নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়ার বেদনার মধ্যে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত তৈমূর আলম খন্দকার সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন।
নারায়ণগঞ্জ নগরীর মাসদাইর এলাকায় নিজ বাড়িতে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে আসেন তিনি। দল থেকে বহিষ্কার হওয়া নিয়ে কথা বলছেন তৈমূর।
মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে হারের পর ‘তৈমূরের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী’ শিরোনামে নিউজবাংলায় খবর প্রকাশের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মঙ্গলবার বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হন তৈমূর।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর সই করা এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
এতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হলো।
রুহুল কবীর রিজভী বিষয়টি নিশ্চিত করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনি নির্বাচনে দাঁড়িয়ে আগেই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। নির্বাচন প্রশ্নে দল যেখানে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা না মেনে তিনি নির্বাচনে গিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে তাকে দুটি পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার পর এবার বিচার-বিশ্লেষণ শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে তৈমূর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাকে যদি বহিষ্কার করে থাকে তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। দুইটা বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে মহামারি লাগছে। দুইটা রাজনৈতিক দলেই বহিষ্কার-অব্যাহতির হুমকি চলছে। এই দুইটা দলের যারা ত্যাগী নেতাকর্মী, তাদের আল্লাহর কাছে পানা চাওয়া উচিত, জালালি খতম পড়াইয়া।’
তৈমূরের পাশাপাশি তার প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামালকেও তার দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু বিষয়ে বলতে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনূসকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বিএনপি।
ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২৬ মে ঢাকা ছাড়া সকল মহানগর ও জেলা সদরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো যৌথভাবে সমাবেশ করবে।
মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির এই সিদ্ধান্তের কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি জানান, সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে তার ভাষায় দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সব দলের সঙ্গে সংলাপে বসবে বিএনপি। গত নির্বাচনে বিএনপির জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক নাগরিক ঐক্যের প্রধান সমন্বয়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার কার্যালয়ে গিয়ে এই আলোচনা শুরু করবেন মির্জা ফখরুল।
সারা দেশে বিক্ষোভের ডাক দিয়ে ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূসসহ দেশে সিনিয়র সিটিজেনদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘অসম্মানজনক বক্তব্যের প্রতিবাদে’ এই বিক্ষোভ হবে।
কী বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী
গত ১৮ মে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের দলীয় এক আলোচনায় শেখ হাসিনা জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক যেন সরে যায়, সে জন্য ড. ইউনূস, ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক নানা সক্রিয় চেষ্টা চালিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, এই সেতু ভেঙে পড়ে যাবে- এই ধরনের বক্তব্য রাখায় খালেদা জিয়ার প্রতিও ক্ষোভ জানান শেখ হাসিনা।
নানা বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি পদ্মা সেতুবিরোধীদের সেতুতে নিয়ে চোবানোর কথা বলেন।
খালেদা জিয়ার উক্তি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বলেছে, স্প্যানগুলো যে বসাচ্ছে, সেটা ছিল তার কাছে জোড়াতালি দেয়া। পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, তাতে চড়া যাবে না, চড়লে সেটা ভেঙে যাবে। তার সঙ্গে তার কিছু দোসররা। তাদের কী করা উচিত? পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে পদ্মা নদীতে টুস করে ফেলে দেয়া উচিত।’
ড. ইউনূসের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যিনি (ড. ইউনূস) এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করেছেন, তাকেও আবার পদ্মা নদীতে নিয়ে দুটি চুবনি দিয়ে উঠিয়ে নেয়া উচিত, মরে যাতে না যায়। পদ্মা নদীতে দুটি চুবনি দিয়ে সেতুতে উঠিয়া নেয়া উচিত। তাহলে যদি এদের শিক্ষা হয়।’
পরদিন মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, তিনি মনে করেন সরকারপ্রধানের এই বক্তব্য প্রচ্ছন্নভাবে খালেদা জিয়া ও ড. ইউনূসকে হত্যার হুমকি।
তিনি বলেন, ‘দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে তিনি রয়েছেন, যেভাবেই আসুন না কেন। তিনি এই ধরনের উক্তি করতে পারেন না।
‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, তাকে সরাসরি হত্যার হুমকির শামিল। সেতু থেকে ফেলে দেয়া- এটা কখনই স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে না। আমরা বিস্মিত হয়েছি এবং ক্ষুব্ধ হয়েছি এবং প্রচণ্ডভাবে নিন্দা জানাই তার এই উক্তিকে।’
সংলাপের ঘোষণা
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করতে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার কথা জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আমরা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলব। তাদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা চূড়ান্ত ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের যে রূপরেখা, সেই রূপরেখা তৈরি করা হবে।’
