মাসরুর আরেফিন আরও তিন বছর সিটি ব্যাংকে নেতৃত্ব দেবেন।
মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বেসরকারি এই ব্যাংকটি জানিয়েছে, মাসরুর আরেফিন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও পদে পুনর্নিয়োগ পেয়েছেন। সম্প্রতি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনের পরে বাংলাদেশ ব্যাংক পরবর্তী তিন বছরের জন্য তার পুনর্নিয়োগে অনুমতি প্রদান করেছে।
মাসরুর আরেফিন ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে সিটি ব্যাংকের এমডি ও সিইও হিসেবে প্রথমবারের মতো দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। গত তিন বছরে তিনি ব্যাংকটিকে ভিন্নতর উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
এই সময়কালে ব্যাংকটির বার্ষিক আয় ৩৫ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করে এবং পরিচালন মুনাফা ৬১ শতাংশ বেড়ে ১০০০ কোটি টাকা মুনাফার সম্মানজনক ক্লাবে প্রবেশ করে।
একই সঙ্গে গত তিন বছরে ব্যাংকটির আয় ও ব্যয়ের অনুপাত ৫৯ শতাংশ থেকে ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ নেমে আসে এবং বৈদেশিক বাণিজ্য বার্ষিক ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার থেকে ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়।
‘তার নেতৃত্বে সিটি ব্যাংক মূলত আর্থিক অন্তর্ভুক্তির এজেন্ডা মাথায় নিয়ে একটি শহরভিত্তিক ব্যাংক থেকে সমগ্র দেশের আপামর জনমানুষের জন্য ডিজিটাল ব্যাংক হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি ব্যাংকে ডিজিটাল ন্যানো লোন এবং প্রথাগত ক্ষুদ্র ও মাইক্রো ফাইন্যান্সের সূচনা করেন,’ বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
মাসরুর আরেফিন এএনজেড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকে ১৯৯৫ সালে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে যোগদান করেন। ২৭ বছরের কর্মজীবনে তিনি এএনজেড ব্যাংক মেলবোর্ন, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক কাতার, সিটি ব্যাংক এনএ, আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক এবং ইস্টার্ন ব্যাংকে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন।
মাসরুর আরেফিন তার ব্যাংকার পরিচয়ের পাশাপাশি একজন ঔপন্যাসিক, কবি ও অনুবাদক হিসেবেও পরিচিত।
আরও পড়ুন:প্রতিবারের মতো এবারও অর্থবছরের শেষ দিকে এসে প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে দেদার ঋণ নিচ্ছে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সরকার ব্যাংক থেকে মোট ৩২ হাজার ৪৮৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। এরমধ্যে বাণিজ্যক ব্যাংকগুলো থেকে নিয়েছে ২৫ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়েছে ৭ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে নিয়েছিল মাত্র ৬ হাজার ৪০২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে এই দশ মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে পাঁচ গুণের বেশি।
২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হতে আর ১ মাস ১ সপ্তাহ বাকি। আগামী ৩০ জুন শেষ হবে এই আর্থিক বছর। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন ২০২২-২৩ অর্থবছর।
প্রতিবারের মতো এবারও অর্থবছরের শেষ দিকে এসে প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বাড়ছে। সাধারণত বছরের শেষ দিকে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের গতি বেড়ে যায়। তড়িঘড়ি করে কাজ করার কারণে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে দীর্ঘদিন ধরে। সরকারের মন্ত্রী ও অর্থনীতিবিদরা বার বার এই প্রশ্ন তুলে অর্থবছরের শুরু থেকেই এডিপি’র কাজে গতি বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি; সেই পুরনো ধাচেই চলছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের গতি।
এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা সেই পুরনো সমস্যা। অর্থবছরের শেষ দিকে এসে তাড়াতাড়ি প্রকল্প শেষ করার তাগাদা থাকে। সে কারণে এ সব প্রকল্পে দ্রুত অর্থ ছাড় করতে হয়। অন্যদিকে আগে শেষ হওয়া প্রকল্পের কাজের পুরো বিল বছরের মধ্যেই ঠিকাদারদের শোধ করতে হয়। সে কারণে সরকারের খচর হঠাৎ করে বেড়ে যায়। সেই ব্যয় মেটাতেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয় সরকারকে।’
তিনি বলেন, ‘অন্যান্যবারের চেয়ে এবার অর্থবছরের শেষ দিকে এসে ব্যাংক থেকে একটু বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে; কারণ সুদের হার কমানোয় ও নানা কড়াকড়ি আরোপের কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে গেছে। সেখান থেকে আর আগের মতো ঋণ পাচ্ছে না সরকার; পুরোপুরি নির্ভর করতে হচ্ছে ব্যাংক ব্যবস্থার উপর।’
