চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুকে হত্যার পর স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল গাড়িতে তার মরদেহ নিয়ে ঘুরছিলেন রাস্তায়। দুই দফা চেষ্টার পর একটি ঝোপের মধ্যে শিমুর মরদেহ ফেলতে সক্ষম হন তিনি।
সোমবার সকালে এই অভিনেত্রীর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় নোবেলসহ দুজনকে। থানায় নোবেলকে জিজ্ঞাসাবাদে মরদেহ গুমের চেষ্টার তথ্য পাওয়া যায়।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. কামরুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদ শিমুর মরদেহ গুমের চেষ্টার বর্ণনা দেন বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশ বলছে, নোবেল ও ফরজাদ জানিয়েছেন- রোববার সকালে শিমুকে হত্যার পর ফরহাদকে বাসায় ডেকে আনেন নোবেল। সকালেই গাড়িতে করে মিরপুর বেড়িবাঁধের দিকে মরদেহটি ফেলে আসার জন্য যান। কিন্তু সুবিধামতো জায়গা না পেয়ে বাসায় ফিরে আসেন। একইদিন রাতে তারা আবার গাড়ি নিয়ে বের হন এবং কেরানীগঞ্জের আলীপুর ব্রিজের কাছে ঝোপের মধ্যে ফেলে আসেন।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার জানান, পারিবারিক বিষয় ও দাম্পত্য কলহের কারণে শিমুকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করেছেন নোবেল এবং মরদেহ গুম করতে সহায়তা করেছেন ফরহাদ।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে শিমুর স্বামী বলেছেন, রোববার সকাল ৭-৮টার দিকে পারিবারিক কলহের জেরে তিনি তিনি শিমুকে গলাটিপে হত্যা করেন। এরপর ফরহাদকে মোবাইলে কল করে ডেকে নেন।
পরে ফরহাদ ও নোবেল পরিকল্পনা করে বাইরে থেকে বস্তা এনে শিমুর মরদেহ লম্বালম্বিভাবে দুটি পাটের বস্তায় ভরে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করেন। এরপর বাড়ির দারোয়ানকে নাশতা আনতে বাইরে পাঠিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে শিমুর মরদেহ নিয়ে বেরিয়ে যান।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে নোবেল ও ফরহাদ মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে লাশ গুমের উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে তারা আবার বাসায় ফেরেন। সন্ধ্যায় আবার তারা মরদহে গুম করতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বছিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার হযরতপুর ইউনিয়নের কদমতলী এলাকার আলীপুর ব্রিজের ৩০০ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোপের ভেতর মরদেহ ফেলে চলে যান। তখন রাত সাড়ে নয়টা। মরদেহটি পরদিন সোমবার উদ্ধার করে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।
সুতার সূত্রে নোবেল ধরা
নিহতের পরিচয় শনাক্তের পর রাজধানীর কলাবাগান গ্রিনরোডের বাসায় যায় পুলিশ।
পুলিশ জানায়, বাসায় গিয়ে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হয়। এ সময়ই একটি প্লাস্টিকের সুতার সূত্র ধরে উদঘাটিত হয় হত্যার মূল রহস্য। মরদহে গুম করতে দুটি বস্তা যে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল, সেই সুতারই হুবহু এক বান্ডিল শিমুর স্বামী নোবেলের গাড়িতে পাওয়া যায়।
পুলিশ বলছে, গাড়িটি ধোয়া ছিল এবং দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোবেলকে আটক করে পুলিশ। পরে ফরহাদকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে শিমু হত্যার ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় হত্যা মামলা করেছেন ভাই শহীদুল ইসলাম খোকন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নোবেল, তার বন্ধু ফরহাদ ও আরেকজনকে আসামি করে এই মামলা হয়।
শিমু হত্যার ঘটনায় করা মামলায় তার স্বামী নোবেল ও নোবেলের বন্ধু আব্দুল্লাহ ফরহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
হত্যার কারণ সম্পর্কে নোবেল অনেক কিছুই বলেছে বলে জানান কেরানীগঞ্জ থানার পরিদর্শক(তদন্ত) কাজী রমজানুল হক।
মাদারীপুরের কালকিনিতে স্ত্রীর স্বীকৃতি পাওয়ার দাবিতে স্বামীর কর্মস্থল মাদ্রায় অবস্থান নিয়েছেন এক গৃহবধু।
