তুমুল পাঠকপ্রিয় থ্রিলার সিরিজ মাসুদ রানা ও কুয়াশা সিরিজের স্রষ্টা এবং সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার কাজী আনোয়ার হোসেনের দাফন হবে বনানীতে। এর আগ পর্যন্ত তার মরদেহ রাখা হবে শাহবাগে বারডেম হাসপাতালের মরচুয়ারিতে।
কাজী আনোয়ার হোসেনের ছেলে কাজী শাহনূর হোসেন নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘এখন ডেডবডি গোসল করানো হবে এবং রাতে বারডেমের মরচুয়ারিতে মরদেহ রাখা হবে। সকালে নিয়ে যাওয়া হবে সেগুনবাগিচার বাসায়। সেখানে জানাজা শেষে বাদ জোহর বা আসর তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে। কবরটি হবে কাজী আনোয়ার হোসেনের মায়ের কবরের ওপরে। এটাই তার শেষ ইচ্ছা ছিল।’
একই সিদ্ধান্তের কথা জানান কাজী আনোয়ার হোসেনের পুত্রবধূ মাসুমা মায়মুরও। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার শ্বশুরের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার বাদ জোহর বনানীতে তাকে তার মায়ের কবরে সমাহিত করা হবে। আমার কাছে তিনি এই ইচ্ছা প্রকাশ করে গিয়েছিলেন।’
প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত কাজী আনোয়ার হোসেন ১০ জানুয়ারি থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। বুধবার তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
কাজী আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুর খবর জানিয়ে বুধবার শেষ বিকেলের দিকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন মাসুমা মায়মুর। তিনি লেখেন, ‘নিভে গেছে দীপ জনমের তরে জ্বলিবে না সে তো আর। দূর আকাশের তারা হয়ে গেছে আমার ছেলেটা। আমার ছোট্ট ছেলেটা। আর কোনো দিনও আমার পিছু পিছু ঘুরে খুঁজবে না মায়ের গায়ের মিষ্টি গন্ধ। কোনো দিনই না। কিন্তু মাকে ছেড়ে থাকবে কীভাবে, ওই অন্ধকার ঘরে আমার ছেলেটা?
‘একা-শুধু একা? কী সব বকছি জানি না। আব্বা (কাজী আনোয়ার হোসেন) আর নেই। চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে।’
সেবা প্রকাশনীর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে তৌফির হাসান উর রাকিব নামে একজন লিখেছেন, ‘যার কাছ থেকে অপরিমেয় ভালোবাসা পেয়েছিলাম এবং যাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে বাধ্য হয়েছিলাম, সেই মানুষটি আর নেই! কাজী আনোয়ার হোসেন আঙ্কেল আর আমাদের মাঝে নেই!
‘মাসুদ রানার স্রষ্টা, এই নশ্বর পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে আমাদের সবাইকে ছেড়ে অনেক দূরে কোথাও চলে গেছেন। আপনারা সবাই তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করবেন, প্লিজ।’
সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার হিসেবে কাজী আনোয়ার হোসেন ষাটের দশকের মধ্যভাগে মাসুদ রানা নামের স্পাই চরিত্র সৃষ্টি করেন। মাসুদ রানার চরিত্রটি মূলত ইয়ান ফ্লেমিংয়ের সৃষ্ট জেমস বন্ড চরিত্রের বাঙালি সংস্করণ হিসেবে গণ্য করা হয়।
মাসুদ রানা সৃষ্টির কিছু আগে কুয়াশা নামক আরেকটি জনপ্রিয় চরিত্র তার হাতেই জন্ম নেয়। কাজী আনোয়ার হোসেন ছদ্মনাম হিসেবে বিদ্যুৎ মিত্র ও শামসুদ্দীন নওয়াব নাম দুটি ব্যবহার করতেন। তবে সেবা প্রকাশনীর ভক্ত পাঠকের কাছে তিনি কাজীদা নামেই বেশি পরিচিতি পান।
কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। পুরো নাম কাজী শামসুদ্দিন আনোয়ার হোসেন। ডাক নাম ‘নবাব’। তার বাবা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন, মা সাজেদা খাতুন।
কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৫২ সালে সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএ এবং বিএ পাস করেন। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন তিনি।
বেশ কয়েক বছর রেডিওতে নিয়মিত গান গাইতেন কাজী আনোয়ার হোসেন। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বেতারের সংগীতশিল্পী ছিলেন। ১৯৬২ সালে বিয়ে করেন কণ্ঠশিল্পী ফরিদা ইয়াসমিনকে।
কাজী আনোয়ার হোসেনের তিন বোন সনজীদা খাতুন, ফাহমিদা খাতুন ও মাহমুদা খাতুনও রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী।
কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৬৩ সালের মে মাসে বাবার দেয়া ১০ হাজার টাকা নিয়ে সেগুনবাগিচায় প্রেস চালু করেন। দুজন কর্মচারী নিয়ে শুরু হওয়া এই প্রেসের নাম পরে পাল্টে হয় সেবা প্রকাশনী। সেবা প্রকাশনী বাংলাদেশে পেপারব্যাক বই প্রকাশ, বিশ্ব সাহিত্যের প্রখ্যাত উপন্যাসের অনুবাদ এবং কিশোর সাহিত্যের ধারা এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন:রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া ও ক্ষমতার পরিসর নিয়ে আজ আলোচনার শুরুতেই একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার শুরুতে এই কথা জানান কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে সময় কম। যত দ্রুত সম্ভব সবাইকে একমত হয়ে জুলাই মাসের মধ্যে “জুলাই সনদ” চূড়ান্ত করতে হবে। কমিশনের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। এসবের মধ্যেও আলোচনা ফলপ্রসূ করতে সবার সাহায্য প্রয়োজন।’
আলী রিয়াজ জানান, যেসব বিষয়ে আজও সমঝোতা হবে না, সেগুলো নিয়ে আগামী সপ্তাহে ফের আলোচনায় বসা হবে।
আজ চতুর্থ দিনের আলোচনায় যে বিষয়গুলো থাকছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো— প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি এবং নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ।
গতদিন যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়নি, সেগুলো নিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে আজকের আলোচনার সূচনা হবে বলে জানান কমিশনের সহ-সভাপতি।
বৃহস্পতিবারের এই বৈঠকে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামীসহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। এনসিপির হয়ে রয়েছেন দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। আর জামায়াতের প্রতিনিধি হিসেবে আছেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন সরকারি সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি কিছু কিছু পত্রিকায় ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন সম্পর্কে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টার বক্তব্য বিচ্ছিন্নভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে। এপ্রেক্ষিতে বিভ্রান্তি দূর করার স্বার্থে জানানো যাচ্ছে যে, ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন সরকারি সিদ্ধান্ত হয়নি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আইন উপদেষ্টা তার সর্বশেষ বক্তব্যে বলেছেন, সময়মতো রাজনৈতিক দল, ছাত্রনেতৃত্ব ও বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে এবিষয়ে কি করা যায়; তা চিন্তা করা হবে।
‘তিনি তার বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যেও বলেছেন, এধরনের কমিশন গঠনের কথা ভাবা যেতে পারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে সংঘটিত গণহত্যার বিচার হওয়ার পর এবং গণঅভ্যুত্থানে পতিত দলটির নেতাদের অনুশোচনা প্রকাশ সাপেক্ষে। তার বক্তব্য ছিল, গণহত্যাকারীরা যে জাতি থেকে বিচ্ছিন্ন ও পরিত্যাজ্য এটি প্রতিষ্ঠার জন্যও এধরনের কমিশন গঠনের কথা ভাবা যায়,’ বলা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
এরআগে গেল ১০ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘দেশে একটি ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করা হবে। এই লক্ষ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য প্রধান বিচারপতি ও আইন উপদেষ্টাসহ একটি প্রতিনিধি দল দক্ষিণ আফ্রিকাতে যাচ্ছে। ফিরে এসে এই কমিশন গঠন করার সময় বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’
রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ, ২০২৫’ (দ্বিতীয় খসড়া) বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আইন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তখন এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন লেখক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক পিনাকী ভট্টাচার্য। তিনি এই খসড়া আইনের বেশকিছু ধারা নিয়ে নিজস্ব মতামত তুলে ধরেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘অনন্তকাল হানাহানি করে এ জাতির মুক্তি হবে না, তাই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। যারা গণহত্যার মতো, মানবতা বিরোধী অপরাধের মতো ঘৃণ্য অপরাধ করেছে, তারা খুব বেশি সংখ্যক না। তাদের উপযুক্ত ও যথেষ্ট পরিমাণ শাস্তির ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। তারা যে এই জাতির মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন, সেটাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য হলেও ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন করতে হবে।