দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতি হবে- এমন প্রকল্প গ্রহণ না করার পরামর্শ দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম, দুর্নীতি হচ্ছে কি না তা তদারকিতেও ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২২-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এসব নির্দেশনা দেন। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি, সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা মেয়র, সিটি করপোরেশন- সবাইকে নিয়ে সমন্বিতভাবে উন্নয়ন পরিকল্পনা করি, প্রকল্প গ্রহণ করি, বাস্তবায়ন করি এবং বাস্তবায়ন যথাযথভাবে হচ্ছে কি না, সেটা যদি আমরা নজর দিই, আমাদের যে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি, সেটাও যদি যথাযথভাবে আমরা বাস্তবায়ন করি, তাহলে অবশ্যই খুব বেশি দিন লাগবে না। আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে টিকে থেকে আমরা দেশকে উন্নত করতে পারব।’
চলমান উন্নয়ন প্রকল্প প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যেসব প্রকল্প চলমান আছে, আমাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এসব প্রকল্প গ্রহণ করে এবং সে প্রকল্প বিভিন্ন এলাকায় বাস্তবায়ন হয়। কিন্তু এই প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে গ্রহণ করা এবং তার প্রয়োজনীয়তা সাপেক্ষে এবং সেগুলো বাস্তবায়নে কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি না, দুর্নীতি হচ্ছে কি না বা মানসম্মত হচ্ছে কি না, সে বিষয়ের ওপর নজরদারির ব্যবস্থা আপনাদের অবশ্যই নিতে হবে।’
জনপ্রতিনিধিরা যেসব নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা বাস্তবায়নে আমলাদের আন্তরিক থাকতে হবে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘তাদের কিছু নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি থাকে জনগণের কাছে। এই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন, তবে অবশ্যই আমি এটা বলব, প্রতিশ্রুতি আসলে যথাযথ কি না, সেটা বিবেচনায় নিয়ে সেই ধরনের পরিকল্পনা নেয়া।
‘অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প পরিহার করতে হবে। আর প্রকল্প যেটা নিতে হবে সেটা যেন যথাযথ ও মানুষের সেবামূলক হয় এবং মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অবদান রাখতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে কিন্তু করতে হবে। একটা কিছু করার জন্য করা, সেটা যেন না হয়। সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।’
জেলা-উপজেলা পর্যায়ে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘যদি আমরা পরিকল্পিতভাবে কাজ করি, তাহলে আমাদের কোনো সমস্যা থাকে না। একটা জেলার অধীন উপজেলা, একেবারে ওয়ার্ড পর্যন্ত উন্নয়নটা- এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক কিন্তু বিরাট অবদান রাখতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সংসদ থেকে শুরু করে সব জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে বসে আলোচনা করে কাজ করা যায়, সেটা আরও বেশি কার্যকর হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়নের নামে পরিবেশ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, প্রতিবেশ যেন নষ্ট না হয়, জীববৈচিত্র্য যেন নষ্ট না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’
জেলা প্রশাসকদের অর্পিত দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হওয়ার তাগিদ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি সরকারে আসার পর সবার বেতন-ভাতা বাড়িয়ে দিয়েছি, সেটা মনে রেখেই আপনারা আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন- সেটাই আমি আশা করি।’
এ প্রসঙ্গে জাতির পিতার আদর্শকে সামনে এনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেকে একজন জনগণের খাদেম বা সেবক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমিও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেকে জনগণের একজন সেবক মনে করি। ক্ষমতায় আসা, প্রধানমন্ত্রী হওয়া মানে জনগণের জন্য কাজ করার একটা সুযোগ পাওয়া। যে লক্ষ্য স্থির করেছি, তা বাস্তবায়নে আপনাদের সহযোগিতা একান্তভাবে প্রয়োজন।’
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার বিষয়টি সামনে এনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে এবং আমাদের সামনের দিকে অনেক এগিয়ে যেতে হবে। কারণ বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়তে হবে।’
দেশের অগ্রযাত্রায় করোনাভাইরাস মহামারি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর জেলা প্রশাসক সম্মেলন করতাম। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি আমাদের এমন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে যে পর পর দুবার জেলা প্রশাসক সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন করেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ বাস্তবায়ন করা।’