রোববার দুপুরে উপজেলার ডিক্রিরচর ফাজিল মাদ্রাসায় অবস্থান নেন ওই গৃহবধু। মাদ্রাসা অধ্যক্ষের ছত্রছায়ায় ওই প্রভাষক এ ধরনের অপকর্ম চালিয়ে আসছে বলে এলাকায় অভিযোগ রয়েছে।
স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছেন ওই গৃহবধু। বিচারের দাবিতে এখন বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি।
ভূক্তভোগী দাবি করা ওই নারীর অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার ডিক্রিরচর ফাজিল মাদ্রাসার প্রভাষক মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে অনার্স পড়াকালিন ওই নারীর পরিচয় হয়। পরে তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সুবাদে প্রায় সাত বছর আগে শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানের এক পরিচিত লোকের মাধ্যমে কাবিননামা তৈরি করে বিভিন্ন স্থানে তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে ওই শিক্ষক তার (ভুক্তভোগী) খোঁজখবর নেয়া বন্ধ করে দেন। পরে তার (শিক্ষক) সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানান প্রভাষক মোস্তাফিজুর রহমান। স্ত্রীর স্বীকৃতি না পেয়ে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন ওই গৃহবধু। অভিযোগ পেয়ে প্রভাষকের বেতন বন্ধ করে তাকে পুনরায় ভুক্তভোগী নারীকে কাবিন করে বিয়ে করার জন্য নির্দেশনা দেয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা। কিন্তু তাতেও কর্ণপাত করেননি ওই প্রভাষক। এখন বিচারের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগী।
তবে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের ছত্রছায়ায় থেকে ওই প্রভাষক অপকর্ম চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভূক্তভোগী দাবি করা ওই নারী বলেন, ‘সরলতার সুযোগ নিয়ে মোস্তাফিজ আমার সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। আমি তার স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি চাই। এর আগেও বেশ কয়েকটি বিয়ে করেছে মোস্তাফিজ।’
একাধিক বিয়ের বিষয়টি স্বীকার করে প্রভাষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ওর যা মন চায় করুক। আমি কাউকে ভয় পাই না।’
এ বিষয়ে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো. ফজুলর রহমান বলেন, ‘আমরা ওই শিক্ষককের বেতন বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তবে বিষয়টি উভয় পক্ষের লোকজন নিয়ে বসে সমাধানের জন্য সভাপতি নির্দেশনা প্রদান করেছেন।’
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এনামুল বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা কয়েকবার বসেছিলাম। কিন্তু এখনও কোনো সমাধানে পৌঁছতে পারিনি।’
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য তাহমিনা বেগম বলেন, ‘এতবড় অপরাধ করে শিক্ষক কী করে পার পাওয়ার চিন্তা করেন? এটা সত্যিই দুঃখজনক ঘটনা।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পিংকি সাহা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ওই মাদ্রাসার সভাপতির সঙ্গে আমি কথা বলব।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জে দেড় কোটি টাকার মালামালসহ একটি বাল্কহেড ডাকাতি করে পালানোর সময় ছয় ডাকাতকে আটক করেছে স্থানীয় জেলেরা। আটকদের কাছ থেকে তিনটি রামদা এবং লুট করা নগদ তিন হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
মেঘনা নদীর গজারিয়া অংশের বঘুরচর এলাকায় রোববার ওই ডাকাতদের আটক করা হয়। এসময় আরও তিন ডাকাত কৌশলে পালিয়ে গেছে।
