করোনার টিকা ছাড়া স্কুল ক্লাস নয়- সরকারের এমন ঘোষণার পর স্কুলে গিয়েও সবাই টিকা নিতে পারছে না। জন্মনিবন্ধন সনদে ভুলের কারণে এমনটি ঘটছে। স্কুল থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ ঠিক করে আনতে বলা হচ্ছে। কিন্তু এটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার।
এই জটিলতা যেন না হয়, সে জন্য সরকারের আরও একটি সিদ্ধান্ত ছিল যে যাদের জন্মনিবন্ধন সনদ নেই বা সেখানে কোনো ভুল আছে, তারা বিকল্প ব্যবস্থায় টিকা পাবে।
কিন্তু রাজধানীর কয়েকটি টিকাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, স্কুলগুলো সরকারের নির্দেশনা মানছে না। জন্মনিবন্ধন সনদে ভুল এবং ডিজিট কম থাকায় টিকা নিতে পারছে না সব শিশু।
মঙ্গলবার রাজধানীর খিলগাঁও মডেল কলেজ কেন্দ্রে মতিঝিল সরকারি বালক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র আশিক আব্দুল্লাহকে নিয়ে টিকা দিতে যান তার বাবা আবু আব্দুল্লাহ। তিনি অভিযোগ করেন, জন্মনিবন্ধন সনদ ১৬ ডিজিটের হওয়ায় টিকা দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, ‘সরকার থেকে বলা হয়েছিল জন্মনিবন্ধন সনদ ছাড়াও স্কুলের পরিচয়পত্র দিয়ে টিকা দেয়া হবে। কিন্তু জন্মনিবন্ধন সনদে ভুল থাকায় আমার ছেলেকে আজ টিকা দেয়া হয়নি।’
একই অভিযোগ করলেন আলী আহমদ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তাবাসুম বিনতে হদ্রির মা আফরোজা বেগম।
তিনি বলেন, ‘টিকা দিতে আসলে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক বললেন, আমার মেয়ের জন্মনিবন্ধনের সনদে ভুল আছে। তাই টিকা দেয়া যাবে না।’
ভিকারুননিসা টিকাকেন্দ্রেও একই সমস্যায় পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পাশেই উইলস লিটল স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আরাফাত ইসলামও টিকা পায়নি। তার বাবা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুল কর্তৃপক্ষ বলেছে জন্মসনদ ঠিক করে আনতে। তাই আজ টিকা দেয়া হলো না।’
শিক্ষা কর্মকর্তা বললেন দুঃখজনক
তবে শিক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়লেও এর কিছুই জানেন না ঢাকা জেলার শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ।
তিনি বলেন, ‘সরকার থেকে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, জন্মনিবন্ধন সনদ ছাড়াও পরিচয়পত্র দিয়ে টিকা দেয়া যাবে। এ জন্য অবশ্যই প্রতিষ্ঠানপ্রধানের প্রত্যয়নপত্র লাগবে। কোনো শিক্ষার্থীর যদি জন্মনিবন্ধন সনদ না থাকে অথবা ভুল থাকে তাহলে সে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানপ্রধানের প্রত্যয়ন নিয়ে টিকা গ্রহণ করতে পারবে।’
কিন্তু টিকা তো তারা দিতে পারছে না- এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘কেউ যদি এ নির্দেশনা না মেনে থাকেন তাহলে তা অবশ্যই দুঃখজনক।’
মন্ত্রীর যে ঘোষণা ছিল
গত ১০ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছিলেন, ‘শিক্ষার্থীদের টিকা নিতে কোনো নিবন্ধন লাগবে না। পরিচয়পত্র দিয়েই টিকা দিতে পারবে। পরিচয় বলতে স্কুলের পরিচয়পত্র বা আইডি কার্ড।’
মন্ত্রী সেদিন বলেন, ‘কেবিনেটের একটি সিদ্ধান্ত আছে, ১৩ তারিখের পর টিকা ছাড়া কেউ স্কুলে যেতে পারবে না। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সবার টিকা দেয়া হয়ে যাবে। এর মধ্যে যারা প্রথম ডোজ নিয়েছে তারা ক্লাসে আসবে। না নেয়ারা অনলাইনে বা বিকল্প মাধ্যমে ক্লাস করবে।’
টিকাকেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না
স্কুলশিক্ষার্থীদের রাজধানী ঢাকায় মোট নয়টি কেন্দ্রে টিকা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে খিলগাঁও মডেল কলেজ, মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের বাইরে শিক্ষার্থীদের লম্বা লাইন দেখা যায়।
লাইনে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীদের অনেককেই নিদিষ্ট দূরত্ব বজায় না রেখেই খোশগল্পে মাততে দেখা যায়। এ সময় অনেকের মুখেই ছিল না মাস্ক। বলা যায়, টিকা কেন্দ্রের বাইরে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই ছিল না।