তবে করোনা অতিমারি মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতাদেশ ও সংস্থার কাছ থেকে বিপুল অংকের ঋণ সহায়তা সরকারকে আর্থিক সংকটে পড়তে হয়নি বলে জানান মির্জ্জা আজিজুল ইসলঅম।
অর্থবছরের শেষ দিকে এসে প্রকল্পের কাজের গতি বাড়ার কথা স্বীকার করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, পুরো বছরজুড়েই প্রকল্পের কাজের গতি একইভাবে চালানোর। কিন্তু সীমাবদ্ধতার কারণে সেটা পুরোপুরি সম্ভব হয়ে উঠছে না। আশা করছি, আগামীতে এ থেকে আমরা পরিত্রাণ পাবো।’
‘তবে এবার বোধ হয় সমস্যা একটু কম হবে। কেননা, সরকারের ব্যয় সংকোচনের ধারাবাহিকতায় অতি প্রয়োজন ছাড়া অন্য প্রকল্পগুলোর কাজ আমরা আপতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশেষ করে আমদানিনির্ভর প্রকল্পগুলোর কাজ একেবারেই বন্ধ রাখা হচ্ছে। তাই ব্যয়টা একটু কমবে; ব্যাংক থেকে ঋণও বোধ হয় কম দিতে হবে।’
ঘাটতি মেটাতে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা আছে। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি এবং ধারণার চেয়ে বেশি বিদেশি ঋণ সহায়তা পাওয়ায় খরচ মেটাতে এতদিন ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ করার প্রয়োজন হয়নি; লক্ষ্যের অনেক নিচে ছিল।
অর্থবছরের দশ মাসে অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৩২ হাজার ৪৮৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা নিয়েছে সরকার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই ঋণের অংক ছিল অনেক কম, ৬ হাজার ৪০২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, এই অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর বিদেশি ঋণসহায়তা বেড়েছে ৫৫ দশমিক ১৬ শতাংশ।
সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কমানোয় সফল সরকার
সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কমানোর কৌশলে সফল হয়েছে সরকার। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে এই খাত থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। এরমধ্যে নয় মাসে অর্থাৎ জুলাই-মার্চ সময়ে নিয়েছে ১৬ হাজার ৫০৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
এই অংক ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে অর্ধেকেরও কম। গত অর্থবছরে এই নয় মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৩ হাজার ২০২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ঋণ নিয়েছিল সরকার।
২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৪২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার। মূল বাজেটে এ খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ধার করার লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। বিক্রি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সংশোধিত বাজটে সেই লক্ষ্য বাড়িয়ে ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা করা হয়।
তবে বছর শেষে দেখা যায়, সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে মূল বাজেটের দ্বিগুণেরও বেশি ঋণ নিয়েছে। সংশোধিত বাজেটের চেয়ে বেশি নিয়েছে ৩২ শতাংশ। আর আগের অর্থবছরের চেয়ে বেশি নিয়েছে প্রায় তিন গুণ।
ব্যাংকের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার অনেক বেশি। সে কারণে বিক্রির লাগাম টেনে ধরতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করে সরকার। একই সঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়।
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়। তারপরও বাড়তে থাকে বিক্রি।
সবশেষ সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সে জন্য বিক্রি কমাতে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। তারপর থেকেই বিক্রিতে ভাটা পড়ে।
অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত অর্থবছরে মোট ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৭০ হাজার ২২৯ কোটি টাকা গ্রাহকদের পরিশোধ করা হয়। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা।
এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছরে, ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সে জন্য গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমিয়ে দেয় সরকার।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক রকম সুদের হার, ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক রকম হার এবং ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরেক রকম হার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
তবে ১৫ লাখ টাকার নিচে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হারে সরকার হাত দেয়নি। অর্থাৎ আগে যে হারে সুদ পাওয়া যেত, এখনও সেই হারে পাওয়া যাবে।
এর আগে ২০১৫ সালে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার গড়ে ২ শতাংশের মতো কমিয়েছিল সরকার।
আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’বা ‘ধার’হিসেবে গণ্য করা হয়।
আরও পড়ুন:কাঁঠালবাগানের দাওয়াত-ই ঢাকা রেস্টুরেন্ট। এতদিন এই দোকানে পরোটার দাম ছিল ৫ টাকা। আশপাশের দোকান থেকে দাম কিছুটা কম বলে এ রেস্টুরেন্টে সব সময়ই লেগে থাকত ভিড়। কিন্তু ময়দার দাম বাড়ায় এক লাফে আরও ৫ টাকা বেড়ে এখন নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টাকা।
দোকানি সোহেল মিয়া বলেন, ‘৫ টাকায় বিক্রি করে পোষাচ্ছিল না। এ জন্য পরোটার সাইজ একটু বড় করে ১০ টাকা করা হয়েছে।’
আটা ও ময়দা দিয়ে তৈরি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। রুটি, বেকারি পণ্য, নুডলস থেকে শুরু করে ফাস্টফুডের সব আইটেমের দাম ধীরে ধীরে সবাই বাড়িয়ে দিচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ চা দোকানে এসব পণ্যের দাম ধীরে ধীরে বাড়ানো হচ্ছে। অনেক হোটেল তাদের খাবারের তালিকায় পণ্যের আগের দাম কেটে নতুন দাম টানিয়েছে।
আগে যে পরোটা বিক্রি হতো ৫ টাকায়, তা এখন ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১০ টাকার পাতলা নানরুটি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। স্পেশাল নানরুটি আগে দাম ছিল ২০ টাকা। এখন ৫ টাকা বাড়িয়ে ২৫ টাকা করা হয়েছে।
কোনো কোনো জায়গায় স্পেশাল নানরুটি আগে ১৫ টাকা ছিল, এখন ২৫ টাকা করা হয়েছে।
বেকারির যে বিস্কুট ২০০-২৫০ টাকা কেজি ছিল, সেটা এখন ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট আকারের বনরুটি বা পাউরুটি আগে চায়ের দোকানে ১০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন সেটা ১২-১৫ টাকা করা হয়েছে।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ছোট পাউরুটি ১৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা। মাঝারি আকারের পাউরুটি ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪০ টাকা। ৫০ টাকার পাউরুটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।
টোস্টের ৫০ টাকার প্যাকেট হয়েছে ৭০ টাকা। প্রতি প্যাকেট বিস্কুটের দাম আকারভেদে ৫-১০ টাকা বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকে গম আমদানি বন্ধ থাকায় আটা-ময়দার দাম বাড়ছে।
সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ বাজারে গমের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাময়িকভাবে পণ্যটি রপ্তানি বন্ধের কথা জানিয়েছিল ভারত। এরপর হু হু করে বাড়তে থাকে গমজাতীয় পণ্যের দাম।
কিন্তু ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গমের যেসব চালান পরীক্ষার জন্য কাস্টমসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং ১৩ মে বা এর আগে তাদের কাছে নিবন্ধিত হয়েছে, এ ধরনের চালানগুলো রপ্তানির অনুমতি দেয়া হবে। কিন্তু বাজারে সেটার প্রভাব দেখা যায়নি।
রাজধানীর শেওড়াপাড়া, কাঁঠালবাগানের বিভিন্ন খুচরা বাজারে দেখা গেছে, প্রতি কেজি খোলা সাদা আটা ৪৬-৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, আর প্যাকেট আটা ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেট আটা দুই কেজি আগে ৭০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন সেটা ৯৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খোলা ময়দা ৫৮-৬০ টাকা ও প্যাকেট ময়দা ৬৫-৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেট ময়দা দুই কেজির দর ছিল ৯৮ টাকা। সেটা কিনতে এখন ১৩৬ টাকা গুনতে হচ্ছে।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি) বাজারদরের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি খোলা আটার দাম ৩১ দশমিক ৫১ শতাংশ, প্যাকেট আটার দাম ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
পাশাপাশি খোলা ময়দার দাম ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ ও প্যাকেট ময়দার দাম ১৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়েছে।
প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, এক বছর আগে দেশের বাজারে প্রতি কেজি খোলা আটা ৩০-৩২ টাকা, প্যাকেট আটা ৩২-৩৫ টাকা, খোলা ময়দা ৩৫-৩৬ টাকা ও প্যাকেট ময়দা ৪২-৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি আটা-ময়দায় ১৬ থেকে ২৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
২০২১ সালের নভেম্বর থেকে বিশ্ববাজারে গমের দাম বাড়তে থাকে। সেপ্টেম্বরে প্রতি টনের দাম ছিল ২৬৪ ডলার। নভেম্বরে তা বেড়ে হয় ৩৩৫ ডলার।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তা আরও বেড়ে যায়। দাম হয় ৫৩৩ ডলার। এপ্রিলে তা আরও বেড়ে হয় ৬৭৩ ডলার। বর্তমানে সেটা আরও বেড়ে ১ হাজার ১৭৮ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি গম আমদানি করা হয় রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে এ দুটি দেশ থেকে গম আমদানি করা হয় ৬৩ শতাংশ। কানাডা থেকে ১৮ শতাংশ ও বাকিটা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা হয়।