আটক ছয়জন হলেন- আব্দুল কাদির, সুজন, সাদ্দাম হোসেন ওরফে সবুজ, নান্নু মিয়া, শাহীন হাওলাদার ও রুবেল মোল্লা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জেলে আলী মিয়া জানান, ভোরে মাছ ধরার সময় তাদের জালের ওপর দিয়ে একটি বাল্কহেড দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছিল। এসময় কয়েকজন জেলে তাদেরকে থামানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু তারা না থেমে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। জাল ছেড়ার ক্ষতিপূরণ আদায় করার জন্য কয়েকজন জেলে তাদের ট্রলার নিয়ে বাল্কহেডটিকে পেছন থেকে ধাওয়া করে। জেলেদের ধাওয়া খেয়ে দিক পরিবর্তন করে চালক বাল্কহেডটি হোসেন্দী বড় ব্রিজ এলাকার দিকে নিয়ে যেতে থাকে। সেখানে পানির গভীরতা কম থাকায় বাল্কহেডটি মাটিতে আটকে গেলে কয়েকজন জেলে বাল্কহেডের উপরে উঠে দেখতে পান ভেতরের কেবিন চেম্বারে তিনজন লোককে হাত-পা বেঁধে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখা হয়েছে।
এ সময় তারা আশপাশের লোকজনকে খবর দিলে তারা ছয় ডাকাতকে আটক করে তিন বাল্কহেড শ্রমিককে উদ্ধার করেন। পরে খবর পেয়ে নৌ পুলিশ সদস্যরা এসে ৬ ডাকাত ও বাল্কহেড তাদের হেফাজতে নেয়।
বাল্কহেড মালিক হযরত আলী ফকির বলেন, ‘মালগুলো বরগুনার জেলার কয়েকজন ব্যবসায়ীর। তার দায়িত্ব মালগুলো নির্ধারিত স্থান থেকে সংগ্রহ করে তার বাল্কহেডের মাধ্যমে বরগুনাতে মালিকদের কাছে পৌঁছে দেয়া। নারায়ণগঞ্জ থেকে দেড় কোটি টাকার (তেল, আটা ও চিনি) মালামাল বাল্কহেডে লোড করা হয়েছিল আরও প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার মালামাল নেয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে টাকা না দেয়ায় তারা মাল নিতে পারছিলেন না। সেজন্য গত দুইদিন যাবত মেঘনা নদীর গজারিয়া অংশের তেতৈতলা পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় বাল্কহেড নোঙ্গর করে তারা টাকার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।’
তিনি জানান, রোববার সকালে তারা খবর পান বাল্কহেডের স্টাফদের জিম্মি করে ডাকাত চক্র সেটি ছিনতাই করে নেয়ার পথে স্থানীয় জনতা তাদের আটক করে। মালামাল অক্ষত রয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি গজারিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
গজারিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই রাশেদুল হক বলেন, ‘ডাকাত দল মালভর্তি একটি বাল্কহেডে নিয়ে পালানোর সময় স্থানীয় জেলেরা তাদের আটক করে। খবর পাওয়ার পর আমরা সেখানে ছুটে যাই। বাল্কহেড বর্তমানে আমাদের হেফাজতে রয়েছে।’
বিষয়টি সম্পর্কে নৌ পুলিশের নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা বলেন, ‘আমি ছুটিতে আছি, তবে গজারিয়া নৌ পুলিশ থেকে একটি ডাকাতির তথ্য পেয়েছি। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শুনেছি সেখানে দেড় কোটি টাকার মতো মালামাল ছিল তবে তারা কোন চালানের কপি দেখাতে পারেননি।’
আরও পড়ুন:রাজশাহীতে ৯৩ হাজার টাকার ইস্যু করা একটি চেক জালিয়াতি করে ৫ লাখ ৯৩ হাজার উত্তোলন চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। রোববার দুপুরে অগ্রণী ব্যাংকের কেশরহাট বাজার শাখায় টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে এই ঘটনা সামনে আসে।
অভিযুক্ত কেশরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম।
এ বিষয়ে স্কুল কমিটির সভাপতির দাবি, ৯৩ হাজার টাকা উত্তোলনের জন্য তিনি চেকে সাক্ষর করেছিলেন। পরে প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম আরও ৫ লাখ টাকা যোগ করে টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করেন।
তবে স্কুল কমিটির সভাপতির এ অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক দাবি করেছেন, টাকা উত্তোলনের সকল জায়গাতেই ৫ লাখ ৯৩ হাজার টাকা লেখা রয়েছে। সভাপতি সাহেব সবখানে সাক্ষরও করেছেন। এখন তিনি অস্বীকার করছেন।
স্কুলটির সভাপতি রুস্তম আলী প্রামানিক বলেন, “কেশরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম তার দোকানের এক কর্মচারী দেবাশীষকে টাকা উত্তোলনের জন্য রোববার দুপুরে ব্যাংকে পাঠান। ছেলেটি ব্যাংকে যাওয়ার পর ব্যাংক থেকে আমাকে ফোন করে নিশ্চিত হওয়ার জন্য। ব্যাংক থেকে আমাকে জানানো হয়, প্রধান শিক্ষক ও আমার স্বাক্ষর করা একটি ৫ লাখ ৯৩ হাজার টাকার একটি চেক ব্যাংকে দেয়া হয়েছে। তখন আমি ‘শুধু ৯৩ হাজার টাকার চেকে সাক্ষর করেছি’ বলে তাদের জানাই। এর পরই ব্যাংক ওই চেক আটকে দেয়।
