বাংলাদেশে প্লাস্টিক ও হালকা প্রকৌশল খাতের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ।
মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা জানান তিনি।
রপ্তানি আয় বাড়াতে পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে সচিব বলেন, ‘পোশাক খাতের নির্ভরশীলতা কমাতে আমাদেরকে নতুন নতুন পণ্য তৈরির দিকে নজর দিতে হবে।’
প্লাস্টিক খাত ও হালকা প্রকৌশল খাতের রপ্তানি উন্নয়নে দুটি খসড়া রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। এ রূপরেখাগুলো চূড়ান্তকরণে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস’ প্রকল্প কার্যালয়ে এই আলোচনা সভা হয়। বাণিজ্যসচিব এতে সভাপতিত্ব করেন।
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘দেশে প্লাস্টিক শিল্পের বিশেষ করে খেলনা রপ্তানির ওপর জোর দিতে হবে।
‘এ ক্ষেত্রে স্বত্বাধিকারসংক্রান্ত সমস্যা এড়াতে আমাদের নিজস্ব ডিজাইনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য দরকার ডিজাইন সেন্টার। বিশ্বের উন্নত দেশে মিউনিসিপ্যাল বিন ও মোবাইল টয়লেট তৈরি হয় প্লাস্টিক দিয়ে। আমরা এ বাজার ধরার চেষ্টা করতে পারি।’
হালকা প্রকৌশল খাতের রপ্তানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কম্বোডিয়ার মতো বাংলাদেশের হালকা প্রকৌশল খাতেও প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এ খাতে ব্যাপক বিদেশি বিনিয়োগ আসার সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।’
বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, ‘অটোমোবাইল কম্পোনেন্ট ও প্লাস্টিকের খেলনা বর্তমানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য হিসেবে বিবেচিত।
‘এ পণ্যগুলোর রপ্তানি সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধাসহ যথাযথ নীতিসহায়তা দিতে হবে।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান বলেন, ‘২০২৪ সাল নাগাদ আমাদের ৮০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। খাতভিত্তিক রপ্তানির যেসব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো রপ্তানি নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।’
বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) প্রেসিডেন্ট শামীম আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে প্লাস্টিক অটোমোবাইল কম্পোনেন্ট তৈরিতে পিছিয়ে আছে । এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া জরুরি।’
তিনি আরও বলেন, ‘খেলনা রপ্তানির বড় সমস্যা স্বত্বাধিকার। এটি যথাযথভাবে মেনে না চললে নকল পণ্য উৎপাদন করলে রপ্তানি করা যায় না। এ সমস্যা নিরসনে সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস-এর প্রকল্প পরিচালক মো. মনসুরুল আলম বলেন, ‘বর্তমানে সারা দেশে ৩০০ প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় স্ক্র্যাপ থেকে প্লাস্টিক ফ্লেক উৎপাদন এবং ইয়ার্ন তৈরির জন্য বছরে প্রায় ৪০ হাজার টন ফ্লেক রপ্তানি করা হয়। পরিবেশ ক্ষতিকারক ফ্লেক এখনই বন্ধ করতে হবে এবং বাংলাদেশে কীভাবে ফ্লেক থেকে ইয়ার্ন তৈরি করা যায় সে বিষয়ে ভাবতে হবে।’
বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘বর্তমানে বৈশ্বিক হালকা প্রকৌশলের ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে। বাংলাদেশ যথাযথভাবে এগিয়ে চললে এ বাজারের সুযোগ গ্রহণ করতে পারবে।
‘হালকা প্রকৌশল শিল্পের উন্নয়নে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে হবে। এ ছাড়া ভূমি নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। এ খাতের জন্য শিগগির টেকনোলজি সেন্টার গড়ে তোলা প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন:স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন করেছে এনআরবিসি ব্যাংক।
১৭ মার্চ দিবসটি উপলক্ষে প্রধান কার্যালয়সহ সারাদেশের বিভিন্ন শাখা-উপশাখার মাধ্যমে হতদরিদ্র, এতিম, পথশিশু ও শিশু-কিশোরদের মধ্যে ইফতার সামগ্রী এবং বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই বিতরণ করা হয়েছে।