সামষ্টিক অর্থনীতির সব সূচকে বাংলাদেশ উন্নতি করেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, দরিদ্র থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না।’
সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে
করোনাভাইরাস মহামারির শঙ্কা নিয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলনেও সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের একটা নতুন ভ্যারিয়েন্ট এসে গেছে। এটা আরও বেশি দ্রুত ছড়াচ্ছে। এ বিষয়ে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’
ডিসিদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসকদের বলব, স্ব-স্ব প্রশাসনে নির্দেশ দিয়ে দেবেন, প্রত্যেকে যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে। কারণ এই ভ্যারিয়েন্টটা আসলে এমনি মনে হয় খুব বেশি ক্ষতি করবে না। আসলে এটা অনেক ক্ষতি করতে পারে।’
ইতিমধ্যে মৃতের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা যেন আর না বাড়তে পারে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কেউ ভিক্ষা করবে, এটা লজ্জার
বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ, গণহত্যার শিকার হওয়া কোনো পরিবারের সদস্য ভিক্ষা করে খাবে তা স্বাধীন দেশের জন্য লজ্জার বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব থেকে আগে এই কাজটি করতে হবে। আমি আর কখনও দেখতে চাই না কোনাে শহীদ পরিবার, জাতির পিতার চিঠি যার হাতে সে ভিক্ষা করে খাবে। এটা যেন না হয়। আমি সবাইকে আহ্বান জানাব- এ বিষয়টি আপনারা ভালোভাবে দেখবেন।’
‘মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কেউ ভিক্ষা করবে, এটা আমাদের জন্য মোটেও সম্মানজনক নয়’ উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আপনাদের এটাও দেখতে হবে, কোথাও কোনো জায়গায় কোনো মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, শহীদ পরিবার, বা গণহত্যার শিকার পরিবারের কেউ এ ধরনের দুর্ভোগ পোহাচ্ছে কি না। কারণ এটা অন্তত আমার জন্য খুবই লজ্জাজনক, আমি মনে করি। জানি না, অন্যরা কী ভাববে। কিন্তু আমি নিজে মনে করি, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক।’
ঝরে পড়া ঠেকাতে স্কুল ফিডিং
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঝরে পড়া ঠেকাতে স্কুল ফিডিং ব্যবস্থার ওপরে জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আর এ ক্ষেত্রে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘কারও কাছে হাত পেতে অনুদান আর নিতে চাই না। কিন্তু আমাদের যদি একটু উদ্যোগ নেয়া যায়, স্বতঃপ্রণোদিত স্কুল ফিডিং কর্মসূচি আমরা করতে পারি।’
পরীক্ষামূলকভাবে এ ব্যবস্থায় সফলতা এসেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তবে এটা নির্ভর করে আমাদের প্রশাসনে যারা আছেন, অর্থাৎ জেলা বা উপজেলা বা ইউনিয়নে যারা আছেন, বা আমাদের জনপ্রতিনিধিরা, স্থানীয় বিত্তশালীরা সমন্বিতভাবে কিন্তু কাজটি করা যেতে পারে। এই উদ্যোগ নেয়ার ফলে আমরা দেখেছি, ঝরে পড়াটা কমে যায়।’
উন্নয়নে যোগাযোগের কোনো বিকল্প নেই
অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের নেয়া টেকসই মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের অর্থনীতিতে যথেষ্ট অবদান রাখবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘যে কোনো উন্নয়নের ক্ষেত্রে যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। আজ আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি। যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রকল্প হাতে নিয়েছি। রাজধানী যানজট মুক্ত করতে বেশকিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছি। তা ছাড়া কর্ণফুলী টানেল, হয়তো এই অঞ্চলে আমরাই প্রথম তৈরি করছি। কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি শেষ হবে। পাশাপাশি রাজধানীতে মেট্রোরেল পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। বাকি কাজগুলোও আমরা করতে পারব।’
উত্তরবঙ্গের সঙ্গে আরও দ্রুত যোগাযোগে আলাদা রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পদ্মা সেতু নির্মাণও প্রায় শেষ পর্যায়ে। যার ফলে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগ হবে। রাজধানীর সঙ্গে উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের সংযোগ করা, সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। তাই সারা দেশে সেতু ও সড়ক নির্মাণ করে আমরা যোগাযোগব্যবস্থাকে উন্নত করছি।’
বিশ্বব্যাংক অলাভজনক বলায় বিএনপি দেশে রেল বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সরকারে এসে আবার রেল নিয়ে আলাদা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করি। আলাদা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে রেলকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে, বাজেট দিয়ে রেলপথ উন্নয়নের ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি আমরা।’
