেখ হাসিনা এদেশে যা খুশি তাই করেছেন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ভারত বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ করে দেয়ায় কলকাতার নিউমার্কেটসহ সেখানকার হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য এলাকার দোকানদাররা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
‘বাংলাদেশের মানুষ অস্থির হয়ে উঠবে ভেবে আপনারা ভিসা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ খুশি। প্রয়োজনে তারা থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া বা অন্য কোনো দেশে যাবেন। মানুষ ভারতের মতো দেশে যেতে চায় না, যারা আমাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে।’
চট্টগ্রাম ভারতের অংশ ছিল বলে দাবি করায় ইন্ডিয়ান রিপাবলিক বাংলা টিভির সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, একসময় মুসলিম নবাবদের শাসিত বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার মতো এলাকার মালিকানা দাবি করবে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন:ভারত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেছেন, বাংলাদেশের ১৮ কোটি ঐক্যবদ্ধ মানুষের বিরুদ্ধে কোনো দেশই ষড়যন্ত্রে সফল হবে না।
জাতীয় প্রেসক্লাবে শুক্রবার এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ড. মোশাররফ এ কথা বলেন।
৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের (আপসু) বিএনপিপন্থী ছাত্রনেতারা এই কর্মসূচির আয়োজন করেন।
বিএনপির বর্ষীয়াণ এই নেতা বলেন, ‘ভারত এবং এখানে থাকা হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু সদস্য সমস্যা তৈরি করছে। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তারা সারা বিশ্বে আমাদের বদনাম করছে, আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। তাদের একমাত্র লক্ষ্য এখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা এবং এই সরকারকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করা।’
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায় কি মাত্র তিন মাস ধরে বাংলাদেশে বসবাস করছে? স্বাধীনতার পর থেকে তারা এখানে অত্যন্ত সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা জিয়াউর রহমান এই সমস্যার সমাধান করেছেন এই বলে যে এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, মুসলমান বলে কিছু নেই। সবাই বাংলাদেশি ও বাংলাদেশের নাগরিক। তাহলে আমরা কেন এখানে এমন বিভাজন সৃষ্টি করব এবং এটা সহ্য করব?’
বিএনপি স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘সামরিক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এর মধ্য দিয়ে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ক্যু করে ক্ষমতা দখলের অবসান হয়েছিল।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বার বার সরকার পরিবর্তন করেছে। তাই এদেশের মানুষকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে তাদের সরকার কী হবে, কীভাবে তারা দেশ চালাবে।’
ড. মোশাররফ বলেন, ‘শান্তি বজায় রাখতে এবং দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিতে সব ধর্ম নির্বিশেষে দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
‘বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তাহলে তারা যে দেশেই থাকুক না কেন, আমাদের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র সফল করতে পারবে না।’
দ্রুত নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার ও নির্বাচনি রোডম্যাপ প্রণয়নে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিগত সরকার রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। বর্তমান সরকার সেগুলো সংস্কার করতে বদ্ধপরিকর।’
সভাপতির বক্তব্যে সাবেক মন্ত্রী ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে।
‘আজকে সব পাঠ্যপুস্তকে সব আন্দোলনের পটভূমি সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। সব নেতৃত্বদানকারীর নাম সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি। এই রাষ্ট্রকে আমাদের ধরে রাখতে হবে।’
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হাবিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের আধা ইঞ্চি মাটিও ছেড়ে দেয়া হবে না বলে ভারতকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
কুমিল্লার টাউন হলে শুক্রবার সকালে কর্মী সম্মেলনে তিনি এ বার্তা দেন।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘দেশে সংস্কারের প্রয়োজন আছে, তবে সংস্কারের গতি বাড়িয়ে জাতিকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেন।’
তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে, বিজিবিকে সীমান্তের চৌকিদার বানিয়েছে। আমাদের বহু নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে।
‘আমরা প্রতিশোধ নেব না, তবে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে বিচার করতে হবে।’
ভারতের উদ্দেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশের এক ইঞ্চি কেন, আধা ইঞ্চি জায়গাও ছেড়ে দেব না। এ দেশে কোনো সাম্প্রদায়িক বিভাজন নেই।
‘স্বৈরাচার সরকার ও মইন উদ্দিন ও ফখরুদ্দীনরা মিলে সাড়ে ১৭ বছর শ্বাসরুদ্ধকর সময় পার করেছে। এ দেশের মানুষ আর সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে চায় না।’
জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে কী করবে জানিয়ে দলটির আমির বলেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশ আফগানিস্তান ও পাকিস্তান হবে না, ভালো একটা বাংলাদেশ হবে। নারীদের ঘরে বন্দি রাখার অধিকার আমাদের নেই। তাদের পেশাদারির কাজ আছে, বাহিরে যেতে হবে।
‘ইসলাম নারীকে সম্মান দিয়েছে। তা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রক্ষা করবে। জনগণের ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে।’
কুমিল্লা বিভাগের দাবি ও কুমিল্লা বিমানবন্দর নিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘কুমিল্লা বিভাগ কুমিল্লাবাসীর নায্য দাবি। এ দাবি না মানাও জুলুম ছিল।’
ওই সময় কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি কুমিল্লা বিমানবন্দর চালুরও দাবি জানান।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য