নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়ার বেদনা ভোলারও সময় পেলেন না অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। একদিকে তার মেয়র হওয়ার স্বপ্ন ভেঙেছে, অন্যদিকে হারিয়েছেন নিজ রাজনৈতিক দল বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদ। এবার তাকে বিএনপি থেকেই বহিষ্কার করা হয়েছে।
‘তৈমূরের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী’ শিরোনামে নিউজবাংলায় খবর প্রকাশের ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানেই এবার চরম সিদ্ধান্ত এলো। শেষ পর্যন্ত বিএনপি থেকেই বহিষ্কার করা হলো তাকে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক চিঠিতে মঙ্গলবার এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল -বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হলো।
রুহুল কবির রিজভী বিষয়টি নিশ্চিত করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনি নির্বাচনে দাঁড়িয়ে আগেই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। নির্বাচন প্রশ্নে দল যেখানে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা না মেনে তিনি নির্বাচনে গিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে তাকে দুটি পদ অব্যাহতি দেয়ার পর এবার বিচার-বিশ্লেষণ শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে তৈমূর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাকে যদি বহিষ্কার করে থাকে তাহলে আলহামদুল্লিহ। দুইটা বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে মহামারি লাগছে। দুইটা রাজনৈতিক দলেই বহিষ্কার- অব্যাহতির হুমকি চলছে। এই দুইটা দলের যারা ত্যাগী নেতাকর্মী, তাদের আল্লাহর কাছে পানা চাওয়া উচিত, জালালি খতম পড়াইয়া।’
একই অভিযোগে তৈমূর আলম খন্দকারের প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামালকেও তার দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন কামাল। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দল আমার বিরুদ্ধে যে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে, আমি তা মাথা পেতে নিলাম। হয়তো আমি কোনো ভুল করেছি। তাই দল আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। আমি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে কাজ করেছি। তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।
নির্বাচনের আগে ও পরে তৈমূর বার বারই বলে এসেছেন, বিএনপির সঙ্গে তার সম্পর্ক কখনো ছিন্ন হবে না। এমন বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে বিএনপির সঙ্গেই থাকতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দল চায়নি। কেড়ে নেয়া পদ ফিরিয়ে দেয়া তো দূরের কথা, বিএনপি তাকে পুরোপুরিই ছাঁটাই করে দিয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের ভোটে গত রোববার আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে পরাজিত হয়েছেন স্বতন্ত্র হয়ে লড়া অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। ৬৬ হাজার ৯৩১ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন তিনি।
অন্যদিকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তৈমূর আলম খন্দকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় বিএনপি। কিছুদিন আগে তৈমূর হারান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়কের পদ।
নির্বাচনের আগে নিউজবাংলাকে তৈমূর জানিয়েছিলেন, দল কৌশলগত কারণে তার পদ কেড়েছে; তার প্রতি দলের সমর্থন রয়েছে। যাই হোক না কেন, দলের সঙ্গে তার সম্পর্ক কখনো ছিন্ন হবে না। রোববারের ভোটে হেরেও তিনি একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন- বিএনপি তার রক্তের সঙ্গে মিশে আছে।
ভোটের ফল প্রকাশের পর রোববার রাতে সংবাদ সম্মেলনে তৈমূর বলেছিলেন, রাজনীতি করতে গেলে দল লাগে, কিন্তু পদ-পদবি লাগে না; তৈমূর আলম খন্দকারের কোনো পদ লাগবে না। আমার রক্তের সঙ্গে বিএনপি মিশে আছে। আমি বিএনপির রাজনীতিই করে যাব।
জানিয়েছিলেন কয়েকটি কারণে তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম দুটি কারণ- দলের মহাসচিবের বক্তব্য ও নির্বাচন নিয়ে দলের অতীত কৌশল।
‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন- বিএনপি দলগতভাবে স্থানীয় কোনো নির্বাচনে যাবে না। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কেউ যদি যেতে চায় তাহলে যেতে পারে; আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।