একই সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে পর দেশে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সংখ্যা আরও বাড়ানো হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমরা কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মর্যাদায় করে দেব। আমাদের সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে উন্নত করব।’
গ্রামে নিশ্চিত করতে হবে নাগরিক সেবা
জেলা প্রশাসকদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আপনারা কাজ করেন মাঠপর্যায়ে। প্রতিটি জেলার দায়িত্ব আপনাদের। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং তাদের স্বাবলম্বী করার জন্য আমাদের যে ব্যাপক পল্লী উন্নয়ন কাজ আমরা নিয়েছি, সেগুলোকে সব থেকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। কারণ দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের তৃণমূলের মানুষের জীবনমান উন্নত করতে হবে। সেখানে আমাদের সব থেকে বেশি উন্নয়ন করতে হবে। সেটাই হচ্ছে আমি সব সময় বিশ্বাস করি।’
প্রতিটি ইউনিয়নের সঙ্গে ওয়ার্ড, ওয়ার্ড থেকে গ্রাম পর্যায়ে উন্নয়নের জন্য রাস্তা নির্মাণ থেকে শুরু করে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করে দেয়ার কথাও জানান শেখ হাসিনা।
সব ধরনের নাগরিক সুবিধা যেন প্রান্তিক মানুষ পেতে পারে সেজন্য সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই কাজগুলো যাতে সঠিকভাবে চলে, সেটা দেখতে হবে আমাদের জেলা প্রশাসনকে। কারণ পল্লী উন্নয়ন আমরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। বাজেট যেটা আমরা করে দিচ্ছি সেখানেও কিন্তু আমরা জেলা ভিত্তিক বাজেট করে দিচ্ছি। প্রতিটি জেলার কী কী চাহিদা, সেটাকে আমরা বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে থাকি। তা ছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমার জেন্ডারভিত্তিক বাজেটও তৈরি করছি।’
গ্রামে সব নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়া সরকারের অঙ্গীকার জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাতে শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা কমে যাবে। গ্রামে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। একেকটা জেলার সার্বিক উন্নয়ন করা আপনাদের (জেলা প্রশাসক) কর্তব্য বলে আমি মনে করি।’
সবাইকে ই-টেন্ডারে আসতে হবে
ই-টেন্ডার বাস্তবায়ন করা যুগান্তকারী উদ্যোগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আর টেন্ডার বাক্স নিয়ে মারামারি, কাটাকাটি, গোলাগুলি, বোমাবাজি হচ্ছে না- এটাই বড় কথা। এবং এখনও যদি কোনো মন্ত্রণালয় বাকি থাকে, তাদেরকে আমি বলব, এই ই-টেন্ডারিং পদ্ধতি গ্রহণ করতে।’
জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকদের সক্রিয় ভূমিকা অব্যাহত রাখতে হবে। সরকারি সেবা নিতে এসে সাধারণ মানুষ যেন কোনোভাবে হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’
সুশাসন সুসংহত করতে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদেক্ষপ বাস্তবায়ন ও দুর্নীতি প্রতিরোধে জেলা প্রশাসকদের আরও আন্তরিকভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘মানুষের কল্যাণে আপনাদের সব ধরনের ভয়-ভীতি, প্রলোভনের ঊর্ধ্বে থেকে আইনানুগ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ব্যর্থ হলে ৭ জানুয়ারি (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন) যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি ব্যর্থ হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিষয় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘দেশের নির্বাচনে আবেগ-অনুভূতির জন্য কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। যেকোনো মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। এই নির্বাচনে ব্যর্থ হলে বিগত সংসদ নির্বাচনে যে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তা ক্ষুণ্ন হতে পারে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।’
সভায় দেশের সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর পাশাপাশি যুদ্ধকে ‘না’ বলতে বৃহস্পতিবার সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
থাইল্যান্ডে জাতিসংঘের কনফারেন্স সেন্টারে (ইউএনসিসি) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান বলে বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলতে হবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘শান্তির জন্য নতুন এজেন্ডা’র পক্ষে।”
ভাষণে সব ধরনের যুদ্ধ, আগ্রাসন ও নৃশংসতা বন্ধে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুধু হতাহতের সংখ্যা বাড়াচ্ছে, বিশেষত নারী ও শিশুরা এর বলি হচ্ছে। অথচ আলোচনায় আসতে পারে শান্তি।