“ঘটনা শুনে দ্রুত আমি ব্যাংকে যাই। আমি তাৎক্ষণিক প্রধান শিক্ষকেও ব্যাংকে আসতে বলি।’
তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম ব্যাংকে মোট ৯৪ হাজার টাকা আছে। তবে ছুটির মধ্যে ব্যাংকে অনুদান হিসেবে আরও ৫ লাখ টাকা জমা হয়েছে। এই টাকা সরাতেই প্রধান শিক্ষক এভাবে চেক জালিয়াতি করতে চেয়েছিলেন। এ বিষয়ে আমি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আপাতত চেকটি ব্যাংকেই ম্যানেজারের কাছে আছে।’
এই ঘটনায় প্রধান শিক্ষক ক্ষমা চেয়েছেন বলেও জানান রুস্তম আলী প্রামানিক।
তবে কেশরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘একটি অনুদান এসেছে। এক চেকেই উত্তলনের জন্য আমি পাঠিয়েছিলাম। সভাপতি সাহেব সব জায়গাতেই কাগজে-কলমে ৫ লাখ ৯৩ হাজার টাকা লিখেছেন এবং সাক্ষরও করেছেন। এখন তিনি অস্বীকার করছেন। এখানে আমার কোনো দোষ নেই। আমি কোনো চেক জালিয়াতি করিনি।’
এদিকে প্রধান শিক্ষক ব্যাংকে উপস্থিত হলে সভাপতির সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষককে ঘুষিও মারেন সভাপতি। পরে উপস্থিত লোকজন তাদের শান্ত করেন।
আগ্রণী ব্যাংক কেশরহাট শাখার ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান খান বলেন, ‘চেকটির মুড়িতে ৯৩ হাজার টাকা লেখা ছিল। তবে মেইন চেকে ৫ লাখ ৯৩ হাজার লেখা দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। পরে আমরা স্কুলের সভাপতিকে ফোন দেই।
‘দুই পক্ষ আসার পর থেকেই আমরা এটি নিয়ে সমাধানের জন্য বলেছি। এ বিষয়ে আমরা একটি চিঠিও দিয়েছি। তবে সমাধান না হাওয়া পর্যন্ত সবাই চেকটি আমাদের হেফাজতেই রাখতে বলেছেন। এজন্য চেকটি আমাদের হেফাজতেই রাখা হয়েছে।’
ঢাকার উপকণ্ঠ সাভারে গভীর রাতে নিজ বাড়িতে বাইসাইকেল চালিয়ে ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের গুলিতে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আজিজুল খান।
শনিবার রাত একটার দিকে আশুলিয়ার ভাদাইল পূর্ব পাড়া রূপায়ন মাঠ সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় থানায় এখনও মামলা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রোববার বিকেলে ভুক্তভোগীর চাচাতো ভাই এসব তথ্য জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, ‘শনিবার গভীর রাতে সাইকেল চালিয়ে নিজ বাড়ি ফিরছিলেন আজিজুল। এ সময় বাড়ি থেকে কিছু দূরে সামনে অন্ধকারে চারজনকে বসে থাকতে দেখে আজিজুল সেখানে সাইকেল থামিয়ে দাড়ায়ে পরেন। এতো রাতে তারা কারা এবং সেখানে কী করছেন এটা জিজ্ঞেস করেন আজিজুল। তখন তারা আজিজুলকে বলেন- তুই বাসায় যা।
‘এর জবাবে আজিজুল জিজ্ঞাসা তাদের পাল্টা প্রশ্ন করেন তার বাড়ির ওখানে তারা কারা? এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসী বাপ্পী আজিজুলের বাম পায়ে গুলি করে সেখান থেকে দ্রুত পালিয়ে যান। পরে স্থানীয়রা আমার ভাইকে প্রথমে আশুলিয়ার নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখান থেকে চিকিৎসকরা তাকে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করেন।’
রোববার আজিজুলের পায়ে অস্ত্রপচার শেষে হাসপাতালে তাকে ভর্তি রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আজিজুল বাপ্পীকে চিনতে পেরেছে। বাপ্পী এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। এর আগেও অস্ত্র ও মাদকসহ সে গ্রেপ্তার হয়েছিল। আমরা পরিবারের সবাই আতঙ্কিত। কারণ বাড়ির পাশে গভীর রাতে কারা আড্ডা দিচ্ছে সামান্য এই প্রশ্ন করে আমার ভাইকে গুলি খেতে হয়েছে। আল্লাহর রহমতে সে প্রাণে বেঁচে গেছে। তবে সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হলে আমাদের পক্ষে স্বস্তিতে বসবাস করা সম্ভব হবে না।’