২০২০-২১ অর্থবছরে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম আমদানির পরিমাণ ৪৫ শতাংশ। এ ছাড়া কানাডা থেকে ২৩ ও ভারত থেকে ১৭ শতাংশ আমদানি করা হয়।
আরও পড়ুন:অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছাল। এখন এক ভরি সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণ কিনতে হাতে গুনে ৮২ হাজার ৪৬৬ টাকা দিতে হবে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই মূল্যবান এ ধাতুটি এত দামে বিক্রি হয়নি।
রোববার থেকে নতুন দর কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি- বাজুস।
আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম এবং বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগারওয়ালা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ৮ মার্চ দেশের বাজারে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৭৯ হাজার ৩১৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস। তার চার দিন আগে ৪ মার্চ বাড়ানো হয়েছিল ভরিতে ৩ হাজার ২৬৫ টাকা।
এরপর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমতে শুরু করায় গত ১৫ মার্চ দেশের বাজারে ভরিতে ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। ২১ মার্চ কমানো হয় ভরিতে আরও ১ হাজার ৫০ টাকা।
কিন্তু বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় গত ১১ এপ্রিল সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ৮৪৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস।
এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় ২৫ এপ্রিল প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানো হয়। সর্বশেষ ১০ মে একই পরিমাণ কমানো হয়েছিল।
দুই দফায় ভরিতে ২ হাজার ৩৩২ টাকা কমানোর পর ১৭ মে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাজুস, ১৮ মে থেকে যা কার্যকর হয়।
মাত্র চার দিনের ব্যবধানে সেই স্বর্ণের দাম এক ধাক্কায় ভরিতে ৪ হাজার ১৯৯ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে বাজুস।
বাজুসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে মার্কিন ডলার ও অন্যান্য মুদ্রার দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজার ও স্থানীয় বুলিয়ন মার্কেটেও স্বর্ণের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণসংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে। রোববার থেকে এই নতুন দর কার্যকর হবে।
দাম বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগারওয়ালা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মুহূর্তে গোল্ডের দাম ওঠানামা করছে। এই বাড়ছে তো ওই কমছে। গত এক সপ্তাহে দাম খানিকটা বেড়েছে। একই সঙ্গে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে বেশ খানিকটা। সে কারণে সবকিছু হিসাব করে আমরাও গোল্ডের দাম বাড়িয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতি মুহূর্তে বাজার পর্যবেক্ষণ করি। এখন বিশ্ববাজারে দাম বাড়ছে; আমরাও বাড়িয়েছি। দেশে স্বর্ণের দাম বাড়া বা কমা নির্ভর করে আসলে বিশ্ববাজারের ওপর।’
‘তবে এবার গোল্ডের দাম বাড়ানো হয়েছে মূলত মার্কিন ডলারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে। ডলারের পাশাপাশি অন্যান্য মুদ্রার দামও বেশ বেড়েছে। এ কারণে গোল্ডের আমদানি খরচ অনেক বেড়ে গেছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে দাম বাড়ানো হয়েছে,’ বলেন দেশের অন্যতম শীর্ষ স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আগারওয়ালা।’
‘বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম নিম্নমুখী হলে এবং ডলারের দাম কমলে আমরাও আমাদের স্থানীয় বাজারে গোল্ডের দাম কমিয়ে আনব।’
বিশ্ববাজারে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম, ২.৬৫ ভরি) স্বর্ণের দাম ছিল ১ হাজার ৮৪৬ ডলার ৫৩ সেন্ট। সর্বশেষ ১৭ মে যখন স্বর্ণের দাম কমানো হয়, তখন প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১ হাজার ৮৩২ ডলার ৪২ সেন্ট।
চলতি মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এই দর কমতে কমতে ১ হাজার ৮০০ ডলারে নেমে এসেছিল।
মার্চের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বাড়তে বাড়তে ২ হাজার ৬০ ডলারে উঠেছিল।
রোববার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ কিনতে লাগবে ৮৪ হাজার ৪৬৬ টাকা। শনিবার পর্যন্ত এই মানের স্বর্ণ ৭৮ হাজার ২৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কমেছে ৪ হাজার ১৯৯ টাকা।