তবে ভিন্ন চিত্র দেখা যায় রাজধানীর ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে। এ কেন্দ্রে তাপমাত্রা মেপে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করাতে দেখা যায়। নিদিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রেও স্কুল কর্তৃপক্ষের চেষ্টা দেখা গেছে।
কতজন টিকা পেয়েছে
দেশের ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের ৬৪ শতাংশ করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
সোমবার সংসদে তিনি এ তথ্য জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী যে শিক্ষার্থীরা আছে, এই বিশাল শিক্ষার্থীর সংখ্যা হচ্ছে ১ কোটি ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৩২২। এদের মধ্যে আমরা গতকাল (রোববার) পর্যন্ত ৭৭ লাখ ১৮ হাজার ৩৩৭ জনকে অর্থাৎ ৬৪ দশমিক ০৪ শতাংশ শিক্ষার্থীকে প্রথম ডোজ টিকা দিতে সক্ষম হয়েছি।
গত ১ নভেম্বর পাঠদান কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা দেয়া শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের দেয়া হচ্ছে ফাইজারের টিকা।
রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে স্কুলশিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ২০২০ সালের ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। এর প্রায় দেড় বছর পর গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল-কলেজে ক্লাস শুরু হয়। তবে প্রতিদিন সব শ্রেণিতে ক্লাস হচ্ছে না।
আরও পড়ুন:লিবিয়ার বন্দিশালায় আটক ১৬০ বাংলাদেশি নাগরিক দেশে ফিরেছেন।
তাদের বহনকারী বুরাক এয়ারলাইনসের একটি বিমান বৃহস্পতিবার সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জিয়াউল হক।
তিনি বলেন, ‘সকাল ৭টার দিকে লিবিয়া থেকে ১৬০ জন বাংলাদেশি নাগরিকদের বহন করা বুরাক এয়ারের ফ্লাইট ইউজেড-২২২ ঢাকায় অবতরণ করেছে।’
লিবিয়ার বন্দিশালায় আটকদের মধ্য থেকে এই ১৬০ বাংলাদেশি দেশে এসেছেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহায়তায়। তাদের বাংলাদেশে পৌঁছে দিতে লিবিয়ার বুরাক এয়ারের ফ্লাইটটি ভাড়া করেছিল আইওএম।
স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল পৌনে ৪টায় লিবিয়ার মেতিগা বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে।
এর আগে লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল এস এম শামিম উজ জামান মেতিগা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনকারীদের সঙ্গে দেখা করে তাদের বিদায় জানান।
আরও পড়ুন:কানাডার আদালতে মামলা খারিজ হওয়ার পরও দেশের সবচেয়ে বড় সেতু প্রকল্পটির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই থাকবে বিএনপি।
সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ না থাকলেও দলটির নেতারা দাবি করে আসছেন, এই সেতু নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছে। যত টাকা ব্যয় হয়েছে, তার চেয়ে কম টাকায় করা সম্ভব ছিল।
এই ধারণার পক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-উপাত্ত না দিলেও সেতু নির্মাণের প্রাথমিক বরাদ্দ ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা ধরা হয়েছিল, সেটিই বিএনপির বক্তব্যের প্রধান উপজীব্য। শেষ পর্যন্ত সেতুটি নির্মিত হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকার আশপাশে।
যখন নির্মাণ ব্যয় ১০ হাজার কোটি টাকা রেখে প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হয়, তখন চার লেনের একটি সড়ক সেতু করার সিদ্ধান্ত হয়। পরে সিদ্ধান্ত পাল্টে স্টিলের দ্বিতল সেতু করা হয়, যাতে সড়ক সেতুর নিচ দিয়ে রেল চলাচলের ব্যবস্থা করা যায়।
জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের নীতিমালাও পাল্টানো হয়। জমির বাজারদরের তিন গুণ ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় ক্ষতিগ্রস্তদের। নদীশাসনেও ধারণার চেয়ে বেশি খরচ করতে হয়।
‘পদ্মা সেতু কি কারও পৈতৃক সম্পত্তি? কারও নিজের জমিদারি? এটা তো জনগণের ট্যাক্সের টাকায় হয়েছে। তাহলে এই সেতুতে উঠবেন কি না এমন কথা আসছে কেন?’