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার এসআই সোহেল মোল্লা বলেন, ‘শনিবার অনেক রাতে ভাদাইল এলাকায় গুলির ঘটনা শুনে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সামান্য বিষয়েই ওই যুবককে গুলি করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। ঘটনাস্থল থেকে কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। ভুক্তভোগী ও তার স্বজনরা হাসপাতালে থাকায় এখনও লিখিত অভিযোগ দেয়নি তারা। লিখিত অভিযোগ পেলে মামলা রুজু হবে। পাশাপাশি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে।’
‘আমাদের জাহাজের ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে ইঞ্জিন রুমে পানি ঢুকতেছে। এখন জাহাজের কন্ট্রোল নাই, সাগরে এলোমেলো ভাসতেছি। আমরা ১৪ জন ক্রু আছি জাহাজে। আমাদের উদ্ধারের ব্যবস্থা নেন দয়া করে।’
এমন অনুরোধ জানিয়ে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় মুরাদ (১৮) নামে একটি লাইটার জাহাজের ক্রু জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন। পরবর্তীতে তৎপরতা চালিয়ে কোস্টগার্ড ওই ১৩ নাবিককে উদ্ধার করে।
জানা যায়, এমভি মাস্টার সুমন-২ নামে একটি লাইটার জাহাজ এক হাজার ১০০ টন কয়লা বোঝাই করে চট্টগ্রাম থেকে দাউদকান্দি যাচ্ছিল। এক পর্যায়ে ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। ইঞ্জিন রুমে পানি ঢুকে জাহাজটি সাগরে নিয়ন্ত্রণহীন ভাসতে থাকে। এ সময় জাহাজটি সাঙ্গু গ্যাস ফিল্ড থেকে আনুমানিক ৯ দশমিক ৫ নটিক্যাল মাইল উত্তরে গভীর সাগরে অবস্থান করছিল।
নাবিক মুরাদের কলটি রিসিভ করেন ৯৯৯ কলটেকার কনস্টেবল মো. আবদুল কাদের। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কোস্টগার্ড নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও সন্দ্বীপ কোস্টগার্ডে ঘটনাটি জানিয়ে দ্রুত উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
পরবর্তীতে ৯৯৯ ডেসপাচার এসআই কবির রায়হান উদ্ধার-সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে উদ্ধার তৎপরতার আপডেট নিতে থাকেন।
সংবাদ পেয়ে কোস্টগার্ডের নিয়মিত টহল কার্যক্রম পরিচালনাকারী জাহাজ ‘সবুজ বাংলা’ দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে লাইটার জাহাজটি থেকে ১৩ জন ক্রুকে নিরাপদে উদ্ধার করে।
উদ্ধারকৃতদের প্রাথমিক শুশ্রূষা এবং খাবার সরবরাহ করা হয়। পরবর্তীতে মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে উদ্ধারকৃত ক্রু এবং জাহাজটি বুঝিয়ে দেয়া হয়।
কোস্টগার্ড উদ্ধারকারী দলের নেতৃত্ব দেয়া লে. কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন ৯৯৯-কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন:দিনাজপুরে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ক্ষোভে ২০০ টাকা দিয়ে একটি ধারাল দা কিনে সেটি দিয়ে প্রকাশ্যে জয়া বর্মনকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন তরিকুল ইসলাম চালু।
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে গ্রেপ্তার তরিকুল ইসলাম চালুর স্বীকারোক্তির বরাতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আব্দুল্লাহ আল মাসুম। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) জিন্নাহ আল মামুন ও কোতয়ালী থানার ওসি ফরিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিংয়ে আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, ‘গত প্রায় ৬ মাস ধরে হোটেল শ্রমিক জয়া বর্মন ও তরিকুল ইসলাম চালুর মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক চলে আসছিল। ভালোবাসা চলাকালে তরিকুলের কাছ থেকে বহু টাকা ধার নিয়েছেন জয়া বর্মন। কিছুদিন আগে জয়া বর্মনকে বিয়ের প্রস্তাব দেন তরিকুল। কিন্তু সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন জয়া বর্মন। বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার ক্ষোভে ২০০ টাকা দিয়ে একটি ধারালো দা কিনে সেটি দিয়ে জয়াকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেন তরিকুল।’
শনিবার সকাল ৬টার দিকে জেলার খানসামা উপজেলার পাকেরহাটে মাহিন সুইট হোটেলের ভেতর থেকে কোতয়ালী থানা পুলিশ আসামি তরিকুলকে গ্রেপ্তার করে। সেই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটিও উদ্ধার করে পুলিশ। তরিকুল দিনাজপুর সদর উপজেলার মুরাদপুর নামপুকুর এলাকার মৃত আশরাফ আলীর পালক ছেলে।