২১ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ভরিতে ৪ হাজার ২৮ টাকা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ৭৩২ টাকা করা হয়েছে। গত চার দিন ৭৪ হাজার ৭০৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে এই মানের স্বর্ণ।
১৮ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬৭ হাজার ৫৩৫ টাকা। শনিবার পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম ২ হাজার ৮৫৮ টাকা বাড়িয়ে ৫৬ হাজার ২২০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাজুস। চার দিন ধরে ৫৩ হাজার ৩৬৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে এক ভরি।
তবে রুপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আগের দামেই বিক্রি হবে এই ধাতু।
আরও পড়ুন:এই মুহূর্তে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য না বাড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
শনিবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই মিলনায়তনে সংগঠনটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি।
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বৈশ্বিক অন্তরীণ পরিস্থিতিতে চরম অসময় যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সময় এটা নয়। যে চেষ্টা হচ্ছে, সেটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার শামিল।
‘সময় থাকতে সরকারকে তা বুঝতে হবে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়লে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়বে। এর প্রভাব পড়বে জনজীবনের ওপর। এটা চলতে থাকলে দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তার দায়ভার তখন সরকারকে নিতে হবে।’
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘এরপরও যদি দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়, তাহলে সেটি ব্যবসায়ীদের ওপর না চাপিয়ে বিদ্যুৎ খাতের তহবিল থেকে ভর্তুকির মাধ্যমে সমন্বয় করা হোক।’
তিনি বলেন, ‘এই দুঃসময়ে পাইকারি পর্যায়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে বহুমাত্রিক মূল্যস্ফীতি উস্কে দিয়ে এর বহুমুখী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার উদ্ভব হবে দেশে। ফলে কৃষি শিল্প সেবা এবং সার্বিকভাবে সাধারণের জীবন ও জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি করবে। সর্বোপরি অর্থনৈতিক উন্নয়নের চলমান ধারা মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে।
‘দেশ এখন স্বল্প উন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করেছে। ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) নিয়ে কাজ করছে সরকার। এই উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ এবং এসডিজির লক্ষ্য বাস্তবায়নে ব্যবসায়ীদের সর্বাগ্রে ভূমিকা রাখতে হবে।’
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘এসডিজি ৭ অনুযায়ী ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ এবং জনগণের জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে
সবার জন্য সুলভ উন্নত নিরবিচ্ছিন্ন এবং টেকসই জ্বালানি ও বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। কিন্তু জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বার্ক) আইনের বিধান অনুযায়ী স্বচ্ছতা, মানসম্মত দক্ষতা ও জবাবদিহিতা সহকারে সুচারুভাবে পরিচালিত হচ্ছে না।
‘বরং এই খাতে সর্বত্র অদক্ষতা, যথেচ্ছ অনিয়ম, অস্বচ্ছতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এবং আইনের বিপরীতে পরিচালিত হচ্ছে। এ অবস্থায় সমগ্র বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবস্থার আমূল সংস্কার না করে এ খাতে বিরাজমান অব্যবস্থাপনার অহেতুক দায়ভার জাতীয় অর্থনীতি এবং জনগণের জীবন ও জীবিকা নির্বাহের সকল ক্ষেত্রে সংক্রমিত করা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না।’
তবে করোনার সংকট ময় পরিস্থিতি প্রশমিত হলে এবং ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি বন্ধ হওয়ার পর দাম বাড়ানোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ব্যবসায়ীদের সেক্ষেত্রে আপত্তি থাকবে না বলেও দাবি করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কুইক রেন্টালের এক সময় প্রয়োজনীতা ছিল। এখন আর তার প্রয়োজনীয়তা নেই। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করা উচিত। অদক্ষ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা উচিত। গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলো অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে। সরকার সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। সরকারের ভুল পরিকল্পনার খেসারত শিল্প খাত বহন করতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি না করে এখন সরকারের উচিত হবে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের আমূল সংস্কার আনা। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা। বিদ্যুতের অতিরিক্ত উৎপাদন বন্ধ করে অহেতুক খরচ কমিয়ে আনা। এর জন্য ব্যবসায়ীরা সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।’