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘যারা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের উপযুক্ত বিচার করে, তাদেরকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার জন্য যা যা করা যায়, সেটা করতে সরকার বদ্ধপরিকর। একই সাথে সরকার গুমসহ বিভিন্ন অপরাধের বিচারের জন্য আইন করে যাবে, যাতে এই অপরাধগুলো ভবিষ্যতে আর না হয়।’
টানা চতুর্থ দিনের মতো ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভ করছেন সরকারি কর্মচারীরা। অধ্যাদেশটি বাতিল না হলে আরও কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ভবনের নিচে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা একত্রিত হয়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভ করেন কর্মচারীরা। পরে সচিবালয়ের ভিতরে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।
এ সময় বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যাননুরুল ইসলাম জানান, চাকরি অধ্যাদেশ পুরোপুরি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।
গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের খসড়া বাতিলের দাবিতে গত ২৪ মে আন্দোলনে নামেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা।
কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যেই ২৫ মে রাতে এই অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে।
সরকারি কর্মচারীরা অধ্যাদেশটিকে নিবর্তনমূলক ও কালো আইন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। । এটি বাতিল করার জন্য সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল, কর্মবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি ছাড়াও কয়েকজন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।
রাজধানী ঢাকার ৩ হাজার ১৪৭টি বাড়ি থেকে গত ফেব্রুয়ারিতে নমুনা সংগ্রহ করে ৪৬৩ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। সেই হিসাবে রাজধানীর ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার অস্তিত্ব রয়েছে।
গতকাল বুধবার বিকালে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে আইইডিসিআরের অডিটোরিয়ামে ডেঙ্গুরোগের বাহকের কীটতাত্বিক জরিপে (২০২৪-২০২৫) এই তথ্য উঠে এসেছে। আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন জরিপের তথ্য তুলে ধরেন।
জরিপের তথ্যে বলা হয়, এ বছর বহুতলা ভবনে এডিস মশার লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে, যা ৫৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এছাড়া নির্মাণাধীন ভবন ১৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আলাদ ভবন ও আধাপাকা ভবনে ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ, পরিত্যক্ত ভবনে ২ দশমিক ৮ শতাংশ এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে।
ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ১৩টি ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩১ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি মিলেছে, যা ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব পাওয়া গেছে।
ঝিনাইদাহ, মাগুরায় এডিস মশার ঘনত্ব বেশি
তাহমিনা শিরীন বলেন, ঢাকার বাইরে ঝিনাইদহ, মাগুরা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুরে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি বেশি। ঝিনাইদাহ শহর এলাকায় এডিসের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২৭০টা বাড়ি পরিদর্শন করে ৫৪টি এডিসের লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ঝিনাইদহে ব্রুটো ইনডেক্স ৬০ পাওয়া গেছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