‘কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তো বিএনপি প্রার্থীকে ভোটের আগে দল বসে যেতে বলেছিল। কিন্তু তিনি বসেননি। নির্বাচনে জেতার পর দল তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছিল।’
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় প্রবাসীর বাড়ি থেকে এক ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
কলারোয়া উপজেলার দিগাং গ্রাম থেকে মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
৬০ বছর বয়সী মৃত নিজাম উদ্দীনের বাড়ি উপজেলার গোয়ালপোতা এলাকায়। তিনি কাজিরহাট বাজারে ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করতেন।
তার ভাইয়ের দাবি, নিজামকে হত্যা করা হয়েছে।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছির উদ্দিন মৃধা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কম্বোডিয়া প্রবাসী আব্দুস সামাদের স্ত্রী তহমিনা বেগমের সঙ্গে নিজামের দীর্ঘদিন ধরে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। মঙ্গলবার রাতে তিনি তহমিনার ঘরে গেলে তহমিনার ছেলে সুমন হোসেন চোর চোর বলে চিৎকার করে।
‘চিৎকার শুনে নিজাম ঘর থেকে বের হতে গেলে পড়ে যান। এরপর তার মৃত্যু হয়। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
ওসি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪০ বছর বয়সী তহমিনা বেগম, তার ২০ বছর বয়সী ছেলে সুমন হোসেন ও প্রতিবেশী আব্দুল মাজেদকে আটক করে থানায় নেয়া হয়েছে।’
এ ঘটনায় নিজামের ভাই মশিয়ার সরদার বলেন, ‘রাত ১টার দিকে দিগাং এলাকার মেম্বার আসাদ সরদার আমাকে ফোন দিয়ে ডাকে। গিয়ে দেখি আমার ভাই মারা গেছে। তার হাতে ও পায়ে ক্ষত আছে। আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
আরও পড়ুন:সাতক্ষীরার শ্যামনগরের নদীতে ডুবে নিখোঁজের এক দিন পর কেরামত গাজীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
মাদার নদীর চর থেকে বুধবার ভোর ৫টার দিকে স্থানীয়রা ভাসমান অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করেন।
নিউজবাংলাকে তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুর রহিম। তিনি জানান, ভোরে নদীর চরে তার মরদেহ ভেসে উঠলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করেন।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে মাছ শিকারের জন্য নদীতে ফেলা বড়শি ছাড়াতে গিয়ে ডুবে নিখোঁজ হন কেরামত গাজী। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরা দিনভর অভিযান চালিয়েও তাকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হন।
৪০ বছরের কেরামত গাজীর বাড়ি উপজেলার মহেশখালী গ্রামে। দিনমজুর কেরামত দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে মাদার নদীর চরেই বাস করতেন।
রায়নগর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ তারেক বিশ্বাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগের দিন নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ ব্যক্তির মরদেহ বুধবার ভোরে মাদার নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। মৃগী রোগে আক্রান্ত হওয়ায় কেরামত পানিতে পড়ে গিয়ে আর উঠতে পারেননি।
‘পরিবারের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সকাল ৯টার দিকে তার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ আর নেই।
স্থানীয় সময় বুধবার সকালে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া নিউজবাংলাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
নির্মল গুহের বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর। স্ত্রী ও দুই ছেলেসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন তিনি।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত ১২ জুন রাতে রক্তচাপ বেড়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন নির্মল রঞ্জন গুহ। তাকে রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেয়া হয়।
নির্মল গুহের হার্টে দুটি ব্লক ধরা পড়লে সেখানে রিং বসানো হয়, কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হলে ১৬ জুন উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গারপুর নিয়ে যাওয়া হয়।
আরও পড়ুন:আষাঢ়ের আকাশ থেকে যেন আগুন ঝরছে। রোদের উত্তাপে হাঁসফাঁস চারপাশ। এমন গরমেই দুষ্টু ছেলেমেয়ের দল হানা দেয় কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকার লালমাই পাহাড়ে। সেখানে গাছে গাছে ঝুলে আছে হলুদ চাপালিশ!