শেষ পর্যন্ত নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সমালোচনা করেছি এই সেতু নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছে, সেই দুর্নীতির বিষয়ে। আমাদের তো এখনও কনসার্ন যে, এই যে সেতুটা হলো, তার জন্য সামনে আরও কত টাকা গুনতে হবে এই দেশের জনগণকে।’
পদ্মা সেতু ইস্যুতে বেগম খালেদা জিয়া ও ড. ইউনূসকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখার পরদিন বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে তার জবাব দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: নিউজবাংলা
সরকারি দলের নেতাদের নানা বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পদ্মা সেতু কি কারও পৈতৃক সম্পত্তি? কারও নিজের জমিদারি? এটা তো জনগণের ট্যাক্সের টাকায় হয়েছে। তাহলে এই সেতুতে উঠবেন কি না এমন কথা আসছে কেন?’
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সেতু কি আপনার পারসোনাল অ্যাসেট? আপনি জিজ্ঞাসা করার কে? বলতে যদি হয়, এটা বলেন যে এই সেতু নির্মাণে কত টাকা পকেটে ঢুকিয়েছেন?’
সেতু উদ্বোধনের দিন বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানোর কথাও জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তবে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কোনো ইচ্ছা যে দলটির নেই, সেটি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের বক্তব্যেই স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘আপনারা সবাই নিশ্চয় জানেন, আগামী ২৬ মে আমরা ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি রেখেছি। আমাদের চেয়ারপারসনকে নিয়ে যে হুমকি দেয়া হয়েছে, সেটার প্রতিবাদেই এই বিক্ষোভ সমাবেশ। আমার মনে হয়, এই বিক্ষোভের ঘটনাতেই বিএনপির মনোভাব স্পষ্টতর।’
বিএনপির আক্রমণ ছিল শুরু থেকেই
এই সেতুর পরিকল্পনা নেয়ার সময় থেকেই নানা দিক থেকে সরকারের সমালোচনা করতে থাকে বিএনপি। বিশ্বব্যাংক সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ আনার পর দলটি সরকারের পদত্যাগ দাবি করে।
২০১৩ সালে বিশ্বব্যাংক যখন এই সেতু থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে ফেলে, তখন বিএনপির বক্তব্য ছিল, সরকার দুর্নীতি করতে গিয়ে দেশের সম্মান ডুবিয়েছে।
বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পর সরকার যখন নিজ অর্থে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়, তখন বিএনপির পক্ষ থেকে বক্তব্য আসে এমন যে, দুর্নীতি করতে পারবে না বলে বিদেশি অর্থায়ন নিতে চায় না সরকার। আর এত বড় প্রকল্প নিজ অর্থে করলে অন্য উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ কমে যাবে।
নানা জটিলতায় সেতু নির্মাণে পরিকল্পনার চেয়ে যখন বেশি সময় লাগছিল, তখন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার করা একটি উক্তি নিয়ে সম্প্রতি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ পদ্মা সেতু করতে পারবে না। আর জোড়াতালি দিয়ে যদি একটি সেতু বানায়ও, তাহলেও সেই সেতু ভেঙে পড়বে। দলীয় নেতা-কর্মীদের তিনি সেতুতে না ওঠার পরামর্শও দেন।
বিএনপিকে ঘিরে আওয়ামী লীগের আক্রমণ এখন এই বিষয়টি নিয়েই। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, বিএনপির ধারণা ছিল না নিজের টাকায় সেতু করা সম্ভব নয়, এটা সরকার মিথ্যা প্রমাণ করেছে। আর কানাডার আদালতের রায়েই প্রমাণ হয়েছে, এই সেতু নিয়ে তোলা অভিযোগের পেছনে ছিল ষড়যন্ত্র।
বিশ্বব্যাংক যে অভিযোগটি তোলে, তখনও পদ্মা সেতুর কোনো অর্থ ছাড় করা হয়নি। কানাডীয় কোম্পানি এসএনসি লাভালিন এই কাজ পেতে আগ্রহী ছিল। একটি উড়োচিঠির ওপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাংক দাবি করে, এই কাজ পাওয়ার পেছনে ঘুষ লেনদেনের পরিকল্পনা ছিল। এমনকি একটি কথিত ডায়েরি পাওয়ার কথা জানানো হয়, তাতে কাকে কত টাকা দেয়া হবে, তা উল্লেখ ছিল।
বিশ্বব্যাংকের দাবি ছিল সে সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি জানিয়ে রাজি হয়নি দুর্নীতি দমন কমিশন।