পিরোজপুর ও মাগুরায় ১০০ শতাংশ ভেক্টর এডিস অ্যালবোপেক্টাস পাওয়া গেছে। প্লাস্টিক ড্রাম, প্লাস্টিক বাস্কেট ও দইয়ের খালি পাত্রে লার্ভার উপস্থিতি বেশি পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পাহাড়ি টিলা কেটে প্রায় ১ একর জায়গাজুড়ে স্থাপিত হয়েছে ব্যক্তি মালিকানাধীন পার্ক। বাঁশখালী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের উত্তর জলদি এলাকায় স্থাপিত এই পার্কটির নামকরণ করা হয়েছে ‘আমানা পার্ক’। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে পাহাড়ি টিলার সঙ্গে প্রায় ৫ হাজার গাছ কেটে ওই পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশখালী পৌরসভার মিয়ার বাজার থেকে পূর্বপাশে ২ কিলোমিটারের মধ্যেই চোখে পড়ে পাহাড়ি অঞ্চল। মিয়ার বাজার থেকে দুর্গম পথ ধরে পৌঁছাতে হয় সেই পার্কে। বর্ষায় যাতায়াতের রাস্তা চলার অযোগ্য হয়ে ওঠায় দর্শনার্থী তেমন চোখে পড়েনি। যে কয়জন চোখে পড়ল দম্পতি কিংবা জুটি বেঁধে আসা তরুণ-তরুণী। প্রবেশ মুখেই টিকেট কাউন্টার, প্রতি টিকিটের প্রবেশ মূল্য নেওয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। টিলায় উঠার জন্য দৃষ্টিনন্দন সিড়ি করে দেওয়া হয়েছে। টিলার ওপরে বন্য পশুর আদলে গড়ে তোলা হয়েছে ভাস্কর্য। দর্শনার্থীদের বসার জন্য তৈরি করা হয়েছে কংক্রিটের আসন। আয়োজন বলতে এইটুকুই।
স্থানীয়রা জানান, ‘২০২৪ সালের শুরুর দিকে ওই স্থানে টিলা কেটে পার্ক স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ১ বছর পর ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে এটি দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, চারপাশে বনাঞ্চল বেস্টিত পার্কটির জায়গায় এক সময় গাছ ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারাও দাবি করেছেন, উক্ত জায়গায় প্রায় ৫ হাজারের মত বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালি ছিল। স্বাভাবিকভাবে এই পাহাড়ি টিলা বনবিভাগের জায়গা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পার্কটির উদ্যোক্তা মোহাম্মদ মুমিন বলেন, ‘ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে আমি এই পার্ক স্থাপণ করেছি। এটি আমার মালিকানাধীন জায়গা। আমি গাছপালা ও পাহাড় কাটিনি। উপজেলা প্রশাসন কিংবা বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে এই স্থাপনা করেছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি এবং প্রতিবেদককে কোন প্রকার অনুমতি পত্র তিনি দেখাতে পারেননি।
কলেজ পড়ুয়া এনামুল হক নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ‘পার্কে উঠতি বয়সি ছেলেমেয়েদের আনাগোনা বেশি, আর ইউটিউবার-টিকটকার যায়। পার্ক হওয়ার মত কিংবা অবলোকন করার মত কিছুই তো নেই সেখানে। শুধু পাহাড়ের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য এটি করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এমন একটা জায়গায় পার্ক করার অনুমতি কীভাবে পেল? পাহাড়ের মোহনীয়তা তো প্রকৃতির দান এর বাইরে আর কিছু নেই।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস্ ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, ‘পাহাড় কেটে পার্ক তৈরি করা এটি তো আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। স্থানীয় প্রশাসনকে হাইকোর্ট থেকেও নির্দেশ দেওয়া আছে, পাহাড় ও গাছ কাটলে কঠোর আইণানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। এরপরও যদি পাহাড় কাটা হয়, গাছ কাটা হয় তাহলে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হল। এসব কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
কলেজ শিক্ষক নুরুল মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘বন বিভাগ এবং উপজেলা প্রশাসনের অবহেলার সুযোগে একের পর এক পাহাড় বন ধ্বংস হচ্ছে। বাঁশখালীর একাধিক জায়গায় ভূমিদস্যুরা পাহাড় ও বনভূমি উজাড় করলেও উপজেলা প্রশাসন এবং বন বিভাগ এ বিষয়ে কখনোই পদক্ষেপ নেয় না।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা দীপান্বিতা ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। জায়গা যদি ব্যক্তিমালিকানাধীন হয়, তবে এটি উপজেলা প্রশাসন দেখার কথা। যদি বন বিভাগের জায়গা হয় সেক্ষেত্রে বিষয়টা বন বিভাগ দেখবে।’