পাকা এই চাপালিশ ভেঙে অ্যালুমিনিয়াম পাত্রে কোষগুলো নিয়ে শুকনো মরিচ পোড়ায় কিশোর-কিশোরীর দল। হাল্কা মিষ্টি আর টক স্বাদের চাপালিশে ঝাল মিশিয়ে মুখে পুরে নেয় তারা। তারপর ওঠে তৃপ্তির ঠেকুর। দুপুরে উদরপূর্তির জন্য এর চেয়ে ভালো আয়োজন কি হতে পারে?
চাপালিশ দেখতে কাঁঠালের মতোই। কাঁচা অবস্থায় সবুজ। আর পাকলে হলুদ হয়ে ওঠে। আকারে ছোট এই ফলটির ভেতরে কাঁঠালের মতোই ছোট ছোট কোষ থাকে। কোষের ভেতরে থাকা এর বীচিগুলোও অনেকে আগুনে পুড়িয়ে খায়। কিছুটা চিনা বাদামের স্বাদ পাওয়া যায় এতে।
টক মিষ্টি স্বাদের এই চাপালিশকে স্থানীয়রা চামল বা চাম্বল নামেই চেনে। লালমাই পাহাড়ে শত বছর আগে প্রাকৃতিকভাবেই গড়ে উঠেছিল চাপালিশের বন। ঘন সবুজ পাতার আড়াল থেকে উঁকি মারা পাকা চাপালিশ যে কারও দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
আষাঢ় মাসেই চাপালিশ পাকতে শুরু করে। ৯০-এর দশকে লালমাই পাহাড়ে যে পরিমাণ চাপালিশ গাছ ছিল, এখন তার ছিটেফোঁটাও নেই।
কোটবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ফয়েজ আহমেদ জানান, পুরো লালমাই পাহাড়ে বর্তমানে অর্ধশতাধিক চাপালিশ গাছ আছে। এক সময় এই সংখ্যাটি ছিল হাজারেরও বেশি। কাঠের জন্য কিংবা জমি প্রশস্থ করতে গত কয়েক বছরে স্থানীয়রা বহু চাপালিশ গাছ কেটে ফেলেছে।
ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘পাশের সেনানিবাসের ভেতর বর্তমানে বেশকিছু চাপালিশ গাছ রয়েছে।’
কোটবাড়ি এলাকার বিজিবি ক্যাম্পের পশ্চিম পার্শ্বে হাতিগড়া এলাকায় চাপালিশ বিক্রি করেন চা দোকানীরা। দোকানের সামনে ঝুড়িতে রাখা থাকে ফলটি। কেউ আবার ক্রেতা আকর্ষণের জন্য এটিকে দোকানের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন।
চা দোকানী খায়ের মিয়া বলেন, ‘প্রতিটা ২০ টাকা করে বেচি। আষাঢ়-শাওন মাসে কাঁঠালের সাথে চামলও পাকে। শহর থেকে আসা মানুষেরাও শখ করে কিনে নিয়ে যায়। একটা গাছে ২ থেকে ৩ মন চাপালিশ ধরে।’
খায়ের জানান, লালমাই পাহাড়ে একসময় এত পরিমাণ চাপালিশ হতো যে, এগুলো খেতে শত শত বানর এসে ভিড় জমাতো। চাপালিশ কমার সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকাটিতে এখন বানরের সংখ্যাও কমে গেছে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেরুন্নেছা বলেন, ‘চাপালিশ একটি বিপন্ন উদ্ভিদ। আবাসস্থল ধ্বংস এবং মাত্রাতিরিক্ত আহরণের জন্য চাপালিশের বিস্তৃতি নাই বললেই চলে। সরকারের উচিত পরিকল্পিত বনায়নের অংশ হিসেবে চাপালিশ বৃক্ষের আবাদ সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখা। এর কাঠ যেমন মূল্যবান, তেমনি এর ফল বন্যপ্রাণী ও মানুষের খাবার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।’
মেহেরুন্নেসা মনে করেন, জলবায়ু সংকটে থাকা এই পৃথিবীকে আবাসযোগ্য রাখতে বৃক্ষনিধন দমনের পাশাপাশি ব্যাপক বনায়ন কর্মসূচী হাতে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে চাপালিশের চাষ একটি চমকে দেয়ার মতো বিষয় হতে পারে।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, সারাদেশে যেসব এলাকায় চাপালিশ গাছ জন্মে, তার মধ্যে কুমিল্লার লালমাই পাহাড় অন্যতম। বিলুপ্তপ্রায় এই গাছটির কাঠ ও ফল মূল্যবান। পাখি ও বনের পশুর জন্যও চাপালিশ উন্নত খাবার। এই গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি আসবাব বছরের পর বছর টিকে থাকে। এই গাছ রক্ষায় বন বিভাগের জরুরী উদ্যোগ নেয়া উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।