পরে বিশ্বব্যাংক কানাডার আদালতে এসএনসি লাভালিনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে, যে মামলার রায় প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালে।
অভিযোগের পক্ষে কানাডার আদালতে বিশ্বব্যাংক কোনো তথ্যপ্রমাণ দিতে না পারার পর বিচারক আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাটির প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে এই অভিযোগকে ‘গালগপ্প’ আখ্যা দেয়।
এর পরও পেরিয়ে গেছে আরও পাঁচটি বছর। সেতুর সব কাজ শেষে ঠিক এক মাস পর উদ্বোধনের তারিখ যখন ঘোষণা হয়েছে, তখন আওয়ামী লীগের আক্রমণের মুখে বিএনপি।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহ্মুদ এমনও বলেছেন, বিএনপি ক্ষমা চেয়ে এই সেতুতে উঠতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী যা বলেছিলেন
গত ১৮ মে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের দলীয় এক আলোচনায় শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক যেন সরে যায়, সে জন্য ড. ইউনূস, ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক নানা সক্রিয় চেষ্টা চালিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, এই সেতু ভেঙে পড়ে যাবে- এই ধরনের বক্তব্য রাখায় খালেদা জিয়ার প্রতিও ক্ষোভ জানান শেখ হাসিনা।
নানা বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি পদ্মা সেতুবিরোধীদের সেতুতে নিয়ে চোবানোর কথা বলেন।
খালেদা জিয়ার উক্তি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বলেছে, স্প্যানগুলো যে বসাচ্ছে, সেটা ছিল তার কাছে জোড়াতালি দেয়া। পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, তাতে চড়া যাবে না, চড়লে সেটা ভেঙে যাবে। তার সঙ্গে ছিল তার কিছু দোসররা। তাদের কী করা উচিত? পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে পদ্মা নদীতে টুস করে ফেলে দেয়া উচিত।’
ড. ইউনূসের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যিনি (ড. ইউনূস) এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর মতো টাকা বন্ধ করেছেন, তাকেও আবার পদ্মা নদীতে নিয়ে দুটি চুবানি দিয়ে উঠিয়ে নেয়া উচিত, মরে যাতে না যায়। পদ্মা নদীতে দুটি চুবানি দিয়ে সেতুতে উঠিয়া নেয়া উচিত। তাহলে যদি এদের শিক্ষা হয়।’
পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়ার পেছনে ড. ইউনূস ছাড়াও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের ভূমিকা ছিল বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘প্রতিহিংসা নেয় ড. ইউনূস এবং যেটা আমরা শুনেছি মাহফুজ আনাম। তারা আমেরিকায় চলে যায়, স্টেট ডিপার্টমেন্টে যায়। হিলারির কাছে ই-মেইল পাঠায়। বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মিস্টার জোয়েলিক তার শেষ কর্মদিবসে কোনো বোর্ডসভায় না, পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেন।’
পরদিন মাহফুজ আনাম তার পত্রিকা দ্য ডেইলি স্টারে এক ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, আমি এ ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে কখনও যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাইনি, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাইনি, কখনও হিলারি ক্লিনটনকে কোনো ই-মেইল পাঠাইনি, ওয়াশিংটনে বা বিশ্বের অন্য কোনো জায়গায় বা শহরে পদ্মা সেতুর অর্থায়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত কোনো বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোনো ধরনের বৈঠক বা যোগাযোগ করিনি।
‘বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, আমার বিষয়ে করা মন্তব্য তথ্যভিত্তিক নয়।’
আরও পড়ুন:লিবিয়ার ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার হওয়া ১৬০ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরছেন বৃহস্পতিবার সকালে।
এরই মধ্যে তারা দেশের পথে রয়েছেন বলে এক বার্তায় জানিয়েছে লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস।