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর চেষ্টার পেছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেননেশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ স্মল অ্যান্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশ সভাপতি মির্জা নুরুল গনি শোভন। তিনি দাবি করেন, এর থেকে সরে আসতে হলে দরকার গণতান্ত্রিক সরকারের রাজনৈতিক দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। এর বাইরে আমলাতন্ত্রের সিদ্ধান্তে কোন কাজ হবে না।
বাংলাদেশ চেম্বার অফ ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘দেশে এখন ডলার সংকট চলছে। ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। এখন যদি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়, উৎপাদন খরচ বাড়বে। যার প্রভাব পড়বে ভোক্তার ওপর। এখন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সময় নয়।’
রিহাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, ‘বিশ্ববাজারে ঝড় চলছে। এ অবস্থায় ইচ্ছামত দাম বাড়িয়ে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য কে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবেন না।’
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে আমরা রপ্তানিতে বেশ ভালো করতে ছিলাম। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে রপ্তানিকারকদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। এতে বিশ্ববাজারে রপ্তানি প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়বে দেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, সাবেক সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন, এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, বিএসএমএর সভাপতি মনোয়ার হোসেন, বিসিএমএর সভাপতি মো. আলমগীর কবিরসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জে মুদ্রণ শিল্প ও প্লাস্টিক শিল্প প্রকল্পের সমীক্ষা হয়ে গেছে। এই দুই প্রকল্প ঘিরে জেলার মানুষ বিশাল কর্মযজ্ঞে জড়াবে। মুন্সীগঞ্জ ঘিরে নতুন ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব তৈরি হচ্ছে।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে ইছামতী নদীর তীরে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক পরিদর্শনে গিয়ে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, মুদ্রণ শিল্প ও প্লাস্টিক শিল্প প্রকল্পের সমীক্ষা হয়ে গেছে। এই দুই প্রকল্প ঘিরে মুন্সীগঞ্জের মানুষ বিশাল কর্মযজ্ঞে জড়াবে। এ অঞ্চলের লোকজন কেউ কর্মবিহীন থাকবে না। মুন্সীগঞ্জ ঘিরে দেশে নতুন ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব তৈরি হচ্ছে। এই এলাকা ঘিরে রাস্তাঘাট ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হবে।
মন্ত্রী বলেন, সেপ্টেম্বরে মাটি ভরাট ও ডিসেম্বরে পাইলিং ও দেয়াল নির্মাণ হবে। এর পাশেই হবে ১০০ একর জমিতে মুদ্রণ শিল্পনগরী ও সিরাজদীখানের বড়বর্তা এলাকায় ৫০ একর জমিতে প্লাস্টিক নগরী । সেগুলোর জমি অধিকরণ হয়েছে। কেমিক্যাল নগরী সম্পন্ন হলে এখানে ৮০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।
মন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে মুন্সীগঞ্জের কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কাজ শেষ হবে। এটি প্রধানমন্ত্রীর প্রায়োরিটি প্রকল্প। করোনা মহামারিসহ নানা কারণে প্রকল্পের কাজ কিছুদিন থেমে থাকলেও এখন পুরোদমে চলছে।
কেমিক্যাল শিল্পনগরী পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী প্রজেক্টের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিসিক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, আঞ্চলিক পরিচালক আব্দুল মতিন, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা ও জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসূল।
আরও পড়ুন:ভর্তুকি দিয়ে হলেও বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো অবিলম্বে চালুর দাবি জানিয়েছে পাটকল চিনিকল রক্ষায় শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদ।
রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে শনিবার এক সেমিনারে এ দাবি জানান সংগঠনের নেতারা।
সেমিনারে বলা হয়, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে চিনি একটি কৌশলগত খাদ্যপণ্য। বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে এর সরাসরি সম্পর্ক। ফলে দাম এবং সরবরাহের ক্ষেত্রে সব সময় একটা অনিশ্চয়তা কাজ করে। এ থেকে স্বস্তি পেতে সাময়িক লোকসান হলেও ভর্তুকি দিয়ে এসব চিনিকলগুলো বাঁচিয়ে রাখা জরুরি।