কুমিল্লা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা কোটবাড়িতে উদ্ভিদ উদ্যান করেছি। সেখানে চাপালিশের বীজ থেকে চারা করে গাছের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। যে কেউ চাইলে আমরা বীজ কিংবা চারা দিয়ে সহযোগীতা করবো।’
আরও পড়ুন:সাভারের আশুলিয়ায় শিক্ষককে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রের বাবা উজ্জ্বল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে বুধবার ভোরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নিউজবাংলাকে তথ্য নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচ এম কামরুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার হত্যা মামলার আসামি ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতুর বাবা উজ্জ্বল হোসেনকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে আজ ভোরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
‘সকালে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে ঢাকার মুখ্য বিচারিক আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি জিতুকেও গ্রেপ্তারে আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক বলেন, ‘ওই শিক্ষক মারা যাওয়ার দিন গত রোববার তার বড় ভাই অসীম কুমার সরকার অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম জিতুকে প্রধান করে হত্যা মামলা করেছেন। এজাহারে অজ্ঞাতনামা অনেককেই আসামি হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন। ওই মামলায় প্রধান আসামির বাবাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।’
গত শনিবার দুপুরে সাভারের চিত্রশাইল এলাকার হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে মেয়েদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালে কলেজের প্রভাষক উৎপলকে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠে ওই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র জিতুর বিরুদ্ধে।
পিটুনিতে গুরুতর আহত হওয়া শিক্ষক উৎপল মারা পরদিন মারা যান। এই ঘটনায় উৎপলের বড় ভাই অসীম কুমার সরকার আশুলিয়া থানায় জিতুকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত আরও তিন থেকে চারজনের নামে হত্যা মামলা করেন।
জিতুর দশম শ্রেণিতে পড়লেও তার বয়স ১৯ বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, এই তরুণ মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন। সেখান থেকে ঝরে পড়ার পর এই স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন।
কলেজের আইসিটি বিভাগের শিক্ষক মনির হোসেন বলেন, ‘জিতু ক্লাস নাইনে আমাদের এখানে ভর্তি হয়েছিল। এর আগে সাভারের রাজফুলবাড়িয়া এলাকার একটা মাদ্রাসায় পড়ত। সে ছাত্র হিসেবে খুবই দুর্বল প্রকৃতির। উচ্ছৃঙ্খলও। তার বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়েরও অভিযোগ ছিল।’
উৎপলের ওপর কীসের ক্ষোভ জিতুর?