বার্তায় বলা হয়, দূতাবাসের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার পর লিবিয়ার ডিটেনশন সেন্টারে আটক ব্যক্তিদের মধ্য থেকে ১৬০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহায়তায় দেশে পাঠানো সম্ভব হয়েছে।
অবশিষ্ট বাংলাদেশিদেরও দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশে প্রত্যাবাসন করার জন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে বার্তায় বলা হয়।
আইওএমের ভাড়া করা লিবিয়ার বুরাক এয়ারের একটি ফ্লাইট স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল পৌনে ৪টায় ঢাকার উদ্দেশে উড্ডয়ন করেছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৬টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
দূতাবাস আরও জানায়, রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল এস এম শামিম উজ জামান মেতিগা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রত্যাবর্তনকারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের বিদায় জানান।
ওই সময় তিনি ফ্লাইটটি যথাসময়ে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য লিবিয়ার অভিবাসন অধিদপ্তর ও মেতিগা বিমানবন্দরসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ এবং আইওএমকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
এর আগে দূতাবাসের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের পর লিবিয়ার ডিটেনশন সেন্টারে আটক বাংলাদেশিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হয় এবং তাদের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ডাকাত আখ্যা দিয়ে সাদা পোশাকে থাকা র্যাব সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা পরিকল্পিত বলে মনে করছেন র্যাব কর্মকর্তারা। অভিযানের তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় এমন হামলা হয়েছে বলে দাবি করেছে র্যাব।
মিরসরাই উপজেলার বারৈয়ারহাট পৌরসভা এলাকায় বুধবার সন্ধ্যায় এ হামলায় তিন জন আহত হয়েছেন। তারা হলেন, র্যাব সদস্য শামীম কাউসার ও মোখলেসুর রহমান। আহত মো. পারভেজ হাসপাতালে নিজেকে সোর্স হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
র্যাব-৭ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নুরুল আবছার জানান, আহতদের প্রথমে বারইয়ারহাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় ফেনী জেনারেল হাসপাতালে। গুরুতর আহত দুইজনকে রাতে ঢাকায় পাঠানো হয়।
এদিকে হামলার বিষয়ে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুইজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীকে ধরতে আমাদের অভিযানের পরিকল্পনা ছিল। র্যাবের এই অভিযানের তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। মাদক কারবারিরা জানতেন যে র্যাব সদস্যরা রেকি করতে আসবে।
‘তারা আগে থেকেই হামলার পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন, শুধু জনগন পেটালে খালি হাতেই মারতেন। আহতদের ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি।’
দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানান এ র্যাব কর্মকর্তা।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ‘দুই মাদক ব্যবসায়ীর গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পেতে র্যাবের দুই সদস্য সন্ধ্যায় রেকি শুরু করেন। র্যাব সদস্যরা একটি প্রাইভেটকারে সিভিল পোশাকে ছিলেন। দুই মাদক কারবারি র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে দৌড়াতে শুরু করেন। র্যাব সদস্যরা তাদের পিছু নেন।
‘একটি মার্কেটে ঢুকতে ঢুকতে মাদক কারবারিরা ডাকাত, ডাকাত বলে চিৎকার শুরু করেন। এতে মুহুর্তেই অনেক মানুষ জড়ো হয়ে যায়। র্যাবের দুই সদস্যকে তারা পেটাতে শুরু করে। পিটুনির মাঝেই তাদের ছুরিকাঘাত করা হয়। এতে তারা গুরুতর আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। সেখানে তাদের অস্ত্রোপচার চলছে।’
জোরারগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খাইরুল আলম ঘটনার বিস্তারিত জানাতে না পারলেও রাতে বলেন, ‘মাগরিবের পরপরই হামলার ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসেছেন। এখনই বিস্তারিত জানানো যাচ্ছে না।’