এ বিষয়ে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের জলদি রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, ‘বন অধিদপ্তর থেকে কোন প্রকার অনুমতি গ্রহণ করা হয়নি। তাকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বর্ষার পর জরিপ করে সীমানা চিহ্নিত করা হবে। সেখানে বন বিভাগের জায়গা থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বাঁশখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের বনাঞ্চলের পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে লোকালয়ে হাতির আনাগোনা বেড়ে যায় এবং অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের বনাঞ্চলের পরিবেশ ক্ষুন্ন হয় এমন ঘটনা চলমান থাকলে সামনে আরও বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ প্রয়োজন।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামশেদুল আলম বলেন, ‘আমি বাঁশখালীতে যোগদানের আগেই এটি তৈরি করা হয়েছে। পার্কটির সম্পর্কে গতকালকে আমি অবগত হলাম। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জায়গা হলেও ব্যবসায়িক উদ্দেশে সেখানে স্থাপনা করলে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতির একটি ব্যাপার-স্যাপার থাকে। আমি আরও খোঁজখবর নিয়ে দেখতেছি।’
সারা দেশে লঘুচাপের প্রভাবে গত দুদিন ধরে বৃষ্টিপাতের কারণে বাতাসে দূষণের উপস্থিতিও কমে এসেছে অনেকটা। গত দুদিনের মতো আজও ঢাকার বায়ুমান ‘ভালো’র কাছাকাছি রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকাল ৯টায় ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ছিল ৬৪। এই সূচক ‘মাঝারি’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত, যেকোনো প্রকার অস্বাস্থ্যকার শ্রেণি থেকে যা অনেক দূরে।
কণা দূষণের একিউআই সূচক যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
ফলে আজ সকালে রাজধানী ঢাকার বাতাস দূষণ থেকে দূরে এবং ‘ভালো’র একপ্রকার কাছাকাছি বলা চলে।
এই সময়ে ১৬৭ একিউআই স্কোর নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ দূষিত শহর ছিল পাকিস্তানের লাহোর। সূচক ১৫২, ১৩৯, ১৩৭ ও ১৩৫ নিয়ে তারপরই ছিল যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা, চিলির রাজধানী সান্তিয়াগো, ফিলিপাইনের ম্যানিলা এবং কুয়েত সিটি।
এ ছাড়াও ৯৯ একিউআই স্কোর নিয়ে তালিকার সপ্তম স্থানে ছিল পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের শহর দিল্লি। তবে দূষণের মাত্রা কম থাকায় একই সময়ে ঢাকার অবস্থান ছিল অনেক নিচে; ৫৪ নম্বরে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে ঢাকা। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়। বর্ষার শুরুতেই অবশ্য এই আভাস মিলতে শুরু করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রস্তাবিত ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার হরণে এই ব্যবস্থাকে আরেকটি ছলচাতুরী হিসেবে দেখা হচ্ছে।’
গতকাল বুধবার বিকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য কমিশনের যে প্রস্তাব তাতে একটা ইলেক্টোরাল কলেজ করা হবে। এবং প্রায় ওনাদের ভাষ্য অনুযায়ী ৭০ হাজারের মতো ভোটার থাকবে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ এখানে ভোটার হবেন। এবং রাষ্ট্রপতিকে সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য ওখানে প্রস্তাব করা হয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবে আগের মতোই একমত নয় বিএনপি।
এই কাউন্সিলের জবাবদিহি না থাকায় সমর্থন করে না বিএনপি। এই কাউন্সিলে আরেকটি ভারসাম্যহীন অবস্থা তৈরি হবে বলে মনে করি আমরা।’
স্বাধীন বিচারব্যবস্থার দাবি জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘স্বাধীন বিচারব্যবস্থা হলে ভারসাম্যহীনতা দূর হবে, ফ্যাসিবাদ দমন করবে। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, অন্য সাংবিধানিক পদ, সংস্থা স্বাধীন করতে পারলে সমস্যা থাকবে না।’
বিএনপি মনে করে সুশাসন নিশ্চিত করতে ন্যায়পাল করা যেতে পারে। বিদ্যমান ব্যবস্থা বজায় রেখে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হলে তাদের যোগ করা যেতে পারে, বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আইন সংশোধন করা যেতে পারে। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপি মনে করে, দুদক ও মানবাধিকার কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে বিদ্যমান আইনগুলো সংস্কারের প্রয়োজন।
মন্তব্য