কলেজের সামনের মার্কেটের মালিক ইমান উদ্দিনের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসল ঘটনা এখনও কলেজের শিক্ষকরা বলছেন না। তবে আস্তে আস্তে সব বেরিয়ে আসবে।
‘জিতুর বাবা উজ্জ্বল হোসেনের ব্যবসায়িক পার্টনার মাজেদ নামে এক ব্যক্তি। তাদের হোটেল ব্যবসা আছে। সেই মাজেদের শ্যালিকা এই কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ে। তার সঙ্গে জিতুর আগে থেকেই প্রেমের সম্পর্ক।
‘কিছুদিন আগেও স্কুলের একটি কক্ষে জিতু ও সেই মেয়েকে দেখার পর শিক্ষক উৎপল তাদেরকে শাসন করেন। ওই মেয়ের পরিবারকে তিনি ফোন করে সব জানিয়ে সতর্কও করেন। মেয়েটা জিতুকে এসব বিষয় জানালে সে ক্ষুব্ধ হয়েই ওই স্যারকে পিটিয়েছে।’
ইমান উদ্দিনের তথ্য বলছে, জিতু এতটাই বেপড়োয়া ছিলেন যে, খেলার আগের দিন থেকেই কলেজের বাইরে স্টাম্প নিয়ে ঘুরছিলেন।
তিনি জানান, সেদিন জিতুর সঙ্গে আরও তিন জন ছিল। পেটানোর পর চার জন এক সঙ্গে হেঁটে চলে যায়।
একই কথা জানান ওই কলেজে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাইম ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘স্যার সেই মেয়ের বাসায় ফোন করে শক্তভাবে বিচার দিয়েছিলেন যেন মেয়েটা জিতুর সঙ্গে না মেশে। এটার ক্ষোভ থেকেই জিতু স্যারকে খেলার দিন পিটিয়েছে।’
কলেজের হিসাবরক্ষক পারুল আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছু দিন আগে স্কুলের একটি কক্ষে জিতু ও মেয়েটাকে অপ্রীতিকর অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু আমরা সেভাবে বিস্তারিত জানি না। মেয়েটা আমাদের কলেজের এক শিক্ষকের ছোট বোন। এর বেশি আর কিছু জানি না আমি।’
সিসিটিভি ফুটেজে কিছুই নেই
কলেজের সিসিটিভি ফুটেজেও আমলার আগে জিতুর নানা কর্মকাণ্ড ধরা পড়েছে। তবে ঘটনার সময়কার কিছুই রেকর্ড হয়নি।
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, ঘটনার সময় বিদ্যুত না থাকায় ফুটেজ রেকর্ড হয়নি। সে সময় কলেজের বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করে দেয়া হয়। এর পেছনে জিতুর হাত আছে বলেই বিশ্বাস তাদের।
কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বলেন, ‘উৎপল কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান ছিলেন। তাই অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে তিনি হয়ত শাসন করেছিলেন। তবে ঠিক কোন বিষয়টা, সেটা আমার জানা নেই। আর ওই দিনের ফুটেজের বিষয়টা হলো, আমরা হঠাৎ করে দেখি কারেন্ট চলে গেছে। কিন্তু তখন আশপাশে সব জায়গায় কারেন্ট ছিল। ঘটনার পরপর আমরা বুঝতে পারি, সে (জিতু) পরিকল্পিতভাবেই বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করেছে।’
নিহত শিক্ষক উৎপল সরকার সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার এঙ্গেলদানি গ্রামের মৃত অজিত সরকারের ছেলে। ৩৫ বছর বয়সী এই শিক্ষক প্রায় ১০ বছর ধরে হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকতা করছেন।
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভারে ছাত্রের স্টাম্পের আঘাতে নিহত শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারই ছিলেন পরিবারের সবচেয়ে বড় ভরসা। বাড়ির ছোট ছেলে হলেও সবাই নির্ভর করত তারই ওপর। সেই উৎপলকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল পুরো পরিবার।
উৎপলের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার এঙ্গেলদানি গ্রামে। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। ৩৫ বছর বয়সী উৎপল প্রায় ১০ বছর ধরে শিক্ষকতা করতেন আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে।