আরও পড়ুন:বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিপদে রয়েছে। করোনা পরবর্তী বড় ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়ালেও ছোটদের বেশিরভাগের অবস্থারই খুব একটা উন্নতি হয়নি। উচ্চহারে ভ্যাট, মূলধন সংকটসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তারা।
এই পরিস্থিতিতে ছোট ব্যবসায়ীদের স্বস্তি দিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সুখবর দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ক্ষুদ্র পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের ওপর মূল্য সংযোজন করের চাপ কমানো হচ্ছে।
বর্তমানে খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ। এ খাতে যে পরিমাণ বিক্রি বা লেনদেন হয় তার বিপরীতে উল্লেখিত হারে ভ্যাট দিতে হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন বাজেটে এই হার কমিয়ে দেড় শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে।
প্রস্তাবিত হার কার্যকর করা হলে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা খাতে করের চাপ কমবে এবং পণ্য ও সেবা সস্তা হবে। এতে উপকৃত হবেন ভোক্তা।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মনে করেন, পাঁচ শতাংশ ভ্যাট তাদের জন্য অনেক বেশি। এই হারে ভ্যাট দিতে হলে তাদের ব্যবসায় কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ ‘মূল্য সংযোজন’ করতে হয়।
কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় এ খাতে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন হয়। কাজেই, নিট বা প্রকৃত মূল্য সংযোজন যা হয়, তার উপর ভিত্তি করেই এ খাত থেকে ভ্যাট আদায় করা উচিত।
নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনো ব্যবসায় যে পরিমাণ ‘মূল্য সংযোজন’ হয়, তার উপর ভিত্তি করে প্রযোজ্য হারে ভ্যাট আদায় করে সরকার। মাসিক রিটার্নের সময় এই ভ্যাট পরিশোধ করা হয়।
এনবিআরের সাবেক সদস্য রেজাউল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছোট ব্যবসায়ীদের মূল সমস্যা হচ্ছে তারা যে লেনদেন করে থাকে, তার জন্য কোনো হিসাব সংরক্ষণ করে না। যে কারণে সরকার থেকে রেয়াত বা ভ্যাট ফেরত পায় না। যদি এটা করা সম্ভব হতো তা হলে ভ্যাটের চাপ কমে যেত।’
তিনি বলেন, ‘এ খাত থেকে ভ্যাট আদায় বাড়াতে হলে যোগ্য সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে আওতায় এনে অটোমেশন করতে হবে। তা হলে আদায় বর্তমানের চেয়ে বহুগুণ বাড়বে।’
তবে কাজটি অত্যন্ত জটিল বলে মনে করেন তিনি।
খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে এ খাতের অংশ চলতি মূল্যে সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকা, যা শতকরা হারে ১৫ শতাংশ।
জিডিপির প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে পাঁচটি খাত প্রধান চালিকাশক্তি। এর মধ্যে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা অন্যতম। উৎপাদন বা ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের পরই এ খাতের অবস্থান।
এ খাতে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট আহরণের সম্ভাবনা থাকলেও বাস্তবতা হচ্ছে নামমাত্র ভ্যাট আসে। বছর শেষে বর্তমানে এ খাত থেকে সরকারি কোষাগারে জমা পড়ে দেড় হাজার কোটি টাকা। অথচ আদায়ের সম্ভাবনা আছে ৫০ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরের তথ্যানুযায়ী, খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায় আদায়যোগ্য ভ্যাটের ৯০ শতাংশই ফাঁকি হয়।
এর প্রধান কারণ দুটি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। প্রথমত বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই আওতার বাইরে। দ্বিতীয়ত, অটোমেশন না করা।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্যানুযায়ী, সারা দেশে প্রায় ৪০ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। এনবিআর বলেছে, এখন পর্যন্ত দুই লাখ প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘২০১৯ সালের ভ্যাট আইন অনুযায়ী ভোক্তার কাছ থেকে সরাসরি ভ্যাট আহরণ করবে খুচরা ও পাইকারি প্রতিষ্ঠান। এ জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস বা ইএফডি যন্ত্র বসানোর কথা। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এখন পর্যন্ত অল্পসংখ্যক প্রতিষ্ঠানে তা স্থাপন করতে পেরেছে। ফলে ভ্যাট আদায় নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