এসব কর্মসূচিতে রংপুরের মিঠাপুকুরের সংসদ সদস্য জাকির হোসেন সরকার ও এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল সহ ব্যাংকের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশুদিবস উপলক্ষে মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোরদের নিয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদানসহ অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোরদের বঙ্গবন্ধুর জীবনী, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় এমপি জাকির হোসেন সরকার বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হতো না। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই শোষণের নাগপাশ ছিড়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। শিশু-কিশোরদেরকে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস সম্পর্কে জানানোর জন্য এনআরবিসি ব্যাংকের এই কর্মকান্ড সত্যই প্রশংসনীয়।
এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল বলেন, বাংলাদেশের রূপকার ও বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার এনে দেওয়া স্বাধীনতা সত্যিকার অর্থে স্বার্থক হবে যখন বাংলার প্রতিটি মানুষ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে কাজ করছে এনআরবিসি ব্যাংক। দারিদ্রমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত বাংলা গড়ার লক্ষে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের দোরগোড়ায় গিয়ে এনআরবিসি ব্যাংক ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। ঘরে বসে মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা এবং গ্রামকে শহরায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে বিনাজামানতে স্বল্পসুদে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করছে এনআরবিসি ব্যাংক।
এদিকে রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন এতিম খানার এতিম শিশু, হতদরিদ্র ও পথশিশুদের মাঝে ইফতার বিতরণ করা হয়েছে। একই সাথে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শহিদ সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। প্রেস রিলিজ
একীভূত করার লক্ষ্যে বেসরকারি খাতের পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট ব্যাংক অফ বাংলাদেশ (এক্সিম ব্যাংক)। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের উপস্থিতিতে এই সমঝোতা স্মারকে সই করেন এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফিরোজ হোসেন ও পদ্মা ব্যাংকের এমডি তারেক রিয়াজ খান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এক্সিম ব্যাংক ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকস (বিএবি)-এর চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, পদ্মা ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিমসহ তিন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ায় মঙ্গলবার থেকে পদ্মা ব্যাংকের কার্যক্রম এক্সিম ব্যাংক নামে চলবে। একীভূত ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালিত হবে।
চুক্তি স্বাক্ষর শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে দুই পদ্ধতিতে একীভূতকরণ হয়ে থাকে। এর একটি হলো একুইজিশন (অধিগ্রহণ), অন্যটি মার্জ (একত্রিত করা)।
‘আমরা পদ্মা ব্যাংককে একুইজিশন করিনি, মার্জ করেছি। এর ফলে পদ্মা ব্যাংকের সব দায়-দেনা এখন এক্সিম ব্যাংক নিয়ে নিয়েছে। পদ্মা ব্যাংক আর থাকছে না। একীভূত করার মাধ্যমে ব্যাংকটির কার্যক্রম চলবে এক্সিম ব্যাংকের নামে। দুই ব্যাংকের পর্ষদ আলোচনার পর আজকে (সোমবার) এ বিষয়ে নীতিগত সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হলো। এই মার্জ বাস্তবায়নে আরও ৩-৪ মাস সময় লাগতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘পদ্মা ব্যাংক একীভূত করার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো চাপ ছিল না। আমরা এটা করেছি দেশের স্বার্থে, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে। পদ্মা ব্যাংককে একীভূত করা হলেও আমানতকারীদের কোনো সমস্যা হবে না, সবার আমানতই নিরাপদে থাকবে। পদ্মা ব্যাংকের আমানতকারীরা এক্সিম ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারবেন।’
নজরুল ইসলাম মজুমদার আরও বলেন, ‘পদ্মা ব্যাংককে একীভূত করার কারণে নতুন কার্যক্রম চলবে এক্সিম ব্যাংকের নামে। একীভূত করা হলেও ব্যাংকটির কেউ চাকরি হারাবেন না। পদ্মা ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগে প্রায় ১২শ’ কর্মী রয়েছেন। তাদের কারও চাকরি যাবে না। সবাই কর্মরত থাকবেন এক্সিম ব্যাংকের হয়ে। আমাদের আমানতকারী ও শেয়ারহোল্ডারদেরও কোনো ক্ষতি হবে না। সবকিছু আগের মতোই চলবে।’
চুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে পরে সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।