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি যুদ্ধ ও গণহত্যা চলছে। এটি অবশ্যই বন্ধ হতে হবে। যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না।’
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা তার উদ্যোগ ও শাসনামলে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’র কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আঞ্চলিক বিরোধ ও উত্তেজনা নিষ্পত্তি করতে হবে।’
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে চলমান দাবদাহ আরও ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বৃহস্পতিবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন।
সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর চলমান তাপপ্রবাহ আজ (২৫ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে জানায়, খুলনা বিভাগসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগ এবং রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পূর্তিতে বুধবার প্রাণ হারানো শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন হতাহত শ্রমিক, তাদের পরিবার, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও পুলিশ সদস্যরা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ওই দুর্ঘটনায় পাঁচটি পোশাক কারখানার এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। পঙ্গুত্ব নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই সহস্রাধিক শ্রমিক।
ট্র্যাজেডির বার্ষিকীতে আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শ্রমিক ও সংগঠনগুলোর সদস্যরা।
সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বুধবার সকাল থেকে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানো শুরু হয়।
একে একে নিহত শ্রমিকের পরিবার, আহত শ্রমিক, পুলিশ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ফুলের শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে ওঠে বেদি। ওই সময় নিহত শ্রমিকদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পরে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ, র্যালি ও মানববন্ধন করা হয়।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারানো শ্রমিকদের অনেক স্বজন প্রিয়জনের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
সমাবেশে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পর এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান বক্তারা।
একই সঙ্গে ভবনের মালিক সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডেরও দাবি জানান তারা।
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে বয়ে চলেছে তাপপ্রবাহ। প্রচণ্ড গরমে অস্থির জনজীবন। বিদ্যুতের লোডশেডিং সেই অস্বস্তি-অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়লেও সারাদেশে লোডশেডিং কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং আগের তুলনায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্যের উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, বুধবার (দেশে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। আগের দিন মঙ্গলবার তা ছিল ১ হাজার ৪৯ মেগাওয়াট।
এনএলডিসির তথ্যে আরও দেখা যায়, মঙ্গলবার রাত ১টায় লোডশেডিং ছিল ১ হাজার ৪৬৮ মেগাওয়াট। তবে বুধবার দিনের বেলায় বিদ্যুৎ ঘাটতির মাত্রা কমে সকাল ৭টায় ৫৪২ মেগাওয়াটে নেমে আসে। আবার বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। বিকেল ৩টায় লোডশেডিং বেড়ে দাঁড়ায় ৮২১ মেগাওয়াট।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও পিজিসিবির তথ্য বলছে, ১৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বুধবার বিকেল ৫টায় দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৪৭৩ মেগাওয়াট। সে হিসাবে সন্ধ্যার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উৎপাদন ঘাটতি ছিল ৭২৭ মেগাওয়াট।
ওদিকে বুধবার সন্ধ্যায় চাহিদার পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট এবং সরবরাহের পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৫৩০ মেগাওয়াট।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে লোডশেডিং এড়াতে গিয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে।
বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া সংবাদে জানা যায়, এই গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের মাত্রা গ্রামীণ মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলার সরকারি তথ্যে দেখা যায়, ৩ হাজার ৭৬০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে দেশে গ্যাস উৎপাদন হয়েছে দৈনিক ৩ হাজার ৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট।
বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিশেষ করে যেগুলো প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করে, সেগুলোতে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ২ হাজার ৩১৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার ৩৪৯ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস সরবরাহ পেয়েছে।
আরও পড়ুন:সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নতুন তিন বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। বৃহস্পতিবার তারা শপ্রথ গ্রহণ করবেন।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বুধবার।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারককে তাদের শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করেছেন।
আপিল বিভাগে নবনিযুক্ত বিচারপতিগণ হলেন- বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ, বিচারপতি মো শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন।
বৃহস্পতিবার শপথ
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার বলা হয়, আপিল বিভাগে নবনিযুক্ত তিন বিচারপতি বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণ করবেন। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি তাদেরকে শপথ পাঠ করাবেন।
মিয়ানমারের কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ শেষে ১৭৩ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। গভীর সাগরে অবস্থানরত মিয়ানমার প্রতিরক্ষা বাহিনীর জাহাজ ‘চিন ডুইন’ থেকে তাদের নিয়ে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর একটি জাহাজ বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ার ছড়া ঘাটে এসে পৌঁছায়।
এর আগে বুধবার বেলা ১১টার দিকে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার এসে পৌঁছায়।
প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার পৌঁছানোর পরপরই ঘাট থেকে গাড়িযোগে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উদ্দেশে রওনা হয়, যেখানে বিজিবির অধীনে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৮৫ সদস্য রয়েছেন। তাদের নিয়ে বৃহস্পতিবার মিয়ানমার ফেরত যাবে প্রতিনিধি দলটি।
এদিন বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও কক্সবাজার ৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।
তিনি বলেন, ‘দুপুর ১টার দিকে ১৭৩ বাংলাদেশি ঘাটে এসে পৌঁছাতে পারেন। তারা মিয়ানমারের কারাগারে ভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করে সরকারের প্রচেষ্টায় ফিরছেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১৭৩ জনের মধ্যে ১২৯ জন কক্সবাজার জেলার, ৩০ জন বান্দরবান জেলার, সাতজন রাঙ্গামাটি জেলার এবং একজন করে রয়েছেন খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার। ইতোমধ্যে ফেরত আসাদের অপেক্ষায় ঘাটে ভীড় করছেন তাদের স্বজনরা।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশে ফেরত আসাদের গ্রহণ করে পুলিশে হস্তান্তর করবে বিজিবি। তারপর যাচাই-বাছাই শেষে স্ব স্ব থানার পুলিশের মাধ্যমে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
এদিকে ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়া মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ সফররত মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘চিন ডুইন’ জাহাজটি ১৭৩ বাংলাদেশিকে বহন করে মঙ্গলবার যাত্রা শুরু করে। এর মধ্যে ১৪৪ জন কারাগারে পূর্ণ মেয়াদে সাজা ভোগ করেছেন। অপর ২৯ জন মিশনের প্রচেষ্টায় ক্ষমা পেয়ে বাংলাদেশে ফিরছেন।
মূলত বাংলাদেশিদের নিয়ে আসা মিয়ানমারের জাহাজটিই বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিজিপির ২৮৫ সদস্যকে নিয়ে ফেরত যাবে।
মিয়ানমারের ২৮৫ সদস্যকে ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি নাইক্ষ্যংছড়ি গেছে।
মিয়ানমারে ফেরত যাওয়াদের মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল একদিনে নতুন ২৪ জন, ১৬ এপ্রিল ৬৪ জন, ১৪ এপ্রিল ১৪ জন, ৩০ মার্চ ৩ জন ও ১ মার্চ ১৭৭ জন বিজিপি ও সেনা সদস্য পালিয়ে আশ্রয় নেন। এরও আগে ফেব্রুয়ারির শুরুতে কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরও ৩৩০ জন, যাদের গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
প্রথম দফায় ফেরতের সময় ঘটনাস্থলে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ ও সংশ্লিষ্টরা কথা বললেও এবার তা হচ্ছে না। ফেরত আসা বাংলাদেশিদের গ্রহণ এবং ২৮৫ জনকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শেষ করে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে প্রেস ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানানো হবে। সেখানেও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ সংরক্ষিত হতে পারে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য