বিকেল ৫টায় নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে যাবেন বলেও জানান ফখরুল।
আলোচনা কি ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে হবে, নাকি অন্য দলের সঙ্গেও হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সকলের সঙ্গেই হবে, অল দ্যা পলিটিক্যাল পার্টিসের সঙ্গে।
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে হবে কি না- এমন প্রশ্নে ফখরুল বলেন, ‘কথা তো বলতে হবে। অবশ্যই। তাদের সঙ্গে কথা না বললে কেমন করে হবে। সকলের সঙ্গেই তো কথা বলতে হবে।’
অন্য এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘২০ দলীয় জোট তো আমরা এখন পর্যন্ত বিলুপ্ত করি নাই। এই জোটের কী হবে সেটা এই আলোচনার মধ্য দিয়ে ফাইনালাইজড করব।’
সংলাপের উদ্দেশ্য নিয়ে এক প্রশ্নে ফখরুল বলেন, ‘আলোচনার মূল্য উদ্দেশ্য হচ্ছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং এই ফ্যাসিবাদী সরকার যারা মানুষের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে, মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে এবং আজকে অর্থনীতি, দেশের যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, যেগুলোকে ধবংস করে ফেলেছে, সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা-এটাই হচ্ছে আমাদের মূল লক্ষ্য।’
বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মুক্তির দাবি, সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, সংসদ বাতিল করে পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচনের পুরোনো দাবিগুলো আবার তুলে ধরেন বিএনপি নেতা।
বলেন, ‘এই আলোচনার মধ্য দিয়ে তাদের অন্যান্য দাবি নিয়ে একক দাবিনামা তৈরি করা হবে। একক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করব।’
এই একক ঐক্যের জোটের নাম কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা একে জোট বলছি না, অন্য কোনো কিছু বলছি না। আলোচনা করার মধ্য দিয়ে ফরমেট, ফর্ম নির্ধারিত হবে।'
সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।
আরও পড়ুন:নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুর গেলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা ১টা ২০ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর এসকিউ-৪৪৯ বিমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি।
আগামী ২৯ মে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর দেশে ফেরার কথা রয়েছে তার।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস সচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালী এ তথ্য জানান।
জি এম কাদের সিঙ্গাপুরের অরচার্ড হোটেলে অবস্থান করবেন। বিরোধী দলীয় উপনেতার সহকারী একান্ত সচিব আবু তৈয়ব তার সফর সঙ্গী হয়েছেন।
দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে উপস্থিত থেকে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানান- দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, দলের কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়ামের সদস্য সৈয়দ আব্দুল মান্নান, ফখরুল ইমাম, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এটিইউ তাজ রহমান, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের মিছিলে ছাত্রলীগ হামলা করে শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ঘটনায় তিনি তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা জানেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও অনির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতু থেকে ফেলে দিয়ে তার জীবননাশের যে হুমকি দিয়েছেন তার প্রতিবাদে ছাত্রদল প্রতিদিন সভা সমাবেশ করেছে। গতকাল সেখানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে পিটিয়েছে।
‘হুমকি দিয়েছে ছাত্রদলকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেবে না। আজ মঙ্গলবারও সকাল ৯টার দিকে ছাত্রদল তাদের কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়। এখনও সেই আক্রমণ চলছে। ইতোমধ্যে খবর পেয়েছি, শহীদুল্লাহ হলে দুজন ছাত্রকে আটক করে রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সিনিয়র সহসভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসার মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, সাবেক এজিএস আকতার, ঢাবির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, ইয়াকুব গাজী রবি, হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের মানসুরা আকতার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম-আহবায়ক জহির রায়হান রুবেল, সুফিয়ান, মিশু, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-আমিন, বাবলু, তন্নী মালিক, আবু হোরায়রা, সেলিমসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। কেউ কেউ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমি অবিলম্বে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এসব সন্ত্রাসীদের যারা বিনা উসকানিতে আক্রমণ করেছে তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল বের করলে ছাত্রদলে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। এই হামলায় ৩০ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
আহতদের চিকিৎসা দিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে বেরিয়ে আবারও মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে যায় ছাত্রদল। মিছিল নিয়ে দোয়েল চত্ত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনে দিয়ে প্রবেশ করতে চাইলে বাধা দেয় ছাত্রলীগ।