তিনি বলেন, ‘ডিফল্টারদের পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দুটি অডিট ফার্ম নিয়োগ করা হবে। অডিটের মাধ্যমে পরিচালকদের দায়-দেনাও উঠে আসবে। আইনি প্রক্রিয়া ফলো করে আমরা সামনের দিকে আগাবো। যত দ্রুত সম্ভব দুটি ব্যাংক মার্জ হয়ে এক্সিম ব্যাংকে পরিণত হবে।’
আরও পড়ুন:ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে ১৭ মার্চ, ২০২৪ রোববার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রোববার এ কথা জানানো হয়।
ব্যাংকের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ব্যাংকের ডাইরেক্টর বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন ও নাসির উদ্দিন, এফসিএমএ এবং অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আলতাফ হুসাইন।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দীর্ঘদিন ধরেই। আর পবিত্র রমজানে বাজার হয়ে পড়েছে লাগামহীন। এ অবস্থায় খুবই কঠিন সময় পার করছে শহরাঞ্চলের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। রমজানে তাদের মাসিক ব্যয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো বেড়ে গেছে। সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে এসব পরিবারকে।
শহরাঞ্চলে অনেকেই আছেন যাদের বাসা সুপারশপগুলোর আশপাশে। একটা সময়ে দৈনন্দিন বাজারটা তারা এখানেই সারতেন। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপে চিড়েচ্যাপ্টা এই পরিবারগুলো এখন স্থানীয় কাঁচাবাজারের দিকে ছুটছেন। খুঁজছেন কিছুটা সাশ্রয়ে কেনাকাটার উপায়।
রাজধানীতে বসবাসকারী বেসরকারি কোম্পানির চাকুরে কাজী শরিফুল হক বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেন, ‘রমজানে ইফতার ও সেহরির সময় যে খাবার খাওয়া হয়, তাতে অন্য সময়ের থেকে মাসে খাবার খরচ বেশি হয়। এসময় সাধারণত ফল, গরুর মাংস ও খাসির মাংসের মতো কিছু জিনিসের ব্যবহার কমে যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতায় বেশির ভাগ পণ্যের দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রমজান মাসের শুরুতেই মাছের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, মুরগির কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা এবং ছোলা, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।’
সরকার নির্ধারিত মূল্যে খেজুর পাওয়া যায় না জানিয়ে শরিফুল বলেন, ‘আপেল, মাল্টাসহ কিছু ফল প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি।
‘চাল ও ভোজ্যতেলের দাম আপাতত স্থিতিশীল। তবে সংসার খরচ শুধু বাজারের খরচের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ওষুধ (স্বাস্থ্য), পানির বিল, গ্যাসের বিল, বিদ্যুৎ, বাড়িভাড়াসহ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষকে অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে।’
ইদানীং রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে শরিফুলের মতো অবস্থা অধিকাংশ ক্রেতার।
২০০৯ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা লেবার পার্টির এড মিলিব্যান্ড বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ‘স্কুইজড মিডল’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।
অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি ২০১১ সালে এটিকে তাদের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে বিবেচনা করে। শব্দবন্ধটির সংজ্ঞায় বলা হয়, ‘এটি এমন একটি শ্রেণির সমন্বয়ে গঠিত সমাজ, যাদের আয় নিম্ন বা মধ্যম স্তরের। এরা মুদ্রাস্ফীতি, মজুরি হিমায়িত ও অর্থনৈতিক সংকটের সময় খরচ কমাতে বাধ্য হয়।’
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ইউএনবিকে বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি ও এলোমেলোভাবে বিনিময় হারের উঠানামা (আমদানি পণ্যের দামকে প্রভাবিত করে) শহরাঞ্চলে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে তুলেছে। কারণ শহুরে মানুষ সরবরাহ চেইনের ওপর নির্ভর করে।’
তিনি বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে একটি পরিবারের ভোগ করা পণ্যের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই উৎপাদিত হয় নিজের জমিতে, যা শহরে হয় না। মধ্যবিত্তদের বেশিরভাগই এমনকি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নগর জীবনকে আরও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।’
কাওরানবাজারের শরিফুলসহ অন্যদের একই রকম অবস্থার সত্যতা নিশ্চিত করে ফাহমিদা বলেন, শুধু ভোগ্যপণ্যের দাম নয়, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ব্যয় এবং নানা ধরনের (ইউটিলিটি) বিলও বেড়েছে।