জয়া ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বনডাঙ্গা গ্রামের সপাল রায়ের স্ত্রী। সপাল রায় দিনাজপুর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি ট্রাক্টর শো-রুমের নৈশ প্রহরী হিসেবে কাজ করেন। সপাল রায় ও জয়া বর্মন ফকিরপাড়ার একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, জয়া বর্মন ও তরিকুল ইসলাম চালু বাস টার্মিনাল প্রাঙ্গণে সাউদিয়া হোটেলে কাজ করতেন। দীর্ঘদিন এক সঙ্গে কাজ করায় এক পর্যায়ে দুইজনের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। স্বামী সপাল রায় নৈশ প্রহরীর চাকরী করার সুযোগে জয়া তরিকুলকে নিয়ে প্রায় তার বাসায় আসতেন।
কিছুদিন আগে তিনিজয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু এক সন্তানের জননী জয়া তার সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। দীর্ঘদিনের ভালোবাসার পর বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ায় তরিকুলের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। সেই ক্ষোভ থেকে প্রেমিকাকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন তিনি। পরিকল্পনা মোতাবেক শহরের মহারাজার মোড়ের কামারের দোকান থেকে ২০০ টাকা দিয়ে একটি ধারালো দা কেনেন তরিকুল।
গত শুক্রবার দুপুরের পর হোটেল থেকে ছুটি নেন তরিকুল। প্রতিদিনের মতো হোটেলের কাজ শেষে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরছিলেন জয়া। মির্জাপুর বাস টার্মিনাল বিসমিল্লাহ হোটেলের সামনে পৌঁছালে তার ওপর হামলা করেন তরিকুল। ধারালো দায়ের কোপে গুরুতর আহত হন তিনি।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কিছুক্ষণ পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরে নিহত জয়ার স্বামী সপাল রায় বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় একটি মামলা করেন।
আরও পড়ুন:রাজধানীর মোহাম্মদপুরে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িতে হামলার মামলায় ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ১৯ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুর থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় এই অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে।
রোববার আদালত সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের শ্যালক ইশতিয়াক মাহমুদ, মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুল হাসান ওরফে রাসেল, ফিরোজ মাহমুদ, মীর আমজাদ হোসেন, সাজু ইসলাম, রাজীবুল ইসলাম, শহিদুল আলম খান, সিয়াম ও অলি আহমেদ। তাদের মধ্যে ইশতিয়াক মাহমুদ পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে। অন্য আসামিরা জামিনে রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট রাতে ড. বদিউল আলম মজুমদার বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন।
২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. আব্দুর রউফ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
২০২২ সালের ১ মার্চ ৯ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। গত বছরের ২৮ মার্চ এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।
গত ৪ ডিসেম্বর এ মামলায় ছয়জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়। পরে দেখা যায়, এদের মধ্যে সাক্ষী ড. বদিউল আলম মজুমদার, খুশি বেগম ও মাহবুবুল আলম মজুমদার তাদের জবানবন্দিতে জনৈক ইশতিয়াক মাহমুদের নাম উল্লেখ করেন।
পরে গত ২৭ ডিসেম্বর আদালত মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায় থেকে তুলে এনে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ঢাকার সিএমএম বরাবর পাঠায়।
এদিকে ১ জানুয়ারি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম চৌধুরীর আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেয়।
মন্তব্য