সেখানে দ্বিতীয় দফায় ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্রদলের নেতাদের সংঘর্ষ হয়।
আরও পড়ুন:ছাত্রলীগের হামলায় আহত নেতাকর্মীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে ছাত্রদল মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকতে চাইলে ফের ছাত্রলীগের বাধার সম্মুখীন হয়। সে সময় আবারও সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনে প্রায় ২০ মিনিট ধরে এই সংঘর্ষ চলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে হামলায় আহত নেতাকর্মীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে ছাত্রদল দোয়েল চত্বর হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকতে চাইলে বিজ্ঞান গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান নিয়ে থাকা ছাত্রলীগ তাদের বাধা দেয়। সেখানে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে আবারও সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ।
এ সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মিছিলে লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে যাচ্ছিল বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
প্রথমে দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরে ছাত্রলীগের আরেকটি গ্রুপ ঘটনাস্থলে গিয়ে হামলায় অংশ নিলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
সেখানে সংঘর্ষ ছাড়াও এ সময় প্রায় পুরো ক্যাম্পাসেই ছাত্রলীগ শোডাউন করছিল।
তারা এসব শোডাউন থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলকে প্রতিহতের ঘোষণা দেয়।
সংঘর্ষের বিষয়ে ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে চাইলে তারা বাধা দেয়, এরপর আমরা প্রতিরোধ করি।’
হাতে ইট, লাঠি থাকার বিষয়ে জানালে তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের বাধ্য হয়েই নিতে হয়েছে।’
অবশ্য পরে তিনি দাবি করেন, সেসব ছাত্রলীগের কাছ থেকে তারা ছিনিয়ে নিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘দোয়েল চত্বরে আমাদের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক আসবে শুনে আমরা সেখানে যাই। আর তখনই সেখানে অবস্থান করা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর আক্রমণ করে। এতে আমাদের ১০ জন আহত হয়।’
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাকিব হোসেন বলেন, ‘ছাত্রদল ক্যাম্পাসে এসে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে ছাত্রলীগ তাদের প্রতিহত করে, ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়।
‘ছাত্রলীগ চায়, ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ অক্ষুণ্ণ থাকুক। কিন্তু ছাত্রদল ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। ছাত্রলীগ জীবিত থাকতে তাদের এই আশা কখনো পূরণ হতে দেবে না।’
ছাত্রলীগের বেসরকারিবিষয়ক সম্পাদক আল আমিন রহমান বলেন, ‘ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক যে বক্তব্য দিয়েছেন সে বক্তব্যের জেরে সাধারণ ছাত্ররা ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে। আমরা মনে করি, এখানে ছাত্রলীগের সাথে সাধারণ ছাত্ররাও আছে। ছাত্রদলের এই ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির যে পাঁয়তারা, সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সেটি রুখে দেবে।’
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত দেশবিরোধী রাজনৈতিক অপশক্তি। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার বদৌলতে এদেশে বিএনপির সৃষ্টি। অবৈধ পন্থায় সৃষ্ট বিএনপি অবৈধভাবেই ক্ষমতায় যেতে চায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমইউ) ডা. মিলন হলে সোমবার এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে এ আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল বিএসএমইউ।
সভায় হানিফ বলেন, ‘সৃষ্টির পর থেকেই বিএনপি দেশের স্বার্থবিরোধী কাজ করছে। উন্নয়ন নয়, ধ্বংস তাদের প্রধান কাজ। দলটি আসলে পাকিস্তানী ভাবধারা এবং আদর্শ বাস্তবায়ন করতে চায়।
‘যদি কেউ মনে করেন সরকার ভালো কাজ করেনি, তাহলে আপনারা নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনগণের ম্যান্ডেটে ক্ষমতায় আসুন। আর যদি জনগণ মনে করে এই সরকারের নেতৃত্বে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, সামনে আরো হবে। তাহলে জনগণ ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকেই ক্ষমতায় আনবে।’
বিএনপির সমালোচনায় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ সেক্যুলারিজমে বিশ্বাসী, ধর্মান্ধ নয়। আমাদের দেশের ৯০ ভাগ মুসলমান কিন্তু তারা আফগানিস্তান, পাকিস্তান হওয়ার ইচ্ছা রাখেন না। যাদের আদর্শ পাকিস্তান তারা বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়। তারাই দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ- উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররাফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, নার্সিং ও মেডিক্যাল টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক ও প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল আলোচনায় অংশ নেন।
আরও পড়ুন:দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা।