‘কোভিডের প্রাদুর্ভাব (২০২০-২০২২) কমে যাওয়ার পর পরিবারের আয়, মূলত বেতন বাড়েনি। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপে পড়েছেন চাকরিজীবীরা।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেয়া সময়সীমার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০২৩ সালের নভেম্বরে টানা ২২তম মাস বাংলাদেশে গড় মজুরি প্রবৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতির হারের অনেক নিচে রয়েছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘আমদানি হোক বা দেশে উৎপাদিত হোক সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে।
‘চাকরিজীবীদের আয় না বাড়লেও অন্যদের পাশাপাশি তাদের ব্যয়ও বেড়েছে। আর এটি নির্দিষ্ট আয়ের গোষ্ঠীর জন্য একটি বিশেষ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যদি যৌক্তিক ও পদ্ধতিগতভাবে দাম বাড়ানো হয় অর্থাৎ বাজারের মৌলিক বিষয়গুলো মেনে চলা, তাহলে এই বোঝা নিয়ন্ত্রণযোগ্য থাকবে। কিন্তু যখন স্বেচ্ছাচারিতা করে তখন জনগণের পক্ষে এটি খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
‘এমনটি ঘটছে কি না সেদিকে কর্তৃপক্ষকে আরও মনোযোগ দেয়ার উচিত। কারণ দেশে মূল্যবৃদ্ধি, মজুতদারি ইত্যাদির বেশ কয়েকটি উদাহরণ রয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে আইন রয়েছে।’
যেখানেই অনিয়ম পাওয়া যায়, সেখানে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা, বাজারে স্থিতিশীলতা আনার আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন:চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ। অথচ অর্থবছরের অর্ধেক সময় শেষে ডিসেম্বর নাগাদ প্রাপ্তি মাত্র ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ। এমনটা উল্লেখ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) উল্লেখ করেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে সরকারের বাজেট ঘাটতি ৮২ হাজার কোটি টাকা হবে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় এই থিঙ্ক ট্যাঙ্কের নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, ‘চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা এখনও অর্জিত হয়নি। বাকি ছয় মাসে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে প্রায় ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ হারে রাজস্ব সংগ্রহ করতে হবে, যা হবে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং।’
এতে দেশের রাজস্ব ঘাটতি ৮২ হাজার কোটি টাকা দাঁড়াতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব নিয়ে শনিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি এসব কথা বলেছে।
ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫: সিপিডির সুপারিশমালা’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানটির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষক মুনতাসীর কামাল প্রমুখ।
দেশের অর্থনীতি এক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বড় ধরনের চাপের মধ্যে আছে। বিশেষত মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের জীবনযাত্রা সংকটে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করাই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বলে মনে করে সিপিডি।’
তিনি বলেন, ‘এমন একটা সময় বাজেট প্রণয়ন হতে যাচ্ছে যখন সামষ্টিক অর্থনীতি নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকে তারল্য সংকট, বাজেট বাস্তবায়নে নিম্ন ও স্লথ গতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিম্নগামী এবং রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স নিচের দিকে।
‘এই পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বিশেষ করে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও নিম্ন মূল্যস্ফীতিসহ অন্যান্য সূচক যেখানে থাকার কথা সেটা নেই; বরং চরমভাবে চাপের মুখে পড়েছে। এর কারণ আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ দুটোই।’
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বাজেট প্রণয়ন হয় এক বছরের জন্য। বাজেটে যে নির্দেশনা থাকবে সেগুলো যেন চ্যালেঞ্জগুলো মেটাতে পদক্ষেপ নিতে পারে। মূল্যস্ফীতির চাপ কমানো, টাকার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা রাখা ও দরিদ্র মানুষের স্বার্থের দিকে নজর দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের উন্নয়ন ব্যয়ও কমেছে। গত বছর ২৭ শতাংশের মতো থাকলেও এখন তা ২৫ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