একই সঙ্গে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে এর ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা, লোকসান কমানো এবং জনস্বার্থ বিবেচনায় এর বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটেই এ বিষয়ে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চান তারা। সেটি না করা হলে দেশের ১৭ কোটি ভোক্তাকে এর চরম খেসারত দিতে হবে বলেও দাবি করেন তারা।
সেমিনারে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের রাজেকুজ্জামান রতন ও বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম।
সেমিনারে ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেল ও গমের পর চিনির বাজারেও অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
বক্তারা বলেন, ২০২০ সালের শেষ দিকে দেশের ১৫টি রাষ্ট্রীয় চিনিকলের মধ্যে ছয়টি রাষ্ট্রীয় চিনিকল বন্ধের ঘোষণা আসে। ২০২০-এর মাড়াই মৌসুমের পাবনা চিনিকল, কুষ্টিয়া চিনিকল, রংপুর চিনিকল, পঞ্চগড় চিনিকল, শ্যামপুর চিনিকল, সেতাবগঞ্জ চিনিকলের আখ মাড়াই বন্ধ করে উৎপাদিত চিনি পার্শ্ববর্তী চিনিকলগুলোয় মাড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বন্ধ হওয়ার পর থেকে দুটি মাড়াই মৌসুম চলে গেল। এ বছরের নভেম্বরে তৃতীয় মাড়াই মৌসুম শুরু হবে।
এরই মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন আগ্রাসন শুরুর পর বিশ্বজুড়ে তীব্র জ্বালানি সংকট শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে শুরু হয়েছে আসন্ন তীব্র খাদ্য সংকটের অশনিসংকেত। এ বছরের শুরু থেকে জ্বালানি তেলের মূল্য শুধু বাড়েনি, বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। দুটি বৃহৎ গম রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেন-রাশিয়ার গম উৎপাদন ও গুদামজাতকরণ হুমকির মুখে গমের দাম বেড়ে গেছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের চাহিদা বৃদ্ধি এবং মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ভারত গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে। এখন চিনির দাম বেড়ে গেলে চিনি রপ্তানিতে ভারত কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে না সে বিষয়েও কোনো নিশ্চয়তা নেই। ইতোমধ্যে সর্বোচ্চ চিনি উৎপাদনকারী দেশ ব্রাজিলের চিনিকলগুলো চিনি রপ্তানির চুক্তি বাতিল করে আখ থেকে ইথানল উৎপাদন করে রপ্তানি করতে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে সব ধরনের জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় আখ থেকে উৎপাদিত বায়োফুয়েলের চাহিদা বেড়েছে।
ফলে চিনির চেয়ে আখ থেকে ইথানল উৎপাদন অধিক লাভজনক হয়ে উঠছে। এ পরিস্থিতিতে চিনির বাজারে সংকট ঘনীভূত হবে এবং এ কারণে চিনির দাম বাড়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।
বক্তারা বলেন, ডলারের দাম বাড়ছে হু হু করে। ফলে চিনির মতো অপরিহার্য খাদ্য আমদানি আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। সবদিক থেকে চিনির দামের ওপর ঊর্ধ্বগতি চাপ শুধু এখন অপেক্ষার বিষয়।
সেমিনারে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে বলা হয়, চিনিকলগুলো বন্ধ রাখার পর দেশের চিনির উৎপাদন পরপর দুই বছর ৪১ শতাংশ ও ৫৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অথচ বৈশ্বিক এই অস্থির পরিস্থিতির মধ্যেও এ সময়ে ভারতে ৪০ ও ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ ভারতে চিনিশিল্পের বিকাশ ঘটলেও দেশের চিনিশিল্প মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না।
সেমিনার থেকে আগামী অর্থবছরের বাজেটে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সাত দফা সুপারিশ করা হয়।
১. বন্ধ করে দেয়ার ছয়টি মিল পুনরায় চালু করা।
২. চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী স্থগিত মিলগুলো পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে। মিলগুলো বসিয়ে না রেখে এবং যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে না দিয়ে অবিলম্বে মিলগুলো চালুর উদ্যোগ নেয়া।
৩. বকেয়া বেতন-ভাতা ১৩ কোটি ১১ লাখ টাকা, পিএফ বকেয়া ১১১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, গ্রাচুইটি বকেয়া ২৮৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা অবিলম্বে পরিশোধ করার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে।
৪. আখ ক্রয়ের জন্য ২৫ শতাংশ ভর্তুকি দিতে হবে।
৫. আখ চাষের জন্য ১৫টি চিনিকল সবগুলো চিনিকলসংলগ্ন এলাকায় আগের মতো ঋণ দিতে হবে।
৬. মিলগুলোর পুঞ্জিভূত ৩ হাজার ৮৫ কোটি টাকা মওকুফ করতে হবে।
৭. মিলগুলো পুনরায় চালুর পর সেগুলোকে কীভাবে লাভজনক করা যায়, তার সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে।