সোমবার সন্ধ্যায় রংপুর সেন্ট্রাল রোডে দলীয় কার্যালয়ে জেলা জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি রাঙ্গা বলেন, বিভিন্ন দপ্তরে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কারণে সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এতে সরকারের কাছ থেকে সাধারণ মানুষ দূরে চলে যাচ্ছে। এটা সরকারকে বুঝতে হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে বৃহত্তর রংপুরের ২২ আসন ফিরিয়ে আনতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। যেখানে কমিটি হয়নি, সেখানে কমিটি করতে হবে। যারা ভালো করবেন, তারা কমিটিতে ভালো জায়গায় থাকবেন।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি আজমল হোসেন লেবু ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি যতই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই বলে অভিযোগ করুক, সেই গণমাধ্যমেই তাদের নেতাদের মিথ্যাচারের বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে।
গণমাধ্যম নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতাবিরোধী নতুন ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
সোমবার এক বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এ-সংক্রান্ত বক্তব্যের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলটির সাধারণ সম্পাদক বিএনপি নেতাদের গণমাধ্যমসংক্রান্ত বিভিন্ন বক্তব্যের জবাব দেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে জাতিকে জ্ঞান দিচ্ছেন; অথচ প্রতিদিন গণমাধ্যমে বিএনপি নেতাদের মিথ্যাচারের বিস্তারিত সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। এমনকি টেলিভিশনে তাদের বিভিন্ন কর্মসূচি সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
‘বিএনপি নেতাদের মনগড়া ও নির্জলা মিথ্যাচার কোনো রকম সম্পাদনা ছাড়াই গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। টকশোসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামে বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার ও অপপ্রচার প্রতিদিন সম্প্রচার হচ্ছে। তার পরও তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে অবান্তর প্রশ্ন তুলছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার আকাশ উন্মুক্ত হয়েছে। এখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে শুধু সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নয়, বেসরকারি টেলিভিশনও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করে বাণিজ্যিক সম্প্রচারের সুবিধা ভোগ করছে। শেখ হাসিনাই প্রথম বেসরকারি টেলিভিশনের অনুমোদন দিয়েছেন এবং তারই ধারাবাহিকতায় আজ দেশে প্রায় অর্ধশত বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং অনলাইন টিভি, আইপি টিভিসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে গণমাধ্যমের অবারিত দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে।’
দেশে সহস্রাধিক দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা এবং অসংখ্য অনলাইন নিউজ পোর্টাল রয়েছে। যেখানে সব রাজনৈতিক দলের সংবাদ, কর্মসূচি বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। সরকার সাংবাদিকদের মর্যাদা বৃদ্ধি এবং অধিকার সুপ্রতিষ্ঠার জন্য ‘গণমাধ্যম কর্মী আইন’ প্রণয়নের পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
বিপরীতে বিএনপির শাসনামলে সাংবাদিকদের মর্যাদা ও অধিকার ছিল শ্রম আইনে উল্লেখ করে মন্ত্রী অভিযোগ করেন, তাদের সময় সাংবাদিকদের ন্যূনতম সামাজিক মর্যাদা রক্ষা করা হয়নি।
২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত অশুভ জোট শাসনামলে বিবিসির সাংবাদিক মানিক চন্দ্র সাহা, খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক জন্মভূমি পত্রিকার সম্পাদক হুমায়ুন কবির বালুসহ ১৬ সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছিল বলে বিএনপিকে স্মরণ করিয়ে দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সে সময়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা তুলে ধরেন তিনি।
কাদের বলেন, সে সময় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৫০০টিরও বেশি মামলা এবং ৮০০ হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এমনকি ব্রিটিশ টেলিভিশন চ্যানেল ফোরের সাংবাদিক লিওপোল্ড ব্রুনো সরেন্তিনো, জেইবা মালিকসহ কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন চালানো হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘‘জঙ্গি হামলার ঘটনায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অনেক সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছিল। যে কারণে ‘রিপোর্টার উইদাউট বর্ডারস’ বিএনপির শাসনামলে বাংলাদেশকে সাংবাদিকদের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছিল।’’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন, ‘বন্দুকের নলের মুখে গণমাধ্যমকর্মীদের জিম্মি করে রেডিও-টেলিভিশন ভাষণে নিজেকে অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতি ঘোষণার মধ্য দিয়ে অসাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী স্বৈরাচার জিয়াউর রহমানের হাতে প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি নেতাদের মুখে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা মানায় না।
‘স্বাধীনতা তাদেরই থাকে, যারা দায়িত্বশীল নিয়মসিদ্ধ আচরণ করে ও নিজ কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকে। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানো এবং জাতীয় ঐক্যের মূল ভিত্তি মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে বিএনপি সব সময় বাক-স্বাধীনতার অপব্যবহার করে আসছে।’
বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে এ দেশে গণমাধ্যমের বিকাশ, উৎকর্ষ সাধন এবং সাংবাদিকদের কল্যাণ ও স্বার্থ সংরক্ষণে কী করেছে প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা বলেন, ‘তারা গণমাধ্যমের বিকাশ রোধে এবং সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধে শুধু রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহারই করেছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য