সিপিডির মতে, নীতিনির্ধারকদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। বৈদেশিক মুদ্রার হারকে স্থিতিশীল করা এবং মূল্যস্ফীতি কমানোর দিকে নজর দিতে হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিবর্তে দুর্বল ও সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর জন্য সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।’
সিপিডির সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- অর্থপাচার রোধে এনবিআরের শক্তিশালী ভূমিকা নেয়া, অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ বন্ধ করা, করদাতাদের হয়রানি বন্ধ করা, ইএফডি যন্ত্র সহজলভ্য করা এবং ওষুধের ওপর ভ্যাট কমানো।
সিপিডির পক্ষ থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও আমদানি করা বই- এসবে শুল্ক, ভ্যাট এবং কর কমানোরও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে যাচ্ছে চতুর্থ প্রজন্মের পদ্মা ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের উপস্থিতিতে একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু করতে ব্যাংক দুটি একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করবে।
সোমবার ওই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দুই ব্যাংকের উদ্যোক্তারাও উপস্থিত থাকবেন।
পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার বিষয়ে বৃহস্পতিবার এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একীভূত হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এদিন দুপুরের পর পরিচালনা পর্ষদের সভা ডাকে পদ্মা ব্যাংকও। এ সভায় ব্যাংক দুটি একীভূত হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানা গেছে।
ব্যাংক দুটি একীভূতকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক স্ নিয়মকানুন ও ব্যাংকিং বিধিমালা সঠিকভাবে অনুসরণ করেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘কীভাবে এই একীভূত হওয়ার কার্যক্রম সম্পন্ন হবে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা ও পরামর্শক্রমে দুই ব্যাংকের আইনজীবী মিলে ঠিক করবেন। এ নিয়ে সোমবার একটি সমঝোতা চুক্তি হবে। ওই চুক্তির পর একীভূত হওয়ার কার্যক্রমের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
২০১৩ সালে চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে অনুমোদন পায় সাবেক ফারমার্স ব্যাংক। প্রতিষ্ঠার মাত্র তিন বছর পর বেঁচে থাকার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল ব্যাংকটি। ফলে আওয়ামী লীগের প্রাক্তন প্রেসিডিয়াম সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে ২০১৭ সালে ব্যাংকটির বোর্ড ভেঙে দেয়া হয়। তখন ফারমার্স ব্যাংককে আর্থিক মন্দা থেকে উদ্ধার করতে সরকার একটি আর্থিক লাইফলাইন নিয়ে পদক্ষেপ নেয়।
ফারমার্স ব্যাংকের নাম বদলে করা হয় পদ্মা ব্যাংক। ২০১৮ সালে পদ্মা ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন দেশের বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তা ও শীর্ষ ব্যবসায়ী ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। তার সুদক্ষ নেতৃত্বে ব্যাংকটি অনেক ক্ষেত্রেই সফলতা অর্জন করে। যেমন- ৯০০ কোটি টাকা নগদ আদায়, ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করা। পাশাপাশি ব্যক্তি এবং করপোরেট অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা প্রদান করা। স্বতন্ত্র এবং ক্ষুদ্র আমানত ধরে রাখার হার ছিল ন্যূনতম ৫০ শতাংশ।
এ ছাড়া ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের নেতৃত্বে ব্যাংকটির কার্যক্রম পরিচালনায় বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ক্রেডিট অ্যাডমিনসহ লেনদেনের কেন্দ্রীয়করণ, ৩টি নতুন শাখা ও ১৪টি উপশাখা চালু করা, ইসলামী ব্যাংকিং সিস্টেম প্রবর্তন করা, বাংলাদেশ অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউস (বিএসিএইচ) এবং রিয়েল-টাইম গ্রোস সেটেলমেন্টের (আরটিজিএস) মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পত্তিকরণ এবং কিউআর কোড, পদ্মা ওয়ালেট, ই-চালান ইত্যাদি চালু করা।