আরও পড়ুন:আসন্ন জাতীয় বাজেটে আয়করে মধ্যবিত্তদের স্বস্তি দেয়ার মতো কোনো খবর নেই। অন্তত আয়করের দিক থেকে। আসন্ন ২০২২-২৩ বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির আয়করে ছাড় দেয়ার ক্ষেত্রে নতুন কোনো ঘোষণা এখন পর্যন্ত নেই।
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণি করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা একই থাকতে পারে। আয়কর ধাপে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।
করোনা-পরবর্তী জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সীমিত আয়ের মানুষ কষ্টে আছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা বিদ্যমান ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় উন্নীত করার দাবি ওঠে ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকে ব্যক্তি করে ছাড় দেয়ার বিষয়ে কোনো প্রস্তাব করা হয়নি।
এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়, সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড় দেয়া হলে আয়কর আহরণের দিক থেকে অনেক ক্ষতি হবে।
এর চেয়ে কম ছাড় দেয়া হলে প্রান্তিক করদাতারা তেমন উপকৃত হবে না। যে কারণে ব্যক্তি করদাতার আয়করে ছাড়ের প্রস্তাবটি আগের মতোই অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে এনবিআর।
অর্থ মন্ত্রণালয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ না থাকলেও অর্থবিল পাসের দিন সংসদে কিছু সুবিধা দেয়ার কথা বলতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা অতিমারি শুরু হওয়ার পর অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বিরূপ প্রভাব পড়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে। এতে করে দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
তখনকার প্রেক্ষাপটে, সাধারণ মানুষের অবস্থা বিবেচনা করে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি করদাতার আয়ে ব্যাপক ছাড় দেয়া হয়।
ওই অর্থবছর বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ও যাতায়াত ভাতা বাদ দিয়ে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ টাকার পরিবর্তে বার্ষিক ৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর পর থেকে তা অপিরবর্তিত রাখা হয়।
করোনা নিয়ন্ত্রণে এলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালেও রাশিয়া-ইউক্রেন সাম্প্রতিক যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সবকিছুর দাম বেড়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বাড়ে।
বর্তমান বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণি করে আরও ছাড় দেয়ার জোরালো দাবি ওঠে।
গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, তাতে করমুক্ত আয়ের সীমা আরও বাড়ানো উচিত। তবে এটাও ঠিক, বাংলাদেশে অনেকেরই কর দেয়ার সামর্থ্য আছে । তাদের বেশির ভাগই এখনও করের নেটে নেই। যোগ্য সবাইকে করের আওতায় আনতে হবে।’
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এবারের বাজেটে ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা আগের মতো অর্থাৎ ৩ লাখ টাকা বহাল রাখা হয়েছে। ভারতে মোট জনসংখ্যার ৪ শতাংশ মানুষ আয়কর দেন। আর বাংলাদেশ মাত্র ১ শতাংশ লোক কর দেন।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেই ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা কয়েক বছরের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়, যাতে করদাতা আগাম তার হিসাব সহজেই করতে পারেন।
বাংলাদেশে জোট সরকারের আমলে একবার তিন বছরের জন্য করমুক্ত সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা বাতিল করা হয়।
জনসংখ্যা অনুপাতে বাংলাদেশে ব্যক্তি করদাতার সংখ্যা খুবই কম। অথচ কর দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে অনেকেরই।
এখন নিবন্ধিত বা টিআইএনধারীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ হলেও আয়কর রিটার্ন জমা দেন মাত্র ২৫ লাখ। এর মধ্যে কমপক্ষে তিন লাখ রিটার্ন আছে যাদের আয় শূন্য। তাদের কাছ থেকে কোনো কর পায় না সরকার। ফলে নিয়মিত রিটার্ন দিচ্ছেন মাত্র ২২ থেকে ২৩ লাখ।
আয় অনুযায়ী বাংলাদেশে কতজনের কর দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। এনবিআর এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো জরিপ করেনি।
তবে অর্থনীতিবিদসহ আয়কর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তিন-চার কোটি লোকের কর দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও তাই মনে করেন।
আয়কর আইনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার করদাতার রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আয় থাকুক আর না থাকুক, বার্ষিক রিটার্ন জমা দিতেই হবে। না দিলে প্রচলিত আইনে জরিমানার বিধান রয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য