‘যতদিন পর্যন্ত রাজস্ব বোর্ড সব দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন স্থাপন করতে না পারে, তত দিন পর্যন্ত খুচরা ও পাইকারি থেকে ভ্যাট আদায় বাড়বে না।’
আরও পড়ুন:সাকিব আল হাসানের দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে ‘কমোডিটি এক্সচেঞ্জ’ শব্দটি বাদ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি।
বিভ্রান্তি এড়াতে প্রতিষ্ঠান দুটি থেকে এই শব্দটি বাদ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন।
প্রতিষ্ঠান দুটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে কমিশনের সুপারভিশন অ্যান্ড রেগুলেশন অফ মার্কেটস অ্যান্ড ইস্যুয়ার কোম্পানিজের (এসআরএমআইসি) অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলামের সই করা এক চিঠিতে বুধবার এ পরামর্শ দেয়া হয়।
‘রিলায়েবল কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি এবং ‘বুরাক কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি’ নামে দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক তারকা ক্রিকেটার সাকিব।
প্রতিষ্ঠান দুটির এমডি বরাবর তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানাতে গত ১৬ মে চিঠি দিয়েছিল বিএসইসি। চিঠির জবাব দেয়া হয় ২২ মে।
সাবিকের প্রতিষ্ঠান দুটির প্রতিক্রিয়া সন্তুষ্ট হয়েছে বিএসইসি। বুধবার বিএসইসি তাদের নতুন চিঠিতে জানায়, কমিশন আপনাদের চিঠি পেয়ে এবং আপনাদের প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে জানতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করছে। তবে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কমোডিটি ভবিষ্যত চুক্তি (স্পট ব্যতীত) বা ব্যবসা করতে হলে কমিশনের অনুমোদন প্রয়োজন।
“বিভ্রান্তি এড়াতে আপনাদের কোম্পানি দুটির নাম থেকে ‘কমোডিটি এক্সচেঞ্জ’ শব্দটি বাদ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।”
খেলার পাশাপাশি নানা ধরনের ব্যবসায় নেমে আলোচিত সাকিব আল হাসান। সবশেষ স্বর্ণের ব্যবসায় নামেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।
এই আলোচনার মধ্যেই সাকিবের মালিকানাধীন স্বর্ণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ওই দুটি কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে জানতে চেয়েছিল বিএসইসি।
‘অনুমোদন না নিয়ে ব্যবসা করায় সাকিবের প্রতিষ্ঠানকে শোকজ’, ‘অনুমতি ছাড়াই সোনার ব্যবসা, সাকিবের কাছে ব্যাখ্যা চাইল বিএসইসি’- এমন নানা শিরোনামে সংবাদমাধ্যমে খবর ছাপানো হয়।
এ বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদগত নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘বিষয়টা আসলে সে রকম কিছু নয়। সাকিবের দুই প্রতিষ্ঠানকে কোনো ধরনের শোকজ করা হয়নি, ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়নি। প্রতিষ্ঠান দুটির নামের সঙ্গে যেহেতু এক্সচেঞ্জ কোম্পানি আছে, সে কারণে কয়েক দিন আগে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) থেকে আমাদের কাছে প্রতিষ্ঠান দুটি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল।
‘সিএসই-র অনুরোধে আমরা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠান দুটির কাছে তাদের ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। তারা কী ব্যবসা করছে, সে বিষয়টিই আসলে জানতে চাওয়া হয়েছে। অন্য কিছু নয়।’
শামসুদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, ‘কেউ ব্যবসা করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখলে তো দোষের কিছু নেই। প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে যেহেতু এক্সচেঞ্জ কোম্পানি আছে, সে কারণেই জানতে চাওয়া হয়েছে আরকি। দেশে কতজনই তো ব্যবসা করছে; সাকিব করলে সমস্যা কী?’