প্রসঙ্গত, পদ্মা ব্যাংককে অন্য একটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার নিমিত্তে ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত এ বছরের জানুয়ারি মাসে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে বিরতি নেন এবং সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিমকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান-এর দায়িত্ব দেয়া হয়।
৪ মার্চ ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকসের (বিএবি) একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে গভর্নর জানান, চলতি বছরের মধ্যে ৭ থেকে ১০টি দুর্বল ব্যাংককে সবল বা ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হতে পারে।
এক্সিম ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। ২০০৪ সালে ব্যাংকটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। সবশেষ বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে এক্সিম ব্যাংকের শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ১০ টাকা। এদিন ব্যাংকটির শেয়ারের দাম ১ শতাংশের মতো বেড়েছে।
আরও পড়ুন:পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে সোনালি আঁশ রপ্তানির নতুন নতুন বাজার খোঁজার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় পাট দিবস উদযাপন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ তাগিদ দেন।
অনুষ্ঠানে পাট খাতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
স্মারক হস্তান্তর শেষে দেয়া বক্তব্যে সরকারপ্রধান পাটজাত পণ্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা পাট, পাটজাত পণ্য যত বেশি উৎপাদন বাড়াতে পারব, দেশীয় কাজে যেমন লাগবে, আর রপ্তানি ক্ষেত্রেও বিরাট সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে। সেদিকে লক্ষ রেখেই পাটের রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করা, কোন দেশে কী ধরনের চাহিদা আছে, সেটা দেখা এবং সেই ধরনের পণ্য উৎপাদন করার দিকেই আমাদের দৃষ্টি হতে হবে।’
পাটের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাশাপাশি এই সোনালি আঁশ, যে সোনালি আঁশ আমাদের জন্য, বাংলাদেশের জন্য সোনালি দিনের হাতছানি দিচ্ছে। কাজেই সেটা আমাদের যথাযথ কাজে লাগাতে হবে।’
সরকার পাটের সম্ভবনাকে কাজে লাগাতে চায় মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, পাট শিল্পকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু সরকার পাটের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চায়।
তিনি বলেন, পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। পাটের জন্ম রহস্য উদ্ভাবনের মাধ্যমে পাট ও পাট শিল্পের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার খুঁজতে হবে। পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে পাট ব্যবহারে সুযোগ বেড়েছে। পাট থেকে উৎপাদিত রপ্তানিপণ্যে প্রণোদনা দেবে সরকার।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের দেশের সম্পদ খুব সীমিত। পাট আমাদের দেশের একটি পণ্য। পাটকে জাতির পিতা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছিলেন। পাট আমাদের এমন একটি পণ্য যার চাহিদা কখনও শেষ হবে না।
‘পাটকে বলা হয় সোনালি আঁশ। এই সোনালি আঁশ আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে পারে। বর্তমান যুগে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে পরিবেশবান্ধব পণ্যের, পাট তেমন একটি পণ্য।’
তিনি বলেন, ‘এ দেশীয় পণ্যটা যদি আমরা উপযুক্তভাবে ব্যবহার করতে পারি, তাহলে পাটই আমাদের জন্য অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। দেশীয় বিভিন্ন কাজে আরও ভালোভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।’
সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে পাটের জন্ম রহস্য উদ্ভাবন করেছি। তার ফলে পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়ানো আমাদের বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আবিষ্কারের ফলে পাটের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। সেদিকে লক্ষ রেখে আমরা আজকে পদক্ষেপ নিচ্ছি। পাটের আঁশ এবং চামড়া মিলে পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। সেগুলো বিদেশে রপ্তানি করতে পারছি।’
পাট পরিবেশবান্ধব হওয়ায় সুযোগ বেড়ে গেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাট শিল্প আরও উন্নত কীভাবে করা যায়, সেদিকে আমরা লক্ষ রাখছি। একদিকে গবেষণা অব্যাহত রাখা, অন্যদিকে পাট থেকে আরও উন্নত মানের পণ্য উৎপাদন করা, সেদিকে আমরা দৃষ্টি দিয়েছি। পাটের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য