কলেজের মাঠে গত শনিবার দুপুরে মেয়েদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালে উৎপলকে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ ওঠে দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতুর বিরুদ্ধে। পরদিন সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গুরুতর আহত উৎপল মারা যান।
উৎপলকে হারিয়ে পরিবারের অবস্থা সম্পর্কে তার বড় ভাই অসীম কুমার পাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাড়ির অবস্থা এখন কী বলব? আমাদের ফ্যামিলিটাই শেষ। আমার মাকে নিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে। সে তো ছেলের জন্য পাগল। আমরা পাঁচ ভাই, তিন বোন। উৎপল ছিল সবার ছোট ও আদুরে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। গ্রামে আমরা এখনও যৌথ পরিবারে থাকি। ওই আমাদের পরিবারটাকে নিয়ন্ত্রণ করত। আর্থিকভাবেও ওই দেখত। আমরা অন্য ভাইরা ছোটখাটো কাজ করি।
‘আমি সাভারে একটা ছোট দোকান করি। আরেক ভাই দর্জি। আর বাকি দুজন টেক্সটাইলে ছোট পোস্টে চাকরি করে।’
দুই বছর আগে বিয়ে করেছিলেন উৎপল। স্ত্রীকে নিয়ে মিরপুর-১-এ আনছার ক্যাম্পে থাকতেন।
তার ভাই বলেন, ‘উৎপলের এখনও কোনো সন্তান হয়নি। সে আর তার স্ত্রী মিরপুর-১-এ আনছার ক্যাম্পে থাকত। সেখান থেকেই আশুলিয়ার চিত্রশাইল গিয়ে ক্লাস নিতো।’
উৎপলকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় রোববার জিতু ও অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন অসীম।
জিতু দশম শ্রেণিতে পড়লেও তার বয়স ১৯ বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, এই তরুণ মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন। সেখান থেকে ঝরে পড়ার পর হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, উৎপলকে পেটাতে পরিকল্পনা করেই স্টাম্প নিয়ে এসেছিলেন জিতু। এটি নিছক ঝোঁকের বসে ঘটিয়ে ফেলা কোনো অপরাধ নয়।
যেখানে শিক্ষককে পেটানো হয়েছে, সেই জায়গাটি কলেজের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতাধীন বলে জিতু ঘটনার আগে আগে মেইন সুইচ বন্ধ করেছেন, যেন কোনো কিছু ক্যামেরায় রেকর্ড না হয়।
সেখানে মেয়েদের যে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলছিল, সেখানে স্টাম্প ব্যবহার করা হয়েছে প্লাস্টিকের। আর সেই শিক্ষককে পেটানো হয়েছে কাঠের স্টাম্প দিয়ে।
কলেজের আইসিটি বিভাগের শিক্ষক মনির হোসেন বলেন, ‘জিতু ছাত্র হিসেবে খুবই দুর্বল প্রকৃতির। উচ্ছৃঙ্খলও। তার বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়েরও অভিযোগ ছিল।’
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
আরও পড়ুন:চালুর পর থেকে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধের ঘোষণা এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে।
মঙ্গলবার এ ঘোষণা আসার পর বুধবার সকাল থেকে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজায় যানবাহনের চাপ আগের চেয়ে অনেকটাই কম দেখা গেছে। ছোট যানবাহন ও বাসের সংখ্যাও ছিল খুবই কম।
এর আগে চালুর দিন পদ্মা সেতুতে বাইক দুর্ঘটনার পর থেকে সেতু কর্তৃপক্ষ, পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে টোল প্লাজা এলাকায় সেতুর ওপরে টহল আরও কঠোর এবং জোরদার করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে যানবাহন টোল প্লাজায় কোনো রকম অপেক্ষা ছাড়াই টোল দিয়ে সেতু পার হচ্ছে।
অন্যদিকে কিছুসংখ্যক মোটরসাইকেল টোল প্লাজার অদূরে থাকলেও তারা সেতুতে উঠতে না পারায় পিকআপ ভ্যানে করে পাড়ি দিচ্ছে পদ্মা।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, ‘সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় এগুলো পিকআপ বা ট্রাকে করে পার করা হচ্ছে। যানবাহন চলাচল কম করছে এমনটি বলা যাবে। সাধারণ পরিবহন বাস, দূরপাল্লার বাস, ট্রাক, মিনিবাস, পিকআপ সবই ভালো পরিমাণে চলাচল করছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য