১৬ মে সাকিবের দুই প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠানো বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ৮ (৪) অনুযায়ী, সদস্যভুক্ত কোনো ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোনো সিকিউরিটিজের জন্য ব্রোকার বা ডিলার হিসেবে কাজ করবে না।
এ পরিস্থিতিতে কমিশনের অনুমোদন ছাড়া বা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য না হয়েও কমোডিটি ফিউচার কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে ব্যবসা করার প্রস্তাব দেয়ার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য জানতে চায় কমিশন।
২৫ মের মধ্যে প্রতিষ্ঠান দুটিকে এ বিষয়ে জানাতে বলা হয় চিঠিতে। চিঠির অনুলিপি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ও বাণিজ্য সচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকেও দেয়া হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘কমোডিটি ফিউচার কন্ট্রাক্ট সংক্রান্ত বিষয়ে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ২ (সিসিসি) অনুযায়ী, কমোডিটি এক্সচেঞ্জে নগদ বা অফসেট কমিশনের সঙ্গে যথাযথভাবে নিবন্ধিত।
‘কমোডিটি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষি, পশুসম্পদ, মৎস্য, বনজ, খনিজ বা এনার্জি দ্রব্য এবং এই জাতীয় পণ্য থেকে তৈরি বা প্রক্রিয়াজাত দ্রব্যাদি। এ ছাড়া কমিশন কর্তৃক সরকারি গেজেটের মাধ্যমে অবহিত করা যেকোনো পণ্য বা দ্রব্যাদি হতে পারে। আর সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ২ (১) (৩) অনুসারে, কমোডিটি ফিউচার কন্ট্রাক্টকে নিরাপত্তা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।’
গত ২২ এপ্রিল রাজধানীর বনানীতে নিজের স্বর্ণ ব্যবসার শোরুম উদ্বোধন করেন সাকিব। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ডিলার হিসেবে অনুমোদন পায় সাকিবের বুরাক কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি। রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি রংপুর ও কুমিল্লায় অফিস রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
বিদেশ থেকে সোনার বার ও অলঙ্কার আমদানি করে সম্প্রতি বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
হোটেল, রেস্তোরাঁ, ট্রাভেল এজেন্সি, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, কাঁকড়াসহ নানা ব্যবসায় জড়িত ৩৫ বছরের সাকিব।
বাবা ব্যাংকার। তাই হয়তো এই ব্যবসায় নামতে চেয়েছিলেন সাকিব। চেয়েছিলেন পিপলস ব্যাংকে নামে একটি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক হতে। এ বিষয়ে গত ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন সাকিব।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া সময় ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কোম্পানি গঠন ও পেইড-আপ ক্যাপিটাল সংগ্রহে ব্যর্থ হওয়ায়, এ পর্যন্ত পিপলস ব্যাংকের অনুমোদন মেলেনি।
২৫ মে-র বিএসইসি’র চিঠির অনুলিপি অর্থ সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ও বাণিজ্য সচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকেও দেয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ডাকা দুদিনের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পরিবর্তন এসেছে। শুধু বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ সমাবেশ করবে সংগঠনটি।
ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক সোহেল সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার এই তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৭ মে সারা দেশে বিসিএস পরীক্ষা হবে। ছাত্রদের স্বার্থ রক্ষা ও তাদের কল্যাণ কামনায় সেদিনের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। ছাত্রদের স্বার্থ সংরক্ষণের আন্দোলনে ছাত্রদল সদা সরব।
শুক্রবারের স্থগিত কর্মসূচির পরিবর্তিত তারিখ পরে জানিয়ে দেয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
ঘোষিত দুদিনের কর্মসূচির প্রথম দিনে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে ছাত্রদল।
ছাত্রলীগের হামলায় নেতাকর্মী জখমের প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুদিনের বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন জানান, ২৬ মে সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়) বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। পরদিন একই কর্মসূচি পালন হবে জেলা ও মহানগরে।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলায় ছাত্রদলের নারী নেত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ৮০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেকের শারীরিক অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। ক্যাম্পাসে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালনের সময় হকিস্টিক, রড, রামদা, চাপাতি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এই হামলা চালায়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য